#ভাড়াটে_গার্লফেন্ড
।
পর্বঃ দশম ১০ম
।
।
।
---মাহি ।
---কি বলেন আপনি মাহি কেনো মেডিকেলে যাবে সে তো সুস্থ ।
---আরে গাধা ঘুমের মধ্যে কি আবোল তাবোল বলছিস ।
---হুম কি বলছি ।
---তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে মাহিকে নিয়ে মেডিকেলে কলেজে নিয়ে যা ।
---কেনো ।
---একটা কাজ আছে মাহির সাক্ষর দিয়ে আসতে হবে ।
---মামাকে বলেন আজ যেতে পারবেনা কাল দিবে এখন ঘুমাতে দেন ।
---ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু বললো আজ যেতে হবে ।
---আপনার ভার্সিটিতে তো এতো কাজ থাকে না আর মেডিকেলে ।
---তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও ।
---একটু ঘুমাতে দেন উঠে তারপর যাবো ।
---কিহ্ বললি কতো বাজে দেখছিস ।
---মামনি আপনি মানুষ দেখেন না সব জায়গায় গরম হয়ে কথা বলেন আমার সাথে ।
---তাহলে যেটা বলছি সেটা কর । বেশি কথা না উঠে পর সবাই উঠেছে শুধু তুই বাকি ।
---কতো বাজে মামনি ।
---আবার বেশি কথা ৯ টা ৭ বাজে ।
---কি বলেন এতো বাজবে কেনো ।
।
মামনির চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ দুটি বড় বড় করে তাকালো ।
আমি আর বেশি কথা বললাম না । উঠে পরলাম তখন মামনি চলে যেতে লাগলো আমি আসতে করে আবার শুয়ে পরার পস্তুতি তখন মামনি পিছনের দিকে তাকালো ।
আমি তাড়াতাড়ি উঠে দৌড় ধরলাম ।
যাবার সময় মামনিকে হাসতে দেখলাম ।
।
এতো বড় হয়েছি তবুও পচন্দ শাসন করে । যেটা করতে বলবে সেটা করতে হবে না করলে খবর আছে ।
শুনেছি সব ম্যাডাম খুব হয় । ছেলে মেয়েকে খুব ভালোবাসে তাদের সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলে । কিন্তু আমার বেলা আব্বু সেরকম আর মামনি খুব রাগি । যে কথা বলবে সেই কথা শুনতে হবে না হলে খবর আছে । কিন্তু একদিকে খুব ভালোলাগে ভার্সিটিতে ভালো ও সুন্দর ম্যাডাম বলে পরিচিত । কিন্তু আমার বেলায় তা ভিন্ন ।
এমা আমি এখনো দাড়িয়ে আছি তাড়াতাড়ি যাই না হলে আবার বকা খেতে হবে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম ।
.
ফ্রেশ হয়ে সেই রুমে চলে এলাম । দেখি মাহি রেডি হয়ে বসে আছে । মুখটা শুকনো লাগছে । দেখে মনে হচ্ছে অনেক টেনশন ফিল করছে ।
কাছে গিয়ে দারালাম আর জিঙ্গেস করলাম ,
---এতো কি ভাবছেন বসে থেকে ।
.
কথাটা শুনে আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকালো । ওমা মাইয়া দেখি রাগি চোখে তাকালো । কিছু বলবে নাকি তাই বললাম ,
---এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো ।
---কেনো আবার আপনার আম্মু কিছু বলেনি ।
---হ্যা বলেছে ।
---তাহলে এখনো রেডি না হয়ে দারিয়ে আছেন কেনো ।
---এতো তাড়াতাড়ি কেনো অনেক সময় আছে বুঝলেন ।
---ধ্যাত আপনার সাথে আশা ভুল হয়েছে ।
---রেগে যাচ্ছেন কেনো ।
---রেগে যাবো না মানে ১২ টার পর আর সাক্ষর নিবেনা আপনার আম্মু আপনার মামা মানে রফিকুল স্যারকে বলেছিলেন আজকেউ করতে হবে ।
---সেটা আগে বলবেন না তাহলে এতো সমস্যা হতো না ।
---আচ্ছা আমি একাই যাচ্ছি ।
.
কথাটা বলেই চলে যেতে লাগলো ।
এখন আমি করি সে তো রেগে চলে যাচ্ছে । আমি কিছু না ভেবে মাহির ধরলাম । তখন মাহি পিছন ঘুরে আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকালো ।
কিছু না ভাবে হাতটা ছেড়ে দিলাম ।
---স্যরি আমি ইচ্ছে করে হাতটা ধরি নাই । আপনি যদি এভাবে রেগে বের হয়ে একা কলেজে যান তাহলে মামনি আমাকে কি করবে আর সবাই কি ভাববে একটু ভেবে দেখুন ।
.
কথাটা শোনার পর কি যেন একটা ভেবে বলে উঠলো ,
---তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিন ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে ।
---আচ্ছা ১৫ মিনিট সময় দিন ।
---৫ মিনিট বেশি , দেখেছেন কতো বাজে ।
---কত আর বাজবে ৯ঃ১৫-২০ বাজে ।
---ধ্যাত আপনি কি বলেন তো ।
---কেনো আমি মানুষ আর অন্য কেউ হলে কি আপনার সাথে কথা বলতাম ।
---আচ্ছা আপনি থাকেন আমি একাই যাচ্ছি ।
---আরে রাগ করছেন কেনো ।
---বেশি কথা না বললে খুশি হবো আর তাড়াতাড়ি রেডি হন না হলে আমি একাই যাবো ।
---আচ্ছা আপনি দারান আমি আসছি ।
.
কথা বললোনা ।
.
আমি আয়নার সামনে চুল গুলি ঠিক করতেছি ।
---কি আপনার ১৫ বেজে গেছে ।
.
বাব্বাবাহ্ ১৫ মিনিট চলে গেছে ।
---হয়ছে আসছি ।
.
মাহি আর আমি রুম থেকে বের হলাম ।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে মামনিকে খুঁজতেছি । এতো বড় বাড়ি কেমনে পাই ।
হঠাৎ পিছ. নে থেকে ডেকে উঠলো মামনি ,
---মাহিম ।
---জ্বী মামনি ।
.
মামনি নিচে নেমে এসে সাথে আন্টি আছে ।
---কোন রেস্টুরেন্টে খেয়েনিস তুই আর মাহি ।
---জ্বী মামনি ।
---এই মাহি গাড়ির চাবি নিয়ে যাও ।
---আমাদের গাড়ি আছে তো ।
---মাহিম আন্টির গাড়ি নিয়ে যাও গাড়ি নিয়ে গেছে ।
---কেনো মামনি ।
---সেটা তোমার আব্বু জানে ।
---ও ।
---নিয়ে যাও আর শোন তাড়াতাড়ি এসো বিয়ে বাড়ি যেতে হবে ।
---চেষ্টা করবো আন্টি ।
---যা মাহির দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
---হুমম যাচ্ছি মামনি ।
.
মাহিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম । বাহ্ গাড়ি তো দেখছি ২টা কোনটার চাবি দিলো ।
---দাড়িয়ে কি ভাবছেন তাড়াতাড়ি চলেন ।
---ওহ্ চলেন ।
.
চলে গেলাম লাল গাড়ির দিকে ।
এটাই হবে নতুন ছাড়া দিবেনা আন্টি । কারণ আমার রুচি সম্পর্কে অনেক জানে ।
.
অতঃপর
.
---কি হলো দাড়িয়ে কেনো উঠেন ।
---সামনে না পিছনে ।
---আপনার যেখানে খুশি ।
.
দেখি সামনে বসলো ।
---বেলটা লাগিয়ে নিন ।
---কেনো ।
---আরে টাইম দেখেছেন ।
---না কেনো ।
---আরে যদি দ্রুত গতিতে না চালায় তাহলে ১ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারবোনা ।
---১ ঘন্টার বেশি লাগবে ।
---আরে টেনশন করছেন কেনো সিঙ্গনিসার দিলে তো আর কোন সমস্যা নেই ।
---এখন ১০ঃ১৫ বাজে আর প্রায় ১ ঘন্টা পর ১২ বেজে গেলে হবেনা ।
---মামার সাথে কথা হয়েছে কোন টেনশনফিল করবেন না ।
---আরে কথা না বলে চলেন তো ।
---বেলটা লাগান ।
---আমি পারিনা ।
---আমি যেভাবে লাগাচ্ছি আপনি সেভাবে লাগান ।
.
আমি লাগালাম কিন্তু সে লাগাতে পারলোনা ।
---পারছিনা ।
---ঠিক আছে আমি লাগিয়ে দিচ্ছি ।
.
বেলটা লাগিয়ে দিলাম ।
.
