āϏোāĻŽāĻŦাāϰ, ⧧⧝ āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4234

কাছে আসার গল্প
লেখক:-Hosain Ahmed(আমি হিমু)
--
রাত ১২টা।
আমার জন্যে এমন কোন রাত না—বলা যেতে পারে রজনীর শুরু। The night has only started. কিন্তু ঢাকা শহরের মানুষগুলি আমার মত না। রাত ১২টা তাদের কাছে অনেক রাত। বেশির ভাগ মানুষই শুয়ে পড়েছে। যাদের সামনে SSC, HSC বা এ জাতীয় পরীক্ষা তারা বই সামনে নিয়ে ঝিমুচ্ছে। নব বিবাহিতদের কথা আলাদা—তারা জেগে আছে। একে অন্যকে নানান ভঙ্গিমায় অভিভূত করার চেষ্টা করছে।
আমি হাঁটছি। বলা যেতে পারে হন হন করে হাঁটছি।তবে আমার হন হন করে হাঁটার পেছনে একটা কারণ আছে। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। কিছু হোটেল-রেস্টুরেন্ট এখনো খোলা। কড়কড়া ভাত, টক হয়ে যাওয়া বিরিয়ানী হয়তবা পাওয়া যাবে। তবে খেতে হবে নগদ পয়সায়। নিশিরাতের খদ্দেরকে কোন হোটেলেওয়ালা বিনা পয়সায় খাওয়ায় না(উপরের অংশটুকু হুমায়ন আহম্মদের উপন্যাস থেকে নেওয়া)। আমি হুসাইন।অনার্স ১ম বর্ষের ছাএ।আজ হোষ্টেলে রান্না হয়নি।রান্না না হবারই কথা -কারণ ঈদের আগের দিন তেমন কেউ হোষ্টেলে থাকেনা।আমরা মাএ ৩ জন আছি।২ জন এতিম।ওদের যাওয়ার মত জায়গা নেই তাই হোষ্টেলেই থেকে গিয়েছে।আপনারা ভাবছেন আমি কেনো বাড়িতে যায়নি?আমার বাবা আছে কিন্তু মা নেই।আমি যখন ৯ম শ্রেণীতে পড়ি তখন আমার আম্মু মারা যায়।এরপর আব্বু আরেকটা বিয়ে করে।সৎ মা আমাকে একটুও দেখতে পারেনা তাই বাসায় যাইনা।আব্বু মাঝে মাঝে ফোন করে খোঁজখবর নেয়।আর প্রতি মাসে আমার খরচ বাবদ টাকা পাঠায়।হোষ্টেলের খালা ছুঁটিতে গেছে তাই সবাইকে বাইরেই খেতে হচ্ছে। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে তাই বলে রাত বারোটার সময় কেনো খেতে হবে তাইনা?আসলে হয়েছে কী ভাবলাম যদি বেশি রাত করে খেতে যাই তাহলে সকালে না খেলেও হবে।যেসব ছাএছাএী হোষ্টেল বা মেসে থাকে তাদের খুব হিসেব নিকেস করে চলতে হয়।কারণ বাড়ি থেকে মাসের প্রথমে একবারই টাকা দেয়।
ফোনের শব্দে পকেট ভারি হয়ে ওঠলো।এতরাতে ইশিতা ছাড়া আর কেউ ফোন দেয়না।মেয়েটার সাথে মাএ ১১ দিনের সম্পর্ক।এই ১১ দিনেই আমাকে অনেক আপন করে নিয়েছে।আমার মত অগোছালো ছেলেকে কেনো ও পছন্দ করলো সেটা আমার এই ছোট মাথায় এখনো আনতে পারিনি। পকেট থেকে ফোন বের করে রিচিভ করলাম-
:-কী করো?(ইশিতা)
:-রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছি।(আমি)
:-কী???তুমি না সন্ধায় বললে খেয়েছো?
ও শিট!ধ্যাত ধরা খেয়ে গেলাম।ভালো করে মিথ্যা বলা শিখতে হবে।কেউ যদি মিথ্যা বলার সঠিক প্রশিক্ষণ দিতো তাহলে ওখানকার প্রথম ছাএ আমি হতাম।কারণ প্রায় সময় ইশিতাকে মিথ্যা বলতে হয়।
:-আরে খেয়েছিলাম।আবার খুদা পেয়েছে তাই খেতে যাচ্ছি।
:-তাই বলো।আমার বাসার সামনে আসতে পারবে?
:-এতরাতে?
:-তাতে কী হয়েছে।আসোনা একটু।
:-খেয়ে তারপর আসছি।
:-না এখনি আসো।
:-ওকে
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো।আমি কেনো জানি ইশিতার কোন কথায় না করতে পারিনা।আমার কেনো জানি মনে হয়ে মেয়েটার সব কথায় জাদু মাখানো আছে-তা নাহলে ওর কোন কথায় না করতে পারিনা কেনো।আবার পিছন দিকে হাঁটা শুরু করলাম।ইশিতাদের বাসা বেশি দুরে নয়।১৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম।আমি গিয়ে দেখি ইশিতা গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।সম্ভবত দাড়োয়ান বেটা ঘুমোচ্ছে। ইশিতার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও হাল্কা সেঁজেছে।রাতের বেলায় সাঁজতে হবে কেনো এটা মাথায় ঢুকছেনা।চাঁদের আলোয় ইশিতাকে অনেক সুন্দর লাগছে এখন  কোন পরীর সাথে তুলনা করলে কোন ভুল হবেনা।না থাক পরীদের সাথে তুলনা করবোনা।পরীদের পাখনা থাকে কিন্তু ওর পাখনা নেই তাই তুলনা বাদ।সব মেয়ের বিএফই সুযোগ পেলে তাদের জিএফ এর হাজারটা প্রশংসা করে।আমার কেনো জানি ইশিতার রুপের কোন প্রশংসা করতে ইচ্ছা করেনা।
:-এত রাতে ডাকলে যে?(আমি)
:-কেনো ভয় পেয়েছো নাকি?(ইশিতা)
:-তুমি কোন ভুত না পেত্নী যে তোমাকে ভয় পাবো?
