চাকরীর সুবাদে নতুন একটা ভাড়াটে বাড়িতে উঠলাম। ছোট আর সাজানো গুছানো বাড়িটা আমার একা একটা মানুষের জন্য একদম পার্ফেক্ট। পাশেই বাড়িওলার বাড়ি মাঝখানে শুধু একটা সুন্দর ফুলের বাগান। দুটো বাড়ির বারান্দা থেকে ফুলের বাগানটা পুরোটাই দেখা যায়। বিকেলে বারান্দায় বসে বাগানের ফুলগুলো দেখে লেখালেখির কাজটা করে দারুণ সময় কাটানো যাবে।
.
দুই দিন পর বিকেলে একটু সময় পেলাম। বারান্দার ছোট টেবিল-চেয়ারটায় কয়েকটা অফসেট পেপার আর কলম নিয়ে বসলাম। কিছু লিখার আগে কল্পনার জগৎ এ প্রবেশ করাটা অবশ্যই কর্তব্য তাই কিছুক্ষণ ভেবে-চিন্তে মোটামুটি সুন্দর একটা কবিতা লিখলাম যদিও গল্প লিখার অভিপ্রায় করে বসেছিলাম। চেয়ারটা ছেড়ে ফুলের বাগানের ফুল আর ফুলের গাছগুলো দেখতে লাগলাম। বেশ কয়েকটা বড় সাইজের গোলাপ, কয়েকটা কসমস আর বেশিরভাগই গাঁদা ফুল বাগানটায়। অনেক ভালই লাগছে দেখতে, তবে আরেকটু সাঁজিয়ে বাগানটা করা হলে আরও দারুণ দেখাতো।
.
আমার একটু অভ্যাস খারাপ, ফুল ছিঁড়ানোর অভ্যাস। যদিও গাছের ফুল গাছেই বেশি মানায় তবুও বড়সড় আর সুন্দর ফুল ছিঁড়ে এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দ নেওয়ার মজাটাই আলাদা। তাই বাগানের সর্ব বৃহৎ লাল গোলাপটা দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। আশেপাশে কেউ নেই দেখে ছোট বেড়া টপকে কাঙ্ক্ষিত গোলাপটা ছিঁড়ে নিয়ে আসলাম। যদিও কাজটা অনৈতিক আর জানামতে বাড়িওয়ালাও ভাল মানুষ সেহেতু এমন একটা কাজ এই সুন্দর বাগানটার সাথে আমার করাটা ঠিক হলোনা। কিন্তু ঐ যে পৈশাচিক আনন্দ! এটা কি সব কাজে পাওয়া যায়! তাই মনে আমার পরিতাপের থেকে দুষ্ট আনন্দের পরিমাণটাই বেশি।
.
এক কাপ চা বানিয়ে আবার বারান্দায় আসলাম কিন্তু একি একটা মেয়ে রাগী চোখে কোমড়ে দুই হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কটমট করছে। ব্যাপার তো সাংঘাতিক! মেয়েটার সাথে কি এমন করেছি যে মেয়েটা আমার উপর এমন আক্ষেপ প্রকাশ করছে। কারণ জানতে বেশিক্ষণ লাগলোনা।
.
মেয়েটা বলা শুরু করলো -'আপনি ফুল ছিঁড়েছেন কেনো? এত বড় সাহস আপনার, অন্যের বাগানে ঢুকে চোরের মত ফুলটা ছিঁড়ে এনেছেন।'
.
বোকার মত কাজটা যে কেনো করতে গেলাম, ফুলটা ঘরে রেখে দিলেই তো এত কথা শুনতে হতোনা আর চোর নামক সত্য অপবাদটুকুনুও শুনতে হতোনা। নিজের আঙ্গুল নিজেই কামড়াতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা অনেক সুন্দরী। অনেক হিসাব নিকাশের পর অনুমান করতে পারলাম মেয়েটা বাড়িওয়ালার মেয়ে, তা না হলে এত মিষ্টি হবার প্রশ্নই আসতোনা। মেয়েটার রাগী চেহেরাটা দেখতে অনেক ভাল লাগছে এক প্রকার পৈশাচিক আনন্দ লাগছে বলা যেতে পারে। তার এই রাগী লুক আরও কিছুক্ষণ ধরে রাখা দরকার। রাগ তারই কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আমার। কেননা আমার ব্যবহারের উপরই তার রাগের স্কেল উঠানামা করবে। আমি চাই তার রাগ বাড়ুক তাই কোনও জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলাম।
.