গাড়িটা দ্রুত গতিতে চালাচ্ছি আমাকে ১১ঃ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌছতে হবে ।
অনেক রাস্তা অতিক্রম করেছি ।
কেউ কথা বলছি না ।
ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি ১০ঃ৫১ বেজে গেছে ।
কিছুখন পর জ্যামের মাঝে আটকা পরেছি । কি করি এখন বুজতে পারছিনা ।
মাহির দিকে তাকালাম অনেক টেনশনে আছে । কে জানে কি সাক্ষর দিতে হবে না দিলে হবেনা ।
.
কিছুখন পর আবার ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি অলরেডি ১১ বেজে গেছে ।
আর বেশি দেরি হবেনা ২০-২৫ মিনিট লাগবে । কিন্তুু জ্যামের কারণে আরও কিছুখন দেরি হবে ।
মাহি শুধু তার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে ।
আমার দিকে তাকালো দেখে আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি । আবার সামনের দিকে তাকালো ।
---আচ্ছা আর কয় মিনিট লাগবে পৌছেতে ।
---এই আর ২০ মিনিট লাগবে ।
.
আর কিছু বললো না ।
.
প্রায় ২০ মিনিট পর পৌছে গেলাম ।
---এখন জান ।
.
মাহি আমার দিকে তাকালো । কিছু একটা ভেবে বললো ,
---আপনি চলেন ।
---কোথায় ।
---প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে ।
---আমি যেতে পারবোনা ।
---আমার সাথে চলেন ।
---আমি যেতে পারবোনা ।
---কেনো ।
---আমি মামাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি আপনাকে নিয়ে যাবে ।
---আপনি যাবেন কি না সেটা বলেন ।
---কি মুশকিলে পরলাম রে বাবা ।
---কিছু বললেন ।
---কই কিছু না ।
---তাহলে চলেন ।
---চলেন ।
.
কার পাল্লাই পরলাম রে বাবা । মাত্র দুই দিন তাই এরকম আর তো ৩ মাস ২৮ দিন পরে আছে ।
---কি হলো কি ভাবছেন ।
---কিছু না চলেন ।
---আর শোনেন ।
---আবার কি ।
---তুমি করে বলবেন ।
---চেষ্টা করবো ।
---চেষ্টা করবো মানে । না বললে আমি......
---আচ্ছা ঠিক আছে ।
---গুড বয় ।
---আগে জানলে আপনাকে বলতাম না অন্য কাউকে #ভাড়াটে_গার্লফেন্ড করতাম ।
---কিছু বললেন আমাকে ।
---কিছু না চলেন ।
.
চোখ বড় বড় করে তাকালো । আল্লাহ কাকে ভাড়া করলাম ।
---চলো এখন ।
---গুড চলো ।
.
গাড়ি থেকে নেমে পরলাম । মনের ভেতর কেমন করে উঠলো
.
চতুর দিকে চোখ বুলালাম । দেখে অবাক সবাই তাকিয়ে আছে কিছুখন গাড়ির ভেতর ছিলাম ।
হয়তো কে কি মনে করেছে জানি না ।
দেখি মাহি নেমে পরলো ।
আমার কাছে এসে বললো ,
---চলো যাওয়া যাক ।
---হুমম চলেন ।
.
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ।
কি মুসকিলে পরলাম রে ।
---আচ্ছা চলো ।
.
মাহি আর আমি প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দিকে ।
.
কিছুখন পর চলে এলাম । মাহি স্যারের দরজায় নক করে বললো ,
---আসতে পারি স্যার ।
.
স্যার মাথাটা উচু করে বললো ,
---মাহি আসো ।
---আচ্ছা আপ...মানে তুমি ভিতরে যাও আমি এখানে থাকি ।
---ভিতরে আসো তুমি ।
.
কি আর করা ভিতরে চলে গেলাম ।
---মাহ চেয়ারে বসো ।
---জ্বী স্যার ।
---পাশে কে মানে উনি কি হয় ।
---না মানে স্যার ও আমার বয়ফেন্ড ।
.
কথাটা শুনে পরে যাওয়ার অব্স্থা ।
---নাম কি ।
---মাহিম ।
.
মাহির কথায় স্যার আমার দিকে তাকালো । কিছু মনে মনে ভেবে বলে উঠলো । আমি তো লজ্জায় শেষ ।
---বাহ্ নামের সাথে মিল আছে তো ।
---হুমমম স্যার একটা কথা ছিলো ।।
.
পিছনে থেকে বলে উঠলো স্যার...
---আরে রফিকুল স্যার আসুন ।
---স্যার ।
---আরে বসে কথা বলো ।
---স্যার মাহির ব্যাপারে কথা বলতে চাইছিলাম ।
---হ্যা বলো ।
---স্যার মাহি সাইন দিতে আসছে ।
---কেনো কাল আর আজ ১২ টা পর্যন্ত সময় ছিলো কিন্তুু এখনো সাইন দেয় নাই ।
---না মানে স্যার আমি এক যায়গায় আটকে পরেছিলাম ।
.
স্যার আমার দিকে বারে বারে তাকাচ্ছে কেনো বুঝতে পারছিনা ।
---ও ।
.
তারপর বললো ।
---এখানে সাইন দাও ।
.
তারপর মাহি সাইন দিলো ।
মামা বলে উঠলো ,
---মাহিম তোমার আম্মা কোথায় আছে ।
.
মামার কথাটা শুনে প্রিন্সিপাল স্যার আমার আর মামার দিকে তাকালো । সে ভাবছে স্যার আমার কে হয় ।
---আন্টির মেয়ের বিয়ে সেখানে । কেনো মামা ।
---তোমার আব্বু কোথায় ।
---অফিসে ।
---তা তোমার আম্মু ভার্সিটিতে ছুটি নিয়েছে কয় দিন ।
---জানি না মনে হয় আজকে দিন ।
---ও আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসো আমাদের বাসায় ।
---দেখি মামনিকে বলে কবে যায় ।
.
মাঝখানে প্রিন্সিপ্যাল স্যার বলে উঠলো ,
---রফিকুল স্যার ছেলেটা আপনার ভাগ্নে হয় ।
---জ্বী বড় বোনের ছেলে ।
---ও ।
---মামা মামনি ফোন করছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে ।
---আচ্ছা যাও ।
.
মাহি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলে দুজনে বেরিয়ে এলাম ।
.
তারপর মামার সাথে কথা বলে গাড়ির দিকে যাচ্ছি ।
পিছন থেকে মাহি বলে কে যেন ডাক দিলো দাড়িয়ে পরলাম । সম্ভোবত মাহির বন্ধু কিংবা ক্লাসমেন্ট ।
আমি একটু দূরে দাড়িয়ে আছি ।
এদিকে মামনি বারে বারে ফোন দিচ্ছে ।
তাদের দিকে আর চোখে তাকিয়ে দেখলাম মাহি আমাকে হাত দিয়ে দেখালো । কি বলছে আমাকে নিয়ে ।
আবার মামনি ফোন দিল । ফোন ধরতে ভয় করছে আবার বকা খেতে হবে । তবুও সাহস নিয়ে ফোনটা ধরলাম ।
---হ্যালো মামনি ।
---তোরা কোনে ।
.
যদি বলি মেডিকেল কলেজে আছি তাহলে বকা নিশ্চিত ।
---রাস্তায় আছি মামনি আর আসতে বেশি সময় লাগবেনা ।
---আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয় তাহলে সবাই রেডি হয়ে আছে ।
---ওকে ।
.
তাড়াতাড়ি করে ফোনটা কেটে দিলাম ।
মাহিরর কাছে এগিয়ে এসে বললাম ,
---মামনি ফোন দিচ্ছে তাড়াতাড়ি যেতে হবে ।
.
মেয়েটি এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আমি কোন জোকার ।
---কি রে এমন করে কি দেখছিস ক্র্যাস খেলি নাকি ।
---কি যে বলিস তোর বয়ফেন্ড না ।
---এখন যে সময় আছসে না কার জিনিস কে কেড়ে নেয় হাহাহাহাহা ।
.
দুজনে হেসে উঠলো আমার মেজাজটা গরম হয়ে গেলো কিছু বলতে পারছিনা ।
---দোস্ত তুই যা ভাইয়া রেগে যাচ্ছে ।
---আরে সমস্যা নেই ।
---কাল ক্লাসে কথা হবে ।
---ওকে ।
.
---আচ্ছা আমি আপনার বয়ফেন্ড ।
---না তো কি ।
---আর প্রিন্সিপাল স্যারকে আমি আপনার বয়ফেন্ড বলেছেন কেনো ।
---তো কি বলবো নাকি বলবো আমি আপনার #ভাড়াটে_গার্লফেন্ড ।
.
চোখটা বড় বড় করে তাকালাম ।
কিছু না বলে চলে এলাম । মাহি আমার সাথে সাথে এলো ।
.
