অবশেষে ভালবাসা
লেখক:- Hosain Ahmed(আমি হিমু)
(১ম পর্ব)
-
অনেকদিন হলো ব্যস্ততার কারণে ফেসবুকে যাওয়া হয়না।আজ কোন কাজ নেই তাই ফেসবুকে লগ ইন করলাম।লগ ইন করে দেখলাম অনেক মেসেজ জমা হয়ে আছে। মেসেজগুলো চেক করলাম। প্রায় সবগুলো মেসেজে একই লেখা""ভাইয়া আপনি ফেসবুকে আসেন না কেনো?গল্প লেখেন না কেনো?আপনার গল্প না পড়লে ভালো লাগেনা।প্লিজ তাড়াতাড়ি ফেসবুকে এসে গল্প লিখুন"""এরকম মেসেজ ছিলো।একটা আইডি থেকে ৫০+ মেসেজ এসেছে।
প্রথম মেসেজ--আপনি ফেসবুকে আসেননা কেনো?
২য়-আপনি গল্প লেখেন না কেনো?
৩য়-জানেন আপনার গল্প না পড়লে আমার সেই দিনটাই ভালো যায়না।
প্রায় সবগুলো মেসেজেই অনেক মান অভিমান।শেষের মেসেজটা অনেক বড় করে লেখা।
"""জানেন আপনাকে অনেক মিস করছি।আজ ৫ দিন হলো আপনার গল্প পড়িনা।আপনার গল্প না পড়লে রাতে ঘুমাতে পারিনা।আপনার গল্প পড়তে পড়তে কখন যে আপনার প্রেমে পড়ে গেছি বুঝতেই পারিনি।আপনার প্রতিটা গল্পেই আমি কমেন্ট করি।জানেন ভালোবাসা কী সেটা আপনার গল্প পড়েই বুঝেছি।আর হয়তো ফেসবুকে আসা হবেনা।ভালো থাকবেন"""
মেসেজটা পড়ে আমি থ হয়ে গেলাম।আমার মত একটা অপদার্থকে কেউ ভালোবাসতে পারে এটা বিশ্বাসই হচ্ছেনা।তারউপর অপরিচিত কেউ।মেয়েটির আইডিতে গেলাম।পরোফাইলে সুন্দর একটা নীল ঘড়ির পিক দেওয়া।এবাউটে ঢুকে আমি বড় ধরনের টাসকি খেলাম।মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে সেটা তার এবাউটে লিখে রাখছে।আচ্ছা মেয়েটার মাথায় কী সমস্যা আছে?এভাবে নিজের এবাউটে ভালোবাসার কথা কেউ লিখে রাখে।ও আপনাদেরতো বলাই হয়নি আমি কে?আমি হুসাইন অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি।আর এত সময় যার পরোফাইল চেক করলাম তার নাম দিয়া(মেয়েটার আইডি থেকে জানলাম)।কিসে পড়ে,বাসা কোথায় এসবের কিছু জানিনা।এসব ভাবতে ভাবতে মেসেজটন বেজে ওঠলো।দিয়া মেসেজ দিয়েছে।মেসেজ ওপেন করলাম--
:-এইযে মিঃ ভাবওয়ালা এতদিন কোথায় ছিলেন?(দিয়া)
:-শুনুন আমি ভাবওয়ালা না।আর কোথায় ছিলাম সেটা আপনাকে কেনো বলবো?(আমি)
:-ওরে বাবা কী ভাব নেয়।ওই একদম ভাব নেবেন না।বেশি ভাব নিলে আপনার খবর আছে।
:-যতসব আজাইরা।
:-ওই কী বললেন?আমি আজাইরা।এক থাপ্পর দিয়ে আপনার দাঁত ফেলে দিবো।
:-থাপ্পর দিতে আসলে আমিও কী বসে থাকবো নাকি আমিও থাপ্পর দিতে পারি।
দিলাম ব্লক করে।কোথাকার কোন মেয়ে আমাকে থাপ্পরের ভয় দেখায়।এখন বুঝবে মজা।অনেক রাত হয়েছে। ঘুমও পাচ্ছে তাই ফেসবুক লগআউট করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে প্রাইভেটে গেলাম।যেখানে প্রাইভেট পড়ি সেই রুমের মধ্যে ঢুকতেই আমার দুগালে দুইটা শব্দ হলো।দুচোখে অন্ধকার দেখছি।আমার ঘোর কাটতেই দেখলাম দিয়া আমার সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমাদের ক্লাসের সবথেকে সুন্দরী মেয়ে।আমি প্রথমদিন ওকে দেখেই ক্রাশ খেয়েছিলাম।রুমের মধ্যে বাকি যারা ছিলো সবাই আমার তাকিয়ে আছে।
:-এই তুই আমাকে ব্লক করলি কেনো?(দিয়া)
:-আমি তোকে কখন ব্লক করলাম?তুইতো আমার ফ্রেন্ডলিষ্টেই নাই।(আমি)
:-ওই ফ্রেন্ডলিষ্টে নাই মানে?দিয়া আইডিটা কার?
:-আমিতো জানিনা ওইটা তোর আইডি।
:-দেখ ন্যাকামি করবিনা।
:-আমি আসলেই জানিনা।আর জানলেও ব্লক দিতাম।কারণ তুই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস।
আমার কাছে এসে কলার ধরে বললো
:-কী বললি তুই?
