āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧍⧧ āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4764 (2)

ভাবী পাশের রুম থেকে হাসতে হাসতে এসে বলে, “অন্তু ভাই আমার ভাগা লাগবেনা। আপনার ভাইয়ের যে অবস্থা সেই তো মনে হচ্ছে ভেগে যাবে”।
আমি তাকিয়ে থাকি। বন্ধু মন খারাপ করে বললো, “দোস্ত সকালে বাজারে গেছিলাম। ভুলে মোবাইল রেখে গেছিলাম ঘরে। সেই সময় রুনা ফোন করছিলো। বেটি আর কাম পায়নাই। ৭ বছর পর একদম সঠিক সময়ে ফোন দিছে। আমার বউরে সে আহলাদ কইর‍্যা আমার সাথে তার গোপন প্রেম কাহিনী ফাস কইর‍্যা দিছে। সকাল থেকে খুব মানসিক নির্যাতনের উপর আছি দোস্ত। চল বান্দরবান যাই।আর ভাল লাগতেছেনা”।
ভাবী চা নিয়ে এসে বললো, “ভাইয়া কেমন আছেন এখন? শরীর ভালো। আপনাকে হাটতে দেখে খুব ভালো লাগছে”।
ভাবীকে চা হাতে নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, “সব ঠিক আছে। বাচ্চা কেমন আছে?”
বন্ধু ভাবির মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো, “দোস্ত বাচ্চা মাশাল্লাহ বাপ ডাকা শিখে গেছে। সমস্যা হইলো সে এখন সবাইরেই বাবা ডাকে।আমি খুব পেরেশানীতে আছি।তোকেও ডাকবে। দাড়া দেখাই”।
ছোট্ট শিখামণি আমাকে বাবা ডাকেনি।কিন্তু কোলে প্রস্রাব করে দিয়েছিলো। আবীর এতে অত্যন্ত আনন্দিত হয়। আমাকে বারবার গর্ব করে বলে, “দেখছোস কি দুষ্টু হয়ে গেছে। একেবারে বেত্তমিজ হইতেছে একটা”।
আমি আবীরের মমতা ভরা চোখের দিকে তাকাই। তারা মেয়েটা আমার কোলে প্রস্রাব করেছে, এতেও তার আনন্দে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যাচ্ছে। আমার আর মিতির যদি একটা মেয়ে থাকতো তাহলে আমারও কি এমন বোকা বোকা অনুভূতি হতো?
আবীরকে ভাবী চলে যাওয়ার পর বললাম, “আবীর একটা কাজে আসছিলাম। তুই কি এখনো পত্রিকায় কাজ করিস?”
আবীর মাথা নেড়ে বলে, “আমি এখন কালের কন্ঠতে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছি। কি লাগবে বল?”
আমি হেসে বলি, “কিছু লাগবেনা দোস্ত। আমি একজন লোককে খুজছি। তার ব্যাপারে আমি তেমন কিছু জানিনা।শুধু একটা তথ্য জানি। তুই কি একটু কষ্ট করে, দুই বছর আগে ১০ই মে থেকে ৩১শে মে পর্যন্ত উত্তরায় ঘটা একটা নারী খুনের তথ্য দিতে পারবি?মহিলাকে খুব বাজে ভাবে হত্যা করা হয়েছিলো”।
আবীর চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, “কেন খুজছিস বল তো? রইসের সাথে ওই নারী হত্যার কোন সম্পর্ক আছে?”
আমি হাত নেড়ে বলি, “হয়তো নাই।  অথবা হয়তো ওইরাতে ও আমাকে সত্যি কথা বলেছিলো। আমার সাথে দুর্ঘটনা হয় জুন মাসের ১ তারিখ। ও বলছিলো সপ্তাহ খানেক আগে ও উত্তরাতে এক মহিলাকে আট টুকরা করছিলো। আমি সেই সংবাদটা পড়তে চাচ্ছি। সম্ভব?”
আবীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “সম্ভব। আমার আসলে মনে আছে এমন একটা ঘটনা হয়েছিলো উত্তরায় ৮ নম্বর সেক্টরে। মহিলার চোখ গালিয়ে দেয়া ছবি দেখে আমি বমি করে দিয়েছিলাম। তোকে সব তথ্য দিতে পারবো। কিন্তু একটা অনুরোধ করি। তুই একটু নিরাপদে চলাফেরা কর। যে এইসব কাজ করছে, সে মানুষ না দোস্ত। না না, I meant literally he is not a human being. তুই এই ব্যাপারে আর নিজে নিজে আগাস না”।
আমি চোখ বন্ধ করে থাকি। যতবার ওই রাতের কথা চিন্তা করি মিতির গোঙ্গানীর আওয়াজ কানে আসে। আমি আবীরকে বিড়বিড় করে বলি, “মিতির লাশটা কি তোরা আসলেও পাসনি?”
আবীর অনেকক্ষণ নীরব থাকে। তারপর আস্তে আস্তে বলে, “দেখ অনেকদিন হয়ে গেছে। তোর এই সব থেকে বের হয়ে যাওয়া উচিত”।
আমি আবার বললাম, “পেয়েছিলি?”
