গল্পঃ গোলাপী ঠোঁট
.
- বিয়ে করবে তুমি কবে আমাকে?
- আর কয়টা দিন অপেক্ষা করো লক্ষী। এখন চাকরীর যে বেতন তাতে আমার নিজেরই ভালো করে চলেনা। সেখানে একটি সংসার কিভাবে চলবে বলো?
- ঐ তোমার কি আমাকে রাক্ষসী মনে হয়? আমি কি খুব খাই? চলবেনা কেনো?
- শুধু খাওয়াদাওয়া হলেই কি হয়? আমাদের ভবিষৎ বড় কথার চেয়ে আমাদের তো বাচ্চাকাচ্চা হবে নাকি?
- হ্যাঁ তোমার প্রমোশন হবে আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে অন্য কারো সাথে। তখন বুঝবে।
- অমন কথা বলেনা। ব্যাথা পাই হৃদয়ে।
- থাকো তুমি আমি গেলাম। বাড়িতে বিয়ের কথাবার্তা চলছে!
.
ট্যাং ট্যাং করে চলেই গেলো। মাত্র এক বছরে পাগলীটা বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেলো! আমাকে হারাতে চায়না সেজন্য হয়তো। আমিও তো হারাতে চাইনা। কিন্তু একটি সংসার সাজাতে কত কিছুরই না দরকার পরে! মাত্র ছয়মাস হলো চাকরীতে যোগ দিলাম। বড় ভাইয়া এখনো বিয়ে করেনি। সেখানে আমি কিভাবে বিয়ের কথা বলি! একটা ললিপপ মুখে দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাসায় এসে চিন্তা করলাম। যেভাবেই হোক পাম-টাম দিয়ে বড় ভাইকে বিয়ে করাতে হবে। নাহলে আমার বিয়ে করা হবেনা। ফলসরুপ দেখতে হবে নাফীজাকে অন্যের ঘরে! এটা আমি পারবোনা! গোলাপী আমাকে অনেক ভালবাসে। ভাবতে না ভাবতে গোলাপীর ফোন। ইচ্ছে করেই ধরলাম না প্রথমবার।
.
- সমস্যা কি তোমার? ফোন ধরতে এতো সময় লাগলো কেনো?
- আরে আর বলিওনা। আজকে যে মেয়েকে দেখলাম না পুরাই অস্থীর।
- তাই না? তো আজকে আবার কোন মেয়ের ঠোঁটের উপরে ক্রাশ খেলে?
- আরে ঠোঁটনা ঠোঁটনা চুল বুঝছো? চুল।
- কি বললা? তোমাকে আমি গুলি করবো।
- আরে শুনোনা। মেয়েটা বললো আমি নাকি দেখতে অনেক সুইট একটা ছেলে।
- উফ অসহ্য। একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি। তুমি কি শুনবে?
- আমার নাম অসহ্য না গোলাপী। আমার নাম সিয়াম।
- হ্যাঁ আমি ভুলে যাইনি আপনার নাম যে সিয়াম। আপনি কি আমার কথাটা শুনবেন?
- আচ্ছা বলো আমি শুনছি।
.
- আজকে ছেলের বাড়ি থেকে লোকজন আসছিলো আমাকে দেখতে।
- যাহ কি বলো! তুমি না আজকে সারাদিন তোমার বান্ধবীর বাসায় ছিলে। বিকেলে আমার সাথে দেখা করে গেলে।
- হ্যাঁ বাসায় এসে দেখি লোকজন উপস্থিত।
- তারপর তারপর?
- তারপর আর কি? আমাকে দেখে গেলো।
- দেখলেও কি? আমি নিশ্চিত তোমার মতো পেত্নীকে তাদের পছন্দ হবেনা।
- ফাইজলামু রাখবে তুমি? আমি সিরিয়াস।
- আচ্ছা তুমি কি বউ সেজেছিলে? ঠোঁটে কি লিপষ্টিক দিয়েছিলে?
