āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ā§Ē āĻ…āĻ•্āϟোāĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

3042

বাবা মানেই যেন আশা...
.
.
বসে আছি চেয়ারে। সামনে টেবিল। সেই টেবিলের উপর রাখা তাসনিয়ার ছবি। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। সেই পড়ছে তো পড়ছেই। এক হাত দিয়ে মুচছি অশ্রু গুলো। আমার মাঝে দুটো ব্যাপার ঘটছে। এক দিকে কষ্ট আরেক দিকে সুখ। একজন বাবার সুখ। একজন বাবার সফল হবার সুখ। কষ্ট কোন একজনের স্মৃতি মনে পড়ছে প্রচণ্ড। যার কাছে দেয়া কথার জন্য আজ আমার সফল হবার সুখ। কিন্তু কথা দেয়ার পরেই সে চলে গিয়েছিলো। কোথায় গিয়েছিলো জানবেন আসতে আসতে। বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে।
.
আজ দুঃখ এর কারণ তাসনিয়া। যে ছেলের সফলতা দেখে যেতে পারলো না। সে হয়তো উপর হতে দেখছে। মনে হচ্ছে দুঃখ আমার হৃদপিন্ড ভেঙ্গে যেতে চাইছে। আবার অন্য দিকে সুখে তা আবার জোড়া লাগতে আছে। এই সুখ আছে তাইতো বেঁচে আছি।
.
আমার ছেলে নাম নিয়ন। আমার ছেলে আজ ডাক্তার হয়ে বেড়িয়েছে। বাড়ি ফিরছে ৫ বছর পর। এতোদিন শুধু মাত্র মুঠো ফোনে কথা হয়েছে। আমিই বারণ করেছিলাম যেন আমাকে দেখতেও না আসে ডাক্তার আগে। তা আমার কথা রেখেছে। আজ আসছে দেখা করতে। আমার সুখের দিন। তাসনিয়ার আর আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এটাই তো চেয়েছিলাম। তাসনিয়াকে দেয়া কথা টাও রাখতে পেরেছি।
.
তাসনিয়া আমার স্ত্রী। বর্তমানে পরপারের বাসিন্দা। সেই যে নিয়নের দুবছর বয়সে পরলোকগত হয়েছেন আমাকে আর আমার ছেলেকে রেখে। হ্যা আমার ছেলের নাম নিয়ন। তার মৃত্যুর আগে আমি তাসনিয়াকে কথা দিয়েছিলাম আমি তার স্বপ্ন পূর্ণ করবো। আমাদের ছেলেকে ডাক্তার বানাবো। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ৫ টা বছর অনেক কষ্টে ছিলাম। দেখা করতে মন চায়তো। কিন্তু কি করবো। ছেলের জন্য সব করতে হয়। তাই সব সহ্য করেছি।
.
আমার হাতে একটা ডায়রি। এই ডায়রি সবার থেকে আড়ালে রেখেছি। আমার জীবনের অনেক কথা লেখা আছে। ডায়রি ঘাঁটতে ঘাঁটতে পুরোনো স্মৃতির মাঝে ডুবে গেলাম।
.
""ছোট থেকে বেড়ে উঠেছিলাম গ্রামে। গ্রামের ছেলেদের মত ছোট থেকে হেসে খেলে দৌড়ে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি। বেড়ে উঠেছিলাম গ্রামের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে। বাবা আমার ছোট বেলায় মারা গিয়েছিলেন। চেহারাটাও মনে নাই স্পষ্ট। ৩ ভাই ছিলাম আমরা। আমাদের, কিছু জমি ছিলো। সেই জমি থেকে যা আসতো তা দিয়েই আমাদের দিন চলতো। মোটামুটি ভালোই চললেছিলো শৈশব কাল।
.
