4169

হ্যালো……..হ্যালো….শুনতে পাচ্ছেন কি?
হ্যাঁ আমি রিফাত বলছি রকমারি.কম থেকে। কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি? আমি রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা এবং নৌকাডুবি বই দুটো অর্ডার করতে চাই! হ্যালো……..হ্যালো….  আপনার নাম এবং ঠিকানাটা বলেন প্লিজ-
ফ্ল্যাট ৯, রোড নং ৭ , কাকরাইল, ঢাকা। আপনি বইগুলো ২-৩ দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন, ধন্যবাদ । ফোনটা কেটে  গেলেও আমার অন্তরে কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি হচ্ছিলো।
রিফাত……. এই রিফাত, হ্যাঁ রাকিব বল। কি হয়েছে তোর  রিফাত এত ডাকছি শুনছিস না। কোনও সমস্যা, শরীর খারাপ করেছে নাকি। শরীর তো ঠিক আছে কিন্তু হার্টবিট বেড়ে গেছে। কেন? একটি মেয়ের কণ্ঠ শুনে। সেটা তুই প্রতিদিনই শুনোস রিফাত, আজ আর নতুন কি! হ্যাঁ কিন্তু  আজকের কণ্ঠটা আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল ছুঁয়ে গেছে যা কখনো হয় না। রিফাত, তুই প্রেমে পড়ে গেছিস নাকি মেয়েটির। মেয়েটির প্রেমে পড়েছি কিনা জানিনা কিন্তু মেয়টির কণ্ঠের প্রেমে অবশ্যই পড়েছি। ওই একি কথা হলো রিফাত। মানে কি রাকিব? মানে হচ্ছে কাউকে ভালোলাগা শুরু হয় কিছু বৈশিষ্ঠ, যেমন কারো রুপ কাউকে মুগ্ধ করে, কারো চরিত্র কাউকে মুগ্ধ করে, কারো আচরণ কাউকে মুগ্ধ করে। আর এভাবেই কারো বৈশিষ্ট্য একে অপরকে আকৃষ্ট করে। আর সেটাই আমাদের মাঝে ভালোবাসার সৃষ্টি করে। কিন্তু আমিতো মেয়েটিকে চিনি না  রাকিব। ভালোবাসতে হলে কাউকে চিনতেই হবে এমন কোনো কথা নেই রিফাত, ভালোবাসার পরও চেনা যাবে
বুঝলি। হ্যাঁ, আজ আর কাজে আমার মন বসছে না রাকিব। আমি বসকে বলে চলে যাচ্ছি। আচ্ছা তুই যা রিফাত আমি কাজ শেষ করে আসবো।
রাস্তায় হাঁটছিলাম কিন্তু আশেপাশের কোলাহল, গাড়ির শব্দ কিছুই আমার কানে  যাচ্ছিলো না । নিজেকে নিজের কল্পনার গৃহে আবদ্ধ করে ফেলেছিলাম আর তাতে শুধু কণ্ঠ বার বার শুনতে পাচ্ছিলাম । এই ভাই বলে একজন হাতটা টান দিলো। আরেকটু হলে গাড়ির নিচে পরতেন তো ভাই, কোন দিকে  চাইয়া হাটেন, নেশা করেন নাকি । না ভাই ধন্যবাদ বাঁচানোর জন্য । থাক আর ধন্যবাদ দেয়া লাগবো না । রাস্তাঘাটে দেখে চলাফেরা করবেন, ঠিক আছে। জ্বি ভাই ধন্যবাদ। বাসায় খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি কিন্তু খেতে ইচ্ছে  করছে না, তবুও কিছু খেয়ে ঘুমাতে গেলাম । বিছানার এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না । আচ্ছা  মেয়েটার নম্বরতো নিয়েই এসেছি, কল দিবো কি একটা? কিন্তু কি মনে করবে। নিজের মনের সাথে বাকবিতণ্ডা করে অবশেষে কল দিলাম। হ্যালো……..হ্যালো… কে বলছেন ? হ্যালো……..হ্যালো… আশ্চর্য কথা না বললে কল
দিয়েছেন কেন। তারপর ফোনটা রেখে দিলো মেয়েটা। আমি কল রেকর্ডারটা অন করে নিশ্চুপভাবে কথাগুলো  শুনছিলাম শুধু। কোনও কথা বলতে পারিনি। কণ্ঠস্বর নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম সেটাও  খেয়াল ছিলনা। সকালে অফিসে গিয়েই খোঁজ করলাম মেয়েটির বইগুলো পাঠানো হয়েছে কিনা। কিন্তু রবিন ভাই  বললো বইগুলো আগামীকাল পাঠানো হবে। মেয়েটার কণ্ঠ শুনতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। গত রাতের কল রেকর্ডটা কি শুনবো, নাকি কল দিবো আবার। অবশেষে ফোন দিলাম। হ্যালো কে বলছেন?  
জ্বি আমি রকমারি.কম থেকে রিফাত বলছিলাম, আপনি গতকাল যে বইগুলো অর্ডার দিয়েছেন সেগুলো কি
পেয়েছেন? না পাইনি, আর আপনিই না বললেন বইগুলো পেতে ২-৩ দিন লাগবে । আমি এর প্রতিত্তুর কিছু না
কিরে অন্যনা কে কল দিয়েছিল, ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসলি। বয়ফেন্ড নাকি?
