āĻŦুāϧāĻŦাāϰ, ā§Šā§Ļ āĻŽে, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4936

নিরুর গল্প বিলাস

.
বাড়ির দক্ষিন দিকে একদম শেষের ঘর টা নিরুর । জানালার পাশে পাতানো ব্যতের ইজি চেয়ার তার  খুব পছন্দ । চেয়ারে বসে বিকাল টা পার করে দেওয়া তার নিত্যদিনের  অভ্যাস।কিন্তু ২ দিন হলো বিকেল বেলা চেয়ারে বসে থাকতে তার ভালো লাগে না। মিনিট পাচেক ও হয় নি চেয়ারে বসে ছিলো সে হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে এসে বিছানায় হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো।  চোখের চাহনিতে তার কিছু না পাওয়ার আকুতি ।  হাতে  সাদা কাগজে রং বে রং এর কলম দিয়ে লেখা চিঠি। চিঠি টা তার অবচেতন মনকে নাড়া দিচ্ছে।  এই নিয়ে সে চিঠি টা ১০ বার পড়ছে।  এতটা মায়া নিয়ে কেউ চিঠি লেখতে পারে সে টা নিরুর জানা ছিলো না।  যতোবার ই পড়ে ততবার যেন চিঠি টা পড়তে মন চাই তার। 
.
বাড়ির দারোয়ান আনোয়ার ২ দিন আগে চিঠি টা নিরুর  হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো আপা মনি আপনার চিঠি।  নিরু অনেক টা অবাক হয়ে ছিলো।  দারোয়ানের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে তাকে বিদায় দিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো চিঠির দিকে আর ভাবতে লাগলো কে দিয়েছে তাকে এই চিঠি।  কলেজে তো তার এমন কোনো ফেন্ড নাই যে তাকে তারা চিঠি দিবে। 
খাম টা ছিড়ে চিঠি টা সযত্নে বের করলো নিরু।
.
প্রিয় নিরু
.
তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি,  স্নিগ্ধ এক শিহরন ছুয়ে গিয়েছিল আমার ভিতর দিয়ে,  অনেক ক্ষন নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম তোমার দিকে। সুন্দরের মাঝেও কিছু খুদ থাকে তবে তোমার মাঝে তার ছিটে ফোটাও নেই। তোমার তুলনা শুধু তুমিই। 
.
শুনে ছিলাম মেয়েদের এক আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে যে,  তাদের দিকে কেউ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে সেটা নাকি তারা বুজতে পারে,  কিন্তু তুমি পারো নি,  হয়তো এই বৈশিষ্ট্য টা তোমার মাঝে নেই।  তোমার সাথে একটা ছেলে দাড়িয়ে ছিলো তার সাথে কথা বলতে বলতে ভীড়ের মাঝে অদৃশ্য হয়ে গেলে।  অনেক খুজেছিলাম সেদিন ,  পাই নি। 
.
Love At First Site বুঝো তো  তোমায় দেখে আমিও বুঝে গিয়েছিলাম।  তোমায় যখন ভালবাসতে শুরু করলাম তখন বুজতে পারলাম কতটা অসহায় হয়ে পড়েছি আমি।  নিজেকে কন্টোল করতে পারতাম  না,   তোমাকে দেখতে মন চাইতো সব সময়।  যখন তোমায় খুজে পেতাম তখন তোমার সাথে সেই ছেলেটা থাকতো।  ভাবতাম তোমার বয়ফেন্ড হবে।  তাই নিজেদের মাঝে দুরুত্ব কমানোর কোনো চেষ্টা করি নি।  দুর থেকে দেখতাম তোমায়।  তোমার ফোন নাম্বার ছিলো আমার কাছে, ফোন করতে ভয় করতো,  না জানি কি বলবে ফোন রিসিভ করে,  মেসেজ দিতাম না একই ভয়ে।  প্রায় তিন মাস তোমায় ফলো করেছি অথচ তুমি একটি বারের জন্য বুজতে পারো নি কেউ তোমায় ফলো করছে।  ভাবতাম কেউ হয়তো তোমার লাইফে আছে যার জন্য তুমি অন্য কারোর দিকে ভ্রুক্ষেপ করো না।  কিন্তু কিছু দিন আগে  জানতে পারলাম না তোমার কোনো বয়ফেন্ড নেই,  এমন কি
তুমি নাকি অন্য কারোর প্রপোজ ও একসেপ্ট করো না।  তাই নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম।  কিন্তু পারি নি,  বললাম না অনেকটা অসহায় হয়ে গেছি , চাইলেও নিজেকে কন্টোল করতে পারি না।  প্রতিদিন তোমায় দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম।  মানুষ চাইলেও তাদের কিছু আবেগ  ধরে রাখতে পারে  না। আমিও পারলাম না। তাই সেই আবেগের বসিবত হয়েই তোমায় চিঠি টা লিখেছি। 
.
ভালবাসতে নাকি কিছু গুন থাকা দরকার।  আমার  মধ্যে তার কিছুই নেই। আমি দেখতে সুন্দর না,  আনস্মার্ট,  মানুষের সাথে তেমন ভাবে মিশতে পারি না,  মানুষকে হাসাতে পারি না, আরো অনেক।   হিসেব করে দেখলে দেখা যাবে পারার চেয়ে না পারার সংখ্যাই বেশী।  তবুও তোমাই ভালবাসতে এর কিছুই আমায় পিছুটান দেয় নি।  দিয়েছে তোমার অনাগ্রহ।  কেন যে তোমার ছেলেদের প্রতি এত অনাগ্রহ জানি না।
.
নিজেকে তোমার সামনে তু্লে ধরার মতো তেমন কোনো গুনাগুন নেই। তাই তেমন কিছু নিজের সম্পর্কে তোমায় বললাম না। অপ্রকাশ্যে থেকেই না হয় ভালবেসে যাবো তোমায়। 
.
