গল্পঃ "অপেক্ষা"
.
লিখাঃ আমিম এহসান
.
.
হাবিপ্রবি রোড, বাঁশেরহাট। বিআরটিসি বাসের জন্য অপেক্ষা করছি কুড়িগ্রাম যাবো বলে। সকালবেলায় কাউন্টার থেকে টিকেট করে নিয়ে এসেছিলাম তাই সিট নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনো কারণ নেই। বাস আসলো, আমার মত অপেক্ষমাণ আরো অনেক প্যাসেঞ্জার উঠলো তার মধ্যে ভার্সিটির সুন্দরী অসুন্দরী কয়েকজন মেয়েও উঠলো। মনে মনে ভাবলাম, কপালের জোরে যদি একজনের সাথে পাশাপাশি বসে জার্নিটা করতে পারতাম। কিন্তু আমার উপরে উপরওয়ালার সুদৃষ্টি পড়লোনা, পাশে বসলো ভার্সিটির এক ভাইয়া যিনি রংপুর পর্যন্ত যাবেন। পরিচিত হয়ে টুকটাক খোশ গল্পে মেতে উঠলাম জনৈক ভাইয়ার সাথে।
.
দিনাজপুর থেকে কুড়িগ্রাম যেতে মোটামুটি চার ঘন্টা লাগে। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে যে গান শুনবো তাও পারছিনা, কেননা সাথে থাকা ইয়ারফোনের দেখি একটা স্পিকার নষ্ট। জানালা দিয়ে চলমান প্রকৃতি দেখতে দেখতে রংপুর আসলাম, অনেক প্যাসেঞ্জার নেমে গেলো। জায়গাটার নাম রংপুর মডার্ন। বিশ মিনিট ধরে থেমে আছে সরকারি বাস এমন সময় বাসে একটা ফ্যামিলি উঠলো।
.
প্রথমে উঠলো এক মধ্যবয়সী লোক যিনি পরিবারের কর্তা হবেন বুঝি, উনার সাথে উঠলো আমার থেকে অনেক সিনিয়র একটা ছেলে। টিকেট নিয়ে সিট খুজায় ডাকাডাকিতে বুঝলাম এই দুইটা মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক হলো, এরা সালা-দুলাভাই। এর পর পরই উঠলো একটা সিক্স সেভেনে পড়া ছেলে আর তার সাথে কিউট একটা ছোট্ট মেয়ে যার নাম সিনা। এরপর বাসে যে উঠলো তাকে দেখে আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। একটা মেয়ে এত সুন্দরী হয় কি করে! কালো একটা কোর্ট আর হিজাব পড়ায় অকল্পনীয় সুন্দর লাগছিলো মেয়েটিকে। সবার পরে উঠলো সিনার আম্মু।
.
পুরো পরিবার আসন গ্রহন করলো। উপরওয়ালার সুদৃষ্টি পড়েছে এবার আমার উপর, তাইতো কপালের জোরে মেয়েটি আমার সোজাসুজি পাশের সিটে বসলো। আমি জানালার পাশে বসা ছিলাম আর আমার পাশের সিটটা ফাঁকাই ছিলো, আমি জানালার পাশ ছেড়ে এ পাশে সরে আসতে যাবো এমন সময় সিনার মামা আমার কাছে এসে বললেন, "ভাইয়া এখানে একটু বসি?"
.
আমি সাথে সাথে জানালার পাশে যেতে বললাম, মামা তো খুশি, যদিও তিনি আমাকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করেছে। এটা বড় ব্যাপার না অবশ্য, কেননা আমি সবরকমের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারি।
.
আমি সিনা নামের ছোট্ট কিউট আপুটাকে ছাড়া কারো নাম জানিনা, কিন্তু জনৈক মামা আমার পাশে বসা, মামার সাথে তো পরিচয় হতেই হয়। পরিচয় আদান প্রদান হলো, তারাও নাগেশ্বরী পর্যন্ত যাবে। উনার আপা দুলাভাইদের বাসা নাগেশ্বরী মহিলা কলেজের ওদিকে।
.
