গল্পঃ শুধু তোমার জন্য
__Siam Ahmed Joy (গান গবেষক)
.
- ঐ সিয়াম। উঠ উঠ সকাল হয়ে গিয়েছে।
কাল অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে সিয়াম। তার বড় বোন দোলনা কে আনতে। অবশ্য দোলনার সাথে তার একমাত্র মেয়ে পাপড়িও ছিলো। দোলনার স্বামী জরুরী কাজে আটকে গিয়েছেন।
- ঘুমাবো আরেকটু। যা তো চিল্লাচিল্লি করিস না।
- উঠা লাগবে। আর ঘুমানো যাবেনা। পাপড়ি কান্নাকাটি করছে।
- তোর মেয়ে তুই সামলা না। ঘুমাইতে দে।
- আমি কিন্তু গেলাম তাহলে।
সিয়ামের ইচ্ছা না থাকা সত্যেও উঠতে হলো। ভাগ্নী হলো মায়ের সমান। মা কান্নাকাটি করছে। না আর ঘুমানো যাবেনা।
রুম থেকে বের হয়ে দেখলো পাপড়ি চোখের পানি মুছছে। বাচ্চারা কান্না করলে অনেক কিউট দেখায়। তাই সিয়াম গিয়ে গাল টেনে টেনে বললো।
- ওরে বাবালে। আম্মুটাকে কত্ত কিউট লাগছে।
পাপড়ি রাগে হাত দিয়ে সিয়ামের হাত সরিয়ে দিয়েছে। দোলনা পিছনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
- কি ব্যাপার হাসতেছিস ক্যান?
- তোর আম্মুর কান্নার কারনটা শুনবিনা?
- হুম। কাঁদতেছে ক্যান?
- উনার শাড়ি লাগবে চুড়ি লাগবে। লিপষ্টিক লাগবে টীপ লাগবে। আরো কি কি জানি লাগবে।
সিয়াম হাসতে হাসতে পেটে ব্যাথা এরকম অবস্থা।
- বলে কি? শাড়ি? দুই হাত না দেড় হাত শাড়িতেই উনার চলবে। চুড়ি, লিপষ্টিক!
- আমি কিছু জানিনা। আমি বলছিলাম আমি কিনে দিবো কিন্তু মানেনা। তোর সাথে যাবে।
- এসব পড়ার ইচ্ছে হলো কেনো?
- এইযে। আমি যে পড়ি। আমাকে নাকি সুন্দর লাগে। তাই সেও পড়বে।
সিয়াম পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো।
- কিনে দিতেই হবে?
পাপড়ি মাথা নাড়িয়ে বললো।
- উম।
- ঠিকাছে। নাস্তা করে আমরা বেরোবো।
পাপড়ি হাতে তালি দিয়ে মায়ের কোলে উঠে যায়। সিয়াম ফ্রেশ হচ্ছে আর ভাবছে এতো পিচ্চি মেয়ের কি শখ রে বাবা। তবুও তো ভালো। শাড়ি চুড়িই চাইছে। শার্ট প্যান্ট নয়। ছেলে মেয়ে সমান অধিকার না দেখিয়ে! নাস্তা করে দুজন বেরোলো। বাচ্চাদের আবদার। আইস্ক্রিম থেকে শুরু করে চকলেট। কিছু পুতুল। খেলনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এতো ছোট শাড়ি তো আর পাওয়া যাবেনা তাই অল্প লম্বা শাড়িটাই কিনলো। চুড়ি অবশ্য পাপড়ির পছন্দে। বাচ্চা মেয়ে কি বলেছিলো সব হয়তো মনে নেই সিয়াম তাই যা যা দরকার কিনলো মনে করে। মার্কেট থেকে বেরোনোর সময় হঠাৎ পিছন থেকে কেউ যেন ডাকছে এই পাপড়ি দাঁড়াও। অনেক লোকসংখা থাকায় পাপড়ি শুনতে পায় নি। সিয়াম পিছনে তাকালো। বোখরা পড়া। সাথে আরেকটি মেয়ে। পাপড়ি চিনতে পারলো।
- ঝুনঝুনি আপু !
মেয়েটা মুচকি হাসলো। তারপর বললো।
- হুম। তুমি এখানে! কবে আসলে নানুবাড়িতে।
- কালকেই।
- ইনি কে? তোমার নানা?
