āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧍⧧ āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4798

সন্তান
লেখকঃ Nasir Khan

:: 'আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন' এই প্রশ্নের উত্তরে আমি খুব আগ্রহ নিয়ে বলি- 'পাঁচজন। তিন ছেলে, দুই মেয়ে।'
আমার উত্তরে বেশিরভাগই অবাক হয়। আমি বুঝি। তাদের আশা থাকে আমি উত্তর দেবো- দুইজন। আমার মত মানুষের সন্তান কেনো পাঁচজন, এই নিয়ে তাদের যে অনেক চিন্তা-ভাবনা তা আমি বুঝতে পারি।

সাধ্য মানুষের অনেক সাধকে পূরণ হতে দেয় না। কিন্তু আমার এই সাধের জন্য তেমন সাধ্য লাগে না বলেই আমি ইচ্ছা করে পাঁচ সন্তানের বাবা হয়েছি। প্রতিটি সন্তানের ছোটো সময়ের নিষ্পাপ মুখগুলো দেখলে এখনো আমার মন ভরে যায়।

তৃতীয় সন্তান কিরণ হওয়ার দিনের কথা মনে পড়ছে। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি দুপুরে। থেকে থেকে বাজ পড়ছে। আমি অফিসে অন্ধকারে বসে আছি। রিকশা চালিয়ে মোসলেম চাচা এসে বললো- 'এনায়েত, তোমার মাইয়া হইচে। বাইত যাও। খুবই সুন্দুর হইচে শুনলাম।'
যেনো আমি লটারির টাকা জিতেছি। অসহ্য উত্তেজনা নিয়ে ভিজতে ভিজতে বের হলাম। বাড়ির কাছে এসে উঠানে পা দিতেই শ্যাওলা ধরা পিচ্ছিল মাটিতে বেশ জোরে পড়ে গেলাম। ভাঙা মাটির কলসের টুকরায় লেগে মুহূর্তে কপাল কেটে রক্ত গড়াতে লাগলো।

ঘরে ঢুকতেই সবাই অস্থির হয়ে গেলো। আমার মুখ রক্তে ভেসে যাচ্ছে আমি জানি না। আমি হাসিমুখে বলছি, দাও, বাবু কোলে দাও।
আমার শাশুড়ি ধমক দিয়ে বলে- পাগল নাকি? শইল্যেরথোন পানি মোছো আগে যাও!

চৌকির এক কোণায় আমার বড় মেয়ে আলো আর মেজো ছেলে আনিস গুটিসুটি মেরে বসে আছে। পিঠাপিঠি ওরা তখন। কত হবে বয়স? চার কি পাঁচ। ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিরে মিষ্টি খাবি? রাতে নিয়ে আসবো।
মেয়ে মন খারাপ করে মাথা ঝাঁকালো। বললাম, কী মন খারাপ কেনো? হিংসা হয়? হাহাহাহাহা।

রাতে মিষ্টি নিয়ে এলাম। কত আনন্দ ঘরে। হারিকেনের আলোয় সেই আনন্দকে মনে হলো ছুঁয়ে দেয়া যায়। শাশুড়ি ধমকালো, আর বাচ্চা নিয়া কাম নাই। গরীব মানুষ। এত বাচ্চা দিয়া কী অইবো। বউ লজ্জা পায়। আমি হোহো করে হাসি আর বলি, আমার আরো বাচ্চা লাগবে।
আমি সহজভাবে বলি। রসিকতা করি। কিন্তু কেউ বুঝতে পারে না। আমাকে নির্লজ্জ ভাবে।

আলো, আনিস, কিরণ, মানিক, হিরু।
আমার পাঁচ ছেলে-মেয়ে। ওদের ছোটোবেলা কত মধুর ছিলো। সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে মেতে থাকতো। একজনকে কোলে নিলে আরেকজন কেঁদে ভাসাতো। মনে হতো যদি আমার পাঁচটা হাত থাকতো, তবে পাঁচ সন্তানকে একসাথে কোলে নিয়ে বেড়াতাম। সবাইকে এত ভালোবাসতাম।

এই যে এত ভালোবাসতাম, এই ভালোবাসার বিনিময়ে সবাই কি ভালোবাসা ফেরত পায়? হয়তো কেউ পায়, আবার কেউ পায় না। কিন্তু আশা তো করে। ছোটো এই জীবনে যা সময় ছিলো, তা নিজের জন্য রাখিনি কখনো। প্রতিটা মুহূর্তের পেছনেই তো ছিলো আমার সংসার, আমার সন্তান। অথচ!
আমি সব সন্তানকে ভালোবাসতাম সমান, কিন্তু সব সন্তান আমাকে সমান ভালোবাসে না। একথা বলাটা একটু কেমন কেমন দেখায় একজন বাবা হয়ে। কিন্তু সত্য অস্বীকার করে যে সুন্দর, সেই সুন্দরের আদৌ প্রয়োজন আছে কি?

