গল্পঃ ব্রেকাপ
.
- কোথায় তুমি? (আয়ান)
- এইতো আসছি.. আর পনেরো মিনিট দাঁড়াও। (আয়াত)
- আমি বসে আছি সেই কখন থেকে।
- সরি সরি.. আসছি তুমি থাকো।
.
আধ-ঘন্টা পর আয়াত আসলো। জিন্স প্যান্ট, আর কিজানি নাম জানেনা আয়ান.. ওয়েষ্টার্নের মনে হয়। পার্কের এক কোণে বসে আছে দুজন। আয়ান সামনে বসে থাকা দুজনকে দেখছে।
.
পাশে থাকা দম্পতীর দিকে চোখ যাচ্ছে। মেয়েটার দিকে চোখ যাচ্ছে বেশি। সসম্ভবত তাঁরা স্বামী, স্ত্রী। স্ত্রী শাড়ি, চুড়ি, কাজলে পুরো বাস্তবপরীদের মতো সেজেছে। আয়াত বিষয়টা খেয়াল করলো। কিন্তু কিছুক্ষন চুপ থাকলো। পরে আর মানতে পারতেছিলো না।
- ঐ আমার দিকে তাঁকাও (আয়াত)
- তাঁকালাম।
- ঐদিকে কি দেখছো বারবার?
- কই কিছুনা তো।
- মিথ্যা বলবানা.. আমি দেখতেছিলাম তুমি মেয়েটার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলে।
- অহ সুন্দরের দিকে মানুষ তাকাবে স্বাভাবিক।
- অহ আমি সুন্দর না?
- এ কথা কখন বললাম?
- সুন্দর হলে তো তুমি আমার দিকেই তাকায় থাকতা।
- আচ্ছা কানে ধরছি আর তাকাবো না।
- না তাকাবে না কেন তাকাও আমি গেলাম।
- ধুর ভাল লাগেনা এসব প্লীজ ছেলেমানুষি ছাড়ো এবার।
- হ্যাঁ এখন তো আমাকে ভাল লাগবেই না।
- কিহ আজব.. কোন মানে হয়?
- ফোন, টেক্সট, এফবিতেও কন্টাক্ট করার চেষ্টা করবানা একদম।
- ব্রেকাপ চাচ্ছো?
- হ্যাঁ চাচ্ছি।
- ওকে ব্রেকাপ। আমি কন্টাক্ট করা থেকে দূরে থাকবো।
- ঠিকাছে গেলাম।
- যাও।
.
হাঁটা শুরু করলো আয়াত। চোখের কোণে বৃষ্টি টলমল করছে। ভাবছে আয়ান অনেক পাল্টে গিয়েছে। আগে প্রাধান্য দিতো অনেক। এখন কিরকম অন্যমনস্ক, সম্পর্কে বিরক্ত এমন মনে হয়। ফোনের দিকে তাকাচ্ছে বারবার। বাসায় আসল ফ্রেশ হলো।
.
সন্ধা গড়িয়ে যাচ্ছে আয়ান ফোন দিচ্ছেনা। টেক্সটও না, ফেসবুকে গিয়ে বারবার আয়ানের প্রোফাইলটায় ঘুরাঘুরি করছে। আয়ানের চ্যাট টার্ন অফ করা তাই বোঝাও যাচ্ছেনা অনলাইনে আছে কি না। বুক ফাটা কষ্ট হচ্ছে।
.
ভাবছে আমার কোন প্রয়োজনীয়তাই নাই নাকি আয়ানের কাছে। নাকি ও এটাই চাচ্ছিলো। এসব ভেবে কান্না করছে। বুকচাপা কান্না। সারারাত অপেক্ষা করলো কিন্তু আয়ান ফোন দিলোনা।
.
সকাল হলো, পাখীরা কিচিরমিচির করছে। আয়ানের কথা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ছেলেটা কোতোটা পাল্টে গিয়েছে। ফেসবুকে গিয়ে দেখে আয়ানের আইডি ডিয়েক্টিভ। ফোন দিতে ইচ্ছে হলো।
.
প্রথমে রাগের কারনে ফোন না দিলেও সারাদিন অপেক্ষা করার পর সন্ধায় নিজেই ফোন দেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু আয়ানের ফোন বন্ধ । আয়ানের এক বন্ধুর কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো দেশের বাড়িতে চলে গিয়েছে জানে এটুকুই যাবার সময় নাকি বলেছিলো দোস্ত গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি এবার আসতে একটু দেরি হবে রে।
.
আয়াতও জানেনা আয়ানের গ্রামের বাড়ি কোথায়। আয়ানের বাসার কারো সাথেই আয়াতের পরিচয় বা কন্টাক্ট নেই। কাউকে চেনেও না। সব বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিলেও কেউ গ্রামের ঠিকানাটা দিতে পারলোনা।
.
দুইদিন যাবত কান্নার উপর আছে আয়াত। ভাবছে কেন এমনটা করলাম শুধু। একটু বেশিই করে ফেলেছি ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে। মন খারাপের দৃশ্যগুলো অনেক লম্বা আর খারাপ লাগছে আয়াতের।
.