সিয়াম অবাক হয়ে গেলো। আরে অল্প বয়সেই নানা হয়ে গেলাম।
- এক্সকিউজ মি! আমি পাপড়ির মামা। কোন এঙ্গেল দিয়ে আমাকে নানা মনে হচ্ছে?
মেয়েটি কিছু বললোনা। পাপড়ির দিকে তাকিয়ে বললো।
- তাহলে চলো আমাদের বাসায়। বেড়িয়ে আসবে। এখান থেকে খুব দূর না।
পাপড়ি মাথা নাড়িলে বললো।
- না। অন্য আরেকদিন।
- তাহলে আসছি। টাটা।
মেয়েটা তার বান্ধবীকে নিয়ে চলে গেলো। সিয়াম পাপড়িকে জিজ্ঞেস করলো।
- ঝুনঝুনি কারো নাম হয়? তাছাড়া উনি তোমার কোন জন্মের আপু?
- ঝুনঝুনি নাম না তো। আমি ডাকি ঝুনঝুনি বলে। আমি যেই স্কুলে পড়ি ওখানে আমার বান্ধবী আছে পায়েল ওর খালামণী। কদিন পরপর বেড়াতে যায় তো। আর স্কুলেও আসে। আমি আর আম্মু তো অনেকদিন পায়েলদের বাসায় গিয়েছি। আর ঝুনঝুনি আপুও গেলে দেখা হয়।
- বাহ বাহ। তোমাকে নোবেল দেয়া হোক। তা ঝুনঝুনির নাম কি?
- রিমঝিম। পায়েলও ঝুনঝুনি ডাকে আমিও ডাকি।
- বেশ করো। কানী একটা মেয়ে।
- কানী বলছো কেনো? আপুটা অনেক ভাল। যেদিনই দেখা হয় সেদিনই আইস্ক্রিম কিনে দেয়।
- কানী না তো কি? আমার মতো একটা বাচ্চা ছেলেকে উনার নানা মনে হলো?
- হিহিহি। এমনিই বলেছে। তুমি কে জানার জন্য আরকি। তুমি বোঝবেনা।
- হ্যাঁ আপনারা তো বুড়ী আপনাদের কথা বোঝবো কিভাবে?
বাসায় ফিরেই মায়ের কোলে উঠে যায় এক দৌড়ে পাপড়ি। আর মায়ের কানে কানে ফিসফিস করে বলছে।
- জানো আম্মু। আজ একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বলা যাবেনা।
- তোমার আম্মুকেও বলা যাবেনা?
- যাবে কিন্তু শর্ত আছে মামাকে বলতে পারবানা।
- আচ্ছা। বলো তো কি হয়েছে।
- মামাকে না আজ ঝুনঝুনি আপু নানা বলেছে। এজন্য মামা ভীষন খেপেছে।
- রিমঝিম? রিমঝিমের সাথে দেখা হলো কিভাবে?
- হুম। আসার সময় দেখা হয়ে গেলো। আর আমাকে বলছিলো বাসায় যেতে। আমি বলেছি আরেকদিন।
দোলনা হাসতে হাসতে পাপড়ির কপালে চুমু দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। দূপুরে গোসল করে খাওয়াদাওয়া করে পাপড়ি ঘুমায়। এদিকে সিয়ামের কেনো জানি মেয়েটার প্রতি অনেক রাগ হচ্ছে। সে কি বুড়োদের মতো দেখতে? তোয়ালে দিয়ে মাথার পানি মুছছে। মাত্র গোসল করে এসেছে। কিছুক্ষণ পর দোলনা গিয়ে বললো।
- ভাই আমার। কারো উপরে রেগে আছিস মনে হচ্ছে।
- আরে না। তোমার এরকম কেনো মনে হলো?
- না পাপড়ি বললো রিমঝিম নাকি তোকে পাপড়ির নানা বলেছে।
- রিমঝিমটা কে আপু?
- এখন বোঝা যাচ্ছে সত্যই তুই খেপে আছিস। বাদ দে। মেয়েটা এমনিতে লক্ষী।
- হ্যাঁ লক্ষী মেয়ে চোখে দেখেনা।
দোলনা হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে এসে রিমঝিমকে ফোন দিলো। নাম্বারটা রিমঝিম পাপড়িকে দিয়েছিলো। বলেছিলো তোমার ঝুনঝুনি আপুর কথা মনে হলে ফোন দিও আমরা গল্প করবো। ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো। দোলনা সালামের উত্তর দিয়েই হাসছে।
- কি হলো আপু হাসছো কেনো?
