মাঝ রাতে হঠাৎ করে নাহিদের ঘুম ভেঙ্গে গেল…গলা শুকিয়ে কাঠ… খুব পানির তৃষ্ণা পেয়েছে... বিছানা থেকে উঠতে মন চাচ্ছে না... নীলাকে ডাকতে যেয়ে নাহিদ নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল... কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে মেয়েটি... চোখ দুটি পিটপিট করছে, মুখে আবছা হাসি...চাঁদের আলো মুখের উপর এসে পরেছে তাতে আরও সুন্দর লাগছে... মনে হচ্ছে মায়াবতী কোন এক রাজকন্যা... চুল গুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ে এসে মুখটা ঢেকে দিচ্ছে... নাহিদের মনে হচ্ছে বাতাস নীলার মুখ না কোন এক পবিত্র জিনিস ঢেকে দিচ্ছে... নাহিদ নীলার গালে একটি চুমু একে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ল... পানি নিয়ে ও জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো ...আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে ... যেন মায়াময় জোসনা ... এরকম জোসনা একা না প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে দেখতে হয়... নাহিদ নীলাকে উঠাতে যেয়ে দেখল মেয়েটা গায়ে চাঁদর টেনে দিয়ে গুটিগুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে ... নাহিদ ভাবল থাক নীলাকে আর উঠাবে না... মেয়েটা সারাদিন কত কাজ করে... সংসার , বাচ্চা দেখাশুনা করা আরও কত কাজ ... নাহিদ মনে মনে আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করলো নীলার মতো একটা মেয়েকে ওর জীবনসঙ্গী হিসেবে দাওয়ার জন্য... কত সুন্দর করেই না নীলা নাহিদের জীবন টাকে আনন্দময় করে তুলছে্... নাহিদের নামাজ, কাজ, খাওয়া সব কিছুর দিকে নীলার সমান দৃষ্টি ... ৩ বছর আগের নীলা আর আজকের নীলার মধ্যে কত পরিবর্তন ... নাহিদ ফিরে গেলো ৩ বছর আগের দিনগুলোতে ...
- এই ছেলে এত ভাব কিসের তোমার ...
- আমাকে বলছেন ...
- জী তোমাকেই বলছি ... নিজেকে কি মনে করো তুমি ...
- দেখুন আমি নিজেকে মানুষ মনে করি ...
- আমার সাথে কথা বল না কেন ... আমাকে দেখলেই এড়িয়ে যাও ... কি সমস্যা তোমার ...
- আমার সবার সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না ...
- কেন তুমি আমাকে অবহেলা করো কেন... আমি কি দেখতে খারাপ , আমার চরিত্র কি খারাপ ... ক্লাস এর সব ছেলে আমার জন্য পাগল শুধু তুমি আমার দিকে ফিরেও তাকাও না ... আমার কি দোষ ...
- দেখো তোমার কোন দোষ নাই ... শুনো আল্লাহর হুকুম যে , নিজ স্ত্রী ছাড়া পর-নারীর সুন্দর দেখা হারাম । পর নারীর দিকে কামনা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি কখনো আমার স্ত্রীকে ঠকাতে চাই না , দাম্পত্য জীবনে আমার আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না । আর আপনি যতই সুন্দরী হউন না কেন , আপনার এই সুন্দর দেখানোর অনুমতি যেখানে শুধুমাত্র আপনার স্বামীকে দেয়া হয়েছে , সেখানে আপনি আপনার সুন্দর শত শত পুরুষকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন । এটা কখনো বাহাদুরি বা ক্রেডিট নয় , এটা নির্লজ্জতার চুড়ান্ত সীমা । আল্লাহকে ভয় করুন ।"
- শুনেন আমার যা খুশি আমি তাই পরবো ... আপনি বলার কে ? এই আপনার মত মানুষেরা মেয়েদের দমিয়ে রাখছেন ... আপনার কথা মত আমি নিশ্চয় বোরকা পরবো না ...
- দেখুন আমি আপনার ভালোর জন্য বললাম ... হা নিশ্চয় আমি বলার কেউ না ... কিন্তু মুসলমান হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে ... আমি সেটা করলাম ... ভাল থাকবেন ...
বলেই নাহিদ নীলার সামনে থেকে বের হয়ে আসলো ... নীলার মনে হল এত কিসের ভাব ছেলেটার... ও আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না কেন... ও এসব কি বলে গেলো ... আমাকে কেন বলল ... আমি কি করেছি ...
গভীর রাত... জানালার পাশে বসে আছে নীলা... সামনের রাস্তাটা একদম নিস্তব্ধ। কোন মানুষ দেখা যাছে না, শুধু ঘন কুয়াশা…রুমে হালকা সাউন্ড এ গান বাজছে...নীলার মন খুব খারাপ... কিছু একটা ওর মনের ভিতর তোলপাড় করে যাচ্ছে ... ও বুঝতে পারছেনা কি ... ও ভাবছে নাহিদ কেন ওর সাথে এমন করছে ... ক্লাস এর সব ছেলে ওর জন্য পাগল শুধু নাহিদ একবারও ওর দিকে ফিরেও তাকায় না ... কিসের এত ভাব এই ছেলের... নীলার মন খারাপ বেঁড়েই চলেছে... ওর খুব অস্থির লাগছে... নীলার মনে পরল কোথায় জানি শুনেছিল নামাজে দাঁড়ালে মন শান্ত হয়, কুরআন পরলে মন শান্ত হয়... নীলা নামাজে দাঁড়ালো ... নামাজ শেষে কিছুক্ষণ জায়নামাজ এর উপর বসলো নীলা... মনে একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব করল ও… জীবনে কোনদিন এরকম লাগেনি ওর… এক অন্যরকম প্রশান্তি…
- কিরে কি হয়েছে তোর...
