āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧍⧧ āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4764 (1)

বিভাজন
সাদ আহাম্মেদ

“তোমার তো আমার সাথে এমনটা করার কথা ছিলোনা তাই না? এমন করতে পারলা?”
আমি মিতির দিকে তাকিয়ে থাকি। মিতিকে আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিনা। মিতি আমার দিকে তাকাচ্ছেনা একবারও।তাতে অবশ্য ভালোই হয়েছে। যেই কবার ভুল করে তাকিয়েছে আমি প্রকান্ড একটা ঘৃণা দেখেছি। ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মত ঘৃণা, একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এমন ঘৃণা করতে পারে জানা ছিলোনা। আমি বিড়বিড় করছিলাম। বলার আসলে কোন ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না। আমার সাথে নবনীর কথা হয় ফেসবুকে বেশ কয়েকদিন হলো। কেন যেন এই ব্যাপারটা আমি মিতিকে বলিনি। আচ্ছা আমার মাঝে কি নবনীকে নিয়ে সত্যি সত্যি কোন ফ্যান্টাসী ছিলো? তার সাথে আমি কি কোন সম্পর্ক...
নাহ! কিছু ভাবতে ইচ্ছা করছেনা। মিতি আমার পাশ থেকে উঠে গেলো। রাত্রি ৯টা ৩১ বাজে। আমি দশটার মধ্যে সাধারণত ঘুমিয়ে পড়ি, কিন্তু আজকে হয়তো সারারাত ঘুম আর আসবেনা। খেয়াল করলাম আমি লজ্জা পাচ্ছি, নিজের প্রতি বিরক্ত হচ্ছি। কি করতে কি হয়ে গেলো। নবনী নামে মেয়েটার সাথে আমার তো দরকার ছিলোনা এতো কথা বলার। মিতি কান্না থামিয়ে খুব তাড়াহুড়া করে একটা ছোট্ট ব্যাগ গুছানো শুরু করলো। আমি একটু সাহস করে ওকে বললাম, “ভুল হয়ে গেছে। তেমন কিচ্ছু না। আমি ওকে ঠিকমত চিনিই না। দেখাও হয়নি সেভাবে। আমি তোমার সাথে কোন দুই নম্বরী করিনি। বিশ্বাস করো”।
মিতি আমার সামনে দাড়িয়ে সেই ভয়ংকর ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে থাকলো। তারপর কাপাকাপা গলায় বললো, “-আচ্ছা নবনী সেদিন যখন হঠাৎ করে তোমার হাতে হাতটা লেগে গেলো তখন কেমন যেন লেগেছিলো- এই কথাটা তুমি ওই মাগীকে বলছো না? বলো, বলছো না? আমার হাত তো এখন ধরতেই চাওনা। শেষ কবে তুমি আমার হাত ধরে একটা ভালো কথা বলছিলা? ওই মেয়ের সাথে একটা টাচ হলো, এতে কেমন কেমন লাগা শুরু হয়ে গেলো। তোমাদের জাতটাই খারাপ। তোমার বাপ ছিলো একটা চরিত্রহীন, তুমি তো তারই ছেলে, তাই না! এই কাজই তো করবা”।
আমি আমতা আমতা করে বলি, “তোমার পায়ে ধরি। একটু শান্ত হও। বিশ্বাস করো, আমার সাথে ওর কিচ্ছু হয় নাই”।
মিতি আমার গলা চেপে ধরে বলে, “তুই একটা কুত্তা। তুই কুত্তা, শূয়োর। তুই মানুষ না। নিজেকে যেয়ে আয়নায় দেখো। দেখো একবার চেহারাটা। ছি! আমার বমি আসতেছে। তোর মত জানোয়ারকে আমি ঘৃণাও করবোনা কখনো। তুই এটারও যোগ্য না”।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার জগতটা দুলছিলো। কেন এমন হলো। এমনটা তো হওয়ার কথা না। চার বছর ধরে সংসার করছি। আমার তো মিতির সাথে এমন করা ঠিক হয়নাই। আমি আসলেই খারাপ মানুষ। অনেক অনেক খারাপ। খুব অনুশোচনা হচ্ছে। একবার মনে হলো ও বাসা থেকে চলে যাওয়ার আগে ওর পায়ে ধরি। দু একবার স্ত্রীর পায়ে ধরলে পুরুষ মানুষের কোন অপমান হয়না। তারপর অদ্ভূতভাবে খেয়াল করলাম আমার ওই ইচ্ছাটা মরে গেছে। এর আগেও আমাদের ঝগড়া হয়েছে। ও চলে যেতে চেয়েছে বাসা থেকে। আমি ওকে অনেক কিছু করে মানিয়েছি, বুঝিয়েছি, শান্ত করেছি। কিন্তু আজকে কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। আমি সেই টানটা বোধ করছিনা। আমার মনে হচ্ছে ও চলে গেলেই হয়তো ভালো হয়। এটাই হওয়া উচিত।
মিতি আমার কাছে এসে আবার বলে, “তুমি আমার সাথে এইরকম করলা কিভাবে বলো তো?”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, “মিতি আমার ভালোবাসার দরকার ছিলো। তুমি আমাকে ভালোবাসোনা এটা আমি যেমন জানি তুমিও তেমন জানো। আমি রাস্তায় রাস্তায় যেয়ে ছ্যাচড়ামি করে বেড়ায়নি, ওই সাহসটাও আমার নাই। যার মেসেজ দেখছো, ও খুব ভালো মেয়ে। আমার সাথে পরিচয়ের পর থেকে খুব ভালোবাসার কথা বলতো। আমার ভালোবাসার কথা শুনতে ভালো লাগতো। তুমি সবসময় তোমার রাগ, তোমার অধিকার, তোমার চাহিদা নিয়ে ব্যস্ত ছিলা। আমাকে বোঝোওনাই কখনো, ভালোও বাসো নাই। আমিও মানুষ, হয়তো খুব নিম্ন প্রকৃতির।কিন্তু আমারও কারো সাথে দুই একটা কথা বলার দরকার আছে, নিজের কথা। তোমার সাথে...”
