āĻŽāĻ™্āĻ—āϞāĻŦাāϰ, ā§§ā§Š āĻĢেāĻŦ্āϰুāϝ়াāϰী, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4149


*-*-* সে এসেছে *-*-*
লেখা:ফ|য়সাল অ|হম্মেদ শ|ওন
"স্যার আসতে পাড়ি?
মায়া ভরা কথাটার মাঝে লোকটা কি দোষ খুজে পেলো বুঝলাম না। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লোকটা তার চশমাটা ঠিক করে ক্লাস রুমের ভিতর  থেকে বল্লো, ন্যাশনাল ভার্সিটির ছাত্র আপনি তাই না!
লোকটার কথায় একটু অপমানের ছাপ খুজে পেলাম। ক্লাস রুমের ভিতর থেকে কিছু সংক্ষক ছাত্র ছাত্রীর হাসির আওয়াজ শুনলাম। আমি মাথাটা নিচু করে বল্লাম, জ্বি স্যার।
তিনি কোনো কথা না বলে ক্লাস করাতে আবার মনোযোগ দিলো। প্রায় মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে থাকার পর স্যার বলে উঠলো, আসেন।
আমি আর ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা ক্লাসে যেয়ে ঢুকলাম। ক্লাস রুমে বসার পর পর লোকটা আবার বলতে লাগলো, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ক্লাস তবুও যদি আপনারা এরকম লেট করে আসেন তাহলে কিভাবে কি! নেক্সট আমি আর লেট আসা কাউকে ক্লাসে য়্যালো করবোনা।
কথাটা বলেই লোকটা আরো কিছুক্ষণ লেকচার দিয়ে চলে গেলো।
.
স্বপ্নের ঢাবি! বড় ইচ্ছা ছিলো এইখানেই পড়াশোনা করবো। কিন্তু সেই সুযোগটা আর হয়নি। তবুও হতাশ  ছিলামনা। মাস্টার্স এর  জন্য যখন এক্সাম দিলাম তখন আর কেউ আটকাতে পারলোনা চান্সটা পেয়ে গেলাম। কিন্তু প্রথম দিন প্রথম ক্লাসেই যে স্যারের এরকম ইজ্জত পাবো ভাবতেও অবাক লাগছে। আমি ইম্প্রেশ! কি ইজ্জতটাই না দিলো! 'ন্যাশনালের ছাত্র!' হাহ! পাঁচ বছর যে এতো কষ্টে কামলা দিয়েও পড়াশোনা করে যাচ্ছি এই কষ্টটা কি আর তারা বুঝবে! ডিউটি শেষে আসতে না হয় দশ মিনিট লেট হয়েছে এইটা কি সে আমার গেটাব দেখে বুঝলোনা! বুঝবেই বা কি করে প্রাইভেট ভার্সিটিতে যেয়ে দুই কলম লেকচার দিয়ে দশ বারো হাজার কামিয়ে আসে। আর এইখানেতো তাদের সেই ক্ষমতা নেই। থাক! বলুক বেহায়াতো হয়ে গেছি সেই অনেক আগে থেকে। এরকম কথা হজম করার ক্ষমতা আমার আছে। আর শালার পুতেরা কেন হাসলো! খায়তো বাপের হোটেলে বুঝবো কি! কথা গুলো মনে মনে বলা শেষে পাশে বসা লোকটার দিকে তাকালাম। মেজাজটা বিগড়ে ছিলো বিদায় লোকটাকে বলে উঠলাম, কি দেখতাছেন ভাই?
লোকটা মুখ টিপিয়ে একটু হেসে বল্লো, কাজ শেষ করে আসতে দেড়ি হয়ে গেছে তাইনা!
লোকটার কথা শুনে আমার বিগড়ে মেজাজটা ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। দুঃখটা কেউ বুজলো তাহলে? আমি মাথা ঝুকিয়ে হ্যা সূচক ইশারা করলাম। লোকটা তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বল্লো, নাবিল।
লোকটা তার নাম বলার পর আমিও বল্লাম, ফায়সাল। ভাই আপনি কিসে আছেন?
"পপোলারে টি.এস.এম পোস্টে আছি আপনি?
"বেঙ্গলে সেইম পোস্টে। যাক! কষ্ট বুঝার মানুষ পেলাম।
আমার কথা শুনে নাবিল ভাই একটু হাসলো। লোকটা দেখতেও আমার থেকে খুব সিনিয়ার। স্যার না আসা পর্যন্ত দুইজন অনেক কথা বল্লাম। অনেক  কথাই দুইজন আদান প্রদান করলাম। যেই ক্লাসে স্যার উপস্থিত হলো। তখনি কথা বলার লাঘব ঘটলো।
.
ক্লাস শেষ হওয়ার পর নাবিল ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে বাহিরে বেড় হোলাম। তারপর তিনি চলে যাওয়ার পর। সামনে থাকা একটা সিগারেটের দোকান থেকে সিগারেট ধরিয়ে মোবাইলটা বেড় করে আজকের সেলস রিপোট গুলো চেক করতে লাগলাম। সব সেলস রিপোট গুলো একসাথে যোগ করে আর.এস.এম এর কাছে টেক্সট করে দিয়ে। একটু সামনের দিকে খেয়াল করতেই কিছুটা চমকে উঠলাম। পাঁচ বছর পর ওকে এরকমভাবে দেখবো ভাবতেও পারিনি। ও যেনো নিজেও আমার দিকে তাকালো। তবে আমার মতো অবাক চোখে না। আমার কিছুটা সামনে আসতেই ও থামলো। ভেবেছিলাম সাইড কেটে চলে যাবে কিন্তু ও যে আমার সামনে এসে এইভাবে থেমে যাবে তা ভাবতেও অবাক লাগছে।
.
"কোন  মাইয়ার লগে চ্যাট করতাছোস?
ইয়ামিন আমার কথাটা শোনার পর একটু ডিস্টার্ব হলো। আমি আসতে করে ওর হাত থেকে মোবাইলটা টান দিয়ে ওর চ্যাটিং গুলা দেখতে লাগলাম। সানায়া শেখ! মেয়ের আইডি নাম। চ্যাটিং গুলা চেক করার পর ওর গার্লফ্রেন্ডের টেক্সটগুলা যেই দেখতে নিলাম ঠিক তখনি ও মোবাইলটা টান দিয়ে ওর হাতে  নিয়ে মনে মনে কম হোলেও দশটা গালি দিলো। আমি একটু হেসে বল্লাম, কই থাকে এই মেয়ে?
ইয়ামিন কথাটা শুনে কিছুটা জেদ করলো। তারপর বল্লো, আচ্ছা তুই কি! কইবি আমারে? মানুষের পার্সোনাল জিনিসটাও তোর জানতে এতো কেন ইচ্ছা করে! আর এখন আমার মোবাইলটা টান দিয়া এইটা কি করলি?
"কি করলাম দোস্ত! আমি জাস্ট মোবাইলটা ধইরা টেক্সট গুলা দেখছি।
"হালোরপো তোর যতদিন এই স্বভাব জাইবোনা ততদিন কোনো মাইয়ার লগে রিলেশন করতে পারবিনা। হালা বেহায়া কোহানকার এত কই তোরে তবুও লজ্জা লাগেনা!
ইয়ামিনের কথা শুনে খুব ইমোশনাল হয়ে গেলাম। এতো বলে আমাকে তবুও কেন আমার এই স্বভাবটা চেঞ্জড করতে পারিনা! এর জন্য কত কথা শুনি পথে ঘাটে! তবুও কেন শিক্ষা হয়না আমার! কথা শোনার পর খুব মন খারাপ হোলেও পরে কেন সব ভুলে জাই! আসলেই এতো বেহায়া কেন আমি! কথাটা ভেবে নিজেকেই নিজে একটু কষ্ট দিলাম। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর ইয়ামিনকে আবার বল্লাম, দোস্ত তুই আমারে বদদোয়া দিলি তাই না?
ইয়ামিন আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো, দেখ দোস্ত তোর এই খারাপ স্বভাব চেঞ্জড কর। নাইলে অনেক পস্তাইবি। আর এই মেয়ের অরজিনাল নাম প্রিতি। চিনছোস?
ওর কথাটা শুনে আমি চুপ করেছিলাম। মেয়েটার নাম শোনার পর আর চেনার বাকি রইলোনা।
.
বাসায় আসার পর মেয়েটার আইডিতে রিকুয়েস্ট পাঠালাম। প্রায় ঘন্টা খানিক পর রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার পর চ্যাটিং শুরু। চেনা পরিচিত ছিলো বিদায় আর ওর ডিটেইলস জানার দরকার প্রয়োজন ছিলোনা। একি স্কুলে পড়াশোনা করতাম বিদায় ভালো করেই জানতো আমি কেমন। স্বভাব টা যে আমার কোন লেভেলের ছিলো সেইটাও ভালো করে জানতো। প্রায় মাস খানিক পর যখন ওকেও ভালো লাগতে শুরু করলো কিছুদিন সময় নিয়ে বলে দিলাম ভালোবাসি। এই কথাটা যেদিন ওকে বল্লাম প্রীতি এর প্রতি উত্তর বলেছিলো, আমার ফ্যামিলি এইসব একসেপ্ট করবেনা। আর আমিও এই রিলেশন টিলেশনে জড়াতে চাই না।
ভালো কথা! রিলেশনে জড়াতে চাইনা। কিন্তু আমি সেইটা মোটেও মানতে পারলাম না। মেয়েটাকে একদম তিতা বানিয়ে ফেলেছিলাম। খুবি বোকা ছিলাম। ও না করার পরেও খুব জোড় করতে লাগলাম। কিন্তু জোড় করে যে ভালবাসা হয়না সেইটা জানতাম না। আর বয়সটাই বা কত ছিলো! রোমান্টিক মুভি দেখতাম আর নায়ক নায়কার রোমেন্স গুলা দেখলে নিজেরো ইচ্ছা করতো কবে যে আমি এরকমটা উপভোগ করবো। বাস্তবে যে এগুলা এতো সহযে সম্ভব না। তা মোটেও মানতে চাইতাম না। তবুও প্রেম যে একটা করতেই হবে এই বিষয়ে একদম সিরিয়াস ছিলাম। কেউ হয়তোবা পাগলো ভাবতে পাড়ে। কিন্তু যার যেমন ইচ্ছা চাহিদার ব্যাপার আছে। মানুষ বড় অদ্ভুত! দিন গুলো যেতে লাগলো আমি জেনো প্রীতির সাথে উচ্চ লেভেলের বেহায়াপনা করতে লাগলাম। ভাবতেও অবাক লাগতো ওর আগে যেই কয়টা মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়াতে চেয়েছিলাম। কই ওদের সাথেতো নিজের ওয়েট রেখে কথা বলতাম। কিন্তু সব লজ্জা সরম ভুলে প্রীতির সাথে কেন এইভাবে কথা বলছি! ও যে আহামরি সুন্দর তাও না! তবে আমাকে দুর্বল করার জন্য কিছু একটা ছিলো ওর মাঝে। আগে বন্ধুরা যখন জিজ্ঞাস করতো, দোস্ত তোর ফাস্ট লাভ কে?