এবার আর সহ্য করলাম না ঠাস করে দুইটা থাপ্পর দিয়ে দিলাম।(শোধ নিলাম আরকি।হি হি হি)
:-কী ভেবেছো নিজেকে?তোমার অভিনয় আমি বুঝিনা।তোমরা সব বড়লোক বাপের মেয়েরাই এক।ছেলেদের জীবনটা শুধু নষ্ট করতে পারো কিন্তু জীবন গড়ে দিতে পারোনা।এরপর থেকে আমার আশেপাশে যেনো তোমায় না দেখি।
দিয়া কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আমি গিয়ে একটা বেন্চে বসলাম
:-দোস তুই কী কাজটা ঠিক করলি?ওরা বড়লোক । যদি ওর বাবা খারাপ কিছু করে বসে তখন কী করবি?(নিরব)
:-ওসবের ভয় আমি পাইনা।(আমি)
নিরব আর কিছু বললো না।কিছুক্ষণ পর স্যার আসলো।প্রাইভেট পড়া শেষ করে মেসে আসলাম।মেসে এসে ভাবছি কাজটা কী ঠিক করলাম?ধ্যাত এসব ভেবে কী হবে যা হবার হবে।কলেজের টাইম হয়ে গেছে এখন কলেজে যেতে হবে।খাওয়া দাওয়া করে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।আমার মেস থেকে কলেজ যেতে ৩ মিনিট লাগে।কলেজ গেট দিয়ে ঢুকলাম।আমার ডিপার্টমেন্টের সামনে যেতেই কেউ একজন আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।পুরো কলেজের ছেলে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে পিছন থেকে এমন ভাবে ঝাপটে ধরেছে যে আমি পিছন দিকে ঘুরতে পারছিনা।অনেক কষ্ট করে পিছন দিকে ঘুরলাম।এতো দিয়া।নিজেকে ছাড়িয়ে কসিয়ে থাপ্পর মারলাম।
:-কী পেয়েছো তুমি?তোমার যা ইচ্ছা তাই করবে?আমি তোমাকে ভালোবাসিনা আর কোনদিন বাসবোও না।(আমি)
কথাগুলো বলে ক্লাসরুমে চলে আসলাম।এই পাগল মেয়ের সামনে থাকা মোটেও নিরাপদ না।দিয়া ক্লাসে আসলোনা।অনেকটা টেনশনের মধ্যে দিয়ে ক্লাস শেষে মেসে আসলাম।বিকেলবেলা টিউশনি করাতে গেলাম।আমি মধ্যবিও পরিবারের ছেলে।নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেকেই চালাতে হয়।দুইটা টিউশনি করি।একটা বিকেলে আরেকটা সন্ধার পর।
টিউশনি শেষে রাত ৯ টায় মেসে ফিরলাম।মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম।৯:৩০ এ একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন আসলো।আমি রিচিভ করলাম
:-আসসালামুআলাইকুম।(আমি)
:-নিশ্চুপ
:-কে বলছেন??
:-নিশ্চুপ
:-আজবতো ফোন দিয়ে কথা বলেন না কেনো।
:-এবার কান্নার শব্দ পেলাম।
:-কীহলো আপনি কাঁদছেন কেনো?কে আপনি?
:-আমাকে কী তুমি একটুও ভালোবাসোনা।
এবার বুঝলাম ওপাশের মানুষটি দিয়া
:-আমার নম্বর কই পেলে তুমি?
:-আমার প্রশ্নটার উওর আগে দিন।
:-না বাসিনা
:-তিন সত্যি?
:-তিন সত্যি।
:-ভালো থেকো।বাই
ফোন কেটে গেলো।৭ মিনিট পর আমি ফেসবুকে ঢুকলাম।ফেসবুকে ঢুকতেই একটা ভিডিও কল আসলো।আমি অপরিচিতদের ভিডিও কল রিচিভ করিনা তাই কেটে দিলাম।আবার আসলো।বারবার কেটে দেওয়ার পরও কল করে যাচ্ছে।এবার এক প্রকার বিরক্ত হয়ে রিচিভ করলাম।রিচিভ করতেই ওপাশের মানুষটিকে দেখা গেলো।দিয়া হাতে ছুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার মানে আইডিটা দিয়ার।ওইটা ব্লক দেওয়ায় নতুন খুলেছে।
:-তুমি যদি আমাকে ভালো না বাসো তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।(দিয়া)
:-তোমার যা ইচ্ছা করো। প্লিজ আমাকে বিরক্ত করোনা।(আমি)
আমার কথা বলা শেষ হতে না হতেই দিয়া ওর হাতে ছুড়ি চালিয়ে দিলো।হাত দিয়ে ফোটা ফোটা রক্ত বের হচ্ছে।
:-তুমি কী পাগল হয়ে গেছো?হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে তাড়াতাড়ি রক্ত বন্ধ করো।হাতে রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য কিছু লাগাও।(আমি)
:-যাকে ভালবাসি তাঁকেই যদি না পাই তাহলে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে কী লাভ।(দিয়া)
আমিও দিয়াকে মনে মনে পছন্দ করি কিন্তু কাউকে কোনদিন বুঝতে দিইনা।কারণ দিয়া হলো আকাশের চাঁদ আর আমি বামুন।বামুন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরাটা শুধুমাএ কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়।
দিয়ার হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এটা আমি সহ্য করতে পারছিনা।
:-আচ্ছা আমি তোমাকে ভালবাসবো। প্লিজ তুমি হাতে কিছু লাগাও। (আমি)
:-সত্যি বলছো?(দিয়া)
:-হ্যা সত্যি।হাতের রক্ত বন্ধ করো।
দিয়া ফোন টেবিলের উপর রেখে বাইরে চলে গেলো।ফোনটা এমনভাবে টেবিলের উপর রেখেছে আমি পুরো রুমটাই দেখতে পাচ্ছি।দিয়া হাতে ব্যান্ডেজ আর ওষুধ নিয়ে আসলো।নিজের হাতে নিজেই ব্যান্ডেজ করে নিলো।এই মাথায় নিশ্চয় সমস্যা আছে নাহলে নিজের হাত নিজে কেটে আবার নিজেই ওষুধ লাগায়।এরপর আমার সাথে আবার কথা বলা শুরু করলো
:-আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যাবে নাতো?(দিয়া)
:-না যাবোনা।(আমি)
:-কালকে কলেজের মাঠে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে ভালোবাসি বলতে পারবে?
:-সবার সামনে কেনো বলতে হবে?
