অবশেষে পুর্ণতা
লেখক:- Hosain Ahmed
-
:-স্যার আমার রেজাল্ট খুব ভালো।প্লিজ চাকরিটা আমায় দিন।আমি এই চাকরিটার জন্য যোগ্য।(ছেলেটি)
:-শোন বাবা এত ভালো একটা চাকরী নিতে হলে কিছু মিষ্টি কেনার টাকা আমাদের দিতেই হবে।(ভাইবার প্রধান)
:-কত টাকা স্যার?
:-এই ১০ লাখের মত।
:-কিন্তু এত টাকাতো আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।
:-না হলে আমাদের কিছু করার নাই।দুই দিনের মধ্যে টাকা দিতে পারলে চাকরি হবে নাহলে আমরা অন্য কাউকে দিয়ে দিবো।আপনি এখন আসতে পারেন।
ছেলেটি হতাশ হয়ে বের হয়ে আসলো।এই দিয়ে ২৯ টা ভাইবা দিলো।সব জায়গায় টাকার জন্য তাঁর চাকরিটা হয়না।ছেলেটার নাম আবির।একটা সরকারি কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে এখন চাকরির জন্য হন্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তাঁর বাবার এত টাকা দেওয়ার মত সামর্থ নাই তাই চাকরিটা হয়না।আবির রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে।তাঁর বাড়িতে যেতে ইচ্ছা করছেনা।বাড়িতে গেলেই তাঁর বাবা মায়ের শুকনো মুখ দেখতে হয়।ছোট বোনটার মলিন হাঁসি দেখতে হয়।হাঁটতে হাঁটতে একটা পার্কের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো।আবিরের মন খারাপ হলেই এই পার্কটার মধ্যে এসে বসে থাকে।আজও গিয়ে আম গাছটার নিচে বসলো।এই আম গাছকে ঘিরে তাঁর হাজারো স্মৃতি জরিয়ে আছে।
ঘড়ির টাইম দেখার জন্য আবির পকেট থেকে ফোনটা বের করলো।মোবাইলের স্কিনে তাঁকাতেই তাঁর চোখ কপালে ওঠলো। ৬০ মিসকল।সবগুলো শান্তার নম্বর থেকে।তখন ভাইবার রুমে ঢুকে ফোনটা সাইল্যান্ট করেছিলাম সেটা মনেই ছিলোনা কথাটা মনে মনে বললো আবির।শান্তার নম্বরে ফোন ব্যাক করবে সেই টাকাও নেই তাঁর ফোনে।মেয়েটা মনে অনেক টেনশনে আছে।এসব ভাবতে ভাবতে আবার ফোন আসলো।আবির ফোনটা রিচিভ করলো
:-কোথায় থাকো তুমি?(কান্নাজরিত কন্ঠে বললো শান্তা)
আবির জানে কেনো শান্তা কাঁদছে।মেয়েটা এমনি। একটু দেরী করে ফোন রিচিভ করলেই কান্নাকাটি শুরে করে দেয়।
:-ভাইবা রুমে ছিলাম।ফোনটা সাইল্যান্ট ছিলো তাই বুঝতে পারিনি।(আবির)
:-এখন কোথায় তুমি?আর চাকরিটা কী হয়েছে?