- থাক তুই তোর ফাইজলামু নিয়ে। আমি ঐ বেটার সাথেই বিয়ে বসছি।
- আচ্ছা শুনো গোলাপী। আমার এক বন্ধু আছে বুঝছো। সে খুব ভাল বিয়ের কার্ড বানাতে পারে....
.
কথা শেষ করার আগেই গোলাপী ফোন কেটে দিলো। মনেমনে আমাকে খুব বকছে আমি জানি। ব্যাপারটা খুব জটিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চিন্তায় পরে গেলাম। কি করবো আমি? বড় ভাইয়া একটা আছে। বুড়ো হয়ে যাচ্ছে সে দিকে খেয়াল নেই এখনো বিয়েটা করছেনা। কিছু একটা করতেই হবে ভেবে ভাইয়ার রুমে গেলাম। ওমা! ভাইয়া দেখি সেই রোমান্টিক কথা বলছে! কিন্তু কার সাথে? আমি তো জানতাম ভাইয়া প্রেম-টেম করেনা! বুদ্ধি পেয়েছি। ফোন বের করে রেকর্ডার চালু করে চুপ করে ভাইয়ার প্রেম বিজ্ঞান শুনছি। ভাইয়া ফোনটা রেখে দিলো। আমাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। আমি ভাব নিয়ে বললাম।
.
- ভাইয়া এতোক্ষণ যে প্রেমবিজ্ঞান বুঝালে যে মেয়েকে। মানে আমার ভবিষৎ ভাবী। সে খবরটা কি বাহিরে প্রকাশ করবো?
- একদম না। আব্বা শুনলে আমার খবর করে ছেড়ে দিবে।
- তাহলে একটা উপকার করতে হবে। তারাতারি বিয়ে করো। আমার কাপড় চোপড় ধুয়ে দেবার কেউ নেই।
- বললেই হলো নাকি? আব্বাকে কে বুঝাবে?
- সে দ্বায়িত্ব আমার।
- আচ্ছা আমি রাজি।
- আচ্ছা শুনো। আমার ফোনে টাকা নেই। পাঁচশো টাকা ফ্লেক্সি করো তো।
- দেখ ব্ল্যাকমেইল করিস না। এতো টাকা দিয়ে কি করবি?
- বা রে তোমার বিয়েতে সবাইকে দাওয়াত করতে হবেনা?
- মনে থাকবে আমারো।
নাচতে নাচতে ভাইয়ার রুম থেকে বেরোলাম। নাফীজাকে খবরটা দিতে হবে।
.
না সকালেই জানানো যাবে। পাগলীটা ঘুমুচ্ছে। বিরক্ত করা ঠিক হবেনা। ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করলে আবার খেপে যায়। সকাল সকাল গোলাপীর ফোন।
- শুভ সকাল।
- রাখ তোর শুভ সকাল। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।
- আচ্ছা আমি উপহার নিবো চিন্তা করিও না।
নাফীজা কাঁদছে। আমি ভাবলাম এমনি এমনি।
- গোলাপী কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো?
- তুমি কোনদিনও আমাকে গোলাপী ডাকবেনা। আমার নাম নাফীজা গোলাপী না। আর আমি দুদিন পরে অন্য কারো স্ত্রী হবো। তাই আমাকে আর আদর করে গোলাপী ডাকবেনা।
- আরে একটা খুশির খবর আছে শুনোনা। ভাইয়ার বিয়ে সামনের সপ্তাহ।
- হ্যাঁ ভাইয়ার বিয়ে নিয়েই থাকো। নিজে কোনদিনও বিয়ে করতে পারবেনা।
.
