--------আমার বলদ জামাই ---------
---পর্ব এক ----
,,
,,
,,
আমি সেই তিন ঘন্টা ধরে সেজেগুজে বাসর ঘরে বসে আছি। আমার জামাইয়ের কোনও খোঁজ নেই । এখন রাত দুই টা বাজে । আমার দুই ননদ বাসর ঘরে বসিয়ে দিয়ে গেছে । আর যাওয়ার সময় বলে গেছে ভাইয়া কে পাঠিয়ে দিচ্ছি । কিন্তু তার কোনও খবর নাই। মনে হচ্ছে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে আছে । এটাই স্বাভাবিক । এই কয়দিন বিয়ের ঝামেলায় সবাই কাহিল। কিন্তু আমার জামাই গেল কই। নতুন বউ আমি । সব কিছু ভাল করে চিনিও না। কি যে করি ।
,,
ওহ আপনাদের তো আমার পরিচয় টাই দিলাম না । আমার নাম জুথি । এবার এইস এস সি পরীক্ষা দিলাম । আমার তিন বোন । আমি সবার ছোট । বড় আর মেজ আপু নিজেদের পছন্দ মতোই বিয়ে করেছে । এই জন্যই আমি আমার বাবার পছন্দ করা ছেলে কে বিয়ে করেছি। জীবনে অনেক ছেলে কেই ভাল লেগেছে । কিন্তু ভাল বাসিনি। আমি সব সময় চেয়েছি বাবার পছন্দ করা ছেলে কেই বিয়ে করবো । আমার জামাই একটা কলেজের প্রফেসার । খুবই সাদাসিধে মানুষ । আমি যেমন তার ঠিক উল্টো টা। বান্ধবী দের কাছে শুনতাম । ছেলে রা বেশি লেখাপড়া করলে নাকি দিন দিন বলদ হয়ে যায় । আমার জামাই টা ও সেইরকম ।
আর এই বলদ কে মানুষ করার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন আমার শশুড় মশাই ।
,,
শুরু থেকেই বলি ,,,,
,,
একদিন বিকালে বসে বসে গল্পের বই পড়ছি। এমন সময় বাবা হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো আমার মাকে ,,,
,
:--- কই গো জুথির মা !!!
,
:-- কি হলো আবার ??
,
:-- আজকে রাস্তায় একটা ছেলে কে দেখলাম । অনেক ভাল । গরিব মানুষের অনেক উপকার করছে । আমার ভিষন পছন্দ হয়েছে ছেলে টাকে । আমার এক বন্ধুর পরিচিত । বন্ধুর মুখে সব খোঁজখবর নিয়ে জানলাম । খুবই ভাল পরিবার । দুই বোন এক ভাই । ছেলে টা প্রফেসার । দেখতে শুনতে খুবই ভাল । জুথির সাথে ও ভাল মানাবে । তাই আমার ওই বন্ধু কে দিয়ে সব খোঁজ খবর নিতে পাঠালাম ।
,
:-- কিন্তু জুথি কি এখন বিয়েতে রাজি হবে ???
,
:-- হবে মানে ,,, একশো বার হবে । আমি আমার এই মেয়ে টার উপর ভরসা রাখি ।
,,
,,
সে দিন বাবার এই কথা শুনে পুরাপুরি ভদ্র মেয়ে সেজে গেলাম । কি আর করার । সব ভাল লাগার মানুষ গুলো কে ভুলে গেলাম । এক সপ্তাহ পরেই আমাকে দেখতে এলো । আমাকে তাদের পছন্দ হলো । ছেলে আর আমাকে একটা রুমে পাঠানো হলো । আমার দুই দোলাভাই দের আগ্রহ তে । আমার থেকে আমার দুই দোলাভাই বেশি খুশি । কেন বুঝলাম না । আমি ছেলের সামনে বসে আছি । কিন্তু বুঝতে পারছি না । আমি ছেলে দেখতে এসেছি । নাকি ছেলে আমাকে দেখতে এসেছে।
,,
সে চুপ চাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে । আমার মনে হচ্ছে কি যেন দেখছে মনোযোগ সহকারে । আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম । সে ও একটু নড়েচড়ে উঠলো । এবার দেখলাম ঘরের সব কিছু খুঁটে খুঁটে দেখছে । তাকে যেন বলা হয়েছে ঘরের সব কিছু দেখতে । আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে । আমার আবার এই একটা দোষ । অল্প তে রেগে যাই । এবার আমি তাকে বললাম ,,,,
,,
,
:-- আপনার ঘরের সব কিছু দেখা শেষ হয়েছে ???
