āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧍⧧ āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4765 (1)

ডাকিণী
সানজিদা সুলতানা সুমা

আজ আমার নতুন কর্টেজ কিনলাম।
ফার্মাসিউটিক্যালস এ নতুন চাকুরী পেয়ে যেন কপাল হঠাৎ খুলে গেছে আমার। পাঁচ
মাসের বেতন জমিয়ে কিনে ফেললাম এই
কর্টেজটা। বিশাল কর্টেজ। সে তুলনায় প্রায়
পানির দামে কিনেছি। ৭০ হাজার ইউরোতে
এই বিশাল কর্টেজটা শুধু কপালগুণেই জুটতে
পারে। কর্টেজটা আমি পোলিশ সরকারের কাছ থেকে নিলামে কিনেছি। এটা আগে একটা
গীর্জা ছিল। সারাটা দিন পুরো কর্টেজ ঘুরে
ফিরে দেখলাম। ওনেক পুরাতন বাড়িতেই
ভুগর্ভস্থ কুঠুরি থাকে, কিন্তু আমার কর্টেজের
ভুগর্ভস্থ কুঠরি বেশ ভিন্ন ধরনের। এক
সারিতে পাঁচটা ঘর সবগুলিতেই ধাতব শিখ দিয়ে ঘেরা। কেমন যেন জেলখানা জেলখানা
ভাব। উপরে একটা বিশাল লাইব্রেরি পুরাতন
বই পুস্তকে ঠাসা। লাইব্রেরীতে কয়েকটা বই
ঘাটতেই একটা পুরাতন বাইবেল আমার দৃষ্টি
আকর্ষণ করলো। মনে হল বাইবেলটা যেন টেনে
আমার হাতটা তার উপর নিয়ে গেল। বাইবেলটার প্রথম পাতা উল্টাতেই একটা
জিনিস লক্ষ্য করলাম। বাইবেলের প্রতিটা
পাতার একপিঠে ছাপা আর অপর পিঠে কাঠ
কয়লায় ছোট ছোট মেয়েলী হস্থাক্ষরে পোলিশ
ভাষায় লেখায়। ধর্মকর্মে আমার এতটুকু আগ্রহ
নেই তাই বাইবেল বাদ দিয়ে উল্টোপিঠের লেখাগুলি পড়তে শুরু করলাম। লেখার উপরে
শিরোনাম ছিল ডাকিণী। প্রথম পাতার সরল
বঙ্গানুবাদ হবে অনেকটা এরকম,
"আমি এক হতভাগী। নাম আলেস
ভন্টেইজিয়ান। আমাকে ওরা ডাকিণীবিদ্যা
চর্চার অপরাধে এখানে ধরে এনেছে। আমার বাবার একটা সরাইখানা ছিল। মা অনেক
আগেই মারা গেছেন। গত সপ্তাহে বাবাও
মারা যান। বাবার মৃত্যু পর আমিই
সরাইখানার মালিক হই ও তাকে হারানোর
শোক ভুলে কাজে মন দেই। সব কিছুই
স্বাভাবিক হয়ে আসছিলো। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে দুদিন আগে। আমার সরাইখানায় একজন
অতীথি মারা যায়। আমার যতটুকু বিশ্বাস
লোকটা অতিরিক্ত মদ গিলে অক্কা পেয়েছে।
কিন্তু কারা যেন গুজব ছড়িয়ে দেয় আমি নাকি
ডাকিণী। আমি বুঝি ডাকিণীবিদ্যা প্রয়োগ
করে আমার বাবা আর ওই অতীথিকে খুন করেছি। অতপর গীর্জা থেকে প্রিস্টের
নির্দেশে আমাকে এখানে বন্দি করে আনা হল।
সরাইখানাটা গীর্জার সম্পত্তি হিসাবে
দখল করে নেওয়া হল। ডাকিণীবিদ্যার কিছুই
জানিনা আমি। তবুও ওরা আমাকে কষে চাবুক
মারল। কতবার আমি ওদের বললাম আমি ডাকিণী নই, আমি আলেস, তোমরা সবাই আমাকে
চেন, আমি প্রতি রবিবার গীর্জায় প্রার্থনায়
আসি, কিন্তু ওরা কেউ আমার কথা শুনল নাহ।
একসময় আমি জ্ঞান হারালাম। তারপর জেগে
দেখি আমি এখানে পড়ে আছি। জানিনা আমাকে
আরো কত শাস্তি সইতে হবে তবুও আমি পণ করেছি যাই হোক না কেন আমি ডাকিণীর
অপবাদ স্বীকার করব নাহ। বাইবেলটা আমার
কুঠোরির এক কোণে পড়ে ছিল। মশালের নিচে
থেকে এক টুকরা কয়লা নিয়ে পবিত্র বাইবেলে
আমি ইশ্বরের নামে শপথ করে লিখছি, আমি
ডাকিণী নই। " প্রথম পাতা পড়ার পরে মনের অজান্তেই
মেয়েটার জন্যে চোখে পানি চলে আসলো। আমি
জানতাম মধ্যযুগে মেয়েদের ডাকিণী অপবাদ
দিয়ে পুড়িয়ে মারা হত কিন্তু কখন ভাবিনী
এমন একজন ভিক্টিমের সাথে এভাবে পরিচিত
হব। বুঝতে পারলাম আমার কর্টেজটাই সেদিনের গীর্জা ছিল আর কর্টেজের ভুগর্ভস্থ
পাঁচ কুঠোরির কোন একটাতেই আলেসকে বন্দি
করে রাখা হয়েছিল। তার পরের পৃষ্টার
গতবাধা বাইবেলের লেখা উল্টাতেই
আলেসের লেখাটা পেয়ে গেলাম।
"আজ দুদিন হল আমি এখানে আছি। এর মধ্যে এরা আমাকে একফোঁটা পানিও খেতে দেয় নি।
একবার আমার প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়ার
প্রয়োজন পড়লে আমি ওদের অনেক ডাকলাম
কিন্তু কেউ আমাকে বাহিরে নিয়ে গেল না।
শেষে বাধ্য হয়েই এক কোণে কাজ সারলাম।
হে ঈশ্বর কোন অপরাধে এই শাস্তি দিচ্ছ আমায়। খানি আগে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম।
মা কে স্বপ্নে দেখলাম আমার জন্যে গোশত আর
রুটি নিয়ে এসেছে। তারপর জেগে দেখি একটা
ইঁদুর আমার পায়ের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে।
ওটাকে ধরে ওর গলায় দাঁত ফুটিয়ে দিলাম।
দুদিন উপোস থাকার পর এই ইঁদুরের রক্ত আমার পিপাসার্থ গলায় অমৃতসম মনে হল। ইঁদুরটা