আবির কী বলবে বুঝতে পারছে না।আবিরেকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে শান্তা বুঝে গেছে এবারো আবিরের চাকরিটা হয়নি।শান্তা জানে এখন আবির পার্কে মন খারাপ করে বসে আছে।
:-তুমি পার্কেই থাকো আমি আসছি।(শান্তা)
:-না তোমার আসতে হবেনা।আমি এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।(আবির)
টুট টুট
ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গেলো।আবির জানে শান্তা এখন রেডি হয়ে এখানে আসবেই।মেয়েটা ওর মনের কষ্টগুলো কীভাবে বুঝে যায় আবির আজও সেটার রহস্য বের করতে পারেনি।
আবিরের আজ ৪ বছর ১ মাস ১২ দিন আগের কথাগুলো মনে পড়ছে।সেদিন ছিলো শনিবার।আবির কলেজ থেকে ফিরছে।তাঁর মনটা খারাপ থাকায় রাস্তা দিয়ে এলোমেলো ভাবে হাঁটছিলো এমন সময় একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খায় সে।ধাক্কা খেয়ে রাস্তার উপর পড়ে যায় সে।পড়ে গিয়ে হাত কেঁটে যায়।রাস্তা থেকে ওঠে ধাক্কা খাওয়া ব্যক্তির দিকে তাঁকায় সে।তাঁকিয়ে দেখে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে।মেয়েটা আবিরের হাত থেকে রক্ত বের হতে দেখে বলে
:-আপনার হাত থেকে রক্ত পড়ছে। চলুন ডাক্টারের দোকান থেকে মেডিসিন নিবেন।(মেয়েটি)
মেয়েটার চোখের দিকে আবির তাঁকিয়ে আছে।মেয়েটা খুব বেশি সুন্দর না কিন্তু মেয়েটার চোখটা অনেক বেশি মায়াবি।
:-বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছা করে আপনাকে ধাক্কা দেয়নি।আমাকে তাঁড়াতাঁড়ি বাসায় যেতে হবে তাই দ্রুত হাঁটছিলাম।আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।আপনি চাইলে আমাকে শাস্তি দিতে পারেন(মেয়েটি)
:-না না আপনার কোন দোষ নেই আমিই এলোমেলো ভাবে হাঁটছিলাম।(আবির)
:-আচ্ছা আগে ডাক্টারের দোকানে চলুন।
:- আপনাকে কষ্ট করে আর যেতে হবেনা আমিই দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে নিবো।আপনি বাসায় যান
:-আচ্ছা ঠিক আছে।
মেয়েটি চলে গেলো।আবির দাঁড়িয়ে মেয়েটার চলে যাওয়া দেখছে।মেয়েটা যখন তাঁর চোখের আড়ালে চলে গেলো তখন সে আবার সামনের দিকে পা বাড়ালো।সামনের দিকে পা বাড়াতেই আবির কিছু একটা পড়ে থাকলে দেখলো।আবির এগিয়ে গিয়ে সেটা তুললো।সম্ভবত কলেজ আইডি কার্ড।কার্ডের উপর মেয়েটার ছবি থাকায় আবিরের চিনতে অসুবিধা হলোনা।কার্ডটা এখন কী করবে সেটা আবির ভাবছে।মেয়েটাতো চলে গেলো।আবিরের হাত দিয়ে এখনো অল্প অল্প রক্ত বের হচ্ছে তাই কার্ডটা পকেটে রেখে ডাক্টারের দোকানের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।ডাক্টার দেখিয়ে আবির বাসায় চলে আসলো।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে প্যান্টের পকেট থেকে কার্ডটা বের করলো।কার্ডের উপরে থাকা নামগুলো পড়লো সে।মেয়েটা তাঁদের কলেজেই পড়ে।ইন্টার ফাষ্ট ইয়ার।নাম শান্তা রহমান।আবির ভাবলো কালকে কলেজে গিয়ে দিয়ে দিবে।সে কার্ডের উপর থাকা পিকটা দেখতে থাকলো।মেয়েটাকে এক দেখাতেই তাঁর ভালো লেগে গেছে।সেদিন আবির শুধু মেয়েটার কথাই ভাবলো।পরেদিন কলেজে গিয়ে মেয়েটার ডিপার্টমেন্টের সামনে গেলো।গিয়ে দেখলো ওদের ক্লাস হচ্ছে।আবির ক্লাসে থাকা স্যারকে ডাক দিলো।
