āĻŦৃāĻšāϏ্āĻĒāϤিāĻŦাāϰ, ā§§ā§­ āĻŽে, ⧍ā§Ļā§§ā§Ž

4915


গল্পের নাম:জীবন থেকে নেয়া

লিখা:ইমতিয়াজ আহম্মেদ

--তেল আর শ্যাম্পুর অভাবে চুলগুলো কালো থেকে হালকা লালচে বর্ণের হয়ে উঠেছে৷ সবশেষ তেল আর শ্যাম্পু কবে দিয়েছিলাম ঠিক মনে নেই৷ অনেকদিন হল সেলুনে গিয়ে চুল কেটেছি৷ ৩টাকার শ্যাম্পু কেনার মুরদ নেই! তার উপর আবার ১০০টাকা দিয়ে চুল কাটা! আয়নায় নিজের চেহারা নিজে দেখলেই ভয় ভয় লাগে৷ এই মূহূর্তে কেউ যদি আমার ছবি তোলে৷ আর সেই ছবিটা যদি মাঝরাতে ঘুম ভাঙিয়ে আমাকে দেখানো হয়! নিশ্চিত আমি ভয়ে কুঁকড়ে যাব৷ আজ সকাল থেকেই অস্থির অস্থির একটা ভাব লাগতে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে চুলগুলো নিয়ে৷
"
-বাবা চাকরিতে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে৷ ছোটবোন নীতু কলেজে গিয়েছে৷ বাবা গেলেই ঘরটা খালি হয়ে যাবে৷ শুধু মা থাকবে৷ সেই সুযোগে মায়ের কাছ থেকে ৫টাকা চেয়ে নিব৷ বাবা না থাকলে দিলেও দিতে পারেন৷ ৫টাকাই তো মাত্র৷
রুমের দরজা সামান্য ফাঁক রেখে বাবাকে পাহারা দিচ্ছি৷ বাবা বের হতেই আমি রান্না ঘরের দিকে গেলাম৷ মা চুপচাপ রান্না করছে৷ মা আমার সাথে কথা বলে না অনেকদিন হল৷ ফিরেও তাকান না৷ কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে না প্রায় সময়৷ শুধু মা না৷ এইঘরে আমি ছাড়া বাকি ৩জন মানুষের মধ্যে শুধু নীতুর সাথে কথা হয় আমার৷ মা তো একদমই কথা বলে না আমার সাথে৷ ছোটবোনের কাছ প্রতিনিয়ত খোটা শুনতে হয়৷ আমার দোষ হলে সেটা আব্বুর কানে চলে যাবে৷ আর আব্বু ঘরে আসবেন৷ আমাকে উনার রুমে ডেকে নিয়ে যাবেন৷ তারপর আমার জন্য শাস্তি নির্ধারন করে দিবেন৷ আব্বুর সাথে এইটুকুই কথা হয় আমার৷ এখন ঘরে কেউ নেই৷ আম্মুর কাছে ৫টাকা চাইলে দিতে পারে৷ আবার না দিলেও সমস্যা হবে না তেমন৷ সেটা আব্বুর কানে অন্তত যাবে৷
"
"
-রান্না ঘরের দরজায় গিয়ে মা কে ডাকলাম৷ মা ফিরে তাকাই আমার দিকে৷
-মা ৫টা টাকা হবে? শ্যাম্পু কিনবো৷
কথাটা বলার পর আমার দিকে মিনিট দু'য়েক তাকিয়ে থেকে আবার রান্নায় মনযোগ দিলেন৷ আমি হতাশ হয়ে ফিরে আসি৷ ঘরের দরজা ঠেলে দোকানের দিকে হাঁটা দিলাম৷ এখন আর বাইরে বের হওয়া হয়ে উঠে না৷ লোকগুলো কেমন করে জানি তাকাই আমার দিকে৷ বন্ধুগুলোও বড্ড অচেনা লাগে আমার৷ একসময় আমি বলতেই পাগল ছিল বন্ধুগুলো৷ আর এখন আমার সাথে কথা বলতেই যেন তাদের ঘোর আপত্তী৷ তবে পাড়ার ছোটভাইগুলো এখনও আগের মত ভালোবাসে৷ মাঝে মাঝে দেখা হলেই খেলার জন্য ডাকে৷