আবীর কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে অসহায় দৃষ্টিতে। আমি অপেক্ষা করি ওর জবাবের। ও মিনমিন করছিলো। আমি কাছে যেয়ে বসি। ও আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বলে, “লাশটা পাওয়া গেছিলো।খুব বাজে অবস্থায় মাথা ছাড়া পাইছিলাম।আমার বন্ধু তখন পুলিশের বড় পোস্টে, কেসটা ওর হাতে ছিলো। ওকে আমি অনুরোধ করছিলাম যেন কোথাও লাশের ব্যাপারে কিছু না বলে। ভাবীর পরিবার খুব অনুরোধ করছিলো যেন এই ব্যাপারে কোথাও কোন খবর না যায়। দোস্ত আমি নিজে জানাজায় ছিলাম।তুই আর এইসব নিয়ে কোন কথা বাড়াইস না। মনে কর, একটা দুর্ঘটনা হইছে”।
আমি উঠে দাড়াই। আবীরকে বলি, “তোর জন্য একটা গিফট আনছিলাম। শুভ জন্মদিন দোস্ত। আমি পরের সপ্তাহে এসে তোর কাছ থেকে উত্তরায় হত্যাকান্ডের পুরো ব্যাপারটা জানতে আসবো। যদি পারিস, মহিলার কোন আত্নীয়ের ঠিকানা জেনে রাখিস”।
বন্ধুর হাতে ঘড়ি পড়িয়ে দিয়ে আমি রাস্তায় বের হয়ে পড়ি। আজকে খুব রোদ উঠেছে। এমন এক রোদ্দুরমাখা দিনে আমি নবনীর সাথে দেখা করেছিলাম। নবনীর হাতে একটা গোলাপী রঙের ঘড়ি ছিলো। সেদিন খুব ইতস্তত বোধ করছিলাম। শখের বশে লেখালিখি করি। সে কিভাবে কিভাবে যেন আমার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করে ফেলে। তারপর কুটকুট করে কথা বলতেই থাকে। প্রথম দিকে কিছু বলতাম না। কিন্তু একটা সময় লোভ জাগলো।সত্যি ভালোবাসার, উন্মত্ত ভালোবাসার লোভ। আমি একটু একটু সাহস করে কথা বলতাম। একদিন ফোনে কথা হলো। আমাকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতো, “আপনার কি আমাকে ভালো লাগে? আমি ভয়ে ভয়ে বলতাম, না ওইরকম না। তবে ভালো লাগে। তুমি যে বাচ্চাদের মত করো ওটা ভালো লাগে”।
নবনীর সাথে আমার আর দেখা হয়নি। একদিন কথা হয়েছিলো। ও আমার পুরানো ফোন নম্বরটা ঠিক হওয়ার পর ফোন দিয়েছিলো। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, “কেমন আছেন?এখন কি সুস্থ?”
আমি হেসে বললাম, “অনেকদিন পর। হাটতে পারিনা এখনো ঠিকমত। তুমি ভালো আছো?”
ও চুপ থাকলো অনেকক্ষণ। তারপর বললো, “আমার গত মে মাসে বিয়ে হয়ে গেছে। আব্বু আম্মু এতো জোর করছিলো, পারলাম না। এখন নাখালপাড়া থাকি।আপনি আমাকে এসে নিয়ে যাবেন?”
আমি মন খুলে হাসলাম। ওকে বললাম, “নিয়ে কোথায় যাবো? গল্প শোনাতে হবে? আমি এখন আর গল্পটল্প লিখিনা পিচ্চি। যাই হোক তোমাকে শুভকামনা।খুব ভালো লাগলো তোমার বিয়ের কথা শুনে”।
নবনীর গরম নিঃশ্বাসের শব্দে খাপাছাড়া ফোন কেটে দেয়ার আওয়াজটা খুব বিচ্ছিরি লেগেছিলো। এই বিচ্ছিরি ভাবটা জীবনের সুর কেটে যাওয়ার। আমি আসলেও মরে গিয়েছিলাম। ওয়াসফির হাসিফ অন্তু মারা গিয়েছিলো। সে আর জীবিত হবেনা।
আবীরকে নিয়ে মুগদাপাড়ার একটা আধাপাকা তিনতলা বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছি। উত্তরায় খুন হওয়া মহিলার স্বামী এই বাড়িতে থাকেন। মহিলার নাম ছিলো শিরিন। স্বামীর নাম ছিলো শরীফ মাসুম। শরীফ মাসুম একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। খুব ছোট্ট চাকরী, কিন্তু তাতে একা মানুষের চলতে সমস্যা হয়না। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন। পত্রিকার লেখা অনুযায়ী সেই কালো রাতে তিনি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন জমিজমার কাজে। তার পাঁচ বছরের একটা ছেলে আছে। ছেলেকে নিয়ে তিনি কোনরকমে দিন পার করেন। আমি আবীরকে জিজ্ঞাসা করি, “ভদ্রলোকের সাথে তোর কথা হয়েছে তো ফোনে? জানিয়েছিস যে আমরা আসবো?”
আবীর মাথা নেড়ে বললো, “খুবই অমায়িক ব্যক্তি। স্ত্রীর কথা বলার পর খুব আফসোস করলো। বললো দুই বছর কেটে গেছে কিন্তু এখনো সে খুব শকের মধ্যে থাকে। চল উপরে উঠি। দোতলায় বাসা”।
আমি হাতের সিগারেটটা ফেলে উপরে উঠলাম। বাসায় কলিংবেল টিপলে ভদ্রলোক নিজেই দরজা খুলে দিলো। মোটা ফ্রেমের চশমা পড়া খুব সাধারণ দেখতে একজন লোক। গালে খোচাখোচা দাড়ি, দেখেই মনে হয় খুব বিধ্বস্ত। আমাকে দেখে এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলেন, আমিও তাকিয়ে থাকলাম। উনিই প্রথম বললেন, “বসুন।কাজের ছেলেটা এখনও আসেনি। ঘরে চা নেই। ও আসলে ওকে দিয়ে চা আনাবো। চিনি দেয়া টোস্ট বিস্কুট আছে। খাবেন?”