অল্প শিক্ষিত এই আমি কেমন কেমন করে যেনো সৃজনশীলতা পেয়ে গিয়েছিলাম জন্মগতভাবে। সাহিত্য ভালো লাগতো। জীবনকে গল্পের মত করে, গল্পের চরিত্র হয়ে চালাতে চেষ্টা করতাম। কারো ভালো লাগতো। কারো লাগতো না।
গুরুত্বও দিতাম না।
আমার বোধকে গ্রহণ করবার ক্ষমতা আমার স্ত্রীরও ছিলো না। সংসারের প্রতি ক্ষেত্রের আমার সহজবোধ্যতাকে আমার অপারগতা ভাবতো ও। হয়তো বাইরে গিয়েছি কেনাকাটা করতে। দামি কোনো জিনিস দেখে হেসে হেসে বলছি, না না এটা কেনা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি গরীব মানুষ। এই টাকায় আমার দশদিন সংসার চলে যাবে।
আমার স্ত্রী করবে কী আমাকে না বুঝেই লোকের সামনে এমন কিছু কথা বলে বসবে, যাতে আমি লজ্জা পাই। কথাগুলো লজ্জা পাওয়ার মতই। আমি লজ্জা না পেয়ে কষ্ট পাই। সেটাও চেপে রাখি।
কারণ আমি স্বামী, আমি পিতা। দায়গুলো সব আমার উপর।

ভেবেছিলাম আলোকে বিয়ে দেবো যৌতুক ছাড়াই। আমার মত একজন মানুষ মেয়েকে বিয়ে দেবে যৌতুক দিয়ে, ভাবা যায় না। তবু আমাকে তাই করতে হলো। আলোর গায়ের রঙ কালো, আমি আর্থিকভাবে দরিদ্র, সম্ভবত এ কারণেই। কতগুলো বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণেই হয়তো আলো এক রাতে মুখ ফুটে আমাকে বললো, বাবা তোমার ব্যাংকে তো কিছু টাকা আছে। ওই টাকাটাই দিয়ে দাও না।

আমি অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অন্ধকার শুধু দেখলাম। বললাম, ঠিক আছে। তাই হবে। এই সংসারে তোর আর থাকতে ইচ্ছা করে না তাই না?
আলো আমার পায়ের কাছে বসে নীরবে কাঁদতে লাগলো। বড় মায়া লাগতে লাগলো আমার। মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলাম।

খুব সাধারণভাবে আড়তের এক দোকানদারের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো আলোর। বিয়ের দিন একটুও কাঁদলো না আলো। দিব্যি চুপচাপ চলে গেলো। সেই রাতে আমি ভোর পর্যন্ত বারান্দায় বসে কাটালাম। কেউ আমাকে ডাকতে এলো না। কেবল আমাকে সঙ্গ দিলো আমার ষাট বছরের জীবনের অভিজ্ঞতা, অর্জন, পাওয়া, না পাওয়া।
সারা জীবনে মানুষ এগুলো ছাড়া আর কীই বা কামায়!

আমাকে যেটুকু দেখভাল করার তার সবটুকুই করে কিরণ। অফিস থেকে বাসায় ফেরার সাথে সাথে ন্যাকড়া নিয়ে আমার জুতা মুছতে বসে কিরণ। পুরাতন সালোয়ার কামিজে চুল ছেড়ে রাখা মেয়েটিকে দেখলে এত মায়া লাগে। নিজের উপর লজ্জা হয় শুধু। কীভাবে রেখেছি আমি আমার সন্তানদের! ভালোবাসা ছাড়া আর কী দিতে পেরেছি আমি ওদের? আমার করারও তো কিছু নেই। আমার জন্য তো কখনো আমি কিছু করিনি। তারপরও মনে হয় ওদের সাথে কত অবিচার করছি। ওদের জন্ম যদি কোনো ধনী ঘরে হত তবে ওরা দেখতে কেমন হতো, কেমন পরতো, কেমন খেতো! ভাবি। খুব খারাপ লাগে।
কিরণের সাথেই মাঝে মাঝে এসব নিয়ে গল্প করি। আমার প্রতি ওর খুব ভালোবাসা।
কিরণ আমাকে সান্ত্বনা দেয়- বাবা এত মন খারাপ করো কেনো তুমি। আমার কিন্তু গরীব ঘরে জন্মেই খুব ভালো লাগে। এই যে তুমি আমাদের এভাবে ভালোবাসো। এই যে এত টান, মায়া। এসব নিয়ে তোমার কষ্ট, এগুলোই তো জীবন। ধনী ঘরের সব পাওয়ার মাঝে কি এসব আছে?