খানিকটা খাওয়ার পরেই এক পাহারাদার
আমাকে দেখে ফেলল। ও চিৎকার করে বলতে
লাগল আমি নাকি ইঁদুরটা খেয়ে প্রমান করে
দিয়েছি আমি একটা ডাকিণী। আরো কয়েকজন
পাহারাদার এসে ওর সাথে যোগ দিল। আমি ওদের বললাম আমি ক্ষুধার্ত হয়েই এটা
খেয়েছি কিন্তু ওরা শুনল নাহ। একজন শিখের
ফাক দিয়ে হাত গলিয়ে আমার গালে সশব্দে
চড় বসিয়ে দিল। আমি মাটিতে পড়ে গেলে
ওরা আমার সেলে ঢুকে ইঁদুরের বাকীটুকু নিয়ে
গেল, প্রিস্টকে আমার ডাকিণীবিদ্যা চর্চার প্রমাণ দেখাবে বলে। আজ যা ঘটলো তাতে
ওদের কাছে আমার ডাকিণী হওয়ার অপরাধ
প্রমাণিত হয়ে গেল। কিন্তু ঈশ্বর তো জানেন
আমি ডাকিণী নই, আমি তার একনিষ্ঠ সেবক।"
দ্বিতীয় পৃষ্ঠা পড়ার পর আমি ঢুকরে কেঁদে
উঠলাম। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটি মেয়ের উপর চলা অমানুষিক নির্যাতনের মর্মস্পর্শী
বর্ণনা পড়ে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে
পারলাম না। ফোঁপাতে ফোঁপাতে আমার মায়ের
কাছে উদভ্রান্তের মতো ফোন দিলাম। আম্মু
আমার লালচে চোখ আর ফোলে উঠা নাক দেখে
আতঁকে উঠলো। আমি আম্মুকে আলেসের ব্যাপারে কিছুই বললাম নাহ। শুধু বললাম আম্মু, তোমাকে
খুব মিস করছি তাই চোখে জল চলে আসছে। আম্মু
কিছুক্ষণ আমাকে খুটিয়ে দেখে একগাল হেসে
বলল পাগলী মেয়ে আমার। চিন্তা করিস নাহ।
আগামী উইকএন্ডেই আমি তোর নতুন বাসায়
বেড়াতে আসব। আমাকে দাওয়াত দিবি তো? আমিও খানিক হেসে বললাম নাহ। তোমাকে
দাওয়াত দেওয়ার কি আছে? তোমাকে তো কোলে
করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসব। এভাবে আম্মুর
সাথে কথা বলতে বলতে একসময় মন ভালো হয়ে
গেল। সেদিন আর আলেসের ডায়েরি পড়িনি।
পাছে যদি আবার মন খারাপ হয়ে যায়। একটা কমেডি মুভি দেখে ডিনার সেরে তাড়াতাড়ি
ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল আবার অফিসে যেতে
হবে।
সেরাতে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। দেখলাম
আমার কর্টেজের পেছনে কুয়োর পাশেই একটা
মাঝারি ক্যাম্পফায়ারের মতো অগ্নিকুণ্ড যা জ্বলতে জ্বলতে একসময় একটা নারীমূর্তির
আকৃতি ধারণ করলো, আর পর একটা কর্কশ
চিৎকার, আর অগ্নিকুণ্ডটা দপ করে নিভে
গেল।
পরদিন সকালে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে
বাথরুমের আয়নায় চোখ পড়লো। ধুলি মাখা আয়নায় কে যেন ছোট ছোট হস্থাক্ষরে পোলিশ
অক্ষরে সাইন দিয়েছে আলেস। চমকে দুপা
পিছিয়ে আসলাম। তারপরে ভয়ে ভয়ে এগিয়ে
গিয়ে আয়নায় ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম
ওখানে কিছুই লিখা নেই। পুরোটাই ধুলি
মাখা। আপন মনেই হাসতে লাগলাম। বুঝলাম এসব অচেতন মনের ফালতু কল্পনা। সেদিন
অফিসের শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে
বিকালেই ঘুমিয়ে পড়লাম। আমার মাসিক শুরু
হয়েছিল তাই আরো বেশী ক্লান্ত হয়ে
গিয়েছিলাম। বিকালে সূর্যালোক থাকতেই
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই কর্টেজের কোন বাতিই জ্বালাই নি। রাত ঘনিয়ে এলে
কর্টেজটা অন্ধকারই থেকে যায়। মাঝরাতে
একটা করুণ কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়।
অন্ধকার রুমে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না
আমি। কিন্তু মনে হচ্ছিলো কান্নাটা আমার
পাশের লাইব্রেরী থেকেই আসছে।হাতড়ে হাতড়ে রুমের আলো জ্বালিয়ে গেলাম পাশের
লাইব্রেরীতে। যাওয়ার সময় আমার ডেজার্ট
ঈগল পিস্তলটা সাথে নিলাম। ভাবলাম হয়তো
কর্টেজে কোন নেকড়ে ঢুকেছে। রাতে
মাঝেমধ্যে নেকড়ের ডাক অনেকটা মানুষের
কান্নার মতোই মনে হয়। তাই আমি ঝুকি নিতে চাই না। আমার রুম থেকে বেরুনোর সাথে
সাথেই কান্নার আওয়াজটা থেমে গেল।
লাইব্রেরীতে গিয়ে আলো জ্বালালাম।
লাইব্রেরীতে কিছুই নেই। তবে গতকালের
বাইবেলটা ডেস্কে খোলা পড়ে আছে। আমি
কাছে গিয়ে দেখলাম গতদিন আলেসের যে দুই পাতা আমি পড়েছিলাম তার পরবর্তী পাতা
অর্থাৎ তৃতীয় পাতা বেরিয়ে আছে। যেন আমার
পড়ার অপেক্ষায়। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে
গতকাল আমি বাইবেলটা বন্ধ করে শেলফে তুলে
রেখেছিলাম, কিন্তু আজ এটা ডেস্কে এলো
কিভাবে? ছাইপাঁশ ভাবতে ভাবতে বাইবেলটা তুলে আলেসের লেখাগুলি পড়তে শুরু করলাম। ও
লিখেছে, .......