:-আমি চাই আমাদের ভালোবাসার কথা সবাই জানুক।
:-আমি পারবোনা এটা।সবার সামনে আমি ছোট হতে পারবোনা।
:-না পারলে আমি কিন্তু আবার হাত কাটবো।
:-এই না হাত কাটতে হবেনা।আমি রাজি।
:-ওকে।এখন ঘুমাও।১০টার মধ্যে কলেজে চলে এসো।লাভ ইউ
:-লাভ ইউ টু
ফোনটা রেখে ভাবছি দিয়ার প্রস্তাবে রাজি হওয়া কী ঠিক হলো?রাজি না হয়েই কী করতাম ও যদি বড় কিছু একটা করে ফেলতো তখন সব দায় ভার আমাকে নিতে হতো।আমার কিছু হয়ে গেলে আমার পরিবারকে দেখার মত কেউ থাকবেনা।সারারাত এক প্রকার চিন্তার মধ্যে দিয়ে কাটালাম।সকালে প্রাইভেটেও গেলাম না।৯ টার দিকে কলেজের পথে রওনা দিলাম।কলেজে যাওয়ার পথে ২টা গোলাপ কিনে নিলাম।কলেজে পৌঁছে দেখি দিয়া মাঠের মাঝখানে বসে আছে। আমি গিয়ে দিয়ার পাশে দাঁড়লাম।
:-দিয়া একটু এদিকে আসবে?(আমি)
দিয়া ওঠে আমার সাথে আসলো।আমি দিয়ার হাতে ফুল দিয়ে বললাম
:-ভালোবাসি তোমায়।(আমি)
:-এভাবে কেউ প্রপোজ করে।হাটু গেরে বসে প্রপোজ করো(দিয়া)
আমি হাঁটু গেরে বসে বললাম
:-দিয়া তুমি আমার সারাজীবনের সঙ্গী হবে।
আমার কথা শুনে দিয়া হাঁসতে শুরু করলো।ওর বান্ধবীদের সহ অন্যদের চিৎকার করে ডেকে বললো
:-এই তোমরা শোন এই ফকিরের বাচ্ছা আমাকে ভালোবাসে বলছে।(দিয়া)
আমি দিয়ার কথা শুনে বড় ধরনের শক খেলাম।আশেপাশে যত ছেলে মেয়ে ছিলো সবার মধ্যে হাঁসির রোল পড়ে গেলো।
:-কী বলছো তুমি?(আমি)
:-তুই ভেবেছিস এতদিন আমি যা করেছি সব তোকে ভালোবেসে করেছি?হাহাহাহা।বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরে এসব করেছি।আমার পিছনে হাজার ছেলে লাইন ধরে আছে।কাল রাতে হাত কেটে ছিলাম শুধু তোকে হাতে আনার জন্য।(দিয়া)
আমার আর বুঝতে কোনকিছু বাকি রইলোনা।দিয়া আমাকে অপমান করার জন্য সবকিছু করেছে।মাথা নিচু করে কলেজ থেকে বেড়িয়ে আসলাম। মানুষ এতটা অভিনয় করতে পারতে সেটা আগে জানতাম না আজ বুঝলাম।মেসে চলে আসলাম।রুমে এসে শুয়ে কাঁদছি।আমার কান্না দেখে রুমমেট জিঙ্গেস করলো কী হয়েছে।আমি সবকিছু খুলে বললাম।উনি আমাকে শান্তনা দিলেন কিন্তু আমার মন কিছুতেই মানছেনা।কলেজের সবার কাছে আমি ছোট হয়ে গেলাম।এতবড় অপমান কীভাবে সহ্য করবো।
দিয়া প্রমাণ করে দিলো গরিব আর বড়লোকের মধ্যে কখনো ভালোবাসা হয়না।দিয়াকে অনেকটাই ভালোবেসে ফেলেছিলাম।না আমাকে এত ভেঙ্গে পড়লে চলবে না নিজেকে শক্ত করতে হবে।আমি পরিবারের বড় ছেলে।আমার উপর পরিবারের ভালো মন্দ নির্ভর করছে।নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।পরেরদিন থেকে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম।এত বড় অপমানের পর সবার সামনে যেতে লজ্জা লাগছিলো।আগের জায়গাতে প্রাইভেট পড়া বাদ দিয়ে অন্য কলেজের স্যারের কাছে প্রাইভেট শুরু করলাম।সারাদিন নানা ব্যস্ততার মধ্যে দিয়াকে ভুলে থাকলেও রাতে ভুলে থাকতে পারতাম না।নিজেকে আস্তে আস্তে শক্ত করলাম।আমার এখন একটাই স্বপ্ন ডিপার্টমেন্ট ফাষ্ট হওয়া।নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি ২টা টিউশনি চালিয়ে যেতে লাগলাম।
দিয়ার সাথে আজ ৯ দিন দেখা হয়না।দেখা হবেই কী করে আমিতো কলেজেই যায়না।
সন্ধার টিউশনি থেকে মেসে ফিরছি।আজ ফিরতে বেশি দেরী হয়ে গেছে। আজ ছাএের বাড়িতে খেয়ে আসতে হলো তাই এত দেরী।
এখন রাত ১০:৪৩ বাজে।আশাপাশের বাড়িগুলো অনেকটাই নিরব।রাস্তা থেকে গলির মধ্যে ঢুকতেই একটা বাড়ি থেকে কারো চিৎকারের আওয়াজ পেলাম।ভালো করে ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম।পাশের পোড়া বাড়ি থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসছে।একটা মেয়ের গলা।আমি কোন ছবির নায়ক না যে একা ওখানে চলে যাবো আর গিয়ে সবাইকে পিটিয়ে মেয়েটিকে ছাড়িয়ে আনবো।গলির অপর পাশের বাড়িতে গিয়ে লোকজন ডেকে সবাই মিলে পোড়া বাড়ির মধ্যে গেলাম।৪ জন ছেলে একটা মেয়েকে ঘিরে রেখেছে।আমাদের সবাইকে যেতে দেখে ছেলেগুলো পালিয়ে গেলো।মেয়েটির দিকে ভালো করে দেখলাম।এতো দিয়া।আহারে বেচারী আজ নিজের সবকিছু হারাতে বসেছিলো।মানুষের ভাগ্য কখন কোথায় নিয়ে যায় তা কেউই বলতে পারেনা।
:-এই ছেলেটি আমাদের সবাইকে না ডাকলে তোমার যে আজ কী সর্বনাশ হয়ে যেতো আল্লাহই জানে।(একটা মহিলা)
:-আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম।ছেলেটি গিয়ে আমাদের সবাইকে ডেকে আনলো।ছেলেটিকে ধন্যবাদ দাও মা
(একটা আঙ্কেল)
:-আমাকে মেসে যেতে হবে।আপনারা সবাই মেয়েটিকে বাসায় পৌঁছে দিয়েন।(আমি)
:-আচ্ছা বাবা তুমি যাও।
আসার আগে দিয়ার দিকে একবার তাঁকালাম ওর চোখে পানি টলমল করছে।মন হয় এখনি কেঁদে ফেলবে।দিয়া আমাকে পিছন থেকে ডাকলো আমি শুনেও না শুনার ভান করে চলে আসলাম।মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।আজ পড়তে একটুও ইচ্ছা করছেনা।কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ৩ টা বাজে।এতরাতে আবার কে ফোন দিলো।নম্বর না,দেখেই রিচিভ করলাম।
:-হ্যালো (আমি)
:-নিশ্চুপ
:-কে আপনি আর এত রাতে ফোন দিয়েছেন কেনো?