- না এমনি। পাপড়ির সাথে নাকি তোমার দেখা হয়েছিলো?
- হুম। পাপড়িতো দেখতে আরো অনেক কিউট হয়ে যাচ্ছে তোমার মতো।
- কি বলে! সিয়ামকে নাকি তুমি নানা বলেছো? সিয়াম তো খুব রেগে আছে।
- সিয়াম কে? অহ পাপড়ির মামা? আমি তো নানা বলিনি। বলেছি নানা নাকি। কে সেটা জানার জন্য।
- হুম আমি তো বোঝতে পেরেছি। ছেলেটা এখনো রুমে বারবার আয়নায় নিজের মুখ দেখছে।
রিমঝিম হাসছে।
- দারুণ তো।
- আচ্ছা রাখছি। পাপড়ি মনে হয় জেগে গিয়েছে।
- আচ্ছা।
কোনভাবে সিয়াম নাম্বারটা চুরি করে। তারপর ফোন দিবে দিবে করে আর দেওয়া হয়না। প্রতিদিন সকালে গুড মর্নিং রাতে গুড নাইট টেক্সট করে। বেশ কয়েকদিন পর রিমঝিম ব্যাপারটা লক্ষ করে। রিমঝিম অবশ্য টেক্সট এর উত্তর দেয়না। কিজানি ভেবে ব্লকও করা হয়নি। একদিন রাতে ফোন দিলো। সিয়ামের নাম্বার দেখেই বুকের ভীতর ঝড় আরম্ভ হয়ে গেলো। কয়েকবার বাজার পর ধরলো।
- কে আপনি? চেনেন আমাকে? নাম্বার কোথায় পেয়েছেন? প্রতিদিন টেক্সট করেন কেনো?
সিয়াম চুপ করে আছে কি জবাব দিবে বোঝতে পারছেনা।
- কি হলো চুপ করে আছেন কেনো? বোবা নাকি?
- নাম্বারটা কিভাবে আমার ফোনে এলো জানিনা। তবে টেক্সট আমিই করেছি।
- বাহ। ফটকাগিরি অন্য জায়গায় দেখাবেন। নেক্সট টাইম ব্লক দিবো।
- না মানে কথা ছিলো।
- অপিরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা আমি।
- অহ। আমি পাপড়ির মামা।
- কিহ? আপনি পাপড়ির মামা? ঐদিন যে মার্কেটে দেখা হলো সেই আপনি?
- হুম।
- তো আপনার আবার আমার সাথে কি কথা?
- না মানে। আপু বলেছে আপনি নাকি খুব লক্ষী।
- বাহ। সব লক্ষী মেয়েদের সাথে আপনার কথা থাকে?
- না না ঠিক তা না।
- তো? কি বলুন?
- না মানে আমার পানি তৃষ্ণা পেয়েছে। আজ রাখছি।
বলে সিয়াম ফোনটা কেটে দিলো। মেয়েদের সাথে কথা বললে সিয়ামের এতো হার্টবীট বেড়ে যায়না। কথা বলাই মুশকিল। আপু তো শ্বশুর বাড়ি চলে গিয়েছে। ভাবার আগেই দোলনার ফোন।
- সিয়াম। দুদিন পর তোর দুলাভাই এর বাসায় চলে আসিস।
- কেনো?
- অনেকদিন আসিস না। তাছাড়া পাপড়ির স্কুলে ক্রীড়া অনুষ্টান।
- আচ্ছা ঠিকাছে দেখি।
- দেখিনা আসবি।
- আচ্ছা।
বাচ্চাদের অনুষ্টান। সবাই সবার গার্ডিয়ানদের সাথে এসেছে। আজকেও হঠাৎ রিমঝিমের সাথে দেখা। সিয়াম ভয়ে পাশকাটিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষন পর পিছন থেকে কেউ ডাকছে।
- এইযে বুড়ো।
সিয়াম পিছনে ফিরে দেখে রিমঝিম। এখন আর পালানোর রাস্তা নেই।
- আরে আপনি?
- হুম আমি। আপনি এখানে কি করছেন?
- পাপড়ি তো এখানেই পড়ে। আর আপনি?