:-পেতেও পারো।
:-না পায়নি।
:-আচ্ছা বাদ দাও।এইটা হোষ্টেলে নিয়ে গিয়ে খেয়ে নিও।(একটা টিফিন বাটি)
:-কী আছে এর মধ্যে?
:-বিরিয়ানী।আম্মু আজ বিরিয়ানী রান্না করেছিলো।আমি সন্ধায় খায়নি তাই আমার জন্য রেখে দিয়েছিলো।
:-তোমার খাবার আমাকে দিচ্ছো তুমি খাবে কী?
:-আমি সন্ধার আগে খেয়েছিলাম এখন আর খাবোনা।আর যদি খিদে লেগেও থাকে তাহলে ফ্রিজ থেকে কিছু খেয়ে নিবো।
আমি কোনকিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছিনা।এক দৃষ্টিতে ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছি।
:-তোমাকে কিন্তু খাবার ফ্রিতে দিচ্ছিনা।এখন হোটেল থেকে খেলে তোমার যে টাকা খরচ হতো সেটা বাঁচিয়ে দিলাম।বিনিময়ে আমাকে কিছু দিবেনা সেটাতো হতে পারেনা।(ইশিতা)
বলে কী এই মেয়ে। ভালবাসার মানুষকে কিছু দিচ্ছে আবার তার প্রতিদানও চাচ্ছে।
:-কী চাও?(আমি)
:-এখন ভালোবেসে আমাকে একবার জরিয়ে ধরলেই হবে।
কী অদ্ভুদ আবদার।এরকম কোন আবদার কোন মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে করে বলে মনে হয়না।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ইশিতা আবার বললো
:-কীহলো ধরবেনা?
আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম।ইশিতা আমার বুকের মাঝে চলে এলো।অদ্ভুদ এক অনুভতি আমার শরীলে ঢেও খেলে গেলো।ইশিতার নিঃশাসের শব্দ আমি অনুভব করতে পারছিলাম।প্রথম কাউকে এভাবে জরিয়ে ধরায় আমার কেমন জানি লাগছিলো।
""'ইশিতা,ইশিতা""''
বাড়ির ভিতর থেকে মহিলা কন্ঠ ভেসে আসলো।সম্ভবত ইশিতার আম্মু।ইশিতা আমাকে ছেড়ে দিলো।
:-আম্মু ডাকছে আমি যাই।হোষ্টেলে গিয়ে খেয়ে তারপর আমাকে ফোন দিও (ইশিতা)
ইশিতা আমার উওরের অপেক্ষা না করে ভিতরে চলে গেলো।কিছু কিছু সময় সবকিছুর উওর না জানলেও চলে।আমি হোষ্টেলের দিকে হাঁটা শুরু করলাম।রাস্তা এখন প্রায় জনশূন্য। মাঝে মাঝে দুএকটা গাড়ি চলাচল করছে।হোষ্টেলে এসে টিফিন ক্যারিয়ার খুলে খাওয়া শুরু করলাম।একটু খেতেই আম্মুর রান্না করা বিরিয়ানির কথা মনে পড়ে গেলো।আম্মুর হাতের বিরিয়ানি আমার খুব ভালো লাগতো।আম্মু আমাকে সবসময় নিজ হাতে খাওয়ায়ে দিতো।চোখ দিয়ে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।আমাদের জীবনে কিছু মানুষ থাকে যাদের কথা মনে পড়তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।খাওয়া শেষ করে ইশিতাকে ফোন দিলাম।প্রথমবার রিং হতেই রিচিভ হলো সম্ভবত আমার ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলো।এতরাতে কেউ আমার জন্য জেগে থাকে এটা মনে হতেই অনেকটা ভালো লাগা কাজ করে।
:-খেয়েছো?(ইশিতা)
:-হ্যা।(আমি)
:-কী করো এখন?
:-বসে আছি।জানো আজ আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।আম্মুকে খুব মিস করছি।
:-এই দেখো তুমি কিন্তু এখন একদম কাঁদবেনা।
আপনারা ভাবছেন ইশিতা হঠাৎ করে কান্নার কথা কেনো বলছে?আসলে আম্মুর কথা মনে পড়লেই আমি অনেক কান্না করি ইশিতা সেটা জানে তাই আমাকে কথাটা বললো।এই পৃথিবীতে যার আম্মু নেই একমাএ সেই বোঝে আম্মুর গুরুত্ব।
:-একটা গান শুনাবে?(আমি)
:-আচ্ছা শুনাচ্ছি।তুমি শুয়ে ফোন কানের কাছে ধরো আমি গান বলে তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।
আমি ইশিতার কথা মত শুয়ে পড়লাম।আম্মু যখন ছিলো তখন আমার মন খারাপ কিংবা অসুস্থ থাকতাম আম্মু তখন আমাকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো।এর আগে ইশিতাও একদিন গান বলে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলো।ওর কন্ঠটা খুব সুন্দর।
:-গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়বে বুঝেছো?(ইশিতা)
:-আচ্ছা(আমি)
:-ভালোবাসি বড় ভালোবাসি এর বেশি ভালোবাসা ভালোবাসা যায়না ও আমার প্রান পাখি ময়না-----------
ওপাশ থেকে সুন্দর কন্ঠে গান ভেষে আসছে।আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছি।

টিং টিং টিং
ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ৬টা বাজে।রাতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম জানিনা।ফোন হাতে নিয়ে কিছুটা অবাক হলাম।আব্বু ফোন দিয়েছে।আব্বু সাধারণত এত সকালে ফোন দেয়না
:-আসসালামু আলাইকুম(আমি)
:-ওয়াইকুমআসসালাম।কেমন আছিস?(আব্বু)
:-এইতো ভালো।তোমার শরীল কেমন?