আমি ওদের এই কথার উত্তর খুজে পেতামনা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছিলো। আমার ফাস্ট লাভ প্রীতি। খুব বেশিই ভাবতাম ওকে নিয়ে। প্রতিটা মুহূর্তে কাল্পনিক ভাবে ভাবতাম এইতো আমার প্রীতি আমার পাশে বসা। রিকশায় যখন একা বসে কোথাও যেতাম তখন এক সাইড করে বসতাম। আর ভাবতাম আমার পাশে ও বসে আছে। মুচকি মুচকি হাসতাম। তখন সেই অবস্থায় রাস্তার দিকে তাকালে দেখতামা মানুষগুলো যেনো কেমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা পর্যায়ে খুব ইগনোর করতে লাগলো। ওর আর আমার ব্যাপার গুলো ইয়ামিনকে বল্লে বন্ধুটা আমার চুপ করে থাকতো।
.
তবুও হাল ছাড়িনি। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে এই অপেক্ষা করতাম। কেমনি যেনো ছিলাম!  ওর আগেও যেই কয়টার সাথে রিলেশন করেছিলাম ওদের মাঝে একটা জিনিস খুজতাম একটু লয়্যাল টাইপের হোক। নাটক সিনেমার নায়কাগুলো যেমন হয় তেমন। কিন্তু এখন বুঝি কি বোকাই না ছিলাম। বাস্তবে মেয়েগুলা এমন হয়নারে পাগলা! যুগটা আর সাবানা,রোজিনা, হেমামালনী, রেখার যুগে নাই। যে কিনা লয়্যাল টাইপের হবে। আপডেট হয়েছে! দিপিকা,কারিনা কাপুরের যুগ এইটা। ভালো লাগলে রাখো না লাগলে ছেড়ে দাও! আরেকটা চয়েজ করো। যেই কয়টার সাথে রিলেশনে যুক্ত হয়েছিলাম,আফসুস! নাটক সিনেমার নায়কাগুলোর মতো লয়্যাল হয়নি। এর জন্য টুকটাক ঝগড়া হতো। একটা সময় ব্যাকআপ! তবে হ্যা সব যে এক তা না! আছে, খুব অল্প সংক্ষক মেয়ে যেমনটা আমি খুজি। কিন্তু অতি বাস্তব কথা, সব কিছু নিজের বানিয়ে নিতে হয়। যা আমাকে দিয়ে সম্ভব ছিলোনা। খুব উগ্র মেজাজের ছিলাম তাই আরকি! কিন্তু প্রীতির জন্য একদম উঠে পড়ে লেগেছিলাম। কেন যেনো মনে হতো ও আমার জন্য পারফেক্ট। একবার যদি আমাকে একটু মন দিতে পারে আমার সব কিছুই ও পরিবর্তন করে দিবে।
.
প্রায় সাত মাসের মতো ওর পিছু  লেগে ছিলাম। এর ভিতর দুইবার ব্লক খেয়েছিলাম। পড়ে অন্য আইডি দিয়ে বুঝিয়ে টুঝিয়ে আনবল্ক করিয়েছিলাম। এতটাই ওর প্রতি সিক হয়ে গেছিলাম যে একদিন আবোল তাবোল বলতে বলতে বলে উঠেছিলাম, প্রীতি তোমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমার একটা থ্রীপিছ দিও তো আমারে। তোমারে তো আর পামুনা ওই তোমার থ্রীপিছ দেইখাই তোমাকে কাছে ফিল করতে পারমু।
আমার কথাটা শুনে ওইদিন প্রীতি খুব হেসেছিলো। সেইদিনি ওর সাথে একটু ভালো করে কথা হয়েছিলো। তারপর আমার যন্ত্রণায় পার্মানেন্ট বল্ক যে করলো আজ পর্যন্ত খুলেনি। ওর সামনে যেয়েও কথা বলা হয়নি। শুধু ফেসবুকেই ওর আর আমার কথা বলার সিমাব্ধ ছিলো। ইয়ামিনকে যখন এই ব্যাপারটা বল্লাম খুলে, তখন ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা কথাই বল্লো, দেখ দোস্ত আমার কথাটা শোনার পর তুই কষ্ট পাইতে পারোস! সত্যি বলতে কি তুই প্রীতির ক্যাটাগরির না। ওর ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে তোকে মানাবেনা। বাদ দে এসব!
ইয়ামিনের কথাটা শুনে কেন জানি চোখে পানি এসে পরেছিলো। আমি ওকে তখন বল্লাম, দোস্ত তুই এমনে কইতাছোস কে! আমরা না বন্ধু! ডাইরেক্ট বইলা দে তুই, আমি প্রীতির যোগ্যনা!
আমার এরকম পাগলের মতো কথা শুনে ও আবার বলে উঠলো, তোরে ব্লক দেওয়ার কারন, ও কিন্তু ঈশিতার ভাই তপুর উপর খুব দুর্বল হয়ে গেছে। তাই আরকি!
ইয়ামিনের এই কথা শুনে আমি একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছিলাম। প্রীতি ওর ভালো বন্ধু ছিলো বিদায় সব কিছুই ওকে শেয়ার করতো। ইয়ামিনের এমন কথা শোনার পর কিছুই মিলাতে পারছিলামনা। প্রীতি না বলেছিলো ওর ফ্যামিলি এগুলা একসেপ্ট করবেনা। আর ও নিজেও এইসবে জড়াতে চায়না। এখন ও নিজেই কারো প্রতি দুর্বল! এই কথাটা শোনার পর আমি বুঝেছিলাম যোগ্যতা কাকে বলে। আমার অবুঝ মনটা বুঝেছিলো যোগ্যতা আর অযোগ্যতা বলে কিছু আছে মানুষের মধ্যে। আমি প্রীতির যোগ্যনা!
হ্যা! একবার প্রীতি বল্ক খুলেছিলো! ওই যে! উগ্র মেজাজ ছিলো আমার। ওকে অনেক কিছু বলেছিলাম রেগে যেয়ে সেইদিনি আবার বল্ক করে দিয়েছিলো। তবুও আমার শিক্ষা হয়নি। ওই যে! বেহায়া বলে কথা। খুব মন খারাপ থাকলেই ভাবতাম প্রীতি আমার পাশে। আসলে একটা কথা বলতেই হয় একপক্ষের ভালবাসা গুলো বেহায়া টাইপের মতো। তবে হুম! এই একপক্ষ ভালবাসায় ভালবাসার মানুষটাকে নিজের ইচ্ছা খুশি, নিজের মনের মতো করে অনুভব করা যায়।
.
প্রীতি আমার সামনে এসে থামার সাথে সাথে আমি সিগারেটটা ফেলিয়ে দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। শরীরটা যেনো শীতের হাওয়ায় খুব কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। এরকম কাঁপুনি দেওয়ার কথানা! কাঁপুনিটা দুইটা কারণ মিক্স হয়ে যে, আমার শরীর থেকে পরিত্যাগ হলো তা বুঝতে পেরেছিলাম। আর এই কাঁপুনির প্রথম কারণ প্রীতির নামটা বল্লে ভুল হবেনা। ও কাছে আসার পর কেন যেনো ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। খুব আনইজি অনুভব করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর ও নিজেই বল্লো, কেমন আছো?
ওর কথাটা শোনার পরেও যেনো আমি বিশ্বাস করতে পারছিলামনা! প্রীতি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তা ও আবার কেমন আছি তা জিজ্ঞাস করেছে। আমি একটু চুপ থাকার পর কাপা কাপা কন্ঠে বল্লাম, ভালো আছি তুমি?
প্রীতি একটু হেসে বল্লো, ভালো।
হুট করে যেনো আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এতটুকু কথা জিজ্ঞাস করার জন্য থেমেছে ও! যেই আমি কিছু বলতে নিবো ঠিক তখনি প্রীতি বল্লো, স্যারের ওই রকম কথা বলাটা ঠিক হয়নি। এতে করে সব ন্যাশনালের স্টুডেন্টদের নিচু করেছে।
আমি কিছুটা থমকে গেলাম। ও কি করে জানলো! আমাকে এরকম থমকে থাকা দেখে প্রীতি আবার বল্লো, আমিও এইখানে চান্স পাইছি। তোমাকে যখন কথাটা বলছিলো আমি ক্লাসেই ছিলাম। কাজ থেকে ফিরতে মনে হয় লেট হইছিলো তাই না?
হায়রে! এতগুলা মাস মেসেজে কথা হইছে কোনো দিন আমার আগে জিগাইলাও না ফায়সাল কেমন আছো? আমি বেশরমের মতো খোজ খবর নিছিলাম। আর আজকে এতগুলা বছর পর এতো কথা কেমনে ফুটলো!
কথাটা আমি মনে মনে বলেই ওকে বল্লাম, হুম। আর বইলো না আজকে উত্তর বাড্ডায় ছিলাম। জানোই তো ভালো করে বাড্ডা মানেই জ্যামের ভান্ডার চারটাবাজে বাসে উঠছি নিউমার্কেট আসতে আসতে প্রায় দুইঘন্টা। তারপর নিউমার্কেট থেকা ক্লাসে আসতে আসতে দেখি দশ মিনিট লেট। আর এই লেট হওয়ার জন্য এই কথাটা তার বলাটা শোভা পায়?
"স্যারর এই কথাটা শুনে আমার পাশে বসা মেয়েটাও খুব রাগ করছিলো। আচ্ছা বাদ দাও যা হওয়ার হয়ে গেছে।
প্রীতি কথাটা বলার পর আমি বল্লাম, আচ্ছা চলো ওই সামনে থেকে চা খাই।
"না থাক তুমি খাও!
আমি একটু চুপ করে থেকে বল্লাম, মনে হয় ফুটপাত থেকে চা খাওয়ার অভ্যাস করো নাই তাই না?
