āĻļুāĻ•্āϰāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ļ āĻ…āĻ•্āϟোāĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3490

গল্পঃ লাবণ্যময়
__ Siam Ahmed Joy (গান গবেষক)
এক…
- আব্বু আব্বু, আমি আম্মুর কাছে যাবো।
- কিহ? এই মেয়ে কে তোমার আব্বু?
- কেন? তুমি আমার আব্বু।
- এমন বলেনা আম্মু। আমি তো তোমাকে আদর করে আম্মু বলি। কিন্তু আমি তো তোমার আব্বু না।
- না আমি এত কিছু জানিনা। তুমিই আমার আব্বু। নাহলে তুমি আমাকে প্রতিদিন চকলেট কিনে দাও কেন?
পরলাম বিপদে।
বাচ্চাকাচ্চা দেখলে কার না আদর করতে ইচ্ছে করেনা?
কিন্তু একেবারে আমাকে আব্বু বানিয়ে দিলো?
এসব ভাবার আগেই আবার পিচ্চি বলে উঠলো।
- এইতো আম্মু এসে গিয়েছে।
আমি ভাবলাম বাঁচলাম বুঝি।
মেয়েটা এসে পিচ্চিটাকে কোলে নিলো।
আমার দিকে একটু তাকালো, তারপর বললো।
- আপনিই বুঝি নিঝুমকে প্রতিদিন চকলেক কিনে দেন?
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম।
- হুম।
- কেন? এতো চকলেট দেয়ার কি আছে? বাংলাদেশে কি আপনার চকলেট কিনে দেবার মানুষ অভাব পরেছে?
- না মানে আমার বাচ্চাকাচ্চা দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। আর আপনার বাবুটা তো অনেক কিউট দেখতে।
- ও হ্যালো। আমার বাবু না নিঝুম।
- বুঝলাম না। আপনাকে তো আম্মু আম্মু বলে ডাকছে।
- আপনাকেও তো আব্বু আব্বু বলে ডাকলো কিছুক্ষণ আগে। তারমানে কি আপনি নিঝুমের আব্বু?
- আরে তা হবে কেন? আমি তো আদর করে ডাকি।
- আমিও আদর করে ডাকি। কিন্তু নিঝুম আমারই মেয়ে।
- আপনার কথা আমার মাথায় ঢুকছেনা।
- মাথায় না ঢুকলেও চলবে। কানে ঢুকিয়ে নেন ভাল করে। নিঝুমের কাছে আসার কোন চেষ্টা করবেন না আর। ঠিকাছে?
- তাহলে নিঝুমের আব্বু আম্মু কোথায়? মেয়েটা যে প্রতিদিন আম্মু আব্বু করে। তাঁরা কোথায়?
- সেটা আপনার না জানলেও চলবে।
এরই মধ্যে পিচ্চি আবারো বলে উঠলো।
- আম্মু আম্মু কি বলো? তুমি আমার আম্মু না?
- হুম আম্মু তো। তোমার আম্মু।
- তাহলে আব্বুকে এসব কি বলছো?
- না না আম্মু। ইনি তোমার আব্বু না।
- তুমি বললেই হবে নাকি? ইনিই আমার আব্বু।
আমি আর কিছু না বলে স্কুলের সামনে থেকে চলে আসি।
সেখানে থাকলে আরো কথা কাটাকাটি হতো।
স্কুলের সামনে আমি বিনা কারনে যাইনা আবার বিনা কারনেই যাই।
অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে স্কুলটাকে গিরে।
স্কুল বলতে স্কুলের সামনে জলপাই গাছের নীচের বেঞ্চটাকে গিরে।
প্রতিদিন সুপ্তাকে আনতে যেতাম।
সুপ্তা আমার ভাইয়ের মেয়ে।
এখন আর সুপ্তা পৃথিবীতে নেই।
কি অভাগা কপাল।
সুপ্তা কেন ভাবী ভাইয়া কেউই পৃথিবীতে নেই।
ভাবী মায়ের সমান।
আমার মাকে আমি চোখে দেখিনি।
কিন্তু ভাবীকে দেখেছিলাম।
সারাবাড়ির কাজ আর পুরো বাড়ি একাই সামলাতো।
কোন কাজের মানুষ রাখতে দিতোনা।
সারাদিন থাকতাম সুপ্তাকে নিয়ে।
সুপ্তাকে নিয়ে কত জায়গায় ঘুরেছি।
পিচ্চিটা সারাদিন আমার কাঁধে ঝুলে থাকতো।
ছোটব্বু ছোটব্বু করতো সারাদিন।
স্কুল শেষে স্কুলের সামনে জলাপাই গাছের নীচের বেঞ্চে বসে থাকতো।
আমি আনতে না গেলে আসতোনা।
স্বয়ং ভাবী গেলেও আসতোনা।
আর সাথে যদি চকলেট না থাকতো তাহলে সেই কান্না আর থামায় কে?
