ভালোবাসার রঙধনু
:-Hosain Ahmed(আমি হিমু)
-
:-আপনার কাছে ৫০ টাকা হবে?
উপরের কথাটি শুনে কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।দেখে মনে হচ্ছে ভদ্র ঘরের মেয়ে।কলেজ গেটে দাঁড়িয়ে আমার এক ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখন মেয়েটি এসে কথাটি বললো।মেয়েটার চেহারা ততটা উজ্জল না কিন্তু চেহারায় এক ধরণের মায়া আছে।
:-আসলে বাড়ি থেকে মানিব্যাগ আনার কথা মনে নেই তাই!৫০টাকা থাকলে আমাকে দিন।কথা দিচ্ছি কালকে কলেজে এসে দিয়ে দিবো।(মেয়েটি)
এই প্রথম শুনলাম কোন মেয়ে মানিব্যাগ ইউস করে।অবশ্য করারই কথা কারণ মেয়েটি জিন্স আর শার্ট পড়েছে।আমি আবার কোন মানুষ সাহায্য চাইলে না করতে পারিনা।পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে মেয়েটার হাতে ৫০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিলাম।মেয়েটা টাকা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সাওয়ালাকে ২৫টাকা দিলো।মেয়েটাকে ২৫ টাকা দিতে দেখে মনের মধ্যে খকটা লাগলো।আমার কাছ থেকে নিলো ৫০ টাকা কিন্তু রিক্সাওয়ালাকে দিলো ২৫ টাকা।মেয়েটি ধান্দাবাজ নয়তো?না এখানে আর থাকা যাবেনা।৫০ টাকা গিছে গিছে।এসব মেয়েদের বিশ্বাস নেই কখন কী করে বসে তখন আবার গণধুলাই খেতে হবে।আমি কলেজের ভিতরের দিকে পা বাড়ালাম।
:-এইযে শুনুন?(মেয়েটি)
মেয়েটি পিছন থেকে ডাক দিলো আমি শুনেও না শুনার ভান করে হাটতে লাগলাম।
:-এইযে মিঃ আপনাকে ডাকছি শুনেন না?নাকি আপনি কানে কম শোনেন?
আমার সামনে পথ আটকিয়ে মেয়েটি বললো।
:-ও বুঝেছি আপনার থেকে ৫০ টাকা নিয়ে রিক্সওয়ালাকে ২৫টাকা দিয়েছি এই জন্য ভয় পেয়েছেন?হি হি হি হি।আপনার থেকে ৫০ টাকা নিলাম এই জন্য আমাকে আবার বাড়ি ফিরতে হবে ২৫ টাকা দিয়ে।(মেয়েটি)
মেয়েটি বাচাল স্বভাবের সেটা বুঝা যাচ্ছে।এতক্ষণ আমি একটা কথাও বলিনি।
:-আমি ভেবেছিলাম আপনি শুধু কানে কম শুনেন এখন দেখছি কথাও বলতে পারেন না।মানে বোবা-হি হি হি হি হি।
আমি মেয়েটির দিকে চোখ গরম করে তাকালাম।মেয়েটি আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে চুপ হয়ে গেলো।
:-আপনি আর কিছু বলবেন?(আমি)
:-আপনার ফোন নম্বর দেন আমি টাকা পাঠিয়ে দিবো।(মেয়েটি)
:-টাকা দিতে হবেনা।
কথাটি বলে মেয়েটির সামনে থেকে ক্লাসরুমে চলে এলাম।মেয়েটি পিছন থেকে দাঁড়াতে বললো আমি না দাঁড়িয়ে চলে আসলাম।
কী বাচাল মেয়েরে বাবা।একের পর কথা বলেই চলেছে।আর কিছুক্ষণ ওখানে থাকলে মাথা পুরাই নষ্ট হয়ে যেতো। আমি হুসাইন অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।আর ওই বাচাল মেয়েটিকে আমি চিনিনা।
ক্লাস শেষ করে মেসে চলে আসলাম।মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলাম।আমাদের বাসা থেকে কলেজ অনেক দুরে তাই পড়ালেখার সুবিধার জন্য মেসে থাকা।মেয়েটির কথা মনে মনে ভাবছি।কলেজে এই প্রথম দেখলাম। হয়তো নতুন ভর্তি হয়েছে।
পরেদিন মেয়েটার সাথে আবার দেখা হলো।আজ মেয়েটি সালোয়ারকামিজ পড়ে এসেছে।কালকের থেকে আজকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে মেয়েটিকে।হয়তো মেয়েদের জন্য জিন্স শার্ট না তাই।
:-এই নিন আপনার টাকা।(মেয়েটি)
আমি ভেবেছিলাম মেয়েটি টাকা আর দিবেনা।কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিলো তা এখন বুঝতে পারছি।
:-ধন্যবাদ।(আমি)
:-ওয়েলকাম। আপনি কিসে পড়ের?
