"3rd Person"
লেখাঃতৌফিক আহমেদ(মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে)
......................
আজ পর্যন্ত আমরা সবার কাছ থেকে সব সময় শুনে এসেছি বা জেনে এসেছি সম্পর্ক ভাঙ্গার অন্যতম কারন হল 3rd person বা তৃতীয় পক্ষ।যেকোনো সম্পর্ক ভাঙ্গার পেছনেই কোনো না কোনো ভাবে তৃতীয় পক্ষ দায়ী থাকে।কিন্তু আজ আপনাদের যে 3rd person বা তৃতীয় পক্ষের কথা জানাবো সে সম্পর্ক ভাঙ্গা নয় বরং সম্পর্ক গড়েছে।একটা মানুষকে নতুন ভাবে বাচতে শিখিয়েছে।তার কারনেই একটা মানুষ জীবনের মুল্য বুঝতে পেরেছে।
.
তৌফিক মধ্যবিত্ত ঘরের একটা ছেলে।দেখতে শুনতে ভাল।লেখাপড়াও মোটামুটি ভাল।এখন সে ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ে।কলি নামের একটা মেয়ের সাথে প্রেম করে।তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের পরিবারও জানে।তারাও তৌফিক আর কলির সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে।এমনকি পরিবার থেকে তাদের বিয়ের ব্যাপারেও কথা হয়েছে।অনেক ভালভাবেই তাদের জীবন চলছে।
.
কিন্তু এস এস সি পরীক্ষার সময় তৌফিকের জীবনে একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার ফলে তার পুরো জীবনটাই বদলে যায়।তারপর থেকে সে অনেক কিছুই বুঝতে শিখে।ঐ ঘটনার ফলে সে কাওকে তার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলে।আর কাওকে তার জীবনে চির দিনের জন্য পেয়ে যায়।হারানোটা কষ্টের হলেও প্রাপ্তিটাও অনেক বেশি।
১০ম শ্রেণিতে টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট এর পর তার বাড়ি থেকে তাকে পাশের এলাকার একটা কোচিং এ ভর্তি করে দেয়া হয়।যাতে সে পড়ালেখা ভালভাবে করে এবং এস এস সি তে ভাল রেজাল্ট করতে পারে।
.
কিন্তু তার এই কোচিং এ ভর্তি হওয়ার কারনেই যে তার জীবনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।এটা যদি তার বাবা মা জানত তাহলে হয়তো তাকে কোচিং এ ভর্তি করে দিত না।যেদিন সে ১ম কোচিং এ যায় সেদিনই তার একটা মেয়েকে দেখে অনেক ভাল লেগে যায়।মেয়েটার নাম ইলা।দেখতে অনেক সুন্দর।
এমনকি আধুনিক মন মানসিকতার।বুঝতেই পারছেন আধুনিক মন মানসিকতা বলতে কেমন বোঝায়।সব সময় খোলামেলা পোষাক পরত,অনেক বেশি সাজগোজ করত,সবার সাথেই ভাব করে কথা বলত।
.
আর নিয়ম যেটা সেটাই হল,সস্তা জিনিসের দাম যেমন কম এবং চাহিদা বেশি।ঠিক তেমনই খোলামেলা আর বেপর্দা করা মেয়েদের প্রতিও ছেলেদের আকর্ষন বেশি।এটাই হল ইলাকে দেখেই তৌফিকের ভাল লাগল।কিন্তু সে জানতে পারল ঐ কোচিং এর আরো ২টা ছেলে ইলাকে পছন্দ করে।কিন্তু ইলা কাওকে পাত্তা দেয় না।
.
তখন তৌফিক ভাবল তাহলে সে ইলাকে প্রোপজ করবে।যেই ভাবা সেই কাজ,কোচিং এ ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই তৌফিক ইলাকে প্রোপজ করল আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইলাও রাজি হয়ে গেল।সবাই চিন্তা করল কত দিন ধরে অন্য ২টা ছেলে ওর পিছনে ঘুরছে কিন্তু পাত্তা দেইনি।আর তৌফিক প্রোপজ করার সাথে সাথেই ইলা রাজি হয়ে গেল।
.
