তখন আমি চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র। বয়স দশ।
সে সময় জীবনে প্রথম বারের মতো কোন মেয়েকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।
সেদিন ছিল সোমবার। সোমবার আমার সবচেয়ে প্রিয় দিন, কারন এ দিনেই পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম প্রথম। প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও স্কুলে গেলাম, তবে দেরিতে।
দেরিতে আমি প্রায় দিনই যেতাম। তা না হলে পিটি করো, ব্যাঙের মতো লাফাও, হাত পা দাপাদাপি করো, কোমরে হাত রেখে বুড়োদের মতো উঠবস, শপথ, রোদে দাড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়া, স্কুল ড্রেস নেই মাঠে সবার সামনে যতক্ষন না ক্লাস শুরু হয় কান ধরে দাড়িয়ে থাকা সূর্যের দিকে মুখ করে! এসব ভালো লাগতো না মোটেই!
স্কুলে ততক্ষণে পিটি শেষ হয়েছে, যথারীতি ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রতিদিন দেরীতে যেতাম বলে স্যার নাম দিয়েছিল লেট লতিফ! অবশ্য এই লেট লতিফ যে কে তার পরিচয় জানতাম না, তবে বুঝেছিলাম সে হয়তো সব কাজেই দেরি করতো! দেরিতে স্কুলে আসা মানেই স্যারের কাছে নিত্য নতুন অজুহাত পেশ করা। আর স্যারের কাছে অজুহাত মনমতো না হলে কান ধরে ব্রেঞ্চের উপর দাড়িয়ে থাকা। সে কান ধরে দাড়িয়ে থাকাটা অবশ্য স্কুলের মাঠে দাড়িয়ে থাকার চেয়ে কম লজ্জার ছিল!
ভয়ে ছিলাম, আর ভাবছিলাম আজ কি অজুহাত দিবো? কিন্তু ক্লাসে প্রবেশ করে দেখলাম স্যার নেই! বন্ধুরা মশিউর, মাহিম, হারুন, আশিক, রেফা, বিথী, শিমু, সীমা সহ আরো অনেকে গল্প করছে। শঙ্কামুক্ত হলাম।
মশিউর বললো, " আজ স্যার আসে নি। ক্লাস হবে না। "
মাহিম বললো , " তাহলে? "
আমি বললাম, " চলো তাহলে কানামাছি খেলি। "
"কানামাছি? চোখ বাঁধবি কি দিয়ে? " মশিউর প্রশ্ন করে।
" স্যারদের রুমে দেখ গামছা আছে একটা, কেউ গিয়ে নিয়ে আসলেই তো হয়! " আমি বলি।
মশিউর স্যারদের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ছিল, তাই ও গিয়ে গামছা নিয়ে আসে দপ্তরীর কাছ হতে। তার পর শুরু হলো কানামাছি খেলা ব্রেঞ্চের সামনে স্যারের চেয়ার টেবিল সরিয়ে। মেয়েরা সবাই ব্রেঞ্চে বসে। আমরা ছেলেরা খেলছি তারা দেখছে।
খেলার নিয়ম, ছোট যায়গা, তাই ছুলে হবে না, ধরতে হবে। এক সময় আমি ধরা পরলাম। চোখ বেধে দেয়া হলো আমার। চোখ বেধে দেয়ায় সারা পৃথিবী অন্ধকার আমার। এর পর শুরু হলো আমার উপর বন্ধুদের অত্যাচার। কেউ কানে টোকা দিয়ে পালায়, কেউ পিঠে খামচি দেয়! কাউকে আর ধরতে পারি না।
এক সময় ভাগ্যদেবী মুখ তুলো চাইলেন। ধরলাম একজনকে! ধরেই চিৎকার করে উঠলাম, " মশি তোকে ধরেছি, এবার? "
কিন্তু একি শরীর এত নরম তুলতুলে কেন? ঠিক বিড়ালের শরীরের মতো! মশিউরের শরীর তো এত নরম তুলতুলে না! আবার কেমন যেন মোটা! এসব ভাবনায় আসতেই শুনতে পেলাম বন্ধুদের হাঁসি! মশিউরও হাঁসছে। ঘটনা কি? তাহলে কাকে জড়িয়ে ধরে আছি আমি?
ছেড়ে দিয়ে, চোখ হতে পট্টি খুলতেই দেখলাম, এক বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। বন্ধুরা সবাই হাঁসছে, আর সে লজ্জায় লাল হয়ে আছে! আমিও অবশ্য লজ্জা পেয়েছিলাম, কিন্তু লাল হই নি। কালো মানুষ লজ্জা পেলে লাল হয় না, বরং আরো কালো হয়ে ওঠে । আমি লজ্জায় কালো হয়েছিলাম সেদিন।
সে বান্ধবীটার সাথে দেখা নেই আজ আট বছরের মতো হবে! সে এ স্মৃতি ভুলে গেছে হয়তো! কিন্তু আমি ভুলি নি। জীবনে প্রথম কোন মেয়েকে জড়িয়ে ধরার কথা কোন পুরুষই ভোলে না সম্ভবত! আমি ছাড়াও এ স্মৃতি আরো একজন ভোলে নি। সে হলো মশিউর।
আজো দুজনের একসাথে আড্ডা শুরু হলে পুরনো সে প্রসঙ্গ তুলে হেঁসে ওঠে সে। আমিও হাঁসি। স্মৃতি, ছেলেবেলাম স্মৃতি- ব্যাস্ত জীবনের রুগ্ন সময়েও আমাদের দুজনকে হাঁসায়।
দুজনেই আড্ডা শেষে তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলি, আবার যদি সেই ছেলেবেলা ফিরে পেতাম! কি সুন্দরই না হতো!
লেখা : নুর আলম সিদ্দিক
#ছেলেবেলা
#স্মৃতি_কথন
āĻোāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāĻ:
āĻāĻāĻি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āĻ āĻāϰুāύ