- আরে বুঝোনা কেনো ভাইয়ার আগে তো আমি বিয়ে করতে পারবোনা।
- হ্যাঁ আমাকে যখন অন্যের হাত ধরে ঘুরতে দেখবে তখন বুঝবে। এমন তো না যে তুমি বেকার। প্লীজ একটা কিছু করো।
- আচ্ছা তোমার বিয়েটা কি সত্যি সত্যিই ঠিক হয়ে গিয়েছে।
- তুমি আমার কান্নাতেও যখন বুঝোনি তখন মুখের কথা কিভাবে বিশ্বাস করবে? সামনের শুক্রবারে আমার বিয়েটা এসে খেয়ে যেয়ো।
- তোমার আব্বুকে আমি খুন করবো দাঁড়াও।
- আব্বুর কি দোষ? তুমিই তো ভীতু।
- আচ্ছা আমি দেখছি। ফোন রাখো।
নাফীজা ফোন রেখে দিয়েছে। বুকের মধ্যে ধুপধুপ করছে। এখন কি হবে? ভাইয়ার বিয়ের আগে তো বিয়ে করতে পারবোনা।
.
রুমে বসে কান্না করছি। ভাইয়া দরজায় টকটকাচ্ছে। চোখ মুছে দরজা খুললাম। ভাইয়াকে দেখে কেনো জানি আবারো কেঁদে দিলাম। ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো।
- কি হয়েছে তোর? কাঁদতেছিস কেনো?
আমার কোন উত্তর নেই কেঁদেই যাচ্ছি। জোরাজোরিতে সব খুলে বললাম। ভাইয়া বললো।
- সামনের শুক্রবারে নাফীজার বিয়ে হবে কিন্তু অন্যকোন ছেলের সাথে না তোর সাথেই।
- কিন্তু আব্বাকে কে বুঝাবে?
- সেটা আমি দেখতেছি।
ভাইয়া রুম থেকে বেরোলো। নিজেকে হালকা হালকা লাগছে আবার খুব চিন্তাও হচ্ছে। ভাইয়া কি আব্বাকে বুঝাতে পারবে? কঠিন প্রশ্ন উত্তরে নির্ভর করছে দুটি জীবন। পাগলীটা মনে হয় কান্না করছে। শ্বশুর মশাইও আর সময় পেলোনা মেয়ের বিয়ে দেয়ার?
.
আজকে শুক্রবার। রাতে কি আর ঘুম হয়েছে? সারারাত নাফীজা কান্না করছে। আমার মনে হচ্ছে যদি অন্য কারো সাথে বিয়ে হয় তাহলে আত্মহত্যা না করে! নাস্তা করার সময় আব্বা বললো।
- শোন আমি যখন বেকার ছিলাম তখন তোর আম্মাকে তোর নানা বিয়ে দিতে চেয়েছিলো আর বিয়ের আগের রাতে আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম। সেই রাতে তোর নানা বিয়েটাও মেনে নেয়। আর তুই তো চাকরী করিস।
আমি বুঝতেছিলাম এই কথাগুলোর মানে কি? মনে মনে নাচতে নাচতে মনের স্টেজ ভেঙ্গে ফেলেছি। কিন্তু ভাবছি পালিয়ে যাবো কেনো? আমি অবুঝের মতো আব্বার দিকে তাকালাম। আব্বা ভাইয়ার দিকে তাঁকিয়ে চোখ ভার করে বললো।
.
- তোদের মা আজকে বেচে নেই। তোদের কোন বোনও নেই। মেয়েরা ঘরের লক্ষি। ভেবেছিলাম বড় ছেলের বিয়েটা আগে দিয়ে তারপর ছোটর বিয়ে দিবো। কিন্তু মনে হচ্ছে ছোট বউমা ঘরে আগেই আসবে। আমিও বাবার তৃতীয় সন্তান হয়ে সবার আগে বিয়ে করেছিলাম।
আমি বুঝতেছিলাম না আমাকে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর যখন আব্বা পিছন থেকে পাঞ্জাবী এনে দিলো আমার হাতে। আমার বুঝতে বাকি নেই আজকে আমার জন্মদিন। আর জন্মদিনে আমার বিয়েটা হবেনা তা কি হয়? আমি প্রতিবারই আমার জন্মদিনের কথা ভুলে যাই। আর প্রতিবারই আব্বা জন্মদিনে আমাকে পাঞ্জাবী দেয়। ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া চোখ দিয়ে যেন বললো, আরে বেটা হয়ে গিয়েছে। আজকে তোর বিয়ে।
.