অতঃপর
.
চলে এলাম আন্টির বাসায় । ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম ।
.
তারপর বিয়ে বাড়ি চলে এলাম ।
কিছুখন পর খাওয়া দাওয়া করানো হলো । বাড়ির এক পাশে একটু বসে আছি । এর মধ্যে কোথা থেকে মাহি এক পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে এলো কোলে করে । বুঝতে পারলাম ছোট বাঁচ্চা প্রিয় মনে হয় আর এটা সবার প্রিয় । পিচ্চি মেয়েটা অনেক কিউট দেখে সবাই কোলে নিবে ।
---দেখেন কত কিউট বেবি ।
---ঠিক আপনার মতো ।
---আপনার মতো ।
---আমার মতো মানে আমি কি বেবির বাবা যে আমার মতো হবে ।
---আমি কি বেবির আম্মা ।
একটু পরে দেখি সম্ভোবত মেয়েটার আম্মা চলে এলো । এসে বললো ,
---মাহি তুই ঈশাকে এখানে নিয়ে আসছিস আমি তো খুঁজে হয়রান ।
---কেন রে ।
---কে যেন বললো একটা মেয়ে পরে গিয়ে একটু কেটে গেছে আমি মনে করছি ঈশা পরে গেছে নাকি ।
---ও ।
---তোর বয়ফেন্ড নাকি ।
.
মাহি মাথা দিয়ে হ্যা সূচক দিলো ।
কি যে মুসকিলে পরলাম যার সাথে দেখা হচ্ছে তাকে বলছে মেজাজটা গরম হচ্ছে । কিন্তুু কিছুই করার নেউ আমি নিজেই নিজে বিপদ আনছি তাই মাথাটা ঠান্ডা করলাম ।
---অনেক হ্যান্ডস্যাম , অনেক হাইট , আর অসম্ভ সুন্দর তা নাম কি ।
.
মনে মনে আপুটাকে ধন্যবাদ দিলাম ।
---মাহিম ।
---তোর সাথে মিল আছে ।
---সবাই বলে রে ।
---তাই ।
---হ্যা রে দোস্ত ।
---আচ্ছা থাক পরে কথা হবে ঈশার বাবাকে খেতে দিয়ে এসেছি সেখানে যাই ।
---আচ্ছা যা দোস্ত ।
.
ঈশাকে নিয়ে গেলো ।
---দেখুন আপনি কিন্তুু বেশি বেশি বলছেন ।
---কোথায় বেশি বললাম ।
---এই যে সবাইকে বলছেন আমি আপনার বয়ফেন্ড ।
---তা ঠিক তো বলছি নাকি বলবো #ভারাটে_বয়ফেন্ড
---আপনি কিন্তুু ।
---বেশি বেশি বলছি তাই না ।
.
আমি আর কিছু বললাম না । সালার মেয়ে মানুষকে বাহিরে থেকে দেখি এক রকম ভিতরে এক রকম । কেউ বুঝতে পারবেনা এই মেয়ে এতো কথা বলে ।
---আপনার মামনি ডাকছে ।
---যাচ্ছি ।
---আচ্ছা আপনার আম্মুকে সত্যি কথা বলে দিবো ।
.
কিহ্ মুসকিলে পরলাম রে বাবা যখন তখন ব্যাকমেইল করছে ।
---না বলতে হবেনা সবাই কে বলবেন আর টিভি চ্যানেলে বলে দিন আমি আপনার বয়ফেন্ড ।
---আচ্ছা তাই দিবো ।
---আপনি কি সত্যি পাগল হলেন ।
---না তো আমি পাগলের ডাক্তার ।
---কি মেয়ের পাল্লাই পরলাম ৪ মাস আমার জীবনের বারটা বাজাবে ।
---কিছু বললেন ।
---নাতো কি বলবো ।
---তাহলে চলেন ।
.
মামনির কাছে চলে এলাম । মামনির কথা শুনে একটু খুশি হলাম ।
---তোর আব্বুর জ্বর খুব তোরা থাক আমি চলে যাবো ।
---আমিও যাবো ।
---কেনো আর তোর আন্টি রাগ করবে তো ।
---ভালো লাগছেনা মামনি আমার ।
---মিথ্যে বলিস কেনো ।
---কোথায় ।
---নাকি কোন ফেন্ড ফোন করেছে ।
---মিথ্যে বলবো কেনো মামনি মাহিকে জিঙ্গেস করেন কোন বন্দু ফোন করেছিলো কিনা ।
---আজকের দিন থাক কাল যাস ।
---মামনি আমার একদম ভালো লাগছেনা ।
---মাহি তুই থাকবি মা । যদি থাকিস তাহলে থাক কাল মাহিম এসে নিয়ে যাবে ।
---না আন্টি আমিও যাবো ।
.
কথাটা শুনে আমার দিকে তাকালো । মনে করছে আমি বলেছি নাকি মাহিকে ।
---আরে মামনি সত্যি বলছি আমি মাহিকে কিছু বলিনি ও নিজে বলছে ।
---আমি বুঝতে পারছি...
---আন্টি আমার ভালো লাগছেনা তাই বললাম মাহিম কিছু বলেনি ।
---আচ্ছা ঠিক আছে তোর আন্টিকে ফোন করে বলি দেখি কি বলে ।
.
মামনি ফোন দিলো আন্টিকে ।
মামনি আন্টির সাথে ফোনে কথা বলছে ।
.
কিছুখন পর দেখি কথা বলা শেষ ।
---তোর আন্টি রাগ করে ফেলেছে তুই থেকে যা মাহিম ।
---আমি থাকতে পারবোনা ।
---আচ্ছা লিমাকে বলে চলে যাই ।
---চলেন ।
---মা তুই থেকে গেলে খুব ভালো হতো তাহলে তোর আন্টি রাগ করবেনা ।
.
আমার দিকে মাহি তাকালো । আরে আমার দিকে তাকাবেন না তাহলে মামনি বিশ্বাস করবে যে আমি আপনাকে বলে দিছি না থাকার কথাটা ।
---আসলে কি আন্টি কাল কলেজে যেতে হবে এমনি কিছুদিন ধরে ক্লাস করছিনা ।
---আচ্ছা ঠিক আছে ।
---মামনি আব্বু কি গাড়ি পাঠিয়ে দিবে নাকি টেক্সিতে যেতে হবে ।
---তোর আব্বু পাঠিয়ে দিছে গাড়ি এসে যাবে আধঘন্টার মধ্যে ।
---ও আচ্ছা ঠিক আছে ।
---চল লিমার কাছে যাই ।
.
চলে এলাম আন্টির মেয়ের কাছে ।
তার সাথে কথা বললাম । আসতে দিবেনা মামনি অনেক কথা বুঝিয়েছে তারপর আসতে দিলো । এর মধ্যে গাড়ি চলে এসেছে ।
লিমা ও নতুন জামাই তাদের ফ্যামেলির সবাইকে বলে চলে এলাম গাড়ির কাছে ।
তখন ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি ৬ঃ৫০ বাজে ।
গাড়িতে উঠে পরলাম । বিয়ে বাড়ি থেকে সোজা বাসার দিকে যাচ্ছি ।
আব্বুর জন্য কষ্ট হচ্ছে আব্বুর অনেক জ্বর । বাসায় কেউ নেই আব্বু আর আঃ রহিম চাচা ছাড়া । ওষুধ খেয়েছে কিনা আল্লাহ ভালো জানে আর আব্বু জানে ।
---মামনি আব্বুকে ফোন দিয়েছেন কি আমরা বাসায় আসছি ।
---দিয়েছি কিন্তুু আমাদের থেকে যেতে বললো তখন বলেছিলাম আমি আসতেছি তখন তোর আব্বু বলেছিলো তোদের থাকতে কিন্তুু তোরা থাকলিনা ।
---সত্যি মামনি ভালো লাগছিলোনা ।
---তোর আবার কোথায় ভালো লাগে নানুর বাড়ি গেলে একদিনের উপরে থাকিস না আর এটা তো আন্টির ।
---নিশ্চুপ ।
.
মামনি আর কিছু বললোনা কারণ আর কথা বলে লাভ নেই কোন কথা মুখ থেকে বের হবে না তাই আর মনে হচ্ছে বলছেনা । শুধু মামনির আর আমার
গ্লাসের দিকে তাকালাম মাহিকে দেখার জন্য । মাহির একটা ব্যবহার খুব পছন্দ হয় কেউ কথা বললে সেখানে কথা বলেনা তাকে জিঙ্গেস না করা পর্যন্ত ।
.
ককিছুখন পরে আঙ্কেলকে জিঙ্গেস করলাম ।
---আঙ্কেল আর কতখন লাগবে ।
---এক ঘন্টা তো লাগবে চাচ্চু ।
.