৭০ দশকের শেষের দিকে আমার ছাত্র জীবন শুরু হয়। শুরু হয় বই খাতার সাথে যুদ্ধ। মেধাবী নাকি আমি। অবশ্য সত্য কিনা জানি না। কাজের ফাঁকেফাঁকে অবসর সময় বই নিয়ে কাটাতাম। স্কুলের মেধাবী আর নিয়মিত ছাত্র হিসেবে আমার সুখ্যাতি ছিলো। আসতে আসতে কেটে যায় আমার শৈশব। জমি জমা থেকে যেটুকু আয় আসে তাতে আমাদের দুই ভাই আর মায়ের পক্ষে সামলানো অনেক কম।
প্রত্যেক পরিক্ষার পর ভাবতাম এই বুঝি আমার পড়া লেখা থেমে গেলো। কিছু ভালো ফলাফলের কারণে বেঁচে যেতাম। পরের ক্লাসে পড়ার অনুমতি পেতাম পরিবার থেকে।
.
এসএসসি তে ভালো ফলাফল করে স্কুল জীবন থেকে বেড়িয়ে স্থানীয় জেলা কলেজে ভর্তি হলাম ৮০ দশকের শেষের দিক। যথারিতি ভালো ফলাফল করে সুখ্যাতি কামিয়েছিলাম। পরিবার থেকেই খরচ আসতো। ভালো গ্রেড এর ফলাফল করে এইচএসসি শেষ করি বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় আর্থিক টানা পোড়ন শুরু হয়। অনেক কষ্ট করে টাকা যোগাড় করে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। সেই সাথে নিজের হাত খরচ, থাকা খাওয়ার খরচ বাঁচাতে একটা টিউশনি শুরু করি। একটা বাসায়, থাকা খাওয়া আর কিছু হাত খরচের বিনিময়ে তাদের এক মাত্র মেয়ে পড়াতে হবে। আসলে তেমন কিছুই না। তারা ছাত্রদের সাহায্য করতো। সেই তালিকায় সৌভাগ্যবশত আমি ছিলাম।
.
মেয়েটা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো। নাম তাসনিয়া। ভালো মেধাবী ছাত্রী ছিলো ও। বেশি কষ্ট করতে হতো না। দেখিয়ে দিতাম। নিজেই মিলেয়ে নিতে পারতো। ওর পড়াশোনা দেখার পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা ঠিক রাখতাম। ভালো ভাবেই চলে যাচ্ছিলো বছর। প্রতি বছর ভালো ফল নিয়ে পরের বর্ষে উত্তির্ন হতাম। ওদের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠলাম আসতে আসতে। বাড়ির সাথেও যোগাযোগ ভালো আছে। এতোদিন যাবতীয় সব সাহায্য এই পরিবার থেকে পেয়েছি।
.
ধীরেধীরে আমি অনার্স শেষ করে মাষ্টার্স শেষ করি ৯০ দশকের শেষের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে এই পরিবার আমার পাশে ছিলো। আর এদিকে তাসনিয়াও এইচএসসি কম্পলিট করেছে। সব ক্লাসেই ভাল ফলাফল করে উত্তির্ণ হয়েছিলো। এর মাঝে তার দিকে যে আমার মন আকৃষ্ট হয় নি তা কিন্তু না। কিন্তু আমি এই পরিবারকে ঠকাতে চাই নি। তাই নিজের মাঝেই চেপে রেখেছি ব্যাপার টা।
.
প্রায় সাথে সাথে ভাগ্য যেন ভাল হতে থাকলো। ব্যাঙ্ক এর চাকরী পেলাম। তারপর পরই তাসনিয়ার বাবা তার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমিও রাজি হয়ে যায়। যে বেতন তাতে দুজনের আরামে চলে যাবে। বিয়ে হয়ে যায় আমাদের। ভালো ভাবেই চলছিল। সংসারের সব তাসনিয়াই সামলায়।
.
