-আচ্ছা আপনার ফেভারিট গায়ক কে?
- অনেকেই আছে কয়জনের নাম বলবো?
- একজন এর নাম বলেন।
- জ্যাক নাইট।
- এটা আবার কে?
- চিনবেন না।
- ওহ, ফেভারিট গায়িকা?
- তাও অনেকে আছে।
- একজন এর নাম'ই বলেন।
-একজন নাই।
- এহ, এভাবে থাকেন কেন সবসময় এরকম মুড অফ করে।
-আমার এভাবেই ভাল লাগে।
- নাহ, আপনার ভাল লাগলে হবে না।
- তো কার ভাল লাগতে হবে?
- সবার।
- ওও।
- আচ্ছা আপনি কি হাসতে জানেন না?
- কেন?
- বিয়ের পর আপনার মুখে হাসি দূরে থাক দাত'ই দেখিনি।
- না দেখলে আমি কি করবো?
- ধুর বাবা আপনি থাকেন আমি যাই।
- হুম।
..
এতোক্ষন কথা হচ্ছিলো আমার সহধর্মিণী জান্নাত এর সাথে। এরকম সাদাসিধে মেয়ে আমি খব কম দেখেছি। একটু সময় পেয়েছি তাই টিভি দেখতে বসছি।
কিছুক্ষন পর ও চা নিয়ে আসলো।
- এই নিন চা।
- ধন্যবাদ।
- শুধু ধন্যবাদ এ হবে না।
- তাহলে চা আপনিই...।
- আরেহ শুনবেন তো আমি কি বলি।
- হুম বলেন।
- নীলা ফোন করেছিলো।
- চায়ের সাথে এর কি সম্পর্ক?
- নাহ চায়ের সাথে সম্পর্ক নেই।
- তো?
- তো কিছু না। নীলা ফোন করেছিলো। ওর আর সাদিফের ৫ তারিখ বিয়ে। আমাদের যেতে বলেছে।
- ওহ, সরি আমি যেতে পারবো না।
- কেন? ঐদিন তো শুক্রবার।
- তাও আমি যেতে পারবো না সরি।
..
এ কথা শুনে ওঠে চলে গেলো। এসব অনুষ্টান আমার ভাল লাগেনা। বিশেষ করে বিয়ের। তাও আবার অন্য আরেকজনকে নিয়ে।
.
পরের দিন অফিস থেকে আসার পর দেখলাম খাবার টেবিলে রেডি আছে।
আমি রুমে গিয়ে দেখি শুয়ে কাঁদতেছে।
.
আমার আসার আওয়াজ টা পায়নি আজ দর্জাও খুলা ছিলো।
। আমি রুমে যেতেই বুঝে চোখ মুছে ফেললো।
.
- ওহ আপনি এসেছেন। খাবার টেবিলে দেয়া আছে আপনি যান আমি আসছি।
- আমার ক্ষিদে নেই। একটা কথা বলবো?
- কেন বাইরে থেকে খেয়ে এসেছেন? একদিন না মানা করছি।
- নাহ এমনিই ক্ষিদে নেই। একটা কথা বলি?
- হুম বলেন।
- আমি কি খুব খারাপ? আমার সাথে কি কিছুই শেয়ার করা যায়না?
- আরে হটাৎ এ কথা কেন বলছেন?
- নাহ আপনি কান্না করছিলেন আর আমি আসতেই চোখ মুছে ফেললেন এর তো এই মানে হয়।
- কই না তো আমি কই কান্না করলাম। আর আমি কাঁদব কেন?
- ওহ তাহলে আর বলবে না
..
ভাল করেই বুঝতে পারছি নীলা ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড । আর ওর বিয়েতেই যেতে পারবেনা আমাকে নিয়ে এ জন্য। তাছারা আর কি কারন হতে পারে।
..
রাতে ঘুমানোর আগে।
- আচ্ছা আপনার নীল শাড়ি টা কই?
- আমার তো কোনো নীল শাড়ি নেই।
- ওহ।
- কিন্তু হটাৎ এ কথা জিজ্ঞেস করলেন কেন?
