4230

ছোট গল্প
:-Hosain Ahmed(আমি হিমু)
--
-
:-আমার প্রচন্ড ঘুম ধরেছে।(মীনা)
:-তো ঘুমাও।(আমি)
:-কোথায় ঘুমাবো শুনি?(ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো)
:-ওই একদম ভ্রু কুঁচকে তাকাবেনা বলে দিলাম!
:-১০০বার তাকাবো তাতে তোমার কী?
:-আমার অনেক কিছু।তোমাকে এভাবে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে দেখলে আমি বারবার তোমার প্রেমে পড়ে যায়।
:-ওমা তাই বুঝি!তাহলে আজ থেকে আরো বেশি করে তাকাবো।
:-না তাকাবেনা।
:-তাকাবো।
:-আচ্ছা তাকাবে।এবার চুপ করো।
:-হুম।
:-আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাও।
:-এখন আর ঘুমাবোনা।তুমি ঝগড়া করে ঘুমিয়ে দিলে কেনো?
:-ওই কী বললে তুমি?ঝগড়া আমি করেছি?তুমি ঝগড়া করেছো।
:-মোটেও না।তুমি ঝগড়া করেছো।
:-তুমি করেছো।
:-তুমি একটা ঝগড়াটে ছেলে।
:-আমি ঝগড়াটে হলে তুমি হ্যাঁ,তুমি একটা ঝগড়াটে মেয়ে।
:-আচ্ছা এভাবে ঝগড়াই করবে শুধু?
:-তুমিইতো করছো।
:-আচ্ছা আমিই করেছি।তোমার ফোন দাওতো।
:-ফোন কী করবে?
:-বাসায় ফোন দিবো।দেখি আম্মু ওষুধ খেয়ে কীনা।
আমি পকেট থেকে ফোন বের করে মীনার হাতে দিলাম।মীনা বাসায় ফোন দিলো।

আমি হুসাইন।পড়ালেখা শেষ করে একটা কলেজে শিক্ষকতা করছি।আর যার সাথে এতসময় ঝগড়া করলাম তার নাম মীনা।আমারা দুজন স্বামী-স্ত্রী ।আমরা দুজন একই কলেজে শিক্ষকতা করছি।আমরা ট্রেনে করে আমার শুশুর বাড়ি মানে মীনার নিজের বাসায় যাচ্ছি।আমাদের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ।৫বছর রিলেশনের পর বিয়ে।

:-এই আম্মু তোমার সাথে কথা বলবে।(মীনা)
:-দাও।(আমি)
মীনার হাত থেকে ফোন নিলাম
:-আম্মু তুমি ওষুধ খেয়েছো?(আমি)
:-তোর বউয়ের জ্বালায় না খেয়ে উপায় আছে।(আম্মু)
:-আব্বু ঘুমিয়ে গেছে?
:-না।তোর আব্বু এখনো বাসায় আসেনি।
:-এনামুল,নাহিদ কোথায়?(আমার দুই ছোট ভাই)
:-ওরা ঘুমিয়ে পড়েছে।
:-তাহলে ঘুমাও তুমি এখন।আমি পরে আবার ফোন দিবো।
:-আচ্ছা দিস।সাবধানে যাস।আর বউমাকে বাইরের কিছু খেতে দিস না।আমি ট্রিফিন বাটিতে খাবার দিয়ে দিয়েছি সেগুলো খেতে বলিস।
:-ঠিক আছে রাখছি।
আমি ফোন রেখে দিলাম।
:-ওই তুমি ফোন রাখলে কেনো?(মীনা)
:-কথা বলা শেষ তাই রেখে দিয়েছি।(আমি)
:-ওই তোমাকে কী রাখতে বলেছি?আমার কথা বলা শেষ হয়নি।
:-আচ্ছা তোমরা বউ শাশুড়ি এত কী কথা বলো শুনি?
:-সেটা তোমাকে বলবো কেনো শুনি?বলবোনা তোমাকে।
:-আচ্ছা বলতে হবেনা তোমাকে।এখন ঘুমাও।
:-হুম।
মীনা আমার কাঁধে মাথা রাখলো।আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি মীনার দিকে।মীনাকে পেয়ে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি।আমার পরিবারের সবার খুব খেয়াল রাখে ও।একটা মেয়ে তার শুশুর শাশুড়িকে এতটা ভালোবাসে সেটা ওকে না দেখতে বুঝতামই না।এখনকার যুগে বউ শাশুড়িতে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকে।কিন্তু মীনার ক্ষেএে সেটা ভিন্ন।আমার আব্বু আম্মুকে মীনা যতটা ভালোবাসে ততটা মন হয় আমিও বাসিনা।
:-ঘুমিয়ে গেছো?(আমি)
:-নিশ্চুপ।
আমি দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম ঘুমিয়ে গেছে।ঘুমন্ত অবস্থায় মীনাকে ঘুম সুন্দর লাগছে।