:-ভালো।ঈদে বাড়িতে আসলিনা?
:-বাড়িতে গিয়ে অযথা তোমাদের ঝামেলা বাড়াতে চাইনা।এখানে থাকতে আমার কোন সমস্যা হচ্ছেনা।
:-নিজের বাড়িতে আসবি তাতে সমস্যা হবার কি আছে?
:-এই বিষয়টা বাদ দাও।আম্মুরা সবাই কেমন আছে?নিলয় কেমন আছে?(আমার সৎ মায়ের ছেলে)
:-সবাই ভালো আছে। আজ বাড়িতে চলে আয়।
:-না আব্বু।আমি চাইনা ছোট মা তোমার উপর রাগ দেখাক।আমি এখন ওঠে ফ্রেশ হবো।পরে ফোন দিও।
:-আচ্ছা।
আমার এখন অনেক খারাপ লাগছে তাই মিথ্যা বাহানা দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।আগে ঈদের দিনে কত মজা করতাম।আম্মুর হাতের সেমাই খেতাম।আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে আম্মুর কাছে চলে যাই।মাঝে মাঝে এই পৃথিবীটা খুব অসহ্য লাগে।
বাইরে থেকে দরজায় কেউ শব্দ করছে।চোখ মুছে বিছানা থেকে ওঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।বাইরে প্যাকেট হাতে ইশিতার ছোট ভাই দাঁড়িয়ে আছে।
:-আরে রিহান তুমি এত সকালে।(আমি)
:-আপু আমাকে এই জিনিসগুলো দিয়ে পাঠালো আপনাকে দেওয়ার জন্য।(রিহান)
:-ভিতরে আসো।
:-আমার আরো কাজ আছে।আপনি এগুলো রাখুন আমি চলে যাবো।
:-তোমার যেহেতু কাজ আছে সেহেতু আটকাবোনা।তবে পরে আবার কিন্তু এসো।
:-আচ্ছা আসবো।
রিহান আমার হাতে প্যাকেটগুলো ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।ইশিতার ভাইটা অনেক কিউট।বয়স ১১ কী ১২ হবে।আমি যদি মেয়ে হতাম তাহলে এই ছেলের সাথেই রিলেশন করতাম কিন্তু আফসুস।
রুমের মধ্যে গিয়ে প্যাকেটগুলো খুললাম।একটাতে পানজাবি।পানজাবিটা অনেক সুন্দর।আরেকটা প্যাকেট খুলে দেখলাম সেটাতে শার্ট আর প্যান্ট।সবকিছু দেখা শেষ হলে আমি ইশিতাকে ফোন দিলাম।প্রথমবার ধরলো না পরেরবার ধরলো
:-এসব পাঠানোর দরকার কী ছিলো?(আমি)
:-আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই পাঠিয়েছি।কেনো তোমার পছন্দ হয়নি?(ইশিতা)
:-পছন্দ হবেনা কেনো।হয়েছে।এতকিছু না পাঠালেও পারতে।
:-আমার ছোট্র বরটার জন্য ঈদে কিছু না দিলে হয়।ঈদের নামাজ পড়ে লেকের ধারে চলে এসো।আমরা যেখানে সবসময় দেখা করি।আসার সময় পানজাবি পড়ে এসো।আম্মুর সাথে কাজ করছি পরে কথা বলবো।
:-আচ্ছা।
ফোন রেখে দিলাম।নিজেকে এখন ছোট ছোট লাগছে।ইশিতা আমাকে ঈদের গিফট করলো অথচ আমি ওকে কিছুই দিতে পারলাম না।মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো।
ঈদের নামাজ পড়ে লেকের ধারে চলে গেলাম।আমার মত অনেক মানুষই এখানে বেড়াতে এসেছে।সবার পড়নেই আজ নতুন পোশাক।আজকের দিনে প্রায় সবাই তাদের পরিবারের লোকজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।কেবলমাএ আমার মত কিছু অভাগা মনে কষ্ট নিয়ে পরিবার থেকে দুরে আছে।আমার মনে হয় এই পৃথিবীতে যার মা নেই সে সবথেকে অসহায় মানুষ।আমার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।পিছন ফিরে দেখি এক পরী দাড়িয়ে আছে। লাল শাড়িতে মেয়েটাকে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগছে।
:-এভাবে কি দেখো?আমার বুঝি লজ্জা লাগেনা।(আমার পাশে বসতে বসতে বললো ইশিতা)
--তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি
আমার অজান্তেই মুখ থেকে কথাটা বের হয়ে গেলো।আমার কথা শুনে ইশিতা মনে হয় অনেক লজ্জা পেলো।মেয়েরা লজ্জা পেলে আরো বেশি সুন্দর লাগে সেটা আগে শুধু শুনেছি আর আজ সেটা দেখার সৌভাগ্য হলো।
:-সকালে কিছু খেয়েছিলে?(ইশিতা)
:-না।(আমি)
ইশিতা ওর কাছে থাকা ব্যাগ থেকে ২টা বাটি বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলো।আমি হাত বাড়িয়ে নিলাম।
:-কী এগুলো?(আমি)
:-একটাতে ডিম ভাত আরেকটাতে সেমাই।(ইশিতা)
:-আচ্ছা ইশিতা তুমি আমাকে এত ভালোবাসো কেনো?
