এইচএসসি ইসলামের ইতিহাস পরীক্ষা দিয়ে এসে রুবি আমাকে বললো, " জানিস ভাইয়া, আজ কি হয়েছে? "
" কি! " জানতে চাইলাম আমি।
" যে শিক্ষকটা আমাদের হলে গার্ড হিসাবে ছিল, সে আমাদের সবার মাথার হিজাব খুলতে বাধ্য করেছে। " বললো রুবি।
" সে তো করবেই। পরীক্ষার হলে মুখ ঢেকে রাখলে তো পরীক্ষার্থীর পরিচয় জানা যাবে না। মুখ ঢেকে তো পরীক্ষার্থী না হয়ে অন্য কেউ ও পরীক্ষা দিতে পারে না কি ? " ওর কথার জবাবে বললাম আমি।
" বিষয়টা তো মুখ ঢাকা না ভাইয়া! মুখ তো খোলাই ছিল।" বললো রুবি।
" তাহলে? "
" শুধু মুখ না, কান সহ সম্পূর্ন মাথা হতে স্কার্ফ সরিয়ে রাখতে হয়েছে! সে কি বিব্রতকর অবস্থা! চিন্তা কর, যারা শুধু স্কার্ফ দিয়ে মাথা, কান ঢেকে গিয়েছিল তাদের অবস্থা! সকলের সামনে স্কার্ফ খুলে ফেলা...." বললো রুবি।
" এটা ঠিক হয় নি। বাড়াবাড়ি। " বললাম আমি।
" আচ্ছা ভাইয়া, এমন কি কোন নিয়ম আছে যে পরীক্ষার হলে কান, মাথা ঢেকে স্কার্ফ পরে পরীক্ষা দেয়া যাবে না? " জানতে চাইলো রুবি।
" তা থাকবে কেন? তোরা দায়িত্বে থাকা হল সুপারের কাছে নালিশ করতি? "
" নালিশ? সাতটা সৃজনশীল লিখতে, প্রান যায় যায় অবস্থা নালিশ করবে কে? "
" তোরাই তো প্রতিবাদ করতে পারতি?"
" সে কি আর করি নি! প্রতিবাদ করাতে কি বলে জানিস? বলে - তোমাদের রুপ দেখতে আসি নি! মনে হয় আমরা পরীক্ষা হলে রুপ দেখাতে গেছি! জানিস ওই শিক্ষকটা আরো কি বলেছে? "
" কি বলেছে ? "
" উনি নাকি আমাদের বাবার মতো! বাবার সামনে আবার লজ্জা কি? " বললো রুবি।
" তা তো ঠিকই বলেছে! ভুল কি? "
" ভুল নয় মানে! উনি তো ওনার ছাত্রীকেই বিয়ে করেছেন! তো বলতো বাবা হয়ে কি কেউ মেয়েকে বিয়ে করতে পারে? "
" সে প্রশ্নটা ওনাকে করতি? "
" ভাইয়া তুই না বোকা! পরীক্ষা হলে ওনার সাথে তর্ক করি, আর উনি ব্যবস্থা নি তাই না? "
" তাই, সেই ভয়ে মাথার স্কার্ফ খুলে রেখে পরীক্ষা দিয়ে এলি। ভালো। "
এর পর আর কোন কথা হলো না রুবির সাথে । রুবি চলে যেতেই ভাবলুম, যে দেশের ভার্সিটিতে বলা হয় হিজাব পরে আসা যাবে না, সে দেশে পরীক্ষা হলে স্কার্ফ খুলে রাখতে বলাটা অন্যায় কিছু না । প্রগতিশীল হতে হলে স্কার্ফ মাখায় রাখা যাবে না, বুকে ওড়না দেয়া যাবে না, বোরকা - সে তো পারমানবিক বোমার চেয়েও ভয়ানক আজকের প্রগতিশীলদের কাছে! বোরকা / পর্দা মানেই তো নারী বাক্স বন্দি মানুষ, তাদের ভাষায়।
কিন্তু এগুলো সম্ভব হতো না, হবে না। যদি সুমির মতো সব মেয়েরা হতো। সুমি, আমার সহপাঠিনী ছিল মেয়েটা। কলেজে একই বিভাগে ছিলাম। ও সব সময় হিজাব পড়েই কলেজে আসতো, আরো অনেকেই আসতো তবে তারা মাঝে মাঝে কলেজে প্রোগ্রাম থাকলে শাড়ি পড়ে আসতো।
একদিন উদ্ভিদ বিজ্ঞান ক্লাসে জয়নুল স্যার লেকচার দিচ্ছেন, হঠাৎ লেকচার থামিয়ে সুমিকে দাড়াতে বললেন। সুমি উঠে দাড়াতেই উনি বললেন-
" "শিক্ষক পিতার মতো, তাই শিক্ষকের সামনে মুখোশ লাগানোর প্রয়োজন নেই। তোমার বাবার সামনেও মুখোশ লাগিয়ে রাখো নাকি?"।
হিজাবকে মুখোশ বলায় আমরা বেশ কিছু ছেলে মেয়ে হেঁসে উঠলাম সজোরে। যেন আমরা মজার কিছু শুনতে পেয়েছি । স্যারের মুখেও হাঁসি তখন । অবশ্য ওনার মুখে সর্বদাই হাঁসি হাঁসি ভাব থাকে! তাই তিনি রাগলেও কখনো সহজে কেউই বুঝতে পারি না যে তিনি রেগেছেন। তবে সেই মহুর্তে মনে হয়েছে স্যার সুমির হিজাব কে মুখোশ বলতে পেরে হাঁসছেন। কারন স্যার হিজাব/পর্দা সম্পর্কে প্রায়ই বিরুপ মন্তব্য করতেন।
" না রাখবো কেন স্যার? " জবাব দিল সুমি। " কিন্তু কথা হলো আপনি আমার বাবা নন! যতই বলুন, আপনি আমার বাবা মতো, কিন্তু আমাকে দেখে আপনার দৃষ্টি হঠাৎ নোংরা হতে পারে। কিন্তু আমার বাবা দৃষ্টি কখনই নোংরা হবে না "
" মানে? " স্যার বেশ হতবাক হয়েছেন।
" বলতে ইচ্ছে করছে না তবু বলছি। পূর্বেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আপনি তো স্যার আপনার ছাত্রীকেই বিয়ে করেছেন, তাই না? "
" তো? " স্যারের জবাব।
" স্যার, আপনি তার বাবার মতো ছিলেন তাই না! আচ্ছা স্যার, বলুন তে, বাবা কি তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারে? না বাবা পারে না। কিন্তু শিক্ষক পারে। আর যাদের কাছে বিবাহ জায়েজ, তাদের সম্মুখে নিজেকে প্রকাশ করা হারাম। আপনাকে অনুরোধ করবো, আপনি যেটাকে মুখোশ বললেন সেই মুখোশটার - আপনার সামনে আমার প্রয়োজন আছে কি নেই এ ব্যাপারে বলবেন না। শুধু আমি না, কাউকেই বলবেন না। " জবাব দিয়েছিল দৃঢ়তার সাথে সুমি। আমরা ওর সকল সহপাঠী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। স্যার বেশ কিছুক্ষন ক্লাসে ছিলেন সেদিন। সেই সময়ে শুধু চারটা শব্দই তিনি বলেছিলেন। " আজ তাহলে এ পর্যন্তই" তার পর বের হয়ে গিয়েছিলেন। এর পর তিনি এই পর্দা বা হিজাব নিয়ে কিছু বলেন নি কখনোই।।
লেখা: নুর আলম সিদ্দিক
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