আমার ব্যাঙ্কের সুদ আসলের কাজ একদম ভালো লাগতো না। তাই কিছু মাস পরেই ছেড়ে দিই চাকরীটা। জমানো টাকা আরও কিছু টাকা জমাতে থাকি। জমিজমা বিক্রি করে আরও টাকা জমিয়ে একটা প্রাইভেট অফিসে চাকরী নিই। এই চাকরী চলা কালীন আমাদের ছেলে নিয়নের জন্ম হয়। সুখের কিন্তু তাসনিয়া আমাদের দুজনকে একা করে পরপারের পথে পাড়ি জমায়। তার আগে কথা দিতে হয়েছে আমাদের ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাবো। কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু বলার আগেই হারিয়ে গেলো। আমি একা না সাথে পিচ্চি নিয়নটা। ভাইয়েরা সব গ্রামে থাকে। আমি শহরে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার মাকে সেখানে এনে রাখলাম যেন আমার অনুপস্থিতিতে যত্নআত্মি করতে পারে। এক বাবা হিসেবে আমি সর্বচ্চ চেষ্টা করতাম।
.
আরও কিছু টাকা জমিয়ে একটা সাদামাটা বাড়ি কিনি। এক তলা ছাদওয়ালা বাড়ি। সেখানেই আমরা স্থায়ী হয়ে গেলাম। ঢাকা শহর সব কিছুর দাম আছে। তাসনিয়ার পরিবার থেকেও সাহায্য পেতাম। সর্ব প্রকার সাহায্য পেয়েছিলাম ওদের থেকে। নিজের কাজের সময় বাদে বাকি সময় নিয়নকে দেয়ার চেষ্টা করতাম। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না হলেও তেমন খারাপ না।
.
আসতে আসতে নিয়ন বেড়ে উঠছে। সেই চোট্ট নিয়ন আর ছোট নেই। স্কুলে যাবে পরের দিন থেকে। ছোট থেকে কষ্ট করে সময় দিয়ে, যত্নশীল হয়ে মানুষ করেছিলাম। একটা ছেলে হয়ে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তবুও মা ছাড়া কেমন একটা ফাঁকা থেকে যায়। মায়ের অভাব থেকে যাবে হয়তো নিয়নের মাঝে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। অন্তত বিয়ে তো করবো না। কোনো মেয়েকে বিয়ে করবো, সে নিয়নকে কষ্ট দিতে থাকবে এটা অন্তত আমি হতে দিবো না। অনেক মেয়ে চাইছিলো আমাকে পেতে, আমি বলেছি আমি বিবাহিত আর ছেলে আছে। তাছাড়া আমার মা তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। একজন নারী পারে সন্তানকে ভালো ভাবে সামলে রাখতে।
.
নিয়নের স্কুল জীবন শুরু হয়েছে। মায়ের মতোই মেধা হয়েছে। দেখতেও মায়ের মতো। যাক তাসনিয়া বেঁচে নেই কে বলেছে। এই ছোট্ট ছেলেটার মাঝেই তো রয়েছে তাসনিয়া। আর কি চাই। ছেলেকে নিয়েই ভালো থাকবো আমি। সেই চেষ্টাই করছি। শিক্ষিত করবো, ইঞ্জিনিয়ার। সব বাবারই তো একটা স্বপ্ন থাকে। আমারও ব্যাতিক্রম নাই। স্বপ্ন তাকে ইঞ্জিনিয়ার বানানো। তাসনিয়ার স্বপ্নটা পূরণ, তাকে দেয়া কথা রাখা। এক জন বাবা হিসেবে এটাই আমার লক্ষ।
.
ছুটির দিন সারাক্ষণ নিয়নের সাথে কাটাতাম। মাঝে মাঝে বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। বাবা ছেলে সারাক্ষণ ইয়ার্কি ফুর্তি করতাম। এতো কিছুর মাঝে ও ওর পড়া ঠিক রাখে। যেমন তাসনিয়া করতো। ওর মাঝেই আমার তাসনিয়াকে খুঁজে পাই। তাসনিয়া চলে যায় নি। নিয়নের মাঝে বেঁচে রয়েছে। আমাদের সাথে রয়েছে। নিয়ন যখন ওর মা কোথায় জানতে চায় বুক ফেটে যায় আমার। বলি তোমার ছোট্ট হৃদয়টার মাঝে তোমার আম্মু আছে।
.