"আজ হঠাৎ করে আমার সেলের দরজা খুলে, আমার সমবয়সী এক নগ্ন মেয়েকে ছুড়ে ভেতরে ফেলা হল। রক্ষীরা চেঁচিয়ে বলল, "দুই ডাকিণী একসাথে মর।" ওরা যতবারই আমাকে ডাকিণী বলেছে আমি উচ্চস্বরে প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু এবার আমি নবাগত মেয়েটিকে দেখে খানিকটা আভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটা এক কোথায় অপরূপা সুন্দরী। মুখের ছলে যাওয়া চাবুকের দাগ কিংবা সারা শরীরের নির্যাতনের চিহ্ন তার সৌন্দর্য্যকে এতটুকু ম্লান করতে পারেনি। ও বার দুয়েক মাথা তুলার চেষ্টা করতেই জ্ঞান হারালো। আমি ওর কাছে যেয়ে ওকে দেখতে লাগলাম। ওর অবস্থা আমার থেকেও খারাপ। ওর মাথার পেছনে বড় একটা ক্ষত যা থেকে তখনো রক্ত বেরুচ্ছিল। আমি আমার কোটিবন্ধনী দিয়ে ওর মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিলাম। এই শীতে অসুস্থ মেয়েটাকে ধুকেধুকে মরতে দেখে আমার হৃদয়টা মোচড় দিয়ে উঠলো। চাবুকের অসংখ্য আঘাতে আমার নিজের কাপড়ই ছিড়ে একাকার। তবুও যতটা সম্ভব ওকে আমার কোলে জড়িয়ে রেখে গরম রাখার চেষ্টা করলাম। দেয়ালে টাঙ্গানো একটা মশাল এনে ওর পাশে পুঁতে দিলাম। ওকে কোলে নিয়েই এখন লেখতেছি। মশালের আলোয় ওকে আরো অপূর্ব লাগছে। আমাকে ক্ষমা কর ঈশ্বর। আমি তোমার এই অপরূপ সৃষ্টির প্রেমে পড়ে গেছি। " এই পৃষ্ঠা পড়ে বুঝলাম আলেস এক নারী সমকামী ছিল। ওই মেয়েটার সহচর্য এই নিদারুণ বন্দিত্বেও ওর হৃদয়ে প্রেমের জোয়ার তোলেছিল। অথবা হয়তো ও সমকামী ছিলনা কিন্তু পরিস্থিতি ওর মনে খানিকের মোহের সৃষ্টি করে। কিন্তু নতুন মেয়েটার নাম কি ছিল? প্রশ্নটা আমার মাথায় আসতেই লাইব্রেরীর দরিজা সশব্দে বন্ধ হয়ে গেল। ধুলি মাখা দরজার কপাটে আলেসের সুস্পষ্ট হস্থাক্ষরে একটা নাম ফুটে উঠলো, "মার্টিনী।" ক্ষানিক পরেই তা আবার ধুলায় মিলিয়ে গেল। এবার প্রকৃত ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আলেস মরে গিয়ে আমার কর্টেজে আটকে পড়েছে। আজ এই লাইব্রেরীতে ও আমার সাথে আছে। কিন্তু আমি ওকে দেখতে পারছি নাহ। এটা ভাবতেই আমার ঘাড়ের সবকটি লোম দাড়িয়ে গেল! প্রচন্ড ভাবে ঘামতে শুরু করলাম। ঠিক তখনই বদ্ধ ঘরে কোথা থেকে একটা দমকা হাওয়া এসে বাইবেলের পৃষ্ঠা উল্টে আলেসের লেখা পরবর্তী পৃষ্টায় নিয়ে গেল। বুঝলাম আলেস চাইছে যেন আমি ওর লেখা পড়ি। আমার মনে হলো ও দরজা আটকে আমার পালানোর সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন যদি আমি ওর ইঙ্গিত না শুনি তবে এই বদ্ধ লাইব্রেরীতে ও হয়তো আমাকে মেরে ফেলবে। ভয়ে ভয়ে দরজার দিকে তাকালাম। দরজায় আবার লেখা উঠলো, "সাহায্য কর বন্ধু। " তারপর আস্তে করে দরজাটা খুলে গেল। দরজা খুলে যাওয়ায় আমার মনে কিছুটা সাহস ফিরে আসলো। আলেস আমাকে বন্ধু বলে সম্বোধকরেছে! ওর সাহায্যের প্রয়োজন। কিন্তু কেন? শেষ মেষ কি হয়েছিল ওর ভাগ্যে। এসব কৌতুহল আমাকে ওর পরবর্তী পৃষ্ঠা পড়তে বাধ্য করল। সেখানে লেখা ছিল, "আজ সকালে আমার কোলেই মেয়েটার জ্ঞান ফিরলো। আমি ওকে শুভ সকাল জানালাম। কিন্তু ও ভাবলেশহীন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তন্মধ্যে রক্ষীরা চলে আসলো। আমাকে এখানে নিয়ে আসার তৃতীয় দিনের মাথায় ওরা প্রথম আমাকে খাবার দিলে। খাবার বলতে ছিল চার টুকরো বাসী পঁচা রুটি আর এক মশক পানি। আমি দুটুকরো রুটি ঐ মেয়েটাকে দিয়ে দিলাম। ও বুভুক্ষুর মত গোগ্রাসে গিললো। খাবার শেষে পানিটুকু আমরা দুজন ভাগ করে খেলাম। স্রষ্টাকে অসংখ্য ধন্যবাদ উনি অভুক্তদের খেতে দিয়েছেন, তৃজ্ঞার্তদের পান করিয়েছেন। আমি এবার মেয়েটার কাছে গিয়ে ওর মাথার ক্ষতটা দেখলাম। সারতে অনেক দেরি হবে মনে হচ্ছে। তবে সেরে যাবে। খেয়াল করলাম ওর নগ্ন দেহে ঠান্ডায় কাঁপুনি ধরে গেছে। সারারাত জ্বলতে জ্বলতে মশালটাও নিভে গেছে। ও ঠান্ডায় মারা যেতে বসেছে। ওকে