- পায়েলও এখানে পড়ে।
- অহ ভালো তো। আচ্ছা আমি আসছি।
- আরে কোথায় যান। দাঁড়ান।
- না কোথাও না।
- আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছেন?
- ভয়? হ্যাঁ ভয়। কিন্তু ভয় পাবো কেনো? সত্যি বলতে একটু একটু ভয় পাচ্ছি।
কথা শুনে রিমঝিম হাসছে। হো - হো করে হাসছে। সিয়াম অপলকে তাকিয়ে আছে রিমঝিমের দিকে। হাসলে গালে ঢোল না পড়লেও অনেক মিষ্টি হাসি। হাসি দেখলে যে কেউই পাগল হবে।
- আমি বাঘ না ভাল্লুক? আমাকে দেখে ভয় পাবার কি আছে?
- হ্যাঁ আপনি ভাল্লুক।
- কিহ? আমি ভাল্লুক?
- না না। আপনি মানুষ। মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে।
আবারো রিমঝিম হাসছে।
- আমার সাথে আপনার কিজানি কথা ছিলো? পরে আর ফোনও দিলেন না টেক্সটও করলেন না।
- অহ কথা ছিলো নাকি? না মানে ভুলে গিয়েছি। পরে হয়তো আবার মনে পরবে।
রিমঝিম হেসেহেসে বললো।
- আপনি বেশ মজার লোক।
সিয়াম অন্যদিকে তাকিয়ে বললো।
- আপনিও খুব।
রিমঝিম বোঝতে পারলো।
- আমিও খুব কি?
- না কিছুনা। মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে।
- অহ। আপনার ক্ষিদে পেয়েছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
- হ্যাঁ ক্ষিদে। ক্ষিদে তো পাওয়ারই ব্যাপার। আমারও ক্ষিদে পেয়েছে।
- হ্যাঁ। আমারও না খুব ক্ষিদে পেয়েছে। এখানে আমার পরিচিত আর কেউ নেই। আর আমার একা খেতে ভাল লাগেনা। চলুন দুজনে একসাথে গিয়ে ক্ষিদে মিঠায়।
- যাবেন? আচ্ছা চলুন।
খেতে খেতে দুজন কথা বলছে। রিমঝিম জিজ্ঞেস করলো।
- তো কিছু করেন না? কি করা হয় আজকাল?
- চাকরী খোঁজা হয়। আপনার?
- কদিন পর কলেজ টপকাবো আরকি।
- ভালো তো।
- আচ্ছা আপনার মাথার চুল যে বড় বড় আপনার গার্ল্ফেন্ড আপনাকে বকা দেয়না।
- না দেয়না।
- কেনো? আমি হলে খুব বকতাম।
- সবাই আমাকে মারে বকেনা।
- সবাই? আপনার কয়টা গার্ল্ফেন্ড?
- আছে অনেকগুলো। সব বান্দরনী আর পেত্নী।
- আরে আমি প্রেমিকার কথা বললাম।
- না তা নেই। আপনার নেই?
- ছেলেরা খুব পঁচা হয়। তাই নেই।
- ভাল। তাহলে কোনোদিন বিয়ে করবেন না। ছেলেরা তো পঁচা।
- সেটা আপনার বলে দিতে হবেনা।
খাওয়া শেষে দুজন আইস্ক্রিম নিয়ে চলে আসে। অনুষ্টান শেষ। দুজনেই বাসায় এসে দুজনকে মিস করতে থাকে। সিয়াম ভাবছে ফোন দিবো? না যদি খারাপ কিছু মনে করে। এসব ভেবে আর ফোন দেয়া হয়নি। রিমঝিমও কেন জানি সিয়ামের কথা ভাবে। সিয়ামের ফোনের অপেক্ষায় থাকে। কিছুদিন পর সিয়ামের জন্মদিন। ভাবছে জন্মদিনেই রিমঝিমকে প্রপোজ করে ফেলবে। কারন রিমঝিমকে যে সিয়াম ভাল বেসে ফেলেছে। পরে যা হবার হবে। সিয়ামের জন্মদিনের কথা রিমঝিম জানেনা। রাত বারোটা বাজতে আর এক মিনিট বাকি। সিয়াম রিমঝিমকে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু রিমঝিমের ফোন বিজি। কারন ঐ সময়ে রিমঝিমও সিয়ামকে ফোন দিচ্ছিলো। রিমঝিম ভাবছে হয়তো অনেকে ফোন দিয়ে উইশ করছে। রিমঝিমকে সিয়ামের জন্মদিনের কথাটা দোলনা বলেছিলো। ঠিক ঐ মুহুর্তেই আবারো সিয়ামের ফোন। রিমঝিম ফোন রিসিভ করেই সিয়ামকে উইশ করলো।
- আপনি জানলেন কিভাবে আমার জন্মদিন।
- বলবনা হিহি।
- একটা কথা বলার ছিলো।
- পানির তৃষ্ণা পাবে না তো?