এখনো এক ঘন্টা । প্রায় ১ ঘন্টা বেশি হয়েছে গাড়িতে উঠেছি । গ্লাসের দিকে তাকালাম মাহি আর মামনি কথা ববলছে তাই আমি ফোনটা বের করে ভাইসিটি গেম খেলতে শুরু করলাম ।
আবার ঘড়ির টাইম দেখলাম ৯ঃ৫৫ বাজে ১ ঘন্টা চলে গেছে কিন্তুু এখনো পযন্ত বাসায় পৌছেতে পারলাম না ।
আবার আঙ্কেলকে জিঙ্গেস করলাম ,
---আর কতোখন লাগবে আঙ্কেল ।
---আর ১৫ মিনিট লাগবে ।
---এখনো ১৫ মিনিট ।
---চাচ্চু কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি ।
---না আঙ্কেল ।
.
পিছনে থেকে মামনি বলে উঠলো ,
---মাহিম তোর আব্বু কিছু খাইনি এখানে কোন ভালো রেস্টুরেন্ট আছে নাকি ।
---মামনি এদিকে আমি আসি নাই তাই বলতে পারলাম না ।
---ম্যাডাম ভালো রেস্টুরেন্ট রেখে আসলাম ।
---সামনে কি আরও আছে করিম ।
---আছে কিন্তুু অনেক রাত হয়েছে বন্ধ করতে পারে গাড়িকি ব্যাক করে রেস্টুরেন্টে যাবো ।
---আচ্ছা যাও ।
.
আঙ্কেল রেস্টুরেন্টের কাছে এসে গাড়িটা থামালো ।
আমি নেমে রেস্টুরেন্ট থেকে আব্বুর জন্য খাবার নিয়ে আসলাম ।
.
১০ঃ৪০ মিনিট এসে গাড়ি বাসায় চলে এলাম ।
আমি নামতে যাচ্ছি তখন মামনি বলে উঠলো ,
---মাহিকে নিয়ে আয় ।
---কেনো ঘুমিয়ে গেছে ।
---আমি কেমনে নিয়ে আসবো চাউলের বস্তা ।
.
কথাটা শুনে মামনি রেগে গেলো ।
---আপনি বলেন কেমনে নিয়ে যাবো রুমে এর চাইতে আপনি পানি দিয়ে আপনি ঘুমটা ভেংঙ্গে দিন ।
---ফিল্ম দেখিস না নায়ক নায়কাকে কেমনে নিয়ে আসে সেরকম করে নিয়ে আয় ।
---এটা তো ফিল্ম না মামনি ।
.
মামনির চোখের দিকে তাকাতে দেখি বড় বড় করে তাকিয়ে আছে । বোঝা যাচ্ছে আমাকে যে কি করবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা ।
আর কিছু না বলে গাড়ির ভেতর মাহিকে কোলে তুলে নিয়ে যাওয়া লাগবে ।
---আঙ্কেল খাবার গুলি নিয়ে আসেন ।
---আচ্ছা ।
.
কি আর করা পুলিশের মেয়ে বলে কথা ।
তাই ইচ্ছে না থাকা সত্যে মাহিকে কোলে নিতে হচ্ছে ।
তারপর মাহিকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে এলাম ।
এতো ওজনের চাউলের বস্তা থুক্কু মাহিকে কোলে নিয়ে আশা অনেক কষ্ট ।
মাহিকে খাটে শুয়ে রেখে আসতে যাবো তখন কিছু একটা শার্টের সাথে আটকে আছে ।
চেষ্টা করলাম সেটা ছাড়াতে কিন্তুু ছাড়ছে না ।
হাত দিয়ে ছাড়াতে পরছিনা যদি মামনি ও মাহির ঘুম ভেংঙ্গে যায় তখন কি ভাববে ।
এখন আমি কি করি ।
.
.
.
অনেক বড় করে পর্বটা দিলাম ।
আগের পর্বটা ছোট হওয়াতে এটা বড় হয়ে গেলো ।
।
।
।
চলবে পরবর্তী পর্বে ।।।
।
।
।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।।।
।
।
।
লেখকঃ নাসির ইসলাম মাহিম ( মাহাদীর আব্বু )
#ভাড়াটে_গার্লফেন্ড
।
পর্বঃ একাদশ ( ১১তম )
।
।
।
এখন আমি কি করি । মামনিকে ডাক দিবো কি নাকি নিজেই হাত দিয়ে বুঝতে পারছিনা । সব কিছু ভেবে মামনিকে ডাক দিলাম ,
---মামনি ।
.
মামনি এগিয়ে এসে বললো ,
---কি হয়েছে ।
---দেখেন মাহির গহনা শার্টের সাথে আটকে গেছে ছাড়িয়ে দেন ।
---ও দিচ্ছি ।
.
মামনি গহনা ছাড়িয়ে দিলো । তারপর দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছাড়লাম ।
তারপরে মামনি বলে উঠলো ।
---ফ্রেশ হয়ে খেতে আয় ।
---জ্বী আসছি ।
---তাড়াতাড়ি ।
.
বলেই চলে গেলো । আমি মাহির দিকে তাকালাম । দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু খুব দুষ্ট । কেউ বুঝতে পারবেনা মেয়েটি দুষ্ট ও অনেক ভালো ।
মনে হয় বেশি রাত জাগতে পারে না । আর হয়তো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গভীর রাতে অথবা শেষ রাতে উঠে পড়াশোনা করে । হয়তো এটা অভ্যাস হয়ে গেছে তাই রাতে আগেই ঘুমিয়ে পরে ।
.
ওহ্ এখনো ফ্রেশ হতে যাই নি তাড়াতাড়ি যাই না হলে বকা খেতে হবে ।
.
অতঃপর
.
খাবার খাচ্ছি তখন মামনি বললো ,
---মাহিম কাল তো অফিস যাবে না তোর আব্বু একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাস ।
---আচ্ছা ।
---শোন কাল অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে যাস ।
---আচ্ছা দিয়ে যাবো ।
---তোর মন খারাপ নাকি ।
---হঠাৎ এই কথা মামনি ।
---কথা বলছিস না যে তাই ।
---ও ভালো লাগছেনা ।
---কেনো কিছু হয়েছে ।
---না কিন্তুু মনটা খারাপ হয়ে আছে ।
---কিছু লুকাচ্ছিস নাকি ।
---না তো কেনো মামনি ।
---তোর কথাবার্তা কেমন জানি আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা লুকাচ্ছিস ।
.
আসলে মামনি সব মা তার সন্তানের মনের অবস্থা বুঝতে পারে । কেমন করে বুঝতে পারে এটা আজ পযন্ত ভেবে পেলাম না । হয়তো আল্লাহ তা'আলা মেয়েদের অর্থাৎ মা জাতির এক বিষেশ গুণ দিয়ে দিছি যা পুরুষের সেরকম বোঝার ক্ষমাতা দেন নি ।
মামনির কথায় ভাবনায় ঘোর কাটলো ,
---কি রে খাবার সামনে নিয়ে কি ভাবছিস যদি কিছু হয়ে থাকে আমাদের বল তা আমরা সমাধান করে দিবো আর তুই যদি এরকম কথা লুকিয়ে রাখিস তা হলে আমাদের সম্ভব হবেনা ।
---বল আব্বু তোর কিছু হয়েছে কিনা তোর আম্মু আমি সেটা চেষ্টা করবো ।
---আসলে মামনি আমার কিছু হয়নি মনটা এমনি তে খারাপ হয়ে আছে ।
---শোন কোন কিছু লুকিয়ে লাভ কি বল এর চাইতে আমদের সব বলে দে ।
---সত্যি বলছি মামনি কিছু হয়নি ।
---যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে বলিস আর যদি না বলিস তা হলে পরে সেটার মাশুল দিতে হবে নিরবে যেখানে কেউ দেখবে না সেখানে চোখের পানি ফেলতে হবে নিরবে ।
---রেখা তোমার কথা বুঝতে পারলাম না ঠিক ।
---যেটা বলেছি হয়তো সে বুঝে গেছে মাহিমের আব্বা ।
.
মামনির কথা শুনে বুুঝতে পারলাম কি বলেছে । আব্বু বুঝে গেছে এটা বড়দের একটা গুণ যেখানে ছোটরা সহজে বুঝতে সক্ষম না । থাক ওসব কথা তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে থাকতে হবে ।
তাই তাড়াতাড়ি খেতে লাগলাম ।
.
আমার এরকম তাড়াতাড়ি খাবার খাওয়া দেখে মামনি বললো ,
---যেখানে যাও না কেনো যেটা সত্যি সেটা একদিন প্রকাশ পাবে সেদিন বলে লাভ নেই এর চাইতে আব্বু আছে আমি আছি এদের বলে নিজেকে হালকা করে নিওয় ।
.
