3546

গল্পের নামঃবৃষ্টিস্নাত সকাল আর সর্দিমূখর রাত
"
"
"
ফোনে এলার্ম দিয়েই রাতে ঘুমিয়েছিলাম৷ কিন্তু ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়াতে এলার্ম বাজে নি হয়তো৷ ঘুম ও ভাঙে নি৷ যার ফলে, অফিসটাই মিস৷ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিঁয়ে দেখি অঝোরধারার বৃষ্টি৷ যদিও বৃষ্টির দিন নয়, তারপর বর্ষার মত বৃষ্টি ঝরছে৷ আচ্ছা, আকাশের কি "বৌ" মারা গেছে? এত কান্না করে কেন? আমার এই অদ্ভূত ভাবনাগুলো নিয়ে নিজেরই হাসিঁ পাই মাঝে মাঝে৷
-নিঝুম সম্ভবত আগেই ঘুম থেকে উঠে পরেছে৷ সচরাচর আমিই আগে উঠি৷ নিঝুম এর ঘুমন্ত মুখটা দেখেই শুরু হয় আমার প্রতিদিনকার সকাল৷ কিন্তু আজ নিঝুমই আগে উঠেছে৷ কিন্তু আমাকে ডাকে নি৷ ইচ্ছে করেই ডাকে নি সেটা আমি ভালো করেই জানি৷ সে চেয়েছে, আজকের দিনে আমি অফিস মিস দেয়৷ এইরকম রোমান্টিক আবহাওয়ায় সবাই চাই তার প্রিয় মানুষটার সাথে সময় কাটাতে৷ কেউ পারে আর কেউ পারে না৷
নিঝুমের ভাষায়, স্বামী হিসেবে আমি একদমই আনরোমান্টিক৷ এই নিয়ে তার আফসোসের শেষ নেই৷ মানুষ হিসেবে আমি বোরিং টাইপের ছেলে সেটা অবশ্য আমি ও জানি৷ অবসর টাইমে নবদম্পতিরা যখন রোমান্টিক মুডে থাকে৷ আমি তখন সাইন্স ফিকশন নিয়ে ব্যাস্ত৷ এই নিয়েও আফসোস এর শেষ নেই আমার বৌ টার৷ মেয়েটার ধৈর্য্য আছে বলতে হবে৷ আফসোস করলেও, বিরক্ত হয় না কখনো৷
-মেয়েটা বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে৷ এই কথাটা আমাকে অনেকবার বলেছে বৃষ্টির দিনে৷ আর আমি যখন হাবার মত বলতাম, চলো ছাদে যায়৷ তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে আর আমি মুগ্ধ নয়নে দেখব৷ আমার কথা শুনে নিঝুম বলে, বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসে আমার৷ চলো না দুইজন মিলে একসাথে অসুস্থ্য হই? নিঝুম এর অদ্ভূত কথা শুনে আমি হাসি৷ আর ওপাশ ফিরে বলি, নাহ! আমি সর্দি জ্বরকে খুব ভয় পাই৷ বরং, তুমি ভিজো৷ জ্বর আসলে আমি শ্র্রুশুষা করবো৷ নিঝুম বলে, য়িহ! শ্রুশুষা করবেন উনি! আমি অসুস্থ্য হলেতো, আপনি না খেয়েই হাবার মত আমাকে পাহারা দিয়ে বসে থাকবেন৷ তার চাইতে ভালো হয়, আপনি ঘুমান আর আমি টিভি দেখি৷ যেদিন আপনার মনে প্রেম আসবে সেদিনই না হয় দুজনে মিলে জ্বর বাধাঁবো৷
"
-এসব ভাবছিলাম৷ নিঝুমের তো কোনো খবরই নেই৷ রান্না নিয়ে ব্যাস্ত সম্ভবত৷ গিয়ে দেখা যাক৷ আজকে তার স্বামীর মনে প্রেম জেগেছে৷
"
-বৌ আমার কি করে? (আমি)
-রান্না করে৷ (নিঝুম)
-ও, নিশ্চয় আমার প্রিয় রেসিপিটা রান্না করে বুঝি৷ (রোমান্টিকতার সুরে বললাম)
-হ্যা গো৷ ঠিকই ধরেছো৷ (নিঝুম)
-তা কোন রেসিপি? (আমি)
-তিতা করলা! (নিঝুম)
-কি!!
