গল্পঃ শ্বশুরবাড়ি
.
' এই সুন্দরী ' বলে তিশাকে ডাকল আরাফাত। তিশা প্রচণ্ড রেগে আছে কারণ ইতিমধ্যে আরাফাত তাকে অনেক জালিয়ে ফেলেছে। তিশা বলল ' আবার কি? ' আরাফাত বলল ' আমার শরীরটা কেমন জানি করছে বুঝছ? হাত-পা একটু টিপে দাও ' তিশা হাতে ফেয়ার এন্ড লাভলী নিয়ে বলল ' এই ক্রিমটুকু খেয়ে শুয়ে পরেন আমি আপুকে ডেকে দিচ্ছি আপনি যত খুশি হাত পা টিপিয়ে নেন ফালতু ' আরাফাত চোখ বড়বড় করে তিশার দিকে তাকাল। সে ভাবতে পারেনি মেয়েটা এভাবে হাতে ফেয়ার এন্ড লাভলী ধরিয়ে দিবে খাওয়ার জন্য! আরাফাত রেগে বলল ' আরে ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম কি মানুষ খায়? ' তিশা বুকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল ' না অবশ্যই মানুষ খায়না তবে যাদের মাথায় সমস্যা আছে পাগল তারা খায় ' আরাফাত থ হয়ে খাটে বসে পরল। বলল ' শালিকা মানেই তো অর্ধেক বউ আর তাহলে আমি তোমার অর্ধেক জামাই আর অর্ধেক জামাইয়ের সাথে কেউ এরকম করে? ' তিশা বিরক্ত হয়ে বলল ' ফেয়ার এন্ড লাভলীতেও হয়নি? কেরোসিন আনব? ' আরাফাত বোকার মত তাকিয়ে বলল ' না না তুমি যাও ' পিছন ফিরে তিশা মুচকি হাসতে হাসতে বেরোল।
.
জুই আরাফাতের জন্য শরবত তৈরি করছিল। তিশা জুইয়ের কাছে গিয়ে হাসতে হাসতে পেটব্যথা অবস্থা। জুই জিজ্ঞেস করল ' হল টা কি? এভাবে হাসছিস কেন? ' তিশা হেসেই যাচ্ছে হেসেই যাচ্ছে। বলল ' আপু তোমার জামাই কেরোসিন খাবে। শরবতটা আমাকে দাও আমিই খাই ' জুই রেগে বলল ' মুখে কিছু বাজেনা না? বেশি পেঁকে গেছিস ' তিশা এবার চুপ করে দাঁড়িয়ে বলল ' আপু তোর জামাই আমাকে অর্ধেক বউ বলে কেন? ' জুই চোখ বড় করে বলল ' সত্যি? ' তিশা হাতে জগটা নিয়ে বলল ' গিয়েই জিজ্ঞেস কর না। আমি শরবত আনছি ' জুই জানে যে আরাফাত মজা করেছে তবুও আরাফাতের কাছে গেল। চোখে আগুন টগবগ করছে। আলাদা একটা রাগরাগ ব্যাপার। আরাফাত ভয় পেল এক মুহুর্তের জন্য। এমনিতে সে জুইকে ভয় পায়না। কিন্তু তার নরম-শরম বউটা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে আরাফাত সত্যিই ভয় পেল। বলল ' আবার কি করলাম? ' জুই কাছে এসে বলল ' আরেকটা বিয়ে করার খুব শখ না আপনার? ' আরাফাত আকাশ থেকে পরল। সে ভাবতেই পারেনি জুই এমন কিছু বলবে। ভাব নিয়ে বলল ' কি যে বল মাত্র আরেকটা? আমি তো চাই প্রতিদিন একটা করে বিয়ে করি। আমি তো এমনই তাইনা? '
.