একারণেই নিঝুমের কাছে যাই প্রতিদিন।
সেই বেঞ্চটাতেই বসে থাকে সুপ্তার মতো।
আমিও গিয়ে চকলেট দেই।
কদিনে ভাল সম্পর্কই তৈরি হয়ে যায়।
নিজের আব্বু ভাবতে কেন শুরু করে দিলো সেটা নিয়ে আমিই চিন্তায় আছি।
সুপ্তা ভাইয়া আর ভাবী তিন জনেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।
গাড়ি ব্রেক ফেইল করেছিলো।
সেদিনের কথা আর মনে করতে চাইনা।
কিন্তু মনে না করতে চাইলেও সুপ্তা, ভাবী, ভাইয়ার কথা মনে পরে যায়।
কিন্তু আজকে বেশী মন খারাপ।
নিঝুমের কাছে যেতেও মানা করে দিলো!
বসে বসে কার্টুন দেখছি।
আসলে কার্টুন দেখা আমার সাজেনা।
সুপ্তার সাথে বসে প্রতিদিনই কার্টুন দেখতে হতো।
আর ভাবী এসে সামনে কিছু চকলেট রেখে যেতো।
এতো বড় বাড়ি।
কিন্তু মানুষ আছে চারজন।
আমি, বাবা, ছোটবোন, আর রহিম চাচা।
রহিম চাচার কাজ মূলত রান্না করা।
কদিন কেটে গেলো।
কিন্তু আর পারছিনা নিঝুমকে না দেখে থাকতে।
স্কুলের সামনে আবার গেলাম আজ।
মেয়েটার প্রতি সুপ্তার মায়া লেগে গিয়েছে।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছি।
আজকে হাতে চকলেট, আইস্ক্রিম কিছুই নেই।
কিছুক্ষণ পর নিঝুমকে নিতে সেই মেয়েটা আসলো।
কোনভাবে মনে হয় আমাকে দেখে ফেলেছে।
নিঝুমকে নিয়ে আমার সামনে আসলো।
আমার লজ্জা হচ্ছে।
কিন্তু আমি নিঝুমের সামনে সামনে যাইনি।
আমাকে দেখতেই নিঝুম বলে উঠলো।
- আব্বু আব্বু তুমি কদিন ধরে আসোনা কেন?
আমি কি উত্তর দিবো বুঝতেছিনা।
পিছনের দিকে ফিরে হাটতে শুরু করবো এমন সময়।
- এইযে দাঁড়ান।
আমি দাঁড়িয়ে বললাম।
- আমি নিঝুমের কাছে যাইনি। আর চকলেট, আইস্ক্রিম কিছুই দেইনি।
মেয়েটা হাসলো। তারপর বললো।
- সেদিনের জন্য দুঃখীত। সমস্যা নেই আপনি নিঝুমের কাছে আসতে পারেন।
আমি অনেক খুশী হয়ে বললাম।
- সে কিছুনা।
- আজ তাহলে গেলাম।
আমার সামনে একটি রিকশা ডেকে নিয়ে দুজনে চলে গেলো।
মনটা খুব ভাল হয়ে গেলো।
.
দুই…
.
আজকে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো অনেক।
কথা ছিলো সকাল দশটায় লাবণ্যর সাথে দেখা করব।
কিন্তু ইতিমধ্যেই দশটা দশ বেজে গিয়েছে।
তারাহুরু করে তৈরি এক দৌড়ে রিকশা নিয়ে একেবারে লাবণ্যর সামনে।
লাবণ্য আমার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের হাতের ঘড়িটা দেখলো।
আমি ভয়ে কাঁপছি।
না জানি কি বকুনি দেয়!
আমি কানে ধরলাম।
লাবণ্য হেসে বললো।
- হয়েছে আবার কানে ধরতে হবেনা।
আমি বসে বললাম।
- তোমার মেয়ের কি খবর?
- হুম ভালই। সে ঘুমুচ্ছে।
- এতো বেলায়ও ঘুম?