:-অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।আপনি?
:-উরিম্মা তাহলে আপনি আমার থেকে বড়।আমি নতুন ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি।
:-ও
:-আপনার বাসা কোথায়?
:-কুষ্টিয়া।
:-আমি এখানকার স্থানীয়।তবে কলেজ থেকে বাসা একটু দুরে।
:-ভালো।
:-ও শিট এতক্ষণ যাবৎ আপনার সাথে কথা বলছি আর নামটাই জানা হয়নি।আমি মেঘা।আপনার নামটা?
:-হুসাইন
:-আপনি কী সবসময় এভাবে কথা কম বলেন?
মেয়েটার এমন প্রশ্নে কী উওর দিবো ভেবে পাচ্ছিনা।আসলে আমি মেয়েদের সাথে তেমন একটা কথা বলতে পারিনা।কেমন জানি লাগে।
:-কী ভাবছেন?
:-কিছুনা।
:-ধ্যাততেরী আপনার সাথে কথা বলার চেয়ে একটা রোবটের সাথে কথা বলাও ভালো।
মেয়েটি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।আমিও ক্লাসরুমে চলে এলাম।ক্লাসে ঢুকতেই আমার ফোনে ফোন আসলো।আমার মামা ফোন করেছে।
:-আসসালামুআলাইকুম।(আমি)
:-ওয়াইকুমআসসালাম।তুই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।(মামা)
:-কেনো?কোন সমস্যা হয়েছে?
:-না।তুই এখনি রওনা দে।
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো।এত তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বললো কেনো আমার মাথায় ঢুকছেনা।একপ্রকার চিন্তা মাথায় ভর করছে।বাসায় কিছু হয়নিতো?সকালে বাসায় কথা বললাম তখনতো সবাই ভালোই ছিলো।হঠাৎ কার কী যে এত জরুরী তলব?
মেসে আর যাবোনা এভাবেই রওনা দিলাম।মেসের রুমমেটের কাছে ফোন করে বলে দিলাম আমি বাসায় যাচ্ছি।কলেজ থেকে আমাদের বাসায় যেতে ২ঘন্টার মত লাগে।
বাসায় গেটের সামনে আসতেই অনেক মানুষের জটলা দেখলাম।সবাই কী জানি বলাবলি করছে।আমাকে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেলো।বাসার ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।কান্নার আওয়াজ শুনে ঠিক থাকতে পারলাম না।এক দৌঁড়ে বাসার ভেতর চলে গেলাম।আম্মু ওঠোনের মাঝে মাটিতে লুটিয়ে কাঁদছে।সাথে ছোট ভাই দুটিও আম্মুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে।আমাকে দেখে ছোট ভাইয়েরা এসে জরিয়ে ধরে কান্না করছে আর বলছে ভাইয়া আব্বু নেই।আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।আমি সকালেও আব্বুর সাথে কথা বলেছি।তখন ভালোই ছিলো। নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলাম না।আব্বুকে এককোণায় শুয়ায়ে রাখা হয়েছে।এক দৌঁড়ে সেখানে চলে গেলাম।আব্বুকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম।আব্বু কেনো আমাদের ছেড়ে চলে গেলে।হে আল্লাহ আমরা কী অপরাধ করেছিলাম যার জন্য এত তাড়াতাড়ি আমার আব্বুকে কেড়ে নিলে।কয়েকজন মানুষ এসে আমাকে আব্বুর কাছে থেকে সরিয়ে নিলো।নিজের সমস্ত চেষ্টা দিয়ে আব্বুকে জরিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।বাসার সবাই কান্না করছে।হঠাৎ আমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম।এরপর আমার কী হয়েছে মনে নেই।
আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে রুমের মধ্যে আবিষ্কার করলাম।রুমের মধ্যে আমি ছাড়া কেউ নেই।জ্ঞান ফিরতেই আব্বুর কথা মনে পড়ে গেলো।এক দৌঁড়ে বাইরে চলে এলাম।উঠোনের মাঝে আব্বুকে সাদা কাপড় পড়িয়ে শুয়ায়ে রাখা হয়েছে।আমি দৌঁড়ে আব্বুর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু আমাকে সবাই আটকে দিলো।ছোট ভাই দুটি এসে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে।আমিও ওদের জরিয়ে ধরে কাঁদছি।
বিকেল ৫টার সময় আব্বুর জানাজা হলো।আমাকে আমার ছোট দুই মামা ধরে সেখানে নিয়ে গেলো।এখন আর চোখে কান্নার জল নেই।শুকিয়ে গেছে।ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছাড়াখার হয়ে যাচ্ছে সেটা শুধু আমিই টের পাচ্ছি।জানাজা শেষে আব্বুকে কবরে রেখে চলে আসলাম।বাসায় এসে দেখি আম্মু জ্ঞান হারিয়েছে।আমি নিজেকে কোন মতেই কন্টোল করতে পারছিনা।আমার মামারা আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে একদিন না একদিনতো সবাইকে যেতেই হবে তাই। বলে এত ভেঙ্গে পড়লে কী করে হবে।তুই যদি এত ভেঙ্গে পড়িস তাহলে তোর মা আর ছোট ভাইদের কে দেখবে?মামাদের কথা শুনে নিজেকে কন্টোল করার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।
২৫দিন পর মেসে ফিরলাম।এখনো নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারিনি।কিন্তু সবার সামনে ভালো থাকার অভিনয় করতে হচ্ছে।আমি পরিবারের বড় ছেলে আমি যদি ভেঙ্গে পড়ি তাহলে আমার ছোট ভাই আম্মু ওদের কে দেখবে।আমাদের পরিবারের একমাএ উপার্জনের মানুষ ছিলেন আব্বু।আব্বু সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন।আব্বুর চাকরির বয়স এখনো ১০ বছরের বেশি আছে।আব্বু সেদিন সকালে অফিসে যাচ্ছিলো হঠাৎ পিছন থেকে একটা মাইক্রোবাসের ধাক্কায় পড়ে যান।সেখানেই মারা গিয়েছিলেন।আমাকে বসে থাকলে চলবে না।কিছু একটা করতে হবে।মেসের বড় ভাইদের সাহায্য নিয়ে ৩টা টিউশনির ব্যবস্থা করলাম।আব্বুর পেনশন এর টাকা দিয়ে মুটামুটি চলে যাবে আমাদের। তবুও টিউশনি নিলাম।পরিবারের সবার দায়িত্ব এখন আমার ঘাড়ে।
মেসে আসার পরেরদিন কলেজে গেলাম।অনেকদিন হলো কলেজে যাওয়া হয়নি।ক্লাসরুমের সামনে যেতেই পিছন থেকে কেউ আমার হাত আটকে ধরলো।পিছন ফিরে দেখি মেঘা।মেয়েটার কথা প্রায় ভুলেই গেছিলাম।
:-আপনার সাথে কিছু কথা!(মেঘা)
:-বলো।(আমি)
:-এখানে না।অন্যকোথাও চলেন।
:-আমার ক্লাস আছে অন্যকোথাও যেতে পারবোনা।
:-প্লিজ চলুন।একদিন ক্লাস বাদ দিলে কিছু হবেনা।
:-আমার পক্ষে ক্লাস বাদ দেওয়া সম্ভন না।যস বলার এখানেই বলো না বললে আমি ক্লাসে যাবো।
:-আচ্ছা বলছি।আমি কথা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলতে পারিনা তাই সরাসরিই বলছি আমি আপনাকে ভালোবাসি।
মেঘার কথা শুনে ওর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলাম।আশেপাশের ছেলেমেয়েগুলো আমাদের দিক তাকিয়ে আছে।
:-আমাকে তুমি চেনো?জানো আমার সম্পর্কে কিছু?একদিনের দেখায় কখনো ভালোবাসা হয়না।যা হয় তা শুধু আবেগ।আবেগ কেটে গেলেই সব হাওয়া।তাছাড়া তোমাদের মেয়েদের ভালো করে চেনা আছে আমার।