:-আমি দিয়া
:-ও আপনি?তো আবার কী মনে করে ফোন দিলেন?আবার কী অপমান করার ইচ্ছা আছে?
:-না।তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ফোন দিয়েছি।
:-হা হা হা হা।আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন আপনি?অবাক করা ব্যাপার।বড়লোক বাপের মেয়ে একটা গরিবের ছেলের কাছে মাথা নত করছে।এটা বাইরের কেউ শুনলে আপনার মাথা কাটা যাবে।
:-প্লিজ আমাকে আর অপমান করোনা।
:-আমি আপনাকে অপমান করছিনা।আপনি সেদিন আমার সাথে যা করেছেন এখনো ভুলিনি।
:-তুমি চাইলে সবার সামনে আমাকে অপমান করতে পারো।
সবার সামনে অপমান?না এই সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবেনা।
:-তাহলে কাল কলেজে চলে আসবেন।
:-ওকে
ফোন রেখে দিলাম।আমার অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারবো এটা ভেবেই নাচতে ইচ্ছা করছে। দিয়া মেয়েটা কতবড় পাগল আমার প্রস্তাবে সহজেই রাজি হয়ে গেলো।নিজে অপমান হওয়ার জন্য নিজেই এগিয়ে আসছে।অনেক হাঁসি পাচ্ছে।পরেরদিন সকালে কলেজে গেলাম।গিয়ে দেখি দিয়া ওর বান্ধবীদের সাথে বসে আছে।আমি ওর কাছাকাছি যেতেই ও ওঠে আসলো।
:-বলো কী করতে হবে?(দিয়া)
:-এই ফুলটা(আসার পথে ফুলটা কিনেছি) নিয়ে হাটু গেরে বসে আমাকে প্রপোজ করো(আমি)
আমার কথামত দিয়া হাটু গেড়ে বসে বললো
:-তুমি আমার সারাজীবনের সঙ্গী হবে।(দিয়া)
আমি দিয়ার মত করে চিৎকার করে বললাম সবাই দেখো বড়লোকের বেটি বলছে আমাকে ভালবাসে।সবাই দিয়ার দিকে তাকালো।দিয়ার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।এটাইতো আমি চেয়েছিলাম।কাউকে অপমান করার জ্বলা এবার বুঝবে।
:-তুই কী করে ভাবলি তোর মত নিচু মনের মানুষকে আমি ভালোবাসবো।শুধু টাকা থাকলেই মানুষ বড় হয়ে যায়না।আর ভালোবাসার জন্য সুন্দর একটা মন দরকার যেটা তোর নেই।(আমি)
দিয়া আর কিছু না বলে ওঠে দৌঁড়ে কলেজ থেকে বের হয়ে গেলো।দিয়াকে অপমান করতে পেরে নিজেকে অনেক সুখি মনে হচ্ছে।আমিও খুশি মনে মেসে ফিরে আসলাম।আজ আমি অনেক খুশি।মেসে এসে সেই একখান ঘুম দিলাম।ঘুম ভাঙ্গলো রুমমেটের ডাকে।
:-হুসাইন তোমাকে একটা লোক ডাকছে।(রুমমেট)
:-কে সে?(আমি)
:-আমি চিনিনা।বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি ওঠে চোখ ডলতে ডলতে বাইরে এলাম।একটা লোক দাড়িয়ে আছে।
:-আপনি কে?(আমি)
:-আমি দিয়ার আব্বু(লোকটি)
দিয়ার আব্বু কথাটা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো।দিয়া কী তাহলে বাড়িতে গিয়ে সবকিছু বলে দিয়েছে?এবার আমি শেষ।মনে হয় বাকি জীবন জেলের মধ্যে কাঁটাতে হবে।
:-তুমিইতো কালকে দিয়াকে বাঁচিয়েছিলে?(দিয়ার আব্বু)
:-জ্বি হ্যাঁ।(আমি)
:-ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবোনা।আমাদের বাড়িতে একদিন এসো সবাই একসাথে বসে গল্প করবো।
:-কিন্তু?
:-কোন কিন্তু নয় বলো যাবে?(আমার হাত ধরে)
আমি কেনো জানি না করতে পারলাম না
:-আচ্ছা যাবো।
:-তাহলে আজ সন্ধায় আসো?