আসতে আসতে বড় হতে লাগলো নিয়ন। সেই ছোট্ট সোনামণি স্কুল শেষ করে কলেজে উঠলো। সেই পিচ্চি থেকে গড়ে তোলা সেই নিয়ন এখন কত বড় হয়েছে। ভালো ফলাফল করে বেড় হয়েছে ও। স্কুলে ভালো ছাত্র হিসেবে সুমাম আছে ওর। খুব ভালো লেগেছিল যখন ও বিদায় অনুষ্ঠানে বলেছিলো আমার ভালো রেজাল্ট, আমার উন্নতির সব ক্ষেত্রে আমার বাবার জন্য হয়েছে। সেই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারবো না। এতো আনন্দ বোধ হচ্ছে। এক বাবা হিসেবে অনেক কিছু চাই। কিন্তু সেটা ছিলো আরেকটা বড় চাওয়া। সব বাবাই চান তার ছেলে নিজের দেখানো পথে চলুক। অন্তত একজন বাবা নিজের সন্তান কে ভুল পথ দেখাবে না। সন্তান যদি বাবার দেখানো পথে চলে তাহলে সাফল্য নিশ্চিত। কতজন ছেলে বোঝে এটা।
.
চলছিল বাবা ছেলের দিন ভালো ভাবেই। আমার মা তো সেই কবেই গ্রামে ফিরে গেছে। আমার ২ ভাইও তো ওখানে আছে। আস্তে আস্তে তাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় জমিজমার ভাগ নিয়ে জের ধরে। আমি সবার ছোট তাই কিছু বলতে পারি নি। যোগাযোগ করার চেষ্টা করিও নি। তারা ভালো থাকুক। নিয়ন আর আমি দুজনই এখন মানিয়ে চলতে পারি। ওর ইন্টার ২য় বর্ষে উঠেছে। কিন্তু আস্তে আস্তে নিয়ন কেমন যেন বদলে যেতে থাকে। ভাবলাম হয়তো বয়সের দোষ। কিন্তু না। ধরতে পারলাম না কি হয়েছে ঠিক। উচ্চস্বরে কথা বলতো, রাগ করতো, দেড়ি করে বাসায় ফিরত, আরও কত কী। ওর কাছের বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করলাম তেমন কিছু জানা যায় নি। তবে শুনলাম মাঝে মাঝে নাকি কলেজে ক্লাস বাদ দিয়ে বাজে ছেলেদের সাথে ঘুড়তে যায়। আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠল। তাদের আমি বললাম খোজ নিতে যে নিয়ন ওদের সাথে কি করে?
.
কিছুদিন পর নিয়নের বন্ধুরা খবর দিলো নিয়ন সিগারেট আর নানা অপকর্ম করা শুরু করেছে অন্য এলাকায়। শোনার পর নিজের কান কেই বিশ্বাস করতে পারছি না। ওরা সত্যি বলেছে নাকি আমি ভুল শুনেছি। ওদের বললাম সত্যি বলছে কি না। তারা বলল সত্যিই বলছে। সে নাকি বখে যাচ্ছে। এখনই সমান। বুকের মাঝে চিন চিন করে ব্যাথা করছে। কিছু শুনতে পাচ্ছি না। কি থেকে কি হয়ে গেলো। কিছুদিন পরেই তো নিয়ন এইচএসসি পরিক্ষা দিবে। ক্লাস ও তো ভালো মতো করে না। তাহলে এতো দিন আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে.... না আর ভাবতে পারছি না।
.
বোঝাবো ঠিক করলাম। আমার কথা তো শুনেছে। এবারের টাও নিশ্চয় শুনবে। পরের দিন রাতে অনেক বোঝালাম। ছেলে গুলো ভালো না। নিজে যা করছো ওগুলো অসৎ কাজ। আমার কথা শুনে আসছো ছোট থেকে। এবার অন্তত আরেক বার আমার কথা শুনো। ওদের সঙ্গ ছেড়ে দেও কেমন। সে মাথা ঝাকালো কিছুটা। কিন্তু পরবর্তীতে খেয়াল করলাম ছেলে ছেলেটা আমার বুঝেও বুঝলো না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো। মনে হতে লাগলো আমার চেয়ে অসহায় কেউ নাই। তবুও প্রায় বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলাম।
.