কথাটা শুনে মামনির মুখের দিকে তাকালাম দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমি মামনির দিকে তাকালাম না খাবারের দিকে তাকালাম । খেতে ইচ্ছে করছে না হাত প্লেটের উপর রেখে খাবার হাতাতে লাগলাম ।
আমার এরকম দেখে মামনি বলে উঠলো ,
---আমি চাইনা খা...
.
কথাটা শোনার আগে আবার ইচ্ছা না থাকা সত্যে খেতে লাগলাম । মামনি আবার বললো ,
---জোর করে কিছু হয় না যেটুকু তুমি পারবে সেটুকু খেয়ে নাও না হলে পেট খারাপ করবে ।
---আচ্ছা তুমি খেতে দাও তো ছেলেটাকে সেই তখন থেকে কিছু একটা বলে যাচ্ছো ।
---আচ্ছা আমি আর কিছু বলবোনা ।
---আরে তুমি আবার রাগ করছো কেনো । যখন মাহিমের ইচ্ছে হয় সে তখন যেনো বলে আমরা সেটা বহন করার চেষ্টা করবো ।
---দেখ নিজে যেন ভেংঙ্গে না যাও ।
---তুমি আছো সেটা কন্ট্রোল করবে ।
---সেটা তো আমাকে করতে হয় ।
---আব্বু তুই তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পর সব ঠিক হয়ে যাবে ।
.
আমি কিছু বললাম না মাথা দিয়ে আচ্ছা বলে দিলাম ।
জানি মামনি ও আব্বু দুজনে খুব ভালোবাসে তাই হয়তো আমার সব কিছু মেনে নিতে পারেনা । কারণ যদি কষ্ট পাই সেই কষ্টের বেশি কষ্ট পায় আমার মামনি । আব্বুর তো কথাই নেই আমার চেয়ে তিনি বেশি ভেংঙ্গে পরে বুঝতে পারলেন ।
.
কিছুখন পর খেয়ে উঠে আসলাম । আসার সময় মামনি স্পষ্ট সুরে বলে দিলেন ,
---রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে সকালে তাড়াতাড়ি উঠবে । দুজনকে রেখে আসতে হবে কথাটা মনে থাকে যেনো ।
.
আমি কিছু না বলে অন্য রুমে চলে আসলাম । আমার রুমে মাহি শুয়ে আছে ।
বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম । ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি ১২ঃ০৩ বাজে ।
ফোনটা বের করে ৭টার এলাম দিলাম ৫ বার ১ মিনিট বেশি করে । একটা দিলে হয়তো বুঝতে পারবোনা তাই ৫ বার ।
হয়তো ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করবো কিন্তু ঘুম যে চোখে আসে না ।
মাথার ভেতর কেমন করে সেই দিনের স্মৃতি মনে পরে বুঝতে পারিনা ।
এগুলি ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি জানি না ।
.
সকালে এলামের টোনে ঘুমটা ভেংঙ্গে গেলো । ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ৭ঃ১০ বাজে । উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম ।
.
সকালে খাবার খেতে লাগলাম । মামনি আব্বু ও মাহি কেউ কিছু বলছিনা আর কি বলবো কিছু বলার নেই তাই খাবার খাওয়ার মনোযোগ আছি ।
খাওয়া প্রায় শেষ তখন মামনি বলে উঠলো ,
---তাড়াতাড়ি করে বের হলে মাহিম তোমার সুবিধা হবে তাহলে অফিসে লেট হবেনা ।
---আপনার ইচ্ছে যখন বের হন তখনি যাবো ।
---তাহলে খাবার খেয়ে বের হই আমরা ।
---একটু রেস নিয়ে তারপর বের হলে হয়না মাহিমের মা ।
---হবে কিন্তুু দুজনকে ড্রপ করে দিতে প্রায় ৪০-৫০ মিনিট লাগবে এর চাইতে আগে বের হলে তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে পারবে বেশি ধেরি হবেনা ।
---আমি ফোন করে দিয়ে দিচ্ছি তাড়াতাড়ি সামলে নিবে ।
---আব্বু সমস্যা নেই ফোন করতে হবে না আমি ঠিক সময়ে সব কিছু ঠিক মতে করতে পারবো সমস্যা হবেনা ।
---ঠিক আছে যেটা ভালো মনে করিস সেটা কর ।
.
এর মধ্যে মাহি বলে উঠলো ,
---সমস্যা নেই একটু রেস নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে আন্টিকে নামিয়ে দিলে হবে আমি বাসে করে যেকে পারবো মেডিকেলে ।
---কি বলছিস মা বাসে যাবি কেনো আর যেতে হবে না একটু তাড়াতাড়ি বের হলে কোন সমস্যা হবেনা ।
---আচ্ছা খেয়ে সবাই রেডি হয়ে নাও আমি গেলাম ।
.
খাবার শেষ করে রুমে চলে যাচ্ছি ।
.
রুমে এসে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি । আমার একটা বদ অভ্যাস আছে কোন কিছু তাড়াতাড়ি করতে পারিনা লেট হবে । সেজন্য আজ আগে থেকে বের হচ্ছি তাড়াতাড়ি রেডি হচ্ছি ।
কিছুখন পর ঘড়ির দিকে তাকালাম দেখি ৮ঃ৩৫ বাজে । জুতোটা পরতে লাগলাম ।
হাত ঘড়িটা নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলাম ।
সিঁড়ি দিয়ে নামছি ঘড়িটা লাগালাম হাতে । সামনের দিকে তাকাতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো । মামনি আর মাহি সোফায় বসে কথা বলছিলো ।
মামনি মাহিকে হাত ধরে বলছে ,
---মা একটা কথা দিবি ।
---কি আন্টি ।
---আগে কথা দে মা ।
---কি কথা আন্টি ।
---তুই মাহিমকে ছেড়ে যাবি না তো কোন দিন ।
.
কথাটা শুনে মাহি মামনির চোখের দিকে তাকালো । আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ।
মামনি আবার বললো ,
---কি হলো মা বল ।
---না আন্টি যাবোনা ।
---সত্যি বলছিস মা ।
---হ্যা আন্টি সত্যি বলছি আপনাদেরকে ও মাহিমকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা ।
---জানিস মা মিষ্টি এ কথা বলেছিলো ছেড়ে যাবেনা কিন্তুু দেখ ঠিক চলে গেছে ।
.
মিষ্টির কথা বলে মামনি চোখের পানি মুছে ফেললো ।
আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা । কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পরছিনা ।
মাহি মামনিকে জিঙ্গেস করলাম ,
---কে আন্টি এই মিষ্টি ।
---এখনো তোকে মাহিম বলেনি আর কেমনে বলবে বল একটা ছেলে বা মেয়ে কেউ কি তার অতীতের কথা কেউ বলে ।
---আমি কিছু বুঝতে পারছিনা আন্টি মিষ্টি আর অতীত কি বলছেন ।
---তোকে বলা দরকার মা আমি সব বলছি ।
---আচ্ছা বলেন আন্টি ।
---মাহিম প্রথমে একটা মেয়েকে ভালোবাসতো মেয়েটি ভালোবাসতো কি জানি না কিন্তু মাহিম মিষ্টিকে অনেক ভালোবাসতো । মিষ্টি যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ পরে তখন মিষ্টি বলেছিলো তার বাবা নাকি তার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে বাসায় তখন মাহিমকে মিষ্টি বলে তাকে বিয়ে করতে তখন মাহিম সবে মাত্র পড়াশোনা শেষ করে আব্বুর সাথে অফিসে চাকরি করছে তখন মাহিম বলেছিলো একটা বছর ধর্য ধরো তারপর আব্বু আর মামনিকে বলে কিছু একটা করবো তখন মিষ্টি বাসায় গিয়ে বলে পড়াশোনা করতে চাই আমি তখন মিষ্টির বাসায় মেনে নেয় । প্রতিদিন মাহিমকে টেনশনে দেখে মাহিমের আব্বু আর আমি জিঙ্গেস করলে মাহিম কিছু বলেনি এসব ব্যাপারে এরিয়ে যেতো এভাবে কেটে যেতে লাগলো দিন । পরে এক বছর বাধে মাহিম মিষ্টিকে বললো তুমি পরীক্ষার কথা বলে আর কিছু দিন ম্যানেজ করে নাও কিন্তু মিষ্টি সেটা করতে চাইনি মাহিমের জরা জরিত মিষ্টি রাজি হয়ে যায় পরে মিষ্টি ফ্যামেলিকে বুঝিয়ে সুজিয়ে তাদের রাজি করায় কিন্তু......
.
বলেই সিঁড়ি দিকে তাকায় দেখে আমি দাড়ি আছে ।
মাহি আমার দিকে তাকালো ।
মামনি আর কিছু না বলে চোখের পানি মুঁছে বললো ,
---মা অন্য একদিন বলবো চল দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
---হুমম আন্টি চলেন ।
.