আবার আমার কোলে নিয়ে আসলাম। প্রথমে বাধা দিলেও এক সময় ও বাধ্য হয়েই এসে আমার কোলে বসল। আমার ছেড়া কাপড়টুকু আমি আমাদের দুজনের দেহের উপর টেনে দিলাম। ও আমার বুকে মাথা গুজঁলো। ও খানিকটা স্থির হলে আমি ওর সাথে কথা বলতে শুরু করিলাম। ও জানালো তার নাম মার্টিনী গুয়েন্থার। ও নিমেসুয়েরার পাহাড়ি গ্রামে থাকতো। ওর বাবা একজন ভেষজ চিকিৎসক। ওর বাবাকে স্থানীয় গীর্জার প্রিস্ট খুন করে। তার অপরাধ ছিলো সে একজন পানিতে ডুবা ছেলেকে বাঁচিয়ে তুলেছিল। ছেলেটার শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তবুও ওর বাবা ছেলেটাকে বুকে হাত দিয়ে চেপে বাঁচিয়ে ফেলে। প্রিস্টের মতে ছেলেটা মারা গিয়েছিল। কিন্তু ওর বাবা ছেলেটিকে মৃত্যুর ওপার থেকে কালোজাদুর মাধ্যমে ফিরিয়ে এনেছে। এর অপরাধে প্রিস্ট ছেলেটি ও মার্টিনীর বাবাকে শুলে চড়ায়। মার্টিনীকে ডাইনি আখ্যায়িত করে একরাত উলঙ্গ করে বরফে বেধে রাখে। পরদিন ওকে এখানে নিয়ে এসে ...... মার্টিনী আর বলতে পারছিলো না। ও ফোঁপিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। বুঝে গেলাম প্রিস্ট ওকে সারাদিন ভোগ করে রাতে আমার সেলে ছুড়ে ফেলেছিলো। আমি মার্টিনীকে আরো শক্ত করে আমার বুকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ পর ও ঘুমিয়ে পড়লো। আমি ওকে কোলে নিয়েই আবার লিখতে শুরু করলাম। " পৃষ্ঠাটা উল্টাতে গিয়ে খেয়াল হল ওটার অর্ধেকটা আমার চোখের পানিতে ভিজে গেছে। মনের মধ্যে ওসব ধর্ম ব্যাবসায়ী প্রিস্ট বাপিস্টদের প্রতি তীব্র ঘৃনা অনুভব করলাম। তখনই বেডরুমে আমার ফোনটা বেজে উঠে। লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আমার রুমে ঢুকে ফোন ধরলাম। আম্মু ফোন দিয়েছে। আবার আম্মু আমাকে কাঁদতে দেখে ফেলল। জিজ্ঞাস করল আমার বাগদত্তার সাথে কোন সমস্যা হয়েছে কি নাহ। আম্মুকে উল্টাপাল্টা বলে আমি প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেলাম। আম্মুর সাথে কথা শেষে চোখমুখ ধুতে বাথরুমে ঢুকলাম। বেসিনে নীচু হয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে যখন মাথা তুললাম তখন আয়নায় আমার প্রতিবিম্ব ছিলো নাহ। ওটা অন্য একটা মেয়ে ছিলো। আমার অনুভব করলাম এটাই আলেস। আয়নার ওপাশ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সহ্য করতে পারলাম নাহ। চিৎকার করে বাথরুমে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম।
পরদিন ঘড়ির আলার্ম শুনে ঘুম ভাঙ্গলো।
নিজেকে বাথরুমের ফ্লোরে আবিষ্কার করলাম।
মাথাটা খানিকটা কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে
জমাট বেধে আছে। টলমল পায়ে উঠে ভয়ে ভয়ে
আয়নার দিকে তাকালাম। এবার সবকিছু ঠিকঠাক। প্রতিবিম্বে আমিই আছি। বাথরুম
থেকে বেরিয়ে নাস্তা সেরে অফিসে গেলাম।
অফিসের সহকর্মীদের কপালের আঘাতের
ব্যাপারে কিছুই বললাম নাহ। শুধু বললাম পড়ে
গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। ওরা নিজনিজ কাজেই
ব্যস্ত হয়ে গেল। সেদিন অফিস শেষে বাড়ি ফিরে কাপড় চোপড় গোছগাছ করতে শুরু করে
দিলাম। আমি আর এ কটেজে থাকব নাহ। আর
যাওয়ার আগে আলেসের ডাইরিটাকে পুড়িয়ে
দিয়ে যাব। হয়তো এটাই ওর মুক্তির শেষ পথ।
আমার ক্লজিটের সকল কাপড় লাগেজে পুরে
নিলাম। তারপর লাইব্রেরিতে গেলাম আলেসের ডাইরিটা নিতে। লাইব্রেরীতে ঢুকা
মাত্র লাইব্রেরীর দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আমি
সভয়ে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ
পরেই দরজার ঠিক ওপাশ থেকে এক
আর্তচিৎকার ভেসে এলো। এবার আমি ভয়ে কাঠ
হয়ে গেলাম। তারপর সারা বাড়িতে যেন প্রলয় শুরু হল। জিনিসপত্র ভাঙ্গার আওয়াজ,
কান্নার বিলাপ, দেয়ালে আঁচড় কাটা, আরো
বিভিন্ন রকমের শব্দ। এক সময় আমি অসহ্য
হয়ে চিৎকার করে বললাম, "আলেস, তুমি কি