,
:-- ইয়ে না মানে !!!
,
:-- কি মানে মানে করছেন ???
,
:-- আমাকে কিছু জিগ্যেস করুন ??
,
:-- ওহ তাইতো !! আমার নাম মাহদি । আপনার নাম জানতে পারি ???
,
:-- নাহ পারেন না ।
,
:-- ওহ ঠিক আছে । সমস্যা নেই । পরে জেনে নেব ।
,,
এই টুকু কথা বলে আবার চুপ করে আছে । এবার দেখলাম পকেট থেকে মোবাইল বের করে অযথা টিপাটিপি করছে । আমার মেজাজ এবার আরও গরম হয়ে গেল । আমি বললাম, ,
,,
:-- আর কিছু বলবেন ?? ( আমি )
এবার ও নিচের দিকে তাকিয়ে বললো ,,
,
:-- আপনি কাউকে ভালবাসেন ??
,,
আমি অবাক হলাম কথা টি শুনে । আমার বলদ জামাই বলে কি । আমি কিছু বলার আগে বললো ,,,
,
:-- সমস্যা নেই । বিয়ের আগে সবাই কম বেশি প্রেম করে । বিয়ের পরে কি করে সেই টাই দেখার বিষয় ।
,,
সেই দিন আমি আমার জামাইয়ের প্রেম এ পড়ে গিয়ে ছিলাম । কতো ভাল একটা মানুষ ।
,,
,,
যাওয়ার আগে আমার শশুড় মাথায় হাত দিয়ে বলেছিল । জুথি মা !!! আমার ছেলে টা ছোট বেলা থেকে লেখা পড়া ছাড়া কিছু বোঝেনি । ওর কোনও বন্ধু ছিল না । সারা জীবন শুধু বই পড়ে কাটিয়ে ছে। এই জন্যে একটু অন্য রকম । তুমি ওকে ঠিক করো। আজ থেকে ওর দায়িত্ব তোমাকে দিলাম । আমি চুপ করে ছিলাম । এটাই ছিল আমার নিরব সম্মতি।
,,
,,
,,
সবাই চলে যাওয়ার পর দুই দোলাভাই ধরলো ,,,
,
:-- কি গো শালিকা কেমন লাগলো ???
,
:-- ঘোড়ার ডিমের মতো ।।
,
:-- কিন্তু তোমাদের এতো আগ্রহ কেন শুনি ???
,
:-- কি যে বলো ,,, তুমি আমাদের একমাত্র শালি । তোমার সব ভাল মন্দ আমাদের ই দেখতে হবে না ।
,
:-- যার যার বউয়ের খোঁজ খবর নেও বুঝলে ।।
,
:-- এখনই এই । পরে আমাদের ভুলে যাবে বুঝতে পারছি ।
,,
এই বলে দুজনেই খুব হাহাসাহাসি করতে লাগলো । আমি সরে গেলাম। না হলে আরো কতো কি শুনতে হবে কি জানি।
,,
,,
এক মাসের ভিতর আমার বিয়ে হলো । আর আমি সেই তিন ঘনটা ধরে বসে আছি । জামাইয়ের কোন খোজ নেই।
,,
,,
হঠাৎ কারো শব্দে চমকে উঠলাম । আমার জামাই ঘরে ঢুকছে । আমি ঘোমটা টা ভাল করে টেনে নিলাম । শুনেছি বাসর ঘরে রাগ করতে নেই । তাই আমি খুশি মনেই আছি । আমি ঘোমটার ভিতরে বুঝতে পারছি দুরে দাড়িয়ে আছে । আমার মনে হয় ভাবছে কি করবে । আমি নিজেই খাট থেকে নেমে সালাম করলাম। ও লজ্জা পেয়ে খাটে উঠে বসলো । আমি কি লজ্জা পাব । আমার জামাই নিজেই লজ্জায় লাল। এবার আমাকে বললো ,,,,
,
:--আসলে আমি দুঃখিত ।
,
:-- কেন ???