আবীর জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বললো, “আরেহ না না। কিচ্ছু লাগবেনা। আপনাকে বিরক্ত করার জন্য খুব দুঃখিত মাসুম ভাই। আমার বন্ধু আপনার সাথে একটু কথা বলবে”।
আমি মাসুম সাহেবকে মনোযোগ দিয়ে দেখলাম। তাকে বললাম, “আপনার স্ত্রীর নাম শিরিন ছিলো তাই না?”
মাসুম সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “জ্বী। খুব ভালো মেয়ে ছিলো। একই গ্রামে ছিলাম আমরা। মা একদিন গ্রামে গেলে প্রায় জোর করে বিয়ে করিয়ে দিলো। আমার কোন অভিযোগ ছিলোনা। ওর সাথে প্রায় চার বছর সংসার করলাম। উত্তরায় ছাদের উপর একরুমের একটা বাসায় ছোট্ট সংসার সাজালাম। সব শেষ হয়ে গেলো”।
আমি চোখ বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলাম, “যে মানুষটা ওকে খুন করলো কেন খুন করলো বলতে পারেন?”
মাসুম সাহেব আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেন, “আপনার স্ত্রীকে কেন হত্যা করেছিলো?”
আমি হাসলাম। আবীরকে বললাম, “চল যাই”।
আবীর অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “আর কিছু জিজ্ঞেস করবিনা?”
আমি বললাম, “নাহ! যা জানার দরকার জেনে গেছি”।
এরপর মাসুম সাহেবকে বললাম, “আপনার ছেলে কোথায়?”
সে মাথা নেড়ে বললো, “ও গ্রামে আছে, ঘুরতে পাঠিয়েছি”।
আবীরকে নিয়ে নিচে নেমে আসলাম। তারপর ওকে বিদায় দিয়ে মাসুম সাহেবের বাসায় আসলাম আবার। দরজা খোলাই ছিলো। আমাকে দেখে মাসুম সাহেব বললেন, “আসুন ভেতরে।ভালো আছেন স্যার?আপনার সাথে দেখা হবে জানতাম”
আমি হাত বাড়িয়ে দেই। হাসিমুখে বলি, “রইস তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়?”
রইস দরজা আটকে বললো, “ব্রাক্ষণবাড়িয়ার একটা ছোট্ট গ্রামে, নাম বললে তো চিনবেন না। আপনার সাথে আবার দেখা হয়ে সত্যি খুব ভালো লাগছে স্যার। সকালে এক প্যাকেট জ্যুস কিনেছিলাম। আপনাকে এক গ্লাস দেবো?”
আমি মাথা নেড়ে বলি, “অরেঞ্জ হলে দাও। তবে আগে বসো। তোমাকে এভাবে কাকতালীয় ভাবে পেয়ে যাবো তা আশা করিনি একেবারেই। তোমার বউ দেখতে খুব সুন্দরী ছিলো। এত সুন্দর মেয়ে মেরে ফেললা?”
রইস জুসের গ্লাস হাতে দিয়ে বললো, “স্যার জুসটা আঙ্গুরের। খুব ভালো জিনিস। ভালো না লাগলে আমার মুখে বমি করে দিয়েন”।
আমি জুসের কাপে চুমুক দিলাম। বাহিরে একটা এম্বুলেন্সের তীব্র আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। রইস খুব ঘামছে। সে খুব উত্তেজিত আমি বুঝতে পারছি। তাকে নিজ থেকেই বললাম, “ কেউ কিছু জানেনা। তুমি নিশ্চিন্তে আমার সাথে কথা বলতে পারো”।
রইস হেসে বললো, “আমি আসলে বুঝতেছিনা স্যার আপনি কি চাচ্ছেন। একটু কনফিউশানে পড়ে গেছি। বাদ দেন। আমার বউ কিন্তু স্যার খুব খারাপ মাগী ছিলো। বাচ্চাটা আমার না। আমি ওরে প্রেম করে বিয়ে করে নিয়ে আসছিলাম। সোনা দানা বহুত দিছি। মাগী একদিন খাইলো ধরা। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের এক রাতে বাসায় এসে দেখি নিচতলার মেসের এক ছেলে ড্রইংরুমে বসে আছে। ছেলে আমারে দেখে কেমন জানি আকুপাকু করে। আমি আপনার ভাবীরে কিছু বলিনাই। এরপর একদিন খাইলো রাম ধরা। আমি অফিস যাওয়ার কথা বইলা বাড়ির পাশের গলিতে লুকায় ছিলাম। একটু পর দেখি মাগীর ঘরে ওই বেজন্মাটা ঢুকছে। বুঝেনই তো কি করে। আপনাগো মতই বেজন্মা একটা। মনে এতো ব্যাথা পাইছিলাম স্যার”।
আমি জুসের খালি গ্লাসটা টেবিলে রেখে রইসের দিকে তাকিয়ে চুকচুক করলাম। ওকে বললাম, “তোমার ছেলের নাম কি রাখছো রইস?”
রইসের চোখে মুখে আমি পিতৃত্বের মায়াস্পর্শ দেখলাম। সে বললো, “ওর দাদার নামে রাখছি।ইব্রাহীম শেখ। নামের মধ্যে একটা জমিদারী গন্ধ আছেনা স্যার? আমাদের এক নবীজিও ছিলেন এই নামে?”
আমি হাসি। রইসকে বলি, “আমি আজকে উঠি।কাল পরশু একবার আসবো। দেখা করে যাবো। তোমার সাথে হয়তো একদিন একটা খুন করতেও যাবো। আজকাল রক্ত নিয়ে খেলতে খুব ইচ্ছা করে। রক্তের গন্ধ খুব মিষ্টি তাই না?”
