মেসের বাথরুম থেকে গোসল করে বের হতেই, রাহাত বলল, "এই সাবিত তোর ফোন বাজছিলো ৪/৫ বার। আন্টির নাম্বার, ধরিনাই ভয়ে। আন্টি কি সব জেনে গেছে রে? "
জানিনা, আর জানলে জানবে। গোপন রাখার ত কিছুনা, ভালোবাসছি বিয়ে করেছি।
হ্যালো আম্মা!! গোসল এ ছিলাম ফোন ধরতে পারিনাই।
"তুই!! তুই আমাকে আম্মা বলে ডাকবিনা, এমন ছেলে আমার দরকার নাই। সেই ছোট্ট বেলায় যেই ছেলেকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে স্কুলে পাঠাইছি, আজ সে ভার্সিটিতে উঠে বাপ-মায়ের অনুমতির তোয়াক্কা না করে বিয়ে করে!! "
আম্মা শুনো, কান্নাকাটি করতেছো কেন!! বিয়ে হচ্ছে একটা আনন্দের ব্যাপার, কোথায় তোমার বৌমার জন্যে দোয়া করবা, তা না তুমি কানতেছো!! আর তুমি যে তন্দ্রাকে দেখোনাই এমন না। ছবি দেখে তুমি নিজেই বলতে সুন্দর আছে।
" এই বেহায়া, চুপ কর।মেয়ে সুন্দর যতই থাক, বিয়ে কি আমরা দিতাম না সময় হলে? আর এই, তোর বৌকে খাওয়াবি কি? তোর বাপ এক কথার মানুষ, একটা টাকাও দেবেনা।
তুই আর তোর বৌ পথে পথে হাত পেতে ভিক্ষা করতেছিস, সে এই দৃশ্য তোর বাপ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখবে বলে আশা করে আছেন। আর আমাকে বলছেন, তোমার ছেলে যেন বাড়িমুখো না হয়, ঠ্যাং ভেংগে "শো-পিচ" করে রাখবে।
সাবিত, কেন তুই এমন করলি বাপ! আমি সত্তিই বিশ্বাস করতে পারতেছিনা, আর তোর বাবা আসলেই রেগে আছেন, বাসায় উঠার চিন্তা বাদ দিস। আর ওই মেয়ে নাকি চাচার বাসায় থাকে? মা বাবা কই এর? "
আম্মা শুনো, ঠান্ডা হও একটু। তোমার বৌমা যে অতীব সুন্দরী তুমি এটা জানো, তাই তোমার ফুটফুটে নাতী-নাতনী হবে এ ব্যাপারে শিওর থাকো। ভিক্ষা যদি করতেই হয়, নাতী - নাতনী তোমাদের কাছে রেখে রোজ সকালে তোমার বৌমা আর আমি ভিক্ষা করতে বের হবো। তোমরা নাতী - নাতনী নিয়ে বাসায় খেলবা।
"সাবিত!! তুই কোন লেভেলের বেয়াদব হইছিস, আমি ভেবে পাচ্ছিনা।তোর টিউশনির টাকা দিয়ে চলবে?!
শুন, ওই মেয়ে নিয়ে আমার বাসায় উঠবিনা এটা সাফ কথা। তুই আমার যত আদরের পুত্রই হোস, দুষ্ট গরুর চেয়ে আমি গোয়ালঘর গরুশুন্য রাখবো। আর ওই মেয়ে যেনো আমাকে ফোন দিয়ে আম্মা আম্মা ডেকে মন গলানোর চেষ্টাকরনে লিপ্ত না হয়"
আম্মা, তাইলে আমার কথাও শুনো, আমি জানি এগুলা একটাও তোমার মনের কথানা, কারন তুমি অনেক চেষ্টায়ও কান্না চেপে রাখতে পারতেছো না। যা করতেছো আব্বার চাপেই। আমিও তারই ছেলে, তাই আমারো এতো অপমানিত হয়ে তার বাড়িতে ঢোকার ইচ্ছা নাই। আর শুনো, তন্দ্রাকে নিয়ে আপাতত বাসা নেবার সামর্থ্য নাই আমার, আমি মেসেই থাকবো আপাতত গ্রাজুয়েশন শেষ করে যদ্দিন চাকরি না পাই। এর মধ্যে টাকা জমলে বাসাও নিতে পারি।
তন্দ্রা চাচার বাসায় বড় হইছে, ওর বিয়ের জন্যে চাপ দিচ্ছিলো, কারন এই দেশে আমার চেয়ে শতগুনে যোগ্য ছেলে হাজারটা আছে। বিয়েটা না করলে আমি ওকে আজীবনের জন্যে হারাতাম, আর তোমরা হারাতে তোমার ছেলেকে। অন্তত বাসায় জায়গা না দাও, দিওনা। দোয়া করিও পারলে, আর তন্দ্রা ভালো মেয়ে তুমি জানো। রাখি আম্মা।
ফোন রেখে, আমার বউকে ফোন দিলাম। বিয়ে করছি ৭২ ঘন্টা হয়নি, নাম্বারটাও ফোনে "BOUUU" লিখে সেভ করে ফেলছি। আম্মা ঠিকই বলছে, আমি দিনদিন "বে-হায়া" মানে লাজ লজ্জাহীন হয়ে যাচ্ছি।
ঘুমাচ্ছিল মনে হয় আমার বউটা। ফোন ধরেই তন্দ্রা তন্দ্রাভাব নিয়ে এক আলিফ টেনে " হ্যা.. বলোওও... " বললো।
আমার এর আগে তন্দ্রার ফোন ধরে "হ্যালো " বলাটা হাজারবার শুনছি, এরকম শান্তি লাগেনাই।
"এই বউ, তোমার বেকার স্বামীর সখ হয়েছে বউকে নিয়ে মেলায় যাবে, বেড়িবাঁধ থেকে একটু দুরেই গ্রামের দিকে "পৌষালী" মেলা হচ্ছে। যাবা?