মিতি আমার কথা শেষ করতে দিলোনা। ও আমাকে থাপ্পড় দিয়ে বললো, “এইজন্য ফস্টিনস্টি করে বেড়াবা।কোথাকার কোন মাগীর সাথে হাত লাগালাগির...তুমি একটা অমানুষ। এইরকম একটা মানুষ যার মধ্যে এই বোধশক্তিটাও নাই যে সে অপরাধ করছে”।
আমি শান্ত কন্ঠে বললাম, “মিতি তুমি চলে যাও। আমি খুব খারাপ মানুষ। তোমার কথাই ঠিক। আমার মত মানুষকে তোমার ছেড়ে চলে যাওয়াই উচিত। আমার সাথে থাকলে না তুমি, না আমি সুখী থাকবো। তোমার আমার মধ্যে হচ্ছেনা!”
মিতি সোফায় বসে পড়লো। আমাদের কেনা নতুন নীল রঙের সোফাটা। ড্রইং রুমে জায়গা হচ্ছেনা তাই বেডরুমে নিয়ে এসেছি। আমি মাঝে মাঝে এটাতে বসে জানালার বাহিরে তাকিয়ে থাকি। আমার বাসা থেকে একটা বিল্ডিং পড়েই নবনীরা থাকে। মাঝে মাঝে ওকে জানালা দিয়ে দেখতাম। ভালো লাগতো। মনে হতো আবার বয়সটা ১৮-১৯ হয়ে গেছে। সেই রকম একটা ভয় ভয় অনুভূতি, কেমন যেন ঘোর লাগা, কিছুই ভালো না লাগা।
মিতি কাঁদছে। আমার খারাপ লাগছে। বেশি খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে একটু পর মিতি বুঝতে পারবে ওর আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ওর মা ওর ভাইয়ের বাসায় থাকে। ওর ভাবী ওকে দুই চোখে দেখতে পারেনা। বাবা মারা গেছে তো অনেক বছর হয়েছে। আমি ওর জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেকে চিন্তা করি। আমি খুব অসহায় বোধ করতাম। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলি, “মিতি একটা কাজ করি। আমি চলে যাচ্ছি বাসা থেকে। আমি ভুল করছি, আমার এখানে থাকার তো কোন আর প্রয়োজন নাই”।
মিতির কান্না থেমেছে। মাটির দিকে তাকিয়ে ও খুব জোরে জোরে পা ঘষছে। আমার মনে হলো ওর আচরণ ধীরে ধীরে খুব অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। গরগর করে বললো, “তোমার কেনা ফ্ল্যাট, তুমি থাকবা। আমাকে করুণা করবানা অন্তু।আমি দরকার হলে শরীর বেঁচে খাবো, তারপরও তোমার মত শূয়োরের করুণা আমার লাগবেনা”।
আমি ওকে কিছু বলার ভাষা আর খুজে পাচ্ছিনা। মিতি যেতে পারছেনা। আমি চাচ্ছিনা এই রাতে এমন ভাবে ও চলে যাক। ইশ! কি খুশি ছিলাম যখন ওর সাথে বিয়ে হলো। ও খুশি ছিলো কি? ছিলো হয়তো। বিয়ের পর তিনদিন লজ্জায় আমরা ঠিকমত কথাই বলতে পারিনাই। এরেঞ্জ ম্যারিজ ছিলো। যদিও কিছুটা পূর্বপরিচিত। খুব বেশি না সেটা। হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে গেলো। ঠিকমত জানা শোনা কিছুই হলোনা। এখন মনে হয় এমনটা ঠিক হয়নাই। বিয়ের কিছু দিন পর থেকে আমার মনে হলো, আসলে আমরা কাজটা ঠিক করিনি। ও অন্যরকম, আমার সাথে ওর হয়না। আমার বেশিরভাগ কাজ, কথাবার্তাই ওর বিরক্ত লাগে। আমার কিছুই ওর ভালো লাগেনা। প্রথম প্রথম চেষ্টা করেছি একটা ভালো বোঝাপড়ার, তারপর একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছি। কি দরকার! আমি নাহয় আমার মত থাকি, ও ওর মত থাকুক। আমাদের একসাথে থাকাটাই একটা অর্থহীন বোঝার মত হয়ে গিয়েছিলো।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে দরজায় কে যেন কলিংবেল বাজালো। দরজা খুলে দেখার মত শক্তি বা মানসিকতা কোনটাই আমার ছিলোনা। এক মিনিট নীরবতার পর আবার কলিংবেল বাজলো। মিতি তখনও ঝিম মেরে বসে আছে। আমি উপায় না দেখে ধীরে ধীরে দরজার কাছে যাই। জিজ্ঞাসা করি, “কে?”
একটা ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠ থেকে উত্তর আসলো, “আপনার একটা পার্সেল ছিলো স্যার”।
খুব অদ্ভূত লাগলো। এতো রাতে কেউ পার্সেল দিতে আসে। আমার বেশি কিছু চিন্তা করার মানসিকতা ছিলোনা।আস্তে করে দরজা খুলি। সিড়ির লাইট বন্ধ ছিলো। তাই কাউকে দেখলাম না। সাড়া না পেয়ে দরজার বাহিরে মাথা বের করে উঁকি দিলাম। ঠিক তখন মনে হলো চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। তারপর একটা প্রলয়ংকারী ঝড় কোথা থেকে কিভাবে আসলো বুঝলাম না। কি প্রচন্ড যন্ত্রণা। আমি কি মরে যাচ্ছি? মনে হয়। ঝপ করে পড়ে গেলাম। এরপর সব অন্ধকার। আর কিছু মনে পড়ছিলোনা।কিচ্ছু না।
জ্ঞান ফিরে আসার পর চারদিক কেমন শো শো আওয়াজ শুনছিলাম। কে যেন খুব কাছ থেকে চিৎকার করছে । পাশ থেকে একজন যেন বললো, “স্যার আপনার চশমাটা খুব সুন্দর। ব্র্যান্ডের মনে হয় তাই না?”