:-সন্ধায় আমার টিউশনি আছে।পরে একদিন যাবো।
:-আমাদের জন্য নাহয় একদিন টিউশনি বাদ দিলে।
:-আচ্ছা যাবো।
:-অনেক ধন্যবাদ।তাড়তাড়ি চলে এসো।আমরা সবাই তোমার অপেক্ষায় থাকবো।এই নাও বাড়ির ঠিকানা।
দিয়ার বাবা চলে গেলেন।আমি রুমের মধ্যে এসে ভাবছি যেতে চাওয়াটা কী ঠিক হলো?তাছাড়া দিয়ার বাবার কথাশুনে মনে হলো আজ কলেজের ব্যাপারটা ওর বাবাকে বলেনি।বললে এতক্ষণে আমার বারোটা বেজে যেতো।যাইহোক সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেললাম।
সন্ধায় দিয়াদের বাসায় গেলাম।অনেক বড় বাড়ি।চারতলা।আমি গেটের ভিতর দিয়ে ঢুকতে যাবো তখনি দারোয়ান আমাকে আটকালো
:-কোথায় যাবেন?(দারোয়ান)
:-দিয়ার বাবা আমাকে আসতে বলেছে।(আমি)
:-ও তাহলে আপনিই সেই! আপা মনিকে কালকে বাঁচিয়েছিলেন।
:-জ্বি
:-ভিতরে চলুন।সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি দারোয়ানের পিছু পিছু ভিতরে ঢুকলাম।ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে। দিয়া, দিয়ার আব্বু,দুজন বয়স্ক লোক সম্ববত দিয়ার দাদা দাদি।আর একজন মহিলা সম্ভবত দিয়ার আম্মু।আমাকে দেখে দিয়ার আব্বু বসতে বললেন।সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।আমাকে দেখে দিয়ার মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখলাম না।এমন মনে হলো যেনো আমি আসাতে ও খুশিই হয়েছে।সবার সাথে অনেকক্ষন গল্প করলাম।গল্প করা শেষ হলে খাওয়া দাওয়া করে মেসে আসার জন্য সবার থেকে বিদায় নিলাম।আসার আগে দিয়ার আব্বু আমার ফোন নম্বর রেখে দিলেন।
এরপর থেকে মাঝে মাঝেই দিয়ার আব্বু আমাকে তাদের বাসায় ডেকে পাঠাতেন।সবার সাথে কথা হলেও দিয়া সাথে কথা হতোনা।দিয়াও বলতোনা আবার আমিও বলতাম না।দিয়াকে দেখে মনে হতো আমি আসাতে ও খুশি হয়।দিয়ার ফ্যামিলির সবার সাথে অন্যরকম একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠলো।
হঠাৎ একদিন শুনলাম দিয়ার আব্বু স্টক করেছে।হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।দিয়া ফোন করেছিলো।আমি তাড়াতাড়ি হাতপাতালে গেলাম।গিয়ে দেখি সবাই কাঁদছে।দিয়াকে আজ কাঁদতে দেখে কেনো জানি ওর প্রতি মায়া হচ্ছে।আচ্ছা দিয়ার প্রতি কেনো আমার মায়া হচ্ছে?তবে কী দিয়াকে আমি ভালোবেসে ফেলছি?না না এ কখনোই হতে পারেনা।মন থেকে দিয়াকে বের করে দিতে চাইলাম।দিয়াকে যতই ভুলতে চাইছি ততই বেশি মনে পড়ছে।২ ঘন্টা পর দিয়ার আব্বুর জ্ঞান ফিরলো।সবাই দিয়ার আব্বুর কাছে গিয়ে কথা বলছে।আমি দুরে দাঁড়িয়ে আছি।সবার মুখে এখন কিছুটা হাঁসির রেখা দেখা যাচ্ছে।দিয়ার আব্বু আমাকে ডাক দিলেন
:-তুমি এসেছো এটা দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছি। তোমার সাথে অনেক কথা আছে।(দিয়ার আব্বু)
:-বলুন(আমি)
:-সবাই বাইরে যাও।
দিয়ার আব্বুর কথা শুনে সবাই বাইরে গেলো।
:-আমার কাছে এসে বসো।(দিয়ার আব্বু)
আমি উনার কথামত বলসাম।
:-দিয়া তোমাকে ভালোবাসে এটা তুমি জানো?(দিয়ার আব্বু)
:-জ্বি(আমি)
:-তোমাকে আমি মাঝে মাঝে কেনো বাড়িতে ডেকে পাঠায় জানো?দিয়া তোমাকে দেখতে চাই এই জন্য।দিয়া আমাকে আগেই বলেছে ও তোমাকে ভালোবাসে।আর তোমাদের মধ্যে কী কী ঘটেছে তাঁর সবকিছু আমি জানি।দিয়া বলেছে।আমার আর তোমার আন্টির রিলেশনের বিয়ে।পুরো ৩ বছর রিলেশনের পর বিয়ে হয়।আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম।দিয়ার আম্মু ছিলো বড়লোক বাপের মেয়ে আর আমি গরিব ঘরের ছেলে ছিলাম।আমাদের রিলেশন মেনে নিয়েছিলো না।আর এখন আমার যা সম্পদ দেখছো সব নিজে কষ্ট করে করেছি।। আমি ভালোবাসার মানে বুঝি তাই দিয়াকে ভালোবাসতে না করিনি।আমার মেয়ে যেখানে সুখি থাকবে আমি সেখানেই ওর বিয়ে দিবো।
আমি দিয়ার আব্বুর কথা যত শুনছি ততই অবাক হচ্ছি।
:-দিয়া তোমাকে অনেক ভালোবাসে।ওকে কখনো কষ্ট দিয়োনা।
:-আমাকে সবকিছু ভাবার সময় দিন।(আমি)
:-আচ্ছা ভেবে দেখো।ভালোবাসা কখনো জোর করে হয়না।তবে সবসময় মন যা বলে সেটা করবে দেখবে তাহলে জীবনে সুখি হবে।
:-আমি এখন মেসে যাই।পরে আবার আসবো