"আরে কি বলো! তা না!  আচ্ছা চলো।
কথাটা ও বলা শেষেই দুইজন সামনে থাকা একটা চায়ের দোকানে যেতে লাগলাম। ঠিক সেই মুহূর্তেই প্রীতি আবার বলে উঠলো, এই অভ্যাসটা এখনো চেঞ্জড করতে পারলানা।
আমি কিছুটা চিন্তিত হয়ে বল্লাম, কোন অভ্যাসটা?
আমার কথাটা শুনে প্রীতি একটু হেসে বল্লো, এক লাইন সব কথায় বেশি বুঝো এই অভ্যাসটা। আমি বুঝালাম চা খাবোনা। আর তুমি কি বল্লা!
আমি ওর কথাটা শুনে একটু হাসলাম। চেঞ্জড করলে তো সব কিছুই চেঞ্জড করা যায়। এই নরম মনটাও তখন চেঞ্জড হয়া শক্ত হয়া যাইবো। চেঞ্জড হই নাই দেইখাই আমি পোলায় পাড়লাম এতো কিছু হওয়ার পরেও সব কিছু ভুইলা এমন ঠান্ডা হইয়া কথা কইতে। আর তাছাড়া তুমি যে এতবছর পর আমার সামনে দাঁড়াইয়া কথা কইতাছো এই জিনিসটাই তো আমি কোনো মতেই মিলাতে পারতাছিনা।
.
কথাগুলা মনে মনে বলতে বলতে চায়ের দোকানের সামনে যেয়ে প্রীতিকে বল্লাম, রং চা খাবা নাকি দুধ চা?
"রং চা,  চিনি কম করে দিতে বলো।
প্রীতির কথাটা শুনে আমি দোকানদারকে বল্লাম, মামা একটায় চিনি কমায়া আর একটাতে চিনি বাড়ায়া  রং চা বানাও তো।
কথাটা বলার পর দুইজন চেয়ারে যেয়ে বসলাম। দোকানদার চা দেওয়ার পর প্রীতি চায়ে এক চুমুক দিয়ে বল্লো, কি জব করো?
"এইতো মার্কেটিং লাইনে এরিয়া ম্যানেজার পোস্টে আছি। তুমি কি কিছু করতেছো?
প্রীতি চায়ে আরেক চুমুক দিয়ে বল্লো, আমাদের প্রাইমারি স্কুলে জব পাইছি।
"এতো বাচ্চা শামলাতে পারো?
"হুম পারবোনা কেন! কষ্ট হয়, তবে শামলাতে তো হবেই।
আমি এইবার ওর কথা শুনে বল্লাম, ও মেডাম! মেডাম গো 'আ' তে আপেল হইবোনা! এমনে বলেনা তোমার ছাত্ররা!
আমার কথা শুনে প্রীতি হাসতে লাগলো। ওর মুখের দিকে আমি তাকিয়ে রইলাম। চাইছিলাম তো এই হাসিটা আমার করে নিয়ে দেখতে। হইলোনা! প্রীতি হাসি থামিয়ে বলে উঠলো, আগের মতোই ফান করতে পারো। তবে এমনেই বলে স্টুডেন্টরা।
"এখনো ওই আগের মতোই আছি।
আমার কথাটা শুনে ও একটু চুপ করে থেকে বলে উঠলো, কি হলো তুমি দেখি এখনো চা খেলে না!
"চা থেকে যেই ধোয়াটা বেড় হয় আগে সেইটার ঘ্রাণটা নেই তারপর চা খাবো। সময়টা যখন খারাপ ছিলো পকেটে টাকা থাকতো না তখন থেকেই এইরকম ভাবে চা খেতাম। যাতে কিছুটা সময় নিয়ে চায়ের দোকানে বসে থাকতে পারি। সেই অভ্যাসটা এখনো রয়ে গেছে।
দুইজনের মধ্যে আর কথা হলোনা। চা খাওয়া শেষে ভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে বেড় হওয়ার সময় প্রীতি আবার বলে উঠলো, আগে যেইখানে থাকতা সেইখানেই থাকো?
"হুম। তুমি কই থাকো আমি জানি।
"ইন্টারের পড়েই চাকরিটা নিছিলা তাই না?
আমি কিছুটা অবাক হয়ে বল্লাম, তুমি কেমনে জানলা?
"তোমার ফ্রেন্ডদের কাছেই শুনছি। আর আমিও দেখছিলাম একবার।
"হুম ওইখান থেকে প্রমোশন হওয়ার পর এখন অন্য কম্পানিতে আছি।
তারপর আর কেউ কোনো কথা বাড়ালামনা। আমি রাস্তা থেকে রিকশা থামিয়ে ওকে উঠিয়ে দিয়ে বল্লাম, যাও তাহলে!
"একি এরিয়ায় তো থাকি এক সাথেই তো যাওয়া যাবে!
"আমার একটু কাজ আছে। তুমি যাও।
আমার কথাটা শুনে প্রীতি আর কোনো কথা বল্লোনা। আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে রিকশাচালক কে যেতে বল্লো।
.
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিসের কাজ কোনো কাজ নাই আমার। ওর সাথে কেন রিকশায় উঠবো! আমি কি ওর যোগ্য! কেন এমন অবেলায় ধরা দিলো আবার! ভালোইতো ছিলাম! আবার আমাকে সাইকো বানাইতে আসছে! কথাটা একটু জড়তেই বল্লাম।  তারপর আর বেশি দেড়ি না করে আমি হাটা ধরলাম।
.
বাসায় আসার পর রাতে খাওয়া দাওয়া করে রুমে যাওয়ার পর বড় আপার মেয়ে এসে বল্লো, তুমি বাসায় আইসা আমার সাথে কথাও বল্লা না আর তোমার সাথে কথা নাই।
আমি ওর দেকি তাকিয়ে একটু হাসলাম। প্রীতির সাথে দেখা হওয়ার পর কেন যেনো মনটা কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেছে। বার বার ওর কথাই মনে পরছে। বাসায় যে বড় আপা ওর মেয়েকে নিয়ে এসেছে সেই দিকটা খেয়াল করেও কারো সাথে বেশি কথা না বলেই খাওয়া শেষে রুমে এসে পড়েছিলাম। তাই  সিমি (,ভাগিনী) এসে এই কথা বল্লো। আমি বিছানা থেকে উঠেই সিমি কে কুলে নিয়ে আবার বিছানায় শুয়ে বলতে লাগলাম, মা আজকে মামা খুব টায়ার্ড তাই মনে ছিলোনা। সরি!
"কান ধরো।
আমি এইবার একটু হেসে কান ধরে বল্লাম, ঠিক আছে?
সিমি একটু হেসে বল্লো, হুম!
ঠিক সেই সময় আপা এসে বল্লো, কি হইছে আজকে দেখি একদম চুপচাপ!
আমি বিছানা থেকে পা চাপিয়ে বল্লাম, কিছু না। দুলাভাই কেমন আছে?
"ভালোই আছে। তোর তো কোনোদিন কাজ শেষ হইবোনা আর আমার বাসায় যাওয়ার সময় হইবোনা।
আমি একটু হেসে বল্লাম, আচ্ছা জামু। এইবার ঈদের ছুটিতে যা সিউর জামু।
"হ দেখুমনি। কালকে কাজে যাবিনা?
"হুম। কেন?
"না এমনেই। ঘুমা তাইলে।
বড় আপা কথাটা বলেই সিমিকে বলে উঠলো, চল ঘুমাবি।
আপার কথা শুনে আমি বল্লাম, থাক আমার সাথেই ঘুমাইবো। তুই যাইয়া শুয়ে পড়।
"এমনেই রাতে ঘুমাইতে চায়না। রেডিওর মতো কথা কইতেই থাকে। আর তুই কস তোর সাথে ঘুমাইবো!
আমি আবারো হাসলাম। তারপর বল্লাম, সমস্যা নাই। আমার ছোট মা'র সাথে গল্প করমু আজকে। যা তুই।
কথাটা বলেই সিমির গালে চুমু দিয়ে বল্লাম, আম্মু পঁচা তাই না মা!
সিমি ওর মা'র দিকে তাকিয়ে বল্লো, হুম!
.
আপা চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ সিমির সাথে গল্প করলাম। ও ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ফেসবুকে ঢুকে  সেই পাচ বছর আগের আইডিটা খুজে পেলাম। এখনো বল্ক করানো! আমি অতি ঘনিষ্ট মানুষ ছাড়া কারো মেসেজ চ্যাটিং লিস্টে রাখিনা। কথা বলা শেষ হলেই মেসেজ ডিলেট করে দেই। কিন্তু প্রীতির মেসেজগুলা এখনো ডিলেট দেওয়া হয়নি। ম্যাসেঞ্জারে ওর ছবিটা দেখতে পাচ্ছিলাম।  আগের থেকে কিছুটা মোটাও হয়েছে। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ প্রীতির ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকার পর ওর দেওয়া লাস্ট মেসেজটার দিকে তাকালাম। 'দেমাগ যেহুতু দেখায় তাহলে আমারে মেসেজ দাও কেন? যেয়ে মেয়ে দেমাগ দেখায়না তাকেই মেসেজ দেও।' ওর এই মেসেজটা পড়ে একটু হাসলাম। এই মেসেজটা ও সেন্ড করার পর আর হাজার চেষ্টা করার পড়েও ওর আইডিতে মেসেজ ঢুকেনি। নীল নামটা কালো হয়ে গেছিলো। এক এক করে আমাদের সব মেসেজ গুলো দেখতে লাগলাম। কি লুলামি গুলাইনা করেছিলাম ওর সাথে! ইশ! কত ইমোশনাল কথা বার্তা লিখেছিলাম। মেসেজ গুলা পড়তে লাগলাম আর নিজে নিজেই হাসতে লাগলাম। আচ্ছা! এখনো কি সেই আগের মতো আছি আমি! হুম, ইমোশন টা আগের মতোই আছে। তবে আগে এইটা কন্ট্রোল করে না রাখতে পেড়ে প্রকাশ করে দিতাম। কিন্তু এখন সেইটা কন্ট্রোল করার ক্ষমতাটা আছে।
.