- নাহ এমনিই, আচ্ছা বিয়ে জানি কবে?
- ৫ তারিখ।
- আপনি যাবেন না?
- নাহ।
- কেন?
- এমনিই।
- নাহ এমনিই আপনি যাবেন।
- না বলছিতো। আর আমি একা কি করে যাবো?
- আমিও তো যাবো।
অবাক হলো অনেকটা একথা শুনে।
- কেন যাবেন? কোনো দরকার নেই যাবার।
- ওহ, তাহলে যাবো না ঠিক আছে।
..
অনেক্ষন এভাবে চুপ রইলাম দুজনেই।
তারপর :-
- সত্যিই যাবেন?
- হুম, কেন আমি কি সব মিথ্যা বলি?
- নাহ বলেন না।
- তো?
- না যাওয়াই ভালো।
- কেন?
- আপনি আমাকে এখনো আপনি করেই বলেন। লোকে কি বলবে?
- ওহ, তুমি করে বললে আর লোকে কিছু বলবে না?
- হুম।
- আচ্ছা তুমি করেই বলবো।
..
আসলে একসাথে থাকতে থাকতে প্রেমে পরে যাবো এটাই স্বাবাবিক। আর আমি দ্বিধাবোধ করিনি তা বলতেও। সেদিন থেকেই প্রতিদিনিই প্রতিদিনিই একেকটি সপ্নের দিন।
.
একটা মানুষ যতো খারাপ-ই হোক না কেন। একসাথে সময় কাটাতে কাটাতে মায়াই পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক আমার কাছে।
বিয়ের দিন এলো। রাতেই বলে রেখেছে যে ঘুমোতে পারবো না বেশিক্ষণ। সাঁঝ সকাল।
.ফযরের নামাজের এর সময় বলেছিলো খুব ঘুমের ঘোরে ছিলাম তাই হয়তো টের পাইনি। তবে ও ঠিকিই পড়েছে। তার কিছুক্ষন পর।
.
. এইযে একটু শুনবেন?
. নাহ ঘুমোবো।
. একটু শুনলে কি হয়।
. মাত্র তো কদিন হলো ।
. মানে?
তাৎক্ষণিক বুঝতে পেরে লজ্জায় মৃদুল একটা হাসি আর মুখ লুকোলো।
. আপনি তো বেশ দুষ্টু হইছেন।
. হুম, এটা ফরয তোমার প্রতি এখন বকবক বন্ধ করো ঘুমোতে দাও।
. আচ্ছা একটা কথা বলি?
. হু।
. আমি কি আপনার চশমা হতে পারি? যে আমাকে ছাড়া আপনি চলতে পারবেন না।
. নাহ আমি হতে দিবোনা।
. কেন ( একটু মন খারাপ করে )
. আমি চশমা ছাড়া রাতে ঘুমোতে পারি। কিন্তু তোমাকে ছাড়া রাতে ঘুমোতে চাইনা।
এর বিপরীত এ কি বলবে জান্নাত খুঁজেই পাচ্ছেনা। সাহস করে আমার হাতটা ধরলো আর কানের কাছে এসে বললো। "অনেক ভালবাসি " আমি বললাম-
. তো এটা বলতে কানের কাছে আসা লাগে?
. হুম আমি জোরে বলতে পারবোনা।
. দরকার নেই। এবার তো ছাড়ো ঘুমোবো।
.
নাহ আর ঘুমোতে দিলোনা এতোক্ষন এ ৬:২০ বেজে গেছে। এমনিতে আমি শুক্রবারে এতো সকালে উঠিনা। একটাদিন ছুটি পাই। তাই একটু দেরি করেই ঘুমাই। তবে ইদানীং তা হচ্ছেনা লজ্জাবতীর জন্য। আমি বেলকনীতে দাড়িয়ে দাত ব্রাশ করছি।
.আর ওর চেয়ার টা দেখছি। প্রতিদিন এখানটায় বসেই কোরআন শরীফ পড়ে। একটু পর কি যেন মনে করে দৌড়ে এলো। বললো যে-
.
