গল্পের নামঃ মায়ার বন্ধন
______________ লেখকঃ Sajib Mahmud Neel ( সিওনির মুগলি)
.
.
.
- আম্মু আজকে স্কুলে গেলে না কেন?
- আজকে তোমার ছুটি তাই তোমার কাছে থাকবো তাই।
- দেখো স্কুলে না গেলে কিন্তু বকা দিবো।
- ওই আব্বু একটু বকা দেও তো।
- বকা কেউ চেয়ে নেয়?
- ওই আব্বু দেও না একটু বকা। একটু বকা দিলে কী হয়? দেও না আব্বু ওই আব্বু একটু বকা দেও। খুব বকা খেতে ইচ্ছা করছে। দেও না।
কথাটা শুনেই সিন্ধুর দিকে তাকালাম।
কি বলবো বুঝতে পারছি না।
ঠিক নীলুর মত জেদ করছে বকা খাওয়ার জন্য।
নীলুকে যদি একবার বলি,
"ওই এই কাজ করলে কিন্তু বকা দিবো "
নীলু বাচ্চাদের মত বলতো।
" ওই দেও না একটু বকা কি হলো দেও দিচ্ছো না কেন? "
যদি বকা না দিতাম তাইলে ঠোট ফুলিয়ে কেদে কেদে বলতো,
আমার সাথে যেন কেউ না কথা বলে যে আমাকে বকা দেয় না তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা নাই এই বলে দিলাম। আর যদি কথা বলতে কেউ আসে তাইলে নাকটা একদম ফাটিয়ে দিবো।
তখন হেসে হেসে বলতাম,
আমার এই গুলুগুলু নাকটা ফাটাতে পারবে তুমি?
তখন আমার দিকে আড়ি চোখে তাকিয়ে বলতো,
কেন পারবো না একদম ফাটিয়ে দিবো তখন যেন কেউ আমাকে দোষ না দেয়।
তখন রাগ ভাঙ্গাতে কানে কানে একটু বকা দিতাম।
বকা খেয়ে খিল খিল করে হেসে বলতো সব সময় একটু বকা দিবা?
অবাক হয়ে বলতাম, কেউ কি বকা খাওয়ার জন্য এমন পাগলামি করে?
তখন আল্লাদি হয়ে বলতো,
কেউ না খাক আমি খাবো আমার বরের কাছ থেকে আমি যা ইচ্ছা তাই খাই এটা নিয়ে যেন কেউ না কথা বলে আর যদি কেউ কিছু বলে এটা নিয়ে তাইলে তার কি হবে আমিই জানি না এই বলে দিলাম।
মাথাটা বুকে নিয়ে আসতো কথাটা বলতে বলতে!
মাথার চুল গুলো নেড়ে দিয়ে বলতাম,
বকা খেতে ভালো লাগে?
বুকে মুখ গুজিয়ে বলতো না কোন কথা তবে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উওর দিতো।
ওর কথা ভাবতে ভাবতে চোখের কানিতে পানি চলে আসলো।
সিন্ধু এর দিকে তাকিয়ে বললাম,
- মামুনি জেদ করো না সোনা চলো খাবো।
- বলছি না কেউ যেন কথা না বলে আমার সাথে? আর কথা বললে নাক ফাটিয়ে দিবো।
একদম নীলুর মত জেদ করতে লাগলো।
কানে কানে একটু বকা দিলাম।
ওর মাথাটা আমার বুকে আনলো ঠিক যেমন নীলু আনতো।
- মামুনি বকা খেতে ভালো লাগে?
সিন্ধু মায়ের মত মাথা নেড়ে বললো হুমমম।
নীলু চলে গেছে ঠিক কিন্তু আরেকটা নীলুকে আমার কাছে রেখে গেছে।
ডাক্তার যখন নীলুর মৃত্যুর খবরটা দিলো তখন কোন কথা বলতে পারি নি।
চুপ হয়ে গেছিলাম।
একটু পর ই নার্স সিন্ধু কে আমার কোলে তুলে দিলো।
নীলুর সাদা কাপড়ে ঢাকা দেহটার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলাম।
ওকে খুব স্বার্থপর মনে হইছিলো।
আমাকে রেখে একা একা ঘুমাচ্ছে বলে।
পরে সামী এসে বললো,
- ভাবিকে বলেছিলাম হয় বাচ্চা বাচবে না হয় আপনি। তখন ভাবি বাচ্চাটাকেই বাচিয়ে দিলো।
নীলুর পেটে যখন তিন মাসের বাচ্চা তখন থেকেই ওর পেটে মাথা রেখে বলতাম,
কি জেগে আছো নাকি ঘুমাইছো হু?