:-এই প্রশ্নটার উওর বাসর রাতে পাবে।
:-বাসর রাতে কেনো?
:-এতদিন ধরে ভাববো তারপর বলবো।হি হি হি হি
ইশিতা হাসতে শুরু করলো।সুন্দরী মেয়েরা হাসলে সব সময়ই সুন্দর লাগে।আর সেটা যদি হয় ভালোবাসার মানুষ তাহলেতো কথাই নেই।আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।ইশিতা হাসি থামিয়ে বললো
:-কীহলো খাওয়া শুরু করো।
:-তুমি খাওয়ায়ে দাও।
:-আচ্ছা দিচ্ছি।
ইশিতা আমার হাত থেকে বাটি নিয়ে নিজ হাতে আমকে খাওয়ায়ে দেওয়া শুরু করলো।ইশিতা আমাকে খাওয়ায়ে দিচ্ছে আর আমি এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
খাওয়া শেষ হলে
:-আজ বাসায় অনেক মেহমান আসবে আমাকে যেতে হবে।(ইশিতা)
:-আরেকটু থাকলে হয়না?(আমি)
:-রাগ করোনা লক্ষিটি।কাল সারাদিন তোমায় নিয়ে ঘুরবো।এখন যাই।
:-আচ্ছা।
দুজন একসাথে ওঠে রাস্তায় এলাম।ইশিতাকে একটা রিক্সা ঠিক করে দিলাম। ইশিতা চলে গেলো।আমিও আরেকটা রিক্সা ঠিক করে হোষ্টেলের দিকে রওনা দিলাম।

হোষ্টেলে আসার পর একটু ক্লান্ত লাগছিলো তাই ঘুম দিলাম।ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।ফোনের স্কিনে তাঁকিয়ে দেখি অপরিচিত নম্বর।আমার কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলে কেমন জানি বিরক্ত লাগে।এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে ফোন রিচিভ করলাম।
:-হুসাইন ভাইয়া আমি রিহান।আপু এক্সিডেন্ট করছে আপনি তাড়াতাড়ি ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে চলে আসুন।
ওপাশ থেকে ফোন কল কেটে গেলো।আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।ইশিতা এক্সিডেন্ট করতে পারে এটা বিশ্বাস হচ্ছেনা।নিজের গায়ে নিজেই চিমটি কাঁটলাম।না আমি বাস্তবেই আছি।তাড়াতাড়ি ওঠে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।এখন আমার গন্তব্য মেডিকেল কলেজ।সারাপথ একপ্রকার ভয় মনের মধ্যে কাজ করলো।ইশিতার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবোনা।আমার এখন একমাএ বেঁচে থাকার অবলম্বন ও।
মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগের সামনে গিয়ে দেখি ইশিতার পরিবারের সবাই আছে।ইশিতা ওর পরিবারের সবার ছবি একদিন আমাকে দেখিয়েছিলো।।আমাকে দেখে রিহান এগিয়ে আসলো।আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।
:-কী করে এমন হলো?(আমি)
:-আপু কোথায় যেনো ঘুরতে গিয়েছিলো। বাসার সামনে এসে রিক্সা থেকে নামার জন্য দাঁড়িয়েছে তখনি পিছন থেকে একটা বাস এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়।আমার ছোট ফুপি তখন ছাঁদে ছিলো উনিই প্রথম দেখেন।রিক্সাওয়ালা ওখানেই মারা গেছে।
কথাগুলো বলে রিহান আরো বেশি কান্না শুরু করলো।আমি ওকে কী বলে শান্তনা দিবো ভেবে পাচ্ছিনা-কারণ আমি নিজেইতো কাঁদছি।সব দোষ আমার।আমার সাথে দেখা করতে গিয়েই ইশিতার এমন হলো।ইশিতার আম্মু বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।ইশিতা সব সময় বলতো -আমার আম্মু আমাকে পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভালোবাসে।আমি যদি মরে যায় তাহলে মনে হয় আমার আম্মু হার্টস্টক করে মারা যাবে।আমি সেদিন ইশিতার মুখে হাত দিয়ে বলেছিলাম এমন কিছু হবেনা।আজ ইশিতার কথা হয়তো সত্য হতে চলেছে।ভিতর থেকে ডাক্তারকে বের হতে দেখে সবাই এগিয়ে গেলো।আমি আর রিহান দুজনেই গেলাম।
:-২৪ ঘন্টা না গেলে আমরা কিছু বলতে পারছিনা।মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগেছে।(ডাক্তার)
:-যত টাকা লাগে আমি দিবো আপনি আমার মেয়েকে বাঁচান।(ইশিতার আব্বু)
:-আল্লাহকে ডাকুন আর বাকিটা আমরা চেষ্টা করছি।
ডাক্তার আবার ভিতরে চলে গেলো।