:-স্যার একটু এদিকে আসুন।(আবির)
:-কিছু বলবে?(স্যার)
:-কালকের কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বললো স্যার এই কার্ডটা কালকে রাস্তায় পেয়েছি।এই ক্লাসের একটা মেয়ের হবে হয়তো।
:-আমাকে দাও আমি দিয়ে দিচ্ছি।
আবির স্যারকে কার্ডটা দিয়ে তাঁর ডিপার্টমেন্টে চলে আসলো।
ক্লাস শেষে আবির আর তাঁর বন্ধুরা বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।গেটের কাছকাছি আসতে একটা মেয়ে আবিরদের সামনে দাঁড়ালো।আমি দেখলো কালকের ওই মেয়েটা মানে শান্তা।শান্তা আবিরকে উদ্দেশ্য করে বললো
:-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।আপনার জন্যই আইডি কার্ডটা ফেরত পেলাম(শান্তা)
:-মানুষইতো মানুষের উপকার করবে তাইনা।(আবির)
:-আপনার নামটা এখনো জানা হয়নি।
:-আবির।অনার্স ফাষ্ট ইয়ার।
:-আমি শান্তা। ইন্টার ফাষ্ট ইয়ার।
:-কালকে আপনার কার্ডের উপর থেকেই দেখেছিলাম।
:-আচ্ছা আজ আসি।
:-আচ্ছা।
শান্তা চলে যাওয়ার পর ওর ফ্রেন্ডদের দিকে তাঁকালো।আবিরে ফ্রেন্ডরা আবিরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।
:-কিরে দোস মেয়েটা কে?(ফকরুল)
:-মেয়েটার নাম শান্তা।কালকে মেয়েটার সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম।তখন মেয়েটার আইডি কার্ড ফেলে রেখে গিয়েছিলো।আজ সেটা ফেরত দিয়েছি।তাই এখন ধন্যবাদ,জানালো।(আবির)
:-শুধু কী এতটুকুই নাকি আরো কিছু(শান্ত)
:-নারে দোস আর কিছু না।(আবির)
:-আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে সামথিং সামথিং(শিপন)
:-তোরা কী শুরু করছি। তোরা যা ভাবছিস তাঁর কিছুই না।এখন এসব বাদ দে বাসায় চল।
আবির আর বন্ধুরা বাসার পথে রওনা দিলো।
এরপর থেকে প্রায় প্রায়ই আবিরের সাথে শান্তার কলেজে দেখা হলে কথা হতো।যতদিন যাচ্ছে আবির ততই শান্তার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে কিন্তু শান্তাকে বুঝতে দেয়না।এভাবে কেটে যায় আরো কিছুদিন।একদিন আবির শান্তাকে প্রপোজ করে বসে।শান্তা ভাবার জন্য সময় নেয়।তিনদিন পরে আবিরের উওর দেয়।সেও রাজি।এভাবেই তাঁদের ভালবাসার শুরু। এরপর একএক করে কেটে গেছে চারটি বছর।
:-কী ভাবছো এত?(শান্তা)
শান্তার হাতের ধাক্কায় আবির বাস্তবে ফেরে। এত সময় সে তাঁর অতীত নিয়ে ভাবছিলো।
:-তুমি কখন এলে।(আবির)
:-এইতো ২ মিনিট হবে।তোমাকে ডাকছি কিন্তু তুমি শুনছোই না।
:-বসো।
শান্তা আবিরের পাশে বসে পড়লো।
:-সকালে কিছু খেয়েছিলে। (শান্তা)
:-হ্যাঁ খেয়েই বেড়িয়েছিলাম।(আবির)
:-খেয়ে বেড়োলে কারোর মুখ শুকনো থাকে।মিথ্যাটাও ভালো করে বলতে পারোনা।
শান্তা ওর ব্যাগ থেকে একটা বিরিয়ানির প্যাকেট বের করে আবিরে দিকে এগিয়ে দিলো।
:-নাও এটা খেয়ে নাও।(শান্তা)
আবিরের চোখে থেকে পানি পড়ছে।এই মেয়েটা যদি ওর পাশে না থাকতো তাহলে মনে হয় অনেক আগেই ও টেনশনে মরে যেতো।শান্তা ওর ওড়না দিয়ে আবিরের চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললো
:-হা করো আমি খাওয়ায়ে দিচ্ছি।(শান্তা)
আবির বাধ্য ছেলের মত শান্তার হাতে খাবার খেতে লাগলো।খাওয়া শেষ হলে শান্তা বললো