. আচ্ছা আমি কোন শাড়িটা পড়বো?
. শাড়ি পরবে তুমি আর আমাকে বলতে হবে কেন?
. আপনি আমার ইয়ে হন না এজন্য।
. জামাই বলতেও ভুলে গেছো।
. এমা আমি কোনদিন এভাবে ডেকেছি নাকি?
. না তাহলে ইয়ের মানেটা কি?
. বলতে পারবোনা। এখন বলেন কোনটা পড়বো।
. বলতে পারবোনা আপনার যা ইচ্ছা পড়ে নেন।
. এমা আমার জামাইটা দেখি অভিমান ও করতে পারে। ( মুখ থেকে বেরিয়ে গিয়েছে )
. হুম না করিনি। নীলটায় পড়বে।
. আমার নীল শাড়ি আছে নাকি? পড়বো কিভাবে?
. শোন তুমার সব শাড়ি যেখানে আছে এর পাশে একটা বক্স আছে গিয়ে দেখো ওটার ভিতরে একটা নীল শাড়ি আছে।
. কিহহহ.. এ শাড়ি আসলো কোথা থেকে?
বাসার সবাই না গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছে সেই কবে। আপনি ছাড়া তো আর কেউ এমন নেই আর বাসায় -ও আসেনি।
. শাড়িটা আমি এনেছি। যখন বলেছিলে তুমার বান্ধবি নীলার বিয়ে সেদিনের পরেরদিনিই এনেছিলাম।
. সত্যিই? আমার না কি যে ভালো লাগছে না বলে বুঝাতে পারবোনা। আর হ্যা এজন্যই ঐদিন রাতে বলেছিলেন নীল শাড়ি কোথায় আমার?
. হুম বুধ্বিমতি।
. কিভাবে কি ঐসময় কি আর এই আপনি ছিলেন নাকি সারাদিন মুড অফ করে রাখতেন।
. আচ্ছা বাদ দাওনা।
. হুম, আর হ্যা শোনেন অনেক ধন্যবাদ।
. ধন্যবাদ নেইনা।
. তাহলে আর কি দিবো?
. আগে দেখো শাড়িটা পছন্দ হয়েছে কি না।
. অবশ্যই হবে। এটা চোখ বন্ধ করে বলে ফেলা যায়।
. ওরে বাপ এতো কনফিডেন্স?
. হুম আপনি আমার ইয়ে না। কনফিডেন্স তো থাকবেই।
. ওরে বাবালে। এখন যাও আমি একটু ছাদে গিয়ে বাতাস পুহাবো।
. তারাতারি আসবেন। রেডি হতে হবে।
. বিয়েটাকি এক্ষনি হয়ে যাচ্ছে?
. আরে আপনি জানেন না? যেতে প্রায় ২ ঘন্টা লাগতে পারে।
. আচ্ছা আসবো।
.
বলে ছাদে গেলাম আর মনের মধ্যে একটু দ্বিধাহবোধ হচ্ছে। শাড়িটা কি ওর পছন্দ হবে? এর আগে কোনোদিন কিনিনি তো কারো জন্য। যাই হোক কিছুক্ষন পর নিচে গেলাম আর দেখি ও শাড়িটা অলরেডি পড়েই বসে সাজোগুজো করছে।
.
দর্জার কাছ থেকে বললাম। তারমানে তোমার পছন্দ হয়েছে যাক বাবা বাঁচা গেলো। হুম অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে। আপনি এর আগে আর কতো মেয়েদের জন্য শাড়ি কিনেছেন শুনি? অভিজ্ঞতা ছারা তো।
.
জীবনের ফার্স্ট কারো জন্য শাড়ি কিনলাম হুহ। তার মানে আমি খুব সৈভাগ্যবতী। আচ্ছা এখন আপনি রেডি হোন। মন চাচ্ছে না। মানে কি? কেন? এক মুহুর্তের জন্যও তুমার সামনে থেকে গেলে ইচ্ছে হচ্ছেনা মনে হবে গেলেই কি যেন ফেলে আসছি। তাহলে আর বিয়েতে যাওয়া হবেনা।
.