মেসেজ গুলো চেক করার পর হঠাৎ করে লাইক ইমোজে চাপ লেগে গেলো। আমি যেনো কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। মেসেজটা সেন্ড হলো কি করে! প্রীতি আনবল্ক করেছে আমাকে! আমি আর বেশিক্ষণ অনলাইনে থাকতে পারলামনা। খেয়াল করে দেখলাম রাতের প্রায় দুইটা বেজে গেছে। আমি আর দেড়ি না করে ফেসবুক থেকে বেড় হয়ে শুয়ে পড়লাম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডি হওয়ার পর নাস্তার টেবিলে যেয়েই দেখি গরম ভাকা রান্না হইছে সাথে কয়েক রকমের ভর্তা। আমাকে খাবার দেওয়ার পর কেন যেনো টেস্ট টা অন্য রকম লাগলো। বুঝতে আর বাকি রইলোনা। রান্নাটা কে করেছে। বড় আপা করেছে। আমি খেতে খেতে বল্লাম, অনেক দিন পর খাবারে আলাদা টেস্ট পাইলাম।
আমার কথা শুনে আপা বল্লো, এখন একটু আলাদা টেস্ট খাওয়ার মানুষকে ঘরে আনলেই পাড়োছ। ইন্টার এক্সাম দেওয়ার পর তো খালি বলতি আর তিন বছর পর কোনো মেয়েকে কাবিন পড়িয়ে রাখবি অনার্স কমপ্লিট হলেই বিয়ে করে ফেলবি। কই এখন তো বিয়ের নাম মুখে নেস না।
আমি বড় আপার কথা শুনে একটু হাসলাম তারপর বল্লাম, তখন বিয়ের কথা বল্লে তুই বলতি আরো দশ বছরের আগে বিয়ের নাম মুখে নিস না। এখন মাত্র পাঁচ বছর না হতেই আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেলি?
"আমার ননাসের খালাতো বোন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। দেখতে খুব সুন্দর। আমার ননাস তোর কথা বলছে। কি বলস কথা বার্তা শুরু করবো?
আমি খাওয়াটা শেষ করে হাত মুছতে মুছতে বলে উঠলাম, সুন্দর যেহেতু খুব। তাহলে মেয়ে ভালো হবেনা! যেই যুগ আল্লাহ জানে কয়টা পোলার সাথে এন্ট্রি মারছে।
আমার কথা শুনে বড় আপা বল্লো, তোর মুখে কোনো কথা বাজেনা।  খারাপ হলে কি আমি বলতাম?
"বাদ দে।
কথাটা বলেই ভাগ্নিকে একটু কোলে নিয়ে চুমু দিয়ে বল্লাম, মামা কাজ শেষ করে আসার সময় চেসপাফ, স্ট্রবেরি চকলেট নিয়া আসুম ওকে?
আমার কথাটা শুনে ভাগ্নি খুশিতে আমার গালে চুমু দিয়ে বল্লো, কোণ আইস্ক্রিম ও আনবা!
আমি একটু হেসে বল্লাম, ঠিক আছে।
তারপর ওকে কোল থেকে নামিয়ে বেড় হয়ে গেলাম।
.
কাজ শেষ হওয়ার পর সেলস রিপোর্ট গুলো আর.এস.এম কে পাঠানোর পর কি মনে করে যেনো ডাটা টা অন করলাম। ম্যাসেঞ্জারের টুংটুং আওয়াজে প্রথমেই দেখলাম প্রীতির মেসেজ। মেসেজটা ভিউ করার পর দেখলাম ওর চারটা মেসেজ। এক এক করে সব মেসেজ পড়ার পর বুঝতে পারলাম অনেক আগেই ও আমাকে বল্ক খুলেছে। কিছুটা অবাক হয়ে লিখলাম, কবে খুলছো বল্ক?
মেসেজ দেওয়ার মিনিট দুই পর রিপ্লাই আসলো, বল্ক দেওয়ার দুই বছর পর।
"কেন খুললে বল্ক?
"গল্প পড়ার জন্য। একটা গল্প লিখছিলে আমাকে নিয়ে ইয়ামিন বলছিলো। ভাবলাম কি অখাদ্য গল্প লিখছো। তারপর পড়ে দেখলাম লেখাটা ভালোই ছিলো। তারপর আর বল্ক করতে পারিনাই।
আমি ওর মেসেজটা সিন করার পর আর রিপ্লে দিলাম না। কিছুক্ষণ যাওয়ার পর ওর আর মেসেজ না পেয়ে আবেগ টা কন্ট্রোল না করতে পেড়ে নির্লজ্জের মতো বলে উঠলাম, মেসেজ কেন দিলা না?
প্রীতি হাসির ইমো দিয়ে বল্লো, এমনি।
ওর এরকম রিপ্লাই দেখে কেন যেনো মেজাজটা চটে গেলো। আগেও ঠিক এরকমভাবেই কথা বলতো সিরিয়াস কথাগুলো হেসে উড়িয়ে দিতো। আমি আর কিছু না লিখে চুপ করে রইলাম। হুট করে আবার মেসেজ আসলো, মেসেজ দিলে কি হতো?
"জানিনা।
"আগের মতই এখনো একটুতে রেগে যাও। খাইছো?
"বাসায় যাচ্ছি মাত্র। তুমি?
"হুম। কাল ভার্সিটিতে আসবা?
"হুম।
"আচ্ছা এখন আর লিখোনা কেন?
"টাইম পাই না আগের মতো তাই।
বাড়িতে আসার আগ পর্যন্ত দুইজন কথা বলতে লাগলাম। কেন যেনো মনে হচ্ছিলো প্রীতি মেসেজ দিয়েও আমার মেসেজের রিপ্লাই এর জন্য আমার মেসেজেই থাকতো। না হলে মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথেই কেন মেসেজ সিন হয়ে যেতো!
.
বাসায় আসার পর রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে প্রীতির সাথে আবারো কথা হলো। ও যে মনের ভিতর পুড়ানো কোনো দ্বিধা না রেখে আমার সাথে কথা বলছিলো আমি সহযেই বুজে ফেলেছিলাম। কেন যেনো বারবার ইচ্ছে করছিলো পুড়ানো কথা গুলো উঠাই একবার। কিন্তু মন চাইলেও নিজেকে আর দ্বিতীয় বারের মতো কষ্ট দিতে চাচ্ছিলামনা। অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর নাহ! নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিলেও কেন জানি মনটা একটা প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আকুল হয়েই রয়েছিলো। যেই উত্তরটা আজব্ধি জানা হয়নি। 'ও কেন আমাকে বলার পর কারো বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিলো'! কিন্তু সেইটাতে ও সফল হতে পারে নি। ওর সাথে যোগাযোগ ছিন্ন হওয়ার পড়েও আমি ওর খোজ ঠিকি নিতাম। জানতে পেড়েছিলাম সেই ছেলেটার সাথে ওর কোনো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়নি।তাছাড়া ওই ছেলেটাই জড়াতে চাইনি ওর সাথে।
.
সাপ্তায় চার দিন ক্লাস ছিলো। সেই চার দিনি প্রীতির সাথে দেখা হতো। ওর সাথে যখন কথা বলতাম তখন মনের ভিতর খুব রাগ থাকতো। ইচ্ছে করতো এতোদিনের রাগ গুলো একটু ঝেড়ে ফেলি। কিন্তু কেন জেনো হেসে হেসেই ওর মতো করেই কথা বলতাম। ঠিক আগের মতো!
.
আজ যখন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ক্লাস রুমের বাহিরে প্রীতিকে দেখতে পেলাম। ও তখন বরকা পড়া ছিলো। সাথে নেকাব পড়নে। কি মনে করে যেনো ওর কাছে যেয়ে কোনো কথা খুজে না পেয়ে বলে উঠলাম, হঠাৎ নেকাব পরলে আজকে?
প্রীতি কিছুটা চমকে গিয়ে বলে উঠলো, তুমি কেমনে বুঝলা আমি হবো!
আমি ওর বান্ধবীর সামনেই বল্লাম, চোখটা তো আর ডাকো নাই! মুখস্ত করা হয়ে গেছে চোখটা!
কথাটা বলেই খেয়াল করলাম প্রীতির সাথে থাকা মেয়েটা প্রীতির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। মেয়েটার হাসির লক্ষণটা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগলোনা।আমি একটু দাঁড়িয়ে থেকে  দেখলাম প্রীতি কিছু বলে কিনা? কিন্তু প্রীতি কিছু বল্লোনা। আমিও আর ওদের সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে আস্তে করে ক্লাসে ঢুকে গেলাম।
.
ক্লাস শেষে আমি আস্তে করে বেড় হয়ে গেলাম। মেইন রোডের দিকে বাড়ি ফেরার জন্য যেই গাড়ি খুজছিলাম ঠিক তখনি প্রীতিকে দেখললাম আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাকে দেখেই ও বল্লো,খুব তাড়া আছে মনে হচ্ছে!
আমি ওর দিক থেকে চোখটা ফিরিয়ে নিয়ে বল্লাম,তা না তুমিতো চাচ্ছ না আমি তোমার কাছে ভিড়ি। তা না হলে আজ আড়াল হয়ে থাকার জন্য নেকাব পরতে না।
আমার কথা শুনে প্রীতি একটু হাসলো। তারপর বল্লো, এই অভ্যাস টা কি তোমার পরিবর্তন হবেনা!
"কোন অভ্যাস!
"এই যে একটু বেশি বুঝো। গত পড়শু বাসায় নানী আসছে। আমি নেকাব পড়ে বাহিরে বেড় হইনা কেন সেই জন্য কত কিছু বল্লো, তাই আজ পরতে হইছে।
প্রীতির কথাটা শুনে আমি কিছুটা থমকে গেলাম। আসলেই আমি বেশি বুঝি। না হলে এতো সিম্পল বিষয় নিয়ে এতো বেশি রিয়েক্ট কেন করি! জানিনা আমার এই উগ্র মেজাজটার জন্য আর কত ভুগতে হয়। তবে এই স্বভাবটা যে কখনো পরিবর্তন হবে না তা ভালো ভাবেই বুঝা হয়ে যাচ্ছিলো দিনকেদিন।
"তোমার ফোন নাম্বারটা দাওতো।
প্রীতির কথায় যেনো বাস্তবে ফেরলাম। আরো পাঁচ বছর আগে যখন আমার ফ্রেন্ড গুলাকে ওর নাম্বার দিয়েছিলো কেন যেনো ওর কাছ থেকে নাম্বারটা চাইতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু চাইলে যে দিবেনা সেইটা ভেবে আর চাওয়া হয়নি। কারণ  ওই যে আমি খারাপ ছিলাম!আমি আর বেশি কথা না বাড়িয়ে ওকে নাম্বারটা দিয়ে দিলাম। নাম্বারটা প্রীতিকে দেওয়ার পর ও আবার বল্লো, চলো বাসায় যাবা না?
