এবটি ছবি ও ভালোবাসা
ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো অনামিকা। আঙিনায় বসে সে আনমনে হাতে মেহেদি দিচ্ছিলো, ওর সম্মুখে যে একজন পুরুষ এসে দায়িয়েছে ও বুঝতেই পারে নি। মাথা তুলে যখন পুরুষটা কে দেখলো চমকে উঠলো। কতক্ষণ হতে দাড়িয়ে আছে কে জানে? পুরুষটা আর কেউ নয়, সে ওরই সপ্ন পুরুষ ! পুরুষটা কোন কথা না বলে বেড়ালের মতো নিঃশব্দে দাড়িয়ে ওর হাতে মেহেদি দেয়া দেখছিলো! এ সত্য না কি কল্পনা সে বিষ্ময় বোধটা ওকে এমন আচ্ছন্ন করেছে যে ওর বুক হতে ওড়নাটা সরে গিয়ে বুক উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে সে সচেতনতা টুকুও নেই!
অনামিকার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল এতক্ষন সেই পুরুষ । ওর বুকের দিকে চোখ পড়তেই ফিরিয়ে নিল দৃষ্টি। অন্য দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'কেমন আছো অনু? '
পুরুষটা'র কন্ঠস্বরে সম্বিৎ ফিরে পেল অনামিকা। অনু ওরই ডাক নাম । সম্বিৎ ফিরে পেতেই বুঝতে পারলো বুক হতে ওড়নাটা সরে আছে। দ্রুত ওড়নাটা ঠিক করে নিলো ও। সেই সাথে লজ্জায় রাঙা হলো ওর মুখ। এমন পরিস্থিতি যে এই মহুর্তে ওই পুরুষের সম্মুখ হতে পালাতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু সে তা করলো না। দাড়িয়েই রইলো লজ্জায় লাল হয়ে।
" ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া? পুরুষটার জবাবে বললো অনামিকা ।সে ওর বড় ভাইয়ের বন্ধু। নাম নিলয়। ভাইয়ের বন্ধুকে ভাই ই ডাকতে হয়। সে জন্য সে তাকে ভাইয়াই ডাকে।
সপ্ন পুরুষকে এই ভাইয়া ডাকাটা অনুর কাছে বড্ড বেশি কষ্টের। সপ্ন পুরুষকে তুমি করে ডাকার মাঝে একটা ভিন্ন আনন্দ থাকে, থাকে ভিন্ন অনুভূতি। সেখানে প্রেম থাকে, থাকে চাওয়া পাওয়া, থাকে বলা যায় না- প্রকাশ করা যায় না এমন হাজার আবেগ। কিন্তু নিলয় কে তুমি ডাকার অধিকার সে পায় নি এখনো। কখনো পাবে কি না সেটা জানে না অনামিকা। ওর সব ভাবনাগুলো তাকে নিয়েই সারাক্ষন।
নিলয়ের বয়স ওর হতে দশ বছরের বেশি। তাছাড়া বড় ভাইয়ের বন্ধু। তাই ও নিলয় কে বলতে পারে না যে সে তাকে ভালোবাসে। যদিও অনু বিশ্বাস করে ভালোবাসায় বয়স, জাতি, ধর্ম, বর্ন মানে না। কিন্তু এ বিশ্বাসেই ওর ভয়, বয়স আর তাদের মধ্যকার সম্পর্কের নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করে অনু ভালোবাসি বললে যদি নিলয় তাকে ফিরিয়ে দেয়! তখন কি হবে? অনুর এটাই ভয়।
" এতদিন পরে আমাদের কথা মনে পড়লো? ভেবেছিলাম ভুলে গেছেন আমাদের! " অভিমানের সুরে বললো অনু।
" ভুলতে আর পারলাম কই? আর এত দিন মানে? এই গত মাসে তো এসে গেলাম। তপু কোথায়? আন্টি? "
" ভাইয়া ঘরে। মা পাশের বাসায়। ভাইয়াকে ডাকছি। ভাইয়া...." অনু গলার স্বর বাড়িয়ে তপুকে ডাকতে শুরু করতেই, নিলয় নিষেধ করে। বলে " ডাকতে হবে না। আমিই ঘরের ভিতর গিয়ে চমকে দিতে চাই "
নিলয় ওর ভাইয়ের ঘরে যায়। বাহির হতে সে ঘরের ভেতরের দুই বন্ধুর কথোপকথন শুনতে পায়। হাতে মেহেদি দেওয়ার প্রতি মনোযোগ দিতে পারে না। ওর সব মনোযোগ এখন নিলয়ের প্রতি। ভাবে, একবার যতি তাকে বলতে পারতো ভালোবাসি।
আচ্ছা উনিও কি ওকে ভালোবাসে? পছন্দ করে? কিন্তু বলতে পারে না, বন্ধুর বোন বলেই!