যান দয়া করে। এরপর রেডি হতে যা সময় লাগলো আমার। তারপর রওনা দিলাম। বিয়ে বাড়িতে গেলাম। নীলা আমাদের দেখে খুব খুশি হলো। বিকেল পর্যন্ত থাকার পর আসার সময় হয়ে গেলো। গাড়িতে উঠে বসলাম। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
.
আমি গিয়ে ওর পাশে ঘেষে বসলাম। ওর হাত দুটো ধরে। ছেড়ে যাবেনা তো আমাকে ছেড়ে?
কিছুটা তাজ্জিব বনে গেলো বউটা।
.
নিশ্বাস টুকো ফুরিয়ে যাবে। তাও সম্ভব না কোনোভাবেই। তার উপর আমি আপনার স্ত্রী। কিভাবে সম্ভব বলুন। তারপর ও আরো শক্ত করে হাতদুটো শক্ত করে ধরে কানের কাছে এসে আমার। চুপ থাকেন গাড়িতে ড্রাইভার আছে। আজ আপনার কি হলো বলুনতো।
.
আর হ্যা সাড়া পথ চুপ আমি আপনার কাঁধে ঘুমোবো ঘুম পেয়েছে। বুঝতে পারলাম বাহানা। আমিও বললাম ওকে। তারপর আর কি গাড়ি চলতে থাকলো। ও আমার বোকে। সন্ধা সন্ধা ভাব। বেশ ভালই তো লাগছে।
.
বাসায় আসলাম। দুজনেই ফ্রেশ হলাম। রাত প্রায় ৮ টার দিকে ও বসে টিভি দেখছে আর আমি অফিসের কিছু কাজ করছি বসে।
.
ওর ফোনে হটাৎ ফোন এলো যে কাল সবাই গ্রামের বাড়ি থেকে চলে আসবে। বেরানো শেষ। ফোন রাখার পর আমাকে ডাক দিলো। আমি বললাম আমি এখন একটু কাজ করছি মানলো না।
.
এসে ল্যাপটপ টা নিজেই অফ করে দিলো।
. চলোতো সারাদিন শুধু কাজ কাজ আর কাজ। বলতে বলতে টিভির সামনে সোফায় বসালো।
.
.আচ্ছা আপনার কাছে আমাদের বিয়ের ভিডিও টা আছে।
. নাহ ওটা মামার কাছে আছে। আরেকবার আসলে বলবো নে নিয়ে আসতে।
. হুম। মনে আছে আমাদের বাসর রাতের কথা?
. মনে থাকবে না কেন? যেভাবে বলছো মনে হয় কয়েক যুগ পার হয়ে গেছে?
. না তা হবে কেন? তবে আমাদের রাতটা তো আর সাধারণ কোন বাসর রাত ছিলোনা তাই।
.
. তাহলে কি অসাধারণ ছিলো?
. একদম বাজে ছিলো। ইচ্ছে হয়েছিলো আপনাকে একদম কয়েকটা ঘুষি দিয়ে নাক ফাঠিয়ে দিতে।
. তো এখন ফাঠাও না।
. এমা না নিজের ইয়ে কে কিউ মারে নাকি তওবা তওবা। তখন তো রাগে বলেছিলাম। তাও আবার মনে মনে।
.
. হুম বুঝলাম তবে কেন?
. কেন মানে জানেন না? একে তো আসছিলেন ঘরে অনেক দেরি করে আমার বসে থাকতে থাকতে ঘুম পাচ্ছিলো। কষ্ট করে বসে ছিলাম। জানেন আমার কতো স্বপ্ন ছিলো ঐরাত টা নিয়ে।
.
কিন্তু আপনি এসে আমার ঘুমটাও খুললেন না এসেই ঘুম তাও কিন্তু এক বিছানায় ছিলোনা।
. হুম তখন কি জানতাম নাকি যে আমার বউটা তুমি।
.