আমি ওর কথা শুনে বল্লাম, নাহ! কাজ আছে রিকশা করে দিচ্ছে তুমি চলে যাও।
"কি কাজ!
"অফিসিয়াল কিছু কাজ আছে। একজন আসবে।
"এতো রাতে!
"হুম।
কথাটা বলেই সামনে দিয়ে যেতে নেওয়া একটা রিকশা ঠিক করে প্রীতিকে রিকশায় উঠতে বল্লাম। প্রীতি আর কোনো কথা না বলে রিকশায় উঠে বসলো। রিকশায় ও উঠার পর রিকশাওয়ালা যেতে লাগলো। চাইলে ওর সাথে যেতে পারতাম। কেন যেনো কিছু একটা বাধা দিচ্ছিলো আমাকে। কি করে যাবো আমি! এইটাকে নিয়ে যে আমি কল্পনায় নিজের মনের মতো স্বাজিয়ে রিকশা ভ্রমণ দিয়েছি। ও আমার হাত জোরা ওর বাহুডোরে আবদ্ধ করে বসে ছিলো। আমি সেই কল্পনাটা কোনোমতেই ওর পাশে বসে নষ্ট হতে দিতে পারবোনা। আমার কল্পনা সত্যি হয়ে থাকুক সারাজীবন। বাস্তবে না হয় সে সুখ নাইবা উপভোগ করলাম।
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কেন যেনো একটু ভালো থাকার জন্য আবারো ওকে বারবার কল্পনায় এনে অনুভব করতে লাগলাম। আমার কল্পনায় খুব রাগ দেখাই ওর উপর কিন্তু সেই রাগ ভুলে যাই ওর মৃদু স্পর্শে সাথে ওর ছোট একটা কথায়। 'তোমাকে বুঝতে ভুল করে ফেলেছিলাম' আমি ওর এতটুকু কথায় যেনো তৃপ্তি পেয়ে উঠি।  হাহ! এই মিথ্যা সুখটা জেনো মুহূর্তে প্রাণ জুড়িয়ে দেয় আমার।
.
সারাটা রাস্তায় ওকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে আনমনে বাসায় এসে পরলাম বুঝতেও পারলাম না। বাসায় এসে ফ্রেশ হওয়ার পর খাওয়ার টেবিলে বসতেই আপা ওর মোবাইলটা আমার চোখের সামনে এনে বলে উঠলো, কেমন দেখতে মেয়েটা?
আমি ওর কান্ড দেখে বল্লাম, দেখ বইন এইগুলা বাদ দিবি। ভালো লাগতাছেনা খেতে দে, খেয়ে ঘুমাইতে যাই।
আপা একটু রাগ নিয়েই বল্লো,প্রেম পিরিতি যদি করস বইলা দে। ওই মেয়ের বাসায় যাই।
আমি একটু আপার কথা শুনে হাসলাম। আমাদের ফ্যামিলির বড় মাথাই হচ্ছে আপা। ঘরের সবাই তার কথায় সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ে হওয়ার পরেও আপার রাজনিতীটা এখনো সেই আগের মতোই আছে। আমি আপার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বল্লাম, ভাত দিবি! সময় হোক আমি নিজেই বলমু বিয়ে করা আমাকে তখন যত খুশি মেয়ে এনে দিছ সব বিয়ে করবো। তারপর একটা বউ সপ খুলমু খুশি!
আপা আমার কথা শুনে একটু হেসে আমার পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে বল্লো, ভালো আর হইলিনা।
তারপর আপা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আমাকে খেতে দিলো।
.
খাওয়া শেষে হাতের কাজ গুলো শেষ করে অনলাইনে ঢুকতেই দেখি প্রীতি একটা ফটো সেন্ড করেছে। ফটোটা ভিউ করার সাথে সাথেই দেখলাম বুক লিস্টের ফটো এইটা। আমি ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে যেই বেড় হতে নিলাম অনলাইন থেকে ঠিক তখনি প্রীতি লিখলো, তোমাকে আজ রিকশাতে উঠতে বল্লাম রিকশায় উঠলানা। পরেতো ঠিকি রিকশা করে বাসায় যাচ্ছিলে। এই তোমার কাজ?
আমি কিছুটা অবাক হয়ে লিখলাম, তা না। যে কাজের জন্য দাড়িয়েছিলাম সেইটা হয়ে গেছে। তাই চলে আসছিলাম। তুমি কি করে দেখলে?
"ভালোই মিথ্যা বানাতে পাড়ো। কোনোই কাজ ছিলোনা। আর আমি দেখি নাই। মনে হলো বল্লাম আর সেইটাই হয়ে গেলো।
আমি আর ওর  কথার উত্তর দিতে পারলাম না। ও আবার বল্লো, কবে যাবা বই কিনতে?
"দেখি শুক্রবার যাবো।
"আচ্ছা আমি মিসকল দিচ্ছি নাম্বারটা সেভ করে রাখো। শুক্রবার বিকেলবেলা ফোন দিও একসাথেই কিনবোনে বই।
ওর মেসেজটা পড়ে আমি একটু হাসলাম। না চাইতেই নাম্বার। ইচ্ছা যখন ছিলো তখনি পেলাম না। আর এখন! খুব খারাপ ছিলাম তখন! কেন এমন করলা। ভুলটাতো বয়সের ছিলো! আবার কি ইগনোর করবা! এই খারাপ মানুষটাকে!
কথাটা ভাবতেই খেয়াল করলাম মোবাইলটা কাঁপছে।  মোবাইল স্কিনের দিকে তাকাতেই দেখলাম গ্রামীণ নাম্বার বুঝতে আর বাকি রইলো না কে হবে! আমি নাম্বারটা সেভ করে ওকে মেসেজ দিয়ে বল্লাম, ঘুমাবা কখন?
"এখনি। তুমি?
"আমিও। আচ্ছা গুড নাইট।
প্রীতি একটা স্টিকার সেন্ড করলো। আমি আর কোনো রিপ্লাই না করে আস্তে করে শুয়ে পরলাম।
.
কর্মজীবনে শুক্রবারটা যেনো আমার কাছে ঈদের মতো মনে হয়। সারা রাত ভরে মুভি  না হয় নাটক দেখে, ভোর হলে নিদ্রায় যাই। কিন্তু এই শুক্রবার মধ্য রাত পর্যন্ত প্রীতির সাথেই চ্যাটিং আর কিছু সময় মোবাইলে কথা হলো। প্রায় চার বছর পর কারো সাথে এতো লম্বা সময় কথা বল্লাম। খুব খারাপ  লাগে আগের কথা গুলো মনে পরলে। কতো ইগনোর গুলোই না করে ছিলো ও আমার সাথে। কিন্তু আজ! কেন যেনো রাতে ও অনলাইন থেকে বেড় হয়ে যাওয়ার পড়েও আমি প্রায় ঘন্টা খানিক ওর টাইমলাইনে ঘুরলাম। বয়স বাড়ার ছাপটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো ওর ছবিগুলোতে। প্রায় মিনিট দশেক ওর ছবির দিকে তাকিয়ে রইলাম । শত চেষ্টা করার পরেও আমার হাতটা ওর ছবির চোখ দুটো ছুয়ে দিলো। জানি কাজটা মোটেও ঠিক হয় নি। কিন্তু কল্পনায় যদি ওকে অনুভব করতে পারি তাহলে ওর ছবি গুলোতে হাত বুলালে এতো জঘন্য পাপ হবে না। এতো ভালো লাগে কেন ওকে! এতো কিছু ঘটে যাওয়ার পর কেন ওর প্রতি আমার এতো ফিলিংস কাজ করে। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। নিজেকে শত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার হাতটা সেই বাধা অতিক্রম করে ওর ছবিটা আমার ফোনের গ্যালারিতে সেভ করে নিলো। আমি আর বেশিক্ষণ দেড়ি না করে মোবাইলটা হাত থেকে রেখেই শুয়ে পরলাম।
.
সকাল আটটা বাজতেই সিমি আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে গুন গুন করে বলতে লাগলো, আজকে ঘুড়তে নিয়া যাবা কিন্তু আমাকে।
আমি ঘুমের ঘোড়ে বল্লাম, আচ্ছা মা।
আমার কথাটা শুনে ভাগ্নি খুশিতে একটার পর একটা কথা বলতেই লাগলো। ওর কথা শুনে আমিও ঘুমের ঘোরে ওর কথার উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। একটা সময় ওর নাড়াচাড়াতে আর টিকে থাকতে না পেরে ঘুমটা একদম ভেঙ্গে গেলো। মাথাটা যেনো ঘুম না হওয়ায় কিছুটা ভাড় ভাড় লাগছিলো। মাঝে মাঝে মা কাচা ঘুম থেকে ডাক দিলে মেজাজটা চটে গেতো। তারপর অনেক কথা শুনাতাম তাকে। কিন্তু সিমির এরকম পাকনা পাকনা কথা শুনে মেজাজটা আমার চটলোনা। আমি সিমিকে আমার বুকের উপর উঠিয়ে দুষ্টামি করতে লাগলাম। আমি বুঝিনা সবে মাত্র তিন বছর ওর এতো পাকনা পাকনা কথা কোথা থেকে খুঁজে পায় ও!
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করেই ভাবলাম সিমিকে নিয়েই বইগুলা কিনে নিয়ে আসি আর ওইখান থেকে না হয় ওকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবো। কথাটা ভাবতেই মনে পরলো প্রীতির কথা। প্রীতিতো বলেছিলো বই কিনতে গেলে ওকে যেনো বলি। আমি আর বেশি দেড়ি না করে প্রীতিকে ফোন দিয়ে বল্লাম ও যেনো চারটার ভিতর নীলক্ষেত থাকে।
আমার কথা শোনার পর ও বল্লো ঠিক আছে।
.
বিকেলে সিমিকে আপা রেডি করিয়ে দিয়ে ওর জ্যাকেট টা আমার ব্যাগে ভরে দিয়ে বল্লো, সন্ধ্যা হলে জ্যাকেট টা পরিয়ে দিস। না হলে কিন্তু ঠান্ডা লাগবে।
আমি আপার কথা শুনে বল্লাম,ঠিক আছে।
কথাটা বলেই সিমিকে নিয়ে রওনা দিলাম।
.
নীলক্ষেত আসার কিছুক্ষণ পরেই প্রীতিও চলে আসলো। সিমিকে আমার সাথে দেখে বল্লো,কে এইটা?