আরো অনেক কথা শুনিয়ে ক্লাসরুমে চলে আসলাম।আমাকে ভালোবাসে!কতসুন্দর করে বলে দিলো।এটা কোন সিনেমার জীবন না।ভালোবাসা খুব কঠিন।তাছাড়া আমার পক্ষে এখন কারো সাথে রিলেশন করা সম্ভব না।আমাকে আমার পরিবার নিয়ে ভাবতে হয় এসব ভালোবাসা টালোবাসা নিয়ে ভাবার সময় নেই।
ক্লাসশেষ করে মেসে চলে এলাম।কোনরকম খাওয়া দাওয়া করে টিউশনিতে চলে গেলাম।টিউশনিতে থেকে বিকেলের দিকে মেসে ফিরলাম।অনেক ক্লান্ত লাগছে এখন।বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ফেসবুকে লগইন করলাম।অনেকদিন হলো ফেসবুকে ঢুকা হয়না।ফেসবুকে ঢুকে দেখি অনেকগুলো ফ্রেন্ডরিকোয়েষ্ট ঝুলে আছে।সাথে অনেকগুলো মেসেজ।একটা আইডি থেকে বেশি মেসেজ এসেছে।প্রায়৫০+।আমাকে এত মেসেজ কে দিতে পারে?মেসগুলো এক এক করে দেখলাম।তারপর আইডিটা ঘুরে দেখলাম।আইডিটা একটা মেয়ের।রিকোয়েস্ট এপছেট করার জন্য মেয়েটা এত মেসেজ দিয়েছে।মেয়েটার আইডিতে তেমন কিছু লেখা নেই।আইডির নাম ভালোবাসার রঙধনু।আমি রিকোয়েস্ট এপছেট করলাম।রিকোয়েস্ট এপছেট করার সাথে সাথে মেসেজ আসলো
:-ধন্যবাদ।(ভালোবাসার রঙধনু)
:-ওয়েলকাম। (আমি)
:-আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?ফেসবুকে আসেন না কেনো?
:-আমার বাবা মারা গেছিলো তাই আসা হয়নি
:-আমি দুঃখিত।
:-ঠিক আছে।
এভাবেই মেয়েটার সাথে কথা বলা শুরু হয়।মেয়েটার নাম নীলিমা।আমাদের কলেজেই নাকি পড়ে কিন্তু কোন পরিচয় দেয়না।কিসে পড়ে তাও বলেনা।নীলিমা অনেক গুছিয়ে কথা বলতো যেটা আমার অনেক ভালো লাগতো।আস্তে আস্তে নীলিমার সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়।আমি নীলিমার কাছে ওর পিক চেয়েছি কিন্তু দেয়নি।ওর একটাই কথা যেদিন দেখা হবে সেদিন দেইখেন।আবার ফোন নম্বরও দেয়না।আমি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছি নীলিমার উপর।আমাদের বন্ধুত্বের যেদিন ২মাস পুর্ণ হয় সেদিন নীলিমা আমার সাথে দেখা করতে চায়।আমিও রাজি হয়।
বিকেল ৪টা বাজে।
অনেকক্ষণ হলো পার্কে বসে আছি কিন্তু নীলিমার কোন দেখা নেই।
:-কেমন আছো?(মেঘা)
একী মেঘা?ও এখানে কী করছে?
:-ভালো।তুমি এখানে?(আমি)
:-এমনিতেই ঘুরতে এলাম।আপনি এখানে কেনো?
:-এমনিতেই ঘুরতে এলাম।
:-ঘুরতে নাকি কারো সাথে দেখা করতে?
:-আরেনা।আমি কার সাথে দেখা করতে আসবো।আমার তেমন কেউ নেই।
:-নীলিমা।
মেঘার কথা শুনে অনেক অবাক হলাম।মেঘা নীলিমার কথা জানলো কেমন করে।
:-আমিই নীলিমা।সেদিন আপনি আমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবেসেছিলাম তাই এই অভিনয়টা করলাম।বিশ্বাস করেন আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি।(মেঘা)
এবার সবকিছু পরিষ্কার হলো কেনো আমাকে পিক দেয়নি।তবে আমি যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।সেদিন মেঘাকে অপমান করেছিলাম তাই একপ্রকার লজ্জা অনুভব করছি।
:-আমাকে ভালোবাসবেন একটু?একটু ভালোবেসেই দেখেন আপনার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবো(মেঘা)
:-কিন্তু
:-আর কোন কিন্তু নয়।
:-হুম।
:-কী হুম?
:-ভালোবাসি।
:-কাকে?