কষ্ট করে চিঠি টা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
.
ইতি
------------------
.
ধ্যাত নাম ঠিকানা কিছুই দেওয়া নেই মনের অজান্তে বলে ফেলে নিরু। চিঠি লিখবে ঠিকানা অপ্রকাশ্য রেখে এটা কি করে হয়।  তাই নিরু দৃঢ় সংকল্প হলো যে করেই হোক আগুন্তক কে খুজে বের করতে হবে। অনেক ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করলো।
.
দারোয়ান নিশ্চয় আগুন্তক কে দেখে ছিলো,  তাই নিরু  দারোয়ান কে ডাক দিয়ে,
>> আংকেল আমাকে যে চিঠি দিয়ে গেছে তাকে কি আপনি চেনেন
>> না আপা মনি
>> দেখলে চিনতে পারবে
>> জ্বি আপামনি
>> ঠিক আছে আপনি  যে টাইম টা ফ্রি থাকেন সেই সময়ে আশে পাশে খুজে দেখবেন তাকে পাওয়া যায় কিনা। 
>> আচ্ছা আপামনি
>> এখন তাহলে গিয়ে ডিউটি করেন গিয়ে
.
দারোয়ান চলে গেলো নিঃশব্দে। 
.
নিরু জানে না আগুন্তক  কে কখনো খুজে পাবে কি না।  তবুও চেষ্টা তো করা যায়। 
.
আজ নিরু দাড়িয়ে আছে যেখানে সে তার ফেন্ডের সাথে দাড়িয়ে থাকতো কলেজ শেষ করে ।  নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে।  মাঝে মাঝে তাকিয়ে আশ পাশ টা দেখে নিচ্ছে সে।  নিরু যেখানে দাড়িয়ে আছে তার সামনে ছোটো একটা পুকুর,  পিছনে একটা দেয়াল তার পাশ ঘেষে কিছু দোকান, দেয়ালের পিছনে তার কলেজ,   দুই পাশে রাস্তার মতো অনেক খানি ফাকা জায়গা।  রাস্তার ঠিক মাথায় কিছু দোকান পাঠ। নিরু এখন প্রায় নিশ্চিত এই দিকেই কোনো এক দোকানে হয়তো পাওয়া যাবে তাকে।  কিন্তু চিনবো কিভাবে।  চিন্তার ভাজ তার কপালে।  তবুও আশে পাশে একবার ভালো করে দেখে নিলো সে। 
.  
ঔই দিকে মাহির চায়ের দোকানে বসে বসে নিরু কার্যকলাপ খেয়াল করছে।  নিরুর কপালে চিন্তার ভাজ মাহিরের চোখে এত দুর থেকেও এড়িয়ে যায় নি।  নিরু যেনো কারোর খোজে অধীর।  চোখে মুখে তার আকুতি।  মাহির মনে মনে মিট মিট করে হাসছে,  সে জানে এটা তার চিঠির ফল।  কাল নিরুর বাড়ির দারোয়ান কে দেখেছিলো তার এলাকায় কিছু একটা খুজচ্ছে সে। কাল বুজতে না পারলেও আজ মাহির বুজতে পারছে তার খোজেই এসে ছিলো দারোয়ান টা। ভাবনার অবসান ঘটতে সামনে তাকিযে দেখে নিরু তার ঠিক হাত পাচ দুরে দাড়িয়ে থেকে খুজছে তাকে।  হাতের লেখায় যে কারোর ফেস চেনা যায় না সেটা নিরু জানে তাই কিছুক্ষন পর বিরক্ত হয়ে চলে গেলো সে।  মাহির ও বাসায় চলে গেলো। 
.
প্রায় এক সপ্তাহ পরে,
.
মাহির তার চেনা চায়ের দোকানে বসে আছে তার আপন ছিটে,  অপেক্ষা নিরুর। বসে চায়ের ওর্ডার দিতেই তার হাতে একটা চিঠি দিলো দোকানদার।  মাহির সামান্য অবাক হলো।  চিঠি টা নিয়ে চা না খেয়ে সরাসরি বাসায় চলে আসলো সে।  সযত্নে চিঠি টা খুললো মাহির
>>>
.
হাই আগুন্তক,
.
কি ভেবেছিলে তোমায় চিনতে পারবো না।  অবশ্য পারতাম না যদি তুমি ছোটো খাটো ভুল না করতে।  কি ভাবছো ভু্ল গুলা কি
১/ তুমি প্রতিদিন একই দোকানের একই চিয়ারে বসে থাকো।  আর যেখানে বসে থাকো সেখান থেকে আমি যেখানে দাড়িয়ে থাকতাম সেই জায়গা টা ক্লিয়ার লি দেখা যায়।
২/ দোকানের এতগুলা লোকের মাঝে একমাত্র তুমিই ছিলে যে আমার দিকে মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে। যা প্রতিদিন আমি খেয়াল করতাম।
.
দুটো সন্দেহের উপর দাড়িয়ে তোমাকে আমি ৫০% চিনে ছিলাম বাকি ৫০% চিনেছি আমাদের বাড়ির দারোযান দ্বারা।
.
তোমাকে খোজার কাজে একদম ডিটেকটিভ হয়ে গিয়েছিলাম।  কি বলো। আচ্ছা বাদ দাও। 
.
তোমার চিঠি টা মোট দশবার পড়েছি।  এতটা মায়া নিয়ে কি করে চিটি লেখো তা তুমিই জানে।
তুমি বলে ছিলে ভালোবাসতে নাকি কিছু গুন লাগে। তার তেমন কোনো কিছুই তোমার নেই।  কে বলেছে নেই। তুমি দেখতে সুন্দর,  তাছাড়া সুন্দর করে চিটি লেখতে পারো।  এই একটা গুনাগুন আমার জন্য পর্যাপ্ত। 
.