আমি চোখ খুলতে পারছিলাম না। ব্যথায় কুকড়ে যাচ্ছিলাম বারবার, আমার চোখ মনে হচ্ছে যন্ত্রণায় ফেটে যাবে। আমি গো গো করছিলাম। অপরিচিত কন্ঠ আবার বলে উঠলো, “আপনার ফ্রিজে ঠান্ডা পানি পেলাম না। মনটা খুব খারাপ হয়েছিলো। আপনার স্ত্রীকে দুইটা চড় দিছি এজন্য। কিছু মনে নিয়েন না”।
আমি অনেক কষ্টে একটা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আশেপাশে শুধু অন্ধকার। বেদম জোরে কেউ একজন মনে হয় আমার পেটে একটা লাঠি দিলো। ভক করে বমি করে দিলাম। আমার খুব ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে লোকটা আমাকে মেরে ফেলবে। আচ্ছা মিতিকে কি মেরে ফেলেছে? ওর কোন শব্দ পাচ্ছিনা। আমি কাশতে কাশতে বললাম, “আপনি কে?”
কেউ একজন আমার পাশে বসলো। আমার কাধে হাত দিয়ে বললো, “স্যার লাথিটা একটু জোরে মেরে দিছি। আপনি বেহুশ হয়ে পড়ে ছিলেন। একটু বাড়ি দিলে জ্ঞান আসবে ঠিকমত তাই একটু মজাক করলাম। আসেন আমারে ধরেন, আপনারে বসাই সোফায়। সোফাটা আমার ভালো লাগছে। কালার উপর সোনালী ব্লক। সোফায় আকাম করে মজা পাইছি। আসেন আমাকে ধরেন, বসেন সোফায়”।
আমি ভয় পাচ্ছিলাম, খুব ভয়। বাম চোখটা কোনরকমে খুলে সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখলাম। লোকটার চোখ ভয়ানক লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে একটা পশু। শিকার করার আগে পশু যেমন করে শিকারের দিকে তাকিয়ে থাকে ঠিক তেমন করে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি তার হাত ধরে বললাম, “ভাই আমার কাছে কি চান? এভাবে আমাকে মাইরেন না। আলমারীতে অনেক টাকা আছে। আমার বউয়ের বেশ অনেকগুলো গহনা আছে। ওগুলো নিয়ে যান। আর কিছু লাগলে বলেন। আমি সব ব্যবস্থা করে দেবো। আমার স্ত্রী কোথায়? আমাদের ছেড়ে দেন”।
লোকটা ঘরের চারপাশে হাটলো। বিছানার উপর উঠে জানালার পর্দাটা ভালোভাবে টেনে আমার কাছে এসে গালে সজোরে একটা চড় মেরে বললো, “চুপ কর শূয়োরের বাচ্চা। তোর মত পয়সাওয়ালার মুখে আমি মুইত্যা দেই। টাকার গরম দেখাস শূয়োরের বাচ্চা। টাকার জন্য আসছি তোর কাছে??”
আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকি। চোখ খুললেই মানুষের মত কথা বলা ভয়ংকর পশুটাকে দেখবো। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মুখ ঢেকে বললাম, “আপনি কি চান বলেন? আমি আপনার সাথে কি করছি, মারছেন কেন?”
লোকটা ড্রইং রুমের দিকে চলে গেলো। ওর পায়ের আওয়াজ শুনছিলাম খুব মনোযোগ দিয়ে। যেই মনে হলো ও আর রুমে নেই আমি আঙ্গুল একটু ফাক করে চারদিকে দেখার চেষ্টা করছিলাম। নাহ আসলেও চলে গেছে। আমি মিতিকে খুজতে লাগলাম। ও কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছিনা। আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।আমার একটা পা মনে হয় ভেঙ্গে দিয়েছে। আমি কোনরকমে হামাগুড়ি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং রুমে এসে মিতিকে খুজতে থাকলাম। লোকটা পাশের রুমে সিগারেট খাচ্ছে। লোকটাকে সাহস করে ডাক দিলাম, “ভাই আমার বউ কই? আমি একটু ওর সাথে কথা বলি?”
লোকটা পাশে এসে বসলো। আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বললো, “স্যার আমার নাম রইস। বাবায় পুরা নাম দিছিলো, রইছ শেখ। বাবার নাম মালেক শেখ। আপনার আর আপনার পরিবারের সাথে একটু মিসটেক করছি। কিছু মনে নিয়েন না। মাঝে মাঝে মাথা আউলায় যায়। কি করতে যে কি করি। আপনার পা বাইড়ায় ভাঙ্গি দিছি। শুধু ডান পা। মানুষ মারার আগে তার সাথে একটু দুষ্টুমি করি। এইটা কোন পাপ না। জগত আপনার মত টাকা পয়সাওয়ালা লোকগুলা নষ্ট করতেছে। তাদেরকে একটু টিট ফর ট্যাট দেই। এইটায় মাইন্ড খাওয়ার কিচ্ছু নাই”।
আমি উঠে বসলাম। তার সামনে হাত জোড় করে বললাম, “ভাই আমি অত ধনী কেউ না। একটা মোটামুটি চাকরী করি। ব্যাঙ্কে খুব একটা টাকা পয়সাও নেই জমানো। আমি আপনার সাথে কি কোন অপরাধ করছি? আমাকে মেরে ফেলেন চাইলে। কিন্তু আমার স্ত্রীর সাথে একটু কথা বলতে দেন।প্লীজ?”