রইস এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমাকে বলে, “তোরে তো আমি যাইতে দিবোনা। ভাব চুদাইতে আসছোস। চুপ কইর‍্যা বইসা থাক”।
আমি হেসে বলি, “আমার তোমার গল্পগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগে। আমি নিয়মিত এসে তোমার গল্প শুনবো। কোন ঝামেলা করবোনা। হয়তো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যাবে। কি বলো?”
রইস ভাবছে। ও এখন একটা ধাধার মধ্যে পড়ে গেছে। সে ভাবছে কি করবে। কিছু বলছেনা। আমি ওর কাধে হাত দিয়ে বলি, “তুমি ভান করো তুমি অনেক সাহসী। ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। তুমি অনেক ভীতু। তুমি একজন ব্যর্থ মানুষ। তোমাদের মত মানুষরা সবাইকে ব্যর্থ দেখতে চায়। কাউকে সুখী দেখলে, সফল দেখলে তারা উন্মাদ হয়ে পড়ে। আমি কিন্তু সুখী ছিলাম না। ব্যর্থ ছিলাম। আমি তোমার মতই একজন ছিলাম। বুঝতে পেরেছো?”
রইসের মুখ খুব ঘেমে গেছে। সে আসলেও ভয় পেয়েছে। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। ঠিক আমি না, আমার মাঝের পশুটা।ও জানে এই পশুটা ওকে আক্রমণ করবে। কিন্তু ঠিক কখন সেটা ওর জানা নেই। আমার ওকে নিয়ে এই খেলাটা খেলতে ভালো লাগছে।
বুধবার রাতে রাস্তা এতো ফাকা থাকবে আমার জানা ছিলোনা। এভাবে মাঝে মাঝেই রাস্তায় হাটতে বের হই। সারা রাত ঘুরে ফিরে খুব সকালে ফিরে আসি। ভালো লাগে। আজকে আমার সঙ্গী রইস। ওর সাথে প্রায় এক সপ্তাহ পর দেখা। ও আমাকে একটা পতিতালয়ে নিয়ে যাবে। সেখানে ওর পছন্দের একটা মেয়ে থাকে। প্রায় রাতে যেয়ে সে তার সাথে দেখা করে। কিন্তু কোন ছোয়াছোয়ি খেলা হয়না। সে শুধুই গল্প করে। মেয়েটার নাম আমিনা। এটা অবশ্য সঠিক নাম না। কিছু কাস্টমার পুত পবিত্র নাম পছন্দ করে তাই তাকে এই নাম দেয়া হয়েছে। আমিনাকে দেখে আমি খানিকটা চমকে গেলাম। আমার ধারণা ছিলো পতিতালয়ের মেয়েরা খুব একটা সুশ্রী হয়না। আমার ধারণা সঠিক না। রইস আমাকে আমিনার সাথে দেখা করিয়ে বলে, “স্যারের সাথে আগে তো মনে হয় তোমার দেখা হয়নাই বেগম। সে একজন অতি শিক্ষিত ভদ্র সুশীল ব্যক্তি। তুমি চাইলে আমি তার সাথে তোমাকে রাত কাটানোর অনুমতি দিতে পারি”।
আমিনা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকায় থাকে। তারপর নির্লিপ্ত ভাবে বলে, “আপনার পায়ে কি হইছে। ঠিকমত হাটতে পারেন না ক্যান?”
আমি হেসে রইসের দিকে তাকায় বলি, “কুত্তা কামড় দিয়েছিলো তাই না রইস?”
রইস হাসি ফিরিয়ে দিয়ে বলে, “স্যার আমার মতই রহস্যময় মানুষ।তাকে বুঝতে পারতেছিনা। তাই পাশে নিয়া ঘুরতেছি। তুমি উনাকে পায়ে ধরে সালাম দেও”।
আমিনা আমাকে সালাম দিলো না। অন্যদিকে তাকায় বললো, “আজকে কি আপনে আসবেন ভেতরে না আপনার স্যাররে তুষ্ট করতে হইবো?”
আমি রইসকে ইশারায় ভেতরে যেতে বলে পাশের একটা নোংরা দোকানে বসে সস্তামানের সিগারেট ধরাই। দোকানের ভেতরে একটা ১৩ বছরের ছেলে রুপা গেঞ্জী গায়ে দিয়ে বসে আছে। একটু পরপর সে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞাসা করলো, “চা খাবেন?”
আমি মাথা নাড়লে সে একটু কাছে বসে বললো, “ভালো কিছু নতুন মাইয়া আসছে। আমি দেখায় দিলে কিছু বখশিস দিয়েন”।
আমি ওর হাতে ৫০ টাকার একটা নতুন কচকচে নোট দিয়ে বললাম,”আজকে শরীরটা ভালো না। অন্য আরেকদিন আসবো। তখন দেখায় দিও”।
ছেলেটা চলে গেলো। একটু পর আবার এসে বললো, “কিছু ভালো হিজড়া আছে। ডাইক্যা দিমু?”
আমি হাসি। এই হাসির অর্থ হ্যা অথবা না যেকোন একটা হতে পারে। ছেলেটা বুঝতে পারছেনা কি করবে। সে আবার তার চা বানানোর কাজে মন দিলো।
রইস দুই ঘন্টা পরে আমার কাছে আসলো। এসে বললো, “স্যার একটা কথা জিজ্ঞাসা করি”।
আমি বলি, “করো”।
রইস হাটে। আমিও রাস্তা ধরে হাটছি। সে ইতস্তত বোধ করছে কোন কারণে। আমাকে হাত মুচড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনি আমার কাছে কি চাইতেছেন?”
