āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ā§Ē āĻ…āĻ•্āϟোāĻŦāϰ, ⧍ā§Ļā§§ā§­

2994

গল্পঃ সুখের পূর্ণতা
লিখাঃHriday Banik(সমানুপাতিক ধ্রুবক)
>>
>>
ঘুম ঘুম চোখেই ওয়াশ রুমের দিকে যাচ্ছিলাম। প্রচন্ড জোড়েই ধাক্কা খেলাম দেয়ালের সাথে। আমার বাসায় এইদিকটাতে তো দেওয়াল থাকার কথা না। তাও আবার কাঠের দেওয়াল। ভাবলাম আমার বাসার শেপ চেঞ্জ হয়ে গেলো নাকি। চোখ টা ভাল করে কচলে আমার ঘুমের রেশটা কাটিয়ে নিলাম। পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম যে, এই মুহূর্তে আমি আমার বাসায় নেই। এমনকি আমি এখন আমার অতিপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও নেই।
।।
এইখানকার সব কিছুই কেমন অদ্ভুত লাগে আমার। ঘরবাড়ি, ফার্নিচার, খাবার দাবার সহ যাবতীয় সব কিছুই আমার জন্য বিরক্তিকর। এই আমেরিকান রা ইটের তৈরি ঘরে থাকে না। এদের এখানকার বেশিরভাগ ঘরই কাঠের তৈরি। এইটা আমার জন্য এক বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। তা না হলে আমি একটু আগে যেভাবে দেয়ালে ধাক্কা খেলাম সেটা যদি আমাদের দেশের ইটের দেওয়াল হতো নির্ঘাত আমার মাথা ফাটতো, কিংবা বাংলা সিনেমার মতো আমি আমার স্মৃতি হারাতাম। যাই হোক এই মুহূর্তে আমার জন্য ওয়াশরুমে যাওয়া ফরজ। প্রকৃতি আমাকে ব্যাকুল সুরে ডাকাডাকি করতেছে। আর সেই ডাক উপেক্ষা করা আমার জন্য দুঃসাধ্য নয় অসম্ভবও বটে। কিন্তু কথা হলো সেই জিনিস টা তো খুজেই পাচ্ছি না। আরে বুঝেন নাই কোন টা?? জ্বি হ্যা অইটাই। আচ্ছা আমার দেশে তো এটাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন ধরেন, টয়লেট, ল্যাট্রিন, বাথরুম, দুই নাম্বার আরো ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই আমেরিকাতে এই জায়গাটিকে কি বলে অভিহিত করা হয় তা আমার জানা নেই। এই ঘরটা এতই বড় যে আমার মনে হচ্ছে আমি বার বার ঘুরে ফিরে একই জায়গাতে এসে দাড়াচ্ছি কিন্তু আমার কাঙ্খিত সেই প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র খুজে পাচ্ছি না। এমন সংকটপূর্ণ সময়ে আমাকে উদ্ধার করার জন্য বেলকনি থেকে কোন এক বালিকা সুমধুর কন্ঠে চিল্লানি দিয়া বলল, ওয়াশরুম অই দিকটায়। বালিকাকে প্রতিউত্তর না দিয়ে আমি তাড়াতাড়ি আমার মহামূল্যবান মিটিং সারতে দৌড় দিলাম।
>>
বাথরুম। পৃথিবীর অন্যতম এক শান্তিপূর্ণ স্থান। আমি আমার শান্তি আলোচনা চুকিয়ে এই মাত্র সেই শান্তিপূর্ণ স্থান থেকে বের হয়ে আসলাম। নিজেকে একটু কিং কিং লাগছে। প্রকৃতির চাপে ঘুম থেকে উঠার পর যে সকল জিনিস আমার মস্তিষ্ক হতে সাময়িক এর জন্য গায়েব হয়ে গিয়েছিল সেগুলো ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে আবার ফিরে আসতেছে। কি পাঠকগন? আপনারা ভাবছেন, আমার বুঝি আমীর খানের গজনীর মতো ভুলা রোগ আছে। আসলে ব্যাপার টা তা নয়। গতকাল সন্ধ্যায় আমি আমার অতি প্রিয় বাংলাদেশকে ছেড়ে এই ইংরেজ ভূখন্ডে এসে পদার্পণ করেছি। অনেকক্ষন যাবত প্লেনে থাকার ফলে জেটলাক না ফেটলাক নামক কিছু একটা হয়েছে আমার। এই বাসায় এসে খাটে শোয়ার কিছুক্ষনের মাঝেই আমি ঘুমের অতল গহ্বরে হারিয়ে গিয়েছিলাম। টানা ১৬ ঘন্টা ঘুমানোর পর এমন টা হওয়াই খুব স্বাভাবিক।
>>
যাইহোক অনেকক্ষন ধরে বকেই যাচ্ছি। এবার পরিচয় পর্ব টা সেরে নেই। আমি হৃদয়। পুরো নাম?? ওটা দিয়ে আপনারা কি করবেন? তবে এটুকু জেনে রাখেন আমি খুব একটা ভাল মানুষ নই। বিশাল এক অঘটন ঘটিয়েই এই আমেরিকান দের দেশে পা রেখেছি। পাঠকগন, আপনারা বোধ হয় শুধু আমার পরিচয়ে সন্তুষ্ট নন? আমি জানি আপনারা ভাবছেন সেই মেয়েটার কথা যে আমাকে কিছুক্ষন আগে বিরাট সঙ্কট থেকে উদ্ধার করেছিলো। একটু সবুর করেন। বলতেছি। এই মেয়েটাও আমার মতই এক হতভাগা থুক্কু ভাগী হবে। সেও আমার সাথেই বাংলাদেশ হতে এই আমেরিকা নামক দেশটিতে এসেছে। এসেছে বললে ভুল হবে। আসলে কাহিনী হলো গিয়ে আমি এই বালিকাকে নিয়ে চম্পট দিয়েছি। বুঝেন নাই ব্যাপার টা?? আরে মিয়া সোজা বাংলা টা হইলো আমি এই মাইয়ারে নিয়া ভাইগা আসছি। আগেই বলছি আমি খুব একটা সুবিধার পাবলিক নই। এই মেয়েটার নাম অনন্যা। ছোট নাম অনু। আমি নিশ্চিত আপনারা ভাবছেন গ্রাম্য কোন এক সহজ সরল মেয়েকে আমি ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসছি। ভুলেও এমনটা ভাইবেন না। এই মেয়ে মোটেও সহজ এবং সরল না। ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করে বের হওয়া এক বিখ্যাত ডাক্তার উনি। আর সত্যিটা হলো আমি ও কে এখানে আনিনি। ওই আমাকে এখানে নিয়ে আসছে। সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগছে তাই না?? চলুন ফ্ল্যাশব্যাকে যাই। সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
।।
>>
