১৯৮৭ সালের কথা। আমলা ওয়াপদার ‘এফ’ টাইপে দিনে দিনে বেড়ে উঠছিলাম আমি। বয়স ১০ বছর। আট ভাই-বোনের মধ্যে আমি ছিলাম পঞ্চম। দুরন্তপনা আর চঞ্চলতায় ছিলাম সমবয়সীদের মধ্যে সেরা। দুরন্তপনা ও চঞ্চলতার প্রতিটি অধ্যায়ে ছিল আমার সরব উপস্থিতি। যার ফল ভোগ করতে হতো আমার বাবা-মাকে। প্রতিদিন কোন না কোন অভিযোগ তাদেরকে শুনতেই হতো। তার কিছুটা ফল আমাকেও ভোগ করতে হতো তাদের হাতে। আর সেই অভিমানেই তারা আমাকে স্কুলে ভর্তি করা থেকে বিরত রেখেছিলেন এই কারণে যে, আমাকে স্কুলে ভর্তি করলে হয়ত আরো নতুন কোনও সমস্যা তাদের ঘাড়ে এসে পড়বে।
সারাদিন দুরন্তপনা আর চঞ্চলতার মধ্যে কাটলেও সন্ধ্যার পর থাকতাম নীরব। যেহেতু সন্ধ্যার পর কোনও কাজ থাকতো না তাই বসে অথবা শুয়ে ছোট ভাই-বোনদের পড়া শুনতাম। এভাবেই শুনতে শুনতে এক সময় দেখা গেল প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠ্য বই সম্পূর্ণ এবং তৃতীয় শ্রেণির পাঠ বইয়ের অর্ধেক মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। অথচ আমি তখন অ আ ক খ এ বি সি ডি এসবের কিছুই চিনি না। যখন দেখতাম আমার সমবয়সী সবাই স্কুলে যাচ্ছে তখন আমার মনে হতো আমিও স্কুলে যাব।
যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। বাবা আমার পড়াশুনার এই অদম্যতা লক্ষ্য করে আমাকে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য আমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে গেলেন। তখন প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব মোঃ আমানুল্লাহ
স্যার। তিনি আমার ইন্টাভিউ এর ব্যবস্থা করলেন। আমি তাদের সে পরীক্ষায় নিমিষেই পাশ করলাম এবং সরাসরি
তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। সেখানে থেকেই আমার শিক্ষা জীবন শুরু।
এর পর থেকে আর আমাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হবার পর পর্যায়ক্রমে আমাকে অ আ ক খ এ বি সি ডি শিখতে হয়েছিল। এরপর থেকে আমার রোল নম্বর সবসময় ১-৩ এর মধ্যে থাকতো। যেহেতু আমি ১০ বছর বয়সে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম, সেহেতু সকলের চাইতে একটু বড় ছিলাম। তাই স্যারেরা আমাকে ক্লাস ক্যাপটিন বানিয়েছিল। সেই কারণে পঞ্চম শ্রেণিতে আমি আমার শ্রেণিকক্ষকে শান্ত রাখার জন্য একটা লাঠি বগলে করে ঘুরতাম।
হাইস্কুল এবং প্রাইমারী স্কুল পাশাপাশি হওয়ায় এ দৃশ্যটি হাইস্কুলের রেজাউল করিম স্যারের চোখে পড়ে যায়। তখন তিনি হুংকার দেন এই বলে যে, এই ছেলেটি হাইস্কুলে ভর্তি হলে খবর খারাপ করে দেব। সেহেতু আমি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে এবং সে এসে আমাকে রেজাউল স্যারের হুংকারের কথা জানায়। এর ফলে স্যারের ভয়ে আমি ভর্তি হচ্ছিলাম না, আবার কাউকে কিছু বলতেও পারছিলাম না যে, আমি কেন ভর্তি হচ্ছি না।
অবশেষে সমস্ত ভয়-ভীতি ঝেড়ে ফেলে এপ্রিল মাসে ভর্তি হলাম আমলাসদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে।
স্বভাবতই শেষে ভর্তি হবার কারণে আমার রোল হলো ১২১। প্রথম দিন শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হলাম ভয়ে ভয়ে।
রেজাউল করিম স্যার তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলা কি ইংরেজি ক্লাস নিতেন সঠিক মনে নেই। তবে যা মনে আছে তা
আমিও হাতের লেখা যথারীতি জমা দিলাম। স্যার শ্রেণিকক্ষে ঢুকলেন, যথারীতি তার আসন গ্রহণ করলেন, উপস্থিতি নিলেন এবং খাতা সাইন শুরু করলেন। আমার হাতের লেখাও মোটামুটি সুন্দর ছিল, যা দেখে স্যার আমাকে যেই দাঁড়াতে বললেন তখন আমার ভয়ে অবস্থা খারাপ। তিনি আমাকে অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করার পর প্রশ্ন করলেন, তুমিই সেই মক্কেল যে প্রাইমারিতে লাঠি বগলে করে ঘুরে বেড়াতে না? তখন আমি নিঃসংকোচে উত্তর দিলাম জি স্যার।
এরপর তিনি আমার হাতের লেখা নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন এবং শেষে মন্তব্য করলেন তুমি হাতের লেখাতে পাশ করে গেলে এখন পড়াশুনাই পাশ করতে হবে। পড়াশোনাই পাশ করলে দু-একটু দুষ্টুমি করলে সমস্যা নেই। তার এ মন্তব্য শুনে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম এবং মনে মনে আল্লাহকে অসখ্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলাম। ভাবতে ভালই লাগে যে, এক সময় আমি এই স্কুলেরই ছাত্র ছিলাম এবং বর্তমানে এই স্কুলেরই একজন শিক্ষক। আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণই এখন আমার সহকর্মী।
আল্লাহর কাছে আমার আকুল আবেদন এই যে, আমি যেন তাদের সাথে সারাজীবন এক হয়ে থাকতে পারি এবং আমার গুরুজন হিসাবে তাদেরকে সম্মান করতে পারি। আমিন।
আমার আমি | ওবায়দুল্লাহ পিন্টু |
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