তুমি বলে ছিলে টানা ৩ মাস তুমি আমার পিছনে ঘুড়লে কিন্তু আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ কেনো ছিলো না তাইতো।  তুমি আমার সাথে একটা ছেলে কে দেখতে না,  সেই ছেলেটা আমাকে ভালো বাসতো, কিন্তু আমি না।  তুমি যখন আমার পিছু পিছু ঘুড়তে তখন মনে করতাম ঔই ছেলেটা আমার পিছু পিছু ঘুড়ছে।  তাই কেনো ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। 
ভালবাসা জিনিস টাকে আমি সম্মানের চোখে দেখি।  সেই ভালবাসা টাকে তো আমি এমন একজনের হাতে তুলে দিতে পারি না যে এর সম্মান রাখতে পারবে না। 
.
কিছু ক্লু দিয়ে লেখা টা শেষ করলাম,  তবে চিঠি লেখার অভ্যাস নেই তাই গুছিয়ে লেখতে পারলাম না। 
.
ইতি, 
নিরু....
.
চিঠি টা পড়ে আনন্দে মেতে উঠলো মাহির। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না মাহির।  আনন্দে আত্নহারা মাহির হঠাৎ শুনতে পেলো কলিং বেল বাজছে।  দড়জা খুলে দেখে একজন ভদ্রলোক কোর্ট প্যান্ট পড়ে দাড়িয়ে আছে।  মাহির তাকে ভিতরে বসতে বললেন,
>> তোমার আব্বা আছে
>> না আংকেল
>> আমাকে চিনতে পারছো
>> জ্বি না
>> আমি আনিসুর রহমান, তোমার বাবার বস আর নিরু বাবা
>> ওও সরি আংকেল আপনাকে চিনতে পারি নি
হঠাৎ দড়জা ভিরিয়ে ঘড়ে ঢুকলেন মাহিরের বাবা। ঢুকেই তার বস কে ছালাম দিলেন।
>> বসো আহম্মেদ
>> জ্বি সার
>> তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো তার জন্য তোমার বাড়িতে এসেছি
>> জ্বি সার বলুন
>> এই নাও তোমার ট্রান্সফার লেটার আমাদের চিটাগাং গ্রুপ এন্ড ইন্ডাস্টিজে।
>> কেন সার
>> সেটা তোমার ছেলেকে বললে উত্তর টা পাবে।  ভেবেছিলাম তোমায় জব থেকে বের করে দিবো কিন্তু না তোমায় একটা সুযোগ দিলাম।  আশা করি কাল সকাল হতেই চলে যাবে তুমি এই শহর থেকে। 
>> কিন্তু
>> কোনো কিন্তু না,  আমি চাই না তুমি এখানে থাকো । 
>> জ্বি সার।
>> চলি আহম্মেদ। আর ভুলেও এ শহরে পা বারাবে না।
.
অবাক চোখে তাকিযে আছে মাহির নিরুর বাবার চলে যাওয়ার দিকে,  তার জন্য আজ তার বাবা মাকে নিজের আপন শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে
>> বাবা মাহির
>> জ্বি বলুন
>> কি হয়েছে কিছুই তো বুজতে পারলাম না
মাহির তার বাবাকে সব খুলে বললো। 
.
মাহিরের বাবা বললেন,  আমি চাইনা তোর কোনো ক্ষতি হোক,  লোকটা অনেক ভয়ঙ্কর।  তার থেকে ভালো কালই আমরা চলে যাবো এই শহর থেকে।
.
মাহিরের মুখ ফুটে কোনো কথা বের হলো না। তার জন্য আজ তাদের শহর ছেড়ে যেতে হচ্ছে।  দোষটা যে তার নিজের ও না সে তো নিজেও জানতো না নিরুর বাবাই তার বাবার বস।
.
অনেক ভেবে চিন্তে নিরুর কাছে একটা চিঠি লিখলো মাহির,
.
নিরু আবার চিঠি পেয়ে সামান্য অবাক হয়েছিলো, তবে খুশিও হয়েছে অনেক।  কারন চিঠি পড়তে তার ভালো লাগে। 
চিঠির খাম খুললো,
.
...
.....
নিরু আমি জানি তুমি আমায় পছন্দ করো,  আমাদের পছন্দ টাকে  সম্পর্কে রুপ দেওযার আগে আমার মনে হয় তোমায় আমার ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে হবে।  যা এই পৃথিবীতে শুধু আমার বাবা মা জানে আর এখন তুমি জানবে। আমার বর্তমান বাবা মা আমার আসল বাবা মা নয়।  এই খবর টা জানতে পারি আমি যখন আমি কলেজে পড়ি,  খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।  কোনো এক সন্ধা রাতে রাস্তার ধারে কুরিয়ে পেয়েছিল আমায়।  তাদের মতো আমি আদৌও জানি না আমার আসল বাবা মা কে ।  হতেও পারে আমি একটা,  যাই হোক বুজে নিও। 
.
নির্মম পৃথিবীর সকল ভয়াল হাত থেকে সবসময় আমায় রক্ষা করেছে আমার বাবা মা। আমার সকল ইচ্ছা, আশা পুরন করেছে তারা, আমার সকল সুখ দুঃখের সাথি তারা।  নিজের রক্ত দিয়েও  কোনো দিন তাদের ঋন শোধ করতে পারবো না।  তাদের ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবো না আমি।   আমার বাবা তোমার বাবার অফিসে কাজ করে।  আমাদের পরিবেশ আর তোমাদের পরিবেশ সম্পর্ন আলাদা। সেটা তুমি ভালো করেই জানো।  
.