আমি আর দেরি না করে চলে গেলাম । বাহিরে এসে চোখটা মুছে গাড়ির ভেতর বসে পরলাম ।
.
কিছুখন পর দেখি মামনি আর মাহি চলে আসলো ।
চলছি মামনির ভার্সিটির দিকে প্রথমে মামনিকে নামিয়ে দিয়ে মাহিকে মেডিকেলে পৌছে দিবো ।
.
মাঝে মাঝে গ্লাসে দিকে তাকাচ্ছি দেখি মামনি আর মাহি কথা বলছে । মাহি মাঝে মাঝে আমার দিকে আর চোখে তাকায় ।
.
আধঘন্টা পর মামনির ভার্সিটির ভেতর নামিয়ে দিয়ে আমি আবার মাহির মেডিকেলের দিকে যাচ্ছি ।
.
কেউ কথা বলছেনা আমি গ্লাসের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে মাহিকে দেখছি ।
কিছুখন পর মাহি বলে উঠলো ,
---আচ্ছা সেই মেয়েটার বিয়ে হয়েছে ।
.
আমি শুনে না শোনার ভান করে গাড়ি চালাচ্ছি ।
আবার মাহি বললো ,
---আচ্ছা সেই মেয়েটার বিয়ে হয়েছে ।
---সেটা না জানলে চলবে আপনার ।
---আপনি কি রকম মানুষ বলেন তো কিছু জানতে চাইলে বলতে চান না কেনো ।
.
আমি কোন উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি ।
.
কিছুখন বাধে মেডিকেলে পৌঁছেগেলাম ।
গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখি রাগ করে আছে । আরে রাগ করলে আমার কি যেটা বলতে বাধ্য নই সেটা জিঙ্গেস করে কেউ উত্তর পাবেনা ।
গাড়ি ভেতর বসে কি যেন ভাবতেছে । আমরা যে মেডিকেলে চলে এসেছি সেটার কোন খেয়াল নেই ।
আমি মাহিকে বললাম ,
---মেডিকেলে এসেগেছি ।
---ও হ্যা ।
---তাহলে যান ।
---একটা কথা বলেছিলাম সেটার কোন উত্তর দিলেন না ।
---যেটা জিঙ্গেস করে তখনি উত্তর পাননি সেটা আর জিঙ্গেস করে উত্তর পাবেন না তাই আর আশা করি পরবর্তী আর জিঙ্গেস করবেন না ।
---কেনো সেটা এমন কি যা বলা যাবেনা ।
---বাধ দেন তো সে কথা ক্লাসে গিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করেন ।
---জ্বী আপনি অফিসে গিয়ে ফোন দিয়েন ।
---যদি মনে থাকে তাহলে দিবো ।
---মানে ।
---কিছুনা টাইম নাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে ।
---আচ্ছা যান ।
.
মাহি নেমে যায় আমি গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম অফিসের দিকে । যাওয়ার সময় লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখলাম দাড়িয়ে দেখছে গাড়ির দিকে ।
.
অফিসে বসে আছি হঠাৎ মনে হলে মাহি পৌঁছে ফোন দিতে বলেছিলো । ফোনটা বের করে দেখি মামনি কয়েক বার ফোন দিয়েছিলো ।
মামনিকে ফোন দিয়ে বললাম ,
---মামনি ফোনটা পকেটে ছিলো তাই বুঝতে পারিনি ।
---ঠিক আছে ভালো ভাবে পৌছে গেছিস ভালো হয়েছে যদি কোন দরকার আব্বুকে ফোন করিস ।
---জ্বী ।
---আল্লাহ হাফেজ ।
.
তখন ফোনটা কেটে দিলো মামনি । তখনি মাহিকে ফোন দিলাম রিং বেজে কেটে গেলো । হয়তো ক্লাসে আছে তাই ফোন ধরছেনা । আর একবার ফোন দিলাম এবার ফোনটা একটু বেজে তারপর ধরলো ।
---হ্যালো ।
---কখন অফিসে গেছেন ।
---এক ঘন্টা আগে ।
---ও দুপুরে ঠিক সময় মতো লান্চ করবেন ।
---ঠিক আছে বাই ।
---বাই ।
.
ফোনটা কেটে অফিসের কাজ করতে শুরু করলাম ।
.
রাতে খেয়ে শুয়ে পরেছি । তখন ফোনটা বেজে উঠলো । দেখি মাহি ফোন দিয়েছে ।
---কি করেন ।
---শুয়ে আছি আপনি ।
---পড়তে বসবো খেয়েছেন ।
---খেয়ে আসলাম আপনি ।
---খেয়ে আসলাম এই মাত্র ।
---ও তাহলে পড়তে বসেন কেমন বাই ।
---বাই ।
.
আমি ঘুমিয়ে পরলাম ।
.
সকালে ডক্টর আঙ্কেল এসে আব্বুকে দেখে যায় । এখন মোটামুটি সুস্থ আছে কিন্তু অসুখ স্থির আছে । কোমছে না শুধু ওষুধ খেতে হয় না হলে সমস্যা হয় । নানা রকম টেনশন আমাকে ঘিরে ধরছে ।
.
আব্বুর অসুখ আরও বেশি টেনশন খুব । অফিসের সব কাজ আমাকে একাই করতে হয় ।
প্রতিদিন সকাল সকাল উঠি অফিসের কাজ করি টাইম মতো অফিসে যাই ।
মাহি প্রতিদিন সকালে রাতে ফোন দেয় কখন কি করছি ঠিক মতো খেয়েছি কিনা সব জিঙ্গেস করে ।
.
আমি মাহিকে এড়িয়ে গেলে মাহি সেটা এড়িয়ে যায় না । কেমন জানি আমার দিকে খেয়াল রাখে ।
মাঝে মাঝে মামনির সাথে কথা বলে । মাঝে মাঝে মাহিকে বাসায় আনতে হয় মামনির জন্য । সে তো জানে না যে সে আমার গার্লফেন্ড না বরং মাহি আমার #ভাড়াটে_গার্লফেন্ড ।
.
প্রতিদিন ঠিক মতো ঘুম থেকে উঠি । টাইম মতো অফিসে যাওয়া । সকাল ও রাতে মাহির সাথে কথা বলা । আমি মাহির মায়াতে পরতে চাই না সেই জন্য মাহিকে এড়িয়ে যায় কিন্তু এতে কোন লাভ হয় না ।
.
এভাবে কেটে যাচ্ছে দিন ।
সকাল সকাল উঠে অফিসের কাজ করা আর টাইম মতো অফিসে যাওয়া ।
.
অফিসে বসে আছি মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে । কেনো এরকম হচ্ছে আমার সাথে ।
এর মধ্যে মামনির ফোন দিচ্ছে তবুও ধরছি না ফোন বেজে চলছে । আমি রিসিভ করছি না । বারে বারে ফোন বেজে কেটে যাচ্ছে তবুও ফোন রিসিভ করছি না ।
হঠাৎ মনে হলো আব্বুর তো কিছু হলো না ।
আব্বুর কথা মনে পরে আর কিছু ভালো লাগছিলোনা । তখনি মামনি আবার ফোন দিলো তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করে বললাম ,
---হ্যালো মামনি ।
---কোথায় তুই ।
---কেনো অফিসে আর আপনার কন্ঠ এরকম শোনা যাচ্ছে কেনো মামনি কিছু হয়েছে ।
---তুই কিছু শুনিস নাই ।
---না মামনি কেনো কি হয়েছে ।
.
মামনির কথা শুনে কিছু বলতে পারছিনা । মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না ।
।
।
।
চলবে পরবর্তী পর্বে ।।।
।
।
।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।।।
।
।
।
লেখকঃ নাসির ইসলাম মাহিম ( মাহাদীর আব্বু )
#ভাড়াটে_গার্লফেন্ড
।
পর্বঃ দ্বাদশ ( ১২তম )
।
।
।
---চুপ হয়ে গেলি কেনো ।
.
কি করে কথা বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা ।
---মাহিম তুই ঠিক আছিস ।
---হুমমম ।
---তুই তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে চলে আয় রক্ত লাগবে ।
---আচ্ছা আমি এখনি আসছি ।
---তাড়াতাড়ি আয় ।
.
ফোনটা কেটে তাড়াতাড়ি করে আব্বুর ফোনে ফোন দিলাম ,
---হ্যালো আব্বু ।
---হুম বল ।
---মতিন চাচ্চুকে ফোন দিন ।
---কি হয়েছে মাহিম এভাবে কথা বলছিস কেনো তোর কিছু হয়েছে ।
---আমার কিছু হয়নি আব্বু । আপনি মতিন চাচ্চুকে ফোন দিয়ে অফিসের কাজ সামলে নিতে বলেন আমি এক জায়গায় যাচ্ছি ।
---কেনো কি হয়েছে ।
---আব্বু পরে বলবো এখনি ফোন দিয়ে বলেন ।
---আচ্ছা আমি এখনি ফোন দিয়ে বলছি ।
---হুম আব্বু ।
.