- ' কি হলো কথা বলছেন না কেনো? নাকি কথা বলতে পারেন না? শুনেছি তো চোরদের বংশের বড় গলা হয় কিন্তু আপনার গলা দিয়ে তো আওয়াজই বের হচ্ছেনা। আমার ফুল ছিঁড়লেন কেনো জবাব দিন।'
.
নাহ। চুপ করে থাকলে বংশের বারোটা বেজে যাবে। কিন্তু মেয়েটাকে আরোও রাগাতে আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। কি আর করার বাধ্য হয়ে বলা শুরু করলাম- 'তোমার বাগানের সবচেয়ে বড় গোলাপটাই ছিঁড়েছি। ভাল লেগেছে ছিঁড়েছি। আমার যা ভাল লাগে তা ই আমি নিজের করে নেই। এই যেমন তোমাকে যদি আমার খুব ভাল লাগে তাহলে তোমাকেও আমি নিজের করে নেওয়ার চেষ্টা, অপচেষ্টা সব ধরনের চেষ্টাই চালাবো।'
.
আমার কথাটা কটু না হয়ে কিরকম জানি অর্থবোধক হয়ে গেলো। এই কথাতে মেয়েটার রাগ বাড়বে কিনা খুব সন্দেহ হচ্ছে। মেয়েটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলা শুরু করলো- 'আজাইরা কথা বলবেন না, নতুন এসেছেন তাই প্রথম বারের মত মাফ করে দিলাম। আর আমার ফুল আমি নিয়ে গেলাম।'
.
ফুলটা আমার কবিতার পাতাটার উপর ছিলো। ফুলটা নিতে গিয়ে মেয়েটার চোখ কবিতাটার উপর পড়লো। কবিতাটা তার ফুলের বাগানটাকে নিয়েই লিখা। কয়েক লাইন পড়ে তো সে অবাক। নিশ্চয় সে এখন চিন্তা করছে যে আমার সাথে এমন ব্যবহার করাটা বুঝি ঠিক হয়নি। তাইতো সুন্দর করে 'স্যরি' বলে চলে গেলো মেয়েটা। তবে ফুলটা রেখেই গিয়েছে।
.
প্রতিদিনের মত এটাকেও একটা স্বাভাবিক ঘটনা মনে করে ভুলে গেলাম সবকিছু। ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে এত কিছু মনে রেখে কি লাভ! কিন্তু চোখে শুধু মেয়েটার রাগী চেহেরাটা, আর শেষে স্যরি বলা চেহেরাটাই ভাসছে। আর সবার মত আমিও সুন্দরের পূজারী তাই সুন্দরী মেয়েকে পছন্দ লাগতেই পারে এই ভেবে ব্যাপারটাকে তেমন একটা আমলে নিলাম না।
.
.
কিন্তু আসল ঘটনা ঘটলো পরের দিন। অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে দেখি আমার লিখা গল্প আর কবিতার দুটো ডায়েরী উধাও। সকালবেলাতেই ঘরের টেবিলে রেখে গিয়েছিলাম কিন্তু এসে দেখি ডায়েরীর কোনো চিহ্নই নেই। আলমারি খুলে দেখি আমার জীবনী আর একটা ডায়েরী অক্ষত অবস্থায় আছে। ক্লান্ত দেহে মেজাজটা পুরোটাই বিগড়ে গেলো। আর এটা যে বাড়িওয়ালার মেয়ের কাজ এটা আমি নিশ্চিত। নিশ্চয় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে আমার ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে ডায়েরী নিয়ে পালিয়েছে। ভাগ্যিস আলমারির চাবিটা আমার সাথেই ছিলো নাহলে আমার জীবন কাহিনীর ডায়েরীটার কিছু হলে আমি সুস্থ মানুষটা নির্ঘাত হার্টফেল করতাম। এটা ভাবতেই চোখের কোনে দুফোটা পানি এসে গেলো।
.
এমন সময় দরজার পাশ থেকে আওয়াজ আসলো- 'আপনার কি কিছু হারিয়েছে এহসান সাহেব?'
.
কথাটা কালমেঘের সিরাপের থেকেও তেঁতো লাগলো। রাগকে কন্ট্রোল করে মেয়েটাকে বললাম- 'ডায়েরী দুটো দাও।'
.
