গল্পঃ আদর
.
মহুয়ার মন খারাপ। কোন কিছু করতে তার ইচ্ছে হচ্ছেনা। কেন মন খারাপ হল তা সে নিজেই জানেনা। তার ছেলের কথা খুব মনে পরছে। মায়েদের মন খারাপ হলেই সন্তানের ব্যাপারে চিন্তা হয়। ভাবে এই বুঝি কিছু হল কি না। এই সংসারে মহুয়া অনেক দিন ধরেই আছে। এগারোটা বাজে। দেয়ালে টানানো রেহানের ছবিটায় ময়লা পরে গিয়েছে। ঝাপসা ঝাপসার কারণে কেমন জানি দেখাচ্ছে। একটা ভেজা গামছা নিয়ে পরিষ্কার করতে চাইল মহুয়া। রেহানের ছবিটা পরিষ্কার করার পর মহুয়া কেন জানি ছবিটার দিকে তাকাতে পারছেনা। কিরকম লজ্জা লজ্জা লাগছে। সে জানেনা এই চোখে এমন কি মায়া আছে যা আজও শেষ হচ্ছেনা। এমন একটা কিছু যা আজও লুকায়িতই মনে হয়। এমন সময় মহুয়ার ফোন বাজছে। মহুয়া মনে মনে ভাবল তার মা ফোন করেছে কারণ তার ফোন দিলে এগারোটা থেকে বারোটার ভিতরেই দেয়। কিন্তু ফোনের স্ক্রিনে রেহানের নাম দেখে অবাক হল।
.
রেহান কোনদিন দুপুরের খাওয়ার সময় ছাড়া ফোন দেয়ও না রিসিভও করেনা। রেহানের সাথে কথা বলার শেষে মহুয়ার আরো মন খারাপ হল। কারণ ফোনে রেহান বলেছে রেহানেরও মন খারাপ। কেন খারাপ তা সেও জানেনা। মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে মহুয়া চেয়ারে বসল। মাথাটা ধরেছে অনেক। চিনচিন ব্যাথা করছে। এই সময়ে আদর সাথে থাকলে তার মনটা খারাপ থাকতনা আর তাহলে ব্যাথাও থাকতনা। ঠিক তখন দরজায় কে বেল বাজাচ্ছে।
.
দরজা খুলে মহুয়া আরো অবাক। আদর দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে কান্নাকান্না ভাব। কেজি ওয়ানে পড়ে ছেলে একা একা স্কুল থেকে চলে এসেছে! মহুয়া আগে কোলে নিয়ে আদরের কপালে গালে চুমু দিল। এসময়ে তার ছেলেকে খুব মিস করছিল আর সে হাজির! মহুয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল ' স্কুল কি আজ ছুটি আব্বু? ' আদর মাথা নাড়াল। ছেলেটা গাল ফুলিয়ে টগবগ হয়ে আছে। মহুয়া আরো অবাক ' তাহলে তো তোমার ম্যাডামেরও ছুটি হয়নি। আর তোমার ম্যাডামের ছুটি নাহলে তোমাকে বাসায় দিয়ে গেল কে? ' আদর তাড়াতাড়ি করে বলল ' ম্যাডাম গাড়িতে তুলে দিয়েছে। আমার ভাল লাগছিলনা তাই ' আদরের কথা শুনে বাকি কাহিনী মহুয়া বুঝতে পেরে গিয়েছে।
.
কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকা ঠিক সামনের বাসাতেই থাকেন। উনি যাওয়ার সময় নিয়ে যান আসার সময় নিয়ে আসেন আদরকে। এ প্রথমবার এমন হল যে আদর একা একা গাড়ি করে এসেছে।
.