সাল ২০০৯; আমি তখন ইন্টারমেডিয়েট ফাস্ট ইয়ারে পড়ি। কুমিল্লা শহরের খুবই নামিদামী এক কলেজে পড়তাম। এস এস সি তে এপ্লাস পেয়েছিলাম ঠিকি। কিন্তু আমি কখনোই আহামরি টাইপের ভাল ছাত্র ছিলাম না। দেখতেও হ্যান্ডসাম বা ড্যাশিং ছিলাম না। মোটামুটি ভাল রকমের কালোই ছিলাম। তবে নিজেকে ব্ল্যাক ডায়মন্ড বলেই মনে হতো। গুন বলতে তেমন কিছুই ছিল না। খেলাধুলা, গান , কবিতা, ফাইজলামো সবই পারতাম তবে কোনটাই আহামরি রকম ভালো ভাবে পারতাম না। আমি উপরে নিচে খুব গোবেচারা, শান্তশিষ্ট নিরীহ একটা প্রানী। আমার মা বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন। অসাধারন গানও গাইতেন। সেই সূত্রে আমিও টুকটাক গান করতাম। আর সাহিত্য ব্যাপার টা আমার রক্তের সাথে খুব ভালভাবেই মিশে ছিল। ক্লাস ফোরে থাকতে প্রথমবার কবিতা লিখেছিলাম। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ এর ফলেই জীবনবোধ ছিল অন্যদের চেয়ে একটু ভিন্ন। ক্লাস নাইনে থাকতেই আমার কিছু লেখা ম্যাগাজিনে ছাপানো হয়েছিল। লেখার পরিধি আমার ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছিল। ২০০৯ এর বইমেলাতে আমার একটা গল্প আর কবিতা একটা বইতে ছাপানো হয়েছিল। ভাল সাড়াও পাওয়া গিয়েছিল বইটাতে। কিন্তু আমার কাছে জনপ্রিয়তা নামক জিনিস টাকে খুব সস্তা মনে হয়। নিজেকে অই সস্তা জায়গাটাতে বসানোর কোন ইচ্ছেই ছিল না আমার। তাই অই লেখা গুলাতে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলাম। আর সেখানে আমার কোন পরিচয় ছিল না। সব কিছু খুব স্বাভাবিক ভাবেই যাচ্ছিল। দেখতে দেখতে ফাস্ট ইয়ার শেষ করে সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম। অই সময়টাতে ফেসবুক নামের নীল সাদা জগতটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল। তখনকার নীল সাদা জগতটাতে অনেক প্রতিভাবান লেখক ছিল যাদের লেখা হৃদয় ছুয়ে যেতো। আর গল্প কবিতা পড়ার ঝোক থেকেই ফেসবুক জগতে প্রবেশ করি। কিছু অনলাইন পোর্টাল থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প কবিতা পড়তাম। একবার কৌতূহল বশত আমার লেখা এক ছোট গল্প অই পোর্টালের গল্প প্রতিযোগিতায় পোস্ট করি। ঠাডা পড়ে বক মরে যাওয়ার মতো এক দুর্ঘটনায় আমি সেই প্রতিযোগিতায় ফাস্ট হয়ে গিয়েছিলাম। পোর্টাল থেকে গল্প গুলো প্রকাশ পাওয়ার পর দেখলাম অনেক সাড়া পড়েছে। সাথে লেখকের আইডি লিংক দিয়ে দেওয়ায় আমার নিরীহ ফেসবুকীয় জীবনটায় উৎপাত শূরু হয়। এক সপ্তাহ ব্যবধানে আমার ফলোয়ার সংখ্যা আমার ফ্রেন্ডস সংখ্যা ছাড়িয়ে চেয়ে দশগুন বৃদ্ধি পায়। সস্তা লাইক কমেন্টসে ভরপুর হয়ে যেতো আমার পোস্ট গুলো। ইনবক্সে হাজারো মানুষের মেসেজ। ফেসবুকে মেসেজিং করা আমার কাছে অর্থহীন প্রলাপ ব্যতীত আর কিছু মনে হতো না। তবে এই সব লাইক কমেন্টস যে আমার কাছে খুব একটা বিরক্তিকর ছিল তাও নয়। সবার কমেন্ট আর মেসেজ দেখতে আমার ভালই লাগতো। সব ঘুরে ফিরে একই কথা। ভদ্রতা বশত কখনো কখনো উত্তর দিতাম। কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই উত্তর দেওয়া হতো না। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর জনপ্রিয়তার রেশ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। একদিন রাত্রে ফেসবুকে ঢুকে মেসেজ রিকোয়েস্ট গুলা চেক করছিলাম। হঠাতই একটা মেসেজ দেখলাম, সেখানে লিখা আপনার লিখা অই গল্পটায় কিছু ভুল আছে। এই প্রথমবার কেউ আমার লেখার ভুল ধরলো। আর ভিন্ন রকমের একটা মেসেজ দেখে ভালই লাগলো। তাকে উত্তর করলাম, কি ভুল আছে? সাথেই সাথেই সে রিপ্লাই দিল, ওয়াও আপনি আমার মেসেজের এন্সার দিয়েছেন?? জানেন কতটা খুশি লাগছে? কথা শুনে হাসি পেল। বললাম, কেন আমি কি শাহরুখ খান নাকি সালমান খান যে আমি কারো মেসেজের উত্তর দিতে পারি না। সে বললো, আপনি আমার কাছে এর চেয়েও বেশি কিছু। এই কথাটা শুনে একটু খটকা লাগলো। ভাবলাম আমার কোন ফ্রেন্ড আমার সাথে মজা করছে নাকি। আইডিটার প্রোফাইল ঘাটলাম। আইডিটা দেখে কিছুটা কনফিউজড হয়ে গেলাম। খুব বেশি ফ্রেন্ড নেই আইডিতে। আর মেয়েটা শুধু আমাকেই ফলো করে। ইতস্তত হয়ে মেয়েটাকে বলেই ফেললাম, আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না যে আপনি মেয়ে। মেয়ে রিপ্লাই দিল কি???? আবার বললো আপনার নাম্বার দেন। আমি কিছু না ভেবেই আমার নাম্বার টা দিলাম। কিছুক্ষন পর আমার নাম্বারে একটা কল আসলো। স্বাভাবিক ভাবেই ফোন টা ধরলাম। ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। আমি বুঝলাম, আমার সেই ফেসবুকীয় অপরিচিতার কল। স্বাভাবিক ভাবেই কিছুক্ষন কথা বললাম। একটু কথা বলেই বুঝলাম মেয়েটি প্রচুর কথা বলে। আমি হু হা করলেও সে সারাক্ষনই বকবক করে যায়। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কিন্তু বললেন না আমার গল্পে কি ভুল আছে। সে হাসি দিয়ে বললো আসলে আপনার এই গল্পটা আগে আমি একটা বইয়ে পড়েছিলাম। সেখানে যেভাবে ছিল এখানে তার কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটেছে। ফোনটা কেটে দিয়ে আমি গল্পটা পড়ে যাচাই করলাম যে, মেয়েটা কি আসলেই সত্যি বলছে? পড়ে বুঝলাম যে হ্যা। ফেসবুকে লিখার সময় আনমনে কিছু লেখা বাদ দিয়ে গেছি। মেয়েটাকে আবার নিজে থেকেই ফোন দিয়ে ধন্যবাদ দিলাম। সেদিনের পর থেকে মেয়েটার সাথে আমার প্রায়শই টুকটাক কথা হতে লাগলো। মেয়েটা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়তো ঢাকা শহরের কোন এক বিখ্যাত গার্লস কলেজে। মেয়েটা আমার এক বছরের জুনিয়র। যাই হোক, সেদিনের পর আমাদের কথার পরিমানটা ধীরে ধীরে বাড়তেই লাগলো। আমরা খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম। আপনি থেকে নেমে আসলাম তুমিতে। ও কলেজে হোস্টেলে থাকতো। সেখানে ফোন ব্যবহার করা নিষেধ ছিল। তাই ও লুকিয়ে ফোন চালাতো আর রাতে ফিসফিস করে আমার সাথে কথা বলতো। আমার ভালই লাগতো ওর গল্প শুনতে। আমি ছাড়া মেয়েটার আর তেমন কোন বন্ধু ছিল না। মেয়েটা আমাকে ওর গল্প বলতো। সারাদিনের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলতো।আমাকে। ক্লাসে টিচার বকা দিয়েছে কিংবা কোন বান্ধবীর সাথে ঝগড়া হয়েছে সেটাও আমাকে বলতো। আমি ছিলাম ওর সারাদিনের জমানো অব্যক্ত কথাগুলার একমাত্র শ্রোতা। আমি ওর কথা গুলা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। ওর গলার স্বর আমাকে দারুন ভাবে আকৃষ্ট করত। মাঝে মাঝে আমি ও কে কবিতা শুনাতাম, গান শুনাতাম। ও চুপ করে শুনে যেতো। অই সময়ে জিপি সিমের কল্যানে আমরা দুজন অসংখ্য রাত কাটিয়ে দিতাম গল্প করতে করতে। আমি বুঝতাম অন্য মেয়েদের মতো এই মেয়েটার মাঝে কোন প্যাচ নেই। খুবই সহজ সরল একটা মেয়ে। ঢাকা শহরের এক নামিদামি কলেজে পড়লেও নোংরা আধুনিকতা মেয়েকে এখনো ছুয়ে যায় নি। একটা সময় খেয়াল করলাম আমার পুরো ভাবনা জুড়ে শুধু ও। আমি ওর সরলতার প্রেমে পড়ে গেলাম। তারপর আর কি? যা হবার তাই হলো। একদিন হুট করে ও কে বলে বসলাম আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। আমার কথা শুনে ও চুপ করেছিল। কিছুক্ষন পর ও আস্তে করে আমাকে বললো এটা হয়না হৃদয়। আমরা দুজন সমবয়সী। এর কোন ভবিষ্যত নেই। আমি কিঞ্চিত হেসে বললাম, ভবিষ্যত এক মরীচিকা অনু। ভবিষ্যতকে তার মতো এগুতে দাও। বর্তমান কে নিজের মনের মতো করে চালাও। সেদিন প্রায় ভোর পর্যন্ত কথা বললাম আমরা। অদ্ভুত এক কারণে অই দিনটা আমার খুব ভাল ভাবে মনে আছে। ২৬ এপ্রিল, আমি ও কে প্রপোজ করেছিলাম। তারপর দিন মানে ২৭ এপ্রিল রাতে যখন ওর সাথে কথা বলছিলাম তখন ও কে বার বার বলছিলাম যে আমাকে কিছু একটা তো বললো। হ্যা বা না। সারারাত কথা বলার পর আমি ওর মুখ থেকে আমার কাঙ্খিত শব্দটা শুনলাম। ও আস্তে করে আমাকে বললো, "ভালবাসি"। বলেই ফোনটা কেটে দিলো। অই মুহূর্তে আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল। ছাদে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন চিল্লাচিল্লি করলাম। ঠিক তখনি পূব আকাশে সূর্য মামা উকি দিল। পুব আকাশে উদিত হওয়া উজ্জ্বল সূর্যের মতো সেই ভোরটাতে আমার মনের আকাশেও প্রেমের সূর্যের উদয় হয়।
।।
>>
তারপরের ঘটনাটা সাধারন। যা হবার তাই হলো। বদলে গেলাম আমি। বদলে গেলাম আমরা দুজন। আমার কাছে বদলে গেলো জীবনের মানে। আমি খুব গভীর ভাবে অনুর প্রেমে পড়েছিলাম। আমার ভাবনা জগতের পুরোটা জুড়ে শুধু ও ছিল। আমরা মাঝে মাঝেই ঝগড়া করতাম, কে কাকে বেশি ভালবাসি এটা নিয়ে। বরাবরই ও জিততো। আর হেরে গিয়েও জিতে জেতাম আমি। মেয়েটার প্রতি আমি প্রতিনিয়তই অবাক হতাম। কেউ কাউকে এতটা ভালবাসতে পারে, তা আমার জানা ছিল না। মেয়েটার ভালবাসার ধরন টাও একটু ভিন্ন রকম ছিল। নিজের প্রতিদিনের টিফিনের টাকা জমিয়ে জমিয়ে সেগুলা দিয়ে আমার সাথে ফোনে কথা বলতো। কখনো কখনো আমি কথা না বলেই ঘুমিয়ে যেতাম। আর মেয়েটা সারারাত ফোন হাতে নিয়ে বসে বসে কাটিয়ে দিতো। ঘুম থেকে উঠে ফোনে ১৫০ মিসকল দেখে যখন ব্যাক করতাম মিষ্টি করে বলতো উঠেছেন আপনি। যদি জিজ্ঞেস করতাম তুমি সারারাত ঘুমাওনি তাই না?? খুব সুন্দর করে বলতো, আরে না। আমি তো একটু আগে উঠলাম ঘুম থেকে। কোন কারণে যদি আমি খারাপ ব্যবহার করতাম, চুপ করে থাকতো। কখনোই ফিরিয়ে কিছু বলতো না। দোষ না থাকলেও স্বীকার করে নিতো। ও আমাকে কোন দিনই আই লাভ ইউ বলেনি। ফোন রাখার সময় খুব আস্তে করে বলতো, খুব ভালবাসি আপনাকে। খুব ভালবাসি। চার অক্ষরের এই শব্দ টা আমার মাঝে শিহরন জাগাতো। আমার মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় হতো, ও কে আমি কখনো হারিয়ে ফেলব না তো। খুনসুটি, অভিমান, রাগারাগি সব মিলিয়ে অসাধারন ছিল আমাদের ভালবাসার গল্পটা।
।।
>>