আমি রইসের কাধে হাত দিয়ে বলি, “কিছু না। ভয় পাওয়ার কিছু নাই তোমার। আমি ল্যাংড়া মানুষ, অনেক কষ্টে হাটতে হয়। চোখ একটা প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে। নিজে তোমার কিছু করতে পারবোনা, অন্য কাউকেও কিছু করতে দিবোনা।আমার থেকে তোমার কি বিপদ হবে বলো?”
রইস একটা সস্তা সিগারেট ধরায়। এটার গন্ধ আমার সহ্য হয়না। আমি ভদ্রতা করে তাকে কিছু বলিনা। সে বাতাসে ধোয়া ছড়িয়ে দিয়ে আমাকে বলে, “ছোটকালে বাপ মা বলতো খারাপ সংগে না যাইতে। বলতো আমি খারাপ হইয়া যাবো। আমি বাবা মার কথা শুনছি, মান্য করছি। কিন্তু আজকে আমি কিন্তু অনেক খারাপ মানুষ তাই না?”
আমি রাস্তার পাশের আইলে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আকাশটা একদম কালো হয়ে আছে। আমার কালো আকাশ ভালো লাগেনা। রইসের দিকে তাকিয়ে বলি, “খারাপ ভালো আপেক্ষিক ব্যাপার। কারো চোখে তুমি খারাপ হইতেই পারো, কারো চোখে অনেক ভালো মানুষ”।
রইস খেক খেক করে হাসে এবং কাশে। তার চোখে আলো ঝিলমিল করছে। আমাকে বলে, “ভালো বলছেন অন্তু সাহেব। আপনারা জ্ঞানী গুণী মানুষ, আপনারা সবসময়েই ভালো কথা বলেন।তবে আমি কিন্তু জানি আপনে কেন আমারে পুলিশে ধরায় দেন নাই। আপনে আমার কাছে জানতে চান কিছু তাই না?”
আমি মাথা নাড়ি। তাকে বলি, “জগত সংসার ভালো লাগেনা। সব ছন্নছাড়া লাগে। আমার ভেতরে একটা জন্তু বাস করে এখন বুঝলা। ঘুমায় ছিলো। তুমি জাগিয়ে দিয়েছো। তোমাকে ধন্যবাদ”।
রইস আমার দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমাকে বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার পর বলে, “আমার ছেলেটা কই? খানকির পোলা আমার ছেলেরে গ্রাম থিকা কিডন্যাপ করছোস?”
আমি হাসি। তাকে বলি, “ রইস একটা ব্যাপার খেয়াল করোনি হয়তো। আমি কিন্তু মোটামুটি বেশ ধনী মানুষ। তোমার সব খোজ নিতে আমার খুব একটা তাই কষ্ট হয়নি। আমার মালিবাগের ফ্ল্যাটে চলো। তোমার ছেলে সেখান যত্নে আছে। রাত বেশি হয় নাই। দেখো একটা সিএনজি ভাড়া করতে পারো কিনা”।
রইসকে নিয়ে আমি যখন আমার ফ্ল্যাটে পৌছালাম তখন রাত প্রায় আড়াইটা বাজে। রইস রাগে হিসহিস করছে। সে আমার রক্ত চায়। আর আমি তাকে নিয়ে খেলতে চাই। তাকে বাসায় এনে ড্রইংরুমে চেয়ার টেনে বসতে দেই। বলি, “ক্ষুধা লাগছে তাই না? কিছু খাবে?”
রইস শান্ত হয়ে চেয়ারে বসে বলে, “ছেলেটারে দিয়া দেন। নিয়া যাই। এরপর আমি আপনারে চিনিনা, আপনেও আমারে চিনেন না”।
আমি ফ্রিজ থেকে তরকারী বের করে ওর সামনে রেখে বললাম, “গোশত আছে ভালো। কালকে রাতেই রান্না করছি। সাথে গরম ভাত। সালাদ কেটে দিচ্ছি। বুঝলা প্রায় দুই বছর ফ্ল্যাটে আসিনাই। কালকে এসে দেখি দারোয়ান তার পরিবার নিয়ে আমার এখানে বাস করা শুরু করছে। আমি পাছায় লাথি দিয়েছি দারোয়ানের। ওর বউ খুবই শরমিন্দা হয়ে আমাকে বলে, ফ্ল্যাটটা তারা ছেড়ে দিচ্ছিলো, গরম পানির নাকি সমস্যা”।
রইস হঠাৎ করে সামনে এসে আমার গলা টিপে বলে, “ওই ল্যাংড়ার পুত আমার পোলারে আন, তোর গরম পানি পিছে দিয়া ভরমু”।
আমি ওর হাতটা সরাই। ওকে শান্ত হতে বলি। আমার খুব হাসি পাচ্ছে। রইসের যন্ত্রণা দেখতে ভালো লাগছে। ওকে বলি, “রইস ভাত খাও। তোমার ছেলেকে আমার দরকার নাই ভাই। আমি ওকে দিয়ে দিবো। ও আমার কাছেই আছে। ভাত খেয়ে ছেলেকে নিয়ে চলে যাও। রাগ করলে বা আমাকে মেরে ফেললে ছেলেকে আর পাবেনা। সেটা কি আর ঠিক হবে?”
রইস চিৎকার করে ওর ছেলেকে ডাকে, এই ঘর ওই ঘর দৌড়িয়ে বেড়ায়। আমি ওভেনে ভাত তরকারী গরম করি। রইস ঘর্মাক্ত শরীরে আমার সামনে এসে বলে, “ভাত দে। ভাত খামু”।
আমি ওকে হাতে ধরে আবার চেয়ারে বসিয়ে নিজেই ভাত বেড়ে খেতে দেই। রইস সালাদ চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।গোশতের তরকারী তার পছন্দ হয়নাই। আমি ওকে তবুও চার পিস গোশত দিয়ে বললাম, “রইস তরকারীটা ভারত থেকে আনা মশলা দিয়ে রান্না করেছি। আহমেদাবাদের বিরিয়ানীর মশলার গন্ধ পাবে। পেট ভরে খাও”।
রইস চুপ করে খেয়ে এসে আমার পাশে বসে বললো, “কই?”