আমায় মেরে ফেলতে চাও? " খানিক পরেই
দরজায় লেখা উঠলো, "নাহ, চলে যেও নাহ। আমায় সাহায্য কর বন্ধু। " অতঃপর দরজা খুলে
গেল। আমি দৌড়ে আমার রুমে গেলাম। যেভাবে
ভাঙ্গচুরের শব্দ শুনেছিলাম তাতে অনুমান
করেছি আমার রুমের কিছুই অবশিষ্ট নেই।
কিন্তু রুমে ঢুকে দেখলাম সবকিছুই স্বাভাবিক
ও সাজানো গোছানো। তারপর বিছানায় বসে কাঁদতে লাগলাম। আমি জানিনা আলেস কে। ওর
উপর হওয়া নির্যাতন আমাকে ব্যথিত করে।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি আমার কটেজে
একটা অশরীরীর উপস্থিতি মেনে নেব। একটা
সময় কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে
একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। আয়নায় দেখা বিম্বের সেই মেয়েটি আমার পায়ের কাছে
পড়ে কাঁদছে। তার মুখ কালো কাপড়ে বাধা।
সে কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু মুখে কাপড়
থাকার কারণে পারছে নাহ।এক সময় সে তার
কটিবস্ত্রের মধ্য থেকে সেই বাইবেলটা বের
করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর ঘুরে চলে গেল। মাঝরাতে স্বপ্নটা দেখে আমার ঘুম
ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে উঠে দুগ্লাস পানি
খেলাম। তারপর ফ্রিজ থেকে দুটুকরো
স্যান্ডুইচ খেয়ে রওনা হলাম লাইব্রেরী
পানে। রহস্যের সব জট এখন ঐ বাইবেলের
দিকে ইঙ্গিত করছে যাতে লেখা আছে আলেসের ডায়ারী। লাইব্রেরীতে গিয়ে ওটা বের করে
আবার আলেসের লেখা পড়তে শুরু করলাম।
"আজ সকালে রক্ষীরা আমাদের খাবারের
সাথে সাথে মার্টিনীর জন্যে দুই প্রস্থ
কাপড়ও দিয়ে গেল। ও যখন কাপড় পরছিল তখন
আমার হৃদয়ে হতাশা মোচড় দিয়ে উঠলো! ওর নিজের কাপড় আছে। এখন থেকে ও হয়তো আমার
কোলে ঘুমুতে চাইবে নাহ। কিন্তু পরক্ষণে সে
হতাশা উবে গেল। নীল কাপড়ে ওকে
রাজকুমারীর মত লাগছে। আমি ওর উপর থেকে
চোখ ফিরাতে পারছিলাম নাহ। ব্যাপারটা
ওর নজর এড়ালো নাহ। ও মৃদু হেসে জিজ্ঞাস করলো কেমন লাগছে ওকে। আমি শুধু একটা
কথাই বলতে পারলাম, অসাধারণ। ও আমাকে
অবাক করে দিয়ে আজ রাতে আমার কোলেই শুয়ে
পড়লো! তবে কি সেও আমাকে ভালবাসে? নাকি
এটা নিছক একত্রে ভাল থাকার অভিনয়।
মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু ও দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে। আমার বুকে ও বারবার মুখ
ঘসছে। মনে হচ্ছে যেন ভালবাসার শেষ আশ্রয়
খুঁজছে। "
এই পৃষ্ঠাটা পড়তে পড়তে আমি লজ্জায় লাল
হয়ে উঠলাম। এই মেয়ে দুটো প্রমাণ করে
গেছে, ভালবাসা স্থান, কাল, উঁচু নীচু, জাত ভেদ, বর্ণ লীঙ্গ ভেদাভেদ মানে নাহ।
ভালবাসা ভালবাসাই। পৃষ্ঠা উল্টে পরের
পাতায় গেলাম।
" কাল এক স্বপ্নময় রাত কাটিয়েছি আমি আর
মার্টিনী। ওকে এভাবে কাছে পাবো কখনোই
কল্পনা করিনি। এই মেয়েটা শুধু দেখতেই সুন্দরি না, বিছানায়ও অসাধারণ। ঈশ্বরের
অমায়িক সৃষ্টি। হে স্রষ্টা আমায় ক্ষমা কর ।
আমার হেন পাপ মোচন কর। কিন্তু আমার
পাপের শাস্তি তুমি মার্টিনীকে দিওনা কভু।
দরকার হলে ওর মৃত্যুদ্যুতকে আমার কাছে
পাঠিয়ে দাও তবুও ওকে এই নরক থেকে উদ্ধার কর প্রভু। আমেন।"
তার পরদিন ও লিখেছে,
"আজ ধরে আনার ৭ দিন পর ওরা আমাকে আর
মার্টিনীকে একটা ছোট্ট পুকুরে নিয়ে যায়
গোসল করাতে। যাহোক ওরা একদম নির্দয় নয়।
পুকুরের উষ্ম প্রস্রবণে গা ডুবিয়ে দিতেই চাবুকের ক্ষতগুলিতে অসহ্য জ্বালাপোড়া শুরু
হয়েছিল। কিন্তু মনটা এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে
ভরে গিয়েছিল। আমি আর মার্টিনী জল
ছিটানোর খেলায় মেতে উঠলাম। কিন্তু
বেরসিক রক্ষীদের তা পছন্দ হল নাহ। একটা
নেতা গোছের রক্ষী এসে আমার আর মার্টিনীর দিকে পাথর ছুড়ে মারতে লাগল। আমি নীচু
হয়ে যাওয়ায় পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা
পেলাম কিন্তু বেচারি মার্টিনীর আহত
মাথায় আবারো একটা পাথরের আঘাত লাগল!
আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। এরা আমার
সামনে আমার প্রিয়াকে আঘাত করতে পারে নাহ। আমি ওদের চিৎকার করে অভিশাপ
দিলাম যেন সে শীঘ্রই নরকে প্রবেশ করে।
আমার অভিশাপ শুনে ঐ রক্ষী সভয়ে পিছিয়ে
গেল। ওরা আমাকে ডাইনি ভাবে। তাই আমার
অভিশাপকে ভয় পেয়েছে। নিজেকে একটু হলেও
ক্ষমতাবান মনে হল। মার্টিনীকে আর আমাকে আবার সেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। প্রভু তোমায়
অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের এই চমৎকার দিনের
জন্যে। "
এই পৃষ্ঠা পড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই
আবার লাইব্রেরীর দরজা সশব্দে বন্ধ হল। আর
ধুলোর মধ্যে লেখা ফুটলো, আলেস+মার্টিনী। এই প্রথম আমি আলেসের ডায়রি পড়ে হাসলাম।
মেয়ে দুটো এত্তসবের মাঝেও প্রেমে পড়েছিল
আর জেলখানায় চুটিয়ে প্রেম করছিল। বন্ধ
দরজার ওপাশ থেকে তখনই খিলখিল হাসির
শব্দ ভেসে এলো। আমিও সে হাসিতে যোগ
দিলাম। আলেসের প্রতি আমার ভয় ভীতি সবকিছুই কেটে গেল। নিঃসঙ্গ কর্টেজে এমন
একজন সঙ্গিনী পাওয়া মন্দ কি? হোক না সে
অশরীরী।
এরপরের পৃষ্ঠায় লেখা আছে,
"আজ হঠাৎ এক প্রহরী এসে চিৎকার করে আমাকে গালিগালাজ করতে লাগল। দুদিন আগে আমি যে রক্ষীকে অভিশাপ দিয়েছিলাম সে নাকি সিমিলিয়ার যুদ্ধে মারা গেছে। স্বভাবতই এর ধরে নিয়েছে আমিই ওকে খুন করেছি। এই নিয়ে তিন তিনটা খুনের দায় আমার গলায় ঝুলছে। হায় ঈশ্বর, এই নির্বোধরাও কি তোমার সৃষ্টি? যুদ্ধে তো মানুষ যায় মারতে আর না হয় মরতে। না হয় ঐ রক্ষীটা মারা গেছে। কিন্তু তুমি তো জানো আমি ওকে খুন করিনি। আমি কাউকেই খুন করিনি। এরা শুধু শুধু আমাকে এখানে ধরে এনেছে। হায় ঈশ্বর। তুমি এর সুষ্ট বিচার কর। তুমি এই পাপীকে ক্ষমা কর। রক্ষীরা বলাবলি করতে লাগলো যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে ততই নাকি মঙ্গল। এসব শুনে মার্টিনী খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো। ও আমায় জড়িয়ে ধরে ফোঁপাতে লাগল। এ মুহূর্তে ওকে আমার কাছে ঈশ্বরের দূত মনে হল। এই অপবাদ, ঘৃনা, লাঞ্চনা, নিগ্রহের মাঝেও কেবল আমাকে ভালবাসতেই যেন ঈশ্বর স্বর্গ থেকে এক অপ্সরী মর্ত্যে পাঠিয়েছেন। ধন্যবাদ ঈশ্বর। এই পাপীকে দয়া করার জন্যে।"
তার পরের পৃষ্ঠা,
"আজ সন্ধায় ওরা আমাকে শুদ্ধিকরণের জন্যে প্রিস্টের কাছে নিয়ে যায়। সেলের দরজা খুলে ওরা যখন আমায় টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন মার্টিনীর সে কি কান্না। আমি তখনো জানতাম না শুদ্ধিকরণ জিনিসটা কি। যাওয়ার সময় আমি যতক্ষণ সম্ভব ওকে পেছন ফিরে দেখার চেষ্টা করছিলাম। ও উন্মাদের মতো মাটিতে পড়ে নিজের চুল ছিঁড়ছে আর বিলাপ করছে। একটা সময় সেলের দেয়ালের আড়ালে ও ঢাকা পড়ে গেল। আমি সর্বশক্তিতে চেঁচিয়ে উঠে বললাম, "মার্টিনী, আমি তোমায় ভালবাসি।" রক্ষীরা আমাকে নিয়ে একসময় প্রিস্টের কক্ষে পৌছে গেল। গীর্জার উঁচু তলায় সুরম্য কক্ষে, বিলাসবহুল আসনে অধিষ্ঠিত শ্মশ্রুমন্ডিত প্রিস্টকে দেখে আমি অবনত হয়ে সম্মান জানালাম। অতপর উনার পায়ে ধরে বললাম, "ধর্মাবতার, আপনি আমাকে চেনেন। আমি শৈশবে আপনার গীর্জায় দুবছর বিদ্যার্থী ছিলাম। আমার জীবনে এমন কোন রবিবার নেই যেদিন আমি সাপ্তাহিক প্রার্থনায় ফাঁকি দিয়েছি। আমি স্রষ্টার একজন একনিষ্ঠ সেবিকা হিসাবেই জীবনে বেঁচে থাকতে চাই। মা মেরীর কসম আমি ডাকিণী নই।"
প্রিস্ট আমার মাথায় লাথি মেরে বললেন আমি নাকি একজন ছদ্মবেশী ডাকিণী। ধার্মিকতার ছদ্মবেশ নিয়ে আমি নাকি ৩ জন কে খুন করেছি। তাই আমার অবধারিত শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। কিন্তু দন্ডের আগে অবশ্যই আমার দেহটাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে যেন মৃত্যুর পর আমার পাপাত্মা আমার দেহে আর ফেরত আসতে না পারে। প্রিস্টের ইঙ্গিতে দুজন রক্ষী এসে আমার দুহাত শক্ত করে চেপে ধরল। আর প্রিস্ট ছুরি দিয়ে আমার পরিধেয় কাপড় কেটে ফেলে আমাকে উলঙ্গ করে দিল। আমি লজ্জায় অপমানে সর্বশক্তি দিয়ে চেঁচালাম। আমার বিশ্বাস ছিল হয়তো মা মেরী আমার চিৎকার শুনে সাহায্য করতে আসবেন। কিন্তু এর পরিবর্তে প্রিস্টের বিশাল হাতের চড় খেয়ে আমি লুটিয়ে পড়লাম।"
এ পৃষ্ঠাটা পড়তে পড়তে আমার হাত পা অসার হয়ে আসতে শুরু করলো। অনেকটাই অনুমান করতে পারছিলাম এর পর অসহায় আলেসের উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল। কাঁপাকাঁপা হাতে পৃষ্ঠা উল্টালাম।