দেখতে দেখতেই আমার ফাইনাল এক্সাম চলে এলো। নিজের সেরা পরীক্ষাটা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। পরীক্ষার পর শুরু হলো এডমিশন টেস্টের জন্য পড়া। অনুর সাথে তখন অনেক কম কথা হতো। অনু আমাকে অনেক অনুপ্রেরনা দিতো। আমি জানতাম ও কে পেতে হলে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকতে হবে। চোখে মুখে তখন শুধুই ভার্সিটির স্বপ্ন ছিল। এর মধ্যেই আমার ফাইনাল এর রেসাল্ট দিল। রেসাল্ট টা আশানুরূপ হয়নি। অল্পের জন্য প্লাস মিস করেছিলাম। খুব হতাশ লাগছিল। এমন সময়ে অনু আমাকে অনেক সাপোর্ট দিতো। পড়ার জন্য অনুপ্রেরনা দিতো। সব কিছু ঝেড়ে ফেলে আবারো কোমড় বেধে পড়া শুরু করলাম। ফলস্বরুপ আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটলো। নিজের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রথম ১০০ জনের মাঝে। আমার জীবনে তখন পর্যন্ত পাওয়া শ্রেষ্ঠ সাফল্য ছিল এটা। ছোট বেলা থেকেই এই জায়গাটায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। নিজের পরিশ্রম, মা বাবার আশীর্বাদ, আর অনুর অনুপ্রেরনায় আমার সেই কাঙ্খিত স্বপ্ন টা পূরন হয়ে গেলো। এরপর সব কিছুই আবার আগের মতো চলতে লাগলো। প্রথম প্রথম ক্লাস নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতাম। আইন নিয়ে পড়া টা আমার প্যাশন ছিলো। কিন্তু এই সাব্জেক্ট টা যে এতটা প্যারাময় তা স্বপ্নেও ভাবিনি। প্রথমদিকে অনুকে খুব একটা সময় দিতে পারতাম না। ও অভিমান করে বলতো, এখন তো ঢাকা ভার্সিটি তে পড়ো। আমার চেয়ে কত সুন্দরীরা তোমার পিছু নেয়, এখন আর আমাকে ভাল লাগবে কেন। ওর কথা শুনে আমি হাসতাম। এর মধ্যেই ওর ফাইনাল এক্সাম চলে আসলো। অনু সাইন্স এর স্টুডেন্ট ছিল। অসম্ভব মেধবীও ছিল মেয়েটা। এতকিছু মেন্টেইন করেও রেসাল্ট বরাবরই ভাল করতো। কিন্তু ওর মধ্যে ভাল কিছু করার আগ্রহ ছিল না। কেমন যেন ছন্নছাড়া ছিল ও। অনেক বুঝাতাম ও কে। বলতাম তুমি যদি ঢাকা তে টিকো তাহলে আমরা দুজন কাছাকাছি থাকতে পারবো। ও হেসে উড়িয়ে দিতো আমার কথা। বলতো দেইখো, আমি ইন্টারে ফেইল করবো। এর মধ্যে ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। এই মেয়ের চেয়েও বেশি টেনশনে থাকতাম আমি। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়।
।।
>>
আমার জন্য সেদিনটা খুব স্পেশাল ছিলো। আমরা প্রথম বারের মতো দেখা করতে যাচ্ছিলাম। অনেক অপেক্ষার একটা দিন। প্রায় দুই বছরের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো সেইদিন। আমরা প্রথমবার দেখা করেছিলাম, ধানমন্ডি লেকে। রবীন্দ্র সরোবরের পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম আমি। হাতে একটা লাল গোলাপ ছিল। কিছুক্ষন পর কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। আমার মধ্যে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। প্রতিটা শিরা ১২০পার মিনিট বেগে দৌড়াচ্ছিল। ওর দিকে ফিরলাম। ও চোখ নামিয়ে ফেললো। আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। আমার হাতের গোলাপ টাকে ওর সামনে একদম ফিকে মনে হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল দেবী আফ্রোদিতি স্বয়ং মর্তে নেমে এসেছেন। ওর আয়তলোচনা চোখ জোড়া আমাকে প্রচন্ড ধাক্কা দেয়। টানা টানা চোখ গুলা দেখে আমি আবারো পড়ে যাই। এবার খুব গভীর ভাবেই ওর প্রেমে পড়ে যাই আমি। রাস্তার পাশের বেঞ্চিতে গিয়ে বসি দুজনে। অনেকক্ষন চুপ থাকার পর আমি বললাম, তোমার টিপটা ঠিক জায়গাতে নেই। ও কিছু না বলে মুচকি হাসলো আর মাথাটা এগিয়ে দিলো আমার দিকে। হাত দিয়ে টিপটাকে তুলে ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিলাম। আমাদের প্রথম দিনের দেখা করাটা আমার স্মৃতিতে চির অমলিন হয়ে থাকবে। সেদিন ও কে অনেক বুঝালাম যে তোমাকে ভাল কিছু করতেই হবে। ও মেডিকেল কোচিং এ ভর্তি হয়েছিলো। ও কে বুঝালাম, এমন ভাবে পড়ো যাতে ঢাকা মেডিকেলে বা সলিমুল্লাহ তে থাকো। ও হেসে উড়িয়ে দেয় আমার কথা। ও কে বলি যে, আজ থেকে পরীক্ষা পর্যন্ত কোন কথা হবে না। ও বলে এমন হলে আমি মেডিকেলে টিকা তো দূর আমি পাশই করবো না। আমার সাথে প্রতিদিন ১০ মিনিট করে কথা বলতে হবে। আমি খানিকটা হেসে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।
।।
>>
এর মাঝেই ওর ফাইনাল এক্সাম এর রেসাল্ট দিলো। রেসাল্টের আগের রাতে ও নিশ্চিন্তে ঘুমালেও আমি ঘুমাতে পারিনি ওর রেসাল্ট এর টেনশনে। ওর আগেই আমি ওর রেসাল্ট দেখি। ওর রেসাল্ট দেখে অবাক না হলেও কতটা খুশি হয়েছিলাম তা কল্পনাও করা যাবে না। ও গোল্ডেন পেয়েছে। সেদিন আবারো দেখা করলাম ওর সাথে। আবারো লম্বা এক মোটিভেশনাল স্পিচ দিলাম ও কে। দেখতে দেখতে ওর মেডিকেল এর এক্সাম এগিয়ে আসছে। ওর এক্সাম যত এগিয়ে আসছে আমার টেনশন তত বাড়ছে। ও রাত ভর পড়তো। পড়া শেষে যখন ক্লান্তি নেমে আসতো ফোন দিয়ে একটু কথা বলতো আমার সাথে। আমি ভাবতাম ও যদি ৫০০ এর মাঝে না থাকে তাহলে ও ঢাকাতে থাকবে না। হয় সিলটে বা অন্য কোথাও চলে যাবে। এর মাঝেই পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেলো। রেসাল্ট এর দিন টেনশনে আমার ঘাম বেড়োচ্ছিল। আর ও আমাকে দেখে হাসছিল। দুজনে একসাথেই রেসাল্ট দেখলাম। আমি ঈশ্বর কে ডাকছিলাম ও যাতে পাঁচশর মাঝে থাকে। আমাকে অবাক করে দিয়ে এই মেয়ে দেখি টপ ৫০ তে এসে বসে আছে। রেসাল্ট দেখে এই মেয়ের কোন এক্সপ্রেশন নেই। মনে হয় ও যেন জানতো এটাই হবে। আমার খুশি টা হাজার গুন বেড়ে গেলো। আমার চোখে মুখে হাসি ঝলকে উঠছিল। ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর চোখে তাকাতেই আমার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। ওর চোখ গুলা আমাকে বলছিল, তুমি জানো হৃদয় কতগুলা রাত আমি না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। রাতদিন পরিশ্রম করেছি শুধু তোমার কাছাকাছি থাকবো বলে। আমি এই রেসাল্ট আমার জন্য করিনি, শুধু তোমার জন্য করেছি। শুধু একটু তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য। আমার চোখ থেকে আনন্দের অশ্রু ঝড়ছিল। চোখটা মুছে ও কে বললাম তোমার আব্বুকে ফোন করে বলো। ও তাড়াতাড়ি করে ওর আব্বুকে ফোন দিয়ে বললো। ওর আব্বুও অনেক খুশি হয়েছে ওর রেসাল্টে। খুশি হওয়ারই কথা। একমাত্র মেয়ে বলে কথা। সেদিন থেকেই আমার জীবনের স্বর্ণালী অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল।
।।
>>
আমাদের দুজনের স্বপ্নই পূরন হয়েছে। আমরা দুজন একই সাথে পাশাপাশি ক্যাম্পাসে পড়তাম বিধায় প্রায় প্রতিদিনই আমাদের দেখা হতো। আমরা দুজন দুজনের অনেক কাছে চলে এসেছিলাম। এতদিনের দূরত্ব টা অল্পদিনেই কমে আসলো। প্রতিদিন ক্লাস শেষ করে দুজনে হাটতে হাটতে পলাশীর মোড়ে গিয়ে বসতাম। টিএসসি তে মামার দোকানের এক কাপ মাল্টার চা যে আমরা কতবার ভাগ করে খেয়েছি তার কোন হিসেব নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এর প্রতিটা ইট, বালুকনাও আমাদের চিনতো। আমরা এই ক্যাম্পাসে কতটা সময় যে একসাথে কাটিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। আমাদের প্রেমটা ততদিনে ৪ বছর পেরিয়ে ৫ বছরে পদার্পণ করেছে। এতদিনেও আমরা কেউ কারো প্রতি বিরক্ত হইনি। ভালবাসারও কোন কমতি হয়নি কখনো। বরঞ্চ আমি প্রতিনিয়তই ওর প্রেমে পড়তাম। ও যেদিন কালো রঙের একটা শাড়ি পড়ে আমার সাথে বেরুলো সেদিনও আমি ওর প্রেমে পড়েছিলাম। প্যারাময় প্রফ পরীক্ষা শেষ করে চরম ক্লান্তি নিয়ে ও যখন আমার সাথে দেখা করতে আসতো, তখন কিছুক্ষন পর পর ও এপ্রোনের হাতা দিয়ে কপালের ঘাম মুছতো। দূর থেকে আমাকে দেখেই ওর ক্লান্তি মাখা মুখটায় এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠতো। আমি ওর সেই হাসি টার প্রেমে পড়ে যেতাম। টিউশন শেষ করে অনেক ক্লান্ত হয়ে যখন ও কে বলতাম আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে। চলো রেস্টুরেন্টে যাই। তখন ও ব্যাগ থেকে একটা টিফিন বক্স বের করে নিজে হাতে আমার মুখে খাবার তুলে দিতো। আমি তখনো এই মেয়েটার প্রেমে পড়তাম। আমাদের ভালবাসায় কোন নোংরামো ছিলো না। এখনকার তথাকথিত প্রেমগুলার মতো হোয়াটসেপে প্রেমিকার নগ্ন দেহ দেখার অভিলাষ হতো না আমার। আমার ভালবাসার মানুষটার নগ্ন দেহ কল্পনা করার চেয়ে ওকে নাকফুল করলে কতটা সুন্দর লাগবে সেটা ভাবলে আমার শিহরন জাগতো। এখনকার প্রেম গুলাতে নোংরামো আছে ভালবাসা নেই। আমাদের মধ্যে ভালবাসা ছিল কিন্তু নোংরামো ছিল না। প্রেমের ৫ বছর পড়েও কোন দিন ওর ঠোটের স্বাদ নিতে ইচ্ছা হয়নি আমার। রিক্সার হুট তুলে কোমড় জড়িয়ে বসার ইচ্ছাটা কখনোই আমার মাথায় আসেনি। কখনো যখন অনেক কষ্ট পেয়ে ও আমাকে জড়িয়ে ধরতো আমি পুলকিত হতাম। এটা কামনার পুলক ছিল না। এটা ভালবাসার শিহরন ছিল। খুব গভীর করে ভাল না বাসলে এমন শিহরন হয় না। কিছু দার্শনিকরা বলেন, অনেক ভালবাসার মানুষোটার প্রতিও নাকি সময়ের সাথে সাথে বিরক্তি চলে আসে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এমন কিছুই হয়নি। এতগুলা বছরেও কেউ কারো প্রতি এক মুহূর্তের জন্যেও বিরক্ত হই নি। আমাদেরকে দেখলে যে কেউ বলবে যে আমরা সদ্য প্রেমে আবদ্ধ হওয়া প্রেমিক যুগল। এমনি হাজারো ভালবাসার গল্প ছিল আমার আর অনন্যার প্রেমের স্বর্ণালী অধ্যায়টাতে। ওর মেডিকেল এক্সাম শেষ হওয়া পর্যন্ত সবকিছুই ভাল চলছিল।
।।
>>
কিন্তু সব সমস্যার শুরু হয় ওর মেডিকেল এর পড়া শেষ হবার পর। ওর জন্য বিয়ের সম্বন্ধ আসতে থাকে। সেটা অনেক আগে থেকেই আসছিল। কিন্তু ও পড়ার বাহানা দিয়ে এগুলাকে এড়িয়ে যাচ্ছিল এতদিন। কিন্তু এখন কি করার আছে। ওর বাবা তখন বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমি তখন সদ্য অনার্স শেষ করে বের হয়েছি। বিসিএস ট্রাই করছিলাম আর পাশাপাশি একটা ছোটখাট পার্টটাইম জব করতাম নিজের খরচ চালানোর জন্য। আমি একটা স্কলারশিপ পেয়েছিলাম কানাডার টরেন্টো ইউনিভার্সিটির। কিন্তু অনুকে ছেড়ে যেতে হবে বলে সেটা না করে দেই। অনুকে বলিও নি। বললে ও আমাকে ওখানে পাঠিয়েই ছাড়তো। আর ও কে ছেড়ে যাওয়া আমার দ্বারা সম্ভব ছিল না। কিন্তু ও যেদিন আমাকে এসে বললো যে ওর বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিছু একটা করো। সেদিন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ও কে এটাও বলতে পারছি না যে তোমার আব্বুকে আমার কথা বলো। এই ভয়টাই পেতাম আমি। আমাদের মাঝে কখনোই কোন কিছুর কমতি ছিল না। কিন্তু আমাদের দুজনের মধ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর ছিল। আর সেই প্রাচীর টার নাম ছিল