ফোনটা কেটে রুম থেকে বের হয়ে এসেছি তখন মনে হলো মানিব্যাগটা রেখে এসেছি ।
তখন আমার রুমে চলে এলাম । মানিব্যাগটা নিয়ে গাড়িতে উঠে হসপিটালের দিকে রওনা দিলাম ।
.
প্রায় ৩৫ মিনিট পর হসপিটালে পৌঁছেগেলাম ।
গাড়ি থেকে নেমে আই সি ইউ এর রুমের সামনে দেখি মামনি বসে আছে ।
আমি যাওয়াতে মামনি বুুঝতে পেরে আমাকে ধোরে কাঁদতে লাগলো ।
আমি মামনিকে সান্তনা দিবো কি করে বুঝতে পরছিনা । আমি কেমনে সান্তনা দিবো । ভার্সিটির ম্যাডাম হয়ে ভেংঙ্গে পরছে তাকে কেমনে সান্তনা দেই যে কিনা শত শত মানুষকে সান্তনা দেয় । আমার সেখানে কোন সান্তনা দেওয়ার ভাষা নাই ।
---আমি ইচ্ছে করে মাহিকে আসতে বলিনি মাহিম ।
---আমার বিশ্বাস ।
---জানিস মাহিম আমি বুঝতে পারিনি এটা ঘটে যাবে । কেমন করে সব ঘটে গেলো ।
---আরে কাঁন্না করছেন কেনো দেখেন ঠিক হয়ে যাবে ।
---আমাকে মাফ করে দে মাহিম ।
---কি বলছেন মামনি মা হয়ে কখন ছেলের কাছে মাফ চাই । আপনি তো আর ইচ্ছে করে এসব করেন নাই । যা ভাগ্যে ছিলো তাই হয়েছে এতে কারও হাত নেই ।
---হুমমম জানি তবুও কেমন জানি নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে আমি যদি না ফোন দিতাম তাহলে মাহির এরকম হতো না ।
---মাহির আব্বুর কাছে ফোন দিয়েছেন ।
---আমি তো আর জানি না ।
---ও ।
.
মামনিকে সিটে বসিয়ে দিলাম । এতো ভালোবাসে মাহিকে ।
আমি জানি মামনি এরকম কেনো করছে । মাহির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি আবার আগের মতো হয়ে যাবো । কোন মা কেউ কি চায় নিজের ছেলে/মেয়ের এরকম অবস্থা দেখতে চায় যে কষ্টের জন্য একবার নিজেকে মৃত্যু যাত্রী হয়েছিলো সে আজ আবার সেরকম হয়ে যাক সেটা কি চায় । না কোন মা-বাবা চায় না তার সন্তান যেন ভালো না থাকে , সব মা-বাবা চায় তার সন্তান ভালো থাকে সুখে থাকে ।
.
দাড়িয়ে থেকে এসব ভাবতেছি । কারও কথায় বাস্তব্যে ফিরলাম ,
---ভেতরে পেসেন্টের অবস্থা খারাপ আরও রক্ত লাগবে যা ছিলো তা ফুরিয়ে গেছে ।
.
মামনি কথাটা শুনে কেমন জানি হয়ে গেলো আমার দিকে তাকালো । আমি জিঙ্গেস করলাম ,
---রক্তের গুরুপ কি ।
.
কথাটা শুনে নার্স ম্যাডাম একটু ভেবে বলে উঠলো ,
---(O Negative) ও নেগেটিভ ।
.
নার্সেরর কথাটা শুনে বলে উঠলাম ,
---কয় ব্যাগ রক্ত লাগবে ।
---এক ব্যাগ রক্ত লাগবে ।
---রক্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করুন আমি রক্ত দিবো আমার রক্তের গুরুপ 0 ও নেগেটিভ ।
---আপনি আমার সাথে ভিতরে আসেন ।
.
নার্সের সাথে ভিতরে চলে গেলাম ।
আমাকে কেবিনে শুয়ে থাকতে বললো । আমি শুয়ে পরলাম । ডাক্তার এসে আমাকে রক্ত নিচ্ছে ।
তখন আমার থেকে এক ব্যাগ রক্ত নিলো ।
.
কিছুখন পর রক্ত নেওয়া শেষ হলে নার্সটা আমার হাতটা ধরে উঠা নামা করালো । হাতে একটি ব্যথা অনুভব করতে পারছি । তবুও ব্যথা না পাওয়ার অভিনয় করে গেলাম । কিছুটা দূর্বল অনুভব করতে পারছি । এক ব্যাগ রক্ত নেওয়া হয়েছে আমার থেকে ।
.
নার্সটি তখন বললো ,
---এখন আপনি বাহিরে যেতে পারেন আর কোন সমস্যা হবেনা ।
---ঠিক আছে আমি বাহিরে যাচ্ছি ।
---আর শুনুন ।
---হ্যা বলুন ।
---হাত দিয়ে এখন কিছু করবেন না একটু হাতটা উঠা নামা করান ।
---আচ্ছা সমস্যা নেই আমি ঠিক আছি ।
.
বাহিরে আসা মাত্র মামনি কাছে এসে বললো ,
---এখানে বসে পর ।
---আপনি বসেন আমি ঠিক আছি ।
---আরে বস আমি জানি একটু ক্লান্ত মনে হচ্ছে ।
---না মামনি আমি ঠিক আছি ।
.
মামনি আমাকে সিটে জোর করে বসালেন ।
আমি হাতটা ধরে আছি । ব্যথা অনুভব হচ্ছে তবুও মামনির সামনে হাসি মুখে কথা বলছি ।
ঘটনাটা কেমন করে ঘটে গেলো মামনিকে জিঙ্গেস করি ।
---মামনি কেমন করে মাহির এ অবস্থা হলো ।
.
মামনিকে জিঙ্গেস করায় মামনি মাথাটা নিচু করলো । আমি আবার জিঙ্গেস করলাম ।
---মামনি বলেন ।
---হ্যা বলছি । আজ আমার ক্লাস না থাকায় তোর কাছ থেকে সেদিন নাম্বারটা নিলাম মাহির । তাই ভাবলাম মাহির যদি ক্লাস না থাকে তাহলে এক সাথে শপিং করে লান্চ করবো দুপুরে । তাই মাহিকে ফোন দিলাম ।
.
মাহি ফোন ধরে কথা বললো ,
---হ্যালো অান্টি ।
---মা তুই কোথায় ।
---কেনো আন্টি ।
---এমনি বল ।
---বাসায় যাচ্ছি ।
---কেনো আজ ক্লাস নেই ।
---ছিলো সেগুলি করেছি আজকে একটা ক্লাস নেই তাই বাসায় যাচ্ছি ।
---তুই বাসায় এখন না গেলে হয়না মা ।
---কেনো মামনি আন্টি ।
---ভাবছি আজ তোর সাথে শপিং করে দুপুরে দুজন এক সাথে লান্চ করবো ।
---না মানে আব্বুকে বলেছি আজ তাড়াতাড়ি বাসায় যাবো ।
---আব্বুকে ফোন দিয়ে বলে দে আজ আসতে ধেরি হবে ।
.
কিছুখন মনে হয় ভেবে তখন মাহি বললো ,
---আন্টি আমি আসছি আপনি শপিং মলের সামনে থাকেন আমি সেখানে যেতে ৫ মিনিট লাগবে ,
---আচ্ছা তুই আয় ।
.
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম । আমি শপিং মলের কাছে দাড়িয়ে অাছি কিন্তু মাহি আসছেনা তখন মাহির নাম্বার থেকে ফোন আসলো আমি রিসিভ করে জিঙ্গেস করতে যাবো তখন ওপাশ থেকে এক ছেলের কন্ঠ ভেসে আসলো বললো ,
---মেয়েটা কে হয় আপনার ।
---কেনো কি হয়েছে আর ফোন আপনার কাছে কেনো ।
---মেয়েটি এক্সিডেন্ট করেছে তাই পাশে ফোনটা ছিলো ভাবলাম দেখি কোন নাম্বার ফোন করে বলি তাই ডায়েলে দেখি আন্টি সেভ করে রাখা আপনার নাম্বারটা ছিলো ছিলো ভাবলাম এই নাম্বারের সাথে কিছুখন আগে কথা হয়েছে তাই ফোন দিলাম ।
.
আমি কথাটা শুনে আমার কথা ভের হচ্ছিলো না তবুও বললাম ,
---কোথায় এক্সিডেন্ট করেছে ।
---তিন রাস্তার পাশে । মেয়েটি হয়তো রাস্তা পারাপার হতে চাইছিলো তখন রাস্তার মাঝে বাইক এসে মেরে দেয় ।
---আমি আসছি ।
.
