গল্প-- অবশেষে দেখা হলো
লেখা-- #S_M_Sahadat_Hossen(কষ্টের ফেরিওয়ালা)
উৎসর্গ-- Ahsan Habib
>>>পর্ব:-০৫<<<
.
.
প্রতিটা দিন তপু সুবেদার জন্য অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করতে খুব খারাপ লাগে তাঁর, তবুও ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে। ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে সবারি ভালো লাগে। একদিন তপু প্রাইভেট পড়াচ্ছিল হঠাৎ তাঁর ভাঙ্গা এগারোশ মডেলের মোবাইলটা বেজে ওঠে। ওটা দেখে তপু ভয় পাই কারণ এটাতে তেমন কেউ কল করে না শুধু তাঁর আম্মু ছাড়া। আবার তাঁর আম্মু এমনিতে কল করে না কোন বিপদ হলে কল করে। তপু মনে মনে ভাবে না জানি আবার কোন বিপদ হল। তপু ভয়ে ভয়ে কল টা রিসিভ করল। কল রিসিভ করতেই ওপাস থেকে তাঁর মায়ের কন্নার আওয়াজ শুনতে পেল। কন্না শুনে তো সে আরো ভয় পেয়ে গেল। কাপা কাপা কন্ঠে তপু বলল,
-- আম্মু কী হয়ছে কাঁদতেছো কেন?
ওপাসে তার আম্মু কন্নার জন্য কথা বলতে পারছে না অনেক কষ্টে বলল
-- বাবা তোর আব্বু এক্সিডেন্ট করছে,,
এই বলে আবার কন্না শুরু করে দিল।
-- কী কিভাবে???
-- তোই তারা তারি আই বাবা
-- ঠিক আছে আমি আসছি।
কথা টা শুনে তপুর মনে হল তাঁর বুক থেকে কিছু একটা ছিড়ে যাচ্ছে তপু দৌড়ে গেল হাসপাতালে। তপুর চোখ দিয়ে কোন পানি পড়ছে, কারণ তাঁর চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তবে তাঁর ভিতরে ঝড় হাওয়া ভয়ছে। তাঁর বাবাকে ইমারজেন্সি রুমে রাখা হয়ছে। রুম থেকে ডাক্তার বের হয়ে আসল। তপু এক দৌড়ে ডক্টরের কাছে গেল।
-- আমার বাবা এখন কেমন আছে?(তপু)
-- আপনার বাবার অবস্থা ভালো না, অপরেশন করতে হবে অনেক টাকা লাগবে(ডাক্তার)
-- কত টাকা লাগবে?(তপু)
ডাক্তার যা বলল তপুর আকাশ থেকে পরার অবস্থা। তাঁর বাবার অপরেশন করতে অনেক টাকা লাগবে যেটা দেওয়ার সাধ্য তপুর নাই। তবুও সে টাকার জন্য বের হল। কারণ সে চাই না তাঁর বাবা টাকার অভাবে মারা যাক। অনেক যাইগায় সে টাকা খুঁজল কিন্তু কেউও থাকে টাকা দিল না। তাঁর আত্মীয়স্বজন রাও মুখ ফিরিয়ে নিল।
.