আমি সত্যি চমকে গিয়েছিলাম। একদম আমার মত করে ভেবেছে কিরণ। আমার এত ভালো লাগলো। আলমারি খুলে পাঁচশ টাকার একটা নোট দিয়ে বললাম, কাল একটা সুন্দর দেখে থ্রিপিস কিনিস তো।
টাকাটা নিয়ে এত সুন্দর করে হাসলো কিরণ। যাওয়ার আগে বললো, আমি যদি প্রতিমাসে এভাবে তোমার সাথে গল্প করি, এভাবে কথা বলি, তাহলে তুমি আমাকে প্রতি মাসে পাঁচশ দেবে?
দুজনে কত হাসাহাসি সেদিন। মনে হলো কোথায় দুঃখ। কোথায় কী! আমি অনেক সুখী। খেলাম না হয় প্রতিদিন নিরামিষ!

আনিসের জন্যও অনেক মায়া হয় আমার। সবাইকে সমান ভালোবাসলেও ওর প্রতি সবসময় অবিচার হয়ে এসেছে। সেটা ইচ্ছাকৃত নয়। চুপচাপ স্বভাবের আনিস খুব লক্ষ্মী হয়েছে। হয়তো ওর সামনেই ওকে অবিচার করা হয়েছে, কিন্তু ও কিছুই বলবে না। চুপচাপ থাকবে। একা একা কষ্ট পাবে।
আনিসের বড় মামা বিদেশ থেকে আসলো সেবার। যা উপহার এনেছে তা সবার হয় না। আনিসের খুব শখ ছিলো সেন্টের বোতলটা ও নিবে। কিন্তু মানিক ওটা ওকে নিতে দিলো না। আনিস মন খারাপ করে চলে গেলো। রাতে আনিসের জন্য একটা সেন্টের বোতল এনে ওর কাছে গেলাম। পাঞ্জাবির পকেট থেকে বোতলটা বের করে দিয়ে বললাম, দেখ তো ঘ্রাণটা কেমন? লুকিয়ে রাখিস ড্রয়ারে। এটা তুই একা একা মাখবি।
তখন আনিস অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে। এতবড় ছেলে। অথচ চোখ লাল করে টপটপ করে জল ঝরাতে লাগলো। বললাম, এত অল্পতেই আবেগী হবি না বাপ। নিজে কষ্ট পেয়ে কী লাভ আছে বল?

অফিস থেকে বোনাস পাওয়ায় একবার মিষ্টি কিনে আনলাম বাড়িতে। আনিস বাড়িতে ছিলো না। অথচ ওর জন্য কেউ একটা মিষ্টি রাখলো না। আনিস বাড়িতে আসার সাথে সাথে কিরণ মিষ্টির গল্প শুরু করলো। আনিস শুধু হাসলো।
আমি মনঃকষ্টে ভুগতে লাগলাম। রাতে আনিসকে বললাম চল তো হেঁটে আসি।
আনিসকে হোটেলে বসিয়ে মিষ্টি খাওয়ালাম। ওর সাথে অনেক কথা কখনো হয় না। সেদিন অনেক কথা বললাম। আনিস লজ্জা লজ্জা মুখে আমার হাত ধরে একবার বলল, বাবা তোমাকে মায়ের থেকে বেশি ভালোবাসি। চলো আজ সারারাত আমরা রাস্তায় হাঁটি। বিলের পাশে একটা শিমুল গাছ আছে। ওখানে বসে থাকলে তুমি মুগ্ধ হয়ে যাবে।

আনিসের সাথে সেখানে গেলাম। এক নতুন অনুভূতি। যেনো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব। ছেলের সাথে প্রেম।
আমি আনিসের গলায় হাত রেখে খুব আবেগী হয়ে গেলাম। বললাম, আনিস তুই আমার অনেক ভালো ছেলে। তোকে আমি অনেক ভালোবাসি। অথচ আমি তোর গরীব বাবা। তোর যখন যা প্রয়োজন হবে, আমার কাছে চাইবি।