তোরা জানোস আমার বয়ফেন্ড নেই তবুও বার বার মজা করিস ক্যান? নেই কিন্তু হতে কতক্ষণ, আচ্ছা তাহলে কে ফোন দিয়েছিল? গতকাল কিছু বই অনলাইনে অর্ডার করেছিলাম, সেগুলো পেয়েছি কিনা সেটা জানার জন্য ফোন দিয়েছিল। দেখিস আবার বইগুলোর বদলে মনটা যেন পাঠিয়ে না দেয়, বুঝলি অন্যনা। তোদের এই মজা আমার একদম পছন্দের না । সরে দারা আমাকে যেতে দে।
 কিরে রিফাত কি ভাবছিস। সেই মেয়েটাকে নিয়েই ভাবছি রাকিব। তুইতো প্রমে পড়ে গেছিস রিফাত। আমিও তাই ভাবছি। কিন্তু মেয়েটাকে তো চিনিস না তুই। হ্যাঁ কিন্তু তাতে সমস্যাটা কোথায় রাকিব? সমস্যা হচ্ছে মেয়েটা বৃদ্ধ না ছোট, বিবাহিত না অবিবাহিত, বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা তুই তো কিছুই জানোস না? আমার যতটুকু ধারণা তাতে কোনও সমস্যা নেই। মানে? কণ্ঠ শুনে যতটা বুঝছি তাতে বৃদ্ধ বা ছোট না আর বয়ফ্রেন্ড নেই, যদি থাকতো তাহলে বইয়ের পেছনে সময় ব্যয় না করে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেই সময় পার করতো । যারা বই পড়ে তাদের কি বয়ফ্রেন্ড নেই রিফাত । আছে কিন্তু যারা বেশি বই পড়ে সময় পার করে  তাদের বয়ফ্রেন্ড নেই। আমি অর্ডার চেক করেছি মেয়েটি প্রতি মাসেই অনেকগুলো করে বই অর্ডার করে । কিন্তু বিবাহিত কিনা সেটা । সেটাও আগামীকাল বের করবো রাকিব। কিভাবে । সেটা আগামীকাই দেখতে পারবি।
আমি রকমারি.কম থেকে রিফাত বলছি, আপনি অন্যনা বলছেন। জ্বি বলছি, আপনি যে বইগুলো অর্ডার করেছেন সেগুলো কি পেয়েছেন? হ্যাঁ পেয়েছি। আমরা একটা গ্রাহক জরিপ করছি, তাই আপনাকে যা প্রশ্ন করা হবে দয়া করে সেগুলোর উত্তর দিবেন প্লিজ। আচ্ছা বলুন! আপনি কি করেন? আমি আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার এ প্রথম বর্ষে পড়ছি। আপনার জন্ম তারিখ এবং সাল? ০৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫। বিবাহিত না অবিবাহিত? অবিবাহিত। ধন্যবাদ
বলেই আমি ফোনটা রেখে দিলাম এবং রাকিবকে সব বললাম। রাকিব সব শুনে বলল, প্রেমে যখন পড়েছিস রিফাত তখন দেরি করে লাভ কি। শুভ কাজে দেরি করতে নেই প্রপোজ করে দে। আমি বললাম আজ না মেয়েটির জন্মদিনে কাজটা করব। এতদিন থাকতে পারবি রিফাত? যে জিনিসে যত দেরি সেই  জিনিসটা পাওয়ার আনন্দ বেশি রাকিব।
মেয়েটির জন্মদিনের দিন সকালে আমি তৈরি হয়ে একটি বই আর একটা চিরকুট নিয়ে মেয়েটির বাসার উদ্দেশে রওনা দেই। বাসায় পৌঁছে জানতে পারলাম মেয়েটি বাসা চেঞ্জ করেছে কিছুদিন আগে। তারা কেউ নতুন বাসার ঠিকানা দিতে পারলো না । আমি তখন মেয়েটির নম্বরে ফোন দিলাম কিন্তু নম্বরটা গত চারদিন ধরে বন্ধ ছিল। আজও তাই। অবশেষে আমি মেয়েটির বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিলাম এবং পেয়েও গেলাম।
আপনি অন্যন্যা? হ্যাঁ। এই নিন আপনার জন্মদিনের উপহার।  আপনাকে তো চিনতে পারলাম না আর আজ আমার জন্মদিন সেটা আপনি জানলেন কিভাবে? আমি কোন কথা না বলে দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম। মেয়েটি আমাকে পেছন থেকে আর ডাকলো না, কারণ আমার আচরণে মেয়েটি হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। ও ক্যাম্পাস  থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে । আমাকে খুঁজছেন? হ্যাঁ, খোঁজাটা কি স্বাভাবিক নয়?   আমি তখন মেয়েটির হাতে চিরকুট ধরিয়ে দেই। তাতে লেখা- 'আমার নাম রিফাত, চিনতে পারছেন অবশ্য। আপনার কণ্ঠস্বর।  শোনামাত্রই আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাই। আপনি কেমন কি করেন এগুলো কিছু না জেনেই প্রেমে পড়ে গেছি। আপনার কণ্ঠ আমার হৃদয়কে আপনার ভালোবাসার জগতে আবদ্ধ করে ফেলেছে। আপনি কি আপনার ভালোবাসার নৌকার মাঝি হিসেবে আমাকে মেনে নিতে পারবেন। দিতে পারবেন বিশ্বাস নামের বৈঠা টা । কথা দিচ্ছি কোন কথা না বলেই শুনবো আপনার সব কথা। নিজে ডুববো কিন্তু ভালোবাসার নৌকা ভুবতে দিবো না ।
অনন্যা হেসে ফেলে বললো- 'মাঝি আমাকে নিয়ো চলো গন্তব্যে।'

চেনা জানার বাইরে | নাঈম খান |