অনেক কষ্টে তপু কিছু টাকা জোগাড় করল। আর বাকি টাকা গুলো তাঁর কিডনি বিক্রি করে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। যে কোন উপায়ে তাঁর বাবাকে বাঁচাতে হবে। তপু হাঁটছে আর ভাবছে তাঁর জীবন টা এখন বাংলা সিনেমার মতো হয়ে গেছে। আসলে তাঁর জীবনটা বাংলা সিনেমার মতো নয়, বর্তমান অনুযায়ী এটাই তো জীবন। কেউ বিপদে এগিয়ে আসবে না। তপুর চোখ দিয়ে জল পড়ছে না ঠিকই কিন্তু ভিতরে সব জ্বলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তাঁর বাবা তাঁর কাছ থেকে চির দিনের বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে। তপু দ্রুত হাঁটছে। তপু হাসপাতালে এসে দৌড় দিল ডাক্তারের রুমে। ডাক্তার তাকে দেখে বলল।
-- সরি আপনার বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না।
এক মুহূর্তের জন্য তপুর পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেল। তপু নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকার পৃথিবীর ঠিক মাঝ খানে তাঁর চার পাশে কোন মানুষ নেই, সে একা বড়ই একা এই পৃথিবীতে। সে এক দৌড়ে গেল তার বাবার কেবিনে। দেখে তাঁর বাবা কত শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। এটা শেষ ঘুম, এই ঘুমটা বড়ই শান্তির, তবে এটা শান্তি তাদের জন্য যারা এই ঘুম ঘুমাই, যে ঘুমিয়েছে তাঁর আপন জনদের জন্য এটা একটা অশান্তি। তপু এক দৃষ্টিতে চেয় আছে তাঁর বাবার ঘুমন্ত শরীরের দিকে। কোন কথা বের হচ্ছে না তার মুখ দিয়ে, চোখে জল ভরে ওঠেছে কিন্তু তা গড়িয়ে পরছে না। আজ থেকে তপু আর কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না, আজ থেকে আর কাউকে ঈদের নামায পরে প্রথমে পাঁ ছোঁয়ে সালাম করতে পারবে না, আজ থেকে তাকে কেউ বাবার ভালোবাসা দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিতে পারবে না, আজ থেকে তাকে আর কেউ শাষন করবে না। আজ থেকে তপু হারাল তাঁর আদর্শ পিতাকে, আজ থেকে তপু হারাল তার এক হৃদস্পনন্দনকে। তপু নির্বাক সে শুধু চুপ করে থাকতে পারে আর কিছু পারে না। তপু দাঁড়িয়ে তাঁর মা এবং ছোট ভাইটির কন্না দেখছে। এটা দেখা ছাড়া তপুর আর কিছু করার নাই। যেখানে তপু তাঁর মা এবং ভাইকে শান্তনা দিবে সেখানে সে নিজে নির্বাক। তপু নিয়তিকে মেনে নিয়েছে, তবে তার মনে একটাই কষ্ট আর সেটা হচ্ছে টাকা না থাকার কারণে তাঁর বাবাকে বাঁচাতে পারলো না সে। তপু মনে মনে নিজেকে দিক্কার দিচ্ছে কারণ তাঁর টাকা না থাকার কারণে আজ তাঁর বাবা তাঁর পাশে নাই। ঠিক সিনেমার মতো কিন্তু এটা কোন সিনেমা নয় এটাই সত্যি এবং এটাই বাস্তবতা। তপু মানতে পারছে না এভাবে তাঁর বাবাকে হারাতে হবে।
.
.
দুই বছর পর।
তপু বসে আছে তাঁর বাবার কবরের পাশে। এখন সে একজন সরকারি কর্মকর্তা, একজন ব্যাংক মেনেজার। আজ থেকে দুই বছর আগে টাকার কারণে তাঁর বাবাকে সে বাঁচাতে পারে নি। সে কবরের পাশে বসে বসে কাঁদছে। আজ তাঁর সব আছে, শুধু নেয় একজন আদর্শ বাবা, শুধু নেয় একজন শাষন করার মতো বাবা, শুধু নেয় বাবা বলে ডাকার মতো একজন মানুষ, শুধু নেয় ঈদের দিন নামায পড়ে এসে প্রথম সালাম করে বুকে জড়িয়ে ধরার মতো একজন মানুষ। আজ তাঁর সব কিছু থেকেও কোন কিছুর মুল্য নেয়। কারণ তাঁর পাশে সেই আদর্শ মানুষটি নেয়, নেয় তাকে নিয় স্বপ্ন দেখার মতো মানুষ। তাঁর বাবা মারা যাবার পর সে এই চাকরিটা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছে। কোন টাকা লাগে নি চাকরিটা জোগাড় করতে। আজ সে তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে, তবে সেই স্বপ্ন পূরণটা দেখাতে পারলো না তাঁর বাবা। তাঁর চোখ দুটি ভেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। মনে হয় সব জল এই দিনের জন্য জমা ছিল।
.
.
>>>>পরবর্তী পর্ব<<<<
গল্প-- অবশেষে দেখা হলো
লেখা-- #S_M_Sahadat_Hossen(কষ্টের ফেরিওয়ালা)
উৎসর্গ-- Ahsan Habib
>>>পর্ব:-০৬<<<(শেষ পর্ব)
.
.