- নাহ কিছু না তো ...
- এই যে একেবারে হিজাব, বোরকা পরে হাজির ...
- কেন এসব পরা কি নিষেধ...
- নাহ তা বলিনি কিন্তু আগে তো দেখিনি... আবার দেখলাম জোহর এর নামাজ ও পরলি ... তুই কি পাগল হয়ে গেছিস... দেখ ক্লাস এর সবাই তোর দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে...
- কাল রাতে নামাজ পরলাম... মনে হল মনের মধ্যে কিছু একটা হচ্ছে...এত শান্তি যা আগে কোনদিন পাইনি... তারপর কিছু ইসলামি বই পরলাম... বুঝতে পারলাম আমি এতদিন কি ভুল করেছি... অনেকেই অনেক কথা বলবে , মিশতে চাইবে না, হাসি ঠাট্টা করবে... কিন্তু আমি তো খারাপ কিছু করছি না ... আমি তো ভাল হওয়ার চেষ্টা করছি, আমি তো তাই করতে চেষ্টা করছি যা আল্লাহ বলেছেন…বাসায় যেতে হবে...আসর এর সময় হয়ে এলো ... গেলাম ...
আজ ভার্সিটি জীবনের শেষ দিন... সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে... নীলা ও নিচ্ছে কিন্তু ওর চোখ খুজে বেড়াচ্ছে নাহিদকে... নাহিদ কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না... নীলা এখন নিজেকে অনেক বদলে নিয়েছে... নিয়মিত নামাজ , কুরান পড়া , ইসলামিক জ্ঞান অর্জন , পর্দা করা ও ইসলাম নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে এক আল্লাহর কাছে নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে আত্ন-সমর্পণ করেছে সে... নীলা দেখতে পেল নাহিদ আসছে ...
- আসসালামু আলাইকুম...
- ওয়ালাইকুমুস সালাম...
- নাহিদ, তোমার সাথে আমার কথা আছে ...
- জি বলুন ...
- আসলে কিভাবে বলব বুঝতে পারছিনা... তুমি আমাকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছ... আমাকে অন্ধকার থেকে আলোতে এনেছ ... আমাকে পাপ থেকে পূর্ণের পথে এনেছ... জানো তোমার ওইদিনের কথার পর আমি বুঝতে পারলাম আমি কতটা ভুল পথে আছি ... আজ আমি একজন পরিপূর্ণ ইসলামী পথে চলার চেষ্টা করি ... তোমাকে ধন্যবাদ ...
- দেখুন আমি কিছুই করিনি... আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত করেছেন, তার দেখান পথে এনেছেন... আমি একজন উছিলা মাত্র ... তবে জেনে খুশি হলাম যে আপনি আল্লাহর পথে এসেছেন...
- আরেকটা কথা আমি আপনাকে ভালবাসি... আপনি চাইলে আমি আপনার জীবনসঙ্গিনী হতে চাই ...
- আমি এই মুহূর্তে মানসিক , আর্থিক ,কোন দিক দিয়েই বিয়ের জন্য কোন ভাবেই প্রস্তুত নয় । আমাকে ক্ষমা করবেন... তবে আল্লাহ যদি চায় তবে অবশ্যই আমার কোন আপত্তি থাকবেনা...
- আচ্ছা আমি আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকবো... ভালো থাকবেন ...
এর ঠিক ২ বছর পরে নীলা আর নাহিদের বিয়ে হয়ে গেলো... নাহিদের এখনো বিশ্বাস হয়না যে নীলার মত একটা মেয়ে ওর বউ ... নীলা নাহিদকে সব ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে... এমনকি আয়-রোজগারের ব্যাপারে যথেষ্ট পরামর্শ ও সাহস দেয়...
- তুমি ঘুমাওনি ...
- হা ঘুমিয়েছিলাম ... পানি খাওয়ার জন্য উঠলাম ...
- তো জানালার পাশে বসে আছো কেন ?
- নাহ ভাবছিলাম আমাদের আগের কথা ... তোমাকে পেয়ে সত্যি আজ আমি গর্বিত... নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে ...
- আচ্ছা বুঝলাম এখন উঠো ... আজান দিচ্ছে ... ফজর এর নামাজ পরতে যাও ...
- আচ্ছা বাবা যাচ্ছি...
নাহিদ উঠে পা বাড়াল মসজিদের দিকে নামাজ পড়ার জন্য... নীলা পিছন থেকে ওর দিকে তাকিয়ে রইল... নীলার চোখে কেন যেন সুখের পানি জমে উঠলো ... চোখ মুছে ও পা বাড়াল বাথরুমের দিকে অজু করার জন্য .
Akteeuzzaman bappy
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