,
:--এই যে আপনাকে বসিয়ে রেখে ছি বলে ।
আমি একটা বই পড়েছিলাম । কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারি নি।
,
:-- ওহ আচ্ছা ।
,
:-- আপনি এখনও জেগে আছেন কেন ??
ঘুমিয়ে পড়ুন । অনেক রাত হলো ।
,,
,,
ইসসসস কতো সপ্ন ছিল বাসর রাত নিয়ে । সব মাটি হলো । কি বলবো এই হাদারাম টাকে !!!!!!
,,(চলবে
--------আমার বলদ জামাই -------
----পর্ব দুই ----
,,
,,
আমার ওর কথা শুনে ভিষন রাগ হলো । আমি রাগের সাথে ওর দিকে তাকালাম । ও কিছু টা মিনমিন করে বললো ,,,,,
,
:-- আসলে আপনার অনেক কষ্ট হয়েছে তো এই জন্য ঘুমাতে বললাম । যদি বলেন তাহলে আমি আপনার সাথে সারারাত বসে থাকবো ।
,
:-- তোমার সারা রাত বসে থাকতে হবে না । আমি যা যা বলি মন দিও শোন। ঠিক আছে আমার বাবুটা।
,
ও মনে হলো একটু লজ্জা পেল । তারপর ও মাথা কাত করে সম্মতি জানালো । আমি বললাম ,,,,
,
:--- প্রথম কথা হলো ,, আমাকে তুমি করে বলতে হবে । প্রতি সপ্তাহে সপিং করতে নিতে হবে । এবং ছুটির দিনে ঘুরতে নিতে হবে । আমার জন্য প্রতি দিন গোলাপ ফুল আনতে হবে । আমি রাগ করলে রাগ ভাঙা তে হবে । কোনও কিছু তে বেশি মাতব্বরি করা যাবে না । কোনও বিষয় নিয়ে অযথা চেচামিচি করা যাবে না । ঠিক আছে বাবু ।
,
:-- কিন্তু আমি যে কখনও এই সব করি নি। আমার অভিজ্ঞতা নেই ।
,
:-- তাহলে আগে একটা বিয়ে করে অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাকে বিয়ে করতে ??
,
:-- ধুর ,,, কি যে বলেন । দুঃখিত কি যে বলো ।
,,
এই তো আমার লক্ষী জামাই । আর একটা কথা ।
,
:--যতো সময় ঘরে থাকবে কোনও বই যেন হাতে না দেখি । তাহলে সব বই ছিড়ে ফেলবো ।
,,
এই সব কথা বলার সময় অনেক হাসি পাচ্ছিল । ওর মুখ টা দেখে । তারপর ও বললাম । কারণ আমি চাই আমার জামাই কে বদলে দিতে ।
এবার আমি ওকে বললাম ,,,
,
:-- ঠিক আছে এখন ঘুমিয়ে পড়ি ।
ও বললো ,,,
,
:-- কিন্তু আমার পাশে কেউ শুলে যে আমার ঘুম হয় না ।
,
:--এখন থেকে ঘুমাতে হবে । কারণ তোমার বউ তো আর অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাবে না । এই টাই তাঁর রুম । আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে ।
,
,
ও আমার থেকে কিছু টা দুরত্বে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো । আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম । আমার যখন ঘুম ভাঙলো দেখি অনেক বেলা হয়ে গেছে । ও আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে । কখন আমার কাছে এসেছে টের পাইনি । আমি রাতের কথা গুলো ভাবতে লাগলাম । হঠাৎ দেখলাম ওর ঘুম ভেঙেছে। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম । দেখি কি করে । আমি বুঝতে পারলাম ও ভিষন লজ্জা পাচ্ছে । আমি ও কিছু বলছি না । অনেক সময় এই ভাবেই শুয়ে রইলাম । ও নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে ওয়াশ রুমে গেল । আমি শুয়ে রইলাম । ও ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে কি বলবে বুঝতে পারছে না । আপনি বলবে নাকি তুমি বলবে । অবশেষে মুখ খুললো আমার জামাই । আমাকে বললো ,,,,
,
:--- অনেক বেলা হয়েছে । মা ডাকছে নাসতা করতে ।
,,
আমি এবার ওর দিকে তাকালাম । বললাম ,,,
,
:--- আমার নাম নেই কোনও ???