:-এখন বাসায় গিয়ে গোসল করে আবার খাওয়া দাওয়া করে তারপর আমায় ফোন দিবে বুঝছো।(শান্তা)
:-আচ্ছা দিবো।(আবির)
:-এখন চলো।
:-আরেকটু থাকি তোমার সাথে।
:-না আজ থাকা যাবেনা।আপুকে আজ দেখতে আসবে।চলো আমাকে রিক্সায় ওঠিয়ে দাও।
কথাটা বলে শান্তা ওঠে দাঁড়ালো।তারপর হাঁটা শুরু করলো।আবিরও শান্তার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলো।পার্কের বাইরে এসে শান্তাকে একটা রিক্সা ঠিক করে দিলো।শান্তা রিক্সায় ওঠার আগে আবিরে হাতে ৪০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো
:-এখন রিক্সায় ওঠে সোজা বাসায় যাবে বুঝেছো।(শান্তা)
:-আমি টাকা নিতে পারবোনা।এই চার বছরে তুমি আমাকে অনেক টাকা দিয়েছো।আমি আর নিতে পারবোনা।(আবির)
:-আমাকে তোমার পর মনে হয় তাইনা।আচ্ছা যাও নিতে হবেনা।টাকাগুলো আমার কাছে দাও।আমি টাকাগুলো ছিঁড়ে ফেলবো।
আবির বাধ্য হয়ে টাকাগুলো নিলো।
:-আচ্ছা নিলাম।তবে আমার টাকা হলে ফেরত দিয়ে দিবো।(আবির)
:-আচ্ছা দিও।আমি এখন আসছি।বাই
শান্তা রিক্সায় ওঠে চলে গেলো।আবিরও একটা রিক্সা ঠিক করে ওঠে বসলো।আবির আর শান্তা দুজনের বাসা দুইদিকে।আবির বাসায় ফেরার পথে ফোনে টাকা লোড দিয়ে নিলো।বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে শান্তাকে ফোন দিলো।একবার রিং হবার পরেই ফোনটা রিচিভ হলো
:-খেয়েছো?(শান্তা)
:-না।মাএ ফ্রেশ হলাম।তুমি খাইছো (আবির)
:-হ্যাঁ খেয়েছি।এখন খেয়ে নাও।
:-এখন আর খেতে ইচ্ছা করছেনা।পরে খাবো।
:-ঠিক আছে।আর আমি তোমাকে একটা ঠিকানা মেসেজ করে পাঠাচ্ছি কালকে ওই ঠিকানায় যাবে।এখন আপুকে সাঁজাতে হবে। পরে কথা হবে।
:-আচ্ছা।
আবির ফোনটা রেখে মনে মনে ভাবছে সে আসলেই অনেক ভাগ্যবান।
রাতে আবির শান্তাকে ফোন দিলো।প্রথবার ধরলো না।পরের বার ফোনটা রিচিভ হলো।
:-কী করো?(আবির)
:-বাসার সবাই মিলে আপুর বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছিলো সেখানেই বসে ছিলাম।তুমি কী করো?(শান্তা)
:-এইতো বসে বসে তোমার কথা ভাবছিলাম।তোমার আপুর বিয়ে কী ঠিক হয়ে গেছে?
:-হ্যাঁ।সামনের মাসের ১৫ তারিখ বিয়ে।
:-খাওয়া দাওয়া করছো?
:-করছি।তুমি করছো?
:-হ্যাঁ।আচ্ছা তুমি আমাকে এত ভালবাসো কেনো?
:-কারণ তুমি ভালবাসা পাবার যোগ্য।আম্মু ডাকছে।আজ আর ফোন দিওনা।আর আমি যে ঠিকানা দিয়েছি কালকে সকাল ৮ টায় ওখানে চলে যাবে।
:-আচ্ছা।
:-এখন ঘুমিয়ে পড়ো।বাই
:-বাই
আবির ভাবছে এই ঠিকানায় কিসের জন্য যাবো সেটাতো জিঙ্গেস করা হলোনা।থাক এখন আর জিঙ্গেস করার প্রয়োজন নেই। কথাগুলো মনে মনে বললো আবির।নিজের ফোন শান্তার পিক দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো তার মনে নেই।সকালে ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো আবিরের।ফোনের স্কিনে তাঁকিয়ে দেখে শান্তার ফোন।রিচিভ করলো সে
:-এখনো ঘুমাচ্ছো?(শান্তা)
:-হুম(আবির)
:-এখন ওঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজে যাও।নামাজ পড়ে এসে সকালের নাস্তা করবে। তারপর ৮ টায় ওই ঠিকানায় যাবে।আমি এখন নামাজ পড়বো।রাখছি
:-এই শোনো।ওই ঠিকানায় গেলে কী হবে?
