গল্পঃ " খুশী'র পৃথিবী "
.
খুশী তার কয়েক বান্ধবী সহ খেলছে, খুব সাধারন একটা খেলা; বিভিন্ন কসরৎ এ কয়েকটি পাথর হাতের তালুতে এবং হাতের তালুর উপরিভাগে রেখে খেলতে হয়, আঞ্চলিক ভাষায় খেলাটার নাম "কড়ি খেলা"। খেলতে খেলতে একসময় তার এক বান্ধবী বলে উঠলো- "কাইলকা আব্বু আমারে মার্কেটে লইয়া যাইবো, আমি মেলাগুলা জিনিস কিনমু।" কথাটা কেমন যেনো লাগলো খুশীর, এক ধরনের অজানা ব্যথা আর শুন্যতা অনুভব করলো সে, তাইতো ছোট্ট মেয়েটার টোল পরা গালটা বিকৃত হয়ে পূরো মুখ কেমন জানি মলিন হয়ে গেলো। তার খেলতে আর মোটেও ভাল লাগছেনা তাইতো "আইজকা আর খেলমুনা, তোরা সবাই খেল" বলে চলে আসলো খুশী।
.
বাসায় এসে খুশী তার মাকে খুজতে লাগলো, কিন্তু তার মা এখনও বাসায় ফিরেইনি। অন্যের বাসায় কাজ করলে এমনি হয়, কখন যে ফিরবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিষণ্ণবদনে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর তার মা আসলো আর সাথে সাথে তার মাকে খুব একটা কঠিন প্রশ্ন করে বসলো,
- মা, আব্বায় কি আর আইবোনা? এইবার ঈদেও আইবোনা? তোমারে আমারে সে কি একদম ভুইলা গেছে?
এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুশীর মা নিজেও জানেনা তবুও সাত বছরের মেয়েটার কাছ থেকে এই একি প্রশ্ন সে অনেকবার শুনেছে। প্রতিবারই তার মা জবাব দেয়- "তোর বাপে আইবো, অবশ্যই আইবো, আইবোনা ক্যান আবার? "
.
খুশীর মা এর আবার কি করার আছে! খুশীর বাবা যখন ছিলো, কতইনা খুশীতে ছিলো তারা, আর তাইতো খুশীর বাবা না থাকায় ঈদের দিনটাও খুশিতে কাটেনা মা মেয়ের। গেলো দুইটা ঈদেও খুশীর বাবা আসেনি, বিদেশে গিয়ে যে এমন ভাবে নিরুদ্দেশ হবে, স্ত্রী সন্তানের কোনও খোজ খবর রাখবেনা এমনটি কখনই আশা করেনি খুশীর মা।
.
আর খুশীর তো সারাদিন বাবার কথা ভাবতেই দিন কেটে যায়। কতদিন "বাবা" বলে ডাকেনা সে, মনে মনে বলে "এত খারাপ কেন আমার বাবা, আমারে কি একটাবারও তার দেখতে মন চায়না, একটাবার আসুক বাবায়, কোত্থাও যাইতে দিমুনা"। বাবার কথা ভেবে হুটহাট করে প্রায়ই কেঁদে ওঠে খুশী , মা থাকলে ; দেখতে পেলে বলে-" মা কানতাছিস ক্যান? " খুশীর ওই একি কথা, একি প্রসঙ্গ "বাবা"।
.
দুবছর আগের কথা, খুশীর বাবা কিছু ধানি জমি বিক্রি করে আর কিছু দেনা করে দুবাই যাওয়ার জন্য বন্দোবস্ত করলো। কিন্তু তিনি এয়ারপোর্ট এর বেশিদূর আর যেতে পারেনি, দালালের খপ্পরে পরে সব হারিয়ে নিঃস্ব হলেন। এভাবে খালি হাতে বাসায় ফিরে যাওয়া সম্ভব না, তাই জীবিকা আর পরিবারের তাগিদে গার্মেন্টস শ্রমিককেই তার একমাত্র পেশা হিসেবে পছন্দ করলেন এবং রীতিমতো কাজ শুরু করে দিলেন। স্ত্রী আর সন্তানের কথা যে মনে পরেনা এ ধারনা একদম ভুল। প্রতিদিনের কাজ শেষে ঘুমাবার আগে, একটা ছবির ফ্রেম দেখে নিরবে অশ্রু বিসর্জন করেন তিনি, যে ফ্রেমের সাদাকালো ছবিতে আছে তারা তিনজন; খুশী,খুশীর মা আর নিজে। বাসায় ফিরে যেতে খুব ইচ্ছে হয়, পরম মমতায় মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে, ছোট ছোট হাতের আদর পাওয়ার জন্য বাবার মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে, স্ত্রীর কথা মনে করতেই বুকটা ধক করে ওঠে, না জানি কিভাবে স্বামীর শুন্যতা সহ্য করছে সে। কিন্তু কিছুই করার নেই, স্ত্রী মেয়ের সাথে যোগাযোগও করতে পারছেনা আবার স্ত্রী সন্তানের কাছে ফিরেও যেতে পারছেনা। দেনাগুলো শোধ করার জন্য, খুশীর ভবিষ্যৎ এর জন্য অনেক টাকার দরকার তার। মাসের পর মাস তাইতো কঠোর পরিশ্রম করে কিছু টাকা উপার্জন করছে খুশীর বাবা। প্রথম প্রথম তো খেয়েদেয়ে জমানোর জন্য কোনো টাকাই থাকতোনা তবে এখন খুব ভাল অঙ্কের টাকাই জমাতে পারছেন তিনি। তাইতো এবার ঈদে বাড়ি যাবার জন্যও চিন্তাভাবনা করেছেন।
.
