ঘরের দরজা লাগিয়ে পাশ ফিরতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। রাগি চোখে নিশী দাঁড়িয়ে। বাড়িওয়ালার মেয়ে।
দ্বাদশ শেণিতে পড়ে; মিষ্টি চেহারা। মায়াবিনী সুনয়না।
তবু কেন জানি মেয়েটাকে দেখলেই আমি ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে যাই। কিন্তু চেহারায় শক্ত ভাব ধরে রাখি যেন আমি নির্বিকার, কোনো কিছুর প্রতিই আমি খেয়াল রাখি না।
"এই ভর দুপুরবেলা কোথায় যাচ্ছেন শুনি?" রাগি চোখের কড়া প্রশ্নে আরো কুঁকড়ে গেলাম ভেতর থেকে।
কিন্তু চেহারায় কাঠিন্য ফুটিয়ে বললাম,
— কাজু মামার গ্যারেজে।
— কেন?
— লুডু খেলতে।
— কী সব ছাইপাঁশ বলছেন আজাদ ভাই? আর এই কাজু মামাটা আবার কে?
— মেথর পাড়ায় বাড়ি।
— আপনি ওপাড়া যান?
— হুঁ।
— ছিঃ......!
— কেন? ওরা মানুষ নয় বুঝি?
— সে যাকগে ছাই, আজ সকালে বাবা আপনাকে ডেকেছিলেন।
— হুঁ।
— তবে আসেননি কেন? (ভ্রু কুঁচকে)
— তোমার বাবা ঘর ভাড়ার টাকার জন্য ডেকেছিলেন। কিন্তু ক'দিন যাবৎ একটু অর্থ সংকটে আছি।
— ও, আচ্ছা। বললেই তো পারতেন। আমার বাবা বাঘ না ভাল্লুক যে খেয়ে ফেলবে?
— না মানে ওনার রাগ একটু বেশীই।
.
কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর কপট রাগ দেখিয়ে সিঁড়ি বেয়ে গটগট করে ওপরে উঠে গেল নিশী।
মেয়েটার মতিগতি বুঝতে পারছি না কিছু।
এ যেন আষাঢ়ের আকাশ। এই শুভ্র রোদে সাদা মেঘেরা ভেসে বেড়াচ্ছে ডানা মেলে; আবার এই শুভ্র মেঘ যেন ব্রত ভেঙে একরাশ কালি মেখে দিয়েছে আকাশের বুকে।
.
আমার ধারণা আমার প্রেমে পড়েছে নিশী। হাবভাব দেখে সেরকমই মনে হচ্ছে। এ অসম্ভব কিছু নয়। অষ্টাদশী তরুণী। এ বয়সে সবকিছুই রঙিন মনে হয়। তাছাড়া, আমার সাথে প্রেমিকা সুলভ আচরণ করছে যেন মেয়েটা।
.
অন্য কোনো মেয়ে হলে বেশ কিছুদিন প্রেম প্রেম লুকোচুরি খেলা যেত। কিন্তু সঙ্গত কারণেই এই মেয়ের সাথে সেরকম কিছু করতে পারছি না বা চাচ্ছি না। তার ওপর আবার বাড়িওয়ালার মেয়ে!
.
মেয়েটার মধ্যে কেমন যেন সরলতার আভা দেখতে পাই। গধুলী বেলার শেষ আলোটুকুর দিকে যেমন সবাই মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকে, তেমনি নিশীর দিকেও একবার তাকিয়ে কেউ মুগ্ধ না হয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে পারবে না।
.
আগের বাসার বাড়িওয়ালার ভাগ্নিও বেশ সুশ্রী ছিল। সায়লা নাম। বেশ ডাগর চোখে রূপের অহংকার নিয়ে চার দিকে তাকাতো। যেন পরম আকুলতায় ফুল ভ্রমরকে আহ্বান করছে- প্রণয় ফুলের নষ্ট পরাগ মাখার!
বেশ কিছুদিন প্রেমপ্রেম মিথ্যে খেলা খেলেছিলাম সায়লার সাথে। তারপর একদিন টুপ করে ডুব দিলাম সেই তল্লাট থেকে।
.
এই নশ্বর পৃথিবীতে যেই সাতাশটা বসন্ত পার করেছি, তার প্রতিটা পদেপদে শিখেছি কীভাবে নির্বিকার বাঁচা যায়। কীভাবে নিজের আখের গোছাতে হয়, এই হিংসের দাবানলে টিকে থাকতে হয়।
.
সবাই কোনো না কোনো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কেউ গড়তে, কেউ ভাঙতে আবার কেউবা আখের গোছাতে আসে নিজের। কিন্তু কোনো সময় তারা তাদের উদ্দেশ্য ভুলে কোনোএক অদৃশ্য মোহে জড়িয়ে যায়। সেই মোহটাকেই তারা আসল উদ্দেশ্য হিসেবে ভাবতে শুরু করে তখন।
.
আমিও যেন নিশী নামের মেয়েটার অদৃশ্য মোহে জড়িয়ে যাচ্ছি দিনদিন। কিন্তু আমাকে আমার উদ্দেশ্য ভুললে চলবে কী করে?