কাল আমরা চলে যাচ্ছি এই শহর ছেড়ে, কেন যাচ্ছি তা তোমায় বলতে পারবো না, কোথায় যাচ্ছি তাও বলতে পারবো না।  তোমায় অনেক দেখতে মন চাইছে।  পারলে ঠিক ৯  টার দিকে একবার বারান্দায এসো। হতেও পারে এটাই হয়তো  আমাদের শেষ দেখা। 
.
আমি বাবা মাকে যতটা ভালবাসি তোমাকে ঠিক ততোটায় ভালবাসি।
.
ইতি
মাহির
.
চিঠি টা পড়ে চোখের কোনের জমানো শত শত জল কনা এক সাথে গাল পেয়ে বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।  নিরুর প্রত্যেকটা মুহুর্তের  খোজ খবর রাখে তার বাবা।  মাহিরের সম্পর্কে ও জেনে গিয়ে ছিলো সে,  তাইতো গিয়ে তাদের ভয় দেখিয়ে এসেছে। 
.
৯ টা বাজে,
.
নিরু দাড়িয়ে আছে দোতালার বারান্দায়।  গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনার জলের স্রোত। না আছে জোড়ার না আছে ভাটা। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সামনের পিচ ধালা রাস্তার উপর দাড়িয়ে থাকা মাহিরের দিকে।  মাহিরও রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে অমোঘ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিরুর দিকে,  চোখ যে মনের কথা বলে তা যেনো ফুটে উঠেছে তাদের দৃষ্টি ভঙ্গির মধ্যে। দুজনের চোখ দিয়ে অজোরে নোনা জরের স্রোত গড়িয়ে পড়ছে।  ঠিক ১০ মিনিট দাড়িয়ে না বলা কথা গুলো চোখের ভাষায় আদান প্রদান করে নিলো মাহির আর নিরু। কিছুক্ষন পর মাহিরের লুকিয়ে থাকা হাতটা সামনে উচু করে ধরে মাহির।  তাতে শুধু লেখা চিলো "ভালো থেকো "
.
নিরু দৃষ্টি মাহিরের উপর থেকে কাগজ উপর গিয়ে পড়তেই নিরু খেয়াল করলো মাহির স্থির শরীরের কোষ গুলা চলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। পর মুহুর্তেই দু পা এগিয়ে দিলো মাহির তার গন্তব্যের পথে।  নিরুর শরীর টা অবশের মত দাড়িয়ে আছে স শুধু চোখের মনিটা নিয়ম ভঙ্গ করে নিজের নিয়মে তাকিয়ে আছে মাহিরের চলে যাওয়ার দিকে,  ধিরে ধিরে অন্ধকারে হারিয়ে গেলো মাহির, চলতে থাকলো শুধু নিয়ন আলোর খেলা।
.
.
২ মাস পর,
.
চিটাগাং এ নিজেদের পরিবারকে সুন্দর করে সাজিয়েছে মাহির। শুধু সাজিযে তুলতে পারে নি নিজের মনটাকে,  নিজের জিবন টাকে। নিরুর মুখটা সব কিছু আওলিয়ে দিয়ে যায় মাহিরের। নিজেকে তাই কাজে ব্যস্ত রাখতে একটা জব নিয়েছে মাহির,  সেই কাজের মাধ্যমে যতটুকু সময় ভুলে থাকা যায় নিরুকে ততটুকু সময় একটু ভাল যায় মাহিরের।  কাজ শেষ আবার নিরুর স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে ওঠে মাহিরের।  চোখের কোনে আষাঢ় নেমে আসে। মাঝে মাঝে নিরুর ফোনে ফোন ও করে মাহির কিন্তু কখনো কথা বলা সম্ভব হয়নি, মেয়েলি একটা রোবর্ট সবসময় সুইচ স্টপ কথা বলে যায়। নিরুকে নিয়ে ডায়েরী লেখা মাহিরের এখন নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে গেছে।  তাইতো  বেশির ভাগ রাত না ঘুমিয়ে কাটিযে দেয় মাহির।
.
তবে কষ্ট হলেও ভালোই যাচ্ছিল মাহিরের দিনকাল, কিন্তু হটাৎ করে ফ্যামিলি থেকে তার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করে দিলো,  মাহির অনেক বার মানা করেছে তার ফ্যামিলি কে, কিন্তু কে শোনে কার কথা, 
.
৬-৭ দিন খোজাখুজি পর একটা মেয়েকে পছন্দ হলো মাহিরের বাবা মার। মাহির কেউ নাকি তাদের পছন্দ হয়েছে।
.
মাহির জব শেষে বাসায় প্রবেশ করতেই তার বাবা তাকে ডাক দেয়
>> জ্বি বাবা
>> এখানে একটু বস, তোমার সাথে জরুরী  কিছু কথা আছে।
মাহির বিনা শব্দে বসে পড়লো
>> তুমি তো জানোই তোমার জন্য আমরা মেয়ে দেখছি কিছুদিন হলো
>> জানি তো কিন্তু আমি তো আপনাদের বললাম আমি বিয়ে করবো না।
>> তুমি বললেই হলো, তোমার এই কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারলেও আমরা পারবো না,  সো তোমাকে বিয়ে করতে হবে,
>>  আপনি তো জানেন আমি নিরুকে ভালোবাসি আমি কি করে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করবো
>> নিরুকে তুমি ভালবাসলেও তাকে তোমার পক্ষে পাওয়া সম্ভব না। এটা তুমি ভাল করেই জানো, তাই তোমাকে বিয়ে করতে হবেই, আর তাছাড়া নতুন কেউ তোমার লাইফে আসলে ঠিকই নিরুকে ভুলে যেতে পারবে।
>> আমি বিয়ে করতে পারবো না
>> মাহির তুমি কেনো বুজতে চাইছো না,  তাছাড়া আমি বা তোমার মা কেউ ই তোমার খারাপ চাইনা তাই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন তুমি ভেবে চিন্তে দেখো, কি করবে।
.