. এমা তখন কি অন্য কেউ ছিলো নাকি?
. বাদ দাওনা। ভালবাসা থাকলে প্রতিদিনই বাসর রাত আর না থাকলে কি আর বলবো।
.বাহ শাহেব ভালো কথা শিখছেন তো।
.
. হুম তোমার সাথে সাথে থাকতে থাকতে শিখে গেছি। আর নিজের বউ এর সাথে পাকনামী করা ফরয হা হা জানোনা?
. নাহ কিভাবে জানবো?
.
. আচ্ছা হানিমুনে কোথায় যাওয়া যায় বলো তো।
. কিহহ হানিমুন? আপনি আর আমি? কিভাবে সম্ভব? এতোদিন এ তো বসে একসাথে একটু রুমান্টিক নাটকই দেখা হলোনা।
.
. আরে ধুরর পড়ে আছো সেই নাটক নিয়ে।
. হুম পড়ে আছি। সারাদিন কি আমাকে একটু সময় দেন? আর বাসায়? কেউ নাই তাই পড়ে থাকতে হয়।
.
. আচ্ছা থাকো তুমি আমি যাই রাতে খাবার সময় ডাক দিয়ো মন চাইলে।
. আরেহ কোথায় যাচ্ছেন বসেন। একটুপর একটা রুমান্টিক নাটক শুরু হবে আজ আমরা দেখবো।
.
. এগুলা কেন? আর হ্যা আজ তো বার্সেলোনার ম্যাচ আছে চলো ঐটা দেখি।
. না শুধু খেলা আর খেলা আজ নাটকই দেখবো।
.
ওর কথা শুনিনি। হাত থেকে রিমোট টা নিয়ে সনি ইএস্পিএন চ্যানেলটায় দিলাম। আর ও মুখ ঘুমরা করে বসে রইলো।
.
বেশি সুবিধের মনে হচ্ছেনা মনে হচ্ছে এখন বাচ্চাদের মতো টোঁট ব্যাকিয়ে কাঁদবে। তা টান দিয়ে এনে নিজের কোলে নিলাম। আর ও লজ্জায় মাথাটা আমার বোকেই লুকোলো।আমি বললাম।
.
. এতে হবেনা? রুমান্টিক নাটকই দেখতে হবে?
. হবেনা আমি আজ কোল থেকে নামবোনা।
. আল্লাহ তুমি কতো মোটা জানো? আমি মরেই যাবো আরো কতক্ষন যদি তোমায় কোলে রাখি।
.
বলে কোল থেকে নামালাম। কিন্তু আবার মুখ ব্যাঁকা।
.আমি কি মোটা নাকি? ওজন কতো হবে বেশি হলে না হয় ৫০ কেজি হবো।
.আচ্ছা যাও গিয়ে রুমে দেখো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যাও।
.
ঠিকই গেলো। হাসি আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। অনেক্ষন হয়ে গেলো। বের হলোনা। পরে আমি নিজেই রুমে গেলাম। এমা একি কান্ড দেখি ঘাটের এক কোনায় বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বাচ্চা মেয়েদের মতো কান্না করছে।
.
হাসি আরো বেরে গেলো। পাশে গেলাম। আমাকে দেখে ভ্যাবলাটে হয়ে চোখের দিকে তাঁকিয়ে বললো।
. আমি এতো মোটা হলাম কিভাবে? জানেন আমি এতো মোটা ছিলাম না বিয়ের আগে হুউউউ।
.
এবার হাসি মাত্রাতিরিক্ত বেরে গেলো কিন্তু চেপে গেলাম। মধুর মা এখোনো বাচ্চা মেয়েদের মতোই আচরণ করে হিহু।যা বললাম তাই বিশ্বাস করলো ওটা মজা করে বলছিলাম বুঝলোনা।
.
. ও খোদা তুমি কি বলো? তুমি মোটা হতে যাবা কেন? আরেহ ঐটা তো ফাইযলামু করে বলেছিলাম আর তুমি ওটা ধরে নিয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদছো?