,
:--- ইয়ে না মানে !!!
,
:-- ঠিক আছে তুমি যাও ,, আমি আসছি।
,,
আমি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছে এমন সময় আমার দুই ননদ এলো আমাকে অনেক আগ্রহের সাথে বললো ,,,,
,
:-- ভাবি !! রাতে ঘুম কেমন হলো ???
,
:-- সে আর বলতে । তোমার ভাইয়া যা রোমান্টিক । কি ভাবে রাত কেটে গেল বুঝতে পারলাম ই না ।
,
ওরা মনে হয় এই উওর আশা করেনি । ভেবেছিল আমি হয় তো খুব দুঃখ প্রকাশ করবো । কারণ ওরা যানে ওদের ভাই কতোটা হাদারাম । কিন্তু আমি কিছুই বলবো না । আসলে একটা জিনিস বুঝে আসে না ,,, এই ননদ দের সব বিষয়ে এতো ইন্টারেস্টিং কেন থাকে ভাবি দের উপর । ওদের সব বিষয়ে নাক গলানো চাই চাই ।
,,
আমি ওদের সাথে নাসতার টেবিলে গেলাম আমাকে দেখে শশুড় শাশুড়ি খুব খুশি হলো । শশুড় বললো ,,,,
,
:-- এ সো মা ,,, আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি ।
,,
আমি তাদের দুজন কে সালাম করলাম । আমার নতুন জীবনের প্রথম সকাল । সবাই নাসতা করছি । এমন সময় আমার জামাই বললো ,,,,
,
:-- মা !!! কয়েক দিন কলেজে যাওয়া হয় না । তাই ভাবছি আজকে যাব ।
,
:-- সে কি কথা ,, আজকে বিয়ের পরের দিন । কেউ বাইরে বের হয় । আর আগামী কাল বউয়ের বউ ভাত । সবাই আসবে তোর শশুড় বাড়ি থেকে তোদের নিতে । সে খানে কাল যাবি । এক বারে কিছুদিন পর থেকে কলেজে যাস। (শাশুড়ি )
,
:--তোর মা ঠিকই বলেছে । এখন এতো তাড়া কিসের । কিছু দিন রেস্ট নে । তারপর যাবি । (শশুড় )
,,
দুই ননদ মুখ টিপে হাসছে । আমি টেবিলের নিচ থেকে ওর পায়ে আমার পা দিয়ে জোড়ে চিমটি কাটলাম। ও আহ করে উঠলো । সবাই বলছে কি হলো কি হলো । ও বললো ,,
,
:-- ইয়ে না মানে পোকা ,,, পোকা কামরে ছে।
,
আমি মনে মনে বললাম রুমে চলো তোমাকে মজা দেখাবো । বিয়ের পরের দিন কলেজ ।
,,
,,
ও রুমে আসতেই ওর কলার চেপে ধরলাম। আর রাগের সাথে বললাম ,,
,
:-- বিয়ের পরের দিন কলেজে যেতে কেন চাইছিলে ??
,
:-- আসলে বাসায় বসে কি করবো তাই ভাবলাম লাইব্রেরি তে গিয়ে বই পড়লে ভাল লাগবে ।
,,
আমার ওর কথা শুনে ভিষন রাগ হয় । বাড়িতে নতুন বউ রেখে ও যাবে লাইব্রেরি তে । কি আশ্চর্য । আমি ওকে রাগানোর জন্য বললাম ,,,
,
:--নাকি কলেজের সুন্দরী মেয়ে দের দেখতে যাবে ।
,
:-- ছি ছি !! কি বলো এই সব । আমি কখনও কোনও মেয়ে দের দিকে চোখ তুলে তাকাইনা ।
,
:-- এই কথা টা যেন সব সময় মনে থাকে বুঝলে আমার ময়না পাখি ।
,
ও আমার কথা টা শুনে হেসে দিল । কি সুন্দর হাসি । যে হাসি দেখলে বার বার প্রেম এ পড়তে ইচ্ছে করে ।
,,
,,
পরদিন ,,,
,,
আমার বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষ হলো । আমার শশুড় অনেক বড়ো করে বউ ভাতের আয়োজন করেছেন । আমার বাপের বাড়ি থেকে সবাই এসেছে । এখন আমি বাবার বাড়ি যাবো । সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি তে উঠলাম । কিন্তু আমার জামাই কে দেখছি না । সবাই বলছে ও কই । আমি বললাম এক সাথেই তো বের হলাম । আমার বড়ো দুলাভাই বললো ,,,
,
:-- আমি দেখছি কোথায় ।।
,
একটা পর দেখলাম আমার জামাই আসছে । হাতে কতো গুলি বই নিয়ে । আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল । আপু রা বলছে ,,,
,
:-- কি রে জুথি । তোর জামাই এতো গুলি বই দিয়ে কি করবে ????