- হুম। নিঝুম স্কুলে না গেলে নাস্তা করে আবার ঘুমায়। আমি ঘুম পারিয়ে দিয়ে এলাম।
- বাহ বাহ।
- আচ্ছা আপনি তো কখনো জানতে চাইলেন না যে নিঝুম কিভাবে আমার মেয়ে হলো?
- হুম আসলেই তো। বলো তো কবে তুমি গর্ভবতী ছিলে।
- তাই না? আমি গর্ভবতী ছিলাম? থাক আর বললাম না।
- আরে আরে রেগে যাও কেন? আমি তো মজা করে বললাম। বলো বলো।
- নিঝুমের বাবা মা আমাদের বাসার পাশেই থাকতো। প্রায়ই দেখা হতো। আমি উনাদের বাড়িতে যেতাম। নিঝুম আসার আগে ভালই চলছিলো তাঁদের সংসার। নিঝুম হওয়ার পর থেকে অশান্তি শুরু হলো। আসলে নিঝুমের বাবা নেশাখোর ছিলো। প্রতিদিন মারধর করতো। এত চাপ সহ্য করতে না পেরে একদিন আত্মহত্যা করলো নিঝুমের মা। নিঝুম তখন খুব ছোট। নিঝুমের বাবা হাফ ছেড়ে বাচলেন। নিজের মেয়ের কথা একবারও ভাবলেন না। এমন কি নিজের মেয়ে হিসেবে মেনেও নেয়নি। তারপর উনি আবার বিয়ে করলেন। এরপরে নতুন বিয়ে করে কোথায় যায় তা জানিনা। যাওয়ার আগের দিন আমি নিঝুমকে রেখে দিয়েছিলাম। জানতাম জানোয়ারটা গলা টিপে মেরে ফেলবে মেয়েটাকে। তারপর বাসায় আনলাম। আর বাসার সবাইও সব জানতো এ ব্যাপার সবাই ভাল চোখেই দেখলো। আর সেই থেকেই আমি নিঝুমকে লালনপালন করি।
- ক্ষিদে পেয়েছে ।
- হ্যাঁ এখন তো পাবেই।
- দেখো আমি নাস্তা করিনি। খাবো চলো।
- আমি আপনাকে একটা কথা বললাম! কথা কি একটা কাহিনী। আর আপনি আছেন খাওয়া নিয়ে। বেশ উন্নতি হয়েছে আপনার।
লাবণ্য রাগ করে হাঁটা আরম্ভ করলো।
আমি জানি লাবণ্যকে হাজার বকা দিলেও সে কিছু মনে করবেনা কিন্তু নিঝুমের ব্যাপারে কিছ্য সহ্য করতে পারেনা।
মা জাতীর এক অদ্ভুত মায়া।
যাকে ভালবাসে তাঁকে জীবন দিয়ে ভালবাসবে।
আর যাকে ঘৃণা করবে তাঁর নামটা পর্যন্ত শুনতে পারেনা।
দোকান থেকে কিছু চকলেট আর একটি মেহেদী কিনে দিয়েছি।
নিজের জন্য হলে যতটা খুশী হতো তারচেয়ে বেশী খুশী হয় নিঝুমের জন্য কিছু দিলে।
রাতে জিজ্ঞেস করেছিলো ফোনে আমার প্রিয় রঙ কি?
আমি বললাম নীল।
পরেরদিন স্কুলের সামনে দেখা করার কথা বলে।
উপহার ছিলো নীল রঙের পাঞ্জাবী।
যদিও পাঞ্জাবী খুব একটা আমি পরি না।
নিঝুমের হাতে পায়ে মেহেদী লাগানো।
পিচ্চিটাকে আরো অনেক সুন্দর লাগছে।
লাবণ্যর কথা নাইবা বললাম।
মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা কিছু খেতে গেলে যখন নিঝুম আমাকে আব্বু আব্বু বলে তখন মানুষ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
আসলে আমাদের বিয়ে-টিয়ে কিছুই হইনি অথচ আমাদের একটা বাচ্চা আছে!
সবাই তো আর ভীতরের ব্যাপারটা জানেনা।
আর চেনাপরিচিত কেউ দেখলে তো তুমূল কান্ড বাঁধে।
যার জন্য ব্যাপারটা বাড়িতেও জেনে যায় সবাই।
সবাই বলতে কতজন আর আছেইবা!