নীলু আমার পাগলামী দেখে খুব হাসতো।
ওর কাছে বাচ্চাটা চেয়েছিলাম কিন্তু ওর বিনিময়ে না এটা নীলু কেন বুঝতে পারে নি?
অভিমান করে চলে গেলো কেন?
- আব্বু তোমার চোখে পানি কেন?
সিন্ধু কথায় ওর দিকে তাকালাম।
- কই মামুনি নেই তো পানি।
- আব্বু আমি মনে করছো বুঝি না আমি সব বুঝি বুঝলে তুমি কাদছো তাই না আব্বু?
কোন কথা বলার শক্তি নেই উওরটা কি দিবো সেটা আমার অজানা।
- আব্বু তোমার ম্যানিব্যাগের ছবিটার দিকে ওমন করে তাকিয়ে থাকো কেন?
- কই নাতো সোনা চলো তুমি খাবো। আর দুপুর হয়ে গেছে ঘুমাতে হবে।
- আব্বু আজকে না ঘুমালে কি হবে?
- না সোনা না ঘুমালে হবে না বিকালে ঘুরতে যাবো।
- সত্যি আব্বু?
- হুমমমম মামুনি সত্যি।
- উম্মমম্ম্মমমমমমা চলো।
ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি। আমার বুকে ছাড়া ঘুমায় না কখনো।
নীলুও আমার বুক ছাড়া ঘুমায় নি কোন দিন।
ওর নাকি আমার বুক ছাড়া ঘুমই আসে না।
যদি কোন দিন বলতাম বুকে না বালিশে মাথা দেও।
ঠোট ফুলিয়ে কাদতো শুধু।
আর বিড়বিড় করে বলতো,
আমি কারও কেউ না কেন কেউ আমাকে বুকে নিবে?
কেউ তো বুঝে না আমার ঘুম আসে না।
হয়তো সে চায় আমি না ঘুমাই তাই তো এমন করে।
ওর পাগলামী দেখে বুকে নিতাম আবার।
ঘুমাতো অনেক শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
আজ তো আমাকে ছাড়াই ঘুমাচ্ছে কই এখন কি ওর কষ্ট হচ্ছে না?
মাঝে মাঝে খুব কান্না করতে ইচ্ছা করে কিন্তু পারি না সিন্ধুর জন্য।
সিন্ধু কে ঘুম পাড়িয়ে উঠে বসলাম।
টেবিল থেকে নীলুর ছবিটা হাতে নিলাম।
গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।
নীলু নাকি আমার কান্না দেখতে পারে না আজতো কাদছি কই মুছে দিতে এলো না তো।
আমি তো রোজ কাদি কেন আসে না চোখের পানি মুছে দিতে?
এখনো অভিমান ভাঙ্গেনি তোমার?
পারিবারিক ভাবেই বিয়েটা হয়েছিলো।
বাসর রাতে ঘরে জায়গা পাই নি।
দেরি করে আসার জন্য।
বেলকুনিতেই সারারাত থেকেছি।
সকালে উঠে দেখি গায়ে একটা চাদর।
জানি এটা নীলুই দিয়েছে।
রুমের দড়জাটা খোলা।
উঠেই রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
রুমে ডুকতেই ওর ঘুম হীন চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম সারারাত ঘুমাই নি।
দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বললো,
- সারারাত খুব কষ্ট হইছিলো তাই না?