তন্দ্রা: " সাবিত সাহেব, বউকে যদি ৭-৮ রঙের কাচের চুরি কিনে দেন, তাইলে বউ যাবে"
"আচ্ছা দিবে, রেডি হও তাইলে, বিকাল ৪ টা, চৌরাস্তা। "
তন্দ্রা হাসে, আমি তার প্রেমে পরি।
তন্দ্রা শাড়ী পরে এসেছে, নীলপাড় শাড়ী। আমার বউ জানে আমি নীল রঙ পছন্দ করি।
আমরা এখন "পৌষালী "মেলায়। তন্দ্রা চুড়ির দোকানে গিয়ে "এটা না....ওইইইইটা" বলে চুড়ি পছন্দ করতেছে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ও বেকার স্বামী, এই দৃশ্য দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি।
তন্দ্রা দুইহাতে একঝাক নীল চুড়ি পরেছে। আমার দিকে হাত উঁচিয়ে, দুই চোখ চুড়ির মাঝে রেখে ঝুনঝুনুন শব্দ করে হাসতেছে, আর আমি তার প্রেমে পড়তেছি।
রিক্সায় উঠে তন্দ্রাকে বললাম, আমাকে নাহয় ভালবাসতে, কিন্তু বিয়ে করলে কেন?
"কারন তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। তিন তিনটা টিউশানি করাতে মাসে, এখন বিয়ে করেছো, আগামীমাস থেকে ছয়টা করাবা। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ত!! হাহাহাহা""
তন্দ্রা হাসে, আমিও হাসি। মাঝখান থেকে আমি তার প্রেমে পরি। "
তন্দ্রা শুনো, আম্মা তোমাকে ফোন দিতে বলেছেন, আব্বা বিকেলবেলা বাইরে হাটতে যান তখন।
"আচ্ছা দিবো, বাসায় গিয়ে"
তন্দ্রা: হ্যালো!!
আম্মা: হ্যালো কে?
"আসসালামু-আলাইকুম আন্টি, আমি তন্দ্রা।"
"হুম, কিন্তু বেকুবটা নাকি তোমাকে বিয়ে করেছে, আন্টি বললে কেন? আম্মা বলতে লজ্জা লাগে?"
"না লাগেনা, ভয় লাগে আম্মা।"
"আমি সাবিতের ফোনে তোমার ছবি দেখেছিলাম অনেক আগেই। আমি বুঝিনা তোমার মত এতো সুন্দরী একটা মেয়ে কিভাবে আমার বেকার ও বেকুব ছেলেকে বিয়ে করো!!
যাই হোক, আম্মা ডাকবা এরপর যেন ভুল নাহয়। আর শুনো, তোমার শ্বশুর বলছেন, অবাধ্য যেহেতু আমার ছেলে হইছে এই বাড়িতে তার জায়গা নাই, কিন্তু তোমার ত কোনো দোষ নাই। কালই বইপত্র নিয়ে ঘরের বউ ঘরে আসবা, আর বেকুবটাকে বলবা চাকরিবাকরি পাবার আগে এই বাড়িমুখো যেন না হয় "
"আচ্ছা আম্মা। ওকে কি আর কিছু বলব? "
হ্যা বলবা, আজ থেকে ও এই বাড়ির জামাই, আর তুমি মেয়ে। যদ্দিন শ্বশুরবাড়ি থেকে দাওয়াত না পায়, এদিকে যেন না আসে।
"জী আচ্ছা আম্মা"
রাতে তন্দ্রার নাম্বার থেকে ফোন আসলো, সব শুনলাম। শুনে আমিতো হতভম্ব।
পরদিন থেকে, আমি মেসের আলুসিদ্ধ খেয়ে ভার্সিটি যাই, আমার বউ আমার বাসা থেকে এসে ক্লাস করে, সাথে ক্লাস-ব্রেকে খাওয়ার জন্যে আম্মার বানানো ন্যুডলস, পরোটা-ডিমভাজি এনে খায়। আমাকেও দেয় অবশ্য।
কাণ্ডকারখানা দেখে আমার বন্ধুরা হাসি রাখার জায়গা পায়না।
মাস-দুয়েক পর একদিন ভাবলাম তন্দ্রাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো। বললাম, আমি নাহয় একটা রিক্সা নিয়ে বাসার নিচে এসে দাঁড়াই, তুমি রেডি হয়ে নিচে আসো।
অনেক্ষন ধরে নিচে দাঁড়িয়ে আছি। এতক্ষনে তন্দ্রা নিচে আসতেছে হাসতে হাসতে। কখন যে আব্বা বাড়ান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন, খেয়ালই করিনি। বাড়ান্দা থেকে খেঁকিয়ে বললেন, " কিরে জামাই!! শ্বশুরবাড়ির সামনে ঘুরঘুর করিস!! লজ্জা করেনা!! ঘরজামাই হবার মতলব নাকিরে? তন্দ্রা উপরে তাকিয়ে বলল, " আব্বা নিয়ে আসি আজ আপনার জামাইকে উপরে?" আব্বা -আম্মা দুজনই ততক্ষনে বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে হাসছেন। তন্দ্রাও হাসতেছে ...আর আমি তার প্রেমে পড়তেছি....
--হাসিব শান্ত।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