>> আপনাদের আমি কখনো কস্ট দিতে পারবো না, আপনারা যা বলেন তাই হবে
>> এই নাও মেয়েটার ছবি আর ফোন নাম্বার
মাহির কাগজ টা আর পিকটা নিয়ে নিঃশব্দে রুমে চলে এলো
.
কেনো আমাকে এই দ্বিধায় ফেলো দিয়েছো আল্লাহ, কি পাপ করেছি আমি, মনের অজান্তে বলে ফেললো মাহির।
.
চোখ বন্ধ করে সুয়ে ছিলো মাহির, কতক্ষন পেরিয়ে গেছে সে নিজেও জানে না,  হটাৎ ফোনের রিংটনের চোখ খুললো মাহির,  ফোনের স্ক্রিনে আন নোন নাম্বার দেখে ফোনটা না রিসিব করে পাশে রেখে দিলো। একটু পর আবার ফোন
বিরক্ত হয়ে ফোনটা রিসিব করলো মাহির
>> হ্যালো
>> কেমন আছেন
>> জ্বি কাকে চাই
>> কাকে চাই মানে আমি নিপা
>> ও সরি,  চিনতে পারি নি বলেন
>> কি করেন
>> সুয়ে আছি,,, আপনি
>> বসে আছি,, কাল দেখা করতে পারবেন
>> কখন
>> কাল বিকেলে
>> ঠিক আছে
>> আচ্ছা বাই
>> বাই
.
আবার ও চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো মাহির। নিজেকে আজ অসহায় মনে হচ্ছে তার।  কি করবে, ভেবে কোনো উপায় বের করতে পারছে না মাহির।  নিরুকে ভোলা কখনো সম্ভব না, এই দিকে বাবা মার কথা অমান্য করাও সম্ভব না।
.
চিন্তা করতে করতেই ঘুমিয়ে পরে মাহির।  সকালে ঘুম খেতে উঠে দেখে ফোনে একটা ম্যাসেজ।  মাহিরের বুজতে বাকি রইলো না, মেসেজ টা আজকে দেখা করার প্লেস আর টাইম।
.
ফ্রেস হয়ে, খাওয়া দাওয়া করে অফিসে চলে যায় মাহির।
বিকেলে অফিস ছুটি নিয়ে পৌছে গেলো নিপার পাঠানোর প্লেসে। গিয়ে দেখে মেয়েটা সেখানে আগেই এসেই বসে।
.
মাহির বিনা শব্দে হেটে তার পাশে গিয়ে দাড়ালো,
>> লেইট করলাম মনে হয়
>> লেইট করেন নি আমি আগে চলে আসছি,  বসুন
মাহির নির্দিষ্ট দুরুত্ব বজায় রেখে বসে পড়লো
>> এত দুরে বসলেন যে, কাছে এসে বসুন
>> না না আমি এখানে ঠিক আছি
>> তা কি খবর আপনার
>> ভালো আপনার
>> ভালো,  কিন্তু আপনার চোখের নিচে তো কালো দাগ পড়ে গেছে, কি করেন রাতে,    ঘুমান না কেনো  ।
>> ঘুমায় তো
>> মিথ্যা বলছেন
>> না সত্যিই
>> আমি জানি আপনি রাতে ঘুমান না কেনো ঘুমান না সেটাও জানি
>> কি করে জানলেন
>> আপনার বাবা আমায় সব বলেছে
>> মাহির চুপচাপ বসে রইলো, তার বাবার উপর কিন্ঝিত রাগ হইলো তার।
.
নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে নিপা বললো
>> আপনি নিরুকে অনেক ভালোবাসেন তাইনা
>> প্লিজ এই বিষয়ে কথা বলা বাদ দিন,  মিনতির সুরে বললো মাহির
>> ওকে
>> কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকি কেমন, মাহিরের গলার স্বর টা ভারি হয়ে গেছে
নিপা  বুজতে পারলো মাহিরের নিরুর কথা মনে পড়ে গেলো।  অবশ্য দোষটা তার নিজের, নিজেই তো নিরুর কথা বললো।
.
মিনিট পাচেক পর,
মাহির বললো,  সরি
নিপা হাসিমুখে বললো, না প্রব্লেম নাই
>> ধন্যবাদ, চলুন কোনো রেস্টুরেন্ট এ বসি
>> ঠিক আছে চলুন
খাওয়া দাওয়া শেষে নিপাকে বাসায় পৌছে দিয়ে মাহির বাসায় চলে আসলো।
.
রুমে ঢুকতেই পিছন থেকে মাহির কে ডাক দিলো তার বাবা
>> জ্বি বলুন
>> নিপার সাথে দেখা হয়েছে
>> হুম
>> ওকে যাও
মাহির রুমে ঢুকে লাইট টা অফ করে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো,
.
চোখ বন্ধ করে চিন্তা করছে মাহির, শেষ একটা আশা ছিলো বিয়ে টা ভাংগার তাও সফল হলো না,  নিরুর সম্পর্কে সব জানে নিপা।
.
চোখ বন্ধ করে অনেক্ষন শুয়ে থেকে বিছানা ছেড়ে উঠে টেবিলে গিয়ে বসলো মাহির। ডাযেরী টা হাতে নিলো সে,  আজ আর তার লিখতে মন চাচ্ছে না, ডায়েরী টা মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকলো মাহির কোথাও কোনো ভুল থাকলে সাথে সাথে সংসোধন করে নিচ্ছে।
শেষ রাতে ঘুমিয়ে গেলো মাহির,  ঘুমে নিরু কে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেকলো মাহির
সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিরুকে একটা ফোন দিলো, আজ আর যন্তচালিত কোনো মহিলা কথা বললো না, সরাসরি ফোন টা রিসিভ করলো নিরুর বাবা
>> কে
>> আমি মাহির
>> তুমি,  তুমি কেনো ফোন করেছো
>> না,  মানে, আমার মনে হলো নিরুর কোনো অসুবিধা হয়েছে তাই ফোন দিয়েছে
>> না ওর কোনো অসুবিধা হয় নি ফোন রাখ
>> মাহির ওকে বলার আগে ফোনটা কেটে দিলো নিরুর বাবা
.