- একটু।
- আবার মিথ্যা বলে শীতে তো কাপছিলে মিথ্যা বললে একদম হাড়গুড় গুড়ো করে দিবো।
বুঝেছিলাম মেয়েটা বেশ চন্চল।
- দেখো আমি তোমাকে আপনি করে বলতে পারবো না মাঝে মাঝে তুই করেও বলবো। যদি কিছু মনে করো তাইলে ওই গুলুগুলো নাকটা আর থাকবে না জায়গায়।
ওর কথা শুনে সেই কি হাসিটাই না পেয়েছিলো।
হাসিটা চেপে রাখতে পারি নি হি হি করে হেসে দিলাম।
- ওমা দেখো বউটা বুকে পড়ে কাদছে আর ওনি মেয়েদের মত হাসছে। লজ্জা নেই রে বাবা কোথায় একটু আদর করে দিবে তা নয়। আদর কি চেয়ে নিতে হবে নাকি হুমমম? দেখো আদর আমার চাই চাই তবে চেয়ে নিতে পারবো না আমার চোখ দেখে বুঝতে হবে আর যদি বুঝতে না পারো তাইলে এক বিছানায় জায়গা হবে না এই বলে দিলাম।
ওর পাগলামীগুলো বেশ ভালো লাগে।
দিন বাড়ছে সাথে পাগলামীগুলোও।
মাঝ রাতে ওঠেই বলবে।
"এই ছেড়ে দিছো কেন হুমমম? ও মনে করেছো আমি কিছু বুঝি না?
ধরো শক্ত করে না হলে আম্মুকে ডাকছি। "
ওর কথা শুনে শক্ত করে ধরে থাকি।
"হুমমমম এবার হইছে আবার উঠে যদি দেখি ছেড়ে দিয়েছো তাইলে সকালে কি হবে আমি বলতে পারবো না এও হতর পারে সকালের সূর্য আর তোমার দেখা হলো না গলা টিপে মেরে দিবো।"
সারারাত শক্ত করে ধরে থাকি।
ফুসকার খুব নেশা ছিলো ওর।
মাঝ রাতে উঠেই বায়না করতো,
এই চলো না ফুসকা খেয়ে আসি।
কিছু বলার আগেই উঠে বাইরে চলে যেতো।
পিছু পিছু হাটা শুরু করতাম।
একটু পর থেমে বলতো,
হাত কে ধরবে হুমমম? নাকি সেটাও বলে দিতে হবে?
নীলুর জন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলতাম না।
একবার ওর ছোট বোনের সাথে গল্প করছি।
দৌড়ে এসে হাতটা ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গিয়ে সে কি রাগ।
ওর রাগ দেখে সেইদিন হেসেছিলাম।
- তোকে কে রিথীর সাথে কথা বলতে বলছে হু?
- ও তো তোমার বোন নাকি?
- হোক বোন তাতে কি হু?
- তোমার বোনের সাথে কথা বলা যাবে না?।
- না না না যাবে না
- কেন?। আজ কাল অনেক দেখেছি বোনের ঘর ভাঙ্গতে।।
- এতো পাগলি কেন তুমি?
- কেন বুঝিস না?
ওর মাথাটা বুকে এনে বলতো
- তোকে কারও সাথে ভাগ করতে পারি না রে এটাই কি আমার অপরাধ?
সেই দিন চুপ করে ছিলাম।
সব সময় ঝগড়া হতো কে বেশি ভালোবাসে এইটা নিয়ে।
- বলতো কে বেশি ভালোবাসে?
- আমি।
- জ্বি না আমি।
- কে বলছে?
- কেন আমাকে চোখে দেখো না? আমিই বলছি এটা।
- কিন্তু আমিই তে বেশি ভালোবাসি।
- না আমি আমি আমি আর একবার যেহুতু বলছি আমি তখন আমিই বেশি ভালোবাসি।
- ওকে বাবা তুমিই বেশি ভালোবাসো।
নিজে জিতে সে কি আনন্দ।
পড়ে জড়িয়ে ধরে বলতো।
তুমিই বাসো বেশি।
- না না তুমি।
- দেখো একবার যেহুত বলছি তুমিই তখন তুমিই বেশি এটা মানতেই হবে আর না মানলেও কিছু করার নাই। তবে হ্যা নাক ফাটাবো। হি হি হি
বলেই আরও বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরতো।
ওর পাগলামীতে এতো বেশি মগ্ন হয়ে পড়েছিলাম যে সব কিছু মাঝেই ওকে খুজতাম।
সিন্ধুকে শক্ত করে ধরলাম।
কারন উঠেই বলবে আব্বু ছেরে দিছো কেন?
ঠিক নীলুর মত।
নীলুর মাঝেই ডুবে থাকতাম সব সময়।
দুই বছর কেটে যেতেই দিলো একটা সুখের খবর।
কানে কানে এসে বললো আমি নাকি বাবা হবো।
সেইদিন যে কি খুশি হইছিলাম বুঝাতে পারবো না।
ওকে কোলে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরেছিলাম।
যখন তিন মাসের বাচ্চা ওর পেটে তখনি একবার বলেছিলাম,
দিবে আমাকে এই বাবুটা?