মহুয়া আদরের শরীরের শার্ট খুলতে খুলতে বলল ' আমার আব্বুর কি শরীর খারাপ? ' আদর সাথে সাথেই বলল ' না ' মহুয়া বুঝতে পারছেনা ছেলের মন খারাপ না রেগে আছে না শরীরই খারাপ। মহুয়া আদরের কপালে হাত দিয়ে দেখল জ্বরও আসেনি। মহুয়া বলল ' তাহলে ভাল লাগছিলনা কেন সোনামণি? ' আদর কিছু না বলে মহুয়ার গালে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে আরম্ভ করল। মহুয়া বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু আদর কেঁদেই যাচ্ছে।
.
না খুব আওয়াজ করে কাঁদছেনা কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পরছে। মহুয়ার মন মানছেনা। রেহানকে ফোন করেছে রেহান ডাক্তার নিয়ে আসবে। আদর মহুয়ার কাঁদ ছাড়ছেনা। অনেকক্ষণ পরে আদর মহুয়ার গলা ছেড়ে বলল ' আম্মু তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবে না তো? ' মহুয়ার বুকে যেন কেউ তীর মেরেছে। সে ছেলের জবাবে কি বলবে বুঝতে পারছেনা। কোনরকম ' না ' বলতেই আদর বলল ' আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারবনা। ' আদরের মুখে এরকম কথা শুনে মহুয়া স্তব্ধ। আদরের কেন এরকম মনে হল তা ভেবেই মহুয়া কূলকিনারা পাচ্ছেনা।
.
রেহান ডাক্তার নিয়ে এসেছে। ডাক্তার চেকাপ-টেকাপ করে কিছুই পেলনা। না পেল কোন রোগ না পেল কোন রোগের কারণ। ডাক্তার যাওয়ার সময় বলে যায় যে ছেলে কোন কারণে মহুয়াকে হারাবার ভয়ে আছে। কিন্তু এটা তো কোন ভাবেই সম্ভব না। পৃথিবী মিথ্যে হতে পারে তবুও না। একজন মনোবিজ্ঞানীর সাথে তারা আলাপ করে। উনিও কোন রোগ ধরতে পারলেন না। একই কথা বলেছে যে মহুয়াকে হারাবার ভয় কাজ করছে আদরের।
.
রাত বারোটা বাজে। রুমের লাইট জ্বলছে। আদর মহুয়ার গালে জড়িয়ে ধরে আছে। রেহান চেয়ারে বসে আছে চিন্তায়। আদর ঘুমায়নি।
.
হঠাৎ আদর বলে উঠল ' আম্মু তুমি কিন্তু হানিমুনে যেয়োনা। আব্বু গেলে আব্বু একা যাক ' এই কথা শুনে রেহান চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পরল। মহুয়ার চোখ কপালে উঠল। মহুয়া ইতস্তত হয়ে বলল ' হানিমুন! ' আদর গলা ছেড়ে উঠে বসে বলল ' হ্যাঁ। মামা বলেছে ওখানে নাকি একবার গেলে আর মানুষ ফিরে আসতে পারেনা। ' রেহান ইতিমধ্যে হাসতে শুরু করে দিয়েছে।
.
মহুয়া বলল ' তুমি মামার কথায় এরকম করলে? তুমি জাননা তোমার মামা আস্ত একটা ফাজিল। আর যদি আমরা যাই তাহলে অবশ্যই তোমাকে নিয়ে যাব। তোমাকে ছাড়া যে তোমার আম্মুও থাকতে পারবেনা। ' কান্নাকান্না স্বরে আদর বলল ' মিথ্যা বলবেনা মামা এটাও বলে দিয়েছে ওখানে বাচ্চারা যেতে পারেনা। ' রেহান হাসি আর লুকিয়ে রাখতে পারলনা নিজের মধ্যে। হাসতে হাসতে রুমের দরজা খুলে মহুয়ার কাছে এসে মহুয়ার হাতটা ধরে বলল ' চলনা এক্ষণি হানিমুনে যাব ' আদর কথা শুনেই মহুয়ার গলায় জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। মহুয়া ঝাড়ি দিয়ে বলল ' হাত ছাড়না হুহ। আসছে উনি এমন সময় হানিমুনে যাবে। '
Siam Ahmed Joy
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