আমি আর রিহার একটা বেন্চে বসলাম।রিহান এখনো কাঁদছে।আমিও কাঁদছি কিন্তু আমার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছেনা।মনে মনে আল্লাহর কাছে ইশিতার জন্য প্রার্থনা করছি।আম্মু চলে যাওয়ার পর থেকে অনেক কেঁদেছি।ইশিতাই আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছিলো।সন্ধায় হোষ্টেলে ফিরে এলাম।রাতে ওখানে থাকা ঠিক হবেনা।ইশিতার পরিবারের লোকজন খারাপ কিছু ভাবতে পারে।একটা মেয়ের পাশে অপরিচিত ছেলেকে বেশিক্ষণ দেখলে সন্দেহ করারই কথা।হোষ্টেলে এসে আমার একটুও ভালো লাগছেনা।বারবার ইশিতার কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছা করছে।-হে আল্লাহ আমি যাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাইলাম তাঁকে কেনো কেড়ে নিচ্ছো।আম্মুকে হারিয়ে এমনিতেই আধমরা হয়ে গেছি এখন যদি ইশিতাকেও কেড়ে নেও তাহলে কীভাবে বাঁচবো আমি।আমার ইশিতাকে ভালো করে দাও।কাঁন্না করছি আর মনে মনে এসব বলছি।ইশিতা অল কয়েকদিনে আমার মনে এতটা জায়গা করে নিবে আমি ভাবতেই পারিনি। আল্লাহ মেয়েদের অচেনা মানুষকে খুব সহজেই আপন করে নেওয়ার শক্তি দান করেছেন।সারারাত ঘুমোতে পারলাম না।শেষ রাতে রিহানের নম্বর থেকে ফোন আসলো
:- ভাইয়া আপুর জ্ঞান ফিরেছে।(রিহান)
:-আলহামদুলিল্লাহ। আমি ৮ টার দিকে যাবো।(আমি)
:-আচ্ছা।
ফোন রেখে মনের মধ্যে একপ্রকার শান্তি অনুভব করলাম।এটা কাছের মানুষকে ফিরে পাওয়ার শান্তি।আল্লাহর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া জানালাম।
৮টার সময় মেডিকেলে গেলাম।ইশিতা সবার সাথে কথা বলছে।আমাকে দেখে শুকনো হাসি দিলো।আমি রুমে ঢুকার পরপরই ডাক্তার আসলো।
:-পেশেন্টের বাবা কে?(ডাক্তার)
:-জ্বি আমি।(ইশিতার বাবা)
:-আপনি বাইরে আসুন।
ইশিতার বাবা বাইরে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসলো মলিন মুখে।
:-কী হয়েছে আপনাকে এমন লাগছে কেনো?(ইশিতার আম্মু)
:-কই কিছু নাতো।একটু মাথা ব্যথা করছে(ইশিতার আব্বু)
:-তাহলে আপনি এখন বাসায় গিয়ে রেষ্ট নেন আমরা আছি।
:-তাহলে তোমরা থাকো আমি গেলাম।
ইশিতার আব্বু চলে গেলেন।
:-তুমি কে হও ইশিতার?
এক মহিলা আমাকে জিঙ্গেস করলো।আমার উওরের আগেই রিহান উওর দিলো
:-আপুর বেষ্ট ফ্রেন্ড।(রিহান)
:-আমি ইশিতার ছোট ফুপি।তুমিতো কালকেও এসেছিলে তাইনা(ওই মহিলা)
:-জ্বি(আমি)
ইশিতার ফুপি আর কিছু বললো না।আমিও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।অপরিচিত কারো সাথে বেশি কথা বলা ঠিক না।ইশিতার দিকে তাঁকিয়ে দেখি ও আমার দিকে একদৃৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।ওর চোখ আমাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে।
আমি ১১টা পর্যন্ত থেকে হোষ্টেলে চলে এলাম।বিকেলে শুনলাম ইশিতাকে বাসায় নিয়ে গেছে তাই আর মেডিকেলে যাওয়া হলোনা।এরপর ১ দিন ইশিতার সাথে কোন যোগাযোগ হলোনা।হয়তো আমাকে ফোন দেওয়ার কোন সুযোগ পায়নি।আমিও বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিলাম।পরেরদিন রাত ১০:২৭ মিনিটে ইশিতার নম্বর থেকে ফোন আসলো
:-আমার বাসার সামনে এসো।
কথাটা বলা মাএই ইশিতা ফোন কেটে দিলো।আমি ফোন ব্যাক করলাম কিন্তু বন্ধ।আরকিছু না ভেবে ইশিতাদের বাসার সামনে গেলাম।গিয়ে দেখি মহারাণী দাঁড়িয়ে আছে।মুখটা একদম মলিন করে রেখেছে।
:-ফোন অফ কেনো?(আমি)
:-আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই রেখেছি।(ইশিতা)
:-এভাবে কথা বলছো কেনো?
:-তো কীভাবে কথা বলবো?তোমার মত একটা ফকিরের সাথে এভাবে কথা বলাই উচিত।কী দিয়েছো তুমি আমাকে?কখনো কোনকিছু গিফট করেছো?আমি তোমাকে ঈদে কতকিছু গিফট করলাম অথচ তুমি কিছুই দিলেনা।তুমি আমার যোগ্য নও সেটা আগে বুঝিনি।
:-এখন বুঝেছো তাইনা?
:-হ্যাঁ বুঝেছি।আর বুঝেছি বলেই আমি ব্রেকআপ করতে চাচ্ছি।
ব্রেকআপ শব্দটা শুনে বুকের ভিতর মোচর দিয়ে ওঠলো।
:-ইশিতা তুমি ঠিক আছো?
