#ভুল ৩
আবিরের সব বন্ধুরাই তাদের প্রেমিকার সাথে কম বেশি রাত কাটিয়েছে, আবির সেটা জানতো। বন্ধুদের দেখে ওরও ইচ্ছে হয়েছিল রুমির সাথে রাত কাটানোর। রুমির সাথে সম্পর্কের তখন দেড় বছর চলছে। সত্যিকার ভাবেই দুজন দুজনকে ভালোবেসেছে । কিন্তু আবিরের তখন মনে হয়েছিল যেখানে ওর বন্ধুরা সম্পর্ক শুরুর তেরো দিন পার না হতেই শারীরিক সম্পর্ক করেছে , সেখানে ওদের সম্পর্ক তো দেড় বছরের! তাহলে সে করবে না কেন?
কিন্তু যতবারই রুমিকে বলেছে সেটা রুমিকে রাজি করাতে পারে নি । রুমির এক কথা ' যা কিছু - সব বিয়ের পর হবে। তুমি কি এর জন্যই আমাকে ভালোবাসো?'
আবিরের রুমির কথার জবাব দেবার মতো কোন ভাষা ছিল না। জবাব দিতে না পেরে সে নিজের সাথে যুদ্ধ করেছে, নিজেকে প্রশ্ন করেছে বার বার - সে কি জন্য রুমিকে ভালোবেসেছে? কিসের জন্য? কিছু তো একটা কারন আছে? কি সেটা! এক সময় সে ভাবলো এ সম্পর্কের পেছনে কারন যাই থাক, সেগুলোর মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও একটি মৌলিক কারন।
রুমির বারন সত্বেও বার বার সে রুমির কাছে আবদার করতে শুরু করলো। আগে দুজনের ফোনে কত কথা হতো, এ কথা- ও কথা, গল্প, গান, আবৃতি, কৌতুক! আর এখন? ফোনে দুজন দুজনাকে বোঝাতেই সময় পার করে। রুমি কথা বলে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের বিরুদ্ধে আর আবির পক্ষে।
আবির বলে, 'শুধু একটা রাত। বিশ্বাস করো না আমাকে? আমি তো তোমাকেই বিয়ে করবো। আর বিয়ের পর যেহেতু হবে, তাহলে এখন নয় কেন? না কি ভালোবাসো না আমাকে? '
রুমি জবাব দেয়, ' তুমি বুঝতে চেষ্টা করো। অবুঝের মতো কথা বলো কেন? বিয়ে করবে ঠিক আছে, বলেছি তো বিয়ের পর। মনে করো, আমরা শারীরিক সম্পর্ক করলাম, কিন্তু কোন কারনে আমাদের বিয়ে হলো না, তখন কি হবে? "
-কিছুই হবে না। কারন অমন হবেই না। আমি তোমাকেই বিয়ে কবরো।
- বিশ্বাস করবো কিভাবে?
আবিরের কথার জবাবে জানতে চায় রুমি । এভাবেই চলতে থাকে প্রশ্ন জবাবের পালা পর্ব। শেষ পর্যন্ত রুমি সরে আসে ওর অবস্থান হতে। রাজি হয় আবিরের কথায় বাধ্য হয়েই। কিন্তু পাপবোধ হতে মুক্তি পায় না। আবির খুশি হয়। অতপর সেও প্রেমিকার সাথে রাত কাটাবে!
কিন্তু রাজি হলেই তো হয় না? চাইলেই তো দুজন এক ঘরে কাটাতে পারে না! এ সম্পর্কের জন্য বৈধতা নেই সমাজে। এটা অবৈধ সম্পর্ক। লোকে জানতে পারলে নিন্দা করবে। বিচার হবে।লোকে ছি ছি করবে।
আবির রুমিকে বলে,
-আমি রাতে তোমাদের বাড়িতে আসবো । '
- কিন্তু বাড়িতে মা বাবা যদি বুঝতে পারে, তখন?
