গল্পঃ হৃদয়ের সম্পর্ক
.
লিখাঃ আমিম এহসান
.
খুব সকাল, পূর্ব দিগন্তে সূর্য্যের আভাটুকুও ভালভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছেনা। চুপচাপ বাসা হতে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসলাম, সকালবেলার স্নিগ্ধ বাতাস আমায় ছুয়ে যাচ্ছে আর আমি অন্যরকম শিহরণ অনুভব করছি। দুইদিন ধরে হরতাল চলার কারনে রাস্তায় ইট পাটকেল দেখা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে হাটছি, হাটতে খুব ভাল লাগছে, আজকে হরতাল নেই তাই কোনওরকম ভয়ও লাগছেনা।
.
হাটতে হাটতে চোখ পড়লো রাস্তার পাশে রাখা কালো জিনিসটার উপর। কাছে গিয়ে দেখলাম একটা বড়সড় কালো ব্যাগ। এক হাত পিছিয়ে আসলাম ভাবলাম হরতাল চলছিলো আর এতে বোমা টোমা নেই তো। কিন্তু পরে ভাবলাম এমন ফাঁকা রাস্তায় জঙ্গিদের বোমা রাখার কোনও মানেই হয়না। পরক্ষনে এক অন্য চিন্তায় মুখে হাসি ফুটলো, আচ্ছা এটা কি টাকার ব্যাগ! আশেপাশে নজর বুলিয়ে ব্যাগের চেন খুলতে লাগলাম, ভয় ও হচ্ছে আবার টাকার বান্ডিল দেখতে পাবো এই ভেবে খুশিও লাগছে। এরকম সকাল বেলাও আমি ঘামতে শুরু করলাম, যা দেখলাম তাতে আমার ঘামের মাত্রা আরও বেড়ে গেলো আর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।
.
নবজাতক একটা বাচ্চা আমার দিকে তাকিয়ে আছে পিটপিট করে। গোটা শরীর টাওয়েল দিয়ে প্যাচানো, ব্যাগের মধ্যে কিছু ছোট কাপড় আর একটা ফিডিং বোতল। আমার মাথায় কিছুই আসছিলোনা যে এই বাচ্চাটা কোথা থেকে এলো এখন এর জন্য আমার কি করা দরকার, ক্লাস সেভেনের একটা ছেলের মাথায় হটাৎ করে এর সুরাহা না আসাটাই স্বাভাবিক। কি করবো না করবো এই ভাবনায় যখন আমি ভাবান্বিত এরি মধ্যে দেখি পুলিশের একটা পিক আপ রাস্তার ইট সরাচ্ছে। আমার কাছে এসে ব্রেক কষলো আর আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ব্যাগের চেন লাগিয়ে দিলাম। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়, ব্যাগ এর মধ্যে বাচ্চা দেখে তাদের চোখ তো ছানাবড়া। হরতালের এই দাঙ্গা হাঙ্গামায় এক শিশু পাচারকারীকে পেয়ে তারা মহাখুশি আর এদিকে ভয়ে আমার তলপেট ফেটে যাচ্ছে।
.
আমি এখন চৌদ্দ শিকের ভেতর, দারোগা এক মহিলা পুলিশকে ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বললেন, তিনি এসে বাচ্চাটাকে সামলাতে লাগলেন, ফিডারে করে দুধ আনা হলো, খাওয়াতে লাগলেন। আর আমি মেয়েবাচ্চাটার শুভ্র, কচি মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে লাগলাম, জানিনা কিসের জানি একটা টান অনুভব করলাম বাচ্চাটার জন্য।
.
এতক্ষনে হয়তো আমার হাড় হাড্ডি ভেঙ্গে গুড়া করা হতো কিন্তু ক্লাস সেভেনে পড়া একটা ছেলে কতইবা বড়! তাই দারোগা না মেরে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। আমার বাবা সরকারি চাকুরীজীবী, উনাকে ফোন করা হলো। তিনি আসলেন, আমি সব খুলে বললাম। আমাকে ছেড়ে দিতে রাজি হলেন এক শর্তে, যে, বাচ্চাটিকে সাথে নিয়ে যেতে হবে। বাবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাচ্চাটিকে আমি বাসায় নিয়ে আসলাম, আমি তখন কি আর জানতাম অজানা একটা বাচ্চা মানুষ করা অনেক কঠিন যা জীবনের মোড় পুরোপুরি বদলে দিতেও সক্ষম!
.
