প্রেমতত্ত্ব (১) আপন নীড়। নামটির নিচে ব্র্যাকেট বন্দি বাক্যটি হলো, এটি একটি অনুমোদিত বৃদ্ধাশ্রম। তিন বছর আগে বৃদ্ধাশ্রমটি গড়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের দশজন ছাত্র-ছাত্রী। তখন তারা নিজেদের টিউশন ও বিভিন্ন ব্যক্তি,প্রাতিষ্ঠানিক উৎসের টাকা দিয়ে আশ্রমটি চালাত। লন্ডন প্রবাসী আমজাদ সাহেব দুইতলা ভবনটি ভাড়া দিয়ে লন্ডন চলে যেতেন।একদিন অনুসন্ধিৎসু দশজন আমজাদ সাহেবের খালি বাসার খোঁজ পায় এবং বহু কষ্টে রাজী করিয়ে আমজাদ সাহেবের ভবনে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেলে।
এমন মহতী উদ্যোগের জন্য আমজাদ সাহেব পুরস্কার হিসেবে মাসিক বাড়ি ভাড়া মওকুফ করেন। শুরুতে পুরুষ নারী মিলিয়ে মোট দশজন সদস্য ছিল।এখন বেড়ে হয়েছে ত্রিশজন। (২) ওরা দশজন পরস্পরের ঘনিষ্ট বন্ধু। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ছেলেদের চাকরি ও দুই মেয়ের বৈবাহিক সূত্রে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় আছে সাতজন।
ঢাকায় আছে তৌকির,মিষ্টি ও রোমানা।যে যেখানেই থাকুক।সবাই ঠিক মতো টাকা পাঠিয়ে দেয়। এখন কারো কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে হয় না। যে যখন পারে বৃদ্ধাশ্রমে এসে সময় দেয়। ব্যাতিক্রম কেবল তৌকির ও মিষ্টির বেলায়। দুজন প্রতি সপ্তাহে আপন নীড়ে যায়। যেহেতু এরা ঢাকাতে। তাই এদের ভারটা বেশি। রোমানা শ্বশুরালয়ে থাকার কারণে ঢাকাতে থেকেও নির্ভার।
তৌকির ও মিষ্টির আরেকটা পরিচয় হলো ওরা প্রেমিক যুগল। ভার্সিটির প্রথম বর্ষ থেকে ওদের রিলেশন। ওদের প্রেমের গল্প কারো অজানা নয়। বৃদ্ধাশ্রমের লোকেরাও জানে। তৌকির বর্তমানে একটি বিদেশি কোম্পানিতে আছে আর মিষ্টি বেসরকারি ব্যাংকে। (৩) বাসায় দুজনেরই চাপ আছে বিয়ের জন্য। ওই দিন তৌকিরের মা বলছিল -কি রে বাবা, কেবল বৃদ্ধাশ্রমের সেবা করলে হবে? তোর এই বৃদ্ধা মায়ের সেবা করতে হবে না? তৌকির মায়ের কথার সুর বুঝে মুচকি হেসে বলল -হবে মা। মিষ্টির মা বলছিল -তৌকিরের কি খবর? একদিন নিয়ে আসিস কেমন? মিষ্টি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বলল -আমি বুঝেছি মা,তৌকিরকে কেনো আসতে বলছো। মা বললেন- -বুঝলে তো ভালোই। না কি মাদার তেরেসা হবি? -না, তা হবো না। -তোদের সাথের সবাই বিয়ে করে ফেলল আর তোরা এখনো কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়ের মতো প্রেম করে বেড়াচ্ছিস। মিষ্টি নিশ্চুপ থাকল। মিষ্টি নিশ্চুপ রইলো তার রোগের কারণে। তলপেটের টিউমারটি সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। তলপেটের টিউমারের কারণে মিষ্টি কখনো মা হতে পারবে না। গর্ভধারণ করলে মারা যাবে। কিশোরীকালে রোগটি ধরা পড়লেও এতোদিনে ভুলে গিয়েছিল।
কিছুদিন আগে মিষ্টির ছোট বোন জেসিয়া ওর বান্ধবীর বোনের বেবির কথা বলতে গিয়ে কথা প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছিল।মনে করিয়ে দেয়া মানে, মিষ্টিকে আাসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়া। কারণ মিষ্টির নিজের মনে না থাকায় এই রোগের কথা তৌকিরকে এর আগে বলতে পারেনি। দুদিন আগে যখন বলল তখন মিষ্টির শেষ বাক্য ছিল -একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যত জেনে আমি তোমার সাথে জড়াতে চাই না।
(৪) যে কোনো দূরত্বের আগে সম্পর্কের দূরত্ব দ্রুত চোখে পড়ে। বৃদ্ধাশ্রমের লোকদের ক্ষেত্রে তাই হলো। তারা তৌকির ও মিষ্টির দূরত্ব অনুধাবন করল। উভয়কে জিজ্ঞেস করলে দুজনেই নিজেদের মতো পাশ কেটে গেল। ইতোমধ্যে তৌকির ও মিষ্টির বন্ধুরা দুজনের দূরত্ব সম্পর্কে অবগত হয়েছে। সবাই দুজনকে কল করে বুঝাতে চেষ্টা করল -বর্তমান আধুনিক যুগে এটা কোনো সমস্যাই না। এখন নানা উপায়ে বেবি নেয়া যায়। অন্যকে দিয়ে গর্ভধারণ করানো যায়। একজন বন্ধু তৌকিরকে শাহরুখ ও গৌরির উদাহরণ দিয়ে সারোগেসি পদ্ধতির কথা বলল। আরেকজন মেয়ে বন্ধু মিষ্টিকে বলল -দোস্ত তোরা অন্তত বিয়েটা কর,আমার একটা বেবি হলে তোদের দিয়ে দেবো! ভালোবাসার টানেই মিষ্টি তৌকিরের ডাকে সাড়া দিল। -না হয় আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যত জেনে নতুন জীবন শুরু করলাম। মানুষ তো একজীবনে সবটা পায় না আবার যে কোনো উপায়ে না পাওয়ার হতাশা মুছে ফেলে। আমরা না হয় আমাদের হতাশা ওভাবেই মুছবো। তৌকিরের কথা বলা থেমে গেলে মিষ্টি কিছু বলতে পারলো না। মিষ্টি বুঝতে পারলো জড়তা ভেঙ্গে কেউ একজন তার হৃদয়ে ভালোবাসার ঘর বাঁধছে। এক সপ্তাহ পর বৃদ্ধাশ্রমে তৌকির আর মিষ্টির বিয়ের অনুষ্ঠান হলো।
কাজের চাপ থাকায় আমজাদ সাহেব দেশে এসে বিয়েতে উপস্থিত হতে পারলেন না। দুই পরিবারের সবার সাথে যোগ দিলো বাকী আটজন বন্ধু।বৃদ্ধাশ্রমের সদস্যরা নিজের ছেলে মেয়ের বিয়ের মত অনুপম আনন্দে মেতে উঠলেন।
প্রেমতত্ত্ব | জাকির হোসেন |
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