"বড় আপার মেয়ে।
আমার কথাটা শোনার পর প্রীতি সিমিকে কোলে নিয়ে বলতে লাগলো, আন্টি তোমার নাম কি!
সিমি প্রীতির কথা শুনে আমার দিকে তাকালো। আমি যখন বল্লাম,আন্টিকে তোমার নাম বলো।
তখন সিমি বল্লো,সিমি।
বই কিনা থেকে শুরু করে সারাটা সময় সিমি আর প্রীতি একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো প্রীতিও সিমির সাথে সাথে বাচ্চা হয়ে গেছে। অল্প সময়ে দুইজনের মধ্যে যেনো একটা কঠিন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে গেলো। আমি চুপ করে ওদের কথা শুনছিলাম। হা হা হা! দুই বান্ধবি একে অপরের সাথে সুখ দুঃখের কথায় মেতে উঠেছে।
.
সারাটা বিকেল সোরয়ার্দি উদ্দান কাটিয়ে দিলাম।  সন্ধ্যার আযান দেওয়ার পর সেইখানকার একটা রেস্টুরেন্টে বসে তিনজন কিছু খাওয়াদাওয়া করে আমি প্রীতিকে বলে উঠলাম, বাসায় যাবানা?
প্রীতি আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো, সিমির সাথে গল্প করতে ভালোই লাগতেছে।
আমি আবার বল্লাম, রাত হয়ে যাবে কিন্তু।
প্রীতি আর কথা না বাড়িয়ে সিমিকে নিয়ে বসা থেকে উঠতে লাগলো। আমিও ততক্ষণে বিলটা দিয়ে একসাথে তিনজন বেড় হয়ে গেলাম।
.
বাহিরে বেড় হয়ে রিকশা ডাক দিয়ে প্রীতিকে রিকশাতে উঠতে বল্লাম। প্রীতি উল্টা আমাকেই বল্লো, তুমি আগে উঠো।
জানি আজ আর ওর কাছে মিথ্যা বলে পার পাওয়া যাবেনা। তাই কিছু না বলে আমি নিজেই আগে রিকশাতে উঠে বসলাম। আমি রিকশাতে উঠার পর সিমি আমার কোলে এসে বসলো। তারপর প্রীতি যেই আমার পাশে বসলো তখনি রিকশাওয়ালা রিকশা চালাতে শুরু করলো। রিকশার ঝাঁকিতে মাঝেমাঝে প্রীতির হাতটা আমার হাতের সাথে ঘেঁষে যাচ্ছিলো। কেমন মাতাল করা স্পর্ষ যেনো ছিলো।  আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে আমার হাত দুটো দিয়ে শক্ত করে সিমিকে ধরে রাখলাম। কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাঝে মাঝে প্রীতি আর সিমি টুকটাক কথা বলে যাচ্ছিলো। রিকশা পলাশির কাছাকাছি আসতেই প্রীতি আমাকে উদ্দেশ্য করে বল্লো, বিয়ে কবে করতেছো?
"দেড়ি আছে। তুমি?
"বাসা থেকে ছেলে দেখা শুরু করে দিছে। ভালো ছেলে পেলেই বিয়ে দিয়ে দিবে।
"ওহ!
আমার কথাটা শুনে প্রীতি আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে আবার বল্লো, প্রেম ট্রেম করোনা!
.
আমি এইবার ওর কথা শুনে একটু হাসলাম। যাক এতোদিন পর আমার না জানা কথা গুলোর উত্তর জেনে নেওয়ার সুযোগ এসেছে। তারপর আমি আর কিছু না ভেবে বল্লাম, তুমি ব্লক করার পর আরো চারটার  সাথে রিলেশন করেছিলাম।
প্রীতি আমার কথাটা শুনে একটু হেসে বল্লো, এখন কি চলতেছে?
"নাহ!
"কেন!
"খারাপ সময় আমাকে বুঝার মতো কেউ ছিলোনা। এখন আমার ভালো সময় আসছে। খারাপ সময়তেই থাকলোনা। এখন ভালো সময়ে রেখে কি লাভ! সবাই নিজের স্বার্থ বুঝে।
আমার কথাটা শুনে প্রীতি চুপ করে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর কিছুটা নরম শুরেই বল্লো, পড়াশোনার পাশাপাশি এতো লম্বা সময় কাজ করতে খুব কষ্ট হতো তাইনা!
আমি এইবার ওর দিকে তাকিয়ে বল্লাম, 'হতো' আর 'হয়' এর মধ্যে পার্থক্য কি জানো!
প্রীতি একটু সময় নিয়ে বল্লো,'হতো' অতিত আর 'হয়' বর্তমান!
ওর এরকম সঠিক উত্তরটা শুনে আমি বল্লাম, তুমি এখন যেই কথাটা আমাকে বল্লা,আমার পড়াশোনার পাশাপাশি এত লম্বা সময় কাজ করতে কষ্ট হতো কিনা! এই কথাটা তুমি বলার পর যতটা কষ্ট লাগছে তখন ততটা লাগে নাই। তোমার এই কথাটা সেই সময়টাতে 'হতো' না হয়ে যদি 'হয়' বলে কেউ বলতো, তাহলে সেই মানুষটা আমার কাছে সবার থেকে উপরে থাকতো। কিন্তু তখন তো আমাকে কেউ বুঝলোনা! আসলে আমার সাথে এমনহওয়াটাই লিখা ছিলো। তবুও আমি সিজিল হয়নি। আগে যেমন ছিলাম এখনো সেইরকমের বেসরম আছি।
আমার কথাটা শুনে প্রীতি মাঝে যে কিছু একটা ঘটলো তা আমি ওর খামোশ থাকা দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম। আমি আবার ওকে বলে উঠলাম, আচ্ছা প্রীতি! তোমার প্রতি যখন দুর্বল ছিলাম। তখন তুমি আমাকে বলছিলা তুমি এইসব রিলশনে যেতে চাও না। আর তোমার ফ্যামিলি এগুলা একসেপ্ট করবেনা। কিন্তু তার কিছুদিন পর ঈশিতার ভাই তপুর প্রেমে কেমনে পরলা! তখন কি তোমার ফ্যামিলির কথা ভাবলা না!
এইবার প্রীতি আমার কথা শুনে আমার দিক থেকে চোখটা সড়িয়ে নিলো।
.
আমি চাচ্ছিলাম না এতো দিনের না বলা কথা গুলো আর বুকের ভিতর চেপে রাখি। তাই অবাধ্য ছেলের মতো আবারো ওকে বলতে লাগলাম, কি হলো! এইটার উত্তর তোমার কাছে নাই। তাই না!
প্রীতি এইবারো কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলো। এইবার আমি কিছুটা কড়া ভাবেই বল্লাম, জানো! যখন ইয়ামিন আমাকে বলছিলো দোস্ত তুই প্রীতির ক্যাটাগরির না। ওর পিছু ছেড়ে দে। সেইদিনি সব থেকে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিলাম আমি। ওর এই কথাটার মানে ছিলো,আমি তোমার যোগ্যা না! জানো প্রীতি! আমার মাথায় কখনো যোগ্যা অযোগ্যা নিয়ে কনো কথা আসতোনা। ইয়ামিন এই কথাটা বলার পর থেকে আমি সব ক্ষেত্রেই এখন এই যোগ্যা অযোগ্যা নিয়ে ভাবি। ওর মুখ থেকে এই কথাটা শোনার পর আমার ম্যান্টলটিতে খুব গভীর ভাবে আঘাত খেয়েছিলো। আমাদেরতো এক আল্লাহতালা তৈরি করেছিলো। এমন না যে আমরা একে অপরে ভিন্ন ধর্মের! ভার্চুয়ালে আমাকে যেমন ভাবছো বাস্তবে তেমন ছিলাম না। হয়তো অনেক ফাজিল ছিলাম। মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টামি করতাম। এ টু জেট খুব খারাপ ছিলাম। তোমার কি মনে হয়না, এইটা বয়সের সমস্যা ছিলো! তুমি হয়তো এরকম ছেলে একসেপ্ট করোনা তোমার লাইফে। কিন্তু আমি তোমার মাঝে আমার ভালো থাকাটা খুজে পেয়েছিলাম। যা তুমি হতে দিলানা।  আসলে কি জানো, আমার মতো কিছু খারাপ মানুষগুলার মনটা যদি  ময়নাতদন্ত করে দেখা যেতো তাহলে ফরেনসিক রিপোর্টে ধরা খেতো এই মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টামি, খারাপ কাজগুলো শুধুমাত্র কষ্টগুলো লুকানোর জন্য মিথ্যা পন্থ।
.
কথাগুলো বলার পর আমি আর কথা বল্লাম না। প্রীতিও যেনো খুব থমকে গেলো। সিমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হুট করে বল্লো, মামা তুমি আন্টিকে বকতেছো কেন?
সিমির কথা শুনে আমি প্রীতির দিকে তাকালাম। প্রীতি কিছুটা লজ্জিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমার কোলে থেকে সিমিকে ওর কোলে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। সিমি ওর কথার কোনো উত্তর না পেয়ে প্রীতিকে বল্লো, আন্টি মামা তোমকে বকলো কেন?
প্রীতি এখন আর চুপ করে না থেকে বল্লো, তোমার মামা পঁচাতো তাই বকা দিছে মা!
প্রীতির কথা শুনে সিমি বল্লো, নানুকে বিচার দিবো তোমাকে মামা বকছে।
প্রীতি এইবার একটু হেসে। সিমির গালে একটা চুমু দিয়ে বল্লো, না বিচার দিতে হবেনা। আন্টি একটু ভুল করছে তাই বকা দিছে।
আমি এইবার প্রীতির কথাটা শুনে ওর দিকে তাকালাম। আমার কথাগুলো শুনে কি ওর মাঝে কিছু একটার পরিবর্তন হলোনা তো! কথাটা ভাবতেই মনে পরলো। নাহ! কিসের পরির্বতন হবে ওর মাঝে। সিমির এরকম কথার উত্তর দিতে হয়তো এই কথাটা বলেছে।
.
