== আমার নীলপরী ==
:
বিকেল ৪টা। ছাদে একলা বসে আছে মেয়েটা। চারদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। পশ্চিম দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে আর একটু পরপর হু হু করে কেদে উঠছে। চোলগুলো এলোমেলো, মুখটা অনেক ফ্যাকাসে হয়ে আছে। আমি যে তার পাশে এসে দাড়িয়ে আছি এটা সে বলতেও পারবেনা, সে কেদেই যাচ্ছে। আমিও চাই কাদুক, যত ইচ্ছে কাদুক। কাদলে মন হালকা হয়। পাহাড় সমান কষ্টটা কিছুটা হলেও কমবে ওর। জানিনা কেন ও এতো বড় একটা কষ্ট পেল।
:
আমি নীল। এবার HSC পরিক্ষা দেব। আর যে ছাদে বসে বসে কান্না করছে সে হলো নীলপরী। অবশ্য তার আরেকটা নামও আছে, তবে সেটা না হয় অজানাই থাক। আমি তাকে নীলপরী বলেই ডাকি। নীলপরী হচ্ছে আমার জীবনের একমাত্র বেষ্ট ফ্রেন্ড। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আমরা একসাথে আছি। একসাথে স্কুল জীবন শেষ করে এখন কলেজ লাইফেও একসাথে আছি। নীলপরী ই হলো আমার জীবনের একমাত্র দুঃসময়ের সাথী, আমার জীবনের প্রত্যেকটা খারাপ সময়ে আমি ওকে পাশে পেয়েছি। আমার জীবনে ও ছিল ছায়ার মতো। জানি থাকবেও। আজকে বিকালে ওদের বাসায় এসে দেখি ও রুমে নাই। বুঝতে অসুবিধা হয়নি কোথায় আছে। ছাদে এসেই দেখি ও পশ্চিম দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে, আর একটু পরপর হু হু করে কেদে উঠছে।
:
৬মাস আগের কথা। নীলপরী দেখতে অনেক সুন্দরী ছিল। কলেজে যতগুলো মেয়ে ছিল তার মাঝে সুন্দরীর দিক থেকে নীলপরীই ছিল সবার উপরে। ও যখন কথা বলার মাঝে হেসে দিত আর তার সেই ভুবনমোহিনী হাসিটা যে কতগুলো ছেলের ঘুম হারাম হয়েছে তা আমার অজানা। তার সেই হাসিটার প্রতি আমিও দুর্বল ছিলাম। কারন অন্য কেউ তার সেই হাসিটা একবার দেখেই ফিদা হয়ে যেত আর আমিতো বলতে গেলে সারাদিনই ওর হাসিটা দেখতাম। ২৪ঘন্টার মাঝে ও ১৮ ঘন্টাই আমার সাথে থাকতো। ওর প্রতি আমি এতটাই দুর্বল ছিলাম যে ও যদি বসতে বলতো আমি বসে যেতাম, দাড়াতে বললে দাড়িয়ে যেতাম। তবে আমার এই ভালো লাগার কথা ওকে বলা হয়নি। ভয় হতো খুব, কারন যদি ভালোবাসা না ই পাই তাহলে বন্ধু হয়ে থাকুক এটাই ভালো।
কিছুদিন পর নীলপরী নিজেই এসে আমাকে বললো, ওর নাকি এফবিতে একটা ছেলের সাথে কথা হয় রেগুলার। প্রায় ৩মাস ধরেই ছেলেটার সাথে কথা হচ্ছে কিন্তু ও আমাকে আজকে সেটা বলে। জিজ্ঞেস করাতে বলে যে- আরে এটাতো স্বাভাবিক। এটা তোর কাছে বলতে হবে নাকি। তখন আমি তার সামনে হাসি মুখে থাকলেও বাসায় এসে একদম কান্নাই করে দিয়েছিলাম। প্রচন্ড ইর্ষা হচ্ছিল আমার!!! একটা ছেলের সাথে নীলপরী এফবিতে চ্যাটিং করে এটা ভাবতেই আমার কেমন যেন লাগতো। সবসময় মনটা খারাপ করে থাকতাম।
এর কিছুদিন পর নীলপরী বললো ছেলেটা ওকে প্রপোজ করে ফেলছে। সেদিন যে আমার কি অবস্থা হয়েছিল!! ইচ্ছে হচ্ছিল তখনই চিৎকার করে কান্না করতে। কি হলো এটা আমার সাথে!! যাকে নিয়ে এতোবড় স্বপ্ন দেখলাম আজ সে ই দুরে চলে যাচ্ছে। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ওকে প্রশ্ন করলাম- তুই কি ওকে পছন্দ করিস।
ও বললো হ্যা কিছুটা করি, কারন ও অনেক ভদ্র একটা ছেলে, আমার অনেক কেয়ার করে, তাছাড়া অনেক ভালো একটা জব ও করে। তখন আমি বলছিলাম- ওকে দোস্ত, তোর যেটা ভালো মনে হয় সেটাই কর তবে ভার্চুয়াল জগতের কাউকে এতটা সহজে বিশ্বাস করিস না।
-