.
. না ফাইযলামু করেন নি। জানিতো সত্যই বলছেন। আর আমি দেখেছি আয়নায় হুউউ কেঁদেই চললো। হাসি পেলেও জমা রাখলাম পরে হেসে নেবো।
.
. আরে ওটা ফাইযলামু। বিশ্বাস করো সত্যই ফাইযলামু ছিলো। কোনটা ফান আর কোনটা সিরিয়াস তুমি বুঝোনা।
.
. বুঝিতো তবে এটা ফান ছিলোনা হুউউ।
. আরে বাবা ফানই ছিলো। তুমি মোটা হতে যাবা কেন? তুমি অনেক কি বলে যে বুঝাই। দেখো তুমি একদম পার্ফেক্ট ঠিক আছো। না মোটা না চিকন। আবার যাওতো আয়নার সামনে গিয়ে দেখো। শুনে একটু কান্না থামলো মনে হয়।
.
. সত্যই যাবো?
. হুম যাওনা।
ঠিকিই গেলো। এখন কি মাত্রায় হাসি পেলো চিন্তা করেন আপনারাই।
. তো কি মনে হয় এখন?
. এতো কিছু জানিনা চলেন এখন খাবো খিদা লাছছে।
.
. হুম কথাটা বিশ্বাস হয়েছে তো?
. হুম হয়েছে। আসলে আপনি বললেন তো এজন্য কষ্ট লাগছিলো। অন্য কেউ বললে কিচ্ছু হতোনা।
. আচ্ছা বাবা এখন চলো আজ আমি রান্না করবো।
.
. কিহহ? জীবনে কোনোদিন রান্না ঘরে গিয়েছেন বলে তো মনে হয়না।
. দেখোই না।
. মজার তো চলেন।
দুজনেই রান্না ঘরে গেলাম। গিয়ে ডিমভাজি করলাম আমি ভালো করেই। এ দেখে বললো না বেশ ভালই ডিমভাজি করেন তবে লবণ ছাড়া।
.ওহহ লবণ দিতে ভুলে গেছিলাম মনে হয়। তাহলে আর কি কি পারেন? আসলে আমি রান্না করতে পারিনা। এমনিই বললাম।
আচ্ছা রুটি ছিলো তো ওখানে। আমি খুঁজে দিলাম হাতে আর ও ডিমভাজি টা নিলো।
বললো
. নেন ধরেন এখান থেকে একটু রুটি আর ডিম এক সাথে করে আমার মুখে তুলে দেন।
. হুরর আর মজা নিয়োনা। লবণে হয়নি একদম। তোমার খেতে হবেনা।
.
. দেন না তুলে লবণ এর দরকার নেই। এ সৌভাগ্য আমার আর হবেনা। যে কোনদিন রান্না ঘর কি বলতে পারবেনা যে কি কি আছে রান্না ঘরে। সে আপনি তো আমার জন্য লবণ ছাড়া হলেও করেছেন আমার আর কি চাই বলেন।
.
. সত্যি?
. হুম এবার তুলে খাওয়ান নিজের হাতে।
হি হি তাই করলাম। ও সোফায় মহারাণীর মতো শুয়ে শুয়ে নাটক দেখছে আর আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
.
ভালোনা? তুলে খাইয়ে দিয়ে তো ভালই লাগছে হা হা। তবে ডিমভাজি সেই কখন শেষ। মাছ আর সবজিও খেয়ে শেষ করে দিলো। কি মজার না? শুতে গেলাম দুজন।
. এই আপনার না একটা কোলবালিশ ছিলো ওটা কই?
. কেন? ওটার কি দরকার?
. আরেহ দরকার আমার না দরকার আপনার।
. আমার দরকার কেন হবে আবার?
. ঐযে জড়িয়ে ধরে সারারাত গড়াগড়া করেন এজন্য আরকি। কই কোলবালিশটা? ওটা আমি পুড়িয়ে ফেলবো।
. পুড়ানোর কি আছে আমি ফেলে দিয়েছি।
. কিহ কেন?