এলাকার প্রায় কাছাকাছি চলে আসার পর। প্রীতি আমাকে বল্লো, এতোই আমার উপর তোমার ক্ষোভ, তাহলে এই কথাগুলো আজ এই বাচ্চাটার সামনে না বল্লেই হতো।
আমি এইবার কিছু বল্লাম না। রিকশাটা যখন গন্তব্যে এসে পৌছালো আমি রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে ভাড়াটা দিয়ে প্রীতিকে ওর বাসায় যাওয়ার জন্য আরেকটা রিকশা ঠিক করে দিলাম।
রিকশাতে ও উঠার পর সিমিকে বল্লো, আন্টি আবার দেখা হবে। টাটা।
সিমিও ওকে টাটা দিলো।  আমি সিমিকে আমার কোল থেকে নামিয়ে রিকশার হুকটা উঠিয়ে দিয়ে প্রীতিকে বল্লাম, এখনো খারাপ সময় গুলোতে কেউ পাশেনা থাকলে কল্পনায় তোমার চেহারাটা ধরা দেয়।
কথাটা বলেই রিকশাওয়ালা কে বল্লাম, মামা সাবধানে নিয়া যাইয়ো।
কথাটা বলেই আরেকটা রিকশা ঠিক করে সিমিকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
.
রাতে বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যেই বিছানায় গাঁ টা এলিয়ে দিলাম ঠিক তখনি আর.এস.এম স্যারের ফোন আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে স্যার বলে উঠলো, ফায়সাল তোমার আগামীকাল  সিলেট যেতে হবে। ওই খানে আমাদের একটা টেরিটরি আছে। সেইখানকার এড়িয়া ম্যানেজার একমাস যাবৎ রিজাইন দিছে। নতুন কাউকে নেওয়া হয় নি। এই মাসটায় তুমি আট দিন থাকবা। তুমি আসার পর ঢাকা ১ এর মামুন, রায়হান, আট দিন করে সিলেট থাকবে। যেহেতু ২৮ দিনের মাস তাই তোমাদের তিন জনকে এই দায়িত্ব দিলাম। ওইখানকার আমাদের যে এস.আর টা আছে ও নতুন একটু সাপোর্টের প্রয়োজন। আজ দুই তারিখ তুমি কাল সকালেই রওনা দিবা। আমি সেইখানকার ডিলারপয়েন্টের সব ডিটেলস তোমাকে ম্যাসেজ  করে দিচ্ছি। সেইখানেই থাকার ব্যবস্থা করে দিবে ডিলার। আর তোমার যা খরচপাতি হবে সব আলাদা পেপারে উঠিয়ে রেখো। তুমি আসলেই সেইটা সো করলে কম্পানি দিয়ে দিবে।
স্যারের কথাটা শুনে কিছুটা খুশি হোলাম। ছুটি ছাড়াই ঢাকার বাহিরে যাওয়ার ব্যবস্থাটা উনি করে দিলো! আমি আর কনো কথা না বাড়িয়ে স্যারকে বল্লাম, ঠিক আছে স্যার। আপনি আমাকে ম্যাসেজ করে দেন ঠিকানাটা আমি কাল ভোরেই রওনা দিবো।
কথাটা শেষ করেই ফোনটা রেখে কাপড় চোপড় গুছাতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
.
রাতে একফোঁটাও ঘুমালাম না। সকালে না হয় ট্রেনেই ঘুমিয়ে নিবো এই ভেবে। সারা রাত ঘরে শুয়ে টিভি দেখলাম। আর অনলাইনে বার বার চেক করতে লাগলাম প্রীতি মেসেজ দেয় কিনা। অনলাইনে ও থেকেও কোনো মেসেজ দিলোনা আমাকে। আবার ইগনোর করা শুরু করে দিলো! করুক ইগনোর! দেখাক দেমাগ।  আমার মনে জমা সব কথাতো ওকে বলেই দিছি। কি দরকার ছিলো সেইদিন আমাকে দেখে আমার কাছে আসার। না আসলেতো আর ওর সাথে কথাও বলতাম না! আসলেই নারী বিভিন্ন রূপের হয়ে থাকে। যার প্রমাণ আজ আবার পেলাম। নারী তুমি সব পাড়ো!
আমি আর একটা মুহূর্ত অনলাইনে না থেকে বেড় হয়ে গেলাম। সাথে সাথে ওকে দেওয়া ফোন নাম্বারটা মোবাইল থেকে খুলে,কম্পানির দেওয়া সিমটা শুধু চালু রাখলাম। তারপর আর কিছু না ভেবে আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দিলাম।
.
সিলেট আসার পর সময়টা ভালোই কাটতে লাগলো। সারাদিন বাহিরে কাজ করতাম সন্ধ্যা হলেই বাসায় উঠতাম। ওইখানকার পরিবেশটা যেনো খুব আলাদা। মানুষগুলোর সাথে মিশে যা বুঝলাম। সব কিছু ভালো কাটলেও কেন যেনো মনের মধ্যে একটা খোঁটা লেগেই ছিলো। প্রীতি! এতোদিন পর ওর সাথে কথা বার্তা শুরু করলাম। আবার সব শেষ হয়ে গেলো! কেন যেনো অনলাইনে ঢুকে ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করতো। কিন্তু মনের ভিতর সেই তিব্র জেদটা আর সেইটা হতে দিলোনা।
.
আট দিন সিলেট থাকার পর ঢাকায় ফিরলাম। বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। রাতে যখন খাওয়া দাওয়া শেষ করে আর.এস.এমকে ফোন দিয়ে সব রিপোর্ট দেওয়া শেষ করলাম। তখন কি মনে করে যেনো ডাটা অন করেই ফেল্লাম। প্রায় আটদিন পর ঢুকলাম অনলাইনে। বেশ অবাক হোলাম প্রীতির সাতটা মেসেজ দেখে। এক এক করে সব গুলো মেসেজ পরলাম। এতো দেমাগওয়ালা মেয়েটা কি করে পারলো। আমার মতো মানুষকে এতগুলা মেসেজ দিতে! প্রথম মেসেজটা আমি সিলেট যাওয়ার দুইদিন পরেই দিয়েছে। 'কি বেপার আমি ভার্সিটিতে আসতে মানা করছি! তুমি ভার্সিটিতে আসো না কেন দুই দিন ধরে!'
আর শেষ মেসেজটা ছিলো, 'মোবাইলটাও অফ করে রাখছো। ভালোইতো! দেমাগটা তুমিও দেখালা।'
.
ওর মেসেজগুলা সিন করে আমি চুপ করে বসে রইলাম। এরকমভাবে ও মেসেজ দিবে কখনো ভাবতে পারিনি। আসলেই কি ও এরকম করুণ ভাবে আমাকে মেসেজ দিতে পারলো! আমি আর সাত পাঁচ না ভেবে মোবাইলে সিমটা ভরেই প্রীতিকে ফোন দিলাম। চার বারের মতো রিং হওয়ার পর প্রীতি ফোনটা ধরলো। আমি নিজেই আগে বল্লাম, কেমন আছো?
"ভালো।
"আমাকে জিজ্ঞাস করবানা আমি কেমন আছি?
"কিছু বলবা?
"মেসেজগুলা কি ফেসবুকে তুমি দিছিলা!
আমার কথা শুনে প্রীতি একটু চুপ করে থেকে বল্লো, আমার আইডি আমি দিবো না তো কে দিবে!
"খুব মিস করছো!
"আজাইরা কথা বাদ দাও। ফোন রাখলাম।
ওর কথা শুনে আমি তাড়াহুড়া করে বলতে লাগলাম,ওই শোনো শোনো!
"কি?
"কাল ভার্সিটিতে আসবা?
"জানিনা।
"আইসো। কিছু কথা আছে। প্লিজ আসবা কিন্তু!
আমার কথাটা শুনে প্রীতি ফোনটা কেটে দিলো। ওর এইরকম ইগনোরটাতে এইবার কেন যেনো খারাপ লাগলোনা। বরং ভালোই লাগলো। রাগ করে এমনটা করেছে। রাগ তো আর সবার উপর করা যায়না!

পরের দিন ভার্সিটিতে যেয়ে ক্লাসের বাহিরে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে করতে খেয়াল করলাম প্রীতি আসতেছে। আমাকে দেখেই আমার সামনে এসে থামলো। কেন যেনো ওকে দেখে মনে হলো সেইদিনের কথাগুলো ওর ভিতর কিছুটা হলেও পরিবর্তন এনেছে। যা ওর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো। দুইজন কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম। আমি প্রীতির মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এরকম করে আগে কখনো ওর দিকে তাকায় নি। ও আমার দিকে না তাকিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে হচ্ছিলো আমার উপর খুব ক্ষোভ ওর। আমি আর চুপ করে না থেকে বল্লাম, সেই দিন নীলক্ষেত থেকে যাওয়ার পর রাতে অনলাইনে থেকেও কেন মেসেজ করলানা!
আমার কথাটা শুনে প্রীতি বাহির থেকে চোখটা ফিরিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো, তুমি কেন করলানা!
আমি ওর কথাটা শুনে কিছুটা অবাক হলাম! ও নিজেও আমার মেসেজের অপেক্ষায় ছিলো! আমি আর চুপ করে না থেকে বল্লাম, ভাবছি এতকিছু বলার পর মনে হয় তুমি আর কথা বলতে চাও না তাই!
প্রীতি এইবার একটু রেগেই বলে উঠলো, তোমার এই যে বেশি বুঝার অভ্যাসটা পরিবর্তন করাতে হবে। এইটা তোমার এক ধরনের রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
"তুমি পরিবর্তন করাবা!
এইবার ও আর কিছু না বলে ক্লাস রুমের ভিতর ঢুকে গেলো। আমিও ওর পিছু পিছু যেয়ে ওর সাথেই এক বেঞ্চে বসলাম। কেন যেনো ওর প্রতি ভালোলাগাটা অত্যধিক বেড়ে গেলো। ব্যাগ থেকে আমার খাতা আর কলমটা বেড় করে একটা কার্টুন আর্ট করে লিখলাম, সরি!
আমার এইরকম কান্ড দেখে প্রীতি আমার দিকে তাকালো। আমি ডানে বামে তাকিয়ে আমার কানটা ধরে আস্তে করে বল্লাম, সরি!
প্রীতি এইবার বল্লো, এতো ঢং করার কিছু নাই।
"তোমাকে একটু খুশি করার জন্য করলাম। খুশি হও নাই!
প্রীতি এইবার আর কিছু বল্লোনা। আমি আবার বল্লাম, তোমাকে মনে হয় আল্লাহ গ্রীষ্মকালে বানাইছিলো। না হলে তোমার সাথে কথা বললে কেন জানি গলা শুখিয়ে আসে আমার।
আমার কথাটা শুনে এইবার প্রীতি একটু চাপা হাসি দিলো। ঠিক সেই মুহূর্তেই ক্লাসে স্যার এসে হাজির। ধ্যাত এতোক্ষন পর একটু হাসলো। আর এই সময়েই স্যারের আসতে হলো!