:-আচ্ছা যাও।
আমি হাসপাতাল থেকে মেসে চলে আসলাম।মেসে এসে ভাবছি কী করবো।আচ্ছা দিয়া কী সত্যিই আমাকে ভালোবাসে নাকি আবার আমাকে অপমান করার জন্য অভিনয় করছে।না এবার মনে হয় সত্যিই ভালবাসে।অপমান করতে চাইলে ফ্যামিলিতে জানাতো না।
-
আমি অনেক ভেবে চিন্তে দিয়াকে ভালোবাসতে রাজি হলাম।পরেরদিন সকালে দিয়ার বাবাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হলো।সেদিন বিকেলে আমি দিয়াকে লেকের ধারে দেখা করতে বললাম।
বিকেলবেলা -
আমি দিয়ার আগে এসে বসে আছি।দিয়ার এখনো কোন খোজ নেই।৪টার বেশি বাজে অথচ দেখা করার কথা ৪টায়।আচ্ছা দিয়া কী আসবে?জানিনা আসবে কীনা।আরো কিছুক্ষণ পর দিয়া আসলো।দিয়াকে দেখে আমি প্রথমে চিনতেই পারছি না।দিয়া আজ শাড়ি পড়েছে।চোখে কাজল দিয়েছে,কপালে ছোট্র একটা কালো টিপ পড়েছে।এক কথায় দিয়াকে আজ আমার স্বপ্নের পরীর মত লাগছে
:-এভাবে হা করে থাকলে মুখে মাছি ঢুকবে।(দিয়া)
:-তুমি কেনো এত সুন্দর?(আমি)
:-তোমার জন্য হি হি হিহি
দিয়া হাসছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে সে হাসি দেখছি।
:-এখানে দাঁড়িয়েই থাকবে নাকি কোথাও বসবে?(দিয়া)
:-চলো কোথাও বসি।(আমি)
একটা ফুসকার দোকানের সামনে এসে বসলাম।
:-মামা ১ প্লেট ফুসকা দিন।(দিয়া)
:-১প্লেট কেনো?আমি খাবোনা বুঝি।(আমি)
:-না।আমি খাবো আর তুমি বসে বসে দেখবে।হি হি হি হি
ধ্যাত এই মেয়ে এত হাঁসে কেনো।জানেনা ওর হাসি দেখলে আমার হাটবিট বেড়ে যায়।
:-হাঁ করো?(দিয়া)
চামচে ফুসকা আমার মুখের সামনে নিয়ে।
:-আমি খাবোনা(আমি)
:-না খেতে চাইলে জোর করবোনা
এই বলে দিয়া ফুসকা খেতে শুরু করলো।কী মেয়েরে বাবা একবার না বলেছি বলে আর দিলোও না।
ফুসকা খাওয়া শেষে।
:-আব্বু তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে।(দিয়া)
:-এখনি যেতে হবে?(আমি)
:-ওই তোমার মাথায় কী ঘিলু বলতে কিছু নাই মাএ বেড়াতে আসলাম আর এখনি চলে যাবো!আজ সারাদিন ঘুরবো বুঝছো।
:-আচ্ছা।
এরপর রিক্সা নিয়ে দুজন অনেক জায়গায় ঘুরলাম।ঘুরতে ঘুরতে সন্ধা ঘনিয়ে এলো
:-এই আমাকে মেসে যেতে হবে।(আমি)
:-আরেকটু থাকোনা?(দিয়া)
:-আমাকে টিউশনিতে যেতে হবে।
:-আমার জন্য নাহয় একটা দিন টিউশনি বাদ দিলে।
:-কিন্তু মহারাণী এভাবে দুইদিন পরপর টিউশনি বাদ দিলে আমার কাছে আর ছাএ/ ছাএী পরবে না।
:-না পড়লে নাই।এখন মার্কেটে যাবো চলো।
কী আর করার মহারানীর আবদারতো মানতে হবে।দুজন মার্কেটে গেলাম।মহারাণী এমনভাবে কসমেটিক্স কিনছে মনে হচ্ছে পুরো দোকানটাই কিনে নিবে।আমার মানিব্যাগে বেশি টাকা নেই তাই ভয় হচ্ছে।কেনাকাটা শেষ হলে মহারাণী নিজেই বিলটা দিলেন।আমি হাপ ছেড়ে বাঁচলাম।মার্কেট থেকে বেড়োতে বেড়োতে ৮টা বেজে গেলো।বাইরে এসে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা দিয়াদের বাসায় চলে গেলাম।ভিতরে গিয়ে দেখি আঙ্কেল বসে আছে।আঙ্কেল এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।আমাকে দেখে বসতে বললেন
:-আমি উপরে গেলাম তুমি বসে আব্বুর সাথে গল্প করো।(দিয়া)
:-আচ্ছা
আঙ্কেলকে বললাম
:-আপনার শরীলটা এখন কেমন?(আমি)
:-আগের থেকে ভালো।তুমি কেমন আছো?(আঙ্কেল)
:-ভালো।আন্টি কোথায়?
:-কিচেনে।তোমাকে আজ ডেকেছি কিছু কথা বলার জন্য।
:-জ্বি বলুন।
:-আমি দিনে দিনে বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।জানিনা কখন মরে যায়
:-এমন কথা বলবেন না আঙ্কেল।আপনি তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে যাবেন।
:-তাই যেনো হয়।তুমি কী আমার অফিসে ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব নিতে পারবে?
:-আমি এত বড় দায়িত্ব নিয়ে সামলাতে পারবোনা।
:-পারবে।আমি সবকিছু বুঝিয়ে দিবো।আর না পারলে আমিতো আছিই।
:-কিন্তু
:-আর কোন কিন্তু নয়।
:-ওকে।
:-আব্বু তোমার কথা বলা শেষ হয়েছে?(দিয়া)
:-হ্যাঁ মা।(আঙ্কেল)
দিয়া আমাকে বললো
:-আমার সাথে একটু ছাঁদে চলো।
আমি দিয়ার পিছু পিছু ছাঁদে ওঠলাম।আকাশে চাঁদের আলো ঝলমল করছে।
:-একটা কথা বলবো?(দিয়া)
:-বলো।(আমি)
:-তোমায় একটু জরিয়ে ধরবো?