আজকে সকালে লাবণ্য ফোন দেয়নি।
ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক।
কারণ কোনদিনই লাবণ্য কমপক্ষে সকালে ফোন দেয়া মিস করেনা।
আমিও যে ফোন দেইনি তাও না।
আমিও দিয়েছিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ।
বেশী চিন্তা করিনি কারণ আজকে নিঝুমের স্কুল খোলা সেখানেই দেখা হবে।
কিন্তু আজকে দূপুরে সেখানেও দেখতে পেলাম না।
স্কুলের শিক্ষকগণদের সাথে আমার বেশ ভালই পরিচয় আছে।
তাই সহজেই জানতে পারলাম আজকে নিঝুম স্কুলে আসেনি।
এবার মনে খটখা লাগলো।
লাবণ্যদের বাড়িতে কোনদিন যাইনি তবুও আজ যাবো বলে নিয়ত করলাম।
কিন্তু লাবণ্যর বাসার একটু কাছে যেতেই লাবণ্যর ফোন!
ফোন দিয়েই কান্নাকাটি করছে।
আমি বুঝলাম খুব জটিল কিছু একটা হয়েছে।
নাহলে কমপক্ষে এভাবে কান্না করতোনা।
কি হয়েছে জিজ্ঞেস করার পর আরো কান্না করলো।
অনেক্ষণ পর কান্না থামিয়ে বললো যে নিঝুমের বাবা এসে নিঝুমকে নিয়ে গিয়েছে। নিঝুম নাকি খুব কান্না করতেছিলো কিন্তু কিছুই তো আর করার নেই।
নিজের মেয়ে তো আর না।
আমার যে কম কষ্ট হচ্ছে তা না।
আমারও অনেক কষ্ট হচ্ছে।
যদি আমাকে আগে বলতো তাহলে যেভাবেই হোক কমপক্ষে লাবণ্যর জন্য হলেও নিঝুমকে ভিক্ষা চাইতাম।
তা আর সম্ভব হলো কই?
মানুষ এমন কেন?
এখন নিঝুম কি করবে?
পিচ্চি মেয়েটার ভবিষৎ একেবারে পানি করে দিয়েছে।
এখন বাবার যদি একটু দয়া হয়।
মা তো আর নেই দুনিয়ায়।
যে একজন ছিলো লালণ্যমা হয়ে।
তাঁর কাছ থেকেও নিয়ে নিলো।
কিভাবে নিঝুম ভাল থাকবে?
বাচ্চারা কি সৎ মায়ের কাছে ভাল থাকতে পারে?
সে উত্তর আমার জানা নেই।
অদ্ভুত এই দুনিয়ার মানুষের সব অদ্ভুত কারবার।
যা ভাবা যায়না তারচেয়েও বেশী কিছু হচ্ছে আবার যা ভাবা হচ্ছে তার ছিটেফোঁটাও হচ্ছেনা ।
মায়াময় পৃথিবীতে এমন অনেক সন্তান আছে যাদের কাছে বাবা, মা থেকেও নেই। সবই উপর ওয়ালার খেলা।
.
তিন…
.
ঘুমু চোখ খুলেই দেখি সাতটা তেরো বাজে। ও মাই গড! অফিস শেষ সেই কত আগে!
সব কর্মীরা চলে গিয়েছে সেই কখন!
আমি এখনও বোকার মতো ঘুমুচ্ছি।
চোখ ক্যাঁচলিয়ে নিজেকে আবিস্কার করলাম।
আরে আমি তো অফিসে!
আজকে বাসায় জায়গা হবে কি না সেই চিন্তা করেই ভয়ে গা কাঁপছে।
কিছু সাদা গোলাপ আর আইস্ক্রিম নিলাম।
ইয়ে মানে সাদা রঙ নাকি শান্তির প্রতীক সেজন্য আর বাসায় আইস্ক্রিম আছে তবুও নিজের হাতে নিয়ে যাবার মাঝে অন্যরকম স্বাদ আছে।
আসলে যা সহজেই পাওয়া যায় সেটার মাঝে স্বাদ পা সুখও স্বল্প সময় থাকে আর যেটা কষ্ট করে অধিক সময় নিয়ে পাওয়া যায় সেটার স্বাদ, আনন্দ মজাই থাকে অমৃত।
ফোনের মধ্যে ইতিমধ্যে শতেকখানেক বার্তা জমা হয়ে গিয়েছে।
সেগুলোর উত্তর দিতে গিলে আরো এক ঘন্টা লেগে যাবে।
এতো এতো প্রশ্ন আল্লাহ!