-জ্বীইই৷
"
-বৌ বলছিলাম যে, একটা কথা বলি? (আমি)
-হ্যা জনাব বলুন৷ (নিঝুম)
-বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে৷ চলো না দুজন মিলে জ্বর বাধাঁয়? (কথা শুনেই নিঝুম অবাক চোখে তাকিয়ে আছে)
-তাই নাকি? তা স্বামীর মনে আজ প্রেম জেগেছে৷ তা জ্বরে তো কাহিল হয়ে যান৷ তখন কি হবে? (নিঝুম)
-দুজনের যখন জ্বর উঠবে৷ তখন একজন আরেকজনকে জড়িয়ে রাখবো৷ (আমি)
-নাহ ! আমি আবার সর্দি জ্বরকে খুব ভয় পাই৷ (নিঝুম)
-আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছো? (মন খারাপ করে বললাম)
-হুমম! (ভাবলেশহীনভাবে বললো নিঝুম)
"
বুঝতে পেরেছি৷ বৌ নিশ্চয় চাচ্ছে আমি তাকে কোলে করেই ছাদে নিয়ে যায়৷
আর ভাবাভাবির কাজ নেই৷ সোজা রান্না ঘরে গিয়ে বৌ কে কোলে করে নিয়ে আসলাম ছাদে! বৌ আমার লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে আমার বুকে৷
"
"
-ছাদে দাড়িঁয়ে আছে দুই কপোত কপোতী৷ আকাশের দিকে তাকিয়ে দুইহাত ছাড়িয়ে দিয়েছে মেয়েটি৷ আর মেয়েটির মুখ বৃষ্টির ফোটা পড়ার দৃশ্যটি মুগ্ধনয়নে দেখছে ছেলেটি৷ এই এক অপরূপ সৌন্দর্য্য৷ দুইজনেই একদম ধ্যানমগ্ন হয়ে পরেছে৷ ধ্যান ভাঙতে মেয়েটি বললো, হাত দুটো দাও৷ সেই কবে থেকেই স্বপ্ন দেখে আসছি, প্রিয় মানুষটির হাত ধরে ভিজবো৷ ছেলেটি তখনো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিঁয়ে আছে৷ ধ্যান ভাঙলো মেয়েটি মৃদু ধাক্কায়৷
কিছুক্ষণ ভেজার পর মেয়েটি তার কন্ঠে কপট রাগ আনার চেষ্টা করলো৷ আর বলল, হইছে আর রোমান্টিকতা দেখানোর দরকার নেই৷ এবার চলুন, নয়তো জ্বর বাধাঁবেন৷ আর যত জ্বালা আমার৷
"
-বৃষ্টিস্নাত একটা সকালের পর, বিকেল হতে হতেই তাদের সংসারে জ্বর এর আনাগোণা৷ দুজনই সর্দি রোগী৷ দুজনের মধ্যে "হাছি" দেয়ার প্রতিযোগিতা চলছেই৷ "হাছির সাথে নাক থেকে বেরিয়ে আসা পানিগুলো মেয়েটি মুছছে ছেলেটির গেন্জীতে৷ আর ছেলেটি মেয়েটির শাড়িতে৷
"
সন্ধাঘনিয়ে রাত আসলো৷ সরিষার তেল আর ঝাঝালো ঝাল কাচাঁমরিচের ঝালমুড়ি খেয়েছে দুজন একসাথে৷ ঔষধ থাকার সত্তেও, তারা তা খাবে না৷ তাদের প্রথম বৃষ্টি ভেজা দিনটাকে সর্দি দ্বারা স্মরণীয় করে রাখতে চাই মেয়েটি৷ ছেলেটিও সাড়া দিলো মেয়েটির পাগলামো আবদারে৷ প্রত্যেকের জীবনে স্পেশাল কিছু দিন থাকে৷ থাকে স্পেশাল কিছু মূহূর্ত৷ যা কিছু স্মৃতি দিয়ে চিহ্নিত রাখতে হয়৷ তারা না হয় "সর্দি' দিয়ে স্মরণীয় করে রাখবে৷
"অতঃপর আরেকটি অসাধারন সকালের আশায় ,ছেলেটির বুকে পরম সুখে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটি৷ ছেলেটি পরম ভালোবাসার চুমু একে দিল মেয়েটির কপালে৷ সমাপ্তি টানলো স্বার্থক একটি দিনের৷
"
"
লিখাঃশুভ্রনীল আকাশ (নীল শুভ্র)