রইস হেসে বলে, “বউ দেইখে কি করবেন। চেহারা বিগড়ায় দিছি। এখন আর ভালো লাগবেনা। পাও একটু কেটে গেছে। আপনার মত ডান পা। গোড়ালির কাছে কেটে দিছি। আর হাটতে পারবোনা এই জীবনে। আবার একটু কইর‍্যা খাইয়াও দিছি।হেহেহে...ল্যাংড়া খোড়া বেইজ্জত বউ লইয়া কি করবেন? একটু পর আপনারেও কুটকুট কইরা মাইর‍্যা ফেলবো”।
প্রচন্ড বমি আসলো। মনে হচ্ছে লোকটা মিথ্যা কথা বলছেনা। আমি বমি করছি, চিৎকার করছি। পাশে রইস দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। সে আমার মুখে আবার লাথি মেরে বলে, “ও স্যার বড়লোকের বউয়ের কাম সাইর‍্যা দিছি। এখন বাচ্চা অইবো, আমার মত চেহারা। হেহেহে...”
আমি দাড়ানোর চেষ্টা করি। মিতির কাছে যাওয়া দরকার। আল্লাহ তুমি মেয়েটাকে বাচায় রাখো। আমার কোন দোয়া কালাম এখন মনে পড়ছেনা। আমি রইসকে পাশ কাটায় আল্লাহ আল্লাহ বলতে বলতে আমাদের ছোট্ট বেডরুমে গেলাম। এটা আমাদের কোন সন্তান হলে তার জন্য বরাদ্দ ছিলো। যদিও অর্থহীন ছিলো ব্যাপারটা। আমার বাচ্চা কাচ্চার ব্যাপারে কোন আগ্রহ ছিলোনা। আমার আর মিতির কোন বাচ্চা হোক আমি চাচ্ছিলাম না। একটা বাজে সময়ে আরেকটা নতুন জীবন আমন্ত্রণ জানানোটা একেবারেই অর্থহীন। রইস আমাকে ওর কাধে ভর দিয়ে নিয়ে গেলো। ও খিলখিল করে হাসছে। রুমে ঢুকে দেখলাম মিতির শরীরটা পড়ে আছে মাটিতে। ওর মুখ দিয়ে একটা জান্তব গোঙ্গানীর শব্দ আসছে। আমি রইসের দিকে তাকিয়ে তীব্র আক্রোশ অথচ অন্তিম করুণা নিয়ে বলি, “কেন?”
রইস হাসে। আমাকে বলে, “আরে স্যার কিছুই তো করিনাই তেমন। সপ্তাহ খানেক আগে উত্তরায় এক বেটিরে আট টুকরা করছি। গলা ফালায় দেয়ার আগ পর্যন্ত জীবিত ছিলো। বিশ্বাস করেন। আমারে বেটি কয় ওরে মাফ কইর‍্যা দিতে। আরে শালার আমি গেছি নিজেরে একবুক শান্তি দিতে। আমার কাছে মাগী মাফ চায়। বাইঞ্চোত,বাইঞ্চোত খাস বাইঞ্চোত সব।স্যার একটু টয়লেটটা ব্যবহার করে আসি। অনেকক্ষণ হলো বেগ সামলায় রাখছি। মুখটাও কুলি করবো। অনেক বেশি গালাগালি করছি একদিনে। আমি এমনিতে শিক্ষিত স্যার। ইন্টার পাশ করছি।বিষয় ছিলো বিজ্ঞান। রসায়ন খুব ভালো লাগতো। আরো পড়ার ইচ্ছা ছিলো। পারিনাই। পয়সা ছিলোনা”।
আমি রইসের কথা শুনছিলাম না। শুধু মিতির হাত ধরে ওকে ডাকছিলাম। মিতির গোঙ্গানীর আওয়াজটা বেড়েই যাচ্ছিলো। আমি ওর পাশে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লাম। হাত ধরে বললাম, “আমি খুব স্যরি। বিশ্বাস করো আমি খুব স্যরি। আমার কারো সাথে কোন সম্পর্ক ছিলোনা। যেই মেয়েটার মেসেজ দেখছো ওর সাথে আমার জীবনে একবারই দেখা হয়েছে। কিচ্ছু ছিলোনা। আমি আসলে ভালোবাসা খুজতাম খুব। তুমি আমাকে পছন্দ করতানা। সত্যি জানো, আমাকে কেউ পছন্দ করতোনা কখনো আম্মু ছাড়া। তোমার সাথে বিয়ের পর ভাবলাম কেউ একজন আমাকে খুব ভালোবাসবে। কিন্তু তোমার আমাকে ভালো লাগতোনা। আমি কিন্তু জানি তোমার একটা এফেয়ার ছিলো আমার সাথে বিয়ের আগে। তোমার চাচাতো ভাই হাসিবের সাথে। আমি বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে তুমি বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করলা। হাসিব মাঝে মাঝে বাসায় আসতো। একদিন আমি দেখে ফেললাম ও তোমার হাত ধরে টানাটানি করছে। আমি জানি তুমি বিয়ের পর সব ভুলে যেতে চেয়েছো। কিন্তু আমি খুব বুঝতাম তুমি ওকে এখনও ভালোবাসো। ও তোমাকে ভালোবাসতোনা, নাহলে আমার সাথে বিয়ে হতে দিতোনা। আমি এই কথাটা অনেকবার তোমাকে বুঝাতে চেয়েছি। সাহস হয়নাই। আমি জানি তুমি ওর থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু আসলেও কি পারতে? এভাবে দিনের পর দিন আমি ওর প্রতি তোমার দুর্বলতাটা অনুভব করতাম। একটা সময় মনে হলো, আমিও এমন করবো। তুমি অন্য কাউকে চাইলে আমি কেন পারবোনা। আমি কিন্তু আসলে পারিনি। নবনী নামের মেয়েটা আমাকে সত্যি ভালোবাসে অনেক। আমি ওর মুখে যতবার আমার জন্য ভালোবাসার কথা শুনেছি ততবার মনে হয়েছে তুমি যদি বলতা এই কথাগুলা তাহলে কেমন হতো। আমার ভালো লাগতো ওর কথাগুলো শুনতে। খুব। মিতি আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস করো”।
মিতির গোঙ্গানী একটু কমে গেলো। ও ওর দুর্বল হাত দিয়ে আমাকে ধরলো। আমি ওর হাত ধরে চিৎকার করে কাদছিলাম। ও কি যেন বলতে চাচ্ছিলো। কিছু একটা যা আমি বুঝতে পারছিলাম না। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। ওর মুখের কাছে কান নিয়ে আসি। ও ফিসফিস করে শুধু একটা কথাই বললো, “স্যরি...”