মেয়েটা অবাক কেননা আমি তাকে এক বিন্দু রাগও দেখালাম না। মেয়েটা এত বড় চোখ করে ডায়েরী দুটো আমার হাতে দিলো। নিজের সম্পত্তি ফিরে পেয়ে এবার শুরু করলাম রাগ দেখানো।
.
- 'চোরের মত অন্যের ঘরে ঢুকে ব্যক্তিগত জিনিস চুরি করে নিজেকে কি বীর মনে করছো, বেয়াদব মেয়ে। কি করে সাহস হলো তোমার, তালা খুলে আমার ঘরে ঢুকার?'
.
মেয়েটা বুঝতে পেরেছে আমার চালাকি। আর চালাকি না করলে ডায়েরী দুটো পেতে আমাকে আরও কষ্ট করা লাগতো তাইতো বাধ্য হয়েই চালাকির আশ্রয় নিয়েছি। তবে মেয়েটা চালাকি বুঝতে পেরেছে তাই না কেঁদে ঠান্ডাভাবেই জবাব দেওয়া শুরু করলো- 'আপনি আমার বাগানের বেড়া টপকে আমার প্রিয় জিনিস নিয়ে এসেছিলেন, তেমনি আমিও আপনার ঘরের তালা খুলে আপনার প্রিয় জিনিস নিয়ে গিয়েছিলাম। ব্যস, শোধবোধ। আর একটা কথা আপনি অনেক ভাল লিখেন, আজ সারাদিন আপনার লিখা ছোট গল্ল আর কবিতাগুলো পড়েছি, সত্যিই অসাধারণ।'
.
কারোও মন জয় করতে হলে ভালভাবে আগে তার একটু সত্য কিংবা মিথ্যা প্রশংসা করে নাও,ব্যস বেচারা গলে মোম হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতির কাছে বেচারাটা আমিই হলাম।
.
মেয়েটার সাথে পরিচিত হলাম। মেয়েটার নাম আলো, সুন্দর নাম। নামের আগে পিছে কিছু হয়তো থাকতে পারে কিন্তু সেটা আমি জানিনা। খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারে মেয়েটা।
.
পরিচয়ের পর থেকেই মেয়েটার তদারকি শুরু হলো তবে আমাকে নিয়ে নয়, আমার লিখা নিয়ে। আজ কি লিখলাম কাল কি লিখেছি, কি ভাবছি, রোমান্টিক লিখবো না আনরোমান্টিক লিখবো এসব বিষয়ে প্রশ্ন করে আমার মাথাটা গরম করে ফেলে। তবে আমি রাগকে কন্ট্রোল করতে পারি তাই মাথা গরম না করে আলোর প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দেই। তবে আমিও কম না, পৈশাচিক আনন্দ পাওয়ার লোভে মেয়েটাকে অনেক রাগাই, খুব ভাল রাগ করতেও পারে মেয়েটা।
.
ভেবেছিলাম এতদিনে আমার প্রতি মেয়েটার ভাল লাগা কাজ করবে কিন্তু ঘন্টা ছাই। আমি খেলাম কি না খেলাম সেটা ভুল করেও কোনোদিন আলো জিজ্ঞেস করেনি। ফুচকাওয়ালার ফুচকাকে সবাই যেমন পছন্দ করে কিন্তু ফুচকাওয়ালাকে না তেমনটি ঘটেছে আমার ক্ষেত্রে, দুই একজন আমার লিখা পছন্দ করলেও আমায় কেউ আর পছন্দ করেনা।
.
তবে আমি এতেই খুশি কেননা আলো এবং আমার মাঝে বন্ধুত্ব আর প্রেম নামক সম্পর্কটার মাঝামাঝি পর্যায়ের একটা সম্পর্ক চলছে যেটা অনেক মধুর অনেক আনন্দের। ঠিক আমার চাওয়া পৈশাচিক আনন্দের মত। আবেগের বশে ভুল করে যদি প্রেমটা হয়েও যেতে চাইতো তাহলে এ বাড়ি আমি আগেই ছেড়ে দিতাম কেননা প্রেম নামক গোলমরিচটা খাওয়ার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।
.
.
সমাপ্ত।
.
.
গল্পঃ "পৈশাচিক আনন্দ"
.
লিখাঃ আমিম এহসান
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ⧍⧧ āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž
4684
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§:ā§§ā§Ģ AM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