,
:--গাড়ি তে সবাই কে পড়তে দেবে । (আমি )
,,
ও আমার পাশে বসে দাঁত কেলিয়ে বললো ,,,
,
:-- জুথি !!! বই গুলো দারুণ পড়তে । তাই নিয়ে এলাম। তোমাদের বাসায় বসে পড়তে পারবো । তুমি রাগ করোনা । একা একা যদি সময় না কাটে তাই নিয়ে এলাম।
,,
সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ।
,,
,,
,,
(চলবে )
-------- আমার বলদ জামাই -------
---- তৃতীয় পর্ব -----
,,
আমার জামাই গাড়ি তে উঠেই বই নিয়ে পড়তে বসলো । একটু পর পর চোখের চশমা ঠিক করছে আর বই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে । কেমন যেন কোনও প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে । সেই খানে তাকে বই পড়ে শুনাতে হবে । আমার ইচ্ছে করছিল বই আর চশমা দুই টাই গাড়ি থেকে ফেলে দিতে । কিন্তু আমার বাবার সাধের জামাই । তাই নিজেকে শান্ত রাখলাম । এর মজা পরে বোঝাবো ।
,,
,,
বাসায় যেতেই মা নাসতা তৈরি করতে লেগে গেল । আমি আপুদের সাথে গল্প করছি। আর আমার দুই দুলাভাই আমার জামাই কে নিয়ে গল্পে মেতে উঠলো । আমি বুঝতে পারছিলাম দুলাভাই রা বেশি সুবিধা করতে পারবে না আমার জামাই এর সাথে । কারণ ও কথা বলে কম। দশটা বললে একটা বলে ।
আমার মা বললো ,,,,,
,
:-- জুথি ,, এই নে । এই গুলি জামাইদের খেতে দে ।
,
আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম । মা সরে যেতেই আমার হাদারাম বর টার শরবতের ভিতরে ভাল করে লবন মিশালাম। এবার দেখি কি করো ।
,
দুই দুলাভাই কে শরবত দিলাম । আমার জামাই কে ও দিলাম । দুলাভাই য়েরা চলে গেল । এবার আমার জামাই শরবত মুখে দিতে পারে কি থু দিয়ে ফেল দিল। আর আমাকে বললো ,,,,,
,
:--জুথি !!! শরবতের ভিতরে মনে হয় চিনির বদলে লবন দিয়ে ছে। তাই এমন লাগছে ।
,
:-- আমি ইচ্ছে করে দিয়ে ছি বুঝলে ।
,,
ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । ওর মনে হচ্ছে আমি হয়তো পাগল টাগল হয়ে গেছি। আমি বললাম ,,,,
,
:-- আচ্ছা তুমি এমন কেন ???
,
:-- কেন আমি আবার কি করলাম ?? তুমি যা বলছো আমি তো তাই শুনছি ।
,
:-- ঘোড়ার ডিম শুনছো ।। কোথায় দেখছো নতুন জামাই শশুড় বাড়িতে এক গাদা বই নিয়ে আসে পড়তে ???