:-আমি ঠিক আছি।এতদিন অন্ধ ছিলাম।আজ থেকে তুমি আর আমার সাথে যোগাযোগ করবেনা।আমাকে যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকো তাহলে আমাকে কোনরকম বিরক্ত করবেনা।আর যদি ফোন দিয়ে বিরক্ত করো তাহলে বুঝবো তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসোনি।
ইশিতা গেট দিয়ে বাসার মধ্যে ঢুকে গেলো।আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে।মনে হচ্ছে আমি কোন খারাপ স্বপ্ন দেখছি এখনি ঘুম ভেঙ্গে যাবে।কিন্তুনা আমি বাস্তবেই আছি।কী হতে কী হয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না।খুব দ্রুত হোষ্টেলে চলে এলাম।হোষ্টেলে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম।ইশিতা কী বললো আবার মনে করার চেষ্টা করছি।ইশিতা আমার সাথে এমন করবে আমি ভাবতে পারিনি।আজ নিজেকে সবথেকে বেশি অসহায় লাগছে।
আজ সবথেকে বেশি কান্না পাচ্ছে আম্মু তুমি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও আমি আর এই পৃথিবীতে থাকতে চাইনা।পৃথিবীর মানুষগুলো খুব স্বার্থপর।নিজের স্বার্থের জন্য তাঁরা সবকিছু করতে পারে।আমি আর বাঁচতে চাইনা।ইশিতা যদি আমাকে ছাড়া ভালো থাকে তাহলে আমি ওকে আর বিরক্ত করবোনা।আমি চাই ও সুখে থাকুক।ইশিতার নম্বরে ছোট্র করে একটা মেসেজ দিলাম -ভালো থেকো আমি আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করবোনা।মেসেজ দিয়ে ফোন থেকে সিম বের করে ভেঙ্গে ফেললাম।নতুন আরেকটা সিম ওপেন করলাম-এই নম্বরটা কয়েকজন ফ্রেন্ড ছারা আর কেউ জানেনা। ।নানুর কাছে ফোন দিলাম
:-নানু আমি হুসাইন। তোমাদের বাড়িতে আসছি।(আমি)
:-আয় অনেকদিন হলো তোকে দেখিনা।(নানু)
:-সকালে রওনা দিবো।
:-তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেনো?কিছু হয়েছে?
:-আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।
:-কাঁদিস না।একদিন না একদিনতো সবাইকেই যেতে হবে।
:-নানু এখন ভালো লাগছেনা পরে ফোন দিবো।
:-ওকে।আর সকালে বের হয়ে আমাকে একটা ফোন দিস।
:-আচ্ছা।
আমি আর ঢাকার শহরে থাকবো না।আমার নানু বাড়ি চট্টগ্রাম চলে যাবো।ওখানে গিয়ে নানুকে বলে চট্টগ্রামে ট্রান্সফার হয়ে যাবো।রাতে সবকিছু গুছিয়ে রাখলাম।সারারাত অনেক কাঁদলাম।মানুষের যখন একমাএ বেঁচে থাকার অবলম্বও হারিয়ে যায় তখন বেঁচে থাকার সব ইচ্ছাই হারিয়ে যায়।একদম সকালে যে বাস সেই বাসে রওনা দিলাম।বাসে ওঠার আগে নানুকে একটা ফোন দিয়েছিলাম।আব্বুকে এখনো জানায়নি আমি নানু বাড়িতে যাচ্ছি।নানু বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলো।নানি নেই।মামা মামি সবাই আমাকে দেখে খুশি হলেন।
:-এতদিন পর আমাদের কথা মনে পড়লো তাহলে।(মামি)
:-মনে পড়লো বলেইতো চলে এলাম।(আমি)
:-এখন যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
আমি মামির কাছ ব্যাগ দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে নানুর রুমে গেলাম।
:-এসে গেছিস।(নানু)
:- হুম।তোমার শরীল এখন কেমন আছে?(আমি)
:-ভালো।কতদিন থাকবি?
:-সারাজীবন । থাকতে দেবে?
:-দেবোনা কেনো অব্যশই দিবো।এটাতো তোরও বাড়ি।
:-ফ্রেশ হয়ে এখানে এসেছিস আর আমি তোর জন্য টেবিলে বসে আছি।আয় খেয়ে তারপর গল্প করিস।(মামি)
:-তুমি যাও আমি আসছি।(আমি)
:-যা আগে খেয়ে আয়।(নানু)
:-আচ্ছা।
খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি মামি বসে আছে।আমিও গিয়ে বসলাম।খাওয়া শেষ করে নানুর রুমে আসলাম।নানুর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে আমার চলে গেলাম।আমার রুম বলতে যে রুমে আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।ইশিতার কথা খুব মনে পড়ছে।মানুষ যখন একা থাকে তখন তাঁর কষ্টের কথাগুলো বেশি মনে পড়ে।আমারো তাই হচ্ছে।নানু বাড়িতে আমার সমবয়সী কেউ নেই।মামার একটা ছেলে বয়স ৫ বছর।
অনেক পথ জার্নি করে আসায় অনেক ক্লান্ত লাগছে।বিছানায় শুতেই চোখে ঘুম নেমে আসলো।
২ দিন পর।
বিকেলে রুমে বসে আছি এমন সময় অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলো।রিচিভ করলাম
:-হ্যালো কে বলছেন?(আমি)
:-আমি রিহান(রিহান)
:-তুমি আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলে?