মাহির মনে মনে ভাবতে লাগলো,  আজ কি এমন হলো যে নিরুর ফোনটা অন করলো হলো, ফোন দিলাম ফোন ধরলো নিরুর বাবা, উনার কথাশুনে মনে হলো উনি খুব অস্তির। তাহলে কি নিরুর কোনো প্রব্লেম হলো
.
মাহির তার বাবাকে ফোন দিলো, বাবা নিরুর বাবা তোমায় ফোন দিয়েছিলো
মাহিরের বাবা বিচলিত কন্ঠে বললো, হুম,,, কাল রাত থেকে নাকি নিরুকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
মাহির চিন্তিত মনে ফোনটা কেটে দিয়ে কাপড় চোপড় পড়ে রওয়ানা দিলো ঢাকার উদ্দেশ্য।  দুপুর হয়ে গেলো ঢাকা পৌছাতে মাহিরের
পৌছে নিরুর বাড়ির দাড়োয়ানের কাছ থেকে গোপনে সব কাহিনি শুনলো।
মাহিরের মনে সন্দেহের তীরটা ধারালো হলো কাজটা কে করেছে সেটা অনেকটা নিশ্চিত,
মাহির চিন্তিত গলায় বললো কাল কখন বের হয়ে ছিলো ওর ফেন্ডের সাথে দেখা করতে
দারোয়ান আবেগপ্লুত গলায় বললো বিকেল ৪ নাগাদ।
ওকে আর তুমি এখান কার সব খবর আমায় দিবে আমার ফোন নাম্বার টা নাও, নাম্বার দিয়ে মাহির চলে আসার জন্য পা বাড়াল  ।
আর শোনেন, মাহির বাবু, পুলিশকে যেন বলেন না বললে নাকি ওরা দিদিমনিকে মেরে ফেললো।
মাহির মাথা নেরে চলে আসলো
.
নিরুর ফেন্ডের সম্পর্কে সব খোজ খবর নিলো মাহির, ছেলেটার বাবা একজন নামিদামি ব্যবসায়ি , কয়েকটা  ফ্যাক্টরি আছে ,  দুটো পুরনো বাড়ি আছে তাদের একটা ঢাকাতেই, অন্যটি নারায়নগন্জ।ঢাকার বাড়িটায় খোজ নিলো মাহির কিন্তু সেখানে কিছুই নেই, বিকালেই বাসে চেপে নারায়নগন্জ চলে গেলো মাহির। খোজাখুজি করে বাসাটা খুজে বের করলো মাহির।  বাড়িটা আশে পাশে প্রচুর গাছপালা,  দেখতে ছোট খাটো একটা বনের মতো লাগে। মাহির মনে মনে চিন্তা করলো , আগে দেখতে হবে নিরু সুস্থ আছে কিনা,  কোথায় আছে খুজে বের করতে হবে, কোনো ভুল পদক্ষেপ নিলে চলবে না। নিঃশব্দে পুরানো, জরাজির্ণ বাড়িতে প্রবেশ করলো মাহির। দোতালা বাড়ি, গেটে কোনো লোক না থাকলেও ভিতরে অনেক গুলো লোক আছে বুজতে পারলো মাহির।  অন্ধকার পাশ কাটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো মাহির। ৭-৮ জন লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুড়াঘুড়ি করছে।  ২ জন বসে আছে রুমের মাঝে, একদম কর্নারে ঘুমন্ত অবস্থায় শুয়ে আছে নিরু হয়তো ঘুমের ওষধ খাইয়ে ঘুম পারানো হয়েছে।
২ জনের একজন বলে উঠলো কিরে অয়ন আচ্ছে না কেন, আর যে তর সইছে না।
অন্যজন সামান্য আনন্দ ভরা মুখে  বললো,  এত তাড়াফুড়া কিসের, সারারাত তো পড়েই আছে।
নিরুর সাথে ঘটতে যাওয়া বিষয় টা বুজতে বাকি রইলো না মাহিরের।
রাগে গা জ্বলতে লাগলো তার, মনে মনে বললো, তোরা আমার নিরুর সাথে ছি ছি... দেখাচ্ছি মজা।
.
মাহির বিনা শব্দে রুমের একদম শেষ টাতে পৌছে গেলো, সেখানে একটা  দড়জা আছে,  দড়জা টার একটা পাল্লা  ভাংগা। বাইরে নজর পড়তেই মাহির দেখতে পেল  চায়ের ফ্লাক্স হাতে কেউ একজন তার দিকেই এগিয়ে আসছে।  মাহির বিনা শব্দে রুম থেকে বের হলো, রাস্তা দিয়ে সামান্য একটু এগিয়ে একটা গাছের আড়ালে আশ্রয় নিলো।  লোকটা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সামনে অগ্রসর হচ্ছে।  মাহির পিছন গিয়ে দাড়াল, লোকটা পিছনে ফিরে তাকাতেই ঘাড় মটকে দেয় মাহির, হাতে চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করলো মাহির। রাতে ঘুমানোর জন্য ডাক্টারের কাছ থেকে অনেক কষ্ট করে ৪ টা ঔষুধ নিয়েছিলো,  সেই গুলা এখন এতো দরকারে লাগবে ভেবেই ভালো লাগছে মাহিরের,  ঘুমের বড়ি গুলো ফ্লাক্সে মিশিয়ে মুখটা ঢেকে ভাঙ্গা দড়জা দিয়ে রুমে প্রবেশ করলে মাহির।
.