:-আগে যাও তারপর দেখতে পাবে।আর একটা কথা বলা হয়নি যাওয়ার জন্য চাকরির জন্য যেসব কাগজ লাগে সেগুলো নিয়ে যেও।নামাজে দেরী হয়ে যাচ্ছে ওঠো
:-আচ্ছা ওঠছি।বাই
আবির ফোনটা রেখে বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে মসজিদে গেলো নামাজ পড়তে।নামাজ পড়ে এসে বাড়িতে কিছু কাজ করলো।তারপর ৮টার সময় রেডি হয়ে রওনা দিলো।শান্তার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছাতে আবিরের ৯ টা বেজে গেলো।একটা বাড়িতে আসলো আবির।গেটের দারোয়ান কে ঠিকানার লোকের কথা বলতেই দারোয়ান আবিরকে ভিতরে নিয়ে গেলো।দারোয়ান আবিরকে ড্রয়িংরুমে বসতে দিয়ে বললো
:-আপনি বসুন আমি স্যারকে ডেকে দিচ্ছি।
দারোয়ান ভিতরে চলে গেলো।আবির ড্রয়িংরুমটা ভালো করে দেখতে লাগলো।অনেক দামি দামি জিনিস দিয়ে সাঁজানো।
:-তুমিই তাহলে আবির।
যিনি কথাটা বললো আবির তাঁর দিকে তাঁকালো।একজন বয়স্ক লোক।বয়স ৫০ হবে হয়তো।আবির সালাম দিলো।তারপর বললো
:-জ্বি আমিই আবির(আবির)
:-তোমার কথা শান্তা আমাকে বলেছে।তোমার কাগজগুলো আমাকে দিয়ে যাও।আর এই নাও তোমার চাকরির জয়েন কার্ড।সামনের ১ তারিখ থেকে তোমার জয়েন।
আবির লোকটার কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো।যেখানে চাকরি হতে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা লাগে সেখানে বিনা টাকায় চাকরি।আবির ভাবলো সে স্বপ্ন দেখছে।নিজের হাতে নিজেই চিমটি কাটলো।না সে স্বপ্ন দেখছে না।
:-তোমার সাথে শান্তার কত দিনের রিলেশন(লোকটি)
এবার আবির আরো অবাক হলো। তাঁদের রিলেশনের কথাও লোকটি জানে।
:-কীহলো তুমি কিছু বলছো না যে।ভয় পাবার কিছু নেই।তোমাদের সম্পর্কে শান্তা আমাকে সব বলেছে।আর আমি শান্তার মামা।বলতে পারো ভালো বন্ধুও।
আবির লোকটার কথা যত শুনছে ততই অবাক হচ্ছে।হঠাৎ শান্তার মামার ফোনে ফোন আসলো উনি ফোমটা রিচিভ করেলেন।ফোনটা কানের কাছে একবার ধরে তারপর আবিরের দিকে এগিয়ে দিলেন।নাও কথা বলো।শান্তা ফোন করেছে।আবির বাধ্য ছেলের মত ফোনটা নিলো।
:-ওই তোমার ফোন অফ কেনো?(শান্তা)
:-অপরিচিত জায়গা তাই ভেবেছিলাম ফোন আসলে ----
:-থাক বুঝতে পারছি।মামার সাথে কথা বলা শেষ হলে পার্কে চলে আসো আমি তোমার জন্য ওয়েট করছি।মামার কাছে দাও।
আবির ফোনটা শান্তার মামার কাছে দিলো।শান্তার মামা কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দিলেন।
:-শান্তা তোমার জন্য ওয়েট করছে তুমি এখন যাও।আর শান্তাকে নিয়ে আবার এসো কিন্তু।তোমার বেতন প্রথমে ২০ হাজার টাকা।পরে আস্তে আস্তে বাড়বে।
:-ঠিক আছে।
আবির কাগজগুলো দিয়ে চলে আসলো।বাইরে এসে একটা রিক্সা নিয়ে পার্কের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।রিক
সায় বসে আবির ভাবছে সবকিছু কেমন জানি স্বপ্নের মত ঘটছে।শান্তা কী এমন করলো যার জন্য লোকটা কোনকিছু না বলেই চাকরি দিতে রাজি হয়ে গেলো।আবির পার্কে পৌঁছে দেখলো শান্তা বসে আছে।আবির শান্তার পাশে গিয়ে বসলো।তারপর জিঙ্গেস করলো