- পারবে না। আচ্ছা, তোমাদের বাসায় কুকুর আছে?
- না।
- তাহলে সমস্যা হবে না। কেউই বুঝবে না। আমি রাতে যখন দু বার মিসকল দিবো, তুমি তোমার ঘরের পেছনে আসবে। বুঝেছো?
এর পর রাত আসে। আবির চুপিচুপি রুমির ঘরের পেছনে গিয়ে দু্বার মিসকল দেয় ফোনে। রুমি বের হয়ে আসে। কিন্তু ভাগ্যের লিখন। স্রষ্টা চান নি, ওরা পাপ কাজটা করুক।
রুমি ঘর হতে বের হয়ে আবিরের সামনে দাড়ানোর কিছু সময়ের মধ্যেই ঘর হতে বের হয় রুমির চাচা। উনি প্রতিরাতের অভ্যাস মতো রাতের এ সময়ে বাড়ির চারদিকে দেখেন। কারন ওনার গোয়ালে - সাতটা গরু ; চোরের উৎপাত বেশি। এই তিনি রুমি আর আবিরকে একসাথে দেখে ফেলেন।
রুমির চাচার ডাকাডাকিতে বাড়ির সবাই উঠে আসে। আবির চিন্তা করে পালাবে, কিন্তু পারে না - ততক্ষনে রুমির চাচা এসে ওর হাত ধরে ফেলেছে। হাত ধরেই দু তিনটা থাপ্পর দেয়। রুমি বাধা দেয়,
- চাচা ওর দোষ নেই। আমি ডেকেছিলাম। ওকে মারবেন না।
- তা তো দেখেই বুঝছি! তোর মতো মেয়ে যে বংশের মুখে কালি মাখাবে বিশ্বাস করি নি কখনো। ছিঃ
বলেই রুমির চাচা রুমির গালে একটা থাপ্পর লাগিয়ে দেয়। রুমি গাল চেপে ধরে কাঁদতে শুরু করে । যে চাচা ওর সাথে কখনো রেগে কথা বলে নি, সে চাচা থাপ্পর দিয়েছে, ওর ভাবতেই আঘাতের কষ্টটা বেড়ে যায়।
সে রাতে আর রুমিদের বাসায় কারো ঘুম হয় না। আবিরকে একটা ঘরে রেখে দরজা লাগিয়ে রাখা হয়। তার পর আবিরের কাছে ওন বাবার মোবাইল নম্বর নিয়ে ওদের বাসায় খবর পাঠানো হয়। আবিরের সে সময় লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। রুমিরো একই অবস্থা। এ যে লজ্জা। এ ই অস্থা এর কারন ও, ওর একটা ভুল না কি ওদের দুজনের ভুল? যার কারনেই এই লজ্জা! আবির ভাবে। বাবা মায়ের সামনে দাড়াবে কি করে সে?
পরের দিন আবিরের বাসা হতে ওর বাপ চাচা দুলাভাই সহ ছয় সাতজন লোক এসে উপস্থিত হয়। শুরু হয় আলোচনা। প্রায় ঘন্টা দুয়েক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে হবে। যেহেতু ভুল করেই ফেলেছে, ভুলটাকে মেনে নিয়ে ওদের বিবাহ দেওয়াই উত্তম। এটা রুমির পরিবার পক্ষের কথা। তাদের মেয়ে, তাদের লজ্জার কথা। তাই তাদের এই প্রস্তাব। আবিরের বাবা চাচা তা না মেনে কি করবে? ইচ্ছা না থাকলেও মেনে নেয়।
বিয়ে হয় দুজনের। আবির আর রুমির। বয়সের জটিলতা যদিও ছিল ; কাগজ পত্রে আবিরের বয়স ২১ আর রুমির বয়স ১৮ করতে ঝামেলা হয় না তেমন। দু পয়সা খরচা করলেই এ দেশে দু বাচ্চার মাকে কুমারি আর তিন বাচ্চার বাপ কে কাগজে কলমে ১৮ বছরের কিশোর করা যায়!