তারপর সব শুনশান। মিতি সেই মুহুর্ত থেকে শুধুই একজন মৃত। আর আমি জীবিত থেকেও মৃত। এই ঘরের একমাত্র জীবিত প্রাণী তখন রইস। সে আমার তোয়ালেটা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো, “স্যার মাঝে মাঝে মাথাটা খারাপ হয়ে যায়।অশ্লীল কাজ করে ফেলি। করতে চাইনা এমন না। কিন্তু বুঝি করা ঠিক না। আমি আপনাদের ফ্ল্যাটের নিচ তলায় এক স্যারের কাছে মাঝে মাঝে আসতাম। সে আমারে চাকরী দিবে বলছিলো। দিলো না। হাতে পায়ে ধরছি দিলোই না। তারপর একদিন দেখি আপনে এই ম্যাডামের সাথে হাসিমুখে গল্প করতে করতে নিচে যাচ্ছেন। কি সুন্দর একটা ছাই রঙের নতুন গাড়িতে উঠতেছেন। বউটাও মাশাল্লাহ কি সুন্দর। ভাল লাগেনাই। খালি মনে হতো, মাইরা ফেলাই। এগুলা সব আবর্জনা, সমাজের আবর্জনা। পৃথিবী কি হাসিমুখ কইর‍্যা গাড়িতে চইড়া মাল খাওনওয়ালাগো জায়গা। দুনিয়া তাদের জায়গা যারা আমার মত জুতার তলা খোয়ায় চাকরী খুজে। সারাদিন না খাইয়া রাতের বেলা বিড়ি খাওয়ার টাকা দিয়ে দুই টাকার বন কিন্যা পেট পুরা খায়। তারপর রাত্রে স্বপ্ন দেখে। মধুর মধুর সব স্বপ্ন। স্যার আপনি সিগারেট খান? এক পিস ধার দিবেন। আপনারে জবাই দেওয়ার আগে একটা ভালো বিড়ি খায়া মরতে চাই”।
আমি রইসকে ডাকি। কাছে এলে বলি, “আমার বেডরুমে নিয়ে চলো। ওখানে আছে। বন্ধু ফ্রান্স থেকে সোনালী রঙের প্যাকেটে লা এন ভিয়েরে নামের একটা চুরুট নিয়ে এসেছিলো। চলো আমি একটা খাই। তুমিও খাও”।
রইস আমার কাছে এসে মুখের উপর ভক করে থুতু ফেললো। চিৎকার করে বললো, “কুত্তার বাচ্চা, আমার সাথে ভাব মারাস। চুরুট চিনাস। আমার দেখ। চোখ খুইলা দেখ। আমার নাম রইস শেখ। আমি তোর খোদা। তোর একমাত্র খোদা। তুই এমনে কুইজ্যা হয়ে বসে থাকবি, কুত্তার মত। কুত্তা মাইর খায়া যেমনে গোঙ্গায় তেমন কইর‍্যা গোঙ্গাবি। আরেকটা কথা বলবিনা। আমারে চুরুট শিখায়, শাউয়ার পোলা”।
আমি রইসের দিকে হাত বাড়িয়ে দেই। রইসকে বলি, “স্যার চলেন ওই রুমে যাই। আপনাকে একটা ভালো সিগারেট খাওয়াই। চলেন”।
রইস আমার দিকে পশুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ওর চোখে কৌতুহল। প্রবল কৌতুহল। সে কি ভাবছে আমি জানিনা। কিন্তু তার চোখ ভরা অনেক গল্প। কি অদ্ভূত, আমার খুব তার গল্প শুনতে ইচ্ছা করছে। রইস একটা সময় আমার হাত ধরে। টেনে নিয়ে যায় পাশের রুমে। আমার ভেতরে একটা কেমন নির্লিপ্ততা চলে এসেছে। এমনটা হয় যখন একজন বুঝতে পারে তার ভেতরের মানুষটা আর বেঁচে নেই। আমি রইসকে একটা চুরুট দিয়ে বলি, “রইস ভাই ভালো আছেন?”
রইস চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।আমি তাকে বলি, “একটা কথা রাখবেন ভাই। একটু নিঃশ্বাস নিতে ইচ্ছা করছে। বারান্দায় যেতে চাই। আজকে ভরা পূর্ণিমা। চাঁদ দেখবো। পাঁচ মিনিট জাস্ট। কথা দিচ্ছি কোন আওয়াজ করবোনা। আমার গলায় ওই শক্তিও নাই। যেতে দিবেন ভাই?”