আমি ওর পাশের চেয়ারে বসে বলি, “ছেলের পেটের মাংশ কিছু তো তুমি খেয়ে ফেলছো। আমি কিছু খেয়েছি আগেই। পুরা ছেলে দিতে পারবোনা। চলবে?”
রইস তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে। আমিও তাকিয়ে থাকি। ও খেয়াল করার আগেই আমি ওর মাথায় প্রচন্ড জোরে সামনে থাকা কাচের জগটা দিয়ে বাড়ি মারি। কিছু বুঝে উঠার আগেই কাটা গাছের মত সে ঝপ করে পড়ে গেলো। রইস কি জানে আজকে ওর সাথে আমার শেষ খেলা?
রইসকে খুব তাড়াতাড়ি আমি একটা চেয়ারের সাথে বেধে ফেলি। ওর কপাল চুইয়ে এখনো রক্ত পড়ছে। আমার বেডরুমে ব্যান্ডেজ আছে। লাগাতে ইচ্ছা করছেনা। কি দরকার।
ওর জ্ঞান ফিরলো পাক্কা একঘন্টা পর। আমার দিকে সে তাকাতে পারছেনা। আমি ওর পাশে বসে চুরুট টানছি। ও ইশারা দেয় ওকে একটা চুরুট দেয়ার জন্য। আমি কিছুক্ষণ ভেবে ওর ঠোটে একটা চুরুট গুজে দেই। ওর হাত বাধা। এতে মনে হয় ওর কোন যায় আসেনা।  একটু পর ওকে বলি, “মাথাটা ভার লাগছে রইস?”
ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখে কোন অনুভূতি নাই। মিনমিন করে শুধু বললো, “রান্নাটা ভালো হয়নাই অন্তু সাহেব”।
আমি ওর কথায় সায় দেই। ওকে বলি, “রইস ছেলেটা তো তোমার না। ওর প্রতি তোমার মত জানোয়ারের এত মায়া কেন? তোমার এই দুর্বলতা বুঝতে আমার বেশ কিছুদিন সময় লেগেছে। যাকে মায়া করো তাকে নিয়ে কষ্ট দিলে খুব খারাপ লাগে তাই না?”
রইস নিস্পৃহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি আবার হেসে বললাম, “আমি কিন্তু ঘটনা জানি। ছেলেটা তোমার সাথে যেই মহিলার বিয়ে হয়েছিলো তার আগের ঘরের। তুমি নিজে নপুংশক। ছেলেটার যৌনাংগ তুমি কেটে দিয়েছিলে যেন ও বড় হয়ে ঠিক তোমার মত একজন হতে পারে, তাই না? ঠিক তোমার মত বৃহন্নলা!”
রইস আমার মুখে থুতু দেয়।আমাকে চিৎকার করে বলে, “তুই একটা শূয়োরের বাচ্চা। তুই একটা জারজ”।
আমি বেসিন থেকে মুখ ধুয়ে এসে আবার ওর পাশে বসে বলি, “থুতু মেরোনা রইস। আমি এরপর এমন করলে তোমার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো। আজকে তোমার আর আমার অনেক গল্প হবে। বেশ না?”
রইস চোখ নামিয়ে রাখে। আমাকে বলে, “আমি এইসব ডরাই না। আমি তোর মত সাদা কুত্তার বাচ্চা না। আমার কোন ভয় নাই”।
আমি রইসের দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গ করে হাসলাম। ওকে বললাম, “রইস আমি তোমার গ্রাম আলোকদীতে গিয়েছিলাম। তোমার সাথে সেদিন দেখা হওয়ার দুদিন পরেই গিয়েছিলাম। তোমার মা খুব ভালো মানুষ। আমাকে বেশ খাতির যত্ন করেছে। আমি কিন্তু তোমার ব্যাপারে সব জানি। খুব ছোটকালে তোমার চাচা তোমার জিনিস কেটে দিয়েছিলো,তাই না?তারপর তোমার বাপকেও ইটের ভাটায় তোমার সামনে পুড়িয়ে মেরেছিলো। কেমন লেগেছিলো তোমার?”
রইস এখন শান্ত হয়ে বসে আছে। কিন্তু ওর ভেতরটা অনেক ছটফট করছ। আমি ওকে আবার বলি, “তোমাকে যদি এখন আশুলিয়ায় নিয়ে একটা জ্বলন্ত ভাটার মাঝে রেখে আসি কেমন হবে? মনে আছে তোমার বাবার পোড়া মাংশের গন্ধটা কেমন ছিলো?মনে নাই?”
রইসের মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। আমাকে গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে বললো, “তোর বউরে কেন মারছি জানিস? তোর বউরে যে আমি আদর কইর‍্যা তিতির ডাকতাম জানোস?”