দরজার বেল চেপে দাঁড়িয়ে আছি।
এমন ভাব হচ্ছে নিজের মাঝে যেন সাতটে খুন করে এসেছি।
ইয়ে মানে এত ইতস্তত হওয়ার কারণ হচ্ছে গত এক মাস পর আজকে তারিখ দিয়েছিলাম যে বিকেলে এসে ঘুরতে নিয়ে যাবো আর মহারাণী অবশ্যই সাজুগুজো করে বসে অপেক্ষায় ছিলো।
বুঝতেই পারছেন কত বড় অন্যায় আমি করে ফেলেছি।
আর রাগ ভাঙ্গানোর জন্য মূলধন আছে শুধু গোলাপ আর আইস্ক্রিম যদি কাজে না লাগে তাহলে আর কি আজকে রাতটা অন্য কারো বাসায় কাটাতে হবে।
এর আগেও দুয়েকবার এ ঘটনা ঘটেনি যে তা না।
ঘটেছে বলেই তো আমি এতো ভয় পেয়ে আছি।
মনে মনে ঠিক করে রেখেছি যে দরজা খুললেই জড়িয়ে ধরবো।
চিন্তা তো বেড়েই যাচ্ছে।
কখন বেল চাপলাম এখনো দরজা খুলছেনা!
আরো অনেকবার বেল চাপার পরেও দরজা খুললোনা।
আসলে পুরোনো বাসাটা পরিবর্তন করেই মহা ভুল করেছি।
নাহলে কমপক্ষে বাবা নাহয় মিলি (ছোটবোন) দরজা খুলতো।
নতুন বাসায় আগে পাঠালো আমাদের।
কেন সবাই আসলে একেবারে কি অমন ক্ষতি হতো?
বহু অপেক্ষার পর দরজার ওপাশ থেকে লাবণ্য বললো।
- কে ওখানে? এত বেল চাপছেন কেন?
আমি খুব ভাল করেই জানি আমি বেল চাপছি তা ভাল করেই জানে লাবণ্য।
নাহলে এই সময় কেউ আসবেনা।
আসার কথাও নয়। ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম।
- আমি লক্ষি, লক্ষি আমি।
ঝাড়ি দিয়ে বললো।
- আমি কে? নাম নেই নাকি? আর কাকে লক্ষি বলছেন? লক্ষি নামের কেউ এই বাসায় থাকেনা।
বুঝলাম ভালই খেপে আছে। খেপে থাকার কারণও আছে।
- দেখোনা এইযে কানে ধরছি। না না বাহিরে দাঁড়িয়ে কানে ধরলে তো তুমি দেখবেনা। দরজাটা খুলো আমি কানে ধরছি।
- ও আচ্ছা আপনি তাহলে। যান যান এই বাসার দরজা আজকে খোলা হবেনা।
আমি আর কথা না বারিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
এখন কান্না করলেও দরজা খুলবেনা।
যদি রাগটা কমে তাহলে যদি দরজাটা একটু খুলে।
মশার কামড় খাচ্ছি।
ঘুমের জন্য কত শাস্তিই না পেতে হচ্ছে।
অনেক্ষণ পর মহারাণী দরজা খুলে চলে গেলো।
টেবিলে খাবার তৈরি করা নেই।
বুঝলাম আজকে রান্না হয়নি।
হওয়ারও কথা ছিলোনা।
আজকে বাহিরে খাওয়ার কথা ছিলো।
চোখের কাজল দেখে বুঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে শাড়ি পরিবর্তন করেছে।
জড়িয়ে ধরতে যাওয়ার সাহস পেলাম না।
যা রেগে আছে বাপ!
রুমের বাতি জ্বালিয়ে কান ধরে উঠবস করছি।
তাছাড়া কোন উপায় নেই।
অনেকবার উঠবস করার পর বুঝলাম মনটা একটু গললো মনে হয়।
সাদা গোলাপ এনে প্রপোজ করলাম।
মনে করেছিলাম এতে একটু রাগ কমবে কিন্তু আমার ফুলই নিলোনা!
ফুলগুলো খাটের উপরে রেখে আইস্ক্রিম এনে আইস্ক্রিম দিয়েও প্রপোজ করলাম।
প্রপোজের উদ্দেশ্য ছিলো যেন আজকে ক্ষমা করে দেয়।
সে চেষ্টাও গেলো বিফলে!