,
:-- ইয়ে না মানে !!! আমি ভাবলাম একা একা কি করবো । তাই নিয়ে এলাম। ঠিক আছে তুমি বললে আর পড়বো না ।
,,
,,
এই বলে ও মন খারাপ করে বসে থাকতো । আমার নিজেরই খারাপ লাগতো ওর চেহারা দেখলে। পরে আবার বলতাম ,,,
,
:-- আচ্ছা ঠিক আছে । মাঝে মাঝে পড়তে পারো ।
ও আমার কথা শুনে খুব খুশি হয়ে সাথে সাথে আবার বই নিয়ে পড়তে বসতো । আমি মাঝে মাঝে অবাক হতাম একটা মানুষ কি করে এতো বই পাগল হয় ।
,,
রাতে আমি ঘুমিয়ে আছি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল । পাশে দেখলাম আমার বর নেই । আমি মোবাইলের আলো জালালাম। দেখলাম কোথাও নেই । কই গেল তাহলে !!!
,
আমি আমার বারান্দায় গেলাম দেখলাম ও দাড়িয়ে আছে । আমি ওকে বললাম ,,,
,
:-- কি হলো এতো রাতে না ঘুমিয়ে কি করছো ???
,
ও হঠাৎ চমকে উঠে বললো ,,,
,
:--- ওহ তুমি ?? আসলে ঘুম আসছে না তাই এখানে এসেছি।
,
আমি ওর আরো কাছে গিয়ে ওর বুকে মাথা দিয়ে বললাম ,,,
,
:-- কেন ঘুম আসছে না আমার বাবুটার ???
ও বললো ,,
,
:-- আসলে বাসা ছেড়ে কোথাও কখনও ঘুমাইনিতো তাই।
,,
আমার ওর এই কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল । এখন যদি রাত না হতো ওকে জোর করে ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম । যতো সব বাচ্চা দের মতো কথা । ইচ্ছে করছে এক ঘুসি দিয়ে নাক ফাটাতে । এখন সে নতুন বউ কে নিয়ে রোমাঞ্চ করবে তা নয় । এখানে এসে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে ।
,,
বাবা যে কেন আমার সাথে এই করলো । আমি এখন এই হাদারাম টাকে কি করে মানুষ করবো ।
যাইহোক ,,
ওকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বললাম ,,,
,
:--চলো ঘুমাবে। কাল সকালে চলে যাবো ঠিক আছে !!!
,
ও কিছু না বলে শুয়ে পড়লো ।
,,,
এই ভাবে ভালই কাটছিল আমার খুনসুটি সংসার । এর মধ্যে পুরোপুরি নিজেকে সংসারের কাজে জড়িয়ে নিলাম ।
,,
একদিন ,,
,
আমার জামাই কলেজে গেছে । ওর একটা দোষ কখনও ফোন মনে করে নিবে না । আমি বসে বসে গল্পের বই পড়ছি। এমন সময় ওর ফোনে একটা মেসেজ আসলো । আমি এতো টা গুরুত্ব দিলাম না ।একটু পর আবার মেসেজ আসলো পরাপর দুইটা। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম হয় তো দরকার এ কেউ বার বার মেসেজ দিচ্ছে । ফোন টা আমি কাছে নিলাম । আর মেসেজ গুলি বের করলাম । মেসেজ গুলি দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল । মেসেজ গুলি এই রকম ছিল ।
,,,
মিস করছি জান , কতো দিন হলো আমার সাথে দেখা করো না , নাকি নতুন বউ পেয়ে আমাকে ভুলে গেছ। ,,,,
,,
আমার গুলি পড়া শেষ হতে না হতেই ওই নম্বর থেকে কল আসলো । আমি রিসিভ করতেই বললো ,,
,
:-- সেই কখন থেকে মেসেজ করছি কোনও রিপলাই দিচ্ছ না । নাকি বউ কাছে আছে ???
,
আমার মেজাজ পুরাপুরি গরম হয়ে গেল । আমি রাগের সাথে বললাম ,,,
,
:-- কে আপনি কাকে ফোন করছেন ?? আর কি সব আজেবাজে কথা বলছেন ???
,
:-- এই টা মাহদির ফোন না ?? ওকে একটু দিন না দয়া করে ।
,
:-- আপনি কে সেইটা আগে বলুন । আমি তার স্ত্রী । আর কি সব কথা বলছেন ???
,
:-- ঠিক ই বলছি । মাহদির সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক। সে শুধু আপনাকে বিয়ে করেছে বাবা মায়ের কথা রাখতে ।
,
:-- আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না
,
:-- আপনি না বিশ্বাস করলে আমার কিছুই করার নেই ।
,
:-- আপনি কে সেইটা আগে বলুন ???