হঠাৎ রুমের মাঝখানের একজন চিৎকার করে বললো, কিরে এতক্ষন লাগে চা আনতে। 
.
মাহির ভয়ার্ত গলায় বললো দোকানদার প্রাকৃতিক কাজে গিয়েছিল। আমি কি করবো।
লোকটা আদেশের সুরে বললো, দে এখন সবাইকে চা দে।
.
মাহিরের মনের হাসিটা সামান্য প্রকাশ পেলো মুখে, কিন্তু সেটা সবার অন্তরালেই রয়ে গেল।
.
সবাইকে চা দিলো মাহির।  তৃপ্তি করে চা খেলো সবাই। চা শেষের মিনিট দুয়েকের মধ্যে সবাই ঘুমে হারিয়ে গেল।  আনন্দ উল্লাসের ভাব নিয়ে নিরুর কাছে গিয়ে দাড়াল মাহির।
চোখে পানি ছিটাকেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো নিরুর।  নিরু প্রথমে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে নি।  আকস্মিকতার সাথে জ্বিঞ্জাসা করেই ফেললো একি তুমি
মাহির উত্তর দিলো, হুম আমি, এখন কথা বাদ দিয়ে চলো তাড়াতাড়ি,  নিরুর হাতের বাধন খুলে দিলো মাহির। 
.
দুজন দৌড়িয়ে পাড় হতে গিয়ে দেখে দড়জায় অয়ন দাড়িয়ে আছে।
অয়ন অবাক হয়ে গেল। তার সামনে দিয়ে নিরুকে কেউ নিয়ে যাবে এটা সে বিশ্বাস করতে পারছে না। 
তাই রাগান্বিত স্বরে বললো, কি পালাচ্ছ, তাও আবার আমার চোখের সামনে দিয়ে সেটা আমি হতে দেব না
অয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই মাহির অয়নের তলপেট বরাবর একটা লাথি মারলো। অয়ন অস্ফুর্থ আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে গেলো। আরো কয়েকটা লাথি মারলো লুটিয়ে পড়া অয়নের উপর। অয়ন অজ্ঞান হয়ে গেলো।
.
মাহির নিরুর হাত ধরে রওয়ানা দিলো, রাস্তায় সে পুলিশকে একটা মেসেজ দিলো নিরুর আরালে।  মিনিট তিনেকের মধ্যে তাদের সামনে পুলিশ।  নিরু অবাক হলেও মাহির মুখ অবয়েবের কোনো পরিবর্তন হয় নি।  ইন্সপেক্টর বললো, কাজ শেষ।  মাহির আনন্দের সাথে বললো, হুম।
ইন্সপেক্টর  অনুরোধের সুরে বললো কাল সকালে দুজন প্লিজ একটু পুলিস স্টেসনে আসবেন মাহির ও নিরু দুজন দুজন অবাক হলো আর বললো, কেনো?
কাল সকালে আসলেই বুজতে পারবেন, আর আজ আপনি নিরুকে বাসায় পৌছে না দিয়ে ওর কোনো বান্ধবীর বাড়িতে রাখুন, কাল আমি আপনাদের একসাথে করে নিরুদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। এখন আমি চলি দেরী হয়ে যাচ্ছে।  ইন্সপেক্টর কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে হাটা দিলো। 
.
ইন্সপেক্টর তার দলবল নিয়ে রওয়ানা দিতেই নিরাবতা ভেঙ্গে নিরু বললো, পুলিস এলে কোথা থেকে।
আমি পুলিসের সাথে কথা বলেই এসেছিলাম।  কিডন্যাপার একটা চিঠি দিয়ে ছিলো, যদি পুলিসকে ফোন দেয়া হয় তবে ওরা তোমাকে মেরে ফেলবো। তাই প্লান করে এসেছি। চিন্তিত সুরে বললো মাহির।
নিরু মাহিরের হাত টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
>> মাহির তুমি অয়নকে এমন রাগ করে মারলে কেন
>> ও যে বেচে আছে তাই তো ওর কপাল ভালো
>> কেনো
>> তুমি জানো ও তোমাকে নিয়ে খেলতে চেয়ে ছিলো, এটা আমি সহ্য করি কি করে তুমিই বলো।
নিরুর মুখের স্বর বন্দ হয়ে গেলো, চোখের কোনে আষাঢ়ের ডাক পড়লো, টপ টপ করে পানি পড়তে লাগলো চোখ থেকে
মাহির নিরুর চোখের পানি মুছে দিয়ে
>> আরে বাবু কাদছো কেনো, কান্না করে  না।
>> নিরু এবার কিছুটা শান্ত হলো।
>> চলো আমাদের ঢাকা যেতে হবে, তাড়াতাড়ি পা চালাও
>> না আমি যাবো না,
>> কেনো
>> ঢাকা গেলে তো বাবা আবার আমাদের আলাদা করে দেবে।
>> সেটা তো করবেই
>> আমি যাবো না মাহির।
>> প্লিজ নিরু বোঝার চেষ্টা করো আমরা যেখানেই যায় না কেনো তোমার বাবা আমাদের ঠিকই খুজে বের করবে। তার থেকে ভালো তুমি বাসায় চলে যাও বাকি টুকু আমি দেখবো
>> তুমি, কি করে।
>> পরে বুঝতে পারবে।
কথা বলতে বলতে বড়ো রাস্তার  ধারে চলে চলে এলো দুজন। বাস থামিয়ে বাসে উঠলো দুজন।
নিরাবতায় কেটে গেলো কিছুক্ষন সময়।
বাসে বসেই নিরু মাথাটা হেলিয়ে দিলো মাহিরের  কাধে
মাহির চুপচাপ বসে রইলো, সে জানে নিরুর একটু বিশ্রাম দরকার। মিনিট দুয়েকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো নিরু, মাহির তাকিয়ে রইলো নিরু মুখের দিকে। ঘুমালে মেয়েদের নাকি অনেক সুন্দর লাগে, তার বাস্তব প্রমান পেলে মাহির। কতক্ষন তাকিয়ে ছিলো জানে না মাহির। হঠাৎ নিরুর কথায় বাক ফিরে পেলো মাহির
>> কি দেখো
>> কিছু না
>> ভালো
.