হতাশ হয়ে আবার কান ধরে উঠবস করব ভাবলাম কিন্তু সাহস নিয়ে এবার জড়িয়েই ধরলাম।
ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছিলো।
কিন্তু আমি ছাড়ছিনা তো ছাড়ছিনা।
চোখে আগুন নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
- কি ব্যাপার ছাড়ছোনা কেন?
- ছাড়বোনা মানে ছাড়বোনা।
- এখন ঢং করতে এসেছ না? বিকেল থেকে অপেক্ষা করছিলাম। সাজুগুজো করে বসে ছিলাম। কিন্তু তোমার আসার সময় হলো রাত আটটা বাজে। ছাড়ো বলছি।
- দেখো আমি ঘুমিয়ে পরেছিলাম। বিশ্বাস করো।
- হ্যাঁ থাকেন আপনি আপনার ঘুম নিয়ে।
- সরি তো। এখনো রাগ করে থাকবে?
লাবণ্য কোন কথা বললোনা। অনেক্ষণ পরে বললো।
- আর কিন্তু এই ভুল করবেনা। মনে থাকবে?
- থাকবে থাকবে থাকবে। একশোবার থাকবে হাজারবার থাকবে।
- হ্যাঁ বারবার এক কথাই বলো। তারপর সত্যিই আগেরবারের মতো ভুলে যাও।
- তোমার চুলের কসম আমি যদি পরেরবার ভুলে যাই তাহলে তোমার মাথা থেকে একটি চুল ঝড়ে পরে যাবে।
- হয়েছে সাহেবের তেল দেয়া।
- ক্ষিদে পেয়েছে তো। সেই দূপুরে খেয়েছি। কিছু আনো খাই।
- কি পাষান তুমি। আমিও তো দূপুরেই খেয়েছি। এর পরে কি খেয়েছি? আর তুমি বলছো, কিছু আনো খাই।
- আমি খাবো মানে দুজন একসাথে খাবো। সেটা তো আর বলতে হয়না।
- আইস্ক্রিম ছাড়া কিছুই নেই। খাবে কি?
- তোমার ক্ষিদে পায়নি?
- আমি আইস্ক্রিম খেয়ে রাত পার করে দিতে পারবো।
- না না না। আমি থাকতে তুমি শুধু রাতে আইস্ক্রিম খেয়ে রাত পার করে দিবে? না সম্ভব না। তুমি দাঁড়াও আমি রান্না করে আনছি।
- ভাল লেগেছে সাহেবের ডায়লগ।
- এই আসোনা।
- কোথায় আসবো?
- রান্না করি। রাতে খেতে হবে তো নাকি।
- হুহ রান্না করি। রান্না করতে পারো তুমি?
আমি মন ভার করে বললাম।
- আচ্ছা ঠিকাছে।
লাবণ্য ভেংচি দিয়ে বললো।
- হুহ অসময়ে ঘুমিয়ে পরে এখন আবার ঢং দেখায়। আসো দেখি কিছু রান্না করতে পারি কি না। তবে ডিমভাজী তুমি করবে।
- শুধু ডিমভাজী কেন আমি তো সবই রান্না করতে পারি। না মানে খেতে পারি।
লাবণ্য রান্না করছে।
তার আগে অবশ্য লাবণ্যর খোপায় গোলাপ ফুল গুঁজে দিতে হয়েছে আর আইস্ক্রিম খাইয়ে দিতে হয়েছে।
লাবণ্য সত্যিই আইস্ক্রিম খেয়ে রাত পার করে দিতে পারবে। আমার জন্য রান্না করছে আরকি।
.
চার…
.
আমি লাবণ্যের হাতটা ধরে আছি।
লাবণ্য খাটে শুয়ে আছে।
পাঁচদিন হলো আমাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়েছে।
এখনো কোন নাম রাখা হয়নি।
লাবণ্য আমার দিকে চেয়ে বললো।
- তোমার বাবুর নাম কি রাখবে ভেবেছ?
- উঁহু। বাবু তো আমার একার না। আমি একা কেন নাম রাখবো?
- জানো আমার না বাবুর নাম নিঝুম রাখতে ইচ্ছে করছে। কতদিন হলো নিঝুমকে দেখিনা। প্রতিমুহুর্তে নিঝুমের নিস্পাপ চেহারা আমার সামনে ভেসে উঠে জানো?
