সায়াহ্নে | নাজমুল আকাশ
হাসপাতালের গন্ধ ঠেলে নামটা আমার বিশ্বস্ত হাতটা কাঁপিয়ে দিল। কিছুক্ষণ চশমার নিচ দিয়ে স্থির তাকিয়ে থেকে প্রেসক্রিপশনে লিখলাম-
রোকসানা খাতুন। লিখেও মনের খচখচানিটা কমলো না বরং বাড়ল আরো। ‘বয়স কত?’ ‘নব্বই-পঁচানব্বই।’ পাশে থাকা সবুজ শার্ট পরা যুবকটি বলল। ঠিকমতো চিকিৎসা করতে হলে রোগীর বয়স জানা জরুরি। বয়স ছাড়া আর কিছু না জানলেও চলে। আমিও আর কিছু জিজ্ঞাসা করতাম না যদি না তার নাম রোকসানা হতো। এই একটি মাত্র নামের সঙ্গে আমার কত কিছু যে মিশে আছে! কত আবেগ, কত অনুভূতি! কত অনুরাগ, কত অভিমান! কত ঘটনার সাক্ষী এই একটি মাত্র মানুষ, নিমিষেই সে দৃশ্যগুলো আলো ছায়ার মতো খেলা করে যাচ্ছে মনে। আমি ফের জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনার কে হয়?’ যুবকটি চোখ পিট পিট করে কি জানি ভাবল। তারপর স্বাভাবিক গলায় বলল, ‘কেউ না। একই গ্রামে থাকি। ভাঙা ছনের ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিল। তাই এলাকার সকলে মিলে চাঁদা তুলে চিকিৎসা করাতে নিয়ে এলাম। আপনি একটু ভালো করে দেখেন ডাক্তার বাবু! বয়েস হয়ে গেছে তবু যে কয়দিন বাঁচে আরকি!’ ‘তাঁর ছেলে মেয়েরা কোথায়?’ আমি জিজ্ঞেস করলাম। ‘কোন ছেলে-মেয়ে নাই তার। থাকলে তো কখনো না কখনো খোঁজ খবর নিতে আসত!’ চমকে উঠলাম। বুকটা কেঁপে উঠল কেমন, আর্দ্র হয়ে এলো ভেতরটা। আবেগের ঢেউ যেন আছড়ে পড়তে লাগল হৃদয়ের সৈকতে। আমার রোকসানা খাতুনেরও তো কোনও সন্তান ছিল না। গ্রামের সবাই তাকে বাঁজা বলে ডাকত। তবে কি সামনে বসে থাকা বৃদ্ধাই আমার সেই চিরচেনা রোকসানা খাতুন? আমার লেবুর ঘ্রাণ মাখা শৈশবের সাক্ষী রোকসানা খাতুন? একমাত্র এই বড় মানুষটির সাথেই আমি বন্ধুর মত মিশতে পারতাম। কত ইচ্ছা, কত চাওয়া, কত আবদার হাজার কষ্ট হলেও পূরণ করেছেন সেই রোকসানা খাতুন। যুবকটি বলল, ‘বছর দশেক আগে ঘুরতে ঘুরতে আমাদের গ্রামে এসেছিল। নিজের গ্রামের নাম বলতে পারত না। নিজের নাম বলতে পারত না। জিজ্ঞেস করলে কেবল ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকত। শুধু...।’ বৃদ্ধার দিকে তাকালাম। কুঁচকে গেছে মুখের চামড়া, গায়ের চামড়া সব। শরীর ভেঙে গেছে, দাঁত পড়ে গেছে। বয়স চুষতে চুষতে সাদা হয়েছে চুলগুলো। দেখেই বোঝা যায় খুব বেশি দেরি নেই ডাক আসতে। ‘শুধু কী?’ ‘শুধু বাবা বাবা বলে ডাকত। কি যেন বাবা? কি যেন বাবা?’ ‘মেজবাবা?’ আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম। ‘হ্যাঁ, মেজোবাবা!’ সারা শরীর জুড়ে একটা শিহরণ বয়ে গেল, ঝাপসা হয়ে এল চোখদু’টো। হৃদয়ের প্রকোষ্ঠগুলো পূর্ণ হয়ে গেল হঠাৎ। এতদিন ধরে লুকিয়ে রাখা সোহাগগুলো উপচে পড়ছে বাঁধ ভেঙে। ইনি তো আমার সেই রোকসানা খাতুন। আমার মা, আমার দাদিমা। বুকটা প্রচণ্ড গর্জনে ডেকে উঠল। ‘মেজ বাবা’ শোনা মাত্রই কানে ভেসে এল রোকসানা খাতুনের সেই কণ্ঠটা। কত মিষ্টি! কত আদুরে! কত মায়াময়ী! সেই চল্লিশ বছর আগে আমার মার কণ্ঠ, আমার দাদিমার কণ্ঠ! এই দাদির বাড়ি আমাদের গ্রামেই, বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করেন। ধানের সময় মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ি এসে কাজ করে দিয়ে ধান নিয়ে যান। বাড়ির কাজ বেশি হওয়াতে অনেক মানুষ আসত তখন। সে দিনগুলোতে আমি খেলতে যেতাম না। তার একটা কারণ ছিল। রোকসানা দাদি আসার সময় আমার জন্য লজেঞ্জুস নিয়ে আসতেন।
