"ইকুয়েশন"
---------------------
হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেলো রিয়ার।
দেয়ালে ঝোলানো রেডিয়াম এর
ঘড়িটাতে তাকিয়ে দেখলো মাত্র রাত
আড়াইটা বাজে। এতো আগে কখনোই ঘুম
ভাঙেনা ওর। অসুস্থ খালাকে দেখতে মা
বাবা আজ ঢাকার বাইরে গেছেন। সেই
সুযোগে বুয়াকে ছুটি দিয়ে ফ্রেন্ডদের
নিয়ে রাত ৯ টা পর্যন্ত জম্পেশ আড্ডা
দিয়েছে ও। বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীরে
বাইরের পোশাক না বদলেই শুয়ে পড়েছিল।
খুট করে একটা শব্দ হলো পাশের ঘরে।
পাশের রুমটা মা বাবার। তেমন একটা
পাত্তা দিল না রিয়া। কিছুক্ষণ পর, মনে
হলো কে যেনো সারাঘর হেটে বেরাচ্ছে
মৃদু পায়ে।
ঘুমকাতুরে চোখগুলো মেলে বিছানায় উঠে
বসলো রিয়া।
.
"কে??"
.
প্রশ্ন করে অগোছালো চুলগুলো চোখের
সামনে থেকে সরালো। রুমের দরজার
দিকে চোখ পড়তেই ঘুম হালকা হয়ে গেলো।
চারপাশতা কেমন যেনো ঝাপসা। চোখ
রাগরে নিলো রিয়া। নাহ্, কোন পরিবর্তন
নেই।
সারাঘর কেমন যেনো সাদা রঙের কুয়াশায়
ঢাকা। ঘরে কোনও আলো নেই। কিন্তু
অদ্ভুত এক স্নিদ্ধ আলো ছেয়ে আছে সারা
বাড়ী।
পাশের ঘরে কেউ মৃদু সুরে গান গাইছে।
এতো আস্তে, যেনো মনে হয় ভূল শুনেছে,
এরকম।
রিয়ার ভয় হতে লাগলো। বাসায় এসে
বাহিরের দরজা ঠিক করে লাগিয়েছিল
তো!? বাসায় কে ঢুকেছে! চোর?
কিন্তু, চোর কি চুরি করার সময় গান গায়
নাকি, আজীব! একসাথে অনেকগুলো
চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকলো রিয়ার
মাথায়। বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো ও।
পাশের ঘর থেকে কিছু একটা ভাঙার শব্দ
পেলো। নিশ্চয়ই ও ঘরে কেউ আছে। আর
দেরী না করে ড্রেসিং টেবিল থেকে
ফুলদানী টা তুলে নিল ও। দরজার দিকে
এগুতে যাবে, ঠিক তখন ই আয়নায় চোখ
পড়লো। সাথে সাথে পেছনে ফিরে
তাকালো। রুমে মিষ্টি, স্নিগ্ধ একটা
ঝাপসা আলো। আর চারদিকে সাদা
কুয়াশার আবরন। আবার আয়নার দিকে
তাকালো ও। মৃদুবাতাসে ধোঁয়া গুলো
যেনো বিভিন্ন আকৃতি নিচ্ছে খুব অল্প
কিছু সময়ের জন্য।
হঠাৎ একটু জোড়ালো বাতাসে জানালার
পর্দা উড়ে এলো। রিয়া স্পষ্ট দেখতে
পেলো, পর্দা নেমে যাওয়ার সময় একটা
মানুষের অবয়ব এর উপর পড়লো। পর মূহুর্তে
আবার মিলিয়ে গেলো অবয়বটি । ঠান্ডা
বাতাস রিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে আবার
পর্দাটাকে উড়িয়ে নিল। কিচ্ছু নেই ওটার
নিচে, পরিষ্কার দেখতে পেলো ও।
অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠলো রিয়া।
পাশের ঘরের এখনো খুটখাট শব্দ। রুম থেকে
বের হয়ে এলো রিয়া। চারপাশে একই রকম
সাদা ধোঁয়া। করিডর পেরিয়ে মা বাবার
রুমে উঁকি মারলো রিয়া। কেউ নেই ও ঘরে।
ডাইনিং রুমেও সাবধানে উঁকি মেরে
দেখলো, সেখানেও কেউ নাই। কিচেনে
টিনের কিছু একটা পড়লো। নিস্তব্ধ
বাড়ীতে এই শব্দকেই বাজ পড়ার শব্দের
মতো লাগলো। একটা ছোট চিৎকার
বেড়িয়ে আসলো রিয়ার মুখ থেকে। ছুটে
পালানোর জন্য মন আকুপাকু করছে। কিন্তু
পা দুটো সায় দিল না। কিছুক্ষণ পর সাহস
সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলো ও। প্লেট আর
চামচ নাড়াচাড়ার শব্দ ভেসে আসছে।
সাবধানে উঁকি দিল রিয়া। মুহুর্তে সব
চুপচাপ...