- কি বলো? আরে আমি তো মনে মনে এই নামই ঠিক করে রেখেছিলাম নিঝুমের কথা ভেবে।
- সত্যিই?
- কেন বিশ্বাস হলোনা?
- হয়েছে তো।
- তাহলে সত্যিই বললে কেন?
- মাইর দিতে হবে তোমাকে। ইদানিং খুব কথা প্যাঁচানো শিখছো।
- এখন আর আমি একা নই হুহ। আমার সাথে আমার মেয়েও আছে। আমাদের দুজনের সাথে তুমি পারবে না।
- এহ বলছে তোমাকে তোমার সাথে তোমার মেয়ে থাকবে।
- দেখো দেখো কিভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়েই বলছে, আব্বু আমি তোমার সাথে আছি।
- নাহ একদম না। তোমাকে দেখে বাবু ভয় পেয়েছে হিহি।
- সত্যিই? তাহলে কি আমি রুম থেকে চলে যাবো?
- বেশী বুঝো না? থাকো এখানে। সারারাত হাত ধরে থাকবে।  তোমার তো আজকাল দেখাই পাওয়া যায়না।
- সারাক্ষণই পাশে পাশে থাকি আবার তাও কিনা দেখা পাওয়া যায়না।
- আরো থাকতে হবে হুঁ।
দেখতে দেখতে মেয়েটা বসতে শিখলো।
হাঁটতে শিখলো।
এক দুই তিন করে কয়েকবছরে পা দিলো।
ভর্তি করা হলো সেই স্কুলেই।
মানুষ সঙ্গীনির প্রতি হয়তো একসময় ফিকে হয়ে যায় কিন্তু সন্তানদের প্রতি নয়।
প্রতিদিন স্কুলে দিয়ে যাবার দ্বায়িত্বটা আমার কিন্তু নিয়ে আসার দ্বায়িত্ব লাবণ্যর।
সময় পেলে আমিও মাঝে মাঝে স্কুল থেকে নিয়ে আসি।
একটি মেয়ে একটি জান্নাত।
একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখলাম।
বাবু হিসেবে সবাই বেশী মেয়ে বাবুই চায়।
ছেলেরাও চায় মেয়েরাও চায়।
এজন্যই দুনিয়ায় মেয়ে বেশী ছেলেদের তুলনায়।
আবার সেই ছেলে মেয়েরাই একদিন বাবু হিসেবে ছেলের থেকে মেয়ে বাবু হিসেবে আল্লাহর কাছে বেশী চাইবে।
মোটকথা প্রথমে মেয়ে বাবু পরে ছেলে বাবু।
মোটকার আগের কথা সব খানেই লেডিস ফার্স্ট।
লাঞ্চের সময় লাবণ্যর ফোন।
- খেয়েছ?
- হু।
- কি হু? আমি খেয়েছি কি না জিজ্ঞেস করবে না?
- জিজ্ঞেস করলে উত্তর হবে, না। এটা আমি ভাল করেই জানি। আমার খাওয়ার খোঁজ না  নেয়ার আগ পর্যন্ত তুমি খাওনা সেটাও জানি।
- হয়েছে হয়েছে এতো কথা বলতে হবেনা। শুনো আমি আজকে নিঝুমকে আনতে যেতে পারবোনা। আমার একটু নিঝুমের নানু বাড়িতে যেতে হবে। আম্মু ফোন করেছিলো। সঠিক সময়ে যেন নিঝুমকে আনতে যাওয়া হয়।
- আচ্ছা ঠিকাছে।
- শুনো নিঝুমকে নিয়ে বাসায় আসার দরকার নেই সোজা আপনার শ্বশুরবাড়ী চলে যাবেন। মনে থাকবে।
- থাকবে।
- ভাল ছেলে। আল্লাহ হাফেজ।
- হ্যাঁ নিজে খেতে না যেন আবার না ভুলে।
- হুঁ।
আজকে কোনমতেই ঘুমানো যাবেনা।
ভুলেও না।
তাহলে আমার খবর বারো গুন তিন বারো করে দিবে লাবণ্য।
অফিস শেষ।
চকলেট নিয়ে স্কুলের সামনের সেই জলপাই গাছের নীচের বেঞ্চটাতে বসে আছি।
এখানে বসলেই বা এই জায়গার আশেপাশে আসলেও ভাইয়া, ভাবী সুপ্তা আর নিঝুমের কথা মনে পরে যায়।
স্কুল ছুটির ঘন্টা বাজলো।
ছোট ছোট পায়ে দৌড়ে এসেই কোলে উঠে পরলো।
আমাকে দেখে অবাক হয়েছে নিঝুম।
খুশীতে আত্মহারা।
চকলেট পেয়ে আরো খুশী।
বাচ্চাদের খুশী করতে বেশী কিছু লাগেনা।
অল্পতেই খুশী থাকে।
এই মুখ গুমড়া করে রাখবে এই আবার হাসছে খেলছে।
হঠাৎ নিঝুম বললো।
- আব্বু আমি গাড়ি দিয়ে যাবোনা। রিকশা দিয়ে যাবো।
কথা মতো গাড়ি থেকে নেমে রিকশা নিলাম।
কিন্তু তিন মিনিট পার হতেই আবার বললো।
- আব্বু আমি রিকশা দিয়ে যাবোনা। আমি হেঁটে হেঁটে যাবো।
আবার কথা মতো রিকশা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলাম।
আসলে হেঁটে গেলেও নিঝুমের নানু বাড়ি পনেরো মিনিটের দূরত্ব।
আমার আঙুলেত হাত ধরে হাঁটছে।
আবার বলে উঠলো।
- আব্বু তুমি এতো ভুলোমনা কেন?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
- কেন আম্মু? আবার আব্বু কি করেছে?