🌸
কয়েক বছর পেরিয়ে গেছে। এখন আর অনুদের বাসায় নিলয় আসে না। তপুর কাছে অনু শুনেছে সে চট্টগ্রামে আছে এখন। অনু হৃদয়ের অস্থিরতা অনুভব করে । ওর ভালোলাগে না কিছুই। নিলয়ের ভাবনা ওর মাঝে তোলপাড় করে সব সময়। বেশ বুঝতে পারে, নিলয়কে কতটা মনে প্রানে ভালোবেসেছে সে।
অনু ওর ঘরে বসে পড়ছিল। তপু এসে ঘরে ঢুকলো। ভাই বোনের মাঝে বয়সের বড় ধরনের ব্যবধান সত্বেও সম্পর্কটা পিঠোপিঠি ভাই বোনের মতোই। তপু ঘরে আসতেই, অনু বই বন্ধ করে ভাইয়ের দিকে তাকায়।
" নিলয়কে তোর মনে আছে? " তপু অন্য একটা চেয়ারে বসতে বসতে প্রশ্ন করে অনুকে।
' হ্যা, এক সময় আমাদের বাড়িতে প্রায়ই আসতো। এখন কয়েক বছর হতে আসে না' অনু বলে। কথা গুলো বলার সময় বুঝতে পারে ওর হার্টবিটের অস্বাভাবিক গতি। হঠাৎ তপু ওকে নিলয়ের কথা বলছে কেন? কিছু কি হয়েছে!
'ওর সাথে দেখা হলো আজ, বহুদিন পর। বললো, ও না কি বিয়ে করেছে। ' তপু বলে।
চমকে ওঠে অনু। তীরের মতো বিদ্ধ করে ওকে কথাটা। নিলয় বিয়ে করেছে! হঠাৎ যেন ওর কাছে মনে হয় পৃথিবীটা শুন্য। কিছু নেই এখানে। ও মহাশূন্যে বসে আছে একা। কত না সপ্ন দেখেছে সে সে তাকে নিয়ে। কত না ভাবনার তাজমহল গড়েছে সে। তার ভাবনার কেন্দ্রস্থল ই তো নিলয়। সব কিছুই কি মিথ্যে ভাবনা হয়েই রবে?
অনু কিছু বলে না। বলার শক্তি হারিয়েছে যেন মহুর্তের জন্য। চুপ করে রইলো। ওর কিছুই বলার নাই। কি ই বা বলতে পারে সে? নিলয়কে যে সে ভালোবাসে সেটা কখনোই নিলয়ের কাছে প্রকাশ করে নি।
"ও কি বলেছে জানিস? " তপু আবার বলে।
' কি? ' অনু জানতে চায় ক্ষীন স্বরে। অনুর অপ্রত্যাশিত এ পরিবর্তন বুঝতে পারে না তপু।
' ও না কি তোকে পছন্দ করতো খুব। বন্ধুর বোন বলে কখনো তোকে সে কথা বলতে পারে নি। তোর হতে নিজেকে দুরেই রাখতো । কথায় কথায় জানালো সেটা আমাকে।' বললো তপু।
তাহলে নিলয়ও ওকে পছন্দ করতো! ভালোলাগা বা ভালোবাসা একপাক্ষিক ছিল না! কিন্তু সে জেনে আর কি হবে? সে সময় কথাটা বলে দিলে কি হতো? বিষন্ন হৃদয়ে ভাবলো অনু।
🌸
বিছানায় শুয়ে আছে অনু। ভালো লাগছে না । আজ কেন যেন বার বার ওর চোখে ভাসছে সেই সপ্ন পুরুষটাকে। এত দিনেও ভুলতে পারে নি তাকে। এখন সে অন্যের, অনু জানে কখনো তাকে পাবে না। তবুও ভালোবাসে দুর হতেই তাকে সে। ভালোবাসা তো পাপ নয়!