কোনও অশরীরিণীর মহোময় হাসি হঠাৎ
দমকা বাতাসের সাথে ভেসে এলো। রিয়া
মনে মনে খোদার নাম জপতে থাকলো।
ড্রয়িংরুম থেকে আবার গানের আওয়াজ
শুনতে পেলো রিয়া। মনের সব সাহস
একত্রিত করে ছুটে গেলো ড্রয়িংরুমে,
কিন্তু মাঝামাঝি পৌঁছাতেই সহ্য ক্ষমতার
চুরান্ত সীমা পার হয়ে গেল। চোখের
সামনে, নারী শরীরের এক সুগঠিত
কাঠামো। রিয়ার উল্টো দিকে ফিরে
আছে। সাদা ধোঁয়াটে চুলগুলো বাতাসে
ভাসছে। যেনো পানির নিচের কোনও দৃশ্য।
কাধ থেকে পায়ের পাতা অবদি সাদা
নিরেট কুয়াশায় ঢাকা। বস্ত্র বলতে এটুকুই
পুরো শরীরকে ঢেকে রেখেছে।
মুগ্ধ হয়ে রিয়া দেখলো, একেই বোধহয়
মর্তের মানুষেরা অপ্সরী বলে।
অস্ফুট স্বরে রিয়া জিজ্ঞেস করলো
.
"কে???"
.
ধীরে পিছে ফিরে তাকালো অবয়বটি।
চমকে উঠলো রিয়া। অবয়বটির চোখের
কোটর, আর ঠোঁটের জায়গায় গুমোট
অন্ধকার, কিচ্ছু নেই সেখানে। পুরো ঘরের
সব অন্ধকার যেনো শুষে নিয়েছে কালো
চোখ দুটো.. ওই চোখে প্রচন্ড ঘৃণা আর
তাচ্ছিল্য ঝরে পড়ছে। স্থীর দৃষ্টিতে ওই
কালো চোখগুলো ওর দিকে তাকিয়ে
আছে যেনো। হঠাৎ অবয়বটি অন্ধকার
মুখগহ্বর নিয়ে বিকট হা করে ছুটে এলো
রিয়ার দিকে।
এর চেয়ে বেশীকিছু দেখার সহ্যশক্তি আর
পেলো না রিয়া। আর্ত চিৎকার করে
লুটিয়ে পড়লো মেঝেতে। চোখ বন্ধ করার
আগে দেখতে পেলো, দুটো হাত এগিয়ে
আসছে ওর দিকে.. অশরীরিণীর হাত দুটো।
.
.
.
যখন আবার চোখ মেললো, তখন প্রায়
দুপুরের মাঝামাঝি সময়। নিজেকে নিজের
রুমের বিছানায় আবিষ্কার করলো রিয়া।
মাথার কাছে মা বসে আছেন। চোখতুলে
মায়ের চিন্তিত চোখজোড়া দেখতে
পেলো ও। মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে দেখে
কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন তিনি।
.
"কি হয়েছিল তোমার? ড্রয়িংরুমের
মেঝেতে কি করছিলে! রাতে বাহিরের
দরজা খোলা রেখেছিলে কেন? তুমি ঠিক
আছো??"
.
মায়ের এতগুলো প্রশ্ন শুনে ফ্যালফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকলো রিয়া। উত্তর
দেয়ার মতো শক্তি নেই যেন ওর।
.