:-আমার পাশে যেই পাগলীটা বসে আছে তাকে।
:-আমিও ভালোবাসি।
মেঘা আজ শাড়ি পড়েছে।শাড়িতে ওকে একদম পরীর মত লাগছে।মাঝে মাঝে বাতাসে ওর চুলগুলো আমার মুখে এসে পড়ছে আর আমি অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওকে দেখছি।
সেদিন থেকে শুরু হয়েছিলো আমাদের ভালোবাসা।এরপর কলেজ বাদ দিয়ে মাঝে মাঝেই দুজন ঘুরতে চলে যেতাম।মেঘা কখনোই আমাকে টাকা খরচ করতে দিতোনা।সবসময় ও নিজেই খরচ করতো।কিন্তু কথায় আছেনা সুখ সবার কপালে সয়না।আমার ক্ষেএেও তাই হলো।আমাদের রিলেশনের ২বছর পার হবার পর।মেঘা ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেলো।আমারো অনার্স শেষ হলো।এরপর মাস্টাস এ ভর্তি হলাম।ভার্সিটিতে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই মেঘা কেমন জানি বদলে যেতে শুরু করে।আমাকে ঠিকমত টাইম দেয়না। ঠিকমত ফোনে কথা বলেনা।আমার সাথে দেখা করেনা।
মেঘার অবহেলাগুলো আমি আর সহ্য করতে পারছিনা।মেঘাকে ফোন দিলাম শেষ বারের মত।দুবার রিং হতে ওপাশ হতে রিচিভ হলো
:-আজ বিকেলে আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে?(আমি)
:-আসলে আমি একটু বিজি আছি।দুদিন পর দেখা করি?(মেঘা)
:-না।আজই দেখা করবে।আজ দেখা না করলে জীবনেও আর দেখা করবেনা আমার সাথে।
:-এত রেগে যাচ্ছো কেনো।আমিতো বলিনি আমি দেখা করবোনা ।
:-ঠিক আছে বিকেল ৪টায় লেকের ধারে চলে এসো।
ফোন কেটে দিলাম।আজ কয়েকদিন যাবৎ আমাকে এত পরিমানে অবহেলা করছে সেটা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না।প্রিয় মানুষের অবহেলা কখনোই সহ্য করা যায়না। আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকে আমি মানসিক ভাবে দুর্বল তারপর এই মেয়েটা আমাকে অবহেলা করছে।সবকিছু মিলিয়ে বেহাল অবস্থা আমার।মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মরে যায় কিন্তু পারিনা।
বিকেলবেলা।
মেঘার আসার কথা ৪টায় আর এখন বাজে ৪:৩৭ তাও ওর দেখা নেই।হয়তো আমার সাথে দেখা করার কথা মনেই নেই ওর।অনেক কান্না পাচ্ছে।ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাদি কিন্তু পারছিনা।ছেলেদের শব্দ করে কান্না মানায় না।
মেঘা ৪:৫৫ তে আসলো।
:-কী জন্য ডেকেছো তাড়াতাড়ি বলো আমার কাজ আছে?(মেঘা)
মেঘার কথা শুনে মোটেও অবাক হলাম না।কারণ এই কয়েকদিনের অবহেলা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে ও কী চায়।
:-আমার সাথে আর রিলেশন রাখতে চাওনা তাইনা?(আমি)
:-আরেনা।তোমাকে অনেক ভালোবাসি।তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো।
:-আমাকে কেনো ছেড়ে দিচ্ছো জানতে পারি?
:-কী বলছো এসব?তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো।
:-আর অভিনয় করোনা।তোমার এই কয়েকদিনের অবহেলা আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে।তাছাড়া শুনলাম নিরবের সাথে রিলেশন করেছো?
:-কে বলেছে তোমাকে আমি নিরবের সাথে রিলেশন করেছি?
:-সত্যি কখনো চাপা থাকেনা।
:-সব যখন জানোই তখন এতকিছু বলার কারণ কী?
:-শুধু জানতে চাই আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কারণটা কী?