এ চার বছর আগের কথা। এর পর চার বছরের সংসার। আবিরের পরিবারে ওর মা বাবা রুমিকে গ্রহন করলেও তা নিছক বাধ্য হয়ে। ইচ্ছে ছিল একমাত্র ছেলের বিয়ে ধুমধাম করে দিবে অথচ তা হয় নি। আবিরের মায়ের বিশ্বাস রুমি আবিরকে ডেকে নিয়ে গিয়েছে। আর ওর পরিবার ধরে বেধে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
তিনি রুমিকে উঠতে বসতে কথা শোনান। রুমির বোন যখন আসে ওদের বাড়িতে, ভাই বউকে কথা শোনাতে সে ভুল করে না। তবু রুমি কখনো আবিরের কাছে অভিযোগ করে নি। কিন্তু কিছুই আবিরের অজানা থাকে নি। সে জেনেছে, বুঝেছে । অথচ কিছুই করার ছিল না। কারন ভুল করেছে সে । অন্য দিকে ওর বোন জামাই ওকে খোচাতো রুমিকে তালাক দিতে।
এর পর রুমির পেটে বাচ্চা এলো। বাপের হোটেলে আর কতদিন? রুমিকে বাড়িতে রেখে সে ঢাকা গেল। ছ মাস পরে ফিরে এলো আবার। রুমিকে ডাক্তার দেখাতে যখন নিয়ে গেল - ডাক্তার বললো, ' পরিশ্রমের কাজ করা যাবে না। তাহলে বাচ্চার সমস্যা হবে । এমন কি মায়েরো ক্ষতি হতে পারে। "
বাড়িতে এসে মাকে মানা করেছিল আবির, ওর বউকে দিয়ে পরিশ্রমের কাজ না করাতে। কিন্তু ওর মা করলো কি? সে ঢাকা যাওয়ার কদিন পরেই বউকে বাড়ির ভার দিয়ে মেয়ের বাড়ি গেল!
হলো কি? যার ফলফল, সে বাবা হয়েও হতে পারলো না। মৃত সন্তানের বাবা হয়ে কি লাভ?
আবির শুয়ে শুয়ে এ স্মৃতি গুলো দেখছিল, ভাবছিল। এসব ভাবতে ভাবতেই মসজিদ হতে ভেসে এলো মোয়াজ্জিনের কন্ঠে আযান।
" আসসালাতু খাইরুম মিনার নাউম......"
আবির বিছানা ছেড়ে উঠলো। ওযু করে নামাজ পরবে সে । তার পর হাসপাতালে যাবে। মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিল, আবার একটা ভুল করবে সে। যখন কেউ একবার ভুল করে, আর সে ভুলটাকে কেউ সংশোধিত না করে, মেনে না নিয়ে বরং সেই ভুলটাকে অবলম্বন করে ভুলকারীকে কষ্ট দিতে চায়, তখন ভুলকারীর আবার একটি ভুল করা অবশ্যম্ভাবী হয়ে আসে । আর সেটাই উচিৎ। ভাবে আবির।
(চলবে.....)
লেখা: নুর আলম সিদ্দিক
ভুল ৪
রুমি বিছানায় বসে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে এক দৃষ্টিতে। আবির রুমির সে দৃষ্টির সাথে তার দৃষ্টি মেলাতে পারে না। চোখ নিচু করে । রুমির প্রশ্নের জবাব সে দিবে কিভাবে? তাদের সন্তান যে বেঁচে নেই, সেটা রুমির কাছে প্রকাশ করার মতো কোন শব্দই খুজে পাচ্ছে না সে । তাই চুপ করে থাকে।
আজ চারদিন পর রুমিকে হাসপাতাল হতে বাড়িতে নিয়ে এসেছে সে। এই চারদিন বার বার রুমি আবিরের কাছে সন্তানের কথা জানতে চেয়েছে, আবির সত্য বলে নি জবাবে। বলেছে, "ছেলেটার সমস্যা ছিল - তাই রংপুরে নিয়ে যেতে হয়েছে। সেখানে সুস্থ ভালোই আছে । তুমি সুস্থ হয়ে নাও, গিয়ে নিয়ে আসবে! "
- আমার ছেলের কাছে কে আছে? তুমি, বাবা মা এখানে। তোমার মা বাবাও বাড়িতে, আজ আমাকে দেখে গেল! তাহলে ছেলেটার কাছে কে? তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো? আমার ছেলের কি কিছু হয়েছে?
