মা বাসায় একা ছিল বলে সেদিন বাসায় একটু তাড়াতাড়ি ফিরে আসলাম। আমাদের বাসাটা দোতলা। আজ নিচ তলায় নতুন ভাড়াটিয়া আসার কথা। বাসায় ঢোকার সময় দেখলাম নিচে অনেক জিনিসপত্র রাখা; বুঝলাম তারা এসে গেছেন। বাইকটা রেখে বাসার দরজায় নক করলাম তবে দরজা খোলার সাথে সাথেই আমি বড় রকম একটা ধাক্কা খেলাম! চোখ দুটো কেমন যেন ঝাপসা হয়ে আসছে এ ও কি তবে সম্ভব?
সেই বড় বড় চোখ জোড়া দেখলে মনে হয় পুরো একটা ঝিল যেন ওই চোখের ভিতর ঢুকে আছে। আর সেই ঝিলের সীমা টানা হয়েছে গারো কালো কাজল দিয়ে। অরুও তো একটা সময় এভাবেই চোখে কাজল পড়তো একদম সেই রুপ চাহনি ভীষণ রকম ভড়কেই গিয়েছিলাম আমি। আমার ভ্রম কাটল মেয়েটার কথায় 'কে আপনি? '
আমি কিছু না বলে সন্তপর্ণে মাথা নিচু করে ভেতরে ঢুকি। দেখি মা বসে আছেন। আমাক দেখে হাসলেন। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললেন 'ও লুব্ধক আমার ছোট ছেলে।'
মা আমার দিকে তাকিয়ে জানালেন 'লুব্ধক ও রাহা আমাদের বাসায় নিচ তলায় নতুন এসেছে।'
আমি মেয়েটার দিকে আর একবার তাকিয়ে পুনরায় মাথা নিচু করে ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। আমার সব কিছু এলোমেলো লাগছে। অরু চলে যাওয়ার প্রায় ৩ বছর হলো ওর সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো সব গুছিয়ে রেখেছিলাম স্মৃতির বাক্সে। গত তিন বছর খুলিনি সেই বাক্স আজ হঠাৎ খুব কষ্ট হচ্ছে- দুজন মানুষের এত মিল হতে পারে!
দুজোড়া চোখ আপরুপ চাহনি মিলে যায় এত সহজে? আমি মনে করতে চাইনা অরুকে আমার কষ্ট হয়।তবুও মনে পরে বার বার আর কষ্টটা বাড়তেই থাকে আজ। পরদিন সকালে আমি ভার্সিটির জন্য বের হলে গেটে আবার তার সাথে দেখা। মেয়েটা অবাক করে দিয়ে আমায় বলল 'আমায় একটু লিফট দিবেন?'
যেন এক নিঃসংকোচ আবেদন। আমি অবাক হই একজন অপরিচিত মানুষের কাছে এত সহজে আবেদন করা যায়? আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবার দ্বিধায় পড়ে যাই সেই চোখ জোড়া অরু এভাবে আমার কাছে অনেক আবদারই করত। মেয়েটা আমাকে আবার প্রশ্ন করল 'লিফট কি পাবো?'