বাসায় এসে শুরু হয়ে গেলো মহা বকুনি। এটা জারজ সন্তান কিনা, মুসলমান না খ্রিস্টানের বাচ্চা কে জানে। আমি সেদিন নিজে একটা বাচ্চা হয়ে আরেকটা বাচ্চাকে বুকে আগলে রেখে বলেছিলাম, একে আমি মানুষ করবো আমি।
.
সেদিন থেকে দিলীপ কুমার মানে আমার প্রতি সবাই অখুশি। বাবা, মা, দাদা, বউদিরা সবাই কেমন একটা নজরে আমাকে আর বৃষ্টিকে দেখতো, না জানি কোনও অজাত এর সন্তানকে বাসায় এনে আমি জাত ধর্ম শেষ করে ফেলেছি। আমার পড়ালেখায় একটু ঝামেলা দেখা দিলো, বৃষ্টিকে একা রেখে যেতাম না কোথাও, সবসময় সাথে থাকতাম, কান্না থামাতাম, ফিডারে করে দুধ খাওয়াতাম আর এসবের জন্য পড়ালেখা চালানোটা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়লো তাই বাবা খরচ দিতে এখন কেমন কেমন করে। মাঝে মাঝে দেখি বৃষ্টিকে অনেকে আদর করে তবে তা ঠেকা সারা, সবাই এমন একটা ভাব করে যেনো বৃষ্টি তাদের জাত শত্রু।
.
বৃষ্টি কথা বলতে শিখছে, আমাকে বাবা বলার চেষ্টা করে, ইস আমার তখন খুব খুশি লাগে, মনটা আনন্দে ভরে যায়। এত কম বয়সে বাবা হতে পেরে আমার অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছিলো। বৃষ্টিই আমার সবকিছু, বৃষ্টি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া, তার জন্য আমি নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে পারি। তাইতো যখন গুটি গুটি এলোমেলো পায়ে হেটে এসে আমার গলা জড়িয়ে বাবা ডাকতো তখন মনে হতো এই আমার সুখ এই আমার হাসি।
.
বাবার বদলী হলো, রংপুর থেকে দিনাজপুরে চলে আসলাম। কারিগরি স্কুলে নাইনে ভর্তি হলাম ঠিকি কিন্তু পড়াশুনা করতে পারছিলাম না। বৃষ্টিও বড় হচ্ছে খরচ বাড়ছে সবাই খারাপ চোখে দেখছে বাবা তো আর খরচ ই দিলোনা আমাকে। আমার চিন্তা আমি করিনা কিন্তু বৃষ্টির ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে একটা মেশিনারিজ ওয়ার্কশপে কাজ নিলাম। সারাদিন খেটেখুটে ভালই চলছিলো। বৃষ্টি সারাদিন শুধু বাবা বাবা করে। বাবা মেয়ের সম্পর্ক দৃঢ় হতে দৃঢ়তর হতে লাগলো।
.
বেশ কিছুদিন এভাবেই কেটে গেলো, বৃষ্টিকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করে দিলাম। কিছুদিন বাসার অনেকের করুনায় দুই বেলা ভাত পেলেও আমার রাজকন্যার জন্য তা বন্ধ হয়ে গেলো। তবে ওয়ার্কশপ এ কাজ করে যা পেতাম তা দিয়ে ভালই চলছিলো। একদিন প্রতিবেশী একজন বললে যে, তুই এখানে থাকিস আর বাসায় বৃষ্টিকে দিয়ে তোর বউদিরা কাজ করিয়ে নেয় মাঝে মাঝে আচ্ছামত পেটায়।
.
হুম সত্যি, বাসার বাইরে থেকে লুকিয়ে দেখছি বৃষ্টি ইয়া বড় এক কাপড়ের বালতি তুলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা আর বউদি যাতা সব বকা দিচ্ছে। আর আমার মেয়েটার চোখ দিয়ে নিরব জল পড়ছে। মেয়েটা আমায় একদিনও বলেনি এ ব্যাপারে কেনো এটাই ভাবছি। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলাম, যার জন্য আমার এত সবকিছু, যার জন্য আমার এ জীবন সংগ্রাম আর আমার সেই সুখপাখিটার সাথে এমন আচরণ। সেদিনই বৃষ্টিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে চলে এসেছি আজও বাবা মার পরিবার পরিজনের কাছে যাইনি।
.