" ওরা আমাকে পাশের কক্ষের বিছানায় নিয়ে গিয়ে শেকলের সাথে বেধে দিলো। অতঃপর প্রিস্ট এসে আমার নগ্ন দেহে পানিপড়া ছিটিয়ে দিল।তারপর সে আমার দেহটাকে পুরো রাত জুড়ে চারবার ভোগ করল। আমি সারারাত মা মেরীকে ডেকেছি একটু সাহায্যের জন্যে। কিন্তু উনি আমার ডাক কবুল করেননি। সকালে আমাকে এই বিধ্বস্ত দেহেই সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওরা আমাকে গোসলও করতে দেয়নি। আমার দুপায়ের মাঝখানে এতবেশী ব্যাথা করছিল যে আমি হাঁটতে পারছিলাম নাহ। কিন্তু রক্ষীদের নির্দয় চাবুকের আঘাতে টলতে টলতে কোনরকমে আমার সেলে পৌছালাম। সেলে মার্টিনী শুয়ে ছিল। আমাকে ঢুকতে দেখে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি খানিকটা ইতস্তত করলাম। আমার সারা দেহে রক্ত আর বীর্যের মাখামাখি। এ দেহে ওকে জড়িয়ে ধরলে তার কাপড় নোংরা হয়ে যাবে। কিন্তু ও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল নাহ। একটা সময় আমি ক্লান্ত দেহটা ওর বাহুডোরে এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে আমি আমার শৈশবে ফিরে গেলাম। দেখলাম গীর্জার প্রাঙ্গণে শিক্ষানবিশ ছোট্ট আলেসকে নিতে আমার বাবা মা এসেছেন। সাথে করে গরম ভূট্টা ভাজা আর রাইয়ের মন্ড নিয়ে এসেছেন। এসব পেয়ে আমার খুশি আর দেখে কে! তারপর বাবা মায়ের সাথে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বাড়ির পথ ধরলাম। সন্ধ্যার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে দেখলাম মার্টিনী তার কাপড়ের ছোট্ট কোন ছিড়ে একটা রুমাল বানিয়েছে। আর মশক থেকে পানি নিয়ে সে রুমাল ভিজিয়ে আমার দেহের নোংরা রক্ত, বীর্য মুছে দিচ্ছে। ঘৃণায় আমার মুখ বেঁকে গেল। ছিঃ। এটা যদি শুদ্ধিকরণ তবে কালিমালেপন কি? কিছুটা পরিষ্কার হয়ে গেলে আমি বাইবেলটায় লিখতে বসলাম। গতরাতের ঘটনা নিয়ে ঈশ্বরের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। এভাবে ভোগ হওয়া হয়তো আমার কপালে লিখা ছিলো। কিন্তু আমার একটাই আফসোস। আমি ঐ প্রিস্টের মতো এক সাক্ষাৎ শয়তানকে ধর্মাবতার ডেকেছি। তার পায়ে পড়ে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি। এর চেয়ে আমি মরে গেলেই ভাল হতো। "
এই পৃষ্ঠাটা পড়া শেষে আমার সারাটা শরীর থরথর করে কাঁপছিল! নিঃসন্দেহে আলেস অনেক সাহসী আর মানসিক শক্তি সম্পন্ন ছিল। এতটা নির্যাতনের পরেও সে ভেঙ্গে পড়েনি। স্রষ্টার প্রতি অবিচল বিশ্বাস অটুট রেখেছিল। কিন্তু ধর্মের ধ্বজা ধারিদের ধর্মের নামে অধর্মের চর্চা আমাকে বিষ্মিত করে। একেই হয়তো বলে মধ্যযুগীয় বর্বরতা। এটাই হল ধর্ম ব্যবসার চরম রূপ। আলেসের মতই সেসব ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতি ঘৃণায় নিজের অজান্তেই আমার মুখ কুঁচকে গেল। পরের পৃষ্ঠা উল্টানোর সাথে সাথেই আমার বেডরুমে অ্যালার্ম বেজে ঊঠলো! কি আশ্চর্য! আমি সারাটি রাত লাইব্রেরীতে আলেসের ডায়েরী পড়েই কাটিয়ে দিয়েছি! আলেসকে আমার একাকীত্বের বন্ধু, সুখ দুখের সাথী মনে হল। বিড়বিড় করে বললাম, তোমাকে ভালবাসি আলেস।
যাক। অনেক হয়েছে। এবার উঠে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে গোছগাছ করতে শুরু করলাম। আমি আমার কটেজ ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি নাহ। আমি এখানেই থাকব। আলেসের সাথে। আপাতত অফিসে যাচ্ছি। আলেসকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছে নাহ। কিন্তু অফিসে যে যেতেই হবে। ব্রেকফাস্ট করে গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
সেদিন অফিসে মন দিতে পারলাম নাহ। ঘুমের ঘোরে একসময় ডেস্কে মাথা ফেলেই কুপোকাত। কপাল ভাল অফিসে আমিই এক্সিকিউটিভ অফিসার। আমার উপরে কেউ নেই। আমার কোন বস থাকলে এতক্ষণে সোজা ঘাড় ধরে অফিস থেকে বের করে দিত। আজ বিকালটা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে। অফিস যেন শেষ হতেই চাইছে না। অবশেষে পাঁচটায় অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় চলে এলাম। কাপড় ছেড়ে একটা লম্বা শাওয়ার নিলাম। আয়নায় চোখ যেতেই দেখলাম আলেস আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এবার ওকে দেখে মোটেও ভয় পেলাম না। বরং দুষ্টুমি করে চোখ টিপলাম। ও মৃদু হেসে মাথা নাড়লো। ওকে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিতে মন চাইলো। অঞ্জলিতে পানি নিয়ে আয়নায় ছিটিয়ে দিলাম। কিন্তু ততক্ষণে আলেস আয়না থেকে চলে গেছে। শাওয়ার সেরে ডিনার রেঁধে খাবার টেবিলে বসলাম। খাবার টেবিলে আমি একটা প্লেট টেনে নিলাম আরেকটি প্লেট পেতে রাখলাম আলেসের জন্যে। জানি ও খাবার দাবার সহ সকল জাগতিক প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে চলে গেছে তবুও কেন জানি ওকে ছেড়ে খেতে বসতে আমার বিবেকে বাধলো। খাবার শেষে লাইব্রেরীতে ফিরে গেলাম। আলেসের ডায়ারীটা আমার পড়ার জন্যে প্রস্তুত হয়েই আছে। কাল বিলম্ব না করে পড়া শুরু করলাম।