অবশেষে জানতে পারলো, পাশের বাসার
বুড়ো আন্টি ওর চিৎকার শুনে তার ছেলে
আর ছেলের বউকে পাঠিয়েছিলেন ওদের
বাসায়। তারা এসে দরজা খোলা পায়।
লাইট জ্বালাতেই রিয়াকে মেঝেতে পড়ে
থাকতে দেখেন। তারপর ওর মা বাবাকে
খবর দেন।পাশের ফ্ল্যাটের ভাইয়ার নতুন বিয়ে হয়েছে।
ভাইয়ার বউ নাকি বাকিরাত পাশে ছিল
রিয়ার, সেবা করেছিল সারারাত। কিন্তু,
ভাবীকে এখনো দেখতে পায়নি একবারো
রিয়া। মাকে বলে ভাবীকে ডেকে আনলো
ও। রিয়ার জ্ঞান ফিরেছে শুনে নিজেই
ছুটে চলে আসলেন ভাবী।
উনি রুমে ঢুকতেই রিয়া স্তম্ভিত হয়ে গেল।
একে কোথায় যেনো দেখেছে রিয়া।
ভাবী কথা বলতে বলতেই রিয়ার জ্বর আছে
কিনা দেখতে কপালে হাত দিল। হিমশীতল
স্পর্শ। কেপে উঠলো ও। রিয়ার আম্মুর সাথে
কথা বললেন ভাবী। পুরো ঘটনাটা তার মুখ
থেকে আবার শুনলেন উনি। রিয়া প্রতিটা
সেকেন্ড সময় ভাবীর মুখের দিকে
তাকিয়ে ছিল। এতো সুন্দর মানুষ কিভাবে
হয়, একেই মনে হয় মর্তের মানুষ স্বর্গের
অপ্সরী বলে। চিন্তাটা মাথায় আসতেই
স্থির হয়ে গেল রিয়া। ভাবী বিদায়
নেয়ার আগে সৌজন্য দেখাবার খাতিরে
রিয়ার হাতে আলতো চাপ দিলেন। রিয়া
ভাবির আঙ্গুলগুলোর দিকে একমনে
তাকিয়ে থেকলো। মাত্রাতিরিক্ত বড়
নখগুলোর কোনায় লাল রঙের আঠালো কিছু
লেগে আছে। ভাবী যাবার আগে এক
চিলতে হাসি উপহার দিয়ে গেলো
রিয়াকে। অপার্থিব এক টুকরো হাসি।
.
ভাবী চলে যেতেই কম্বলের নিচ থেকে
নিজের বামহাতটা বের করলো রিয়া। কনুই
থেকে হাতের তালু পর্যন্ত আড়া আড়ি
ভাবে চারটা আঁচড়ের দাগ। বেশ গভীর সেই
ক্ষতগুলো।
ভাবীকে বিদায় দিয়ে মা আবার মাথার
পাশে এসে বসেন। কপালে হাত দেন জ্বর
আছে কিনা দেখার জন্য। এবার অনেক
বেশী উষ্ণ ছোয়া পেলো রিয়া, আগের
হাতটার চেয়ে।
.
কিছু জিনিস, কিছু প্রশ্নের উত্তর কোনও
ভাবেই মিলাতে পারলোনা রিয়া...
প্রশ্নগুলোর অসমাপ্ত উত্তরগুলো খুঁজে
পেলো না ও কখনো। পরের মাসেই ওরা
বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠে।
কারণ, ঐ ঘটনার কিছুদিন পরেই রিয়া যখন
একদিন পিকনিকে যায়, আর ওর ডক্টর
বাবা নাইট ডিউটিতে আটকা পরে, ঠিক
একই ঘটনা মায়ের সাথে ঘটে। এবারও
বাইরের দরজা খোলা পাওয়া যায়। আর,
সারারাত ধরে পাশের ফ্ল্যাটের ভাইয়ার
নতুন বউ মায়ের সেবা করে।
কি জানি...
হয়তো, আগে দেখেছে বলে মায়ের চিনতে,
বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় নি... রিয়ার
অসমাপ্ত ইকুয়েশনের ইতি মা ই টেনে
দিয়েছেন তাই।
(সমাপ্ত)
-------------------
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