ফোনটা কেটেই সেখানে যাচ্ছি ।
বেশি দূর ছিলোনা সেখান থেকে ৪-৫ মিনিটের রাস্তা ।
আমি গিয়ে দেখি অনেক লোক জন পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি মাথায় আগাত পেয়েছে । হাত কেটে গেছে অনেক রক্ত পরেছে । পাশে ফোন হাতে একটা ছেলেকে দেখতে পেলাম বুঝে গেলাম এই ছেলেটা ফোন করেছিলো । আমি ছেলেটাকে বললাম তাড়াতাড়ি করে হসপিটালে নিতে হবে । তখন একটা গাড়ি নিয়ে আসলো একটা লোক তখন গাড়ি করে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে আসা হলো ।
.
আমি জিঙ্গেস করলাম ,
---ছেলেটা এখানে আছে ।
---না চলেগেছে তুই কিছুখন আসার আগে ।
---মামনি...
.
কথাটা পুরো বলতে পারলাম না তখন ফোনটা বেজে উঠলো ।
---মামনি ফোন বাজতেছে ।
---ও ।
.
ফোনের দিকে তাকিয়ে মামনি চোখটা বড় বড় হয়ে গেলো । মামনিকে বললাম ,
---কে ফোন দিয়েছে মামনি ।
---আব্বু নাম দিয়ে সেভ করা নাম্বারটা ।
---দিন আমি কথা বলি ।
---না থাক কথা বলা লাগবেনা ।
---কি বলেন পরে তো শুনতে পারবে ।
---আরে তখন কিছু হবেনা ।
---না সমস্যা নেই ফোনটা দিন আমি কথা বলি ।
---তুই বুুঝতে পারছিস না ।
---দিন সমস্যা নেই ।
---ডাক্তার এখনো বের হয়নি ।
---আপনি খালি খামাখা টেনশন করছেন । ইনশা আল্লাহ কিছু হবেনা অপারেশন সাকসেসফুল হবে দেখুন ।
.
মামনি কিছু বললো না । আমি মামনির কাছ থেকে ফোনটা নিলাম । মামনির সাথে কথা বলার সময় ততখনে ফোনটা বেজে কেটে গেছে ।
আবার ফোন বেজে উঠলো ।
---হ্যালো আঙ্কেল ।
---মাহি ।
---না আঙ্কেল আমি মাহিম ।
---বাবা মাহিম মাহি কোথায় ।
---মাহি হসপিটালে ।
---হসপিটালে কেনো ।
---এক্সিডেন্ট করেছে ।
.
কথাটা শুনে ফোনের অপাশ থেকে কে যেন জোরে করে বলে উঠলো মাহি আপু এক্সিডেন্ট করেছে ।
---হ্যালো আঙ্কেল ।
---নিশ্চুপ ।
.
মামনি বলে উঠলো ,
---বললাম যে পরে ফোন করে বলিস এখন দিস না আবার ওখানে কোন সমস্যা না হয় ।
.
---আঙ্কেল আপনি কথা বলছেন না কেনো ঠিক আছেন তো ।
---কোন হসপিটালে আছো ।
---কমিউনিটি হসপিটালে ।
---আমি আসছি ।
.
মামনি অবস্থা দেখে বুঝতে পারছে ,
---কি বললো মাহির আব্বা ।
---এখানে আসছে ।
---দেখ তোকে বললাম পরে...
.
দেখি ডাক্তার বের হলো ।
আমি কাছে এগিয়ে গেলাম । ডাক্তার তখন বলে উঠলো ,
---অপারেশন সাকসেসফুল ।
---থ্যাংক ইউ ডাক্তার ।
---ধন্যবাদ দিতে হবে না । ঠিক মতো পেসেন্টেকে এনেছেন দেখে বেঁচে গেলো । যেভাবে আগাত লেগেছিলো মাথায় আর একটু বেশি আগাত লাগলে বাঁচানো সম্ভব হতো না । আল্লাহ তা'আলা সব করে তাই আল্লাহুর কাছে সুকুরিয়া করেন ।
---জ্বী ডাক্তার ।
---Would you mind . I want an your more responsibility . ( যদি কিছু মনে না কর । আমি তোমাকে আরও একটা দায়িত্ব দিতে চাই )
---হুমমম বলেন ।
---পেসেন্টকে কোন ভাবে টেনশনে না থাকে কারণ আঘাতের কারণ ব্রেনে চাপ নিতে পারে ।
---ঠিক আছে থ্যাংক ইউ ।
---এখন যাও একটু পরে জ্ঞান ফিরবে । আর নার্স কয়েকটা ওষুধ লিখে দিবে ওষুধ আনবে ।
---ঠিক আছে ।
---এখন যেতে পারো ।
.
মামনি পাশে ছিলো কথাগুলি শুনেছে ।
আমি আর মামনি রুমে চলে গেলাম ।
দেখি শুয়ে আছে । মাথায় ব্যান্ডিস হাতে আছে স্যালাইন দিয়ে রেখেছে । কেমন জানি মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে ।
.
মামনি গিয়ে মাহির মাথার পাশে বসে পরলো আমি দাড়িয়ে আছি । মামনি কাঁন্না করতে লাগলো নার্সটি মামনিকে ইশারা করে কাঁন্না বন্ধ করতে বললো । মামনি তখন কাঁন্না বন্ধ করলো । কিন্তু মাঝে মাঝে কাঁন্না করে ।
.
নার্সটি কি যেন লিখছে ।
একটু পরে নার্সটি আমাকে বললো ,
---একটা ইনজেকশন আর কিছু ওষুধ লিখে দিছি নিয়ে আসেন ।
---জ্বী এখনি আনছি ।
.
মামনিকে বললাম ,
---আপনি থাকেন আমি ঔষুধ আনতে যাচ্ছি । কাঁন্নাকাটি যেন করেন না ডাক্তার বলেছে সব ঠিক হয়ে যাবে ।
.
আমি পিকসেপ্সন নিয়ে ফার্মেসির দোকানের দিকে রওনা দিলাম ।
.
হসপিটালের পাশে ফার্মেসির দোকানে চলে এলাম । পিকসেপ্সন দিলাম আর বললাম এই মেডিসিন গুলি দিন । লোকটি পিকসেপ্সন দেখে ইনজেকশন আর সব মেডিসিন দিলো । আমি টাকা দিয়ে হসপিটালে চলে এলাম ।
.
নার্সকে মেডিসিন গুলি দিলাম । এখনো জ্ঞান ফেরিনি । তখন নার্স ইনজেকশনটি মাহিকে পুষ করে দিলো । আমি নার্সকে জিঙ্গেস করলাম ,
---জ্ঞান কখন ফিরবে ।
---ইনজেকশন দিয়ে দিছি কিছুখন পরে জ্ঞান ফিরবে ।
---ঠিক আছে ।
---আর পেসেন্টের জ্ঞান ফেরার পর তার সামনে কোন কাঁন্নাকাটি করবেন কেউ এতে রুগির সুস্থ থাকবে না হলে ব্রেনে আঘাত লেগে যেতে হবে ।
.
মামনি তখন বললো ,
---ঠিক আছে ।
.
বসে আছি মামনি আর আমি মাহির কেবিনের পাশে সিট আছে ।
নার্সটি এক এর পর এক কাজ করে যাচ্ছে ।
কিছুখন পর দেখি মাহির জ্ঞান ফিরলো । মামনি মাহির দিকে তাকালো তারপর চোখের পানি মুঁছে ফেললো । মাহি মামনির দিকে তাকিয়ে আছে । মামনি কিছু বলতে যেয়ে কাঁন্না করে দিলো । তখন নার্সটি বলে উঠলো ,
---আপনাকে বলেছিলাম কাঁন্না না করতে কিন্তুু তবুও কাঁন্না করছেন ।
.
মামনি তখন চোখের পানি মুঁছে ফেললো । মাহির চোখে পানি দেখতে পেলাম । হয়তো সে কাঁন্না করবে ।
.
দরজার দিকে মাহি তাকালো । আমিও তাকালাম দেখি মাহির আব্বা এসে গেছে সাথে একটা মেয়ে আর একটা বিদ্রমহিলা আসছে ।
মামনি দিকে চোখ পরতে না পরতে দেখি মামনি দাড়িয়ে গেলো । মাহির আব্বার দিকে তাকালাম দেখি মামনির দিকে তাকিয়ে আছে । দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে ভেতরে আসছেনা । মামনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ।
এরকম তাকানো দেখে আমার নানা রকম প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ।
।
।
।
চলবে পরবর্তী পর্বে ।।।
।
।
।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।।।
।
।
।
লেখকঃ নাসির ইসলাম মাহিম ( মাহাদীর আব্বু )
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