:-অনেক কষ্ট করে আপনার এক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে নিয়েছি।আপু আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো।
:-ও আত্মহত্যা করলো তাতে আমার কী।আমি ওকে আর ভালোবাসিনা।
:-আমার কথা আগে শুনুন।সেদিনের এক্সিডেন্টের পর আপু মা হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।সেটা আব্বু গোপন রেখেছিলো কিন্তু কেমন করে যেনো আপু জানতে পারে তারপর নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো।আম্মু আপুর রুমে গিয়ে দেখে আপু মেঝেতে পড়ে আছে।হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে। তারপর তাড়াতাড়ি আপুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।পরপর দুইটা এক্সিডেন্ট আপুকে একদম দুর্বল করে দিয়েছে।আপু বাড়িতে আসার পর কিছুই খাচ্ছেনা।এক ফোটা পানিও মুখে দিচ্ছেনা।
আমি কী বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।তার মানে আমার ভালোর জন্য ইশিতা এসব বলেছিলো।
:-ভাইয়া আপনি প্লিজ আসেন।আপনি এখন যদি আপুর পাশে না থাকেন তাহলে আপু মরে যাবে।
:-আমি আসছি।
ফোন রেখে দিলাম।আমাকে এখন যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা পৌঁছাতে হবে।নানুর রুমে গেলাম।
:-নানু আমি চলে যাচ্ছি।(আমি)
:-আরো কয়েকদিন থাক তারপর যাস।(নানু)
:-আমাকে এখনি যেতে হবে।
:-আজকের দিনটা থেকে যা।
:-না।সকালের মধ্যে ঢাকা পৌঁছাতে হবে।
:-যেতে যখন চাইছিস তখন আর জোর করবোনা।তবে আবার কয়েকদিন পর আসিছ।
নানুর রুম থেকে এসে এসে রেডি হয়ে নিলাম।মামা মামির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।মামা আসতে দিতে চাইছিলো না কিন্তু আমি জোর করে চলে এসেছি। বাসের জন্য অনেকক্ষণ হলো অপেক্ষা করছি কিন্তু বাস আসছেনা।আরো অনেকক্ষণ পর বাস আসলো।আমার সিট জানালার কাছে পড়েছে।বাস ভ্রমন সব সময় আমার কাছে অনেক ভালো লাগে কিন্তু আজ অসস্থি লাগছে।মাথায় যখন টেনশন থাকে তখন ভালো জিনিসও খারাপ লাগে।আমার এখন পাখি হতে ইচ্ছা করছে।এক নিমিষে ইশিতার কাছে চলে যেতে ইচ্ছা করছে।বাস অনেক দ্রুত চলছে কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে অনেক আস্তে চলছে।মনে হচ্ছে আজ সবকিছু ধীর গতিতে চলছে।

সকাল ৯টা।
আমি এখন আছি সেই লেকের ধারে যেখানে আমি আর ইশিতা দেখা করি।সকালে রিহানকে ফোন করে বলেছি ইশিতাকে নিয়ে এখানে আসতে।আজকের আকাশ মেঘলা।আকাশের সাথে আমার মনের মিল আছে।আকাশের মত আমার মনও খারাপ হয়ে আছে।আজকের আবহাওয়া ঠান্ডা তবুও কেনো জানি আমি প্রচন্ড পরিমানে ঘামছি।মানুষ যখন টেনশনে থাকে তখন যদি তাঁকে বরফের মধ্যেও রাখা যায় তবুও সে ঘামবে।ওইতো রিহান আর ইশিতা আসছে।ইশিতাকে দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না।আগের ইশিতা আর আজকের ইশিতার মধ্যে অনেক তফাত।আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে।সুন্দরী মেয়েদের একটা বৈশিষ্ট্য আছে -তাঁরা যদি দুদিন ঠিক মত খাওয়া দাওয়া না করে কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তাঁদের আগের চেহারার সাথে অনেক তফাত চলে আসে।রিক্সা আমার সামনে এসে থাকলো।রিক্সা থেকে দুজনেই নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
:-আমাকে কেনো আসতে বলেছো?(ইশিতা)
:-রিহান তুমি একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসো আমরা কথা বলি।(আমি)
:-না রিহান এখানেই থাকবে যা বলার ওর সামনেই বলো।
আমি ঠাস করে ইশিতার গালে একটা থাপ্পর দিলাম।আমার থাপ্পরের আওয়াজে যেনো চারপাশের সবকিছু থেমে গেলো। ইশিতা আমার দিকে ছলছল চোখে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।ও ভাবতেই পারছেনা আমি ওকে মারতে পারি।আমি নিজেও অনেকটা অবাক এমন ব্যবহারে।কি করে থাপ্পর মারলাম নিজেও জানিনা।রিহানও অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে।থাপ্পরের আওয়াজ শুনে আশেপাশের মানুষগুলোও আমাদের দিকে তাঁকিয়ে।
:-কী ভেবেছো নিজেকে?তুমি একাই আমাকে ভালোবাসো আর আমি তোমাকে ভালোবাসিনা?আমিও তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে ভালোবাসোনা।আমাকে যদি ভালোবাসতে তাহলে এভাবে দুরে সরিয়ে দিতে না।আম্মু আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর তোমাকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি সেটা ভেঙ্গে দিলে।তুমি মা হতে না পারলে কী হবে শুনি?সন্তান না হলে কী ভালবাসা কমে যায়।আমরাতো এটাও করতে পারতাম বিয়ের পর একটা এমিতখানা থেকে ছোট একটা ছেলে কিংবা মেয়ে নিয়ে এসে নিজেদের মত করে মানুষ করতে।আমি সন্তান চাইনা শুধু তোমার ভালোবাসা চাই।তোমাকে সারাজীবন আমার পাশে চাই।(আমি)