কেন ইলা তৌফিকের প্রোপজে সহজেই রাজি হয়ে গেল এটা অন্য কেউ না জানলেও কলি জানত।কলি ইলার চাচাতো বোন ও ইলার বেস্ট ফ্রেন্ড।একই বাড়ির মেয়ে,এক সাথে বড় হয়েছে,এক সাথেই থাকে।কিন্তু তাদের মধ্যে যে এতটা পার্থক্য এটা একদমই অবিশ্বাস্য।
কারন ইলা যেমন আধুনিক মন মানসিকতার,খোলামেলা ভাবে চলে।কলি যেন ঠিক তার উল্টো দিক।কলিও দেখতে অসম্ভব সুন্দর।কিন্তু সে সব সময় বোরকা পরত,খুব কম কথা বলত সবার সাথে।
এজন্য কেউ তাকে কখনো পছন্দ করেনি,প্রোপজও করেনি।এতে অবশ্য তার ভালই হয়েছে।ইলা অনেক বলে যে তুই প্রেম কর।কিন্তু কলি সব সসময় না করে দেয়।আর ইলাকেও অনেক বোঝায় এসব না করতে।কিন্তু কেউই কারো কথা শুনেনা।দুজনেই যার যার মত করে চলে।আর আমার গল্পের 3rd person টা অন্য কেউ না এই কলি।
.
ওদের সবার জীবনটাই সুন্দর ভাবে চলছিল।দেখতে দেখতে জানুয়ারি মাস চলে এসেছে।আর ফেব্রুয়ারি থেকেই ওদের এস এস সি পরীক্ষা শুরু হবে।
কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগে যে ঘটনাটা ঘটল সেটা ওদের সবার জীবনই পুরোপুরি পাল্টে দিল।পরীক্ষার কয়েকদিন আগে হঠাত সারাদিন ইলাকে বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে না।মেয়ে মানুষ এত সময় বাড়ির বাইরে থাকায় সবাই অনেক চিন্তায় পরে গেল।
.
সারাদিন খোঁজাখুঁজি করেও যখন পাচ্ছেনা তখন কলি সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলল ইলা একটা ছেলের সাথে প্রেম করত আর তার সাথে পালিয়ে গেছে।কলি বলল সে ইলাকে অনেক বুঝিয়েছে যাতে এরকম কিছু না করে।কিন্তু ইলা তার কথা শুনেনি।
তখন সবাই খোজ নিয়ে জানতে পারল কোচিং এর তৌফিক নামের একটা ছেলের সাথে ইলা কিছুদিন ধরে প্রেম করছে।কিন্তু খোজ নিয়ে দেখল ইলা তৌফিকের সাথে পালায়নি।
.
এমনকি তৌফিক এই ব্যাপারে কিছুই জানে না।সে নিজেই এসব জানার পর একদম অবাক হয়ে যায়।সে অনেক কষ্ট পায়।সে বুঝতেই পারেনা ইলা কেন এরকম করল।তারা এতদিন প্রেম করল।কিন্তু সে পালিয়ে গেল অন্য একটা ছেলের সাথে।সে এটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিল না।তখন তার কথা হয় কলির সাথে।আর কলির কাছ থেকেই সে সব বিষয়ে জানতে পারে আর বুঝতে পারে।সব কিছু জানার পর তার আরও বেশি কষ্ট লাগে আর মেয়েদের উপর থেকে তৌফিকের বিশ্বাস উঠে যায়।
তখন তৌফিকের কথা হয় কলির সাথে।আর কলির কাছ থেকেই সে সব বিষয়ে জানতে পারে আর বুঝতে পারে।সব কিছু জানার পর তার আরও বেশি কষ্ট লাগে আর মেয়েদের উপর থেকে তৌফিকের বিশ্বাস উঠে যায়।
.
