2864

বোরকা পরা মেয়েটা যতই এদিকে আসছে ফাহিমের ততই হার্টবিট বেড়েই যাচ্ছে। আজ দৃঢ় সংকল্প করেই এসেছে, সব মনের কথা বলে দিবে। মেয়েটা সম্পর্কে অনেক খোঁজ-খবর নিয়েছে সে। এমন মেয়ে আজকাল পাওয়াই যায় না।
.
- শুনছেন?
ফাহিম লজ্জা ভেঙে মেয়েটাকে ডাক দিলো। মেয়েটা দৃষ্টি নিচে করে হেঁটেই চলছে। কোনদিকে নজর নেয়ার ইচ্ছেই নেই।
- আপনাকেই বলছিলাম, মিস জামিলা?
বোরকা পরা মেয়েটি নিশ্চিত হয় ফাহিম তাকে ডাকছে,
- আপনি কি কিছু বলতে চান?
ফাহিম মৃদ্যু হেসে বললো,
- আপনার সম্পর্কে সব খোঁজ-খবর নিয়েছি। আসলে আমি আপনার মতো একজন মেয়েকে খুঁজছি।
- কেন সেটা বলবেন তো? এখানে কেউ দেখে ফেললো মানুষ খারাপ ভাববে। যা বলার দ্রুত শেষ করুন।
হাত কচলাতে কচলাতে কিছুটা লজ্জা পায় ফাহিম,
- আপনাকে আমার পছন্দ, বিয়ে করতে চাই আপনাকে।
ফাহিমের কথা শুনে কিছুটা আশ্চর্য হয় জামিলা,
- আমার বাবা-মা যা ভালো বোঝে সেটাই করবে।
- তবুও আপনার পছন্দ বলে কিছু আছে না?
.
বুকের এক পাশটা মৃদ্যু কাঁপছে। কে যে কখন দেখে কুৎসা রটায়! তবুও বলতে লাগলো জামিলা,
- আমি এমন ছেলে স্বামী হিসেবে পেতে যাই যে,
(১) পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করবে।
(২) খারাপ নেশা করবে না।
(৩) খারাপ ছেলেদের সাথে মিশবে না।
(৪) ইসলামের আলোকে চলতে চেষ্টা করবে।
(৫) মুখে দাড়ি রাখবে।
(৬) সৎ উপার্জন করবে।
আমার মনে হয় আমি নেশা করেন, নামাযও পড়েন না, মুখে দাড়িও নাই। আমার আশা বাদ দিন। আমাকে আর ডিস্টার্ব না করলে খুশি হবো। আমি যাই, ভালো থাকবেন।
.
জামিলা কথাগুলো বলে চলে যাচ্ছে। ফাহিম অবাক নয়নে জামিলার হেঁটে যাওয়া প্রত্যক্ষ করছে। মনে মনে ভাবছে, সব শেষ। যার কারণে সে ভালো হতে চায়,আল্লাহ ভীরু হতে চায় সে তাকে চায় না। ফাহিম দৌড় দেয় জামিলার দিকে।
- আমি যদি ভালো হয়ে যাই তাহলে? মানে নেশা ছেড়ে দেই, নামায পড়ি, সৎ পথে উপার্জন করি তাহলেও কি আমি আপনার যোগ্য নই?
- দেখেন এভাবে আমাকে বিরক্ত না করলে খুশি হবো।
- আমার উত্তরটা তো দিন।
- যদি হতে পারেন তাহলে আমার বাবার কাছে প্রস্তাব দেন। তারা যা ভালো বুঝবে তাই আমি মেনে নিবো।
জামিলা হাঁটছে, ফাহিম পেছন দিক দিয়ে খুশি মনে দৌড় দেয়। যাক, কোনমতে তাহলে রাজি করানো গেছে।
.
ফাহিম নেশা ছেড়ে দিয়েছে। দাড়ি শেভ করাও বন্ধ করে দিয়েছে। ঠিকমতো কাজে যায়। কাজে অবহেলা করে না। নিজের মনে করে কাজ করতে থাকে। নামায পড়া তার এখন নিত্যদিনের রুটিন। নিয়মিত ইসলামীক বই পড়া অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
.
পারিবারিক অনেক বাধা বিপত্তির পর জামিলা ফাহিমের বিয়ের কাজটা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। মোটামুটি রকমের আয়োজন ছিলো,যেহেতু উভয়েই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়ে।
.
বাসর ঘরে ঢুকে পরে ফাহিম,
জামিলাকে সে কখনোই দেখে নি। শুধুমাত্র ভাবির কথার উপর ভিত্তি করে এতোদূর এগিয়েছে। নাহ! বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে, সে কোন ভুল করছে না। জামিলা যাই বলুক না কেন, ইসলামের পথে আনার জন্যই বলেছে।
.
বিছানার পাশে গিয়ে গলা খাকড় দেয় ফাহিম,
- আসসালামু আলাইকুম।
- ওলাইকুম আসসালাম।
- আজকেও কি আপনার চাঁদ মাখা মুখখানা দেখতে পারবো না?
- পারবেন তবে আপনি কি আমার মোহর পরিশোধ করেছেন?
- জ্বী,আমার সাধ্যানুযায়ী যতটুকু ততটুকু দিয়েছি। বাকি রাখি নি। বইয়ে পড়েছি,মোহর বাকি রাখা ঠিক নয়।
- তাহলে ঠিক আছে। দেখতে পারেন।
ফাহিম বিসমিল্লাহ বলে ঘোমটা সরিয়ে ফেলে। যা সন্দেহ করেছিলো তার থেকে বেশি সুন্দর জামিলা। জামিলা শব্দের অর্থ সুন্দর। নামের সাথে সব কিছুই যেন অভূতপূর্ব মিল।
.
দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে আছে,
- অপরাধ না নিলে একটা কথা বলতাম। (জামিলা)
- বলো।
- আপনার ভাবি আমার ফুফাতো বোন, এটা আপনি জানেন। একদিন উনি আমাকে আপনার সম্পর্কে বলে, বলে আপনার চরিত্র সম্পর্কে। আপনাকে এই খারাপ চরিত্র থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য শেষপর্যন্ত আপনাকে বিয়ে করতে হলো।
- তাতে কি তুমি অখুশি জামিলা?
- নাহ তো , সবশেষে আমি মনের মতো বর পেলাম।আপনিও সঠিক পথে ফিরে এসেছেন।
দুজনের মুখে সুখের হাসি। বাইরে থেকে চাঁদের আলোয় ঘরটার খানিকটা আলোকিত হয়েছে। চাঁদটা চিকচিক করে জ্বলছে। সুখের কোণে অাবৃত হয়েছে নতুন দম্পতি যুগল।
.
.
গল্পঃ আলোকিত জীবন
লেখাঃ সাজ্জাদ আলম বিন সাইফুল ইসলাম