এবারও এ তল্লাট থেকে ডুব দিতে হবে আমাকে। সেটা নিশীর কাছে আসতে নয়; নিশীর থেকে দূরে সরতে, নিশীর মোহ কাটাতে। আমি বাউণ্ডুলে মানুষ আর বাউণ্ডুলেদের কোনো ক্রমেই কোনো মোহে জড়ালে চলে না!
.
দুই দিন পর।
বাসার ছাদের কোণে দেয়ালে ঠেস দিয়ে সিগারেট ফুঁকছি। হঠাৎ নিশী ধপধপ শব্দ করে আমার সামনে এসে বলল,
— ধুমপান ক্যান্সারের কারণ।
— হুঁ।
— এটা আমার কথা নয়; প্যাকেটের গায়েই লেখা থাকে।
— জানি, তুমি কি এটা জানো- মানুষ মাত্রই মরণশীল?
— হ্যাঁ, জানি। তবুও কিছুদিন বেশী বাঁচতে চাওয়া কি অপরাধের কিছু?
— না।
— তবে আপনি কেন আত্মহনন করতে চাচ্ছেন?
— কে বলল? সুখ বিলাশও তো হতে পারে!
— আচ্ছা আপনি এমন কেন আজাদ ভাই?
— কেমন?
— কেমন যেন অসুখী ভাব।
— তাই নাকি?
— যেন সুখের সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন।
— শুধুশুধু বিদ্রোহ বলছ কেন? সুখের প্রতি আকুলতাও তো হতে পারে?
— বিধাতার নিয়ম ভাঙা তো বিদ্রোহেরই শামিল।
— যে নিয়ম ভাঙাতেই মঙ্গল নিহিত; তাকে বুঝি বিদ্রোহ বলে?
— সে যাকগে, আপনার সাথে তর্কে জিতব না সে আমি জানি। নিন এটা রাখুন।
— কী এটা?
— দেখতেই তো পাচ্ছেন কী এটা; নীল খাম।
— সে তো পাচ্ছিই। কী রহস্য আছে এর মধ্যে?
— খুললেই সকল রহস্যের সমাধান পাবেন।
— ও, আচ্ছা।
.
শহরের সকল কৃষ্ণচূড়া যেন নিশীর মুখে; লজ্জায় রাঙা!
খামটা আমার হাতে দিয়েই পালালো যেন। আমারও সিগারেট শেষ। সিগারেটের শেষ অংশটুকু স্যন্ডেলের নিচে পিষে ঘরে চলে এলাম।
.
সন্ধ্যায় ঘরের বাতি নিভিয়ে মহাদেব সাহার কবিতা আওড়াচ্ছি,
"তোমাকে দেখেছি কবে মনে নেই
বহুদিন পর
আজ চাঁদ দেখতে ইচ্ছে করে খুব
তবে কি তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে?"
.
আজ কেন জানি তেমন জমছে না সন্ধ্যেটা। প্রতিদিন কবিতার সাথে কতশত কথা হয়। হয় লুকোচুরি খেলা, সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি।
.
আজ মন পড়ে আছে নিশীর দেয়া খামটার দিকে। চেতন-অবচেতন মনে ঝড়ছে অজস্র প্রশ্নের ফুয়ারা।
.
কী আছে খামটার ভেতরে? ছোট্ট এক টকরো চিরকুট, নাকি ইয়া লম্বা প্রেমপত্র?নাকি খামে মোড়া নীল বিষাদ?
তন্ময় হয়ে ভাবছি সবকিছু!
এই খাম খুলে দেখা হবে না আমার কোনোদিন ই। সে দুঃসাহস আমার নেই। নীল খাম রহস্য হয়েই থেকে যাবে সারা জীবন। থাক না কিছু রহস্য স্মৃতির পাতায়! ক্ষতি কী তাতে!
.
আজ কেন জানি রুদ্রের মতো বলতে ইচ্ছে করছে—
"শান্তি ও স্নেহের কাছে আমার চির ক্রীতদাস জীবন।"
.
ঘোর কাটল সুমনের ফোনে,
— হ্যালো, আজাদ ভাই?
— হুম সুমন, বলো।
— আপনি না বাসা খুঁজছিলেন?
— হ্যাঁ, পেয়েছো?
— আমাদের পাশের রুমটা ফাঁকা হয়েছে। আপনি চাইলে উঠতে পারেন।
— আচ্ছা, তুমি বাড়িওয়ালারর সাথে কথা বলো; আমি কালকেই উঠছি।
— জি, আচ্ছা ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
.
ফোনের লাইন কেটে আবার সুনীলের কবিতা আওড়াতে শুরু করলাম,
"যাবার কথা ছিল ফেরার পথ নেই
এখন বেলা গেল।".........
.
গল্প: 'অশুদ্ধ স্মৃতি'
লেখা: নাসিম আহমেদ।
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ā§Ē āĻ āĻ্āĻোāĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§
3013
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
⧍:ā§Šā§§ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