. কেন আবার দেখতাম তো তুমি কিভাবে তাঁকিয়ে থাকতে। যখন সকালে উঠে দেখতে আমি কোলবালিশ নিয়ে এদিকে ফিরে শিয়ে আছি। আরো কিছু কি বুঝা লাগে?
. হুম ভালো হইছে। শোনেন না কাল তো আম্মারা আসবে।
.
. জানি।
. তো একটু হাসি দিয়ে বলেন।
. দিলাম হাসি ৩২টা দাত বের করে।
. এবার হইছে। কবে অব্দি ভাবি ডাকটা শুনিনা পিচ্চির থেকে।
. জিহান ক্লাস এইট এ পড়ে ও পিচ্চিনা
. য়্যা পিচ্চি না তো কি? কিভাবে সুন্দর করে ভাবি ডাক দেয় শুনেন না। ডাকটা শুনলেই মন প্রাণ ভরে যায়।
. ভালো ভালো। আমি ডাকলে বুঝি ভরেনা?
. এমা আপনি আবার ভাবি ডাকতে যাবেন কেন? তওবা তওবা।
. আরে ভাবি ডাকতে যাবো কেন আজব।
. তাহলে? ঐতো মধুর মা.. ।
. কিহহ, কবে কখন? কোনদিন? আর আমি মধুর মা-ই বা হলাম কবে?
. ডাকি তবে মনে মনে। আর হওনাই হবা।
. মনে মনে ডাকার কি আছে? আর মধুর মা-ই হবো কেন? তবে নামটা তো অনেক সুন্দর-ই।
. ছেলে মেয়ে যাই হয় নাম রাখবো মধু এটাই ফাইনাল।
. হিহিহি ছেলে হলেও? কিভাবে? যেমন,?
. মধু শাহেব। ভালো হবেনা?
. একদম পঁচা হবে। ছেলেদের এরকম নাম হয়না। ছেলে হলে সাদ হবে।
.
কি মজা না? এভাবেই তো কাটছে দিন। অভিমান ঝগড়া আর খুনসুটিতে। তবে সব ক্ষনস্থায়ী। না পারি আমি ওকে না দেখে থাকতে না পারে ও।
.
অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হলে তো কান্না-ই শুরু করে দেয়। তবে মজার ব্যাপার হলো আমাদের মেয়েই হলো। নাম কি হবে তা তো বলা হয়েই গেছে আর কি? তবে কি বাবা হওয়ার প্রথম বারের মতো সে কি অনুভুতি তারা জানে যারা হয়েছে। আরেকটা কথা শুনায় তাহলে?
.
মাঝ রাত মধু কান্না করছে। মাত্র তো কয়েকমাস হলো ওর। মানে হিসু করে দিছে। ও মা সেহেতু আগেই টের পেলো। আমিও তবে রাতের মধ্যে দু-তিনবার হিসু করার ফলে ওর শাড়িটা চেঞ্জ করতে হবে-
. এই শুনছো?
. হুম বলো।
. তুমি তো জেগেই আছো। দেখোনা বাবু কি করছে তুমি একটু ধরো আমি আসছি চেঞ্জ করে গোসল তো করতে পারবোনা তাহলে বাবুর ঠান্ডা লাগবে।
. আচ্ছা তুমার কি মনে হয়? তুমি একাই ওর সব হুম? আমি ওর কেউ না? আমিও তো ওর বাবা। তুমিতো সারাক্ষন-ই ওর খেয়াল রাখো। আমি তো এতো সময় দিতে পারিনা বুঝই তো ব্যাস্ত থাকতে হয়।
. ও আল্লাহ তুমি রাগ করছো নাকি? আচ্ছা বাবা তুমার মধুকে তুমি একটু দেখো আমি একটু চেঞ্জ করে আসি।
. হুহ যাও, কথা বলার সময় তো আমাকে আলাদা করে দাও।
. এমা রাগ করেনা মধুর বাপ।
.