জুই মজা নিতে গিয়ে এখন থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে জানে আরাফাত এমন না। কোন অজুহাতে জুই যে এই কথাটা বলল সে নিজেই বুঝতে পারছেনা। জুই মাথা নাড়িয়ে বলল ' না না কি বলেন আপনি এমন হতে যাবেন কেন? আসলে আমি কি বলতে কি বলে ফেলেছি ' আরাফাত হাতে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। আরাফাতের সত্যিই খারাপ লাগল। ছেলেদের অভিমানে শোভা পায়না। ওটা মেয়েদেরই মানায়। আরাফাতের মন খারাপ হলে সে নিজের সাথে নিজে কথা বলে। দুটো চরিত্রে এক নিজে অপরটা এক ভিন্ন গ্রহের মানুষ হিসেবে। তিশা শরবত নিয়ে আরাফাতের কাছে গেল। আরাফাত কোন কথা না বলে শরবত খেয়ে নিল। ঈদে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়া একটা আর্ট হয়ে উঠে এসেছে অনেক আগ থেকেই। আরাফাতের শ্বশুরবাড়িতে বেশি লোকজন নেই। এক শালিকাই। আর শালিকার বাবা মা। এই গত বছরেও আরাফাত দেখে গিয়েছিল তিশা কত্ত পিচ্চি। এক বছরে এখন বুড়ী হয়ে গিয়েছে। বাড়ির সামনে একটা টং দোকান আছে। আরাফাত সেখানে গিয়ে একটা সিগারেট ধরাল। সিগারেটের ধোয়ায় এক অন্যরকম স্বাদ পাচ্ছে আরাফাত।
.
এই জায়গাটে অনেক স্মৃতি আছে আরাফাতের। অনামিকার সাথে এখানেই তার দেখা হয়েছিল। রোজ রোজ কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। একটা মেয়ের পিছনে ঘুরঘুর করা প্রতিদিন এগুলো ছিল তার নৃত্য দিনের রুটিন। অনামিকা চোখে হা বলত কিন্তু আরাফাত কিছু বললেই রাগ করত আর ধমক তো আছেই। সেই দিন গুলোর কথা মনে পরে আরাফাতের। অনামিকা একদিন রাজিও হয়েছিল। দিনরাত ফোনে আলাপ। প্রতিদিন দেখা করে ইত্যাদি ইত্যাদি ভালই চলছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ আরাফাত অনামিকার ব্যাপারে সব জেনে ফেলেছিল। ছেলেদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করাটা ছিল অনামিকার নেশা। তার রূপের অনেক বাহার ছিল। দেখতে সুন্দরী ছিল সেটা তো বলার অপেক্ষাই রাখেনা। আরাফাতের মত অনেক ছেলের মন নিয়ে সে খেলেছে। কিন্তু আরাফাত আজও অনামিকাকে ভুলতে পারেনা। বাস ষ্টেশনের পাশে ফুলের দোকানের সামনে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকত আরাফাত অনামিকাকে ফুল দিবে বলে। অনামিকা তো শহর ছেড়েছিল অনেক দিন তবুও আরাফাত দাঁড়িয়ে থাকত। আর জুইয়ের জানালা দিয়ে সেই জায়গাটা একেবারে স্পষ্ট দেখা যেত।
.
ভাগ্যের কি লীলাখেলা। সেই আরাফাতের সাথেই বিয়েটা হল জুইয়ের। জুই খুব ভাল করেই জানে অনামিকাকে কতটা ভাল বেসেছিল আরাফাত। সিগেরেটটা ফুরিয়ে এসেছে। মনটা অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে। চোখের সামনে বারবার অনামিকার মুখ ভাসছে। সিগারেটের টাকাটা দিয়ে বাড়িতে ফিরে এল আরাফাত। রুমে ঢুকে শুয়ে পরেছে। কখন ঘুমিয়েই পরেছে সে নিজেই জানেনা। রাত দশটা। জুই সেই কখন থেকেই ডাকছে খেতে। খুব কাছ থেকে ডাকতে যেয়ে আরাফাতের মুখে সিগারেটের গন্ধ বুঝতে পারে জুই। জুই জানে মন খারাপ আর মেজাজ খারাপ না হলে কখনোই আরাফাত সিগারেট খায়না। রাতের খাওয়া শেষ। নানা ধরনের রান্না আরাফাতের ভাল লাগেনা। সাদাসিধে খাবারই পছন্দ। যাহোক তবুও তো বলা যায়না কিছু। রুমের লাইট জ্বলছে। জানালা খোলা। হাল্কা ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। রুম গোছাচ্ছে জুই। আরাফাতের এদিকে মন নেই। তার মনে আজ কালো মেঘ জমেছে। চাঁদ হাসছেনা। সূর্য আলো দিতে নারাজ। আরাফাত খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল খাটে বালিশ একটা। বলল ' এক বালিশ কেন? তুমি কিসে ঘুমাবে? ' জুই ভেংচী দিয়ে বলল ' আপনার বুকে ঘুমালে সমস্যা? ' ||
Siam Ahmed Joy
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