তপু অনবরত কাঁদছে তাঁর বাবার কবরের পাশে বসে। গত ২ বছরে তপু এমন করে কাঁদে নি। আজ তাঁর চোখ দুটি ইচ্ছে মত পানি জড়াচ্ছে কোন বাঁধাই আজ চোখ দুটি মানছে না। চারিদিক এখন অন্ধকার তার মানে এখন রাত হয়ে গেছে, কখন যে রাত হয়ে গেল তপু জানে না। তপু নিস্তব্দ কবরস্থানে বসে আছে। কোথাও কোন শব্দ নেয়। চারিদিক ঝি ঝি পোকারও ডাক শুনা যাচ্ছে না। তপুর কন্নার কারণে মনে হয় আজ তাঁরা লোকিয়ে গেছে। জোনাকিপোকারা তাদের সমন্য তম আলো দিয়ে অন্ধকার দূর করার ব্যর্থ চেস্টা করছে। আর ঐ দূর নীল আকাশটা মেঘে ঢাঁকা, ঠিক তপুর মনের মতো। আজ ও তাঁর মনটা বিষণ খারাপ। যে কোন সময় আকাশ থেকে বৃষ্টি নামতে পারে। আজ তাঁর বাবার কবর ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছে না। তাঁর মন চাচ্ছে সারা রাত যেন তাঁর বাবার কবরের পাশে বসে কেটে দেয়। অথচ এর আগেও সবসময় আসত তপু তাঁর বাবার কবরে তখন এমন লাগে নি। কিন্তু আজ বড্য বেশি মনে পড়ছে সেই দিনের কথা। মনে পড়ছে সেই কষ্টে থাকা দিনগুলির কথা, মনে পড়ছে সেই কষ্টময় কথাগুলো, তাঁর সাথে মনে পড়ছে সেই মায়াবী মেয়ে সুবেদার কথা। তাঁর কথা প্রতিনিয়ত মনে পড়ে তবে আজ সবচাইতে বেশি মনে পড়ছে। তাকে দেখেছিল সেদিন আর দেখা পাই নি তাঁর। তপু এখনও তাঁর প্রতিক্ষায় আছে। তপু তাঁর জন্য ২ বছর না হাজারো বছর অপেক্ষা করতে পারবে। যদি সে নাও আসে তবুও তাকে ভালোবেসে যাবে। তপু ওঠে দাঁড়াল, তাঁর মন এখান থেকে যেতে চাচ্ছে না তবুও যেতে হচ্ছে তাকে। সবসময় তো আর মন যেটা বলে সেটা করা যাই না, কিছু সময় মনের বিরুদ্ধেও যেতে হয়।
.
তপু রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আনমনে। তপু চাই আকাশের মেঘের মত যেন তাঁর মনের মেঘ গুলো সরে যাই, তাঁর আর ভালো লাগছে না এত কষ্ট। তপু কোথায় দিয়ে হাঁটছে সে জানে না, সে হাঁটছে বাড়ির উদ্যেশ্যে। আশে পাশে কী হচ্ছে সে দিকে তাঁর মন নাই। সে কী দিয়ে হাঁটছে সে নিজেও জানে না। তাঁর মনটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
.
হঠাৎ একটা ঘাড়ি এসে জুড়ে ধাক্কা দিয়ে পেলে দিল। তপু শুয়ে পড়ল মাঠিতে মথা থেকে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে, মথায় প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। তাঁর এক মুহূর্তের জন্য মনে হল সে পৃথিবী থেকে চলে যাবে চির দিনের জন্য, সে আর একবার এই রূপসী বাংলা কে দেখে নিতে চাইল কিন্তু পারল না। তাঁর চোখ দুটি আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল। এরপর তাঁর আর কিছু মনে নাই।
.