২দিন পর শুনলাম নীলপরী ছেলেটার সাথে সম্পর্ক শুরু করেছে, সেদিন কথাটা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, মনে হয়েছিল কে যেন আমার বুকে হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে। সেদিন রাতে অনেক কান্না করেছিলাম, অনেক বেশি। কিন্তু কিছুই করার ছিলনা।
এরপর আস্তেআস্তে আমাদের মাঝে কথার মাত্রাটা কমতে থাকে, যা ক্রমেই বেড়ে চলছিল। যে কিনা দিনে ১৮ঘন্টা আমার সাথে থাকতো সে আজ ১৮মিনিটও আমাকে টাইম দেয়না। বুঝতে পারি নীলপরী অনেক হ্যাপি আছে।
:
সম্পর্কটা ২মাস চলছিল ওদের, এরপরেই একদিন নীলপরীর মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা কল আসে। নীলপরী রিসিভ করার পর যেটা শুনলো তা শুনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। নীলপরীর বিএফের নাম ছিল আবির। তো নীলপরী কলটা রিসিব করার পর একজন বলে উঠে- আপু আমি আবিরের বন্ধু, আপনাকে একটা ভালো উপদেশ দিচ্ছি। আপনি আবিরের জীবন থেকে সরে যান। কারন ও আপনাকে ভালোবাসেনা। শুধুই টাইম পাস। আপনার মতো এমন ৮-১০ টা জিএফ আছে ওর, সবার সাথেই ও টাইম পাস করে। আপনাকে অনেক সহজ সরল মনে হয়েছে তাই কথাটা বলে দিলাম। এখন রাখা না রাখা আপনার ব্যাপার।
কিন্তু নীলপরী আবিরের ভালোবাসায় এতটাই অন্ধ ছিল যে- সে ছেলেটার কথা বিশ্বাস করেনি বরং উল্টা আরো ছেলেটাকে অবিশ্বাস করে। ওকে কতগুলো কথা শুনিয়ে দেয়।
-
কিন্তু তাও ছেলেটা হাল ছাড়েনি। চোখের সামনে এত সুন্দর একটা জীবন ও নষ্ট হতে দেয়নি। ১ সপ্তাহ আগে ছেলেটা নীলপরীকে কল দিয়ে বলে যে পার্কে আসতে অনেক গুরুত্বপূর্ন কথা আছে। নীলপরী যখন পার্কে যায় তখন ছেলেটা নীলপরীকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। একটু দুরে দুজন মানুষকে দেখিয়ে ছেলেটা চলে যায়।
নীলপরীর বুঝতে বাকি থাকেনা দুজন মানুষ কারা। একটা মেয়ে ছেলেটার কাধে মাথা রেখে বসে আছে। আর ছেলেটা মেয়েটার হাতটা ধরে বসে আছে। ছেলেটা অন্য কেউ নয়। এটাযে তারই প্রিয় আবির!!! নীলপরী তখন কিছুই বলেনি ও চায়নি ওর জন্য ওদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাক। তাই সে কান্না করতে করতে বাসায় চলে আসে। এসেই আবিরের নাম্বারটা ব্লক লিস্টে নিয়ে যায়, এফবি থেকেও মুছে দেয় ওর আইডি।
তারপরেই শুরু হয় নীলপরীর জীবনে বাস্তবতার খেলা, বাস্তবতা যে এতটা কঠিন তা নীলপরীর জানা ছিলনা, নীলপরী প্রত্যেকটা দিন কাদে, প্রত্যেকটা মুহুর্তে কাদে। ও বিশ্বাস ই করতে পারছেনা যে আবির তার সাথে এমন করেছে। নীলপরী এখন অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, আগের মতো সেই ভুবনমোহিনী হাসিটা তার মুখে আর দেখা যায়না, আগের মতো কথা বলেনা, একদম চুপ হয়ে গেছে।
:
আজকে বিকেলেও এসে ছাদে বসে রয়েছে আর কান্না করছে। অনেক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছি, এবার ওকে ডাকি।
"নীলপরী??
"-----,
"নীলপরী শুনছিস??
আমার কথা শুনে ও পশ্চিম দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকালো। ওর দিকে চোখ পড়তেই আমার অবস্থা একদম খারাপ হয়ে যায়। নীলপরীর এই কি অবস্থা। চোখদুটো একদম খাদে চলে গেছে, দেখে মনে হচ্ছে আজ কতদিন ধরে না খেয়ে আছে আল্লাহ জানে। চোখদুটো লাল ও হয়ে আছে খুব। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। যার সাথে সেই ছোট্টবেলা থেকে একসাথে আছি আজকে সে চোখের সামনে কান্না করছে অথচ আমি কিছুই করতে পারছিনা...
"নীলপরী আর কতো?
"কি?
"যা হবার তা হয়ে গেছে। আর কতো কান্না করবি তুই?