ইদানিং ফেসবুকে সময় কাটায় সে। গল্প পড়ে, চ্যাটিং এ আড্ডা দিয়ে। প্রায় দিনই নিলয় নাম লিখে সে ফেসবুক সার্চ বক্সে সার্চ দেয়। লক্ষ্য নিলয়ের ফেসবুক আইডি খুজে পাওয়া। কিন্তু প্রতিবারই ব্যার্থ হয়। নিলয়ের কি ফেসবুক আইডি নেই না কি! নিজেকে প্রশ্ন করে সে প্রতিবার।
আজো একার চেষ্টা করলো। না ফলাফল শুন্য। শত জন নিলয়ের মধ্যে একজনও ওর নিলয় নয়। পিক না দেয়া, এবাউটে কিছু নেই, এমন নিলয় নামের কয়েকটা আইডিতে ম্যাসেঞ্জারে সে পরিচয় জানতে চেয়েছিল। পরে বুঝেছে না তারা সে নয়।
হোম পেজে বিভিন্ন আইডি হতে গল্প পড়ছিল অনু। হঠাৎ একটা ছবিতে ওর চোখ স্থির হলো। একটা ছেলের সাথে সেলফিতে নিলয়। আগের চেয়ে আরো সুন্দর হয়েছে সে। সত্যিকারে রাজ পুরুষ। ছবিটা মেমোরিকার্ডে সংরক্ষন করে রাখলো ফেসবুক হতে ডাউনলোড করে। তারপর যে আইডি হতে ছবিটা দেয়া হয়েছিল, সেই আইডির এবাউট দেখে বুঝলো সেটা নিলয়ের নয়!
ভাবে, যদি নিলয়ের আইডিটা খুজে পেত, ওর সাথে কথা বলতো ম্যাসেঞ্জারে। কিন্তু পরোক্ষনেই নিজেকে প্রশ্ন করে, কি কথা বলতো তার সাথে?
🌸
অনু ইলিশ-পান্তা খেয়ে উঠে আঙিনায় দাড়াতেই ছুটে এলো ওর ভাবী। লাল, সবুজ রঙে রাঙিয়ে দিল মহুর্তেই ওকে। তপু বিয়ে করেছে এক বছর হলো। অনু গত তিনদিন হতে প্লান করেছিল, সে প্রথমে ভাবীকে রঙ লাগাবে নববর্ষ বরনে । তার পর ভাবী যাতে সারাটা দিন ওকে খুজে না পায় সে জন্য লুকিয়ে থাকবে সারাটা সকাল । কিন্তু প্লানে কাজ হলো না। ভাবীই ওকে রঙ দিলো। দিয়েই ওখান হতে ছুটে গেল। অবস্থান নিলো তপুর পেছনে।
তপুর সাথে অনুর সম্পর্কটা যতই পিঠাপিঠি ভাই বোনের মতো হোক না কেন, তপুকে সে একটু ভয়ই পায়। সমীহ করে। এই মহুর্তে ভাবীকে রঙ দিতে চাইলে তপুর শরীরে রঙ লাগবে। তপু রাগতে পারে ভেবেই ও ভাবীকে রঙ দিতে গেল না। বরং দাড়িয়ে রইলো।
' কি রে দাড়িয়ে রইলি যে, রঙ দিবি না? ' অনুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তপু বলে। ভাইয়ের কথায় যে ভয় ছিল সেটা দুর হয়ে যায়। অনু রঙ নিয়ে ছুটে আসে। ভাবীর গালে, গলায় জোর করে রঙ লাগিয়ে দেয়। সেই সাথে বড় ভাইয়ের শরীরেও রঙ দিতে ভুলে না সে। ওর সাথে যোগ দেয় ওর ভাবি।
ভাই ভাবি যখন একে অপরকে রঙে রাঙাতে মত্ত, তখন অনুর মনে পরে নিলয়ের কথা। কল্পনায় দেখে ও নিলয় কে রঙ দিচ্ছে, নিলয় ওকে। ঠিক ভাই ভাবির মতো!