:-তুমি এত সহজেই চাকরিটা কীভাবে ম্যানেজ করলে?(আবির)
:-এখন এসব বাদ দাও।সকালে কিছু খেয়ে বেড়োয়ছিলে?(শান্তা)
:-আগে আমার প্রশ্নের উওর দাও।
:-সবকিছুর উওর জানতে হয়না।আজতো চাকরি হয়ে গেছে।আজ আমায় নিয়ে সারাদিন রিক্সায় ঘুরবে।পারবেনা?
:-পারবো।কিন্তু আমার প্রশ্নের উওরটা দাও।
:-বলছিনা সব প্রশ্নের উওর জানতে হয়না।এখন চলো।(কথাটা দমকের সুরে বললো শান্তা)
শান্তা ওঠে আবিরের হাত ধরে গেটের বাইরে নিয়ে আসলো।তারপর একটা রিক্সা ঠিক করে দুজন ওঠে বসলো।রিক্সায় ওঠে শান্তা আবিরের কাঁধে মাথা রাখলো।শান্তার চুলগুলো বাতাসে উড়ে এসে আবির মুখে পড়ছে আর আবির মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখছে।ঘুরাঘুরি শেষে ৩ টার দিকে বাসায় ফিরলো আবির। বাসায় এসে তাঁর চাকরির সংবাদ দিতেই সবাই খুঁশিতে যেতো আত্মহারা হয়ে গেলো।আবির অনেকদিন পর সবার মুখে এরকম আনন্দের হাঁসি দেখলো।আবিরের নিজের কাছেও আজ অনেক ভালো লাগছে।আজ তাঁর সব ভালো লাগা শান্তার জন্য। মনে মনে শান্তাকে আবির অনেক ধন্যবাদ দিলো।এভাবে চলছিলো তাঁদের দিনগুলো।সপ্তাহে ৬ দিন অফিস যাওয়া আর শুক্রবার ঘুরতে যাওয়া।সবকিছু মিলিয়ে অনেক ভালোই কাটছিলো দিনগুলি।হঠাৎই শান্তা বদলে যেতে থাকে।আবিরের সাথে ঠিকমত কথা বলেনা।আবির এসবের কারণ জিঙ্গেস করলে বলে ব্যস্ত থাকি তাই বেশি কথা বলার সময় পায়না।আবির মেনে নেয়।কিন্তু আস্তে আস্তে অবহেলার পরিমানটা বাড়তে থাকে।আবিরের কাছে শান্তার অবহেলা সহ্য হয়না।আবির শান্তার সাথে দেখা করে।
:-তুমি আমার সাথে এমন করছো কেনো?(আবির)
:-আসলে কথাটা কীভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা।আমি তোমার সাথে রিলেশন রাখতে চাচ্ছিনা।
আবির শান্তার মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।রিলেশনের ৪ বছর পর এই কথা বলছে ও।
:-আমার অপরাধটা কী জানতে পারি?(আবির)
:-তোমার কোন অপরাধ নেই।তোমার ফ্যামিলি আর আমার ফ্যালির মধ্যে অনেক তফাত।আমার বাবা মা এই সম্পর্ক কোনদিন মেনে নিবেনা।আমি আমার বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবোনা।(শান্তা)
:-এটা আগে ভাবা উচিত ছিলো তোমার।এতদিন পরে এসব বলার কোন মানেই হয়না।
:-প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও।
:-তুমি থাকতে চাওনা তখন আমি আটকাবো না।তবে তুমি কোনদিন চাইলে ফিরে আসতে পারো।আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।