রইস আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। বললো, “স্যার কবিতা লেখেন নাকি? আমিও আগে লিখতাম”।
আমি ওর সাথে হাসলাম। আমার ডান চোখের উপরে ফেটে গিয়েছে। সেটা টের পেলাম এতক্ষণ পর। এজন্যই চোখ খুলতে পারছিলাম না। রইসকে আহত চোখটা দেখায় বললাম, “আমার চোখে প্রায় অন্ধকার দেখছি। ভালোমত দেখলে আমার বউ যাকে ওই ঘরে রেখে আসলেন তাকে নিয়ে জীবনের শেষ কবিতাটা লিখতাম। দুই চোখ খুলে চাঁদ দেখতে দেখতে কবিতা লিখতাম”।
অধরে আজ শশী জেগেছে
ক্ষুধাহীন মানুষটা কথা রেখেছে
তোমাকে না চেয়েও ভালোবেসেছে
আমি রইসের সাথে বারান্দায় বসে আশেপাশে তাকিয়ে দেখছি। সারা শরীরের এমন কোন জায়গা নেই আমার ব্যথা হচ্ছেনা। কি ঘৃণা নিয়ে রইস আমাকে এমন অর্ধমৃত হাল করেছে তা না দেখলে কেউ হয়তো বিশ্বাস করবেনা। বারান্দাটা, তাকে জোৎস্ন্যা রাতে ঘিরে থাকা চাঁদ মিতির ভালো লাগে তাই একটা রোলিং চেয়ার কিনেছিলাম। ওটাতে এখন রইস চুরুট টানতে টানতে দোল খাচ্ছে। মিতি আমার উপর মেজাজ খারাপ হলে মাঝে মাঝে এখানে এসে বসে থাকতো। আমাদের সংসারটা খুব অগোছালো ছিলো। মিতি হয়তো ঠিকই বলেছিলো। আমাদের বিয়েটা শুধুই একটা ভুল। আমি দেরীতে বুঝেছি, মিতি অনেক আগেই বুঝেছে কিন্তু বেরোতে পারেনি।
রইস নীরবতা ভেঙ্গে আমাকে বললো, “এর আগে স্যার ১৬টা খুন করেছি। সবাই খুব ভয় পাচ্ছিলো গলা ফালায় দেয়ার আগে। আপনি এমন নির্ভয়ে আছেন কেন? ভাব চুদাইতাছেন?”
আমি রইসকে বলি, “আমার নিজেকে আপনার মত লাগছে এখন। একদম আপনার মত। আমরা সবাই আসলে আপনার মত। ভেতরে একটা জন্তু বাস করে, আহত জন্তু। কেউ কেউ সাহসী হয়ে সেই জন্তুটা বের করে আনে, কেউ পারেনা। তারা ভীতু। এই জগতটা ভীতুদের জন্য না। আপনি ঠিক বলেছেন, আমরা হলাম সমাজের আবর্জনা”।
রইস খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো, “স্যার কথা আমি ঠিকই বলি। আমি খুন করি কেন জানেন? আমার কিন্তু বাবা মা ভালো ছিলো। ভালো ভালো বিদ্যা দিছে। আরবী পড়াইছে। ইংরেজী পড়াইছে। বাপে একদম পাক্কা সৎ লোক ছিলো। কিন্তু সব শেষ হইয়া গেলো একদিন। আপনার মত কিছু সুখী মানুষ একদিন আমার সব শেষ কইর‍্যা দিলো। আপনার মত লোকগুলা আমারে দিয়া ভিক্ষা করাইলো, আমার মায়েরে বেশ্যা বানাইলো। আমি হইছিলাম খাইনকার পোলা। উঠতে বসে গাইল খাইতাম। একদিন আপনারা আমার গায়ে পিশাপ কইরা বললেন, আমার কোন ইজ্জত নাই। আমি মানুষ না। বেশ্যার পোলার ইজ্জত থাকেনা। আমারে দিয়া বাথরুমের গু পরিষ্কার করাইলো। আমি কোন নেশা ভাম করতাম না। তারা আমারে হিরোঞ্চি বানাইলো, শরীরের মধ্যে হাওয়া ঢুকায় দিলো।মাইনষের কাছে ভিক্ষা করছি, হিরোইনের টাকার জন্য বন্ধুরে পিটায় মারছি।আপনাদের দেখলে আমার লোভ হয় আবার ঘেন্নাও হয়। যখন ঘেন্না উঠে তখন একটা একটা কইরা সাফ করি। স্যার আমার ভাষা কি খুব অভদ্র শুনাইতাছে?”
আমি মাথা নাড়ি। রইস আবার বলে, “স্য্যার খুব চেষ্টা করি আপনাদের ভাষায় শুদ্ধ ভাবে কথা বলতে। কিন্ত মাঝে মাঝে এমন রাগ হয় যখন...”
রইস আমার দিকে তাকায় থাকে। আমি জানি ও এখন আমাকে আবার আঘাত করবে। কিন্তু  কেন যেন থেমে গেলো। রাগে গরগর করতে করতে বললো, “ইচ্ছা লয় শালা তোদের মত টুথপেস্ট দিয়া দাত সাদা করা সব বেজন্মাগুলারে মাইরা গাইড়া ফেলি। জীবন কি আমারে দেইখা শেখ...সব মান্দার পোলা তোরা। হাসোস, গাড়িতে চড়োস। আমি তোদের মত মানুষ ছিলাম না? আমারে দিয়া কি না করাইছোস!”
রইস থামে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। আমার দিকে শান্ত চোখে তাকায় বলে, “স্যার নিঃশ্বাসের টান লাগে মাঝে মাঝে। আপনার বউ কিন্তু মাল ভালো ছিলো। অনেক রিকুয়েস্ট করছিলাম একটা চুমা দিতে। দেয়নাই। জিহবা টাইন্যা অর্ধেক ফাইড়া দিছি। আমারে চুমাইতে ঘিন্না লাগে? ফক্কিনী মাগী। গায়ের রঙ একটু ধলা বইলা মাগীর খুব তেশ বাড়ছিলো”।
আমি রইসের কাছে আগায় যাই। ওকে বলি, “রইস ভাই আমার বউয়ের নাম মিতি ছিলো। তার সাথে আমি ছোট খাটো একটা প্রতারণা করেছিলাম। আমি সেইজন্য বেশ লজ্জিত। সে অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলো। আমাকে সে পছন্দ করতোনা সেটা আমার সমস্যা, তার না। যেহেতু সে মারা গিয়েছে, আমরা তার প্রসঙ্গটা বাদ দেই”।
রইস খিলখিল করে হাসে। আমার পেটে লাঠি দিয়া বলে, “খানকির পোলা তুই আমারে ভালো ভাষা শিখাস। তোর মায়েরে লইয়া আমি ব্যবসা করমু, তখন বুঝবি ভালো কথা কারে কয়। মায়েরে জিগাবি কাস্টোমার কি কয়া গাইল দিছে আকামের সময়। হেহেহেহে...”