আমি আগ্রহ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। ওর চুরুটটা অনেক আগে নিভে গেছে। আমি ওর পাশে বসে আবার চুরুটটা জ্বালিয়ে দেই। ওকে বলি, “আমি শুনছি। বলতে থাকো”।
রইস হিংস্র চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, “তোর বউ আমার প্রেমিকা ছিলো বুঝছোস। একসাথে আমরা থিয়েটার করতাম। একদিন ওরে প্রস্তাব দিলাম। কবিতা শুনাইলাম। কার কবিতা জানোস? কুত্তার বাচ্চা! দুরান্তে দেইলি আলগিয়েরির নাম শুনছোস। তোদের মত অল্প জানা কুত্তারা ওরে ডাকে দান্তে। আমি দান্তের কবিতা ধার কইর‍্যা ওরে চিঠি লিখছি দুইরাত ভাইব্যা, মন উজাড় কইরা শুনাইছি। আমারে কইলো এফেয়ার আছে। স্যরি। গুষ্টি মারি আমি তোর স্যরির।সব বেশ্যা। ওর কোন চাচাতো ভাইয়ের সাথে এফেয়ার ছিলোনা? আর বিয়া করলো কারে? তোরে।ক্যান? পয়সা আছে তোর। ভালো চাকরী করোস। তোর বউ যে কত হারামী ছিলো, জানোস?আমি কতবার ওর নাভীতে হাত দিছি জানোস?”
আমি ড্রিল মেশিন দিয়ে ওর গালে একটা ছোট্ট ফুটো করি। মিতিকে নিয়ে এমন নোংরা কথা শুনে আমার রাগ হচ্ছিলো। তবে কাজটা করতে আমার কষ্ট হয়েছে। হাজার হোক, মানুষের চামড়া। মানুষের রক্ত। ও গোঙ্গাচ্ছে। এর মধ্যে ফজরের আযান দিয়ে দিয়েছে। তারপর ওর পাশে বসে অপেক্ষা করি। একটু পর বলি, “রইস তুমি ঢাকায় এসে অনেকগুলো থিয়েটারে কাজ করেছো আমি জানি। তোমার ব্যাপারে যতটুকু জেনেছি তুমি খুব ব্যর্থ থিয়েটারকর্মী ছিলে। খুব বেশিদিন কোথাও টিকতেনা। কিন্তু এটা তো তোমার শুধু শখ ছিলো। আমার ভুল না হলে তুমি রসায়নে একটা মাস্টার্স করেছিলে। বিষয় ছিলো ভৌত রসায়ন। তোমার একটা পেপার ছিলো প্রোটিন ড্রপলেট নিয়ে। বেসরকারী একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছিলে। সব ছেড়ে পরে একটা স্কুলে চাকরী নিলে।কেন?”
রইস মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে লালার মত। শরীর থেকে রক্ত অনেকটা ঝড়ে গেছে। আমি ওর মুখে লাথি দিয়ে বললাম, “কথা বলো বাবু। কথা তোমাকে বলতেই হবে”।
রইস আমার দিকে ঘাড় বাকিয়ে তাকিয়ে বললো, “আমার নাম আনোয়ার পাশা। এইটা তো জানো তাই না?আমি তোমাদের মত ছিলাম, কিন্তু তোমাদের সমাজ আমাকে মেনে নেয়নাই। দুইটা বিয়ে করছিলাম। বিয়ের রাতে আমার সমস্যা জেনে দুইজনই পালায় গেলো। আমার সবসময় অন্য মানুষ হতে ইচ্ছা করতো।সাধারণ তোমাদের মত মানুষ। তোমাদের মত কাউকে ভালোবাসতে, হাত ধরে মনের কথা বলতে ইচ্ছা করতো। একসময় থিয়েটারের দিকে ঝুকলাম। তোমাদের মত সাধারণ মানুষের চরিত্রে মিশে যেতাম। নিজেকে তোমাদের মত স্বাভাবিক মানুষ বানায় অভিনয় করতে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু আমাকে থিয়েটারের লোকজন বলতো, হবেনা আমাকে দিয়ে। অভিনয় ভালো হয়না।ভুয়া কথা, বাজে কথা। আমারে কেউ চিনতেই পারলোনা। ঠিক করে বলো তো অন্তু মিয়া আমি কি ভালো অভিনয় করিনা? একদম চরিত্রের সাথে মিশে যাই না?তোমার বউরে আমি সত্যি খুব চাইতাম। আমাকে ও ধোকা দিলো। এতো ভালোবাসলাম, কিন্তু গোনায় ধরলোনা। মনটা খুব খারাপ লাগছিলো। তোমাদের দূর থেকে দেখতাম। ইচ্ছা করতো প্রতিদিন তোমার শরীরটা পিস পিস করে কাটি। তোমার বউরে মারার আগে ১৬টা খুন করছি। প্রথম খুন করছি আমার তৃতীয় বউকে। সে আমার সমস্যা জাইনাও অনেক দিন টিক্কা গেছিলো। মেয়ে ভালো ছিলো, কিন্তু একদিন দেখি ওর পুরান জামাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতেছে। আমার প্রেম তার ভালো লাগেনা। শরীরের টান ধরছে। পুরান জামাইরে লাগবো। ধরে আট পিস করছি। কি শান্তি! আমার বেস্ট ওয়ার্ক। গর্ব করে বলার মত। তোমাকেও বলছিলাম, ভুলে হিন্ট দিয়া দিছি। ওখান থেকেই আমাকে খুজে পাইছো তাই না? একটু flaw হয়ে গেছে। আমি তো জানতাম না তুমি বারান্দা থেকে লাফ মারবা, আবার বাইচ্যাও যাবা। যাই হোক, কসম খোদার এর পরের বার আর এমন হবেনা”।
আমি আনোয়ার পাশার দিকে তাকিয়ে থাকি। লোকটা প্রচন্ড অসুস্থ। ওকে দেখলে কে বলবে এই সুস্থ সরল চেহারার লোকটা এমন একটা ভয়ংকর জানোয়ারকে ভিতরে নিয়ে আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিড়বিড় করে বললো “অন্তু আমি ভালো অভিনয় করি, ঠিক কি না? যখন যেমন ইচ্ছা তেমন মানুষ হয়ে যাইতে পারি। ঠিক করে বলো, তোমাকে প্রথমদিন যা যা বলছিলাম তুমি একদম বিশ্বাস করছিলা না? পারবা আমার মত নানান চরিত্র হইয়া ঘুরে বেড়াইতে? নিজেই নিজের আত্নার শান্তির ব্যবস্থা করতে?”