জানতে চেয়েছিল রুমি ।
- দুলাভাই আর আপা আছে রংপুরে।
স্বাভাবিক ভাবেই মিথ্যেটা বলেছিল আবির। রুমির বিশ্বাস হতে চায় নি সেটা, কিন্তু আবিরকে সে অবিশ্বাস করে নি কখনোই। সে কারনেই বাধ্য হয়েছে বিশ্বাস করতে। তবে মনের ভিতরে একটা আশংকা থেকেই গেছে।
আজ বাসা আসার পর যখন সবাই কে বাড়িতে দেখলো, সে আশ্চর্য হলো। তার ছেলেটা যদি রংপুরেই থাকবে - তাহলে তার সাথে কারো না করোর তো থাকার কথা! অথচ সকলেই বাড়িতে? আশংকা সত্যিই না কি তার!
তাই ঘরে আবিরকে একা পেয়েই সে কার সন্তানের কথা জানতে চেয়েছে । কোথায় আছে সে? অথচ আবির চোখ নিচু করে দাড়িয়ে। রুমি আবার প্রশ্ন করে,
- কি হলো, চুপ করে আছো যে! আমার ছেলে কোথায়? কি লুকাচ্ছো তুমি? সে যদি রংপুরেই থাকবে তাহলে তার সাথে কে? সকলেই তো বাড়িতে! তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো তাই না? সত্য করে বলো কি হয়েছে?
রুমির কন্ঠে সন্তানের কথা জানার ব্যকুলতা ঝড়ে পড়ে। আবির আরো কিছু সময় নেয়। তার পর খু্ব কোমল স্বরে বলে,
- ওকে বাঁচানো যায় নি রুমি। আমাদের ছেলেটা বেঁচে নেই।
রুমি কথাটা শোনার পর চিৎকার করে কেঁদে উঠবে, ভেবেছিল আবির। কিন্তু রুমি তা করে না। চুপ করে বসেই থাকে। সে এমনটাই আশংকা করেছিল। কিন্তু বিশ্বাস ছিল না সে আশংকাতে । এখন সেটাই যখন সত্যি, কেঁদে আর কি হবে? সামলে নিয়েছে সে। কিন্তু ভেতরে যন্ত্রসা হচ্ছে, সন্তান হারানোর যন্ত্রনা। সন্তান জন্ম দিয়েও মা না হতে পারার যন্ত্রনা। সন্তানকে এক নজর না দেখার যন্ত্রনা। কিন্তু সে যন্ত্রনা বাহিরে প্রকাশ করে না। চুপ করেই থাকে। ঘরের ভিতর নিস্তব্ধতা, শুধু বাহির হতে কিছু শব্দ সে নিস্তব্ধতাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
- তুমি আমাকে এভাবে মিথ্যা বলতে পারলে? আমি মা, আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করো নি! আমাকে এক নজর দেখতে দাও নি! বলতে পারো এ আটটা মাস কতটা কষ্ট করেছি, সন্তানের মুখ দেখবো বলে। অথচ তোমরা আমাকে একবার না জানিয়ে, দেখতে না দিয়ে.......
আর বলতে পারে না রুমি। কাঁদতে শুরু করে। আবির দাড়িয়েই থাকে। কি বলবে ভেবে পায় না। অপেক্ষা করে রুমির নিশ্চুপ হওয়া পর্যন্ত। রুমির কান্না থামতে প্রশ্ন করে,
- তুমি পেটে আঘাত পেয়েছো কি করে?