কিছুদিন ওয়ার্কশপে থেকে ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিলাম। বেশ কয়েকবছরে ভাল টাকাই উপার্জন করেছি, বড় বড় কলকারখানা গুলোতে ভাল নাম ডাক ছিলো। সবার সাহায্যে নিজেই একটা ওয়ার্কশপ খুলে ফেললাম। আর এদিকে আমার রাজকন্যা গার্লস স্কুলে চান্স পেয়ে গেলো। আহা কি সুমধুর বাবা মেয়ের ভালবাসা, হৃদয় শীতল করা অনুভূতি।
.
আমার ব্যবসা বড় হতে লাগলো, আমার জীবনের মোড় ঘুরতে লাগলে আর বৃষ্টির জন্যই যে উপরওয়ালা আমাকে প্রতিষ্ঠিত করছেন এটাও পরিষ্কার আমার কাছে। আমার বৃষ্টি, আমার সাতরাজার ধন এখন নিজেই আমার কত্ত খেয়াল রাখে। বড় হচ্ছে তো তাই বাবার উপরে অধিকার খাটাচ্ছে খুব। ওকে আর আমাকে শাসন করতে হয়না ওই এখন আমায় পরিপূর্ন শাসনে রাখে। খুব ভাল একটা রেজাল্ট নিয়ে স্কুল থেকে বের হলো বৃষ্টি, বের হওয়ার পর মহিলা কলেজে ভর্তি হলো। আর এদিকে আমার নতুন বাড়ি হলো, অনেক টাকা পয়সা হলো। আমার রাজকন্যাকে নিয়ে এখন আমি অনেক খুশি। রক্তের সম্পর্কের চেয়ে হৃদয়ের সম্পর্ক অনেক গভীর অনেক প্রগাঢ় হতে পারে সেদিন বুঝেছিলাম।
.
আজ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট, খুব টেনশনে আছি। কিন্তু বাবার মুখে হাসি ফোটাতে রেজাল্ট শিট এনে বৃষ্টি বলছে বাবা আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছি। বৃষ্টির সেদিনের হাসি মাখা মুখটা দেখে ওইদিনের কথা মনে পড়ে গেলো যেদিন ওকে ব্যাগের মধ্যে পেয়েছিলাম আর ও পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়েছিলো। আমি আজ জয়ী আমি পেরেছি। সুখের চোটে কেঁদে ফেললাম। বাবা তুমি কাঁদছো কেনো? তুমি কি খুশি হওনি? নারে মা তুই চলে গেলে আমি কিভাবে থাকবো! আচ্ছা বাবা তাহলে আমি যাবনা এখানকার কোনও কলেজে ভর্তি হবো তবুও তুমি কেদোনা বাবা। তা কি আর হয়রে মা তুই আমার স্বপ্ন তুই আমার ভবিষ্যৎ। তোকে যে অনেক বড় হতে মা।
.
একবছর হয়ে গেলো বৃষ্টি ঢাকায়, তার নামে একটা ছাত্রীনিবাস নির্মান করেছি। যে ছাত্রীরা গরিব, দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত তবুও একটু খানি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর জন্য লেখাপড়া করতে এসেছে তাদের জন্য এ মেস একদম ফ্রি। বৃষ্টির নামে কয়েকটা ট্রাক ও আছে, এককথায় আমার সবকিছুই বৃষ্টির কেননা বৃষ্টির জন্যই আমি এতকিছু পেয়েছি।
.
-এই যে দেখুন এহসান সাহেব আমার রাজকন্যা বৃষ্টির জন্মদিনের ছবি, এই বলে ফোনের কিছু পিকচার দেখাতে লাগলেন।
.
এতক্ষন দিলীপ কুমার এর মুখ থেকে তার এবং তার নয়নের মনি বৃষ্টির জীবনী শুনছিলাম।
.
- তা আপনি নিজে বিয়ে করেননি?
- হ্যা করেছি, এইতো কিছুদিন হলো, আমার স্ত্রী একজন টিচার। তবে হ্যা শর্তসাপেক্ষ বিয়েটা করেছি।
-শর্ত সাপেক্ষ মানে?
- আমার সবকিছু আমার বৃষ্টির, আমার স্ত্রী-সন্তান এতে ভাগ বসাতে পারবেনা।
.
এমন অনেক সম্পর্ক রক্তের না হয়েও যে সুদৃঢ় ভাবে টিকে আছে তা দিলীপ কুমারের জীবন ইতিহাস শুনেই বুঝা যায়। টিকে থাকুক এমন সম্পর্কগুলো যুগ যুগ ধরে এটাই কামনা।
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧍⧧ āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž
4689
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§:ā§§ā§ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
allah manus tike tar uttom protidan diben insha allah
āĻāϤ্āϤāϰāĻŽুāĻুāύ