ধর্ম। হ্যা। আমি আর ও আলাদা আলাদা ধর্মের ছিলাম। আমি হিন্দু আর মুসলিম। এটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা। আমি তখনো জানতাম না কি হবে বা কি করবো আমি। শুধু জানতাম সিনেমার হিরোদের মতো করে এত বছরের ভালবাসার মানুষকে অন্যের হতে দেবো, এতটা মহাপুরুষ ছিলাম না আমি। আমার মাকে আমি অনুর কথা বলেওছিলাম। একবার বাসায়ও নিয়ে গিয়েছিলাম ও কে। আমার মা ও কে অনেক পছন্দ করতো। মা আমাকে বলতো, জীবনে দুইটা জিনিসে হারলে পুরুষের আর পুরুষত্ব থাকে না। এক, যুদ্ধে। দুই, প্রেমে। এই দুই ব্যাপারে কোন যুক্তি খাটে না, বিবেক খাটেনা। যুদ্ধ আর প্রেমে সব কিছুই জায়েজ। এগুলো জিতে নিতে হয়। যেকোন মূল্যে জিতে নিতে হয়। আমার মাথায় মায়ের বলা এই কথা গুলা ঘুরছিল। আমিও কে হারতে পারবো না। কোন ভাবেই অনু কে হারাতে পারবো না আমি। ও কে বলে বসলাম চলো আজই বিয়ে করবো। ও একটু অবাক হলো। ওকে নিয়ে চলে এলাম কাজী অফিসে। কয়েকটা বন্ধুকে ফোন দিয়ে নিয়ে আসলাম। ও বারবার বলছিল কি করছো তুমি ভেবে দেখো। আমার তখন অন্য কোন ভাবনা আসছিল না। শুধু মাথায় ছিল ও অন্য কারো হতে পারবে না। ও আমার, শুধুই আমার। ও কে রেজিস্ট্রি অফিসে আনার পর ও বেকে বসলো। বললো, আমি আব্বুকে না বলে তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি অনুনয় করে বললাম প্লিজ অনু। ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করলো আর আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ভীষন ভালবাসি তোমাকে হৃদয়, ভীষন ভালবাসি তোমাকে। আমি আলতো করে ও কে জড়িয়ে ধরলাম। পেপারে সাইন করার সময় ও কান্না করছিল। আমি জানি মেয়েটার অনেক কষ্ট হচ্ছে। ও আমাকে বলতো আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় পুরুষ আমার বাবা। তারপর তুমি। ছোট বেলা থেকে চরম নৈতিকতা আর মূল্যবোধ নিয়ে বড় হওয়া আমার কাছে তখন সব মূল্যবোধ ফিকে হয়ে গেছিল। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করলে উত্তর আসতো, তুমি ঠিক করছো না হৃদয়। তোমার ৭ বছরের ভালবাসার জন্য তুমি অন্য একটা মানুষের ২৫ বছরের ভালবাসাকে নষ্ট করো না। তুমি ও কে ওর বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসো। কিন্তু আমার ভালবাসা হারানোর গল্পটা আমি মেনে নিতে পারতাম না। এমন কিছু হলে আমি জীবন্ত লাশ হয়ে যেতাম। নিজের বিবেকের দরজা বন্ধ করে দিয়ে স্বার্থপর এর মতো ও কে বিয়ে করে ফেললাম। সব কিছু শেষ হওয়ার পর ও কে বললাম তোমার আব্বুকে বলে একটা মাস সময় নাও। বলো এক মাস পর বিয়ে করবে। এর মধ্যে আমি সব ব্যবস্থা করবো। ও আমাকে কাঁদতে কাঁদতেবলে হৃদয় আমার আব্বু খুব রাগী মানুষ। এগুলা জানতে পারলে আমাকে তো মারবেই সাথে তোমাকেও মেরে ফেলবে। আমি ওর কথা শুনে হাসলাম। ও সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে আমি যেভাবে বলেছি সেভাবেই ওর বাবাকে বুঝালো। আমি রাতে বসে বসে ভাবছি কি করবো। বিয়ে তো করে ফেললাম এখন যাবো টা কোথায় ও কে নিয়ে। নিজের স্কলারশিপ টা মিস করায় খুব আফসোস হচ্ছিল। সেটা থাকলে ও কে কানাডা নিয়ে যেতে পারতাম। আর সব জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেতাম। এক বন্ধুকে পাঠালাম ওর ফেমিলি ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে এক বন্ধুকে পাঠিয়েছিলাম। সে এসে আমাকে যে খবর দিয়েছে তাতে আমার এখনি পটল তোলার মতো অবস্থা। আমার মতো হৃদয় কে গুম করে দিতে ওদের ১০ মিনিট ও লাগবে না। ওর আব্বু যেমন তেমন ওর চাচা আর চাচাতো ভাই গুলা একেকটা পিস পুরাই। আমাকে কুচি কুচি করে কেটে ফিশারির মাছকে খাওয়াবে। টেনশনে আমার ঘুমের দফারফা অবস্থা। পরদিন অনু আমাকে দেখে হা হয়েছিল। হাসতে হাসতে বললো বিয়ে করেই এই অবস্থা আর বাকি দিন তো রইলো। ও কে বললাম তোমার টেনশন হবে কেন? আমাকে এমন দেখে তো তোমার ভালই লাগছে। কিছু ভেবেছো?? ও বললো আমি ভাববো কেন? তুমি বিয়ে করেছো না?? তুমিই ভাবো কি করবা। আমি বললাম তোমার আব্বা আর চাচারা যেই টাইপের পাবলিক।। ও হাসলো আমার কথা শুনে। টুকটাক কথা বলে ও কে বিদায় দিয়ে দিলাম। আমি ভাবি পালাইয়া বিয়ে করা এতটা কষ্টের কাজ জানলে ভুলেও করতাম না। দেখতে দেখতে আল্টিমেটাম ডেট ঘনিয়ে আসলো। অনুর আব্বু বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেছে। এক সপ্তাহ আছে আর বিয়ের। অনু আমাকে বার বার বলছে কিছু একটা করো তাড়াতাড়ি। কি করবো আমার মাথায় আসছে না। ওর বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে।
।।
>>
বিয়ের তিন দিন আগেঃ আমার বাসার দরজায় নক করছে কেউ। দরজা খুলতেই দেখি অনু দাঁড়িয়ে আছে। ও একা নয়। সাথে বিশাল দুইটা লাগেজ। বুঝলাম মেয়ে বাপের বাড়ির পার্ট চুকিয়ে এসেছে। আমি বললাম এগুলা নিয়ে ভিতরে আসো। ও আমাকে বললো অইগুলা এখানেই থাক। তুমি তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে বের হও। আমার বাপ হয়ত এতক্ষনে জেনে ফেলেছে। এই নাও পাসপোর্ট আর টিকেট। আমি হা হয়ে আছি। ও তুড়ি মেরে বললো হা করে না থেকে যা করতে বললাম তাড়াতাড়ি করো। খালি তো ভাব মারতে পারো, কাজের কাজ কিছুই পারো না। এই এক মাসে কি করছো। আমি উত্তর না দিয়ে আমার জিনিস গুছাতে লাগলাম। আধাঘন্টা পর এয়ারপোর্টে গিয়ে পৌঁছালাম।