- না।
- তাহলে বলেন।
সিয়াম কিছুটা আটকে যায়। হার্টবীট প্রচণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। তবুও হালকাভাবে বললো।
- আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি। একয়দিনে আমি বোঝতে পেরেছি। আমি তোমার মাঝেই হারিয়ে নিজেকে খোঁজেছি।
কথা শুনে রিমঝিম থ হয়ে গেলো। কি বলবে বোঝতে পারছেনা। হ্যাঁ অথবা না কিছুই বলা সম্ভব না এই মুহুর্তে। সিয়াম দুশ্চিন্তায় পরে গেলো। কি হবে এখন? রিমঝিম কি আপুকে বলে দিবে? আল্লাহ পরে আমার কি হবে? তখন আবার রিমঝিমের ফোন। রিসিভ করতেই রিমঝিম বললো।
- প্রেম করার খুব শখ?
- উম। না মানে ভালবাসি তো।
- সত্যিই যদি ভালবেসে থাকেন তো আগে একটা চাকরী করেন। তারপর বাসায় প্রস্তাব পাঠান। বাসায় যদি রাজি হয় তাহলে আমি আপনার প্রস্তাব কবুল বলে গ্রহন করবো। এর আগে আমি প্রেমটেম করতে পারবোনা। খুব শখ থাকলে বিয়ে করে প্রেম করবেন।
বলেই ফোন কেটে দিলো। যাহ বাবা কিছু হলো? মেয়েরা বেকার ছেলেদের সাথে কেনো প্রেম করতে চায়না কে জানে। চাকরী তো হয়ে যাবে আজ নাহয় কাল। কিন্তু এর আগে যদি রিমঝিমের বিয়ে হয়ে যায়। অনেক কষ্টে একটা চাকরী যোগার হলো। সিয়াম টেক্সট করে রিমঝিমকে বলেছিলো আজকে একজনকে ফুল দিতে যাচ্ছে। রিমঝিম রাগে টনটন। সিয়ামকে ফোন দিলো।
- কি ব্যাপার?
- কই কি ব্যাপার?
- বাহ ভালবাসেন আমাকে আর ফুল দিতে যাবেন অন্যজনকে?
- মেয়েটাকে আমি ভালবাসি। মেয়েটাও আমাকে বাসে।
ইতিমধ্যে রিমঝিম কান্না করছে।
- কি বললেন আপনি? আপনি মেয়েটাকে ভালবাসেন আর মেয়েটাও আপনাকে ভালবাসে? তাহলে আমার সাথে কেনো মিথ্যে বললেন?
- বললেই কি? তুমি তো আর আমাকে ভালবাসো না।
- কে বলেছে ভালবাসিনা? ভালবাসি তো।
ল
- কেউ বলা লাগে? তুমি কোনদিন বলেছ যে আমাকে ভালবাসো?
- তাই বলে আপনি অন্য আরেকটা মেয়েকে ভালবাসবেন? আমার কসম সত্যি বলেন তো মেয়েটাও সত্যিই আপনাকে ভালবাসে?
- হ্যাঁ। কিছুক্ষন আগে তো তাই বললো। আচ্ছা এখন রাখি। মেয়েটার বাসার সামনে এসে পরেছি প্রায়।
রিমঝিম কান্না করছে। ফোন কেটে দিয়েছে। চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পরছে। আবার সিয়ামের ফোন।
- কি ব্যাপার আমাকে ফোন দিয়েছেন কেনো? আপনাকে তো একজন ভালবাসে তাকে ফোন দিন।
- হ্যাঁ আমাকে যে মেয়েটা ভালবাসে ঐ মেয়েটার কাছেই ফোন করেছি। ঐ মেয়েটার বাসার নিচেই দাঁড়িয়ে আছি।
সিয়ামের কথা শুনেই রিমঝিম জানালার পর্দা সরিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে। হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল।
- এভাবে কান্না করানোর মানে হয়?