সেন্স পিরার পর সে দেখল। সে কাটের উপর শুয়ে আছে কারো বাড়িতে। এটা তাঁর বাড়ি বলে মনে হল না। কারণ তাঁর স্পস্ট মনে পড়ছে সে এক্সিডেন্ট করছিল। তাঁর মাথায় এখনও একটু একটু ব্যথা লাগছে। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ তপু দেখল দরজাই কেউ একজন দাঁড়িয়ে। তপু তাকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না। সে ভালো করে দেখার জন্য একটু সামনে গেল। দরজার সামনে যা দেখল সে যেন তাঁর চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাঁর পৃথিবীতে একটু খানি আলোর ঝলক দেখা গেল। ঠিক দুই বছর আগের সেই মায়াবী মুখটা এখন তাঁর সামনে। হ্যাঁ তপুর সামনে এখন সুবেদা দাঁড়িয়ে। তাকে দেখে তপুর চোখ স্থির হয় গেল। তাঁর দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না। আগের সেই মায়াবী মুখ, মায়াবী চোখ এখন আরো বেশি মায়াবী হয়ে ওঠেছে। তাকে দেখে তপুর মনে হল সে স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু না এটা কোন স্বপ্ন নয়। এটাই বাস্তব।
-- তুমি!!!!!!!!!!(তপু)
-- হ্যাঁ আমি এখন কেমন লাগছে?(সুবেদা)
-- এখন একটু একটু ভালো লাগছে(তপু)
তপু কী বলবে বুঝতে পারছে না যার জন্য আজ এত বছর করছে সে এখন তপুর সামনে সে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। যাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলছিল এখন সেই মায়াবী মেয়েটি তপুর সামনে।
-- আচ্ছা আমি এখানে কী করে এলাম?(তপু)
-- তুমি রাস্তায় পড়েছিলে সেখান থেকে আম্মু তোমাকে এখানে এনেছে(সুবেদা)
সুবেদা এসে তপুর পাশে বসল, তপু এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তাঁর দিকে।
-- আচ্ছা তোমরা ঐ ভাবে চলে আসলে কেন? তুমি জান আমি তোমাকে কত খুঁজেছি?(তপু)
-- আমাদেরকে সেই বখাটে ছেলেটা হুমকি দিছিল, তাই বাধ্য হয়ে চলে আসলাম, আর তুমি আমাকে খুঁজছিলে কেন?(সুবেদা)
-- কেন.......
তপুর মুখ দিয়ে আর কথা বের হচ্ছে না কিভাবে বলবে কথাটা সেটা চিন্তা করছে, যদি সুবেদা তাকে ভালো না বাসে তাইলে, যাক এত ভেবে লাভ নেই একদিন তো বলতেই হবে ঐ একদিনটা যদি আজ হয় তাইলে সমস্যা কী????।
-- কেন বল?(সুবেদা)
অনেক চিন্তা ভাবনা করে তপু আজ বলার সিদ্ধান্ত নিল
-- কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি সেই প্রথম দিন থেকে, ভালোবাসি তোমার সেই অবুঝ মনটাকে, তুমি কী আমাকে সেই মনে একটু খানি যাইগা দিবে? কথা দিচ্ছি কখনও ছেড়ে যাবো না।(এক নিশ্বাসে তপু কথাগুলো বলল)
সুবেদা তাঁর কথা শুনে একটু লজ্জা পেল। সেও তপুকে ভালোবাসে, তাঁর জন্য এত দিন অপেক্ষা করছিল সে। যখন তাঁর মা থাকে রাস্তা থেকে আনল তখন তাকে দেখে সুবেদার চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে পরছিল। এখনও তাঁর চোখের কোণাই একবিন্দু জল এসে বীড় করছে।
-- কী হলো রাখবে না আমাই?(তাঁর উত্তর না পেয়ে তপু আবার বলল)
-- হ্যাঁ দিবো, হৃদয়ের গবীরে রেখে দিবো তোমাই, আমিও খুব ভালোবাসি তোমাই খুব(সুবেদা)
তপু সুবেদাকে বুকের মধ্যে আগলে রেখে ভাবতে লাগল। তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল সেই বৃষ্টা বেজা রাতে, আর ২ বছর পর অবশেষে দেখা হলো সেই বৃষ্টা বেজা রাতে, সত্যি অসাধারণ প্রকৃতির নিয়ম। তপু ফিরে পেল সেই মায়াবী চোখ দুটিকে, তপু ফিরে পেল সেই মায়াবী মুখা খানিকে, তপু ফিরে পেল তাঁর সুখের প্রতীককে। অবশেষে দেখা হলো তাঁদের সেই বৃষ্টি বেজা রাতে, দেখা হলো তাঁদের খুড়েঘরে।
.
.
>>>>সমাপ্ত<<<<
#এস_এম_শাহাদত_হোসেন।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