:-না
:-কেনো?
:-এমনি
:-একটু ধরি?
:-বললামতো না।
মহারাণী আমার কথা শুনে ছাঁদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য পাঁ বাড়ালো।আমি হাত ধরে কাছে টেনে নিলাম।
:-কই যাও?(আমি)
:-জানিনা।(দিয়া)
আমি আর কিছু না বলে দিয়ার কপালে একটা ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দিলাম।দিয়া আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো
:-যা দুষ্টু আমি কী তোমায় এতকিছু করতে বলেছি।
ইস কত সুন্দর করে দুষ্ট বললো।
:-বাড়িতে একটা ফোন দিই।(আমি)
:-মেসে গিয়ে দিও।(দিয়া)
:-না এখনি দিই।চাকরির খবরটা সবাইকে জানাই।সবাই অনেক খুশি হবে।
:-ঠিক আছে দাও।আমিও কথা বলবো।
:-না মহারাণী। এখন আপনি কথা বললে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিবে।
:-না আমি বলবোই।
:-প্লিজ বোঝার চেষ্ট করো।
:-ঠিক আছে।
আমি বাসায় ফোন দিলাম।আব্বু আম্মুকে চাকরির সংবাদটা দিলাম।সবাই অনেক খুশি হলো।চাকরিটা পাওয়াতে আমি নিজেও অনেক খুশি কারণ ছোট ভাই দুটোকে ভালো পোশাক কিনে দিতে পারবো।বাড়িতে কিছু টাকা দিতে পারবো।
কথা বলা শেষ হলে দিয়াকে বললাম
:-তোমাকে বজ কিছু সত্যি বলতে চাই।(আমি)
:-বলো।(দিয়া)
:-আমার একটা অতীত আছে।একটা মেয়েকে আমি অনেক ভালোবাসতাম।নিজের জীবনের থেকেও বেশি।কিন্তু একদিন মেয়েটি আমাকে ধোঁকা দিয়ে চলে যায়।
:-এভাবে সংক্ষেপে শুনবোনা।প্রথম থেকে এক এক করে সবটুকু শুনবো।
:-না মহারাণী সবটুকু এক এক করে বলা সম্ভব না।এক এক করে বলতে গেলে আজ সারারাত লেগে যাবে।
:-লাগলে লাগুক তবুও শুনবো।
:-সারারাত তোমাকে এসব কাহিনী শুনালে আমাকে মেসে যেতে হবেনা?
:-আজ আমাদের বাসায় থেকে যাও।
:-না।
দিয়া আমার কাঁধে মাথা রাখলো।
:-এবার বলো তোমার অতীত।(দিয়া)
:-আমি তখন সবেমাএ ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি।অন্য ছেলে মেয়েদের মত আমার মনেও ভালোবাসা সম্পর্কে অনেক কৌতুহল ছিলো।এসএসসি পরীক্ষাতে ভালো রেজাল্ট করায় বাবা একটা মোবাইল ফোন কিনে দেয়।তখন ফেসবুক এখনকার মত এত জনপ্রিয় ছিলোনা।আমার এক ফ্রেন্ডের সাহায্য নিয়ে ফেসবুক আইডি খুলি।ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়।মেয়েটির নাম ছিলো ইয়াসমীন।আস্তে আস্তে মেয়েটির সাথে অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়।আমাদের বন্ধুত্বের যখন ৬ মাস পুর্ণ হয় সেদিন আমি মেয়েটিকে প্রপোজ করে বসি।মেয়েটি প্রথম না করে কিন্তু পরে হ্যা বলে দেয়।এভাবেই আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসা আসে।আমার বাসা থেকে মেয়েটির বাসা ছিলো অনেক দুরে তাই মেয়েটির সাথে আমার দেখা হয়না।তবে দুজন দুজনার পিক আদান প্রদান করি।দুজন দুজনাকে দেখে পছন্দ করি।আমাদের রিলেশনশিপের দের পর পুর্ণ হবার পর মেয়েটি একদিন বলে ওর এর আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারণে সেটা ভেঙ্গে যায়।আমি ওর বিয়ের ব্যাপারটা মানতে পারছিলাম না তাই রিলেশন ব্রেকআপ করে দিই।আমি রিলেশন ব্রেকআপ করাতে মেয়েটি আত্মহত্যা করতে যায়।মেয়েটির ছোট বোন আমাকে ফোনে সবকিছু জানায়।আমি এসব শুনে আমার রিলেশন শুরু করি।ভালোভাবেই চলতে থাকে আমাদের রিলেশন। ইন্টারের পরীক্ষা শেষে শুরু হয় ভার্সিটি পরীক্ষা। আমার একটা সমস্যার জন্য পরীক্ষা দিতে পারিনি।মেয়েটি পরীক্ষা দেয় এবং ভার্সিটিতে চান্সও পেয়ে যায়।মেয়েটির ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার খবরটা আমার ফ্রেন্ডরা শুনে বলে ও ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে তোকে আর মনে রাখবেনা।আমি তখন ওদের কথা হেসে উড়িয়ে দিই।মেয়েটি ঢাকাতে আসে।ঢাকাতে আসার পর আমরা দেখা করি।এভাবে ভালোই চলছিলো আমাদের রিলেশন।কিন্তু হঠাৎই মেয়েটি বদলে যায়।আমাকে অনেক ইগনোর করতে শুরু করে।একসময় মেয়েটা আমার সাথে রিলেশন ব্রেকআপ করে চলে যায়।(আমি)
এতটুকু বলেই থামলাম আমি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১ টার বেশি বেজে গেছে।
:-এখনো ওই মেয়েটিকে ভালোবাসো?(দিয়া)
:-না।
:-তাহলে?