কি মজার না? হিহি একটা পরিবার এ যুগসাজোস বা বন্ধনে একটা বাচ্চা খুব সুন্দর করে সম্পর্ক। ব্যাপারটা আরো ভাল করে বুঝেছি মধু হওয়ার পর। আরেকটু বলি?
অফিসে আছি লাঞ্জ এর সময়। মধুর মার ফোন।
.
. হ্যালো শুনছো?
. আমি বয়রা না।মধু কই? আম্মুটা কি করে?
. আপাদত জিহান এর কাছে আছে চকলেট এর উপরে।
. ওহ, দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
. কিছুক্ষন আগে না অফিসে গেলা?
. কিছুক্ষন আগে কই? পুরো ৩:৩০ ঘন্টা বাজলে চললো।
. আচ্ছা শুনোনা।
.হুম কি?
. আজকে আসার সময় ওর জন্য কিছু খেলনা নিয়ে আসবে। আমাকে কাজ করতে দেয়না। ঐসয়ম খেলবে।
. আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখছি বাই।
. হুম বাই, আর শোন খেয়ে নাও তারাতারি কিন্তু।
. জ্বি মহারাণী, আপনার খাবার আমার সামনে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে।
. হি হি, বাই
. হুম বাই।
.
কি মজার না? হিহি তবে আসার সময় খেলনার সাথে অনেক গুলো গোলা ফুল আর একটা শাড়ি। দুটো একসাথে অনেক দিন হলো দেয়া হয়না। কলিং বেল চাপলাম। জিহানই ছিলো এসে দর্জা খুলে দিলো। মধু ওর কোলেই। সারাদিন ওর কাছেই থাকে বাকিটাইমটা ওর মায়ের পরে। তবে অনেক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ছেলেটা যে সবার আগে না হোক ওর মায়ের পরে সবার আগে তাকে যেন চাচ্চু মুখ দিয়ে ডাকাবে। কি মজার না? চকলেট এর উপরেই রাখে সবসময় কিন্তু ডাকে নাহ হিহি। যাই হোক রুমে গেলাম গিয়ে দেখি ও বিছানা গুছাচ্ছে। আমাকে দেখে -
. ওহ তুমি আসছো কখন? আর তুমার পিছনে কি হাতে?
. এইতো মাত্র আসলাম। হাতের পিছনে তুমার জন্য উপহার আছে।
. সত্যি? আর এই বাবুর জন্য না খেলনা আনতে বললাম কই আনছো?
. হুম ব্যাগ এ আছে।
. তো আমার উপহার টা পিছনেই রাখবা? বের করে দিবানা?
. এক সেকেন্ড এর জন্য চোখ দুটো বন্ধ করো।
হাতে কিছু ফুল আর শাড়িটা দিলাম। চোখ খুলে দেখে অনেক খুশি হলো। নীল শাড়ি লাল গোলাপ।
. আমার জন্য কেন আনতে গেলা?
. আমার বউ দুটো নাই।
. অনেক সুন্দর হইছে শাড়িটা। তবে সবসময় নীলই কেন আনো?
. জানোনা তুমি আমার নীল পরী?
কোন কথা হবেনা আর সোজা লাফ দিয়ে আমার বোকে।
. এতো ভালবাসো কেন?
. কবার বলবো বউ দুটোনা আমার।
. হুম আমারো ইয়ে দুটোনা আমিও অনেক ভালবাসি।
. বুচ্ছি, এবার ছাড়ো।
. না আমি এখন ছাড়বোনা।
. রুমের দর্জা টা খোলা আছে।
..
কি মজা না? হিহি আরেকটা ব্যাপার জিহান এর চেষ্টা সফল হয়েছে। আমার আব্বু ডাকার আগে জিহানকেই চাচ্চু ডেকেছে। এ নিয়ে সে তুলপাড় করে ফেলেছে সব। আর মাকে তো সবসময় আগেই ডাকে। কিছু মানুষ এর ক্ষেত্রে এর বিপরীতও হয়না যে এমন না।
দুঃখী আমি আমারে সবার পরে আব্বু ডাকছে।
Siam Ahmed Joy
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