বাকি রইলো মানিক আর হিরু।
আমার সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে আলাদা হয়েছে মানিক। এমন একটি পারিবারিক আবহে থেকে একটি ছেলে কীভাবে এমন হয়ে যায়, আমি ভেবে পাই না। যত রকম খারাপ আছে, তার সবই করে মানিক।

একদিন দুপুরে অফিস থেকে বের হয়েছি ব্যাংকে যাবো বলে। ব্যাংকমোড়ের সামনে দেখলাম একটি রিকশায় মানিক হুড উঠিয়ে বসে আছে। পাশে চিকন লিকলিকে এক মেয়ে মানিকের হাত ধরে আছে। মানিক একবার আমাকে দেখলো। একটু আড়ষ্ট হলো মনে হলো। আমি তেমন গা করলাম না।
চায়ের দোকানে যেদিন ওকে সিগারেট খেতে দেখি, সেদিন জিজ্ঞেস করলাম, সিগারেট খাস, টাকা পাস কোথায়?

আশপাশে দুএকজন লোক ছিলো, সম্ভবত আত্মসম্মানে লাগলো মানিকের। মানিক আমাকে একরকম ধমক দিয়ে বললো, বেশি কথা বলো তুমি। টাকা চুরি করি। হইছে?
বলেই চলে গেলো কোথায়। আমি অপমানিত হলাম। আমার এই অপমান মানিকের আত্মসম্মানে কোনো আঘাত দিলো না। প্রজন্মে প্রজন্মে এই বোধহয় ফারাক।

এর মাঝে এক রাতে খাবার সময় মানিককে কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম। আমার কোনো কথাই ওর সহ্য হয় না। আমি দেখতে নিরীহ, আমার কণ্ঠ শীতল এজন্য হয়তো গুরুত্ব কম পাই ওর কাছে। ও করলো কী ভাতের প্লেট দেয়ালে ছুঁড়ে মেরে চলে গেলো। আমার অবাক হওয়ার অন্ত থাকলো না। চোখে জল চলে এলো। এত কষ্টে রোজগার করে কয়টা মোটা চালের ভাত খাই, আর সেই ভাত ছড়িয়ে আছে মেঝেতে।

সাথে সাথে আলোর মা দৌঁড়ে গিয়ে মানিকের রুমে হৈচৈ বাঁধিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পরেই আলোর মায়ের চিৎকার। গিয়ে দেখি মানিকের ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরছে। আলোর মায়ের হাতে কাচের গ্লাস ছিলো। সেটা ছুঁড়ে মেরেছে।
মানিককে ডাক্তার দেখিয়ে,  ঠোঁটে সেলাই দিয়ে বাড়িতে আসতে আসতে রাত বারোটা বেজে গেলো। সারাপথ একটা কথাও হলো না মানিকের সাথে।
পরদিন সকালে উঠে মানিক বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ। এইটুকুন ছেলে কোথায় গেছে কে জানে।
আমি অসহায়ের মত এখানে ওখানে  খুঁজি। পাই না। খুব চিন্তায় আমার দিন কাটে। আনিস আমাকে সান্ত্বনা দেয়, চিন্তা করো কেনো বাবা। ও ঠিক কোথাও না কোথাও ভালোই আছে।

ছয়দিন পর মাঝরাতে মানিক আসলো।
আমি দরজা খুলে দেখি মলিন, কাবু চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে মানিক। আমাকে দেখেই মাথা নিচু করে বললো, মাফ করে দাও। আর এমন করবো না।

একদম ছোটো ছেলেটাকে তেমন সময় দেয়া হয় না। আমার কাছে আসেও কম হিরু। মাঝে মধ্যে রাতে আমার আশপাশে ঘুরঘুর করে। বলি, কিরে টাকা লাগবে?
হিরু হাসে।
দশটাকা নিয়ে খুশিমনে চলে যায়। কোনো কোনো দিন বিচার দেয়, মা মেরেছে। কিরণ ঝগড়া করেছে।
আমি আশ্বাস দেই, সবার সাথে রাগারাগি করবো।
রাগারাগি করা হয় না। দুতিনদিন পার হয়ে যায়। হিরু মুখ ভার করে বলে, রাগ করলা না তো।
আমি কিরণকে ডেকে চোখ টিপে দিয়ে কিছুক্ষণ বকাবকি করি। কিরণ কিছুক্ষণ শোনে। তারপর হিরুর দিকে তাকিয়ে বলে, হলো? এবার খুশি?
এত ভালো লাগে ওদেরকে দেখতে।