গভীর রাতে কান্নার শব্দে খুশীর মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলো, দেখতে পেলো খুশী অঝোর ধারায় কাঁদছে।
- মা কানতাছিস ক্যান? কি হইছে
- মা, বাবারে ছাড়া ঘুম আসেনা, বাবা আসেনা ক্যান মা?
এই বলে মাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। আর এভাবে কতদিন মেয়েটা কাঁদবে বুঝতে পারেনা খুশীর মা। বাবার প্রতি তার এত ভালবাসা তাইতো প্রতিটাক্ষণ বাবাকে মিস করে বুঝি খুশী। কোনওমতে বুঝিয়ে খুশীকে ঘুম পারায় খুশীর মা।
.
পৃথিবীর প্রত্যেকটা সম্পর্কের ক্ষমতা আলাদা আলাদা, তাই কখনই বাবার জায়গাটার সাথে মায়ের জায়গাটা আর মায়ের জায়গাটার সাথে বাবার জায়গাটা তুলনা করা যায়না। বাবার জায়গায় বাবা, মায়ের জায়গায় মা। তবে ছেলের থেকে একটা মেয়ে তার বাবাকে যে বেশী ভালবাসে এর নজির অনেক রয়েছে তেমনি খুশীও। বাবার স্মৃতিগুলো স্মৃতিপট থেকে বয়সের কারনে দৃশ্যহীন হয়ে যাচ্ছে। তবুও যা আছে তা কঠিন ভাবে পীড়া দেয় তাকে। তার বাবা যখন বিদেশ যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলো তখন খুশীর কি কান্না, বাবাকে সে কোত্থায় যেতে দিবেনা ; আসলেই যেতে দেয়নি। খুশী ঘুমিয়ে পরলে খুশীর বাবা চুপ করে চলে গিয়েছিলো। ঘুম থেকে উঠার পর শুরু হলো গগনবিদারী কান্না, কিছুতেই কিছু বোঝানো যাচ্ছেনা খুশীকে, তাইতো আজও বাবার জন্য যখন তখন কেঁদে ওঠে খুশী।
.
ঈদ প্রায় চলে এসেছে, আর মাত্র কয়টা দিন। খুশী এবারও ভেবে বসেছে বাবা বুঝি আসবেনা; যদিও মনের মধ্যে প্রবল একটা চাওয়া "বাবা আসুক"।
.
খুশীর মায়ের শরীরটা একটু খারাপ যার জন্য আজ কাজে যায়নি। মায়ের একটু দেখ-ভাল করে তাইতো খুশী আঙিনায় ধারালো পাথর দিয়ে আঁচড় কেটে ছবি আঁকছে, তার বাবার ছবি। তার বাবার ছবি না হলেও এটা যে একটা মানুষের ছবি তা বোঝা যাচ্ছে। বাবাকে মনে পরায় চোখ দুটো ছল ছল করছে।
.
খুশী একমনে ছবি এঁকে যাচ্ছে, এমন সময়
- মা, কার ছবি আঁকো?
খুশী আর্দ্র চোখে তাকিয়ে দেখে তো অবাক, এতদিন পর তার বাবার কন্ঠ শুনতে পেয়ে, বাবাকে দেখতে পেয়ে সে চিৎকার করে বলে উঠলো- "বাবা"
.
বাবা মেয়ের আদর পর্ব যেনো শেষই হয়না।
- বাবা তুমি আমারে রাইখা কই গেছিলা?
জবাব ঘুরিয়ে তার বাবা বলে,
- আর কোত্থাও যামুনারে মা
- বাবা সত্যি?
এই বলে বাবার গালে আলতো করে আরোও একটা চুমু দিয়ে দেয় খুশী।
.
খুশীর চিৎকার শুনে খুশীর মা বাইরে বের হয়ে এতক্ষণ বাবা মেয়ের ভালবাসা দেখছিলো, যা দেখে খুশীর মা কেঁদে ফেললো আর ভাবতে লাগলো আর মাঝরাতে উঠে বাবার জন্য খুশীকে কাঁদতে হবেনা।
.
বাবা মেয়ে আর মায়ের পুনর্মিলন এর পরে খুশীর বাবা খুশীর জন্য কি কি এনেছে তা দেখাতে লাগলো কিন্তু খুশীর সেদিকে কোনও মনোযোগ নেই সে শুধু তার বাবাকেই খেয়াল করছে আর অভিযোগ করছে-
" বাবা তুমি শুকায়া গেছো ক্যান? বাবা তোমার চুলের অবস্থা এমন ক্যান? বাবা তোমার চোখটা লাল লাল লাগতাছে ক্যান? "
.
বাবাকে কাছে পেয়ে ছোট্ট মেয়ে খুশী যেনো পূরো পৃথিবীটাকে নিজের করে পেলো।
.
লিখাঃ আমিম এহসান.
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧍⧧ āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž
4698
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§:⧍⧍ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