কিন্তু বুঝতেই চাইছে না। এদিকে ইন্টার দিলো। রেসাল্ট আশানুরূপ না হলে খুব একটা খারাপ হয় নি। না হওয়াটাই স্বাভাবিক। এমন ভাবে চলতে লাগলে আরও খারাপ হবে। একদিন ঠিক করলাম সব বলবো ভালো ভাবে বুঝাবো।
তাকে রাস্তে ডেকে ছাদে নিয়ে গেলাম। তাকে বলছিলাম, সব ছোট বেলার। তার মা মারা যাওয়া, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা, তার মাকে দেয়া কথা, কিভাবে স্বপ্ন নিয়ে ওকে বড় করেছি। পরিশেষে বলেছিলাম, যে তুমি যেভাবে চলতে চাও হয়তো বাধা দিলেও মানবে না। কিন্তু একজন বাবা হিসেবে সন্তানের খারাপ হতে দেখে থেমে থাকি কিভাবে বলো। তাসনিয়ার স্বপ্ন পূরণ না করতে পারলে যে আমি তার কাছে অপরাধী হয়ে যাবো। আর তাহলে তো আমি মরেও শান্তি পাবো না। তুমি অনেক অন্যায় করে ফেলেছো। কিন্তু আর না ভেবে দেখ বলে আমি তার দিকে তাকিয়েছিলাম। আমি নিয়নকে ঘরে গিয়ে ঘুমাতে বলেছিলাম। বলেই আমি নিজেই ঘরে এসে সুয়ে পড়েছিলাম। ঘুম হয়নি রাতে।
.
পরের দিন আশ্চর্যের সকাল ছিলো। নিয়ন এসে কাছে বসে বলেছিলো, আমি সত্যিই অনেক অন্যায় করেছি বাবা। আমি আবার পড়াশোনা শুরু করতে চাই। তোমাদের স্বপ্ন আমি পূর্ণ করবো বাবা। আর অন্যায়ের জন্য যা শাস্তি দেবে আমি মেনে নিবো। আমি তাকে বলেছিলাম, তোমার শাস্তি একটাই হবে, জানি কষ্ট দিতে চাইবো না। তবুও দিতে হচ্ছে। তুমি মেডিক্যাল ভর্তি হয়ে ডাক্তার না হয়ে তোমার মুখ আমায় আর দেখাবে না। যেদিন ডাক্তার হবে সেদিন তোমার মুখ আমায় দেখাবে। আর সরকারীতে নিশ্চয় ঢুকতে পারবে না। বেসরকারি তে ঢুকে যাও। এর জন্য খরচ লাগলে কষ্ট করে হলেও দিবো। আর হ্যা কিছু লাগলে ফোন করে খালি বলে দিলেই হবে। বলেই আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়েছিলাম। কষ্ট পাচ্ছিলাম নিজেই। তবুও ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমাকে কঠোর হতে হয়েছে। সব কিছু ভেবে রেখেছিলাম রাতেই। সত্যি হবে ভাবতে পারি নি।
.
কিছুদিন পরেই নিয়ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ এ ভর্তি হয়ে একটা ম্যাসে উঠে যায়। একজন বাবা হিসেবে এতো কঠোর হলাম। কিন্তু আমার ছেলের ভবিষ্যৎ আছে। সেই ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে যত কঠোর যত কষ্ট সহ্য করতে হয় আমি করবো। সেই কলেজের খরচ বেশি ব্যাপার না সামলে নিবো। এই বয়সে ভালো মত অফিসের কাজ করতে থাকলাম। টাকা বেশি করে বাঁচাতে শুরু করলাম। সেই টাকা দিয়ে নিয়নের পড়ার খরচ চালাতে হবে।
.