"আপনার মত আমার এক মামা আছেন জানেন? উনি এখন ঢাকায় জব করছেন। উনি খুব মিশুক, প্রতিটা দিন আমার খবর নেয়।"
.
এসব ভুয়া মামার গল্প বলে ভাইয়া সম্বোধন পালটে এখন মামা ভাগ্নে হয়ে গেলাম। আমি তো বড্ড খুশি। মেয়েটার সাথে চোখোচোখি হচ্ছেই অনবরত। মেয়েটা উৎসুক চোখে তার মামা আর আমার দিকে মাঝে মাঝে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেনো, সে ভাবছে মামার সাথে এই অপরিচিত ছেলে আবার এত কিসের গল্প শুরু করলো।
.
আমি বিয়ে করবো চার পাঁচ বছর পর না হলে এই চলন্ত বাসেই এই মেয়ের বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতাম। কিন্তু কি আর করার! কি আবার! করার কিছুই নেই।
.
সদ্য পরিচিত মামার সাথে এমন সাবলীল আর গুছিয়ে কথাগুলো বলছিলাম যে বাসের অনেকেই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো আর আড়চোখে তাকাচ্ছিলো। মেয়েটাও এর ব্যতিক্রম না মেয়েটাকে না পটাতে পারি কিন্তু মেয়েটার মামাকে তো পটিয়েছি, ধীরে ধীরে এগুতে হবে।
.
সিনা বাসে হাটাহাটি করছিলো। কোলে নিলাম, নাম জিজ্ঞাস করলাম। বাবা মা ভাই বোন সবার নাম জিজ্ঞাস করলাম। সিনা তার বড় আপুর নামও বললো। আমি পেয়ে গেছি, মেয়েটার নাম মিথি। বাহ! দেখতে যেমন সুইট! নামটাও তেমন সুইট!
.
বাস নাগেশ্বরী তে এসে থেমে গেলো। বাস থেকে নামতেই ইচ্ছে করছিলোনা। তবে মামার ফোন নাম্বার নিয়েছিলাম বাস থেকে নামার আগে।
.
এক সপ্তাহের মত হয়ে গেলো, মামার সাথে কয়েকবার কথাও হয়েছিলো, মামা এখন রংপুরে। কিন্তু মিথির ফোন নাম্বারটা চাওয়ার সাহস হয়নি। আবার নাগেশ্বরী মহিলা কলেজের ওদিকে যাওয়াও হয়নি।
.
সব কিছুতেই ধৈর্য ধরতে হয়, ধৈর্যের ফল অনেক মিষ্টি হয়। তাই ধৈর্য ধরে আছি। তবে খুব একটা চিন্তা করছিনা কেননা মামা তো আমার হাতে আছেন, তাই মামার ভাগ্নিকেও হাতে পেতে খুব একটা বেগ পোহাতে হবেনা। সামনের মাসে মামা আবার নাগেশ্বরীতে আসবেন তখন মিথিদের বাসায় জোর করে দাওয়াত নিবো ভাবছি। একটাবার মিথির সাথে যোগাযোগ করতে পারলেই তো আমার স্বপ্ন গুলো পূরন হয়।
.
উফ! মামা যে কবে আসবেন! মামার আসার অপেক্ষায় বসে আছি। কবে যে অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে!
বহু প্রতীক্ষা এবং কলা কৌশলের পর আমি এখন মিথিদের বাসার গেস্টরুমে বসে আছি। মিথির মামা আমাকে বসিয়ে রেখে কোথায় যে গেলেন তার আর কোনো হদীস পাচ্ছিনা। একা একা বিরক্ত লাগছিলো খুব। মিথির ছোট বোন সিনা এসে চোখ বড় বড় করে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। কাছে টেনে নিয়ে ভাল মন্দ জিজ্ঞাসা করলাম। সিনাও অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছে যেমন,
.