চুপিচুপি হাতে দিয়ে আমাকে নিয়ে কাজে বসে গল্প করতেন। আমি যতটা না লজেঞ্জুসের লোভে থাকতাম তার চেয়ে বেশি থাকতাম তার গল্পের লোভে। কত সুন্দর করে গল্প বলতেন তিনি। কত কত গ্রামের গল্প, কত মানুষের গল্প। কত জীবনের গল্প। লাল-মাটি বনের গল্প। আমি চোখ বড় বড় করে শুধু শুনে যেতাম। মাঝে মাঝে শিউরে উঠতাম, ভয় পেতাম; কুঁকড়ে যেতাম। একবার খুব করে ধরলাম, ‘আমাকে নিয়ে যাও না দাদি। তোমার মত আমিও এত এত গ্রাম দেখব, এত মানুষ দেখব। এত বন দেখব। নিয়ে যাও না আমায়?’ দাদি শুধু মুখ টিপে হাসতেন। বলতেন, ‘তা কিরে হয় মেজবাবা! আরো একটু বড় হও। তখন নিয়ে যাব।’ তারপর থেকে বড় হবার কত স্বপ্ন দেখেছি আমি। কিন্তু বড় হইনি। তবু একদিন সুযোগ এল নানাবাড়ি যাবার সময়। দাদি ভিক্ষা করতে আজ সেদিকেই যাবেন। কেউ নাই তাই মা আমাকে রোকসানা দাদির সঙ্গে পাঠিয়ে দিলেন। আমি খুব খুশি। এত দিনের স্বপ্ন আজ তাহলে সত্যি হবে। দাদি বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করতে করতে এগোতে লাগলেন। ঘটনাটা আমার এখনো মনে আছে। সারাজীবনে দাদির হাতে মাত্র একটাই চড় খেয়েছিলাম সেদিন। আজো স্পষ্ট মনে আছে। খুব লেগেছিল আমার, প্রচণ্ড কেঁদেছিলাম। কারণটা আমি সেদিন বুঝিনি কিন্তু আজ বুঝি। একটা বাড়ির সামনে এসে দাদির চোখে ময়লা পড়ল। তিনি আঁচলের কোণা দিয়ে সেই ময়লা তুলতে লাগলেন। আমি কি করলাম, বাড়ির দরজায় গিয়ে দাদির মত করে বললাম, ‘একটু ভিখ দেন মা! বাড়িতে খাবার চাল নাই! একটু ভিখ দেন!’ বলা মাত্রই দাদি এসে সজোরে চড় দিল গালে। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, দাদি এটা করতে পারে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম, খুব অসহায় লাগছিল নিজেকে। হঠাৎ আমার সাথে সাথে তিনিও কেঁদে উঠলেন। বুকে জড়িয়ে ধরলেন আমায়, আমি আরো ফুঁপিয়ে উঠলাম। কান্না থামতে সময় লাগল, হাঁটতে লাগলাম দু’জনে। ফোঁপানি কমে গেলে চালের বিনিময়ে একটা লজেঞ্জুস কিনে দিয়ে তিনি বললেন, ‘তুমি চাইবা কেন মেজবাবা? তোমরা বড় বাড়ির মানুষ। তোমরা শুধু দিবা, হাত খুলে দিবা। যে হাত চাইতে জানে সে হাত কখনো দিতে জানে না।’ আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লাম। দাদি গো! তোমার কোমরের ব্যথা সারানোর জন্যই আমি ডাক্তার হয়েছি। ডাক্তার হবার পর তোমার আর কোনও খোঁজ করিনি। আমি স্বার্থপর হয়ে গেছিলাম দাদি। তোমার মেজবাবা স্বার্থপর হয়ে গেছিল। খুব করে কান্না পেল আমার। উঠে গিয়ে দাদির মাথায় হাত রাখলাম, চোখ তুলে তাকালেন তিনি। তাঁর নিশ্চল দৃষ্টি বর্ণনা করে যাচ্ছে অনেক ব্যথা, অনেক যন্ত্রণা, অনেক কষ্টের কথা। সেদিকে তাকিয়ে থাকবার সাহস আজ অবশিষ্ট নেই আমার; আমি কয়েকবার বললাম , ‘আমি তোমার মেজবাবা দাদি! আমি তোমার মেজবাবা!’ হঠাৎ ফাল্গুনের মতন আনন্দ ধারা বয়ে গেল তাঁর মুখে। আমার হাত গালে ঘষে দুর্বল কণ্ঠে বললেন, ‘মেজবাবা! আমার মেজবাবা।’ দেখলাম, তুমুল অশ্রুধারা নেমে আসছে তাঁর গাল বেয়ে; আমার সেই রোকসানা দাদিমার গাল বেয়ে। এত বয়সেও বুঝি এই সাগরটি তাঁর আজও শুকায়নি ! হয়তো বা কোনো বয়সেই এই সাগরটি কারো কখনো শুকায় না।
āĻāϞ্āĻĒ āϏংāĻ্āϰāĻš āĻāϰা āĻāĻŽাāϰ āύেāĻļা। āϰোāĻŽাāύ্āĻিāĻ, āĻৌāϤিāĻ, āϰāĻŽ্āϝ, āĻৌāϤুāĻ āϏāĻš āĻšাāĻাāϰো āĻāϞ্āĻĒ āĻāĻে āĻāĻŽাāϰ āϏংāĻ্āϰāĻšে।
āĻŽāĻ্āĻāϞāĻŦাāϰ, ā§§ā§Š āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž
4155
āĻāϰ āĻĻ্āĻŦাāϰা āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰা
Rahathossain1010100@gmail.com
āĻāĻ āϏāĻŽā§ে
ā§§ā§§:ā§§ā§Ŧ PM

āĻāϤে āϏāĻĻāϏ্āϝāϤা:
āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝāĻুāϞি āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ (Atom)
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