- এইযে আম্মু প্রতি শনিবার হাতে মেহেদী দেয় তুমি জানোনা? আম্মুর জন্য আজকে মেহেদী কিনেছ?
আমি সত্যিই অবাক।
এই ব্যাপারটা আমার একদমই মনে থাকেনা কিন্তু পিচ্চিটার কিভাবে মনে থাকে?
যাক ভালই হলো।
পাশের এক দোকান থেকে মেহেদী কিনলাম।
আবারো বলে উঠলো।
- আব্বু আমার হাঁটতে ভাল লাগছেনা। কোলে উঠবো।
কি আর করা নিলাম কোলে।
পাঁচ মিনিট হাঁটার পরেই নিঝুমের নানুর বাড়ি পৌঁছালাম।
লাবণ্য দেখে একটু রাগই হলো হেঁটে এসেছি বলে।
অনেকদিন পর শ্বশুরবাড়ি এসেছি।
অনেক রান্নাবান্না করা হয়েছে।
কত খাওয়া যায়?
নিঝুম সারা বাড়ি দৌড়াদৌড়ি করছে।
বাচ্চা মানুষ নানু বাড়ি এলে যা করে আরকি।
লাবণ্যর সাথে খুব বেশী কথা হয়নি।
সন্ধার পর জিজ্ঞেস করলো।
- কি ব্যাপার সাহেব? আমার দিকে আপনার নজরই নেই।
- তোমার চোখগুলো আমি আমার নামে লিখে নিয়েছি সুতরাং তোমার উপর নজর আমার সবসময়ই থাকে।
- তোমাকে সত্যিই মাইর দিতে হবে। সব কথা শুধু প্যাঁচাও।
- মানুষ কাছের মানুষের সাথেই কথা প্যাঁচায়। দূরের মানুষদের সাথে কথা কম বলে।
- তোমার সাথে কথা বলে পারা যাবেনা।
- হেহেহে। তুমি আমার সাথে কিছুতেই পারোনা। আচ্ছা নিঝুম কোথায়? অনেক্ষণ হলো দেখিনা।
- আছে কোথাও।
কোথাও বলা শেষ করার আগেই নিঝুম এসে হাজির।
এমন ভাবে দৌড়ে এসেছে মনে হয় বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।
- আব্বু আম্মু শুনো শুনো আমি একটা ব্যাপারে মিল খুঁজে পেয়েছি আমাদের তিন জনের মাঝে।
আমি আর লাবণ্য দুজনেই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
- কি সেটা বলো তো শুনি।
- কেন তোমরা খুঁজে পাচ্ছোনা তো?
আমি বললাম।
- হুঁ পাচ্ছিনা। আসলের তোমার আব্বু আম্মুর মাথায় বুদ্ধি কম।
- শুনো তাহলে বলছি। আমাদের তিন জনেরই নাম তিন অক্ষরে দেখো, সিয়াম, লাবণ্য, নিঝুম। কি এখানে আমাদের তিনজনের মিল না?
আমি লাবণ্যের দিকে একবার তাকালাম।
লাবণ্যও তাকালো।
তারপর দুজনেই বললাম।
- আসলেই তো…….!

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