আমি কিছু বললাম না শুধু মাথা নাড়ালাম। ও উঠে এল আমার মনে হল ও যেন আমার কত দিনের চেনা। শুরুটা হল এভাবেই প্রথম যখন ওকে দেখি ভেবেছিলাম খুব শান্ত কিন্তু না ও খুব চঞ্চল প্রাণবন্ত এক মেয়ে যার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ প্রচুর কথা বলা এবং সে তাই ই করে। ওর চঞ্চলতা আমায় মুগ্ধ করে। এ জন্যই বোধহয় খুব দ্রুত বন্ধু হয়ে যাই আমরা। প্রতিদিন টিএসসি তে আড্ডা ঘোরাঘুরি খুনসুটি দুষ্টুমি চলছিল তো বেশ প্রতিদিন ওকে লিফট দেওয়াটা আমার নিত্য দিনের কাজ ছিল ও যেন আমার প্রতিদিনের রুটিনের খুব বড় একটা অংশ হয়ে উঠছিল খেয়াল রাখত আমার খুব।
সময়টা এভাবেই বেশ কাটছিল। সেদিন ছিল পহেলা ফাল্গুন আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখি ও গেটে দাঁড়িয়ে আছে আমি একটা হোঁচট খাই ও আজ শাড়ি পড়েছে রক্তিম বর্ণের একটা শাড়ি। হয়তো ও পড়েছিল বলেই শাড়িটা সুন্দর লাগছিল। দুচোখ ভরা কাজল ঘন কালো কেশ আর হাত ভর্তি রেশমি চুড়ি। তার থেকেও সুন্দর ছিল ওর মুখের সেই পবিত্র হাসি। আমি অবাক হই যেন এক স্বর্গদেবী ভুল করে মর্ত্যে নেমে এসেছে!
দেবী এগিয়ে আসে আমার দিকে। আমি যেন খেই হারিয়ে ফেলি ও আমার হাতটা ধরে বলে 'চলো... ' আমি অবাক হই.... 'কোথায়?'
-'তুমি আমার হাতটা ধরে হাটবে আজ...সারাটা দিন? আজ কৃষ্ণচূড়া দেখতে বেরোব। পিচঢালা পথে বহুদুর হাটব..আজ উড়তে বড্ড মন চাইছে...'
ওর চোখ দুটো তখন আনন্দে ঝলমল। আমার কাছে আজ ওর প্রথম কোন আবদার...! আমার গলাটা শুকিয়ে যায় চোখ দুটো ঝাপসা লাগে। ওর হাতটা আস্তে করে সরিয়ে দেই ও অবাক চোখে তাকায় আমার দিকে...! সেই জোড়া চোখ আমি মুখ ফিরিয়ে দ্রুত চলে আসি; ছেলেদের কান্না দেখাতে নেই। রুমে দরজা লাগিয়ে দেই। মা বহুবার ডেকেছে সারা দেই নি। রাহার অনেক গুলো ফোন এসেছে, মেসেজের পর মেসেজ আসছে, তবুও আমি সারা দেইনি। কি করে দিবো? কি করে মিটাবো ওর এই আবদার?
-এ আবদার তো তুমিও করেছিলে অরু...। আমার স্মৃতির বাক্সটা আজ খুলে ফেলি। সেদিন তুমিও বড় আবদার করে বলেছিলে, আমায় পিচঢালা পথে লাল কৃষ্ণচূড়া পড়ে থাকবে; তুমি আমার হাত ধরে সে পথে হাঁটবে। সেদিন তুমি প্রথম শাড়ি পরেছিলে টকটকে লাল শাড়ি। পিচঢালা পথ সেদিন কৃষ্ণচূড়া দিয়ে নয় বরং তোমার রক্ত দিয়ে রাঙ্গিয়েছিল যে হাত; তোমায় ধরে রাখতে পারিনি।
আজ সেই হাতকে বিশ্বাস করে দেবীর হাত ধরার সাহস যে নেই আমার। আমার প্রচণ্ড ভয় হয়। আমার কাঁধে একটা স্পর্শ পাই। তক্ষুণি ঘুরে দেখি দেবী দাঁড়িয়ে...! হাতে কিছু কৃষ্ণচূড়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসে ও...। হাতটা আবার ধরে বলে 'আমাকে তো বিশ্বাস করতেই পারো। আমিই কথা দিচ্ছি, তোমার এ হাত ছাড়ব না। কখনো না।'
আমরা তখন পিচঢালা পথে হাটছি সুর্যটা পশ্চিম আকাশ থেকে লুকিয়ে তা দেখছে আর উপর থেকে টুপটাপ তখন কৃষ্ণচূড়া ঝরছে।
কৃষ্ণচূড়ার গল্প | সিফাত-ই-নূর |
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