রুমি প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকায়। সে পেটে আঘাত পেয়েছিল আবির জানলো কি করে?
- তুমি জানলে কি করে পেটে আঘাত পেয়েছি?
- ডাক্তার বলেছে । আর এজন্যই সময়ের আগেই প্রসব করেছো তুমি। মারা গেছে ছেলেটা । এখন বলো আঘাত পেলে কি করে?
- গোয়ালে। গরুকে খড় পানি দিতে গিয়ে একটা গরু সাথে ধাক্কা লাগে । তাতেই আঘাত পাই। এর পর আস্তে আস্তে ব্যাথা শুরু হয়। তুমি যখন এলে তখনো ব্যাথা করছিলো।
রুমি বলে আবির কে ।
- আমিও এমন টাই ভেবেছিলাম। একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
- কি সিদ্ধান্ত?, আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়। সন্তান শোকটা নিয়েও।
- তুমি আমার সাথে ঢাকায় থাকবে এখন হতে। আমার সাথে ঢাকা যাচ্ছো।
- কিন্তু বাড়ি?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে সে আবির কে। বুঝতে পারে না হঠাৎ আবিরের এহেন সিদ্ধান্তের কারন। তাছাড়া বাড়ি ছেড়ে যে ঢাকাতেই বা কেন যাবে?
- বাড়িতে মা বাবাই থাকবে। যে বাড়িতে তোমার মূল্য নেই সে বাড়িতে না থাকলে!
- কিন্তু আবির! ওনারা তোমার বাবা মা?
- এবং ওনাদের কারনেই আমি সন্তানের বাবা হয়েও হতে পারি নি।
- ভুল বলছো কেন? সে দোষ তুমি আমাকে দিতে পারো । ওনাদের নয়। ইতোমধ্যে আমাদের একটা ভূল আমাদের সংসার জীবনে এ অবস্থায় ফেলেছে। আমাদের বিয়েটা যদি ভুলের মধ্যে না হতো তা হলে বাবা মা ওমন করতো না। আমি তো মেনে নিয়েই আছি । কখনো অভিযোগ করি নি তোমাকে। তাহলে আমাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলছো কেন? আমি একবার যা ভুল করেছি, দ্বিতীয় বার ভুল করতে চাই না। আর শোনো আমাদের সন্তান এর দায়ভার অন্য কাউকে দিয়ে ভূলও করো না।
আবিরকে বোঝানোর জন্য বলে। রুমির কথা শেষ না হতেই আবিরের মা আর বোন ঘরে আসে।
- বৌমা, আমরা কি করলাম যে, আবিরকে বলেছো, তোমার সন্তান নষ্ট হবার জন্য আমরা দায়ী! আমি দাদী হয়ে নাতীর মৃর্ত্যু চাইবো? আল্লাহ আছেন মাথার উপর। তিনি সব জানেন বৌমা....
আবিরের মা ঘরে এসেই রুমিকে বললো। আবির তখনো দাড়িয়ে।
- কি বলছেন মা? আমি কখন বললাম আপনি দায়ী?
রুমি অবাক হয়ে জানতে চায়। কিছুই বুঝতে পারে নি সে।
- বলো নি? তুমি না বললে আবির বলবে কেন আমরা তোমার সন্তানের মৃর্ত্যুর জন্য দায়ী ।
- মা সে কিছুই বলে নি। যা বলার আমি নিজের হতেই বলেছি । তুমি সব কথাতেই ওকে দোষ দাও কেন? বাড়ির বউ নয়, ওর সাথে তোমরা সবাই চাকরানীর মতো ব্যবহার দেখিয়েছো ? এত করে বলে গেলাম, তার পরেও তুমি তোমার মেয়ের বাড়ি গেলে! কি হলো? আমার ছেলেটা মরলো । বাবা হয়েও হলাম না। এটা তোমাদের ভুলের জন্য হয়েছে । হ্যা তোমরা দায়ী। তেমাদের ভুল।
আবির চিৎকার করে ওঠে ।
- মা বলেছিলাম না, তোমার ছেলে আর তোমার নেই!