:-তোমাকে ভালোবাসি।
:-আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো।
:-কখনোই না।১১ টার বেশি বেজে গেছে এখন মেসে ফিরতে হবে।
:-আজকে থেকে গেলে হতোনা?
:-না মহারাণী।
:-যাও থাকা লাগবেনা।
:-এত অবুঝের মত কথা বললে হয়?আমি তোমাদের বাসায় থাকলে মেসের সবাই কী ভাববে বলো?আমি চাইনা আমার বউটার উপর কেউ কলঙ্ক দিক।
:-হু।
:-চলো আমাকে আগিয়ে দাও।
:-হু।
:-চলোনা।
দুজন বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালা।ছাদ থেকে নেমে নিচে এসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে আসলাম।দিয়া আমার সাথে রাস্তা পর্যন্ত আসলো।
:-সাবধানে যেও আর মেসে গিয়ে ফোন দিও।(দিয়া)
:-আচ্ছা।(আমি)
দিয়াদের বাসা থেকে মেসে চলে আসলাম।আজ নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।আগের রিলেশন ভাঙ্গার পর নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়েছিলো।দিয়াকে পেয়ে সত্যিই আমি অনেক ভাগ্যবান।এসব ভাবতে ভাবতে রাগে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ফোনের শব্দ ঘুম ভাঙ্গলো।আম্মু ফোন করেছে।সাধারনত আম্মু এত সকালে ফোন করেনা।
:-হ্যালো আম্মু।(আমি)
:-কেমন আছিস বাবা?(আম্মু)
:-ভালো।তোমরা কেমন আছো?
:-ভালো।তোর ছোট ভাইয়ের পরীক্ষার ফ্রি দিতে হবে যদি কিছু টাকা দিতিস!
:-কবে দিতে হবে?আর কত লাগবে।
:-কালকের মধ্যে।১০০০ টাকা লাগবে।
:-আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো।
:-আচ্ছা।এখন রাখি রান্না বসিয়েছি।
:-ওকে।
ফোন রেখে দিলাম।মাথায় উপর আলাদা একটা বোঝা আসলো।আমার ছোট ভাই এবার ক্লাস এইটে পড়ে।এখন মাসের মাঝামাঝি এই সময় টিউশনির টাকা পাওয়া সম্ভব না। আবার দিয়ার বাবার অফিসে এখনো জয়েন করিনি।জয়েন করলে একটা ব্যবস্থা হতো।কি করবো মাথায় কিছুই আসছেনা। দিয়ার ফোন কলে সব চিন্তার অবসান হলো।
:-কী করছো?(দিয়া)
:-মাএ ঘুম থেকে ওঠলাম।তুমি?(আমি)
:-আমি আরো আগেই ওঠেছি।৯টার দিকে বাসার সামনে এসো তোমাকে নিয়ে একজায়গায় যাবো।
:-আচ্ছা।
:-আসার সময় একটা পান্জাবি পড়ে এসো।
:-পান্জাবি কেনো?
:-পড়ে আসতে বলেছি আসবে ব্যাস।
:-আচ্ছা আসবো।
:-এই লক্ষি ছেলে। এখন ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও।
:-ওকে বাই।
:-বাই
বিছানা ছেড়ে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।নিজের কিছু কাজ করতে করতে ৮:৩০ বেজে গেলো।এরপর ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে রওনা দিলাম।
দিয়াদের গেটের সামনে গিয়ে ফোন দিলাম।
:-কই তুমি?(আমি)
:-এইতো বেরোচ্ছি তুমি কোথায়।(দিয়া)
:-তোমাদের গেটের সামনে।
:-ভিতরে আসো।
:-না এখন ভিতরে যাবোনা তুমি তাড়াতাড়ি বের হও।
:-৩ মিনিট ওয়েট করো আমি আসছি।
দিয়া ঠিক তিন মিনিটের মাথায় আসলো।দিয়াকে দেখে আমার চোখ কপালে।লাল শাড়ি পড়েছে,কানে দুল,চোখে কাজল।এক কথায় পরীর মত লাগছে।
:-মুখ বন্ধ করো নাহলে মুখে মাছি ঢুকবে।(দিয়া)
:-মাছি ঢুকলে খেয়ে ফেলবো।(আমি)
:-হি হি হি।তুমি পারোও বটে।একটা রিক্সা ঠিক করো।
আমি একটা রিক্সা ঠিক করে তাতে দুজন ওঠে বসলাম।দিয়ার চুল হালকা বাতাসে উড়ে এসে আমার মুখে পড়ছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি।হঠাৎ ছোট ভাইয়ের কথা মনে হতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কিভাবে টাকা জোগার করবো।দিয়াকে কী বলবো?না থাক।দিয়াকে বললে ও কি ভাববে।
:-কী ভাবছো এত?(দিয়া)
:-কিছুনা।(আমি)
:-আমার কাছে কিছু লুকাবেনা বললাম।
:-বললামতো কিছুনা।
:-আমার কসম।
কী আর করার বাধ্য হয়ে বলতে হলো।
:-বাড়িতে কিছু টাকা পাঠাতে হবে।
:-কত টাকা?
:-১০০০.
দিয়া ওর ব্যাগ থেকে দুইটা ১ হাজার টাকার নোট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
:-আমি তোমার কাছ থেকে টাকা নিতে পারবোনা।(আমি)
:-কেনো?(দিয়া)
:-এমনিতেই।
:-না নিলে আমি কিন্তু টাকাগুলো ছিড়ে ফেলবো।
:-ঠিক আছে দাও।তবে ধার নিলাম।আমার কাছে টাকা হলে পরে দিয়ে দিবো।
:-ঠিক আছে দিও।তোমার কাধে মাথা রাখি?
:-অনুমতি নেওয়ার কী আছে।
দিয়াকে পেয়ে সত্যিই আমি ভাগ্যবান।এভাবেই চলবে আমাদের ভালোবাসার অধ্যয়।
**সমাপ্ত**
āĻাāϞো āϞাāĻāϞো
āĻāϤ্āϤāϰāĻŽুāĻুāύ