আমি রইসের দিকে তাকাই থাকি। কোন যন্ত্রণা হচ্ছেনা। মাথায় হঠাৎ চিন্তা আসলো, আমি কি মরে গেছি? তারপর হাসি এলো। হাসি থামিয়ে রইসের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। ওর চেহারাটা আমার মনে রাখা দরকার। খুব দরকার।
রইস আমাকে ধমক দিয়ে বলে, “কিরে রাগ উঠতেছে খুব। আমারে নোংরা লাগতেছে। তোর রেজার দিয়ে আজকে যাওয়ার আগে দাড়ি কাইটা যামু। একদম ফকফকা হয়া বাইর হমু। টাকা রাখছোস কই যেন? আমার টাকা লাগবো কিছু। মাইয়া খাইছি, মাল খামুনা এইটাতো হয়না। বহুত আলাপ হইছে। এইবার তোর গলা ছিলমু। ভাব নিসনা খবরদার। ভয় পা আমারে। ভয় পাওয়া বেজন্মা দেখলে ভাল লাগে। তোরে মাইর‍্যা মজা পামু। গা ভরা গোশত।ফ্রাই কইরা খাওন যাইবো। আমি অবশ্য তোর মত কুত্তার মাংশ খাইনা”।
রইস আমার কাছে আগায় আসে। আমার ভয় লাগেনা। ওকে শান্তভাবে বলি, “রইস তোমাকে তুমি করে বললাম কিছু মনে কইরোনা। তুমি একজন বেশ্যার ছেলে, তোমাকে আপনি বলতে ইচ্ছা করছেনা।তোমার একটা ভুল হয়েছে, জানো?”।
রইস থমকে দাঁড়ায় যায়। আমার ঠোট রইসের মারে ফুলে গিয়েছিলো। কথা বের হতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। সেই ছেড়া ঠোট নিয়ে মৃদু হেসে বললাম, “আজকে তুমি আমাকে হত্যা করতে এসেছিলে। সেটায় সেন্ট পারসেন্ট সফল। এখন নিজেকে কেন যেন তোমার মতই একজন মনে হচ্ছে, একদম খাটি পিশাচ। তুমি হলে আমার আয়না। আমি এখন আমাকে তোমার মাঝে খুব পরিষ্কার দেখছি। সবার আয়না ভালো লাগেনা। আমারও লাগেনা। তোমারও একটা দুর্বলতা আছে। সেটা যেদিন জানবো, তোমাকে আমি ভেঙ্গে ফেলবো”।
রইস আমার গলা টিপে ধরে ফেলে বলে, “ওই সিনেমার ডায়ালগ মারাবিনা। তুই হলি কুত্তা, ফকফকা সাদা কুত্তা। আমি তোর খোদা”।
আমি রইসকে ভালোভাবে খেয়াল করি। বয়স পয়ত্রিশের আশেপাশে হবে। ওর মুখ দিয়ে হিস হিস শব্দ বের হচ্ছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি শরীরে যা শক্তি বেঁচে ছিলো তা দিয়ে কোনরকমে ওকে এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে ফেলি। বারান্দায় রেলিং লাগানো হয়নি। নতুন ফ্ল্যাট। দোতলার ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে লাফ দিলে মরে যাবার কথা না হয়তো। অবশ্য মৃত্যুকে ভয়ও লাগছেনা। আমি লাফ দিলাম।ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটলো যে রইস শুধু তার হাতে আমার শার্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে হয়তো হতভম্ব হয়ে ছিলো, ভাবতে পারেনি এই আহত অবস্থায় আমি সাহস করে এমন কিছু করতে পারি। কিন্তু আমার তখন আরেকটু বেঁচে থাকার ইচ্ছা ছিলো। রইসকে সামনে বসিয়ে গল্প করার ইচ্ছা ছিলো।
নিচে পড়ার পর আমি কোন আওয়াজ পাচ্ছিলাম না। শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছিলো কি? তাও বুঝতে পারছিলাম না। বাবা মারা যাওয়ার আগে বলেছিলো, তার নাকি খুব উষ্ণতা বোধ হচ্ছে। আমার এমনটাই লাগছিলো। কি অদ্ভূত, চারদিকে কত আলো। হঠাৎ করে সব আলো নিভে গেলো। আমি মানুষের চিৎকার শুনতে পেলাম, একটা কুকুর প্রাণপনে ঘেউ ঘেউ করছে। আমি চোখ না মেলেও আশেপাশে সব যেন দেখতে পাচ্ছিলাম। রইসের চেহারাটা হঠাৎ গুটিকয়েক মানুষের ভীড়ে দেখতে পাই। সে হাসিমুখে বলছে, “নিজেকে দেখতে পাচ্ছো?”
দু বছর পরে কোন এক সকাল বেলার কথা। আমি এবং আমার প্রায় খোড়া পা হেটে হেটে কিছু আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে নীচে গেলাম। এই সময় আফজাল স্টোরে এতো ভীড় থাকার কথা না। এক কাস্টমার অকথ্য ভাষায় আফজাল স্টোরের এক কর্মচারীকে মা বাপ তুলে গালি দিচ্ছে। আমি এগিয়ে যেয়ে নিজেই এক ডজন ডিম বেছে বেছে নেই। টাকাটা দেয়া লাগবে, কিন্তু কর্মচারী সবাই ঝগড়া করতে ব্যস্ত। উপায় না দেখে ১০০ টাকার ১টা নোট দোকানের ভিতর ছুড়ে মারি। একটা সিগারেটের প্যাকেট কেনা দরকার ছিলো। সম্ভব হচ্ছেনা। সকাল বেলা দুইটা না টানলে ভালো লাগেনা। হেটে হেটে তেজকুনিপাড়ার ২ নং গলির ১০/এ বাসার সিড়ি ধরে আস্তে আস্তে এগোতে থাকি। এটা আমার চাচার বাসা। হাসপাতাল থেকে রিলিজ পাওয়ার পর গত দেড় বছর ধরে এ বাসাতেই থাকি। বাসাটা আমার বাবার পরিবারের। দোতলা বাসার নিচ তলা ভাড়া। দ্বিতীয় তালায় চাচা থাকেন। বিশাল বাড়ি। চারটা বেড রুম। গেস্ট রুমে আমাকে বেশ আরামের সাথে বসবাস করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। দাদী এখনো বেঁচে আছেন। বয়স প্রায় ৯০। তার প্রধাণ কাজ চাচীর বাপ মা তুলে গালি দেয়া। চাচী শুনে কিছু মনে করেন না। উনার মাথায় কিছুটা সমস্যা আছে। এটা নিয়ে অবশ্য কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।
আমি ডিম চাচীর হাতে দিয়ে বলি, “আজকে দুপুরে খাবোনা। একটু বাইরে বের হবো। আপনারা খেয়ে নিয়েন”।
চাচী ভাজি রান্না করতে করতে বলে, “অন্তু মাত্র পা ঠিক হইছে। এখনই দৌড়াইতে শুরু করবা?”