নীলু অনেকক্ষন ভেবে বলেছিলো,
দিবো যে কোন কিছুর বিনিময়ে বাবুটা তোমার কোলে দিবো।
কিন্তু সেইদিন বুঝতে পারি নি যে নিজের জীবনের বিনিময়েই আমার কোল আলো করে সিন্ধুকে দিয়ে যাবে।
আমি তো ওর জীবনের বিনিময়ে চাই নি।
যখন ওর পেটের ব্যথা উঠলো হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
বেডে সুয়ে বলেছিলো,
ওই একটু বকা দিবা? আজকে খুব বকা খেতে ইচ্ছা করছে।
ওই দেও না একটু বকা।
আর যদি না হয় বকা খাওয়া তাই একটু বেশি করে বকা দেও তো।
ওর কথা শুনে সেইদিন খুব কেদেছিলাম।
জানি না কেন কেদেছিলাম তবে খুব কেদেছিলাম।
যখন শুনলাম ওর শরীর খুব খারাপ।
প্রচুর ব্লিলিডিং হচ্ছে।
তখন সামীকে বলেছিলাম,
তুই নীলুকে আমার কাছে দে বাচ্চা লাগবে না।
কিন্তু আমার কোলে দিলো বাচ্চাকে।
একটু পর সাদা কাপড়ে ঢেকে আনলো নীলুকে।
সেইদিন জন্মের কান্না কেদেছিলাম।
সামী এসে বললো,
ভাবি বাচ্চাকেই চেয়েছে।
আমার কোলে সিন্ধুকে তুলে দিয়ে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলো আকাশের ঠিকানা।
আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেছিলাম,
- নীলু ও নীলু অভিমান করলে আমার উপর? আমি তো বাচ্চা চেয়েছিলাম রে, তোমাকে হারাতে চাই নি। কেন এমনটা করলে? তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো বলো?
কাকে বুকে নিয়ে থাকবো?
ওই তোমার না আমার বুক ছাড়া ঘুম আসে না?
তাইলে এখন কেন ঘুমিয়ে আছো?
ওঠো তো চলো আমার বাচ্চা লাগবে না তুমি চলে তো।
কি হলো উঠছো না কেন?
আমার ডাক কি শুনতে পাচ্ছো না?
নীলু দেখো আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
চোখের পানিটা মুছে দিবে না?
ওই আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি কি আমার সাথে যাবে না?
হুমমম এসেছিলো তবে হেটে না চার পায়া তে করে।
ওকে সবাই মিলে রেখে আসলো।
কত বার যে ওর কাছে যেতে চাইছি তবে কেউ তো যেতে দিলো না।
স্বপ্নে এসে বলেছিলো,
আমি নেই তো কি হইছে? সিন্ধুকে নিয়ে বেচে থাকো।
ওর কথা রেখেছি বেচে আছি।
- আব্বু আব্বু তুমি আবার কাদছো?
সিন্ধুর ডাক শুনে ওর দিকে তাকালাম।
- না মামুনি এই মুছে ফেললাম আর কাদবো না।
- মনে থাকবে তো?
- থাকবে মামুনি।
- হুমমমম আর কখনে কাদবে না।
- আচ্ছা মামুনি।
এখন বেচে আছি ওকে নিয়েই।
যখন নীলুকে খুব মনে পরে তখন সিন্ধুর দিকে।তাকাই।
মায়ের চেহারার সাথে বেশ মিল।
নীলুর অভাবটা পূরন করেছে সিন্ধু।
আগে যখন কাদতাম চোখ মুছে দিতো নীলু আর এখন সিন্ধু।
ছোট হাতে চোখের পানিগুলো মুছে দিয়ে বলে,
কাদবে না তো, কাদলে কিন্তু আম্মুর কাছে চলে।
তখন ওকে বুকে নিয়ে বলি কই না তো কাদি নি কাদবো কেন?
আমার তো সিন্ধু মামুনি আছে। নীলুর মতই মায়ার বন্ধনে বেধেছে সিন্ধু।
আছি তো ভালোই ওকে ছাড়াই। নীলু নেই তবে রেখে গেছে সিন্ধুকে যাকে নিয়েই সাজাতে চাই আমার পৃথিবী।
__________________ সমাপ্ত
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