আমি ওর সামনে থেকে উঠে চলে যাই। আবীরকে ফোন দিয়ে পুলিশ নিয়ে আসতে বলি। আমার এখন ক্লান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে সময়টাও অনেক ক্লান্ত। লোকটা অর্ধমৃত হয়ে আছে। পুলিশ আসার আগে তার বাঁচার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে চুক চুক করি। একটা শেষ কাজ বাকি আছে। রইস আমার দিকে তাকিয়ে হাপাচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে তার আরেকটু কাছে এগিয়ে যাই।
পরেরদিন অনেকগুলো নিউজপেপারে আনোয়ার পাশা ওরফে রইসকে নিয়ে খবর বের হলো। তাতে আকর্ষণীয় একটা অংশ পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে দেয়া হলোঃ

আনোয়ার পাশা তার প্রতিবেশীদের নিকট খুবই নির্ঝঞ্জাট মানুষ ছিলেন। তার বলা উদ্ধৃতি থেকে জানা গেছে, সে আজ পর্যন্ত ১৬টি খুন করেছে। সবাই নারী ছিলো, এবং সবগুলো খুনই অত্যন্ত বিভৎস ও অমানবিক। গোপন সূত্র থেকে খবর পেয়ে তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলেকেও গতকাল রাতে ফকিরাপুল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছেলেটি মানসিক এবং দৈহিক বৈকল্যের শিকার। আনোয়ার পাশা কেন এভাবে একের পর এক খুন করেছে তা জানা যায়নি। ধারণা করা যায়, সে মানসিকভাবে সুস্থ ছিলোনা। তাকে গতকাল ভোর সাতটায় মালিবাগের এক ফ্ল্যাট থেকে অভিযান চালিয়ে আহত অবস্থায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার ডান পা আঘাতপ্রাপ্ত ছিলো এবং মুখ থেকে জিহবা ছিড়ে ফেলা হয়েছিলো। ফ্ল্যাটের মালিক ওয়াসফির হাসিফ এসময় বাসার বাহিরে ছিলেন। ভোরবেলা চাচার বাসা থেকে ফেরার সময় ফ্ল্যাটের ভেতর চিৎকার শুনে উনি মালিবাগ থানায় ফোন করেন। পুলিশ আনোয়ার পাশাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সে পুলিশকে বলে, সে একজন মানবাধিকার কর্মী। মানব অধিকার সমুহত রাখাই তার জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

আমি পেপারটা হাতে নিয়ে চুপ করে বসে থাকি প্রিয় বারান্দায়। হঠাৎ করে একদিন আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো, হঠাৎ করে আমার এমন অদ্ভূত এক পশুর সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো। আচ্ছা মানুষ ও পশুর মধ্যে আমরা যে দাগ কেটে পার্থক্য করি তা কতটা যৌক্তিক? আনোয়ার পাশা নানান চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে তুষ্ট রাখতো, বেঁচে থাকতে চাইতো। কিছু চরিত্রে সে পশুর মতই অমানবিক ছিলো। এতে তার কোন গ্লানি ছিলোনা, আত্নদহন ছিলোনা। সে সুখী ছিলো, সমাজের চোখেও অতিসজ্জন ব্যক্তি।এমন বহুরূপী কেউ যখন হঠাৎ করে আমার মত নয়টা পাচটা অফিস করা অসুখী মানুষের ভান ধরে বেঁচে থাকা কারো জীবনে দেখা দেয়, তখন সাধারণ মানুষটা কি আর সাধারণ থেকে যায়? আমি আনোয়ার পাশাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। সে হয়তো আমার মত জীবন পেলে এমন পশু হয়ে যেতোনা। আর আমি তার মত কদর্য সময়ের স্পর্শ পেলে হয়তো, এমন একজনই হয়ে যেতাম। আমরা তাকে অসুস্থ মানসিক ভাবে পঙ্গু বলে মেনে নিয়েছি, অথচ এমনটাও কি হতে পারে সে আমাদের মতই শুধু সুখ খুজে বেড়াতো? আমাদের সুখের জায়গাটা তার থেকে ভিন্ন ছিলো, সমাজ ব্যবস্থায় স্বীকৃত ছিলো। তাই দিনের শেষে আমরা সুস্থ সাধারণ, আর সে শুধুই একজন পশু।তাই না?

************************************************************
একটা অসুস্থ সময়ে একটা অসুস্থ মানুষকে নিয়ে খুব আপত্তিকর একটা হাবিজাবি লেখা। কেউ পাঠ করে থাকলে তার ভালো লাগবে বা লাগতেই হবে এমন কোন কারণ নেই। আমি বারবারই এই কথাটা বলি যে আমি লিখি শুধু নিজের জন্যই। কোথাও প্রকাশ হতে হবে, কারও ভালো লাগতে হবে তার জন্য লেখা হয়না। অন্তর্জালে নিজের মুখছবিতে প্রকাশ করি কারণ এই লেখাগুলো কোন কাগজে অনুলিপিত হয়নি। সংগ্রহে রাখা দরকার এই স্বার্থেই এমনটা করা। কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য যেন আমার লেখা পড়ে কেউ যেন প্রত্যাশা না রাখেন।

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