তখনও প্রাণ যায়নি আছিয়ার। খাটের পাশে নির্জীব পড়েছিল মাটির মেঝেতে। মুখের ওপরে এলো চুল নড়ছে। এখনো নিঃশ্বাস নিচ্ছে। পাশে ৮ মাসের ছেলেটা চিৎকার করে কাঁদছে। আছিয়ার মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে যেন তার ছেলে কান্না করছে। শাড়ির আঁচলটা মেঝেতে ধূলোর উপরে বাতাসে উড়ছে। দরজা দিয়ে খোলা বাতাসে ভরে যাচ্ছে ঘর। কিন্তু আছিয়ার দম নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আছিয়ার নগ্ন বুকে আঁচড়ের দাগ। তার একটু নিচেই পেটের একটু উপরে একটা ছুরি পুরোটাই গেঁথে আছে। রক্তের ধারা এখনো চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। চোখ মেলে তাকাতে পারছে না আছিয়া। সব কেমন যেন দুলছে।
পাশের বাচ্চাটা মায়ের স্তনের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। ক্ষুদায় কান্না করতে করতে হাপিয়ে গেছে। একটু আগে। এই তো ঘন্টা খানিক আগে আছিয়া ছেলেকে গোসল করিয়ে কপালে কাজল দিয়ে বুকের কাছে এনে দুধ খাওয়াচ্ছিল। ছেলে ঘুমিয়ে গেলে আছিয়া গোসল করতে যাবে। হঠাৎই দরজায় লাত্থি পড়লো। বুকের উপরে ছেলেটা কেঁপে উঠলো। আছিয়ার বুকটা ধক করে উঠলো। বেড়ার ঘরের দরজাটা অতটা মজবুত নয়। তিনজন সেটা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে গেলো।
: রশিদ ভাই তোমরা!
: চুপ থাক মাতারি।
রশিদ অন্যদের দিকে হাতের ইশারা করে বললো , "খাড়াই আছোস ক্যান। ধর খানকিরে।" একজন এসে টানাটানি করে মাসুম বাচ্চাকে ছিনিয়ে নিয়ে মাটির মেঝেতে রাখে। আছিয়ার উপরে ঝাঁপিয়ে পরে তিনজন। ছেলেটা চিৎকার করে কাঁদছে। আছিয়া মরিয়া হয়ে নিজেকে সরাতে চাইছে। কিন্তু পারছেনা। তিনজন মিলে এফোঁড়ওফোঁড় করলো আছিয়াকে।
কামড়ে আঁচড়ে আছিয়াকে ছিন্নভিন্ন করলো। যাওয়ার আগে আছিয়ার পেটে একটা ছুরি বসিয়ে দিয়ে গেলো। আছিয়া শরীর আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটা হামাগুড়ি দিয়ে মায়ের কাছে এলো। মায়ের একটা আঙ্গুল ধরলো। কান্না করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে। এখন শুধু হেঁচকি উঠছে। অনেক কষ্টে আছিয়া পাশ ফিরে শুলো। আছিয়ার স্তনে এখনো কামড়ে ছিঁড়ে যাওয়ায় রক্ত লেগে আছে। ছেলেকে আরেকটু কাছে এনে মুখে একটা স্তন ঢুকিয়ে দিলো। বাচ্চাটা মায়ের আঙ্গুল ছেড়ে চুল ধরে আছে। আছিয়া ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দুলছে আছিয়ার সবকিছু। আছিয়ার স্বামীর কথা মনে পড়লো। মানুষটা যে কখন বাড়ি ফিরবে! কাল সন্ধ্যায় বাজার থেকে ওর জন্য ছয়টা লাল রঙের কাঁচের চুড়ি নিয়ে এসেছিল। আর ছেলের জন্য একটা কান টুপি। আর কিছুদিন পরে শীত আসবে। আগে থেকেই সব কিনে রাখছে।
: তুমি আজ একটু সাঁজবা।
: আপনের হইছেটা কি।
: তোমার ঐ লাল শাড়িটা পড়ো। আর এই চুড়ি গুলান।
: আপনের কি মাথা খারাপ হইয়া গেছে। চুড়ির শব্দে পুলার ঘুম ভাইঙ্গা যাবে।
: ভাঙলে আবার ঘুম পারাই দিবা।
: আপনের পুলা দিন দিন দুষ্টু হইতাছে। সহজে কি হেরে ঘুম পারানো যায়।
: কেন কি করছে আমার মানিকে।
: দেখেন নাই আপনের মানিকের দাঁত জালাইছে।
: হ। তাতে হইছে ডা কি ?