আমি কিছু না বলে ডাইনিং টেবিলে যেয়ে বসি। চাচা ড্রইং রুমে পেপার পড়ছিলেন। আমাকে একটু আস্তে আস্তে ডাক দিয়ে বললেন, “একটু এদিকে আসো তো বাবা। তোমার সাথে দুইটা বাতচিত আছে”।
আমি চাচার পাশের সোফায় বসি। চাচা আমার দিকে তাকায় বলে, “তুমি অনেক শুকায় যাচ্ছো দিনদিন। আজকাল নাকি খুব ধূমপান করতেছো”।
আমি হেসে বলি, “চাচা কোন সমস্যা নাই। আপনার শরীর কেমন এখন?”
চাচা পেপারটা ভাজ করে আমার দিকে না তাকিয়ে বলেন, “আমার বন্ধু এখন ডি আই জি, ঢাকা নর্থ জোনের। কালকে আমার সাথে কথা হয়েছিলো। তুমি যদি চাও তার সাথে কথা বলতে পারো”।
আমি নীরবে বসে থাকি। বুঝতে পারছিনা কি বলার আছে তাকে। চাচা নিজেই আবার বলেন, “তোমার কি আসলেও কিচ্ছু মনে নাই? লোকটা দেখতে কেমন ছিলো?”
আমি মাথা নাড়ি। বলি, “আমার কিছু মনে নাই চাচা”।
চাচা ঘাড় সোজা করে বসেন। এরপর উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলেন, “তুমি এখন হালকা হাটতে পারছো তো মনে হয় তাই না?”
আমিও উঠে দাড়াই। হাসিমুখে বলি, “সব ঠিক আছে চাচা। আপনারা অনুমতি দিলে আমি আমার ফ্ল্যাটে শিফট হয়ে যেতে চাচ্ছিলাম”।
চাচা আমার হাত ধরে ডাইনিংরুমে যেয়ে বসেন। চাচী দুটো খালি প্লেট আমাদের সামনে রেখে বলেন, “ডিম ভেজে দিবো নাকি অমলেট খাবে?”
চাচা মুখ বেজার করে বলেন, “ওকে না চাইলেও একটা ডিম দেবে। ছেলেটা শুকায় যাচ্ছে”।
চাচী ডিম এনে দিলে চাচা চাচীকে বলেন, “পরের মাসে আমরা অন্তুর মালিবাগের বাসায় উঠবো। ওর এখানে ভালো লাগছেনা। তোমার কোন আপত্তি আছে?”
চাচী আমাদের সাথে টেবিলে বসে বলেন, “নাহ কেন আপত্তি করবো? নতুন বাসায় থাকতে তো ভালোই লাগবে। তোমার অফিস যেতে একটু কষ্ট হবে হয়তো”।
আমি হতবাক হয়ে চাচার দিকে তাকায় থাকি। চাচা মুখে রুটি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, “কয় তারিখ যেতে চাচ্ছো? বাসার নিচে গ্যারেজ আছে নাকি গাড়িটা অন্য গ্যারেজে ভাড়া নিয়ে রাখতে হবে?”
অনেকদিন পর আবীরদের বাসায় গেলাম। ওদের বাসাটা ফার্মগেটের মোড় থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা। আবীর আমার স্কুল জীবনের বন্ধু। সে কিছুদিন আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। প্রথম বউ তার অফিসের এক কলিগের সাথে ভেগে যাওয়ার পর সে খুব মন খারাপ করে বলেছিলো, শালার জীবনে আর বিয়েই করবোনা।বাজে পাড়ায় যাবো শখ উঠলে, কিন্তু এই বিয়া শাদীতে নাই।কেউ কথা রাখেনি, বন্ধুও কথা রাখেনি। দ্বিতীয় বিয়ের পর আমার সাথে দেখা হয়েছিলো। হাসপাতালে আমাকে দেখে সে কিছুক্ষণ চোখের জল ফেলে বললো, “তোর যে অবস্থা। বিয়ের ব্যাপারে তাই আর কিছু বললাম না। দ্বিতীয় বউটাও দোস্ত ভালো না। ভেগে যেতে পারে। সেদিন নিচতলার মেসের মোবাশ্বের নামে এক ছেলের সাথে দেখলাম দরজার বাহিরে দাঁড়ায় বেশ হাসি তামাশা করতেছে। বিয়ে সকল ধ্বংশের মূল, আমি নিঃস্ব হয়ে গেলামরে দোস্ত। তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠ। তোকে নিয়ে বান্দরবন যাবো। আত্নার উপর অনেক চাপ পড়েছে। হালকা করা দরকার”।
আবীরের বাসায় যেয়ে দেখি আবীর মুখ বেজার করে বসে আছে। আমি হাসিমুখে বললাম, “কেমন আছিস? বউ ভেগে গেছে?”

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