বই পড়ার অভ্যাস আমার ছোটবেলার। অবশ্য এর পিছনে ভূমিকা ছিল বড় ভাইয়ের। বড় ভাইয়া প্রচুর বই পড়ত আর সেখান থেকে মজার মজার গল্প আমাকে পড়ে শোনাত। কখনো আমার জন্য কিশোর উপন্যাস, গোয়েন্দা সিরিজের বই কিনে নিয়ে আসত। ক্রমে বই পড়ার আগ্রহ বেড়েই চলল। এত বই কিনে পড়া সম্ভব ছিল না তাই সময় পেলেই পাবলিক লাইব্রেরিতে বসে বসে বই পড়তাম। ওর সাথে প্রথম দেখা হয় পাবলিক লাইব্রেরিতেই!
পাঠাগারের কোনের দিকের একটা চেয়ারে বসে প্রতিদিন বিকেলে বই পড়ত কাব্য। চশমা চোখে মিষ্টি একটা মেয়ে। আমি আড়চোখে দেখতাম হুমায়ূন আহমেদ আর জহির রায়হানের বইগুলোই বেশি পড়ত। আমিও ওর পছন্দের বইগুলো পড়া শুরু করলাম। একদিন হুমায়ূন আহমেদ স্যারের 'তোমাকে' উপন্যাসটা হাতে নিয়ে দেখছি এমন সময় মেয়েটি বলল, এই উপন্যাসটা সে অনেকদিন খুঁজেছে। আমি ইতস্ততভাবে বইটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, 'তাহলে আপনিই পড়ুন।'
এভাবেই একজন আরেকজনের সাথে কথা বলা এবং পরিচিত হওয়া। কার কোন লেখকের কোন বই ভালো লাগে এই নিয়ে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কথা হতো। শার্লক হোমস, ফেলুদা, টেনিদা, অপু-দূর্ঘা, হিমু, মৃন্ময়ী, শ্রীকান্ত, মিসির আলি, বনলতা সেন, কমলাকান্ত এসব নিয়েই আলাপ চলত আমাদের মাঝে। একসময় খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।
আলাপচারিতার মাঝে একদিন আমার একটা ফোন-কল আসায় ও জিজ্ঞাসা করেছিল, কে? প্রেমিকা? আমি বলেছিলাম, 'এখনো কাউকে ভালোবাসা হয়ে ওঠেনি।" কৌশলে আমিও জেনে নিয়েছিলাম ও কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি।
জন্মদিনে একজন আরেকজনকে তার প্রিয় লেখকের বই উপহার দেওয়া। শান্ত বিকেলে নদীপাড়ে বসে বাদাম চিবানো। এলিজেবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং-এর 'হাউ ডু আই লাভ দি' কিংবা উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ-এর 'ড্যফোডিল' কবিতা আবৃত্তি করে শোনানো। এমন করে আমাদের দুজনের মাঝে 'অনুক্ত তবু অব্যক্ত নয়' এমন একটা মধুর ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল। অভিমান, দূরত্ব, মানভাঙানো, আবার কাছে আসা এমনই চলছিল।
এমন সময়ে একদিন ম্লান মুখে কাব্য আমাকে বললো, 'শহীদুল্লাহ ভাইয়াকে তো চেনোই? আমার কাজিন। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যাবার পর থেকে আমাদের বাড়িতেই । খুব চাপা স্বভাবের মানুষ। কষ্ট চেপে হাসিমুখে ঘুরে বেড়াবে কাউকে কিছু বুঝতেও দেবে না। তোমার সাথে আমাকে একদিন রিকশায় দেখেছিল, বাড়ি এসে খুব সহজভাবে হেসে আমাকে জিজ্ঞাসা করল, 'কিরে ভালোবাসিস নাকি ছেলেটাকে?' আমার সম্মতি দেখে বলল, 'লজ্জায় দেখি লাল হয়ে যাচ্ছিস। তাহলে মামাকে বলে পাকাপাকি একটা ব্যবস্থা করে ফেলি? কি বলিস? হাহাহা' ওই হাসির ভেতরের কষ্টটা তখনো বুঝতে পারিনি। আমি কি বোকা! আমাকে যে এতটা ভালোবাসে আমি কিনা তার ভালোবাসাকে স্বভাবসিদ্ধ ভেবে বসেছিলাম। ইদানীং লাইট জ্বালিয়ে সারারাত রুমের মধ্যে পায়চারি করে। রুম দিয়ে সিগারেটের ভুরভুর গন্ধ। লুকিয়ে ডায়েরিটা না পড়লে জানতেই পারতাম না আমাকে কতটা ভালোবাসে। কাব্য চোখ মুছে আবারো অনুনয় করে বলল, আমাকে ক্ষমা করে দিও!
আমি এমন একটা মানুষকে কষ্ট দিতে পারব না। আমার ওপর থেকে ভালোবাসার দাবি তুলে নাও। আমি ওই কাঠখোট্টা মানুষটাকে ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজিয়ে আর সাহিত্যের রসে ডুবিয়ে সজীব করে তুলব। ওকে আমি নিজের মতো করে গড়ে নেব। দেখো, আমরা খুব সুখী হব। আমি বললাম, আমার কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু তুমি কি আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে? কাব্য বলল, তবু যদি একজন অপূর্ণ মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করতে পারি, এই আমার বড় পাওয়া। বললাম, মুক্তি যদি না দেই? কাব্য বলল, তাহলে আমি কোথাও গিয়েও শান্তি পাব না, স্বস্তি পাব না।
ওর কথা শুনে নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হলো। নিজের স্বার্থের কথা ভেবে, যাকে ভালোবাসি তাকে সামান্য মুক্তিই দিতে পারছি না? ধিক্কার জানাই আমার এই ভালোবাসাকে। বললাম, ভালো থেকো কাব্য।
কাব্য আর বই পড়তে আসত না, একা একাই লাইব্রেরিতে বসে থাকতাম। বিকেলের সময়টুকো খুব দীর্ঘ মনে হতো। মাস দেড়েক পর হঠাৎ একদিন কাব্য আর শহীদুল্লাহ ভাই এসে হাজির। শহীদুল্লাহ ভাই মুচকি হেসে আমাদের উদ্দেশ করে বললেন, 'তোরা কি ভেবেছিস আমি স্বার্থপর?' শহীদুল্লাহ ভাইয়ের হাতে একগাদা বই। বইগুলো আমার আর কাব্যের হাতে দিয়ে বললো, 'এই ধর তোদের বিয়ের আগাম উপহার, পরে আরো পাবি।'
অমানিশি | আহমেদ সবুজ
|
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