"
"
--হাকিম চাচার দোকানের সামনের দিকে অনেকগুলো শ্যাম্পুর প্যাক দেখা যাচ্ছে৷ বাকি চাইলে নিশ্চয় দিবেন৷ আগেতো উনার কাছ থেকে অনেক বাকি করতাম৷ পরে শোধ দিয়ে দিতাম৷ অল্পকিছু বকশিশ ও দিতাম৷ মাঝে মাঝে ৫-১০টাকার জিনিস কিনলে, উনি টাকা নিতে চাইতেন না৷
আমি আস্তে আস্তে হেঁটে দোকানের সামনের বেন্ঞ্চীতে বসলাম৷ কাষ্টমারের ভীড় বেশি৷ খালি হলেই একটা শ্যাম্পু চেয়ে নিব৷ সাথে নারিকেল তেলের একটা বোতল নেয়া হবে ছোট থেকে৷ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর চাচা কাষ্টমার মুক্ত হল৷ দোকানের কাজের ছেলেটাকে পানি আনতে পাঠিয়েছেন৷ আমি চাচার কাছে গিয়ে বসলাম৷ চাচা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-কিরে? কিছু বলবি?
আমি শান্ত দৃষ্টিতে চাচার দিকে তাকাই৷ চাচা আমাকে কখনো তুই করে বলেন নি৷ আগে দোকানে আসলেই "বাপ" বলে ডাকতো৷
-চাচা একটা শ্যাম্পু দেন৷
চাচা শ্যাম্পুর প্যাক হাতে নিয়ে বললেন,
-টাকা?
-এখনতো নেই৷ পরে দিয়ে দিব সময় করে৷
আমার কথা শুনে শ্যাম্পুটা ঝুঁড়িতে রেখে দিয়ে বললেন,
-তোর বাবা মানা করেছে বাকি দিতে৷ আর কেমন ছেলে তুই? ৩টাকার শ্যাম্পু কেনার টাকা নেই!
আমি চাচার কথা কানে না তুলে চাচাকে বললাম,
-চাচা ঐ যে ২টাকার প্যাকগুলো হলেও দাও৷ রাতে মাথার চুলকানীর জন্য ঘুমোতে পারি না৷
কাজের ছেলেটা চলে এসেছে৷ চাচা আমার দিকে একবার তাকালেন৷ তাকানোর মানেটা আমি বুঝে গেলাম৷ চাচার চোখ দু'টো বলছে,
-দূর হ হারামজাদা৷
"
"
--আমি আর দেরী না করেই হাঁটা দিলাম৷ ঘরের কাছাকাছি আসতেই দেখলাম, পিছন থেকে রবি চিৎকার করতে করতে এদিকটাই আসছে৷ কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করলাম,
-কি রে ডাকিস কেন?
-শুভ্র ভাই৷ আমরা সবাই মিলে শিশিরদের ছাদে পিকনিক খেলছি৷ তুমি খেলবে?
-খেলতে হলে কত লাগবে?
-তুমি ১০০দিলেই হবে৷
আমি কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম৷ ৩টাকার শ্যাম্পু কিনতে পারিনি আবার পিকনিক! রবির মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,
-বিকেলের দিকে দেখা যাবে৷ খেললে আমি টাকা দিয়ে দিব তোকে৷
"
"
--ছোটবোনের জমানো টাকা থেকে ১০০টাকা নিয়েছি৷ পিকনিকের জন্য হলে কিছু বলবেনা৷ ছোটবোন কলেজ থেকে এসেই আম্মুকে ডাকাডাকি শুরু করে দিল৷ আম্মু তখন বাসায় নেই৷ আমি ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিলাম৷ ও ভ্রূ খুচঁকে তাকিয়ে, অবজ্ঞার স্বরে বলল,