:-অনেক কারণ আছে।আমাকে কখনো ভালো রেষ্টুরেন্টে নিয়ে গেছো?কখনো দামি কিছু গিফট করেছো?করোনি।আমার সব বান্ধবীদের বয়ফ্রেন্ডরা ওদের কডকিছু গিফট করে অথচ আমি ওদের উল্টোটা করি।আমি নিজে সব খরচ করি।নিরবকে দেখো এই কয়েকদিনে ও আমাকে কতকিছু গিফট করেছে।আমার হাতের এই মোবাইল ফোনটাও ওর গিফট করা।(মেঘা)
আমার যা বুঝার বুঝা হয়ে গেছে।মেঘার পাশ থেকে আস্তে করে ওঠে চলে এলাম।আসার আগে ছোট্র করে একটা কথা বললাম""ভালো থেকো আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করবোনা""।রাস্তা দিয়ে হাটছি আর চোখের পানি মুচছি।রাস্তার লোকজন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে।নিজেকে আজ বড্ড অসহায় লাগছে।মেঘা ঠিকই বলেছে আমি ওর যোগ্য না।আমার মত ছেলেকে কেউবা ভালোবাসবে।এতদিন মেঘা দয়া করে একটু ভালোবেসেছিলো এটাইতো অনেক বেশি।আমার মত মধ্যবিও ঘড়ের সন্তানদের জন্য ভালোবাসা মানায় না।নিরব বড়লোক বাপের একমাএ ছেলে। আমাদের নিচের ইয়ারে পড়ে।দেখতেও অনেক হ্যান্ডসাম।নিরবের থেকে আমি সব অংশেই কম।মেঘা আর নিরবকে অনেক ভালো মানাবে।ওদের মাঝে আমার মত খারাপ ছেলের না থাকাই ভালো।
মেঘার সাথে রিলেশন ভাঙ্গার পর অনেক ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি।কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে নিজেকে আবার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক করি।অনেক ভালো করে পড়ালেখা শুরু করি।আমার তখন একটাই লক্ষ্য ছিলো বিসিএস ক্যাডার হওয়া।মেঘাকে দেখাতে চাই আমি নয় তুমি আমার যোগ্য ছিলেনা।মেঘার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার ২মাসের মাথায় আবার আমার কাছে ফিরে আসতে চায়।বলে নিরব ওকে ঠকিয়েছে।অনেক কান্নাকাটি করে। ততদিনে আমার মনে আর কোন ভালোবাসা নেই সব মুছে ফেলেছি।মেঘাকে ফিরিয়ে দিই। মাস্টাস শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দিই।আল্লাহর রহমতে টিকেও যায়।
:-একটা কথা বলবো?(নীলা)
:-বলুব?(আমি)
:-আমাকে মেঘার চুল পরিমান ভালোবাসা দিয়েন আমি আপনাকে মাথায় করে রাখবো।
আপনারা ভাবছেন এই নীলাটা আবার কে?নীলা আবার বউ।আজ আমাদের বাসর রাত।বাসর ঘরে বসে নীলাকে আমার অতীতের কথাগুলো বলছিলাম।নীলার সাথে আমার বিয়ে আম্মু ঠিক করেছে।আম্মুর মুখের দিকে চেয়ে না করতে পারিনি।
:-জানেন আমি কখনো কারো সাথে প্রেম করিনি। সবসময় নিজের বরকে নিয়েই স্বপ্ন দেখেছি। সবসময় ভেবেছি বিয়ের পর নিজের বরকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসবো না।
আমি নীলাকে থামিয়ে বললাম
:-তোমার কোলে একটু মাথা রাখি?
:-আমি কী মানা করেছি?
আমি নীলার কোলে মাথা রাখলাম।নীলা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অনেকদিন পর আজ আমার পাশে এমন একজন মানুষকে পেলাম যাকে বিশ্বাস করা যায়,ভালোবাসা যায়।
**সমাপ্ত**
*কিছু কথা*
ভালোবাসার মাঝে বিশ্বাসটা সবথেকে বড় কথা।বিশ্বাস না থাকলে ভালোবাসা টিকেনা।অনেক ছেলে/মেয়ে আছে যারা রিলেশন ভাঙ্গার পর নিজেকে শেষ করে দিতে চায়।পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে,তাঁদের উদ্দেশ্য বলছি যে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে সে কখনোই আপনার ছিলোনা কিন্তু ভবিষ্যতে যে আপনার জীবনে আসবে সে আপনার সবথেকে বেশি আপন মানুষ।সো পরকে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।আমি বলছিনা রিলেশনশিপ খারাপ।কিন্তু এমন রিলেশন করবেন না যার জন্য আপনাকে সারাজীবন কষ্ট পেতে হয়।**
**ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন**
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