"আচ্ছা আপনি আমার কি হবেন?"
"আমি তোমার ভাইয়া হবো।"
"আপনাকে আমি কি বলে ডাকবো? আপনার নাম কি?"
"আমার নাম অমি, আমাকে তুমি অমি ভাইয়া বলে ডাকবে।"
"কিন্তু আপনি তো মামার বন্ধু, আপনি তো আমার মামা হবেন।"
"না, মামা হবোনা, ভাইয়া হবো, আমি তোমার অমি ভাইয়া।"
"না, আপনি অমি মামা, অমি মামা, অমি মামা।"
.
ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এই একটা ঝামেলা, নিজের জেদের উপর অটল। তাইতো সিনাকে এত করে বলছি যে আমি তার অমি ভাইয়া হবো কিন্তু না সে আমাকে অমি মামা বলেই ডাকবে। কিন্তু সে আমাকে মামা বলে ডাকলে তো আমার স্বপ্নের রাজকুমারী মিথিরও মামা হয়ে যাবো আর এ পরিস্থিতি আমি বেঁচে থাকতে মেনে নিতে পারিনা। তাই রাগ হয়ে সিনাকে বলা শুরু করলাম,
.
"আমি তোমার দুলাভাই হবো দুলাভাই, বুঝলা?"
.
এ কথা শেষ না হতেই ঘরে মিথির আগমন। মতবিনিময় না করেই সরাসরি বলা শুরু করলো সে,
.
"দুলাভাই! কে কার দুলাভাই?"
.
কি জবাব দিবো বুঝতে পারছিলাম না। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় খুজছি। কথা কাটানো ছাড়া উপায় নেই, তাই বলা শুরু করলাম,
.
"আমি অমি, ওই যে ওইদিন একসাথে বাসে আসলাম, আপনার মামার সাথে আমার পরিচয় হলো...."
.
আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু মিথি চিৎকার করে ডাকতে শুরু করলো,
.
"আব্বু, আম্মু ও আব্বু আম্মু দেখে যাও তোমার বড় মেয়ের খোজে বাসায় কে এসেছে।"
.
মিথির কথার কোনো মানে খুজে পাচ্ছিলাম না। আমি মিথির মামার সাথে এ বাসায় এসেছি মিথির সাথে একটু কথা বলার জন্য ভাল করে পরিচিত হওয়ার জন্য। কিন্তু মিথি এ কি বলছে! তার বড় বোন আছে! সামনে যে কি ঘটতে যাচ্ছে তা আঁচও করতে পারছিনা।
.
মিথির বাবা মা এসে নাম ধাম পড়াশুনা জিজ্ঞেস করলেন, সুন্দর করে জবাব দিলাম। কিন্তু শেষের কথাটায় আমার মাথায় বাজ পড়লো। তার বাবা বললো,
.
"রিয়ার সাথে তোমার সম্পর্ক কতদিনের?"
.
রিয়া! এখানে রিয়া আসলো কথা থেকে! মিথির সাথে প্রেম করতে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে আমার গায়ে ঘামের বর্ষণ হতে শুরু করলো। আমতা আমতা করে জবাব দিলাম,
.
"আ আ আমি তো রিয়া নামের কাউকে চিনিইনা।"
.
মিথির মা বলে উঠলো,
.
"ভণিতা রাখো, তোমার জন্য আমার মেয়েটা কয়েকদিন ধরে ঠিকমত খাচ্ছেনা, ঘুমাচ্ছেনা, সময়ে অসময়ে কেঁদে উঠে।"
.