সময় যেন আয়ানকে ছাড়া পাড় হচ্ছেনা। প্রায় পনেরোদিন পরে আয়ানের আইডি এক্টিভ দেখলো আয়াত। দেখেই মেসেজ দিলো।
- আমি সরি আয়ান। কোথায় গেলে তুমি। প্লীজ আর এমনটা হবেনা তুমি এরকম করোনা।
.
ঐযে চ্যাট টার্ন অফ করা এজন্য অনলাইনে আছে কি না বোঝা যাচ্ছেনা। ফোন করার ট্রাই করলো কিন্তু ফোন অফ। আবারো এফবিতে মেসেজ দিলো,
.
- প্লীজ আয়ান। ব্রেকাপ বললেই ব্রেকাপ হয়না। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা। একয়েকদিনে তা আরো ভালো করে বোঝেছি। প্লীজ ফিরে আসো।
দুদিন হয়ে গেলো সীনও করলোনা আয়ান।
.
প্রতিদিন সকাল বিকাল মেসেজ দিতেই থাকলো হাজারো মেসেজ জমে গিয়েছে তবুও নো সীন। চারদিনের মাথায় একটা রিপ্লে আসলো,
.
- আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে। এটা নিয়ে আর আরেকটা কথা বললে আমি ব্লক দিবো। চিন্তা করে দেখলাম তোমার সাথে আমার রাত দিনের পার্থক্য। তাই আর মেসেজ কিংবা কন্টাক্ট করার ট্রাই করবা না। আমি ব্লক দিবো সব।
.
এটা দেখে আয়াত অনেক কান্না করলো। আয়ানের পরিবারের ব্যাপারে কিছুই জানেনা আয়াত।
.
- প্লীজ আয়ান, আমি তোমার পরিবারের ব্যাপারে কখনো কিছু জানতে চাইনি। রাত দিনের কোন পার্থক্য নেই আমাদের মধ্যে। প্রায় একমাস হয়ে গেলো তোমাকে দেখিনা। প্লীজ একটাবার ফোন করো।
.
আয়ানের রিপ্লে ছিলো শুধু এটুকুই।
- আমাদের ব্রেকাপ।
এরপরে আয়াত হাজারো মেসেজ দিলেও কোন রিপ্লে দেয়নি আয়ান। কয়েকদিন পর আয়াতের বিয়ের জন্য নাকি পাত্র দেখছে।
.
এর মধ্যে হটাৎ বিয়ের চাপ। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়ে করতেই হবে। আয়ানকে অনেক মেসেজ দিলো আমার বিয়ে হয়ে যাবে, প্লিজ তোমাকে একটাবার দেখতে চাই ইত্যাদি ইত্যাদি।
.
আয়ান বলেছিলো " পরিবারের পছন্দে বিয়ে করো সুখী হবে " পুরো বিয়ে গেলো একবার চোখ তুলে বরকে দেখেওনি আয়াত। নাম, পরিচয় কিছুই জানতে চায়নি। বাসর ঘর আয়াত কান্না করছে সেই কখন থেকে। বর অনেকক্ষন চুপ থেকে বললো,
.
- আয়ানকে খুব মনে পড়ছে না?
কথাটা শুনে আয়াত স্থব্দ হয়ে গেলো। কন্ঠটাও চিরচেনা। চুখ তুলে তাকাতেই দেখে আয়ান। আয়াত অনেক্ষন চোখ ক্যাচলিয়ে দেখে ঠিকিই তো আছে আয়ানিই তো।
.
- তুমি?!!!
- কেন খুশি হওনি?
আয়াত উঠে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না আরম্ব করলো। প্রায় পাঁচ মিনিট এভাবে কাঁদতেই থাকলো।
- কেনো কাঁদালে এতো? কিভাবে কি আমি কিছুই বোঝতে পারছিনা।
- আগে ছাড়ো আমাকে বলছি আমি।
- না ছাড়বো না আজ.. তুমি বলো প্লীজ।
- ওকে মেডাম.. তোমার সাথে কথা বলার পরে আমি তোমার বাবার কাছে যাই। পুরো ব্যাপারটা বোঝিয়ে বলি। তোমার বাবা আমার পরিবারের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো তার মাঝে আমাকে সম্পুর্ণভাবে তোমার সাথে কন্টাক্ট না রাখার জন্য বলেছিলেন তবুও আমি অমান্য করে কিছু করিপ্লে দিয়েছি। তোমার বাবাকে নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়েই সব কিছু ঠিকঠাক হয়। আর এখন বিয়ে। দ্যাটস
- আমার কিছুই বিশ্বাস হচ্ছেনা।
- আচ্ছা করা লাগবেনা। অনেক কান্না করছেন এবার ছাড়েন আমার পাঞ্জাবী পুরো ভিজে গেছে।
- ভিজুক তাতে তুমার কি?
- ঢান্ডা লাগবে তোমার চোখের জলে।
- লাগুক, আমি আছিনা সমস্যা নাই।
- ব্রেকাপ আমাদের কিন্তু।
- এখন আর ব্রেকাপে কাজ হবেনা সারাজীবন এর জন্য পেয়ে গিয়েছি তোমাকে।
অতঃপর আরেকটি প্রেমের গল্প শুরু হলো। তবে সেটা পবিত্র। বাঁধা নেই, সীমা নেই।
Siam Ahmed Joy
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