গল্প(৪২): বাস্তবতা এবং কাল্পনিক!
লেখক: শেখ আফরান
ছোট বারান্দার মধ্যে একটা চৌকিতে বসে আছি।পাশে ছোট টেবিলের মধ্যে পড়ে আছে গুটা কয়েক গল্পের বই।ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পড়তে ভাললাগছে না।কি একটা চিন্তা শুধু মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়,বুঝতেও পারিনা।
তখনই দূরবাস যন্ত্রের আওয়াজ, হাতে নিয়ে দেখি স্বর্ণার ফোন।স্বর্ণা আমার বন্ধু বলতে পারেন,নিজেকে আমার একজন ভক্ত মনে করে।
স্বর্ণার সাথে পরিচয়টা খুব আশ্চর্য ভাবে হয়েছিল। সেদিন আমি পার্কের একটা বেঞ্চিতে মাথা নিচু করে বসে আছি,তখনই কেউ একজন পাশে এসে বসল।
কিন্তু আমার চেয়ে দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিল না।
--কেমন আছেন?
--জ্বি ভাল,
--এভাবে বসে আছেন যে!
--এমনি,
--প্রতিদিন তো দেখি এভাবে বসে থাকেন!
--খেয়াল করেছেন?
--খেয়ালটা কৌতূহলে পরিণত হয়েছে!
এই ভাবেই দেখা, কথা। এরপর নাম্বার নেয়া,দেয়া।
ফোনটা চতুর্থ বার বেজে উঠল.....
ভাবনাহীন হয়ে ফোনটা ধরলাম।
--হ্যালো
--লেখক সাহেব কি করেন?
--কল্পনায় কিছু একটা চিন্তা করছিলাম।
--ওহ, আজ কবিতা লেখবেন না?
--কবিতায় পূর্ণতা পাইনি।
--তবুও,আমার জন্য না হয় লেখেন।
--চেস্টা করতে পারি,যদি রাতটা সঙ্গ দেয়।
--কবিতার সাথে রাতের কি সম্পর্ক?
--যতটা রাত আমি কাটিয়েছি জেগে,
ততটা রাত, কবিতা লেখেছি তোমায় ভেবে।
--.........(নিশ্চুপ)
--নিশ্চুপতা কিন্তু আমার সঙ্গী!
--চলুন,কোথাও ঘুরে আসি?
--ইচ্ছে হলেও, চাইনা যেতে।
--কেন?
--এই অন্ধকার কুঠুরিটা আমাকে ছাড়তে চায় না।
--আপনি চাইলেই বেরিয়ে আসতে পারেন!
--জোরপূর্বক কোনো কিছু করতে আমার মন সায় দেয় না।
--আচ্ছা,যদি আপনার মন এখন প্রেম করতে চায় তাহলে!
--বিবাগী হতে চেয়েছিলাম,তাহলে নিশ্চিত প্রেম আমার বিপক্ষ দলে।
--তাহলে তো আপনি প্রেমহীন লেখক।কিন্তু এত গল্প মাথায় আসে কিভাবে?
--আমি প্রেমহীন, কিন্তু আমার কল্পনা তো প্রেমহীন নয়।
--ওহ, আচ্ছা আপনার গল্পে এত হাসিমাত্রিক কেন?
পড়তে গেলে পেটে ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
--কেননা আমি হাসতে জানি না,
--কিন্তু কবিতাতে এত কষ্ট থাকে কেন?
--যখন লেখি,তখন বিরহের কষ্টে কাতর থাকি, তাই।
--শুনে মুখ দিয়ে আর কিছু আসছে না,
--কথার সমাপ্তি তাহলে করতেই পারি।
--ভাল থাকবেন!
--আপনিও।
এরকম জীবন তো আমিও চাইনি।কিন্তু পরিস্থিতি আর বাস্তবতা আমাকে এরকম জীবন উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন। বাস্তবতা বরই কঠিন।
এটা সেই বাস্তবতা, যে বাস্তবতায় এক কিশোর কমবয়সে তার পিতাকে হারিয়ে ছিল।
এটা সেই বাস্তবতা, যে বাস্তবতায় ওই কিশোর ভাই - ভাইয়ের ঝগড়া বিবাধ দেখেছিল।
এটা সেই বাস্তবতা, যে বাস্তবতায় নিজের মা কে নিজের ভাইয়ের বউয়ের হাতে অত্যাচারিত হতে দেখেছিল।
এটা সেই বাস্তবতা, যে বাস্তবতা নিজেকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছিল।
এটা সেই বাস্তবতা,যে জীবনের মানে কি, তা বুঝিয়ে ছিল।
মুখ দিয়ে যতই ভাল থাকি বলিনা কেন,
ভাল থাকাটা কিন্তু মনের বিষয়,মুখের না।
প্রতিটা রাত জেগে জেগে কাটিয়েছি।কিন্তু কেন? তা আমি নিজেও জানি না। রাত আসলেই চোখটা অশ্রু জড়াতে লেগে পড়ে,তখন নিজেকে কেমন অসহায় মনে হয়।
ভাবনার ব্যাঘাত ঘটল, দূরবাস যন্ত্রের আওয়াজে...