পাশ হতে বলে আবিরের বোন।
- তোকে কে নাক গলাতে বলেছে এখানে? এখন তুই এ বাড়ির কে? তোর ফাসুর ফুসুরের জন্যই এমন হয়েছে! তোকে কে আসতে বলেছে এ বাড়িতে?
এবারে আবির বড় বোনের উপর রেগে বলে। রাগ হবারই কথা, আগুনে ঘি ঢালার কাজটাই করেছে সে এখানে । সমাজে কোন বোনেরই উচিৎ নয় ভাইয়ের সংসারের মাঝে নিজের প্রভাব খাটাতে যাওয়া। এর পরিনতি কখনই ভালো হয় না ।
- মা দেখেছো? কি বলে তোমার ছেলে? আমি আর কোন দিন আসবো না এ বাড়িতে।
- আবির, তোর বাড়ি না এটা! তোর যেমন বাপের ভিটা, তেমনি ওরও বাপের ভিটা। ওকে সহ্য না হলে বৌকে নিয়ে অন্য কোথাও যেতে পারিস।
আবিরের মা বলে।
- হ্যা সেটাই যাবো। থাকো তোমরা তোমাদের বাড়িতে।
এর পর আবির কে আর বোঝানো যায় না। রুমিও বোঝাতে চেষ্টা করে। কিন্তু আবির যখন বলে, সংসার করতে চাইলে যা বলি তাই করো, তখন আর ওর কিছুই বলার থাকে না।
আবিরের মা প্রথমে রেগে বললেও, দেখলো ছেলে সত্যিই সত্যিই বাড়ি ছেড়ে বউকে নিয়ে যাচ্ছে , বাধা দিতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু আবির শুনলো না। রুমি তখন বললো,
- দেখো আবির, অনেক ভুল করেছি, প্লিজ ভুলটা করো না।
- যে মা বাবা ছেলের একটা ভুল ক্ষমা করতে পারে না, তাদের কাছে হাজারটা ভুল করাটা অপরাধ মনে করি না।
রুমি কিছু বলে না। আবিরের সাথে বের হয়ে আসে শ্বশুড় বাড়ি হতে। ভাবে, জীবনের চলার পথে এ ভূল গুলোই জীবনের বাধা হয়ে যায়। তবুও আমরা ভুল করি। জেনে ভুল করি, আবার না জেনে ভুল করি। এই যেমন তাদের এ ভুল হলো জানার পরেও ভুল করা । আর এর ফলেই পরিবার হতে আলাদা হচ্ছে তারা। এমন ভুলের কারনেই প্রায় পরিবারই আলাদা হয়ে যায়। বাবা মা হতে সন্তানেরা আলাদা হয়। কখনো মা বাবার ভুলে, কখনো সন্তানের ভুলে। এখানে রুমি দেখে - মা বাবা, সন্তান প্রত্যেকেরই ভুলে তাদের এ আলাদা হওয়া। বাড়ি হতে নির্বাসন নেওয়া। আবির যদি ভুল না করতো, তাহলে তাদের আলাদা হতে হতো না। আবার ওর বাবা মা যদি আবিরের প্রথম ভুলটাকে শুধরে নিয়ে মেনে নিতেন, ভুল না করতেন তাহলে এ ভুলটা আবির কখনই করতো না। ভুল করা কখনোই উচিৎ নয়। আর ভুল যদি করে কেউ কখনো, তাহলে তা শুধরে দিয়ে মেনে নেয়াই উচিৎ।
ট্রেনে পাশাপাশি বসে দুজন। ট্রেন ছুটছে কমলাপুর রেল স্টেশনের দিকে ।
লেখা : নুর আলম সিদ্দিক
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