নিরু আবার চোখ বন্ধ করলো
.
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ঢাকায় পৌছে গেলো দুজনে।
মাহির বললো
>> তোমার এখানে কোনো বান্ধবীর বাসা আছে
>> না,
>> তাহলে থাকবে কই
>> হোটেল ভাড়া নেবো
>> ঠিক বলছো
হোটেলে গিয়ে দুজন দুটো রুম নিয়ে নিলো।
রাতে হোটেলে থেকে সকাল ৯ টার দিকে  পুলিস স্টেসনে গেলো মাহির আর নিরু। পুলিস ইন্সপেক্টর আনন্দের সাথে বললো, বসুন । বসলো দুজনে।
এই দেখুন আপনার নামে মামলা করে গেছে নিরুর বাবা, বললো ইন্সপেক্টর।
বাবার প্রতি ঘৃণাটা আরেকটু বেরে গেলো নিরুর। 
মাহির অবাক হয়ে বললো, এখন তাহলে কি করবো।
>> ইন্সপেক্টর অনুরোধের সুরে বললো, চলুন গেলেই বুজতে পারবেন
.
মাহির আর নিরু ইন্সপেক্টরের সাথে নিরুদের বাড়িতে পৌছে গেলো।
গেট পেরিয়ে ছোট একটা রাস্তা, রাস্তার শেষে নিরুদের বাড়ির দড়জা।  বেল চাপ দিলেন ইন্সপেক্টর। দড়জা খুলে গেলো। তিনজন আগে পিছে করে রুমে প্রবেশ করলো।
নিরুর বাবা ঝিমুচ্ছিলেন। হঠাৎ নিরুকে দেখতে পেয়ে মুখে একটা উজ্জ্বল হাসি ফুটে উঠলো তার। কিন্তু মাহিরকে দেখেই তার মুখের হাসিটা অদৃশ্য হয়ে গেলো, হিংস্রতার একটা ছাপ পড়লো তার মুখে
>> তুই এখানে কেনো
ইন্সপেক্টর শান্ত হতে বললেন নিরুর বাবা কে,
>> ঔই বাচিয়েছে আপনার মেয়েকে।  নিজের প্রান হাতে নিয়ে রক্ষা করেছে নিরুকে। 
নিরুর বাবার গলাটা চেন্জ হয়ে গেলো শান্ত হয়ে বললো, মানে
ইন্সপেক্টর বললো, হুম। সব ওর কাজ। ওর জন্যই আপনি আপনার মেয়েকে ফিরে পেয়েছেন, তা না হলে টাকাও যেতে আর আপনার মেয়েকেও হারাতেন। ওদের প্লান টা ছিলো গভীর। 
.
নিরুর বাবা মুখের বুলি হারিয়ে গেলো, ছোপায় বসে পড়লো সে। নিজেকে তার অপরাধী মনে হচ্ছে। 
ইন্সপেক্টর সাহেব বললো, আমি চলি।
ইন্সপেক্টরের পিছু পিছু মাহির ও রওয়ানা হলো।  দু পা এগিয়ে থেমে গেলো মাহির।  পিছন থেকে ভারী স্বরে ডাকছে নিরু,
>> বলো
>> কই যাচ্ছো
>> গন্তব্যে
>> আমি সাথে যাবো তোমার
কথাটা বলতেই নিরুর বাবা সোফা থেকে উঠে দাড়িয়ে নিরুর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। নিরু বুজতে পারলো তার বাবার মনের কথা। মাহির ধীর পায়ে রওয়ানা হলো বাইরের দিকে, ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো মাহির,
নিরুর হাতটা ছেড়ে দিলো তার বাবা।  দৌড়ে রুমে চলে গেলো নিরু। মনের অজান্তে সামান্য সামান্য করে রাগ জন্ম নিলো নিরুর, মনে মনে কিছু সিদ্ধান্ত নিলো নিরু। রাতে একটা চিঠি রুমে রেখে পালিয়ে গেলো বাসা থেকে ।
.
সকালে রুমে একটা চিঠি দেখে অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলো কিছুক্ষন। চিঠি টা হাতে নিয়ে ভাজ খুললো,
বাবা তুমি যখন চিঠি টা হাতে পাবে ততক্ষনে আমি মাহিরের অনেক  কাছাকাছি থাকবো। তুমি চাইলেও এই মুহুর্তে আমাদের আলাদা করতে পারবে না। আমি জানি তুমি এমন কাজটা কখন ও করবে না। তোমাকে অনেক ভালোবাসতাম, কিন্তু এখন তোমার প্রতি আমার ঘৃণার পাল্লা টা ভারী, তাইতো তোমায় রেখে চলে এসেছি।  আশা করি আমায় সুখে থাকতে দেবে। আর যদি আমায় আর মাহিরকে আলাদা করতে চাও তো হয়তো আর আমার জীবিত পাবে না।
চিঠি টা শেষ করে চোখের পলকটা সেকেন্ডের জন্য একবার বন্ধ নিরুর বাবা, তখনই চোখ থেকে নোনা জলের সৌত গড়িয়ে পড়লো।
.
কান্না জড়িত কন্ঠে বলেই ফেললো নিরুর বাবা, ভালবাসা তাইনা, ভালবাসা নিয়েই সুখে থাক আমি না হয় মেয়েকে ছাড়া একাই থাকবো।
কথা গুলো বলে হাতের চিঠি টাতে মুচরিয়ে ফেলে দিলো আর বললে, 
.
ভালো থাকিস।
.....

....

...
Collected

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