মীনার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো ফেসবুকের মাধ্যমে।প্রথমে বন্ধুত্ব তারপর রিলেশন।তবে আমাদের রিলেশনটা প্রথমে মিথ্যা দিয়ে শুরু হয়েছিলো।মিথ্যাগুলো আমিই বলেছিলাম।পরে অবশ্য মীনাকে সব সত্য বলে দিয়েছিলাম।আমাদের রিলেশনের শুরুতে কেউ কাউকে দেখিনি।না দেখেই ভালোবেসেছিলাম।তবে যেদিন দুজন দুজনার পিক দেখি সেদিন দুজন দুজনাকেই ভালো লেগেছিলো।আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো ৩বছর রিলেশনের পর।আমার বাসা কুষ্টিয়া আর মীনার বাসা ছিলো নরসিংদী। এত দুরুত্বের কারণেই সামনা সামনি দেখা করা হয়ে ওঠেনি।

মীনার কাশির শব্দে বাস্তবে ফিরলাম।আমি কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই মীনা আমার গায়ে বমি করে দিলো।
:-সরি সরি।আমি ইচ্ছে করে এমন করিনি(মীনা)
:-এই পাগলী সরি বলার কী আছে।তোমার বরের গায়ে তুমি বমি করেছো এতে সরি বলার কী আছে?(আমি)
:-তবুও।তোমার সব পোশাক নোংরা করে দিলাম।
:-পরে কথা বলো আগে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলো।
আমি ব্যাগ থেকে পানি বের করে দিলাম।মীনা পানি নিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো।আমি মীনার উপর কখনো রাগারাগি করতে পারিনা।মেয়েটার মুখের দিকে তাকালেই সব কষ্ট রাগ ভুলে যায়।একবার আমি প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম।৫দিন একটানা জ্বর ছিলো।ওই ৫দিনেি বুঝেছিলাম মীনা আমাকে কতটা ভালোবাসে।৫দিন আমার কাছ থেকে একটুও দুরে সরেনি।আমাকে সুস্থ করতে গিয়ে ও নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো।
:-তুমি ওয়াশরুমে গিয়ে পোশাক চেন্জ করো আসো।(মীনা)
:-লাগবেনা।প্রায়তো চলেই এসেছি।আর ১০মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবো।(আমি)
:-তবুও যাও।স্টেশনে নামলে কত মানুষজন থাকবে।খারাপ দেখাবে।শুধু শার্টটা চেন্জ করে আসো।
:-আচ্ছা যাচ্ছি।
আমি ব্যাগ থেকে আলাদা পোশাক বের করে ওয়াশরুমে গেলাম।ঢাকা কলমাপুর থেকে যে ট্রেনগুলে ছাড়ে প্রায় সবগুলোতেই ছাএীদের জন্য ওয়াশরুমের ব্যাবস্থা আছে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।
:-এবার হয়েছে?(আমি)
:-না হয়নি।(মীনা)
:-আবার কী?
:-বসো দেখাচ্ছি।
আমি ওর কথামতো শিটে বসলাম।মীনার ওর ব্যাগ থেকে চিঁরুনি বের করে আমার চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বললো
:-এবার ভালো লাগছে।(মীনা)
:-আচ্ছা আমি কী বিয়ে করতে যাচ্ছি যে এত সাঁজতে হবে?(আমি)
:-বিয়ে করতে যাচ্ছোনা কিন্তু শুশুর বাড়িতো যাচ্ছো।হি হি হি হি হি
মীনা হাসছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখছি আর বারবার ওর প্রেমে পড়ছি।
**সমাপ্ত***