- আচ্ছা তাহলে চলে যাচ্ছি।
- না না একদম না। এক মিনিট।
রিমঝিম এক দৌড়ে নিচে যায়। চোখে পানি টলমল করছে। সিয়াম বললো।
- সরি।
- হয়েছে। ফুল দেন।
সিয়াম ফুলটা দিলো।
- একটা কথা বলতে এসেছি।
- আর কোন কথা না। বাসায় আসুন।
- বাসায় কেনো যাবো? কি বলবে? যদি জিজ্ঞেস করে আমি কে?
- আপনার কথা সবাই জানে। দোলনাপুর সাথে কথা হয়েছে।
- না আরেকদিন। বাসায় যেতে পারবোনা। আমার চাকরী হয়ে গিয়েছে। একথাটা বলতেই এসেছি। কথাটা ফোনেই বলতে পারতাম কিন্তু তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই আসলাম। এখন যাই।
- চলেই যাবেন? কমপক্ষে চা খেয়ে যান?
- নাহ আরেকদিন।
- ঠিকাছে যান। আর শুনোন। সাবধানে যাবেন।
সিয়াম মুচকি হেসে চলে আসার জন্য রওনা দিলো। রিমঝিমের আজকে মনে হচ্ছে। সে আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। তার আকাশে উড়তে ইচ্ছেয় হচ্ছে। কেন জানি সিয়ামকে নিয়ে ভাবতে অনেক ভাল লাগা বেড়ে যাচ্ছে। মুরুব্বীদের মাঝে বিয়ের কথাবার্তা চূড়ান্ত। কিছুদিন পর বিয়ে। আয়োজন করা হলো। শানাই বাজলো। বিয়ে হলো। বাসর ঘর। সিয়াম বললো।
- অবশেষে পেয়ে গেলাম।
- কি?
- তোমাকে।
- আজকে থেকে তো আমরা প্রেম করবো না?
- হুম।
- তাহলে প্রপোজ করেন।
- অনেক আগেই তো করেছি।
- আবার করেন।
সিয়াম রিমঝিমের হাত ধরে বললো।
- মেয়ে তোমাকে সারাজীবন ভালবেসে যেতে চাই। সুযোগ দিবে? রোজরোজ ঝগড়া করতে চাই। আমার সঙ্গী হবে? তোমার সব কিছুর দ্বায়িত্ব নিতে চাই। সুযোগ দিবে? তোমার সব সুখ দুঃখের ভাগীদার হতে চাই। পরলোকগমনের সূর্যটাও তোমার তোমার হাতে হাত রেখে দেখতে চাই। ধরবে আমার হাত? সারাজীবনের জন্য?
- হুম ধরবো তো। তবে এখন ছেড়ে দিবো ফ্রেশ হতে হবে।
দুজনে হাসছে দুজনের দিকে তাকিয়ে। শুরু হলো নতুন পথচলা। ছোটছোট ঝগড়া লেগেই থাকে। সংসারটাকে নিজের করে নিয়েছে মেয়েটা। মাঝরাত সিয়ামের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে। অনেকদিন পর চাঁদ হাসলো। তারাদেত মেলা বসেছে। কিন্তু তবুও রিমঝিমের ঘুমন্ত মুখ থেকে সিয়ামের চোখ সরছেনা। অদ্ভুত সুন্দর্য বিরাজ করে মেয়েদের ঘুমালে। বাচ্চাদের মতো দেখায়। হঠাৎ রিমঝিম জেগে গেলো। উঠে বসলো।
- কি ব্যাপার? এতো রাতে জেগে আছো কেন?
- ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে।
- কেনো শরীর খারাপ?
- না মন খারাপ।
- মন খারাপ কেনো? আচ্ছা দেখো কত সুন্দর চাঁদ উঠেছে। চাঁদ দেখো মন ভাল হয়ে যাবে।
- আমি চাঁদই দেখছি।
- তুমি তো সেই কখন থেকে আমার দিকে চেয়ে আছো।
- তুমি চাঁদের থেকে কম কিসের?