,
:-- আমি কে সেই টা না হয় মাহদির কাছে জেনে নিবেন ।
,,
এই বলে মেয়ে টা ফোন কেটে দিল । ওর কথা শুনে আমার সমস্ত শরীর বেয়ে তরতর করে ঘাম পড়তে লাগলো ।
(চলবে )
--------- আমার বলদ জামাই ---------
-----শেষ পর্ব ----
,,
,,
আমার চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল । এমন কথার জন্য আমি কোনও দিন প্রস্তুত ছিলাম না। আমার কিছু তেই বিশ্বাস হচ্ছে না মেয়ে টার কথা । আমি এই সব ভাবছি ঠিক এমন সময় আমার জামাই এসে বললো ,,,,,
,
:--জুথি !!! আমার ফোন টা ভুলে বাসায় রেখে গেছি। কতো দরকারি একটা কল আসার কথা ছিল । কেউ কি ফোন করেছিল ???
,
:-- হুম করেছিল ,,, একটা মেয়ে ।
,
:-- কি বলছো পাগলের মতো । একটা মেয়ে ফোন করেছিল ? কি বললো মেয়ে টা ?
,
:-- বললো তোমাকে অনেক মিস করছে । তুমি নাকি তার জান ,, তোমাকে দেখা করতে বলেছে।
,
:-- তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে । আমি আবার কার জান হবো।
,,
এই বলে ও আমার হাত ধরলো । আমি ওর হাত ঝাড়া দিয়ে বললাম ,,,
,
:-- আমাকে মোটেই সপর্শ করবা না । তোমাদের দুই বছরের সম্পর্ক এই টা ও বলেছে।
,
:-- আরে কেউ দুষ্টামি করে হয়তো বলেছে। বাদ দাও তো এই সব । চলো তোমাকে নিয়ে আজকে ঘুরতে যাবো ।
,
:-- এই সব নিয়ে কেউ দুষ্টামি করে না। আমি আজই চলে যাবো । তুমি থাকো তোমার ওই মেয়ে কে নিয়ে ।
,,
এই বলে আমি ব্যাগ গোছাতে লাগলাম । ও আমাকে বললো ,,,
,
:-- তুমি কিন্তু সামান্য জিনিস নিয়ে বেশি করছো ।
,
:-- এই টা তো তোমার কাছে সামান্য জিনিস হবেই। তুমি তোমার বাবা মায়ের কথা রাখতে আমাকে বিয়ে করেছো।
,
:-- তুমি বিশ্বাস করো তুমি ছাড়া আর কোনও মেয়ে আসেনি আমার জীবনে।
,,
,,
,,
সে দিন আমার রাগ চরম পৌছে গেছিলো । আমি কারো কথা শুনিনি । আমাকে সবাই বলেছে আমার কোথাও ভুল হচ্ছে । কিন্তু আমি কারো কথা না শুনে বাবার বাড়িতে চলে আসি। বাবা মা আমাকে দেখে অবাক । আমাকে বললো ,,,
,
:-- কি রে মা !! একা এলি যে ,, জামাই কোথায় ??(বাবা )
,
:-- ও আসেনি ।
,
:-- কেন ??
,
:--ওর ছুটি নেই ।
,,
আমাকে দেখে বাবা মায়ের ও কেমন যেন লাগছে ।বাবা আমার কাছে এসে বললো ,,,
,
:-- কি হয়েছে মা তোর ?? জামাইয়ের সাথে কোনও ঝামেলা হয় নি তো ??