..তৌফিকঃকলি আমি জানি তুমি সব কিছুই জানো।কেন ইলা এরকম করল।কিন্তু তুমি ভয়ের কারনে কাওকে কিছু বলছ না।তুমি আমাকে বল।আমি কোনো ভাবেই এটা মেনে নিতে পারছিনা।
..কলিঃদেখো তৌফিক সত্যি বলতে আমি সবই জানি।এমনকি তোমাকে অনেক আগেই আমি এসব বলতে চেয়েছি।কিন্তু ইলা আমাকে বলতে দেয়নি।কিন্তু এখন তোমাকে বলাটা দরকার।কিন্তু এসব জানার পর তুমি নিজেকে ঠিক রেখো।
..তৌফিকঃআচ্ছা তুমি বল।
..কলিঃতুমি কোচিং এ ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই ইলা একটা ছেলের সাথে প্রেম করত।কিন্তু কোনো একটা কারনে ঝগড়া হওয়ার ফলে ওদের ব্রেকাপ হয়।আর ঠিক তখনই তুমি ওকে প্রোপজ কর।আর এজন্যই ইলা সহজেই রাজি হয়ে যায়।কারন সে একা থাকতে চায়নি।তাই তোমার সাথে তখন প্রেম করে।কিন্তু পরীক্ষার কয়েকদিন আগে তাদের সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে যায়।কিন্তু তারা যে পালানোর চিন্তা করবে বা পালিয়ে যাবে এটা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি।আর ঐ ছেলেটার ব্যাপারেও বেশি কিছু জানিনা।ছেলেটার বাড়ি হয়তো ঢাকা।
..তৌফিকঃকি বলছ তুমি এসব।ইলা আগে থেকেই একটা প্রেম করত।তার মানে সে শুধু ঐ সময়টা আমাকে ব্যবহার করেছে তার একাকিত্ব দুর করার জন্য।কেউ এতটা খারাপ কিভাবে হতে পারে।ও নিজের জীবনটাও নষ্ট করল পাশাপাশি আমার জীবনটাও নষ্ট করে দিল।এজন্য আমি ওকে একটা উপহার দিব।আমার ভালবাসার শেষ উপহার।
..কলিঃউপহার দিবা মানে।কি উপহার।
..তৌফিকঃসেটাতো এখন বলব না।সেটা সামনের ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিন সবাই জানতে পারবে।
..কলিঃআচ্ছা আমি যাই।তুমি ভাল থেকো আর নিজের খেয়াল রেখো।
.
১৪ই ফেব্রুয়ারিতে সত্যি সত্যি তৌফিক ইলাকে একটা উপহার দিল।উপহারটা অন্য কিছু নয় তার জীবন।১৪ই ফেব্রুয়ারিতে তৌফিক বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে।কিন্তু ভাগ্য ভাল হওয়ার আর আল্লাহর ইচ্ছাই সে বেচে যায়।দুপুরে ভাত খাওয়ার জন্য তাকে যখন তার ভাগ্নি ডাকতে যায় তখন দেখে সে নিচে পরে আছে আর তার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে।
.
তখন ওর ভাগ্নি চিল্লাচিল্লি করে আর সবাইকে ডাকাডাকি করে।তখন এলাকার সবাই মিলে অনেক কষ্টে দরজা ভেঙ্গে ওকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।ডাক্তারদের চেষ্টায় আর আল্লাহর ইচ্ছায় তৌফিক বেচে যায়।পরের দিন ওর ইংরেজি পরীক্ষা থাকায় হাসপাতালে অনেক অনুরোধ করে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসা হয়।কোনমতে পরীক্ষা দিয়েই আবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।তারপর পরের পরীক্ষার আগ পর্যন্ত সে হাসপাতালেই থাকে।পরে হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় আর পরীক্ষা দেয় কোনো ভাবে।
.
আত্মহত্যা মহাপাপ,আত্মহত্যা করলে জাহান্নামে যেতে হবে।এটা আমরা সবাই জানি।আর এজন্যই যে কত মানুষ জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে আছে এর কোনো হিসাব নেই।কিন্তু তৌফিক এসবের পরোয়া না করে আত্মহত্যা করে।
তৌফিক কেন আত্মহত্যা করল এটা আশেপাশের কেউই জানে না।শুধু ওর কয়েকজন বন্ধু আর কলি বুঝতে পারল।পরে হাসপাতাল থেকে আসার পর তৌফিককে কখনো একা থাকতে দেয়নি।রাতে ওর সাথে কাওকে না কাওকে থাকতে হয়েছে।কিন্তু এই ঘটনার পর সে যেন কেমন হয়ে যায়।সব সসময় একদম চুপচাপ থাকত,কারো সাথে বেশি কথা বলত না।কিছু দিন পর তৌফিকের সাথে কলির আবার কথা হয়।
.