।।
>>
কি পাঠকরা, আছেন তো?? এই ছিল আমার ফ্ল্যাশ ব্যাক কাহিনী। চলেন বর্তমানে ফিরে আসি। আমি এই মুহূর্তে আমার মহামূল্যবান রত্ন মানে আমার একমাত্র বউকে খুজছি। অইতো, উনি কফি খাচ্ছেন বসে বসে। আমি সামনে যেতেই হাসি দিয়ে বললো কি স্যার ঘুম ভেঙেছে??আমি বললাম হুম। অনেক কাজ আছে। তাড়াতাড়ি বের হন। হুম। রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম। আমরা সেখানে আবারো বিয়ে করলাম। আমরা কেউ আমাদের ধর্ম চেঞ্জ করিনি। দুজন দুজনের টা পালন করতাম। মাঝে মাঝে আমি ভোরে ও কে ডেকে দিতাম নামাজ পড়ার জন্য। ও আমাকে দিয়ে জোড় করে একাদশী করাতো। যেই আমি সারা জীবনে ধর্মের ধ ও করতাম না ওর কারণে আমাকে সব করতে হতো। সেখানে কোন বাঙালি যদি আমাদের প্রশ্ন করতো যে আপনাদের অসুবিধা হয় না একসাথে। আমরা বলতাম, আরে ভাই নজরুল যদি সেই উনবিংশ শতাব্দীতে থেকে প্রমীলা কে নিয়ে এক সাথে থাকতে পারে আমরা পারব না কেন? আর এটা তো ২০১৫। আমাদের সবই ভাল ছিল। খুব সুখেই ছিলাম। কিন্তু কিছু একটার কমতি ছিল। অনুকে মাঝে মাঝে দেখতাম, মাঝ রাতে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তো আর কান্না করতো। অস্পষ্ট ভাবে শুনতাম ও বলতো, আল্লাহ আমার আব্বুকে ভাল রেখো। আমার তখন খুব কষ্ট হতো।
।।
>> এইখানে ও একটা হসপিটালে প্র্যাক্টিস করে। আর আমিও ছোট খাট কিছু কেইস নিয়ে ঘাটাঘাটি করি। আমাদের দুজনের ইনকাম নিয়ে আমরা খুব ভালভাবেই আমাদের সংসার চালাতে পারি। আমাদের সব কিছু ছিল। কিন্তু কিছু একটার অভাব বোধ করতাম। কিছুদিন পর সেই অভাবও পূরন হয়ে গেলো। অনু গর্ভবতী। আমি যখন এটা শুনলাম তখন কতটা খুশি লাগছিল কল্পনাও করতে পারবেন না। আমি ও কে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াই। আমাদের আনন্দ হাজার গুন বেড়ে যায়। আমি মা কে বলি এই সুখবর এর কথা। বাবা এতদিন আমার সাথে কথা না বললেও এটা শুনার পর কথা বলেন। গম্ভীর স্বরে উনি আমাকে বললেন, যা করেছিস করেছিস বউমা কে কোন কাজ করতে দিবি না। সব কিছু নিজে করবি। অনুও কথা বলে আমার বাবা মার সাথে। আমার বাবা মায়ের সাথে কথা বলা শেষ হলে ও কে বললাম, তোমার আব্বুকে ফোন দাও। ও ভয়ে ফোন দিতে চাচ্ছিল না। আমি কল দিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম ফোনটা। ওর মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর অই পাশ থেকে একজন ভদ্রলোক কল টা ধরলো। অই পাশে থেকে হ্যালো বলার পরই ডুকরে কেদে উঠে অনু। আমি আমেরিকার লস এঞ্জেলসে বসেই টের পাচ্ছিলাম বাংলাদেশে কোন এক জায়গায় ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জনাব কালাম নামের এক ভদ্রলোকের হৃদস্পন্দন। অনুর বাবা মি কালাম হোসেন। পেশায় একজন শিক্ষক। এই মানুষটার আত্মসম্মানবোধ প্রচন্ড বেশি। অনেক আদর দিয়ে তিল তিল করে বড় করে তোলা একমাত্র মেয়েটাকে যখন একটা ছেলে ভালবাসার দোহাই দিয়ে এক দেশ থেকে হাজার মাইল দূরের আরেক দেশে নিয়ে যায় তখন ভেঙে পড়েছিলেন মানুষ টা। কিন্তু নিজের আত্মসম্মান আর গৌরব কে ভাঙতে দেন নি। বুকে পাথর চাপা দিয়ে এতটা দিনেও একবারো মেয়ের খোজ নেননি। অনু কাঁদতে কাঁদতে ফোন টা কেটে দিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ফোন কাটলে কেন? ও বললো আমি পারবো না আব্বুর সাথে কথা বলতে। এটা বলেই ও ঘরের ভেতরে চলে গেল।
।।
>>
টেবিলের ঊপর পড়ে থাকা ফোন টা হাতে নিলাম আমি। দুরু দুরু বুক নিয়ে অই নাম্বার টাতে আবারো কল দিলাম। আমার বুকের মধ্যে তোলপাড় হচ্ছে। রিং হতেই ফোন টা তুললো। খুব গম্ভীর গলায় হ্যালো নামক শব্দটা ভেসে আসলো ফোনের এই প্রান্ত থেকে। আমি জানিনা কি বলবো আমি। ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছি আমি এই মানুষ টার কাছে। তার ২৪ বছরের ভালবাসার সম্পদ টা নিয়ে এসেছি আমি। এই মানুষ টা আমাকে ক্ষমা না করলে আমার সুখের পূর্ণতা আসবে না। আমি কখনোই সুখী হবো না। ও পাশ থেকে কয়েকবার হ্যালো বলার পর, আমি দৃঢ় স্বরে বললাম। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ। আপনার মেয়েকেও ক্ষমা করে দিন। আপনার মেয়ে গর্ভবতী। আপনি নানা হতে চলেছেন। এটা বলেই আমি চুপ করে গেলাম। ওপাশ থেকেও কোন কথা আসছে না। কিছুক্ষন পর ফোন টা কেটে দিল। আমি ফোন না ধরেই বুঝতে পারছি, বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোক এই মুহূর্তে আকাশের দিকে হাত তুলে বলছেন, "আলহামদুলিল্লাহ"। একমাত্র মেয়ের থেকে এত বড় কষ্ট পাওয়ার পরও। আল্লাহর কাছে চাইছেন, আল্লাহ আমার মেয়েটাকে ভাল রেখো।
।।
>>