আমার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হতে চাচ্ছেনা, এই মূহুর্তে আমার কথার বমি হওয়া দরকার কিন্তু আমি অজানা ভয় আর সামনে কি ঘটতে যাবে তা ভেবে নির্বাক নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি। ব্যাপারটা বুঝলাম যে, মিথির বড় বোন রিয়া। আর রিয়া আপুর বুঝি বয়ফ্রেন্ড আছে যার সাথে ঝগড়া ঝাটি কিংবা ব্রেকাপ জাতীয় কিছু ঘটেছে। থতমত খেয়ে বলতে লাগলাম,
.
"আংকেল আন্টি আমি আসলে সে নই আপনারা যাকে মনে করছেন।"
.
মিথির বাবা রাগী কন্ঠে বললো,
.
"রিয়াকে ডাকলেই বুঝা যাবে কে তুমি? এই রিয়া, রিয়া, এই রিয়া...।"
.
ইচ্ছে করছে এখানেই স্ট্রোক করে মরে যাই। এই রিয়া যে কে আর দেখতেই বা কেমন হবে উপরওয়ালাই জানেন। এমন মসিবতে আমার পাশে কেউ নেই ভেবে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সালার মামাটাও যে কোথায় গেলো আমায় এমন ফাঁদে ফেলে। কুড়িগ্রামের ব্যাপারটা আলাদা, এদিকে হুটহাট করে বিয়ে হয়। এই রিয়া নামের মেয়েটার সাথে যদি আমার বিয়ে দিয়ে দেয় এরা তাহলে তো আমার লাইফ শেষ, আর রিয়া যে দেখতে কেমন তা নিয়ে তো আরও চিন্তায় পড়ে গেলাম। সুন্দরী হলে তো কথাই নেই কিন্তু আমার থেকে ওজনে বেশি, কালো হাবিজাবি হলে আমি দেশ ছেড়ে পালাবো।
.
অতঃপর রিয়া আসলো, আমি মাথা নিচু করে আছি। তার দিকে তাঁকাতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তার বাবা রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
.
"এই কি সেই ছেলে, যাকে তুই পছন্দ করিস?"
.
রিয়ার উত্তরটা শোনার জন্য রিয়ার দিকে আস্তে আস্তে তাঁকালাম, চোখাচোখি হতেই বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলো। ঠিক কতক্ষণ যে রিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তার হিসেব রাখিনি। খোলা চুল, কয়েকগুচ্ছ চুল মুখের সামনে এসে আছে। চিকন ভ্রু, মায়াবী চোখ আর কাঁপা কাঁপা ঠোট যুগল দেখে আমি প্রেমের অতল গহ্বরে ডুবে গেলাম।
.
রিয়ার বাবার গর্জনে সম্বিত ফিরে পেলাম। রিয়াকে আবার জিজ্ঞেস করলো,
.
"কি হলো, কিছু বলছিস না যে, বল, একেই কি তুই ভালবাসিস?"
.
ইস! মেয়েটা যদি মিথ্যেই বলতো যে সে আমাকে ভালবাসে তাহলে আমি ধন্য হয়ে যেতাম। কিন্তু সে তো আমাকে চিনেইনা। সে সত্য বলবে তাই আফসোস হওয়া শুরু করলো আমার। তিন বোনের সৌন্দর্য তিন রকমের। রিয়াই বুঝি বেশি সুন্দরী।
.
রিয়া আধো আধো কন্ঠে বললো,
.
"হ্যা বাবা। এই সে যাকে তোমরা খুজছিলে।"
.
বাকিটুকু ইতিহাস।
.
.
.
সেই ঘটনার তিনদিন পর আজ আমার বাসর রাত। আর বাসর রাতে আমার বউ হিসেবে ভূমিকা পালন করবে রিয়া। না,শুধু বাসর রাত না, জীবনের বাকিটুকু পথ এক সাথে চলার সঙ্গিনী হিসেবেও ভূমিকা পালন করবে রিয়া, আমার রিয়া।
.
.
.
সমাপ্ত।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