কথাগুলো বলে আবির শান্তার ওখান থেকে সোজা বাসায় চলে আসলো।বাসায় এসে রুমের দরজা বন্ধ করে অঝর ধারায় কাঁদতে থাকলো।আল্লাহ কেনো আমায় এত কষ্টের মধ্যে ফেললে।ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনটা কষ্টের ভেবেছিলাম শান্তাকে নিয়ে সুখে থাকবো কিন্তু সেটাও হলোনা।কথাগুলো বিড়বিড় করে বলছে আবির আর অঝর ধাঁরায়,কাঁদছে।আজ তাঁর নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু সে মরে গেলে তাঁর ফ্যামিলিকে দেখার মত কেউ থাকবেনা তাই আপাতত মরার চিন্তাটা বাদ দিলো।আবির আস্তে আস্তে নিজেকে নেশার মধ্যে ডুবিয়ে দিলো।আবিরের বাবা মা আবিরের এমন অবস্থা দেখে খুব টেনশনে পড়ে গেলেন।ছেলের এমন অবস্থা কোন বাবা মাই দেখতে চাইনা।আবির ঠিকমত অফিস করে।বাইরে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে কিন্তু রাত আসলে রুমের মধ্যে বসে কান্না করে আর নেশা করে।এভাবে কেটে যায় ১টি মাস।এই ১ মাসে শান্তা একবারের জন্যও আবিরের কোন খোজখবর নেয়নি।আবিরও নেয়নি।
:-ভাইয়া আম্মু তোর জন্য মেয়ে ঠিক করেছে।(আবিরের বোন)
আবির অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো এমন সময়,তাঁর বোন এসে কথাটি বললো।
:-আম্মুকে আমি আগেই বলেছি আমি বিয়ে টিয়ে করতে পারবোনা।আম্মুকে বলে দিস সবকিছু বাদ করে দিতে।(আবির)
:-পারলে তুই গিয়ে বল।তোর টেবিলের উপর মেয়ের ছবি রেখে গেলাম দেখলে দেখিস নাহলে না দেখিস।
কথাগুলো বলেই আবিরের বোন চলে গেলো।আবির তাঁর মায়ের কাছে গিয়ে বললো
:-আম্মু তোমাকে আগেই বলেছি এসব বিয়ে টিয়ের মধ্যে আমাকে জরিও না তারপরেও কেনো এমন করছো(আবির)
:-আমি কোন কথা শুনতে চাইনা।যার সাথে আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি তাকেই বিয়ে করতে হবে।২ দিন পরেই বিয়ে।আর যদি না করিস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি।
কথাগুলো বলেই আবিরের আম্মু রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
আবির এখন কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা।তাঁর আম্মু তাঁকে যে কসম দিলো।এখন যদি তাঁর আম্মুর কথা না রাখে তাহলে বড় ধরনের পাপি হয়ে যাবে।আর যদি সত্যি তাঁর মা কিছু একটা করে বসে।না না আবির আর ভাবতে পারছেনা।আজ আর তাঁর অফিসে যাওয়া হলোনা।রুমের মধ্যে গিয়ে কান্না শুরু করে দিলো।তাঁর মনের সম্পুর্ন জায়গা জুরে শুধুই শান্তার বসবাস সেখানে কী করে অন্য মেয়েকে জায়গা দিবে।আবির কিছু ভাবতে পারছেনা।দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো।আবির তাঁর মায়ের খুশির জন্য সবকিছু মেনে নিয়েছে।
আজ আবিরের বাসর রাত।তাঁর বিয়েটা ভালো ভাবেই শেষ হয়েছে।সে একটিবারের জন্যও মেয়েটার দিকে তাঁকায়নি।আর তাঁকাবেই কী করে সেতো সবসময় শান্তার চিন্তায় বিভোর ছিলো।আবির তাঁর বন্ধুদের বিদায় দিয়ে রুমে ঢুকলো।বাড়ি ভর্তি মানুষ।এখন যদি সে বাসর ঘরে না ঢুকে তাহলে মান সম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে তাই ইচ্ছা না থাকার পরেও রুমে ঢুকলো।রুমের দরজা আটকিয়ে দিলো।খাটের দিকে নজর পরতেই দেখলো মেয়েটা লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে।আবির খাটের কাছাকাছি গিয়ে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললো
:-আমি আপনাকে কোনদিন আমার বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা।আমি অন্যকাউকে ভালবাসি।শুধুমাএ মায়ের কথায় রাজি হয়ে বিয়েটা করেছি।আমার উপর কোন অধিকার খাটাতে আসবেন না।
কথাগুলো বলেই আবির বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে বেলকনিতে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো।হঠাৎ করে কে যেনো পিছন থেকে আবিরের পানজাবির কলার চেপে ধরলো।আবির পিছনের দিকে তাঁকাতেই ভুত দেখার মত চমকে ওঠলো।
:-তু --তুমি?তুমি এখানে কী করছো?(আবির)
:-তো এখানে কী অন্যকাউকে আশা করেছিলে।(শান্তা)
:-না মানে এসব কী করে হলো?
:-আগে তোমার নাক ফাটাবো তারপর বলছি।বলেই আবিরকে মারার জন্য হাত ওঠালো।তারপর ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো আবিরের গালে।আবির গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাঁর মতে সেই প্রথম ব্যক্তি যে কীনা বাসর রাতে বউ এর হাতে চড় খেলো।
:-তুমি নিজেকে কীভাবো হ্যাঁ।সেদিন আমি ওই কথাগুলো বলার পর সেইযে এলে আর আমার কোন খোজখবরই নিলেনা।একবারতো ভেবে দেখতে পারতে আমি কী আসলেই কথাগুলো মন থেকে বলছি নাকি সব মিথ্যা(শান্তা)
:-আমি কী করে বুঝবো।তুমিতো আমাকে শুধু অবহেলা করেছিলে তখন তাই সত্যিই ভেবে নিয়েছিলাম।(আবির)
:-সেদিন আমি কথাগুলো তোমাকে বাবার ভয়ে বলেছিলাম।বাবা কেমন করে জানি আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছিলো।তারপর আমাকে বলে আমি যদি তোমার সাথে কোন যোগাযোগ করি তাহলে তোমার এবং তোমার পরিবারের ক্ষতি করবে।আমি তবুও তোমার সাথে কথা বললাম।কিন্তু একদিন বাবা আমার রুমে এসে সিরিয়াসলি কথাগুলো বলে।আমি তখন তোমার ভালোর কথা ভেবে তোমার সাথে রিলেশন ভেঙ্গে দিই।বিশ্বাস করো এই কয়দিনে আমিও তোমাকে অনেক বেশি মিস করেছি।তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছিলাম না তাই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ একসাথে খায়।পরে আম্মু আমাকে ডাকতে এসে দেখে আমি নিচে পড়ে আছি তারপর আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।ভাগ্যক্রমে বেচে যায় আমি।তখন মামা আব্বুকে অনেক বোঝায়।আব্বু তোমার সাথে বিয়ে দোওয়ার জন্য রাজি হয়।আমাকে জানানোর পর আমি তোমার বাসার ঠিকানা দিই।আব্বুকে বলি তোমাকে কোনকিছু না জানাতে।
এতটুকু বলেই শান্তা থামলো।আবির এতসময় শান্তার কথাগুলো শুনছিলো।
:-কীহলো চুপ করে আছো কেনো?আমার উপর রাগ করেই থাকবে?
আবির আর তাঁর কষ্টের কথাগুলো না বলে শান্তাকে জরিয়ে ধরলো।আবিরের এতদিনের সব কষ্টগুলো হারিয়ে গেছে।আজ তাঁর জীবনটা পরিপুর্নতা পেলো।
--(সমাপ্ত)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