4788

গল্প : বৈষম্য (The Answer)

এক মেয়ে ওপেনলি সিগারেট খাচ্ছিলো তার ভিডিও করে আনছি। শালীর এবার খবর আছে। পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়া বের করব। এই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করলে হাজার হাজার লাইক পরবে। ভাইরাল হবে। মেয়েটা যত নিচে নামবে আমিও তত ফেমাস হবো। বহু ফলোয়ার বাড়বে আমার। আশিক বসে বসে এসব চিন্তা করছিলো। মেয়েটা দূরে বসে এখনো সিগারেট টানছে। আশিকের মনে হলো তার কাছে গিয়ে একটু মজা নেয়া যাক।

- এই যে আপু আপনি পাবলিকলি সিগারেট কেনো খাচ্ছেন? মেয়েটা মুচকি হেসে সিগারেটে আরো একটা টান দিলো।
- এই যে ম্যডাম কানেও কি শুনতে পান না নাকি?
এতক্ষনে মেয়েটা সিগারেট শেষ করে এবার তার দিকে তাকালো। তাকিয়ে বলল, কিছু বলছেন?
- এতক্ষন ধরে যে বলছি কানে যায় না?
- কানে যায়, তবে একটা বেনসন ধরাইছিলাম তো। এতো দামি সিগারেট নিয়ে ইচ্ছে হচ্ছিলো না আপনার সস্তা কথা গুলোর উত্তর দিতে। এবার বলুন।
আশিকের রাগ আরো বেড়ে গেলো। মনে মনে চ বর্গীয় দুই একটা গালি দিয়ে বলল। এই আপনাদের মত কিছু মেয়েদের কারনে, মেয়েদের প্রতি মানুষের সম্মান উঠে যাচ্ছে। আপনারা মনে করেন ওপেনলি সিগারেট খাওয়াটা একটা স্মার্টনেস। কত লোক এখানে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে দেখতেছেন?
মেয়েটা এবার জোরে জোরে হেসে দিলো।
আশিক আরো রেগে গিয়ে বলল হাসির কি বললাম?
- আপনার কি মনে হয়, আমি এখানে সিগারেট হাতে বসে ছিলাম বলে সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে? নয়তো তাকাতো না? প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে আবার বাসায় ঢোকার আগ পর্যন্ত একটা মেয়ের দিকে কত ছেলে তাকায়, ডু ইউ হ্যাব এনি আইডিয়া ব্রো? তাই কে তাকালো আর না তাকালো এসব আর গায়ে লাগে না।
আশিক এবার একটু থতমত খেয়ে বললো। আপনাদের স্বভাবের কারনেই তো তাকায়। আপনাদের কাপড়ের ঠিক থাকেনা। রাস্তায় বেহায়াপনা করে বেড়াবেন আর লোকে তাকালেই দোষ?
মেয়েটা এবার বলল, একটু আগেই না সিগারেট নিয়ে ছিলেন। এখন কাপড়ে চলে গেলেন? কাপড়ে কি আসে যায়? আগে চোখ ঠিক করেন।
আশিক এতো সহজে ছেড়ে দেবার ছেলে নয়। সে বলল কাপড়ই তো সব। আমি এখানে আমার টিশার্ট খুলে হাঁটতে পারব আপনি পারবেন? কথাটা বলে বীরের মত আশিক অপেক্ষা করছিলো মেয়েটার উত্তরের জন্য। তবে মেয়েটা এবার যা উত্তর দিলো তা তো পুরোপুরি সিলেবাসের বাইরে।
- হা পারব। কেনো পারব না? তবে আজ আমি হাঁটব। কালকে যখন আপনার বোন আপনার সামনে টিশার্ট খুলে হাঁটবে তখন সহ্য করতে পারবেন তো?
আশিক বললো, শুনেন এতো কথার কাজ নাই। ছেলেরা যা পারে মেয়েরা তা পারে না মেনে নিন।
মেয়েটা বলল, হা মানি। তবে আপনিও মানুন একটা মেয়ে যা পারে একটা ছেলে তা পারে না। আপনি পারবেন জীবনে কোনদিন "মা" হতে? আচ্ছা মানলাম আমি টিশার্ট খুলতে পারব না কিন্তু আপনি পারবেন শাড়ি পরতে?

আশিক দেখলো সে হেরে যাচ্ছে। মেয়েটা ভীষন ঘাড়তেড়া। এবার শেষ অস্ত্রটা বের করতেই হবে। সে এবার তার ফোনটা দেখিয়ে বলল,
- আপনি যে একটু আগে ওপেনলি বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন তা এই ফোনে ভিডিও করে নিয়েছি। এই ভিডিও এখন ভাইরাল হবে। আপনার আত্নীয় স্বজন সবাই দেখবে। তখন দেখবো এতো পটর পটর কি করে করেন।
মেয়েটা এবার তার ফোন দেখিয়ে বলল, ভাই এইযে এটা আমার ফোন। আর এই ফোনেও ভিডিও করা যায়। আর একটু আগে আমিও আপনার একটা ভিডিও করেছি।
আশিক এবার হাসি দিয়ে বলল, আরে যান যান করেন মিয়া। একটা ছেলে ওপেনলি সিগারেট খাচ্ছে। এতে কিছুই যাবে আসবে না।
- আমি আপনার সিগারেট খাওয়ার ভিডিও করেছি কে বলল?
- তবে?
- আপনি যে একটু আগে ওই যে ওই বড় গাছের চিপায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে মনের সুখে সিগারেট টানতে টানতে মুত্র বিসর্জন করলেন সেটার ভিডিও করেছি। এই ভিডিও ভাইরাল হলে, আপনার কি হবে ভাবতেছেন? আর আপনি তো শুধু ফেসবুকে আপলোড করবেন। আমি এই ভিডিও নিয়ে সোজা পুলিশের কাছে যাবো। পরিবেশ নষ্ট করার জন্য একটা মামলা আর একটা মেয়ের অনুমতি ছাড়া তার ভিডিও করার জন্য আইসিটি আইনে আরো একটা মামলা।
আশিক এবার সত্যিই ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। সে যে সিগারেট খায় এটা তার পরিবারের কেউ জানে না। তার কাপালে বিন্দু বিন্দু জমা ঘাম।
আশিকের ভেবাচেকা ফ্যাকাসে মুখ দেখে মেয়েটা বলল, আপনারা নিজেদের খুব স্মার্ট ভাবেন তাই না? বাই দা ওয়ে, আপনি তো মনে হয় হলিউড খাচ্ছিলেন। আমার কাছে বেনসন আছে খাবেন? খুব দামি সিগারেট!!! না না ভয় নেই। একটা ছেলে একটা মেয়ের কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে খাচ্ছে এটা ভিডিও করব না।

লেখা : Emon Khan Shakil