..কলিঃতুমি কি পাগল নাকি।এটা কি করে ছিলা তুমি জানো।যদি তোমার কিছু হয়ে যেত তাহলে তোমার পরিবারের কি হত।সামান্য একটা মেয়ের জন্য নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিলা।তুমিতো বোকা,একদম বোকা।এরপরে আর এরকম কিছু করবা না।
..তৌফিকঃতোমাদের জন্য ও সামান্য একটা মেয়ে হতে পারে কিন্তু আমার জন্য না।আমি ওকে ভালবাসতাম আমার জীবনের চেয়েও বেশি।তাই ওকে আমার ভালবাসার শেষ উপহারটা দিতে চেয়ে ছিলাম আমার জীবন দিয়ে।আর সেটা বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিন।
কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছাই বেচে গেছি।সবাই ভাবছে এমনকি তুমিও ভাবছ আমি আবার এমনটা করব।কিন্তু না আমি আর এরকম কিছু করব না।কারন উপহার একবার দিয়েছি আর দেয়া যাবে না।কিন্তু আমি আর কখনো কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করবনা।
..কলিঃএরকম কিছু না করলেই ভাল।আর যদিও বা এরকম কিছু করার চেষ্টা কর তাহলে আমি নিজেই তোমাকে মেরে ফেলব।তুমি এরকম কিছু করলে আমার কি হবে।আমি বাচব কিভাবে।আমিতো আর এরকম কিছু করব না।
..তৌফিকঃমানে বুঝলাম না।কি বলছ এসব।আমার কিছু হলে তুমি বাচবে না মানে।কেন?
..কলিঃহ্যা,আমি বাচব না।কারন আমি তোমাকে ভালবাসি।যে ছেলেটা একটা মেয়েকে ভালবেসে নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারে।যে ছেলেটা ভালবাসার আসল মর্ম বুঝতে পারে।তাকে ভালবাসলে কোনোদিন কষ্ট পাব না।এটা আমি জানি।আর তাই আমি তোমাকে ভালবাসি।
..তৌফিকঃএসব কি বলছ তুমি।এটা কখনো সম্ভব না।আমি আর কখনো কোনো মেয়েকে ভালবাসব না।
..কলিঃদেখো তৌফিক আমি জানি তোমার সাথে কি হয়েছে আর তোমার মনের ভেতরে কি চলছে।কিন্তু আমি তোমাকে সত্যি ভালবাসি।আর এজন্য আমি সব কিছুই করতে পারব।কিন্তু আমি তোমাদের মত পাগলামি করব না।যাই আমি।
.
এরপর তৌফিককে অবাক করে দিয়ে কলি আসলেই অনেক কিছু করল।সে তার পরিবারকে তৌফিকের কথা জানালো আর তাদের বোঝালো ছেলেটা অনেক কষ্টের মাঝে আছে।ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে পুরোপুরি।তাই ওর সাথে যাতে তার বিয়ে ঠিক কর।সে শুধু তৌফিককেই বিয়ে করব।তখন কলির পরিবার সব বুঝতে পেরে তৌফিকের পরিবারের সাথে কথা বলে সব ঠিক করল।
এরপর কলি তৌফিককেও অনেক ভাবে বুঝিয়ে রাজি করালো।আর তারপর থেকেই তাদের প্রেম চলছে।এর ফলে তৌফিকও আবার আগের মত হাসি,খুশি হয়ে যায়।এতে ওদের পরিবারের সবাই খুশি হয়।এখন তারা ইন্টারে পড়ে।ইন্টার পাশ করলেই তাদের কাবিন হবে আর তারপরেই বিয়ে।
.
3rd person হয়েও কলি তৌফিকের জীবনটা সুন্দর করে দেয়।এই 3rd person এর কারনেই তৌফিক নতুন ভাবে বাচতে শিখে।সাধারনত 3rd person এর জন্যই একটা সম্পর্ক নষ্ট হয়।কিন্তু কখনো কখনো এর ভিন্নতাও হতে পারে।আর এখানে সেটাই হয়েছে।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