- তাহলে তারা গুনো। তারা গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে যাবে।
- আমি তোমার চোখের মাঝে তারা গুনছি। গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে যাবো।
রিমঝিম কি বলবে বোঝতে পারছেনা। সিয়ামের চোখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কপালে চুমু দিয়ে বললো।
- এতো ভালবাসা রাখবো কোথায়?
- তাহলে আজ থেকে কম ভালবাসবো।
- এই না। কেনো? কম ভালবাসবে কেনো?
- তোমার তো রাখার জায়গা নেই।
- তোমার ভালবাসার ছাদরে জায়গা করে নেবো।
- বাহ। খুব ভালো বলেছ।
- আমার চাঁদ দেখতে ভালো লাগে।
- দেখো চাঁদ। আমি আমার চাঁদ দেখি।
- একটা কবিতা শুনাও না ।
- এটাই তো পারিনা।
- তাহলে গান?
- জন্মের পরে গাইনি।
- তাহলে একটা গল্প শুনাও।
- ঐটা লেখকরা পারে।
- তাহলে? কিছুই পারবেনা?
- পারবো।
- কি পারবে?
- শুধু তোমার জন্য আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা চুরি করতে পারবো।
- হিহি আর?
- শুধু তোমার জন্য আমি সমরেশ মজুমদারের উপন্যাসের কিছু শব্দ চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দিতে পারবো তোমার কাছে।
- তাই? আর?
- শুধু তোমার জন্য আমি শাহান কবন্দের লেখা গান নিজের নামে চালিয়ে দিবো তোমার কাছে।
- হিহি চোর।
- প্রেমিকরা একটু আধটু চুরি করে প্রেমিকাদের জন্যেই।
- আর চুরি করা লাগবেনা। শোও আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। ঠিক ঘুম আসবে।
- আচ্ছা।
রাত পেরিয়ে সকাল হলো। রিমঝিম পাশের রুমে রান্না করছে। সিয়াম ডাকছে।
- রিম। একটু শুনে যাও তো জলদি।
রিমঝিম রান্নাঘর থেকে এসে বললো কি?
সিয়াম বললো।
- কিছুনা। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই।
রিমঝিম হাসছে। মুচকি মুচকি হাসছে।
- একটু আগে না দেখলে?
- তবুও অনেক সময়।
- পাগল একটা।
বলে রান্নাঘরে আবার ফিরে যায়। কিছুদিন পর। সিয়াম ঘুমাচ্ছে। রিমঝিম এসে ডাকছে।
- এই উঠো উঠো। একটা মজার ঘটনা ঘটেছে।
- কি ঘটেছে?
- আগে উঠো তারপর বলছি।
- উঠতেই হবে?
- হুম।
সিয়াম উঠে বসলো।
- এই দেখো পাপড়ি আমার জন্য কি এনেছে। ঝুনঝুনি।
সিয়াম হেসে বললো।
- ভালো। এখন তুমি ঝুনঝুনি বাজাও আমি ঘুমাবো।
- আমি বাজাবো কেনো? আমি কি বাচ্চামেয়ে নাকি?
- অহ হ্যাঁ তুমি তো বুড়ী।
- আমি বুড়ী? না? আমি বুড়ী? তুমি এমনটা বলতে পারলে? তুমি কি জানো? তুমি আস্তো একটা বুড়া। তুমি বুড়া না তুমি আরো অনেক কিছু। হাতী গরু মহিষ ছাগল।
- আচ্ছা ঝুনঝুনি আমার কাছে দাও।
- তোমাকে দিবো কেনো? কি করবে তুমি?
- শুধু তোমার না তোমার না শুধু আমাদের বেবিটার জন্য যত্নে রেখে দিচ্ছি।
- হুহ। ঘুমাও তুমি। আমিই রাখতে পারবো।
ভালবাসার মানুষদের পাগলামু ভালই লাগে। মন থেকে ভালবাসলে ভালবাসার স্বাদটা পাওয়া যায়। আর স্বামী স্ত্রীর মাঝে স্বয়ং আল্লাহ্ নিজে তৈরি করে দেন।
.
ডেডিকেট টুঃ
যারা কিছুদিন গল্প না পেয়ে। লেখার জন্য অনুরোধ করেছেন।
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻļুāĻ্āϰāĻŦাāϰ, ⧍ā§Ļ āĻ āĻ্āĻোāĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
3508
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§Ž:⧍ā§Ē PM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