এর মাঝে আরেকটা ব্যাপার ঘটে গিয়েছিলো। আমার হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলো। ডাক্তার পরিক্ষা করে বলেছিল অনেক বড় চিকিৎসা করাতে হবে। টাকাও লাগবে নাকি প্রচুর। আমি ভেবেছিলাম, আমি এতো টাকা খরচ করলে নিয়নের খরচ চালাবে কে? থাকুক আমার যা কিছু হোক ছেলের ভবিষ্যৎ আগে। আমি না হয় কিছুদিন বাঁচবো। কিন্তু নিয়নের সামনে তো অনেক পথ পড়ে রয়েছে। ডাক্তার বলেছিলেন, চিকিৎসা না করালে হার্ট এটাক করলে হয়তো সেটাই হবে আপনার জীবনের শেষ দিন। আমি বলেছিলাম যদি তাই হয় তাহলে আল্লাহ যেন আমার সন্তানের সফল হওয়া দেখে যাবার সুযোগ দেন সেই দোয়ায় করি। আমার চেয়ে আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ আমার কাছে দামী। ডাক্তার কিছু না হলে নিরবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমি বাড়ি চলে আসি। রিপোর্ট টা পুড়িয়ে ফেলি। যেন কারও চোখে না পড়ে। দেখে ফেললে নিয়নের কানে গেলে সব ছেড়ে দিয়ে হলেও আমার চিকিৎসা করাবে। যেটা আমি চাই না।
.
ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে লাগলাম। তবুও নিয়মিত অফিস আর নিয়নের টাকা পাঠাতে লাগলাম। এভাবে বছরের পর বছর শেষে আজ আমার সফল হবার দিন। একজন বাবার সফল হবার দিন। আমার ছেলে ডাক্তার হিয়ে বেড়িয়েছে। সবার আগে ও আমায় ফোন করে জানিয়েছে।""
.
হঠাৎ বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা করতে লাগলো। আমি খালি আমার ছেলের মুখ একবারের জন্য হলেও দেখতে চাইছি মন প্রাণে। আল্লাহর কাছে দোয়া করছি খালি যেন একবার দেখতে পাই। একসময় মেইন গেট খোলার শব্দ পেলাম। বাটমড়ি একটা চাবী নিয়নের কাছে থাকতো। আমার শরীর দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। নিয়ন হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার ঘরে ঢুকলো বাবা বাবা বলে চিৎকার দিতে দিতে। কিন্তু পর মূহুর্তে তার হাসি হাসি মুখ কালো হয়ে যেতে দেখলাম। এই মুহুর্ত টার জন্যই যেন বেঁচে ছিলাম এতো কাল। নিয়ন দৌড়ে এসে আমার জড়িয়ে ধরলো। আমি বললাম,'ভালো থেকো'। আর হাত দিয়ে ডায়রি দেখিয়ে দিলাম। হঠাৎ পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেলো।
.
পরিশিষ্ট:- রাতের নিস্তব্দ অন্ধকারের মাঝে একটা ছোট টেবিল ল্যাম্পের আলো জ্বলছে, তার মাঝে একটি নিয়ন নামের ছেলে ডায়রি পড়ছে আর ক্রমাগত অশ্রু বিসর্জন করে চলেছে।
.
নিয়নের বাবাকে হাসপাতাল নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। নিয়নকে সেই ডাক্তার সব কিছু বলে দেয়। নিয়নদের বাড়ির পাশে কবর দেয়া হয় তাকে।
.
বাবাদের গল্প শেষ হয় না কখনো। বরং নতুন নতুন গল্প প্রতিদিন তৈরি হয়।
...........................সমাপ্ত........................
[সব গল্পের শেষটা সুখের হয় না। বাবাদের কথা বলে বা গল্প লেখে তার ক্ষুদ্রাংশ শেষ হবে না। তবুও সামাণ্য চেষ্টা। তবুও ভালো করতে পারি নি]
.
ফয়সাল আহমেদ (স্বপ্নপুরির রাজকুমার)

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