আমাকে একটা কাজের জন্য বাংলাদেশে যেতে। এমন সময়ে অনু আমাকে আসতে দিতে চাইছেনা। অনেক কষ্টে ও কে রাজি করিয়েছি। ও কে আমার এক পিসীর বাসায় রেখে এসেছি। ও কে আসার আগে প্রমিজ করে এসেছি আমার সন্তান আসার আগেই আমি আবার ফিরে আসবো আর আসার সময় তোমার জন্য বিরাট এক সারপ্রাইজ গিফট নিয়ে আসবো। বাংলাদেশে এসেই সোজা চলে গেলাম ফরিদপুর। অনেক হিসেব বাকি আছে আমার। ক্ষমা চাইতে হবে একটা মানুষের কাছে। ফরিদপুরের মধুখালি গ্রাম টাতে উপজেলার অই গ্রামটায় ঢুকেই দেখলাম বিরাট এক অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হচ্ছে । গ্রামের সব মানুষদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। একজন জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে গ্রামে। প্রবীন বয়সী লোকটা বললো, আরে মিয়া আফনে জানেন না?? অই যে কালাম স্যার আছে না?? উনার নাতি হইবো। তাই মিলাদের আয়োজন করছে। ওনার কথা শুনে আমি আবারো ধাক্কা খেলাম। আমার অনুশোচনা আরো বেড়ে গেলো। মানুষটার জন্য মনের ভেতরে শ্রদ্ধাটা আরো বেড়ে গেলো। সব অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর। আমি ওনার ঘরে গেলাম। উনি তখন একটা পাঞ্জাবি পড়েছিলেন। আমাকে দেখে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাকালেন। একজন মহিলাকে ডেকে বললেন, ওনাকে বলো ঘরে এসে বসতে। চল্লিশোর্ধ এক মহিলা আমাকে ঘরে নিয়ে বসালেন। আমি বুঝলাম এটাই অনন্যার মা। আমি ভেবেছিলাম এদের চোখে আমি হয়তো ঘৃণা দেখবো। কিন্তু এমন কিছুই দেখলাম না। উনি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ও কেমন আছে বাবা? আমি হাসলাম, বললাম ভালই। জিজ্ঞেস করলাম আংকেল কোথায় গেলেন? উনি আমাকে ঘর টা দেখিয়ে দিলেন। আমি কোনার দিকের ঘরটাতে গিয়ে ঢুকলাম। ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে চারদিকে তাকালাম। দেখেই বুঝে গেলাম যে এই ঘরটা অনুর ছিলো। ওর অনেক ছবি এই ঘরটাতে। বিছানা টেবিল গুলা একদম গুছানো। ঘরটাতে কাউকেই থাকতে দেওয়া হয় না। জনাব কালাম আমার সামনে উল্টোদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছেন। অনুর বাধাই করা হাস্যোজ্বল ছবি টার দিকে উনি অপলক তাকিয়ে আছেন। আমার বুকটা চিনচিন করে ব্যাথা করছিল। আমি ওনার পায়ে ধরে বললাম, আমাকে ক্ষমা করে দিন। উনি আমাকে উঠিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করছেন তিনি। আমার নিজেকে পূর্ণ মনে হলো। ওনার পাঞ্জাবি থেকে ভালবাসার ঘ্রান আসছিল। একদম বিশুদ্ধ ভালবাসা।
।।
>>
২৩ এপ্রিল ২০১৭; পিসী আমাকে ফোন করে বললো অনুকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। সেদিন রাতেই আমি আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সাথে করে আমার অনুর সুখের চাবি টা নিয়ে যাচ্ছি। লস এঞ্জেলস এর "ইউসিএলএ মেডিকেল সেন্টার" এর করিডোরে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আমার সাথে আরো কয়েকজন আছে। আমি ঈশ্বর কে ডাকছি, আর আমার পাশে দাঁড়ানো লোকটা পরম আবেগ নিয়ে আকাশের দিকে মোনাজাত তুলে আল্লাহ কে ডাকছে। অনেকক্ষন পর ডাক্তার বেরিয়ে এলেন। আমার সামনে এসে বললেন, You are going to be a father of a cute daughter। আমার অনুভূতি টার বর্ণনা কয়েকটা শব্দে লিখা আমার সম্ভব না। ডাক্তার বললেন ভেতরে যাওয়ার জন্য। অনু জ্ঞান ফেরার পর থেকেই আমাকে খুজে যাচ্ছে। আমি কেবিন টায় ঢুকতেই ও আমার দিকে তাকালো। আমাকে দেখেই হেসে উঠলো ও। ওর পাশে আমার ছোট্ট মামুনি টা শুয়ে আছে। ওর হাত টা ধরে ওর পাশে বসলাম। কানের কাছে গিয়ে বললাম, থ্যাংক্স ফর দিস গিফট। তোমার গিফট টা দেখবে না?? ও প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি ঈশারা দিতেই সবাই কেবিনে এসে ঢুকলো। অনু হা করে তাকিয়ে আছে। ও হয়তো কল্পনাও করেনি এটা। ওর চোখ টলমল করছে। আমার বাবা মা আর অনুর মা ভিতরে ঢুকলেও জনাব কালাম তখনো দরজাতেই দাড়িয়ে ছিলেন। প্রথমেই আমার মা কোলে নেয় আমার মেয়েকে। তারপর একে একে সবাই নেয়। সবশেষে আমার বাবা ও কে কোলে করে নিয়ে তুলে দেয় মি, কালাম এর কোলে। নাতনিকে কোলে নিয়েই হুহু করে কেদে উঠেন তিনি। মেয়ের পাশে এসে বসলেন উনি। আমার অনুও কেদে চলেছে। তবে এই কান্না দুখের নয়। এটা প্রাপ্তির কান্না। ভালবাসা প্রাপ্তির কান্না। এতক্ষনে আমার সুখটা পরিপূর্ণ লাগছে। আমার সুখ গুলা পূর্ণতা পেয়েছে এতদিনে। একেই হয়তো বলে "সুখের পূর্ণতা"।
।।
>>
অই অই পাঠকরা। আরেকটু বাকি আছে। এই গল্পের এক কাকতালীয় ঘটনা আছে শুনবেন?? অনন্যা আমাকে প্রথম বার ভালবাসি বলেছিল এপ্রিল এর ২৭ তারিখ। আমার আর ওর বিয়েও হয়েছিল এপ্রিল এর ২৭ তারিখ। আর আমার মামুনিটাও পৃথিবীতে আসে সেই এপ্রিলের ২৭ তারিখেই। হোয়াট এ কাকতাল ম্যান!! বাই দ্যা রাস্তা, কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপনি কিভাবে আপনার ভালবাসার মানুষকে পেলেন?? আমি তখন একটা উত্তরই দি, "ভালবাসা ভালবাসে শুধুই তাকে, ভালবেসে ভালবাসায় বেধে যে রাখে"। ভাল থাকুক ভালবাসা গুলা। ভাল থাকুক ভালবেসে কাছে আসতে চাওয়া মানুষ গুলা।

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