ভাই ভাবির সামনে হতে ঘরে চলে আসে অনু।বেশ কয়েকদিন আগে নিলয়ের ছবিটা প্রিন্ট করে এনে রেখেছিল ওর ডায়রীতে । ডায়রী হতে ছবিটা বের করে বাম হাতে নিলো সে । ছবি'র নিলয় ওর দিকে তাকিয়ে নিরবে হাঁসছে। অনু বাম হাতের আঙ্গুলে লেগে থাকা লাল রঙ নিলয়ের গালে লাগিয়ে দিলো ছবিতে। গালে রঙ লাগাতেই অনু দেখলো নিলয় লজ্জা পেয়েছে, লজ্জা রাঙ্গা মুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ইশ এ যদি সত্যিই নিলয় হতো!
নিলয়কে এভাবে রঙ লাগালে কি সে এমন ভাবেই হাসতো? প্রশ্ন করে অনু নিজেকে। সে জবাব ওর জানা নেই। নিলয় এখন অন্য একজনের স্বামী। তাকে নিয়ে ভাবা বা সপ্ন দেখার কোন অধিকার ওর নাই। তবু দেখে। এ অন্যায়।
একজন বিবাহিত পুরুষের ছবি পর নারী হিসাবে তার নিকট রাখা হয়তো পাপ। তবু সে পাপটা করে।
হঠাৎ অনু অনুভব করলো, ওর বুকের ভিতরটা শূন্য। নিলয় নামের সে, ওর বুকের ভেতর হতে সবকিছুই নিয়ে গেছে। না, নিলয়কে ভুলে যেতে হবে। নিজেকে বলে অনু। ছবিটা নষ্ট করে দিতে হবে । যেখানে মানুষটা ওর নয়, সেখানে ছবিটা আগলে রেখে কি হবে?
বিয়ের জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে। পছন্দের ছেলে পেলেই বিয়ে দিয়ে দিবে ওর। বিয়ের পর সেও অন্যের হয়ে যাবে। তখন ছবিটা' ওর পাপ বাড়াবে। ভাবতে ভাবতে, হঠাৎ করে ছিড়ে ফেলে ছবিটা।
নতুন বর্ষটাকে বরন করতেই বুঝি ওর চোখ বেয়ে নেমে আসে জল। না, সব সপ্ন পূর্ন হয় না কখনো। ভালোবাসলেই সবাইকে আপন করে পাওয়া যায় না।
লেখা: নুর আলম সিদ্দিক
💐 বিঃদ্রঃ ভার্চুয়েল এ জগতে সবাই যে আমার পরিচিত তা নয়। বরং মাত্র কয়েকজনের সাথে আমার ব্যক্তিগত জীবনে পরিচয় আছে।
এই পরিচিত, অপরিচিত ভার্চুয়েল বন্ধুদের ইদানিং কেউই খোজ খবর নেয় না।
শুধু একজন ব্যতিক্রম। না আমার খুব কাছের কেউ নয়। না পরিচিত কেউ নয়। এমন কি তার নামটা যে কি সেটাও জানি না আমি। শুধু এটুকু বলবো, ইদানিংকালে ভার্চুয়েল জগতে একমাত্র সেই আমার একটু খোজ খবর নেয়। ইনবক্সে আড্ডা দেয়। ভালো লাগে ভার্চুয়েল আড্ডাটা তার সাথে। কারন সে বেশ মজার মানুষ। মজার সব শব্দের ব্যবহার, ঝগড়া- শব্দের কাব্যে দুজনের ভার্চুয়েল বন্ধুত্বটা আরো গভীর হয়ে আসে ব্ড্ড বেশি কাছে।
গতকার তার জন্মদিন ছিল । না শুভেচ্ছা জানাই নি তাকে। হয়তো সে অভিমান করে আছে, কিংবা করে নি । কারন তাকে ইনবক্সে কোন রুপ শুভেচ্ছা জানাই নি। তবে বন্ধুদের বলবো আমার উক্ত বন্ধুর জন্য দোয়া করবেন। তার জীবন যেন আনন্দময় ও ভালোবাসায় পূর্ন হয়ে ওঠে আগামি'র পথে। ভালো থাকুক সে সব সময়। ভালো থাকুক সে অনন্ত সময়।
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