এতটুকু বলে থামলাম।ইশিতার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।ওর চোখের পানিই বলে দিচ্ছে ও সবকিছুর জন্য অনুতপ্ত।
:-রিহান তোমাকে ওদিকে যেতে বললাম যাও।(আমি)
রিহান চলে গেলো।রিহান জানে আমি ইশিতাকে কতটা ভালবাসি তাই ওর সামনে ইশিতাকে থাপ্পর দেওয়ার পরেও কিছু বললো না।
:-আমি কারো করুণার পাএ হতে চাইনা।তুমি আমার থেকেও অনেক ভালো মেয়ে পাবে। আমাকে ভুলে যাও।(ইশিতা)
:-আমি তোমাকে মোটেও করুণা করছিনা।তোমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।সারাজীবন তোমাকে পাশে চাই(আমি)
:-কিন্তু
আমি ইশিতার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বললাম
:-তোমাকে একটু জরিয়ে ধরবো?(আমি)
আমার কথাটা বলতে দেরী হলো কিন্তু ইশিতা আমাকে বুকের মাঝে আসতে দেরী করলোনা।মেয়েরা যতই অভিমান করুক না কেনো ভালোবাসার মানুষটি যদি তাঁদের একবার বুকে টেনে নেয় তাহলে সব অভিমান তারা ভুলে যায়।আমার বুকের মাঝে এসে আরো বেশি কান্না করছে
:-এই তোমার চোখের পানিতে আমার শার্ট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।(আমি)
:-নষ্ট হচ্ছে তাতে আমার কী?(ইশিতা)
:-নষ্ট হলে তোমাকে ধুরে দিতে হবে।
:-দিবোনা।উহু
ইশিতা আমাকে ছেড়ে দিলো।ইশিতার হাতে ব্যান্ডেজ আমার খেয়াল ছিলোনা।ওর হাত চাপ লাগতেই ব্যাপা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।আমি ইশিতার হাত ধরে ব্যান্ডেজ করা জায়গায় আস্তে করে হাত বুলিয়ে দিলাম।
:-আচ্ছা আমি যদি মরে যেতাম তাহলে তোমার খুব কষ্ট হতো তাইনা?(ইশিতা)
:-আরেকবার মরার কথা বললে আমি কিন্তু চলে যাবো।(আমি)
:-আচ্ছা বলবোনা।সেদিন এক্সিডেন্টের পর ভেবেছিলাম আমি মনে হয় মরে যাবো।কিন্তু কীভাবে বেঁচে গেলাম জানিনা।এরপর যখন শুনলাম আমি মা হতে পারবোনা তখন তোমার ভালোর জন্য তোমাকে দুরে সরিয়ে দিলাম। নিজেকে শেষ করে দিতে চাইলাম তবুও বেঁচে গেলাম।
:-আমার ভালোবাসাই তোমাকে বারবার বাঁচিয়ে রেখেছে।
:-হুম
:-জানো তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে।
:-আমার বুঝি হয়নি?।
:-ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট দুর করে দিবো।
:-আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো।
:-যাবোনা।
:-বেশি সময় বাইরে থাকলে আব্বু রাগ করবে।এখন বাসায় যেতে হবে।
:-আচ্ছা।আমি রিহানকে ফোন দিচ্ছি।
রিহানকে ফোন দিলাম
:-রিহান তুমি কোথায় গেলে?তোমার আপুকে নিয়ে যাও।(আমি)
:-আমি খেলতে চলে এসেছি।আপনি দিয়ে আসেন।এখন ব্যাটিং করবো রাখেন
ওপাশ থেকে ফোন কেটে গেলো।কী ফাজিল ছেলে আমার উপর সবকিছু চাপিয়ে দিয়ে পালিয়েছে।
:-রিহান খেলতে চলে গেছে চলো আমিই তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।(আমি)
:-চলো।(ইশিতা)
একটা রিক্সা ঠিক করে দুজন তাতে ওঠে বসলাম। ইশিতা আমার কাধে মাথা রাখলো।হালকা বাতাসে ইশিতার চুল উড়ছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে সেটা দেখছি।মেয়েদের খোলা চুলে সব সময় অদ্ভুদ লাগে।আর হালকা বাতাসে যদি চুলগুলো উড়ে তাহলে তাঁদের সৌন্দর্য হাজারগুন বেড়ে যায়।আমার এখন মনে হচ্ছে কোন কবি যদি ইশিতাকে এখন দেখতো তাহলে ওকে নিয়ে হাজারটা কবিতা লিখে ফেলতো।
:-এভাবে তাঁকিয়ে কী দেখো?(ইশিতা)
:-একটা পরীকে দেখি।(আমি)
:-ওই একদম পাম দিবেনা।আমি দেখতে একটুও ভালোনা সেটা আমি জানি।(আমার কাধ থেকে মাথা তুলে)
:-সত্যিই তোমাকে একদম পরীর মত লাগছে।
:-হুম
:-কী হুম?
:-ভালোবাসি।
:-কাকে?
:-বলবোনা।
:-ঠিক আছে বলতে হবেনা।(অভিমানি শুরে বললাম)
:-ওরে বাবা আমার বাবুটা দেখি রাগও করতে জানে।
:-আমি কারো বাবু না(অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে)
:-আমার বাবুকে রাগলে এত সুন্দর লাগে আগে জানতাম নাতো।আগে জানলে প্রতিদিন রাগাতাম।
আমাদের দুজনের কথা শুনে রিক্সাওয়ালা মামা মিটমিট করে হাঁসছে।
হঠাৎ আমার গালে কারো ঠোঁটের নরম ছোয়া পেলাম।কীযে অনুভুতি বলে বোঝাতে পারবোনা।ইশিতার দিকে তাঁকিয়ে দেখি ও লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
:-আজ থেকে আমি প্রতিদিন রাগ করবো।আর তুমি এভাবে রাগ ভাঙ্গাবে।(আমি)
:-এই একদম না।আমি প্রতিদিন দিতে পারবোনা আমার লজ্জা লাগে।(ইশিতা)
এভাবেই চলবে আমাদের ভালোবাসার দিনগুলি।
-(সমাপ্ত)

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