.
এক এক করে সব ক্লাস শেষ হওয়ার পর যখন ক্যাম্পাসে আসলাম প্রীতি নিজেই এইবার আমাকে বল্লো, কেন আসলানা এই কয়দিন ভার্সিটিতে!
"সেই দিন নীলক্ষেত থেকে আসার পর কম্পানি থেকে  সিলেট যেতে বলেছিলো।  সেইখানে আট দিন থাকা হয়েছে। তাই আরকি!
প্রীতি কথাটা শোনার পর আর কিছু বল্লোনা। প্রীতির দিকে তাকিয়ে দেখি ও হাতের বাম দিকে তাকিয়ে আছে।  সেইখানে কিসের যেনো  ডেকোরেশন করা হচ্ছে। আমি প্রীতিকে বল্লাম, কিসের জন্য ডেকোরেশন করতেছে এইখানে?
"কাল পহেলা ফাল্গুন তাই আর কি ডেকোরেশন করতাছে।
"কালতো মেয়েরা বসন্ত রংয়ের শাড়ি পড়ে বেড় হবে তাই না?
"হুম।
"আমি কখনো পহেলা ফাল্গুন  পালন করে নি। তুমি করছো?
"এতোগুলা প্রেম করছো একজনের সাথেও পহেলা ফাল্গুন পালন করোনি!
"নাহ! ফাল্গুন আসার আগেই সব চলে গেছে।
প্রীতি আর কোনো কথা বল্লোনা। মেইন রোডে চলে আসার পর প্রীতি নিজেই রিকশা ডাক দিয়ে উঠে বসে বল্লো, কাল বিকেলে ক্যাম্পাসে থেকো।
কথাটা বলেই আমাকে আবার অবাক করে দিয়ে চলে গেলো। আজ আমাকে একটু বল্লো পর্যন্ত না রিকশাতে উঠতে!
.
আজ কাজটা একটু তাড়াতাড়ি শেষ করেই বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বেড় হয়ে গেলাম।  ক্যাম্পাসে আসার পর প্রীতিকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই বল্লো, আমাদের ডিপার্টমেন্টের পিছনে আসো।
আমি চারপাশে মানুষ গুলাকে দেখতে দেখতে আগে বাড়তে লাগলাম। সব মেয়েগুলো বসন্ত রং এর শাড়ি আর মাথায় ফুলের ব্যান পরনে। কেন যেনো মনে হচ্ছিলো প্রীতিও ঠিক শাড়ি পরবে। কিন্তু এইটা আমি কি করলাম। পাঞ্জাবি গায়ে না দিয়ে শার্ট পড়ে চলে আসলাম!
.
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে যেই ডিপার্টমেন্টের পিছনে আসলাম। ঠিক তখনি খেয়াল করলাম প্রীতি আর ওর সাথে দুইটা মেয়ে বসা। প্রীতির দিকে তাকিয়ে অবাক না হয়ে পারলাম না। এতো সুন্দর লাগছে কেন ওকে! আমি আর কিছুনা ভেবে এক পা দুই পা করে ওদের সামনে গেলাম। ওর বান্ধবিগুলো মজা করে আমাকে বলে উঠলো, ভাইয়া আমাদের দিকে একটু তাকান!
আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে ওদের দিকে তাকালাম। কেন যেনো সব কিছু স্বপ্ন লাগছিলো। আমার কথা গুলো প্রীতিকে এতোটা চেঞ্জড করে দিবে ভাবতেও অবাক লাগছে। আমাকে দাড়িয়ে থাকা দেখে ওর বান্ধবি দুইজন উঠে দাড়িয়ে প্রীতিকে বল্লো, তোরা কথা বলে ক্যাম্পাসে চলে আস।
কথাটা বলেই ওরা চলে গেলো। আমি প্রীতির পাশে বসে বল্লাম, খুব সুন্দর লাগতেছে।
"হুম জানি।
"কেউ যদি আমার জন্য এরকম ভাবে স্বাজতো।
"বিয়ে করে ফেলো বউ ঘরে এসে প্রতিদিন স্বেজে বসে থাকবে।
আমি ওর কথা শুনে চুপ করে রইলাম। তারপর প্রীতি আবার আমাকে বল্লো, কাজে যাও নাই?
"হুম।  চইলা আসছি।
"চলো ক্যাম্পাসে যাই।
"হুম।
তারপর দুইজন হাটতে হাটতে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে লাগলাম।
.
সারাটা বিকেল প্রীতির পিছনে ঘুর ঘুর করলাম। কেন যেনো খুব ভালো লাগছিলো। সন্ধ্যায় যখন গানের আসর বসলো। প্রীতি আর আমি এক সাথে বসে সবার সাথে তাল মিলাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার চোখটা শুধু ওর দিকেই চেয়ে ছিলো। রাত আটটা বেজে যাওয়ার সাথে সাথে প্রীতি বল্লো, চলো বাসায় যেতে হবে।
আমি আর দেড়ি না করে বল্লাম, হুম চলো।
.
ক্যাম্পাস থেকে বাহিরে বেড় হয়ে কোনো রিকশা পেলাম না। কিছুক্ষণ হাটার পর অবশেষে একটা রিকশা পেলাম। তারপর সেইটা ঠিক করার পর প্রীতি রিকশায় উঠে বসলো। আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো, তোমার তো কাজ আছে তাই না! আমার সাথে তো আর যাবা না!
আমি ওর এরকম কথাশুনে বল্লাম, কোনো কাজ নাই। তোমার সাথে যাবো।
আমার কথাটা শুনে প্রীতি একটু হেসে সাইডে চেপে আমাকে রিকশায় উঠতে ইশারা করলো।
.
রিকশায় উঠার পর প্রীতি বল্লো, পহেলা ফাল্গুন পালন করার শখ মিটছে!
"হুম! তুমি আমার জন্য আজ এইরকমভাবে সাজছো তাই না!
প্রীতি কোনো কথা বল্লোনা। যা বুঝার আমি বুঝে নিলাম। আমি কিছু না ভেবে হুট করে আবার বলে উঠলাম, একটু হাতটা ধরতে দিবা তোমার!
প্রীতি এইবারো কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলো। আমি ওর চুপ করে থাকা দেখে ওর অনুমতি ব্যাতিত ওর হাতটা আমার হাতে নিলাম।
ভেবেছিলাম প্রীতি খুব রিয়েক্ট করবে কিন্তু ও কোনো কিছু না করে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, সিমি  কই এখন?
ওর হাতটা আমি শক্ত করে ধরে রেখেই বল্লাম, গাজীপুর চলে গেছে।
প্রীতি এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো, এই পর্যন্ত  কয়টা মেয়েকে আই লাভ ইউ বলছো?
" সাতটা-আটটা।
আমার কথা শুনে প্রীতি বল্লো, সরম লাগলোনা এই কথাটা বলতে!
"সত্যি বলতে সরম কিসের।
প্রীতি আর কোনো কথা বল্লোনা। আমি কিছুটা ওর পাশে চেপে বসে বল্লাম, শুধু একটু ভালো থাকার জন্য এমনটা করছি।
প্রীতি এইবার কিছুনা বলে চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছু সময় যাওয়ার পর প্রীতি বল্লো, হাতটা কি ছাড়বা না!
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে  না সূচক ইশারা করলাম। প্রীতি আবার বল্লো, ফোন আসছে। মোবাইলটা তো বেড় করতে দিবা।
আমি আর কিছুনা বলে ওর হাতটা ছেড়ে দিলাম। তারপর ওর পার্টস ব্যাগ থেকে মোবাইল বেড় করে কথা বলা শেষ হওয়ার পর আবার যেই ওর হাতটা ধরলাম। এইবার একটু চাপা হাসি দিয়ে প্রীতি বল্লো, এতো বেসরম কেন তুমি! ছাড়ো হাত।
"ছাড়বোনা। নিজের জিনিসটাকেই তো ধরছি।
"ফ্লাট করতে ভালোই জানো।
"ইম্প্রেশ হও নাই!
"চুপ থাকো।
আমি ওর হাতটা নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বলে উঠালাম, বিয়ে করবা আমাকে?
এইবার প্রীতি আমার দিকে তাকিয়ে বল্লো, কোন দুঃখে! তোমার মতো বেসরম কে বিয়ে করবো!
আমি কি বলবো কিছুই খুঁজে পেলামনা। শুধু আস্তে করে বল্লাম, এইবার  আমাকে ছেকা দেওয়ার যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে আগে থেকেই বলে দিলাম, তোমার একটা থ্রীপিছ আমাকে দিয়ে ছেকা দিও। তোমাকে তো আর পাবোনা তোমার থ্রীপিছটা  দেখে যেনো তোমাকে সারাজীবন স্মৃতিতে পূষন করে রাখতে পারি।
এইবার আমার কথাটা শুনে প্রীতি খুব জড়তে হেসে উঠলো আর বলতে লাগলো, তোমার কি একটুও সরম লাগেনা এমন পাগলের মতো কথা বলতে!
"সরম থাকলে তো লাগবে। সব সরমতো বিক্রি করে দিছি তোমার কাছে।
প্রীতি আমার কথাটা শুনে বল্লো, আসলেই তুমি একটা বেসরম।
কথাটা বলেই প্রীতি আমার হাতটা আস্তে করে চাপ দিলো।
.
এলাকায় আসার পর রিকশা থেকে নেমে প্রীতিকে ওর বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশা ঠিক করে দিয়ে বল্লাম, তাহলে যাও।
"হুম।
কথাটা বলার পর যেই আমি পিছনে ঘুরে হাটা শুরু করলাম। ঠিক তখনি ও আবার আমাকে ডাক দিয়ে বল্লো,ময়নাতদন্ত করে যেনো আমি না দেখি অন্য কারো সাথে তোমার চক্কর চলছে!  বেসরমতো তুমি! বলা যায়না। সাবধানে যেও।
কথাটা বলেই প্রীতি রিকশাওয়ালাকে বল্লো, মামা চলেন।
ওর চলে যাওয়া দেখে আমি ওর লাস্ট কথাটার মানে খুজতে লাগলাম। এই বেশরম মানুষটাকে এতো সহযেই ও আপন করে নিলো! আসলেই আমি বেসরম!
লেখা:ফ|য়স|ল অ|হম্মেদ শ|ওন

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