" গত দুটো দিন কিছুই লিখতে পারিনি। প্রচন্ড জ্বর এসেছিল আমার। শরীরটা সেরাতের ধকল সহ্য করতে পারেনি। আধোঘুম আধোজাগরণেই কাটিয়ে দিয়েছি। আজ যখন হুশ হল তখন দেখলাম মার্টিনী আমাকে ওর কাপড় পড়িয়ে দিয়ে নিজে নগ্ন হয়ে আমার মাথার পাশে বসে আছে। আমাকে চোখ মেলতে দেখে ও হেসে সুপ্রভাত জানালো। নগ্ন মার্টিনীকে তখন আমার ভেনাসের চেয়েও বেশী সুন্দরি মনে হচ্ছিলো। ও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল, "জ্বর গায়ে নগ্ন থাকা ঠিক না। তাই আমার কাপড়টা খুলে তোমায় পড়িয়ে দিয়েছি। আর আমি তো জানিই তুমি আমাকে কাপড় ছাড়াই বেশী ভালবাস।" ওর কথা শুনে চোখে জল চলে আসলো। একটাই কাপড় আমরা দুজন ভাগ করে পড়তেছি। ও শুধু আমার জন্যে এই শীতেও সারাটি রাত নগ্ন থেকেই কাটিয়ে দিয়েছে! হায় ঈশ্বর! এ তোমার কেমন অসম বন্টন। তুমি মার্টিনীর হৃদয়ে যতটা ভালবাসা দিয়েছো তার এক কানাকড়িও যদি প্রিস্টের হৃদয়ে দিতে তবে আজ আমাদের এতটা কষ্ট পেতে হত না। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে মার্টিনীকে প্রাণপণে জড়িয়ে ধরলাম। ও যে আমার জীবনের শেষ আশ্রয়। আমার ভেনাস দেবী। আমার স্বর্গের রাণী। আমরা দুজন দুজনাতে হারিয়ে গেলাম। এই মেয়েটা আমাকে স্বর্গসুখে ভাসিয়ে দিল। ওর সান্নিধ্যে এই নরকটা এক স্বর্গউদ্যানে পরিণত হল। মিলন শেষে আমরা দুজন একসাথে ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ অনুভব করলাম মার্টিনী আমাকে ঘুমে রেখে উঠে চলে যাচ্ছে। মিটমিট চোখে দেখলাম ও এলোমেলো পা ফেলে উঠে সেলের এক কোণে যেয়ে বমি করলো। বুঝলাম ও অন্তঃসত্ত্বা। প্রিস্টের সন্তান ওর পেটে। দুদিনের ব্যবধানে আমাকেও ওর পরিণতি বহন করতে হবে। আমার পেটে হাত বুলালাম। কিছুই টের পেলাম না। কিন্তু আমি জানি এখানে একটা শুকরছানা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। শুধু একটাই আশা, মৃত্যুই পারে আমাকে এসব থেকে মুক্তি দিয়ে আমার স্রষ্টার কাছে ফিরিয়ে নিতে। মার্টিনী ফিরে এসে আমার পাশে শুয়ে গভীর মমতা মাখা কন্ঠে বলল, "কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাস করে বাচ্চাটা কার আমি সোজা তোমাকে দেখিয়ে দেব। কি মনে হয়? পারবে তো আমার বাচ্চাটার বাবা হতে?" আমি ওর সুডৌল স্তনে চিমটি কেটে বললাম, যদি তুমি আমায় বিয়ে করে মিসেস আলেস হয়ে যাও তবেই পারব। আমার উত্তর শুনে ও উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। আমিও প্রাণ খুলে হাসলাম। এই বাহ্যিক হাসি ঠাট্টার আড়ালে প্রকৃত সত্যটা আমরা দুজনেই জানি। নিতান্ত ভাগ্যগুণে যদি আমরা এখান থেকে বেরুতেও পারি তবুও আমি আলেসকে বিয়ে করতে পারব নাহ। আমাদের সমাজ দুটো মেয়ের বিয়েকে কখনোই মেনে নিবে নাহ, তারা একে অন্যকে যতই ভালবাসুক না কেন।"
মনেমনে ভাবতে লাগলাম আলেস যদি এখনো বেঁচে থাকতো তবে কতই না খুশি হত। আজ আধুনিক পোল্যান্ড সমকামী বিবাহকে বৈধতা দিয়েছে। ইশ যদি আমি আলেস আর মার্টিনীর বিয়েতে উপস্থিত থাকতে পারতাম কত না মজা হত! এসব ভাবতে ভাবতেই পরের পৃষ্টায় গেলাম,
" আমার হৃদয়টা আজ ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না মার্টিনী আর নেই। আর কখনোই ও আমাকে ভালবাসবে নাহ। ওর নিষ্পাপ কচি চেহারাটা আর কখনোই আমি দেখতে পাব না! ওর মিষ্টি চুমু যা আমার শত নির্যাতন নিষ্পেষণকে মুহূর্তেই ভুলিয়ে দিত তা আজ থেকে অতীত হয়ে গেছে। ওর জাদুকরী হাতের স্পর্শ যা আমায় নিমিষেই চরম যৌন সুখে ভাসিয়ে দিত, সে হাত দুটো আজ নিথর হয়ে পড়ে আছে! আজ ভোরে কতিপয় রক্ষী এসে বলল মার্টিনীর মৃত্যুদণ্ড নির্ধারিত হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই ওকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়া হবে। ও নির্লিপ্ত কন্ঠে প্রশ্ন করলো আমার দেহটার কি হবে? অপর এক রক্ষী উত্তর দিলো প্রিস্ট তোমার দেহকে পরপর তিন রাত শুদ্ধিকরণ শেষে আগুনে পুড়িয়ে দিবেন। এ গীর্জার নিয়ম অনুসারে বুঝি সকল ডাকিণীদেরই এই নিয়মে সমাহিত করার হয়। একথা শুনে মার্টিনী বাচ্চা মেয়েদের মতো ঢুকরে কেঁদে উঠে বলল, "আমাকে বাঁচাও আলেস। শয়তানটা শুদ্ধিকরণের নামে আমার মৃতদেহের সাথেও সঙ্গম করবে! ঈশ্বরের দোহাই লাগে, আমাকে বাঁচাও।" আমি মনস্থির করে ফেলেছিলাম। আমি বেঁচে থাকতে আমার ভেনাসকে এখান থেকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে নাহ। মনেমনে প্রার্থনা করলাম হে ঈশ্বর আমায় শক্তি দাও, আমায় গ্রহণ কর। মার্টিনীকে নিতে প্রথম রক্ষী সেলে প্রবেশ করা মাত্র আমি ওর উপর হামলে পড়লাম। ও তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেল। আমি ওর গলায় কামড় বসিয়ে দিলাম। ফিংকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলো ওর গলা থেকে। এমন সময় আরেকটি রক্ষী আমার মাথার পেছনে বাড়ি মারলো। আঘাতের তীব্রতায় আমার চোখের সামনের সবকিছু অন্ধকার হয়ে এলো। আমি জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে সেলে একা আবিষ্কার করলাম। বুঝলাম মার্টিনীকে ওরা নিয়ে গেছে চিরতরে! হায় ঈশ্বর, তুমি ওকে স্বর্গে যীশুর ঠিক পাশেই স্থান দিও। আমেন।"

চলবে

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