আব্বার বুকে মাথা রেখে দুইভাই কাঁদছি। আব্বাও কাঁদছে। মা'কে আমি দেখিনি বুঝতে শিখার পরে। আমাদের কাছে আব্বাই আমাদের মা-বাপ। আব্বা আগেই কথা বলে রেখেছিলো নাফীজার বাবার সাথে। আমি জানি যেভাবেই হোক রাজি করাবেই। যাকগে এসব কথা। রাত এগুরোটা চল্লিশ বাজে। গোলাপী আমার সামনে বউ সেজে বসে আছে। ঘোমটা সরিয়ে বললাম।
.
- একদম পেত্নী পেত্নী লাগছে তোমাকে। কি বিশ্রী।
নাফীজা আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো। আমি আবারো বললাম।
- বিশ্বাস হচ্ছেনা? দাঁড়াও আয়না এনে দিচ্ছি।
নাফীজা গাল গুলো ফুলিয়ে বললো।
- সত্যিই পেত্নী পেত্নী লাগছে?
- আরে হ্যাঁ একদম পেত্নীদের মতো লাগছে।
- আমার কিন্তু কান্না পাচ্ছে।
- হ্যাঁ সেটাই করো। কাঁদলে মনে হয় তোমাকে একটু ভাল লাগতে পারে।
- সত্যিই কাঁদবো?
- হ্যাঁ কাঁদো। আমি গোলাপী ঠোঁট দেখি সোনমের।
- তুমি আর কিছু পাওনা না? ঠোঁট দেখে কি শান্তি পাও?
- বলবোনা। আমার ভাল লাগে। গুড নাইট।
নাফীজা আমার পাঞ্জাবীর কলারে ধরে বললো।
.
- ঐ আমার ঠোঁট গোলাপী না? ঘরে বউ রেখে অন্য কোন মেয়ের ঠোঁট কেন মেয়েদের দিকেই তাকাতে পারবিনা। ফোন দে তোর। সব হিরোইনের ছবি ডিলিট কর ফোন থেকে। আজ থেকে আমি যা বলবো তাই হবে বুঝছিস?
আমি অবাক হয়ে নাফীজার দিকে তাকিয়ে আছি। এটা কি সত্যিই আমার গোলাপী?
- কি দেখতেছো এভাবে?
- এই মেয়ে তুমি কি সত্যিই আমার গোলাপী? আমার গোলাপী তো এমন না। প্রথম দিনেই শার্টের কলার! বাকি জীবন আমার কিভাবে যাবে? আব্বাগো।
- বাসর রাতেই আমাকে পেত্নী বলো! বাকি জীবন আমার কিভাবে পার হবে? দুদিন পর তো আমাকে দেখতেই পারবেনা। আগে তো আমার গোলাপী ঠোঁট নিয়ে কবিতাও লিখেছিলে।
.
- হ্যাঁ সেই কবিতা পড়েই তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলে।
- হুম আর কোনদিন অন্য মেয়ের রুপের প্রসংসা তো না'ই কোন মেয়ের বদনামও করতে পারবেনা আমার সামনে। গান শুনাও একটা নাহয় খাটে জায়গা পাবেনা। কত্ত বড় সাহস আমাকে পেত্নী বলে!
- আমার বাড়ি আমার খাট আর আমিই জায়গা পাবোনা আব্বাগো এ কোন মেয়ে আমার কপালে জুটলো।
- হুহ তোমার সবকিছুরই অর্ধেক আজ থেকে আমার। আর অর্ধেক আমার মানে পুরোটাই আমার।
- শুনাবোনা দেখি তুমি কি করো।
- চিৎকার করবো?
- না শুনাচ্ছি।
- গুড বয়।
- অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার ঠোঁট.. পেলাম খোঁজে এ ভূবনে আমার আপন ঠোঁট... তুমি বুকে টেনে নাওনা প্রিয় আমাকে.. আমি ভালবাসি.. ভালবাসি.. ভালবাসি তোমাকে।
- যাহ... শয়তান একটা।
Siam Ahmed Joy
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