: আপনে তো আর দুধ খাওয়ান না। খাওয়াই আমি। আমি বুঝি কি জ্বালান জ্বালায় আপনের মানিকে।
: হা হা হা তুমারে তো বেশি ভালা পায় এই জননি জ্বালায় বুঝলা বউ।
: আপ্নে তো আর কামড় খান নাই খাইলে বুঝতেন। না পারি চিল্লাইতে না পারি কাউরে কইতে।
আছিয়ার স্বামী মবিন আরেকটু এগিয়ে এলো আছিয়ার কাছে। মবিনের মনে ভয়। এই জায়গা থেকে ওদের চলে যাওয়া দরকার। কিন্তু আছিয়াকে বলতে পারছে না। আছিয়ার দিকে অনেকে চোখ দিয়েছে এটা বুঝতে পেরেছে মবিন। ওদের আসে পাশে বাড়ি ঘর নেই। যা আছে তাও পাঁচ ছয় মিনিটের পথ। এই জন্য মবিনের ভয় আরো বেশি। নদীতে ভিটা বাড়ি চলে যাওয়ায় এখানে একটা আশ্রয় নিয়ে আছে।
: আপনে কি ঘুমাবেন না।
আছিয়ার কথায় চিন্তার সুতোয় টান পরে মবিনের। ভয়ের কথাটা কি আছিয়াকে বলবে। না থাক পরে বলা যাবে।
: তুমি একটু সাজ না বউ।
: উহু আইজ না কাইল সাজবানী। আপনে যেমুন পছন্দ করেন অমুন কইরা সাজুম।
: ঠিক তো।
: হ ঠিক। আসেন ঘুমান।
মবিন পেছন থেকে আছিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ের কাছে নাক গুঁজে দিয়ে ঘুমিয়ে যায়। আছিয়ার বুকে ছেলেটা কামড় দেওয়ায় আছিয়া আবার বাস্তবে চলে আসে। ছেলেটা মায়ের চুল নিয়ে খেলছে আর দুধ খাচ্ছে। ছেলেকে আরেকটু কাছে টানলো আছিয়া। ছেলেটা হঠাৎ পা নড়াচড়া করায় আছিয়ার পেটে গেঁথে থাকা ছুরিটা আরেকটু গেঁথে গেলো। আছিয়া ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো। ছেলের মাথায় হাত রাখলো । খুব ইচ্ছে করছে ছেলের কপালে একটা চুমু দিতে কিন্তু পারছেনা। আছিয়ার পুরো দুনিয়া ফিকে হয়ে গেলো। একটা মাত্র দীর্ঘশ্বাস এরপরে একদম স্থির। বাচ্চাটা মায়ের দুধ খাচ্ছে বলে বোঝা যাচ্ছে না ঐ বুকের হৃদস্পন্দন থেমে গেছে। আছিয়ার মুখের উপরে চুল। কিন্তু নড়ছে না। আছিয়ার নিঃশ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে এই পৃথিবী থেকে।
বাচ্চাটা তখনও মায়ের দুধ খাচ্ছে। মাসুম বাচ্চাটা জানেও না তার মা আর বেঁচে নেই। কিন্তু তার মা মৃত্যুর আগেও তাকে অভুক্ত রেখে যায়নি। বাড়ির বাইরে বিকেলের সোনা সোনা রোদ। বাতাসের সাথে রোদ ও উঁকি দিচ্ছে ঘরের ভাঙ্গা দরোজায়। ছোট্ট বেড়ার ঘরে মেঝেতে মৃত পরে আছে আছিয়ার শরীর। বাতাসে উড়ছে শাড়ির আঁচল। শুধু একটা নিষ্পাপ বাচ্চা এই পৃথিবীর সেরা আশ্রয়ে শুয়ে আছে। বাচ্চাটা জানেনা। এটাই তার শেষবারের মতো তার মায়ের দুধ খাওয়া। এটাই তার শেষবারের মতো সেরা আশ্রয়ে শুয়ে থাকা। পৃথিবীর কিছু মানুষ রূপী কুকুর হায়েনার কারণে সাধারণ মানুষ গুলো, নিষ্পাপ মানুষ গুলো এভাবেই তাঁদের আশ্রয়কে হারিয়ে ফেলে। অশান্তিতে ভরে উঠে পৃথিবী। আমরা সাধারণ মানুষরা বুঝি না, এতো কিছুর পরেও ঈশ্বর কি করে চুপ করে থাকেন। কতটা কষ্ট তিনি সহ্য করে যান। এই জন্যই হয়তো তিনি ঈশ্বর।
তবুও ঈশ্বর বেঁচে থাকে || শাকিল রনি
#শাকিল_রনির_পোস্ট_সমগ্র
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