,
:-- বাবা আমার এখন ভাল লাগছে না। পরে কথা বলবো ।
,
আমি এই বলে আমার রুমে চলে গেলাম । এর মধ্যে মাহদির ফোন আসলো । আমি রাগে তে ফোন বন্ধ করে রাখলাম । এর পর ও আমার বাবা মা কে ফোন দিয়ে সব বলে । বাবা ওকে বলেছিল ,,,
,
:--- তুমি কোনও চিন্তা করো না। ওর একটু রাগ বেশি । কয়েক দিন পর আমি নিজে ওকে বুঝিয়ে তোমার কাছে দিয়ে আসবো।
,
আমার শশুড় শাশুড়ি কে ও বাবা তাই বলেছিল ।
এই ভাবে কয়েক দিন কেটে গেল । আমার কেমন জানো ওর জন্য কষ্ট হতে লাগলো । ওর শূন্য তা আমি প্রতি টা মূহুর্ত অনুভব করতে লাগলাম । ওকে যে আমি অনেক বেশি ভাল বাসি। তাইতো সেই দিনের কথা গুলি আমি কিছু তেই মানতে পারছিলাম না । কিন্তু ও তো একবার হলেও আমাকে নিতে আসতে পারতো। আমি বলেছিলেন আমার কাছে কোনও দিন তুমি আসবে না। ও ঠিক তাই করলো । আমার বলদ জামাই টা আমার রাগ টাই শুধু দেখলো । আর ওকে কতোটা ভালবাসি এইটা বুঝলো না।
,,
,,
একদিন আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লাম । আমাকে জলদি করে ডাক্তার খানা নেওয়া হলো । ডাক্তার বললো আমি মা হতে চলেছি। সে দিন এই খবর শুনে সবাই অনেক খুশি । বাবা আমার শশুড় বাড়িতে খবর দিল। সবাই খুব খুশি ।
,,
কিন্তু আমার দিন দিন ওর উপরে অভিমান টা বেশি হতে লাগলো। আমি ঠিক করলাম এই খবর টা ওকে জানাবো না। ও একবার তো এসে আমার রাগ ভাঙাতে পারতো ।
,,
আমি একদিন বিকেলে ছাদে বসে আছি । ওর কথা ভিষন মনে পড়ছিল । আমি সব কিছু বসে বসে ভাবছিলাম । ও কখন যে আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে আমি কিছু টের পাইনি। হঠাৎ কারো স্পর্শে চমকে উঠলাম । দেখলাম ও দাড়িয়ে আছে । ওকে দেখে আমার সমস্ত অভিমান এক সাথে জড়ো হলো । আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম । ও বললো ,,,
,
:-- নিজে কষ্ট পাচ্ছো ,, আমাকে ও কষ্ট দিচ্ছ । কিন্তু আমার এখন একটু ও কষ্ট নেই । যখন শুনেছি আমি বাবা হতে চলেছি। সেই থেকে আমি কতোটা খুশি তোমাকে বোঝাতে পারবো না।
,
আমি কিছু না বলে চুপ করে আছি। ও আবার বললো ,,,
,
:-- চলো তোমাকে নিতে এসেছি। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
,
এবার আমি মুখ খুললাম ,,
,
:-- এতো দিন তাহলে নিতে আসো নি কেন ??
,
ও বললো ,,,
,
:-- নিজেকে পরিবর্তন করছিলাম । তুমি যেই গুলি অপছন্দ করো সেই গুলি আর করি না।
এই বলে ও কতো গুলি গোলাপ বের করে বললো ,,
,
:-- এই দেখো জুথি ,,তুমি বলতে না রোজ তোমাকে একটা করে গোলাপ দিতে হবে । তুমি চলে আসার পর ও রোজ তোমার জন্য আমি একটা করে গোলাপ এনেছি।
,,
আমি দেখলাম ওর হাতে অনেক গুলো গোলাপ । কোনও কোনও টা শুকিয়ে আছে । এবার আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আমার বলদ জামাইয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম । আর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে লাগলো।
,
ও আমাকে বললো ,,,
,
:-- জানো সেই দিন ই আমি আমার ফোন টা ভেঙে ফেলেছিলাম ।
,
:-- কেন ??
,
:-- ওই ফোন টাই তো তোমাকে আমার কাছ থেকে এতো দিন দুরে সরিয়ে রেখেছে ।
আচ্ছা তুমি বললে নাতো আমাদের নতুন অতিথি কেমন আছে ???
,
:-- সেই টা তুমি না হয় নতুন অতিথির কাছে জিগ্যেস করো ।
,
আমি এই কথা বলতেই ওর বুকের মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো ,,,
,
:-- তোমাকে আমি সারা জীবন এই ভাবে কাছে পেতে চাই।
,,
,,
(সমাপ্ত )
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