এই আমার সংসার। অনেক সাধ করে ফুলের বাগান করার মত করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। পারিনি। আলোর মা আমাকে প্রতি রাতে দোষারোপ করে। আমার কীসের দোষ, আমি খুঁজে পাই না। অভ্যাস হয়ে গেছে শুনতে শুনতে।
বয়স তো কম হলো না।

আলো তেমন আসে না। বাবা কেমন আছে, এটা দেখতে হয়তো ওর ইচ্ছে করে না। ওর এখন সংসার হয়েছে। ভালো খায়, ভালো পরে।

আনিস চাকরি খুঁজছে। সারাদিন পর রাতে কখন বাড়ি ফেরে কখন বেড়িয়ে যায় জানি না আমি। ওকে দেখতে ইচ্ছে করে প্রতিদিন। এই ইচ্ছা কাকে কীভাবে বলবো বুঝি না।

হিরু সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়। পুরাতন একটা সাইকেল কিনে দিয়েছি। অনেক খুশি ও।

কিরণের বিয়ের জন্য কিছু টাকা জমিয়েছি। আলমারিতে টাকাগুলো পড়ে আছে। ছেলে তেমন পাওয়া হচ্ছে না। কিরণকে একদিন বললাম, কিরে প্রেম ট্রেম করিস? করলে বল। বিয়ে দেই।

কিরণ লজ্জা পায়। হাসে আর বলে,  উহু ওসব করি না। তুমি যার সাথে পারো তার সাথেই বিয়ে দাও। ছেলের আড়তে দোকান থাকলেও সমস্যা নাই।

কথাগুলো ও দুষ্টুমি করে বলে নাকি ক্ষোভ থেকে বলে কে জানে। আমার কোনো রকম ভালো বা খারাপ লাগে না।

আলমারির টাকাগুলো নেড়েচেড়ে দেখি মাঝে মধ্যে। সেদিন রাতে দেখি পাঁচ হাজার টাকা উধাও। আলোর মাকে বললে অবাক হয়। আমাকে বলে আমিই নাকি খরচ করেছি। কিরণ এক ফাঁকে বললো, মানিক টাকা সরিয়েছে।
এবিষয়ে মানিক আমাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিলো।

বারান্দায় বসে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললাম, হ্যাঁ টাকাগুলো আমিই খরচ করেছি। সিগারেট খেয়েছি, নতুন জামা কিনেছি, জুতা কিনেছি। আর দুপুরে হোটেলে বিরিয়ানি খেয়েছি।

আমার কথা শুনে কিরণ আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। অন্ধকারে কিরণের ভালোবাসা আমাকে কাঁদিয়ে দেয়। কিরণ আমাকে চুপ থাকতে বলে। অথচ আমার বুক থেকে কান্না উঠে আসে। জীবনটা এভাবে আঁধারে পার করে দিলাম, তবুও পাওয়ার ঝুলিটা কতটা শূন্য।
নিজের ব্যর্থতার জন্য নিজের কাছেই লজ্জা লাগে।
আমি চুপ করে চেয়ে থাকি। কিরণের রুগ্ন হাতের আঙুল পরম যত্নে আমার গালে নেমে আসা চোখের জল মুছিয়ে দেয়।

আমি জড়ানো গলায় বলি, মা সুখে থাক। আমাকে ভুলিস না। আমি অনেক ব্যর্থ আমি জানি। তবু আমি তোদের বাবা।
আমার বুকে তোদের জন্য কোনোদিনই ভালোবাসার কমতি ছিলো না। তবু কেনো এমন হচ্ছে কে জানে।

রাত বাড়ে। জেগে থাকি। সবাই যার যার মত হয়তো জেগে থাকে। কেউ কারো খবর জানি না। সবাই যার যার কষ্ট নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমায় হয়তো।
আমি আমাকে নিয়ে ভাবি না। আমি সবাইকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে অঘুমো থাকি। দীর্ঘ জীবনে এই হয়তো আমার প্রাপ্তি। তবু ভালো থাকুক সবাই। যতটা ভালো থাকলে ভালোবাসার সম্মান করা যায়, ততটা ভালো। :::

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