হাতে নিয়ে দেখি স্বর্ণার আবার ফোন!
--হ্যালো
--একটা আবদার আছে?
--বলুন..
--প্রতিজ্ঞা করুন রাখবেন!
--যদি সামর্থ্য থাকে।
--ইচ্ছে করতেছে এই দুপুরে,খোলা আকাশের নিচে আপনাকে নিয়ে হাটতে।
--খোলা আকাশ তো আমার পছন্দ না।
--কিছু শুনতে চাই না,আমি অপেক্ষায় থাকব নদীর পাড়ে,
আজ অনেকদিন পর মুক্ত আকাশ দেখতে বের হলাম।
তবে বের হইনি যে, তা কিন্তু নয়।তবে সেটা অন্য কাজে।
নদীর পাড়ে এসে দেখি মেয়েটা অনেক আগেই চলে এসেছে। আমাকে দেখে ছোট একটা হাসি উপহার সরুপ দিল। পাশে যেতেই বলে উঠল...
--আসলেন ঠিকই, তবে একটা রঙ্গিন পাঞ্জাবী পড়লে কিন্তু আপনাকে আরো সুন্দর লাগত।
--আমার সবকিছুই রংহীন, তাই পড়িনি।
--রংহীন হয়ে থাকলে তো রংহীনই মনে হবে।
..........কিছুটা নিরবতা,নিস্তব্ধতা।
--চশমাটা হঠাৎ রঙ পাল্টাল কেন?
-- সূর্যের আলোটা সবার জন্য ভাল না,তাই চোখ তা স্পর্শ করতে ভয় পায়।
--মানে
--চশমা না থাকলে চোখটা নিশ্চিত আলো সহ্য না করতে পেরে হু হু করে কেঁদে উঠত।
--চোখেও সমস্যা।
--...........(নিশ্চুপ)
--আচ্ছা,লেখালেখি কি পেশা হিসেবে নিয়েছেন?
--না নেশা।
দুজনেই নদীর কিনারায় এসে ঘাসের উপর বসে পড়লাম।নিরবতা ভেঙ্গে স্বর্ণা বলে উঠল.....
--কিছু কথা ছিল?
--বলুন
--বিরহের কষ্টের ভাগিদার কি হতে পারি?
হঠাৎ করেই বুকের ভেতরটা কেপে উঠল,কোনো কিছু
হারানোর ভয়ে। ভিতরে থাকা কষ্ট গুলা যেন বের হতে চাইছে নিজ থেকে।
--আমার কষ্ট, তাতে অন্যকে পুড়াতে চাইনা,
--আমি তো নিজ ইচ্ছেই পুড়তে এসেছি।
--জীবন আমাকে কি দিয়েছে জানেন?
--না।
--এক বুক ভরা হা হা কার, আর চোখ ভরা অশ্রু।
--আমি কারণটা জানতে চাই?
--জানেনই তো আমি প্রেমহীন!
--কিন্তু কেন?
--ভয়ে!
--কিসের ভয়?
--হারানোর ভয়।
--আমি সব ভয়কে জয় করব।
--বাস্তবতা বড়ই কঠিন, জানেন তো।
--যত বড়ই হউক,
--আপনি যা চাইবেন তা কখনও পাবেন না,আর যা পাবেন তা ভুল করে নয় ভাগ্যের কারণেই পাবেন।এটা তো জানেন।
মেয়েটা কেঁদে চলছে নিঃশব্দে।
উঠে চলে আসলাম। আসি বলে আসাটা হল না।বললে হয়ত চাপা কান্নাটা বেরিয়ে আসতো নিজ থেকে।
জীবন অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে,কিন্তু আমি যে আর নতুন করে হারাতে চাইনি,কেড়ে নেয়ার ভয়ে।
এ জীবনে নিঃসঙ্গতা আমার সঙ্গী।
...............সমাপ্তি।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