"আমি কি করবো বল....
এই বলে ও আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।
নাহ, ওর কান্না আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। কিছু একটা করতেই হবে।
"নীলপরী শুন?
"হুম বল...
"দেখ যা হবার হয়ে গেছে। এখন এটা নিয়ে তোকে বসে থাকলেত হবেনা। তোকে সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
"কিন্তু আমিতো পারবোনারে....
"কেন পারবিনা??
"ওকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো?
"ও যদি তোকে ছাড়া ভালো থাকতে পারে তাহলে তুই পারবিনা কেন?? ও যদি তোর সাথে এতটা কঠিন হতে পারে তুই পারবিনা কেন?? পারতে হবে তোকে। দেখিয়ে দে তোর ও আত্মশক্তি আছে।
"হুম।
"দেখ নীলপরী, জীবনটা কোন ৫০-৬০ মিনিটের কোন সিনেমা না। জীবনটা দীর্ঘ ৫০-৬০ বছরের। এরমাঝে অনেক কিছুই হতে পারে, দুঃখ, কষ্ট পেতেই পারোস, যেমনটা এখন পেয়েছিস। তাই বলেত আর জীবনটা থামিয়ে দেওয়া যায়না...
"হুম।
"কারো জীবন ই কারো জন্য থেমে থাকেনা নীলপরী, একভাবে না একভাবে ঠিকই চলে যায়। কারো জীবনটা চলে অনেক সুখে, কারো জীবনটা চলে ধুকে ধুকে। তোর জীবনটাও ধুকে ধুকে চলছে, কিন্তু তুই নিজেকে কঠিন কর। ধুকে ধুকে চলা জীবন থেকে বের হয়ে আয়।
"আমি কি পারবো নীল?
"অবশ্যই পারবি নীলপরী। নিজের উপর বিশ্বাস রাখ। দেখবি সবকিছুই সম্ভব হবে।
"হুম।
"তোর জীবনটা নতুন করে শুরু করতে আমি তোর পাশে আছি নীলপরী, তোর সবকিছুতে আমি তোর পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো।
"তুই এতো ভালো কেন নীল!!!
এই বলেই আবার নীলপরী কান্না করে দেয়। তবে এটা কষ্টের কান্না নয়।
:
৩মাস পরের কথা। এখন নীলপরী অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। আবার নীলপরীর মুখে আগের সেই ভুবনমোহিনী হাসিটা দেখা যায়, আবার আগের মতো কথা বলে সে। হ্যা নীলপরী পেরেছে তার জীবনে ফিরে আসতে, সে পেরেছে তার জীবনটাকে নতুন করে শুরু করতে। সে ভুলে গেছে সবকিছু। সে ভেবে নেয় আবির ছিল তার জন্য একটা ঝরের মতো, ঝরটা এসে ওর জীবনটাকে ছিন্ন-বিন্ন করে দেয়। আর ভাবে আমি এসে ওর জীবনটাকে আবার নতুন করে গড়িয়ে দিয়েছি, তার মুখে হাসি ফুটিয়েছি।
৩দিন পর একদিন বিকেল বেলা ও আমাকে পার্কে আসতে বলে। আমিও পার্কে চলে যাই। গিয়ে নতুন করে আবার ওর প্রেমে পড়ি। নীল রঙের প্রতি আমি বরাবরই দুর্বল। আর নীলপরীর উপরতো আগে থেকেই। নীলপরী আজকে পড়েছেও একটা নীল শাড়ি। আমি যে কি করবো কিছুই বুঝতেছিনা। ইচ্ছে হচ্ছে এখনিই গিয়ে বলে দেই আমি তোকে ভালোবাসি নীলপরী, অনেক ভালোবাসি।
একটুপর ই ওর সামনে যাই। ও আমার দিকে অনেক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আমি বুঝলাম না ও কেন এভাবে তাকিয়ে ছিল। একটুপর বললো চল সামনে এগুনো যাক....
:
এই মুহুর্তে আমরা দুজন হাটছি। কারো মুখেই কোন কথা নেই। হঠাৎ করেই আমার হাতে কারো স্পর্শ অনুভব করলাম। চেয়ে দেখি নীলপরী আমার হাতটা ধরে আছে। আস্তেআস্তে ও আমার হাতটা অনেক শক্ত করে ধরলো। আমি কিছুই বলিনি তখন, কারন আমার বুঝতে বাকি থাকেনি নীলপরী কি বুঝাতে চাচ্ছে। একটু পর আমাকে অবাক করে দিয়ে হাটা থেকেই ও আমার কাধে মাথা রাখলো...আর ছোট্ট করে বলো...
"আমি আর আমার জীবনে সেটার পুনরাবৃত্তি চাইনা নীল।
আমিও নীলপরীর হাতটা শক্ত করে ধরে বলি যে- হবেনারে সেটা কখনও.....
---তারপরেই দুজন এগিয়ে চললাম। দেখিনা কতটুকু এগুনো যায়-----
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