-হঠাৎ বলার আগে কাজ করছিস! ব্যাপার কি?
আমি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকি৷ অথচ এই মেয়েটাই আমাকে কত আদর করে ভাইয়া ডাকতো৷ আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
-আপু তোর কাছ থেকে ১০০টাকা নিয়েছি৷
-কেন?
-ছোটরা পিকনিক খেলছে৷ আমাকে ও বলল তাই৷
-তুই ছোট নাকি?
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
-তোর কি মনে হয়?
আমার কথার জবাব না দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল৷ আমি জানি কথাটা বাবার কান পর্যন্ত যাবে৷
"
"
--অফিস থেকে এসেই বাবা ডাকলেন আমাকে৷ আমি বাবার সামনে যেতেই মা উঠে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন৷ নীতু ওর রুমে চলে গেল৷ বাবা শান্ত গলায় বললেন,
-কত টাকা নিয়েছিস?
-১২০ টাকা৷
-কেন?
-পিকনিক খেলব৷
-আচ্ছা একটা কাজ করতে পারবি?
-হ্যা বাবা বলেন?
-ঐ রাস্তার মোড়ের হোটেলে যাবি৷ গিয়ে জিজ্ঞেস করবি "এক প্লেট ভাত, এক বাটি ডাল আর এক লোকমা আলুবর্তার দাম কত?
-জ্বী বাবা৷
"
"
-আমি খুশিমনেই হোটেলের দিকে হাঁটা দিলাম৷ বাবা অনেকদিন পর আমার সাথে শান্ত গলায় কথা বলেছে৷ সাথে একটা কাজ দিয়েছেন! আপনাআপনিই মনের মধ্যে আনন্দ অনূভূত হল৷ আগেও মাঝে মাঝে বাবা এমনটা করতেন৷ মাছ,মাংস খেয়ে যখন হাঁপিয়ে উঠতো৷ তখন হঠাৎ করেই আমাদের নিয়ে বেরোতেন৷ আলুবর্তা, আর ডাল দিয়ে হোটেলে খাওয়া হতো৷ সারাদিন ঘুরোঘুরি হতো৷
"
"
--ঘরে ঢুকেই দেখলাম, বাবা আগের জায়গায় বসে আছে৷ আমাকে দেখেই বলল,
-জিজ্ঞেস করেছিস?
-হ্যা বাবা৷
-কত বলল প্লেট?
-৩০টাকা৷
-১২০কে ৩০দিয়ে ভাগ কর! কত হয় দেখ৷
-৪ হয় বাবা৷
-আগামী ৪বেলা তোর খাওয়া বন্ধ!
কথাটা বলেই বাবা চলে গেলেন৷ রান্না ঘরে গিয়ে মা'কে জানিয়ে দেয়া হল ব্যাপারটা৷ নীতুকেও বলে দেয়া হল৷ আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকি৷ গলাটা ধরে আসে আমার৷ চোখের কোণায় জমাট বাধাঁ পানিগুলো গাল বেয়ে ঝরে পড়ছে৷
"

--বছর ২-১আগের কথা৷ খেলার মাঠ থেকে পাড়ার চায়ের দোকান৷ সব জায়গাই দাপিয়ে বেড়াতাম তখন৷ টিএজ পার করে আসলেও দূরন্তপনাটা কাটেনি তখনো৷ পরিবার থেকেও বাধ্যবাধকতা ছিল না কখনো৷ আব্বুর ব্যাবসা দিয়ে ভালো চলতো আমাদের পরিবার৷ ঘরে ফিরে মায়ের আদর-ভালোবাসা, ছোটবোনের সাথে খুনসুঁটি৷ সবগুলোই ছিল আমার জীবনে৷ বড় একখানা বন্ধুমহল ছিল৷ আড্ডার মধ্যমণি থাকতাম৷ মুরব্বি থেকে শুরু ছোট ভাই৷ সবার সাথেই ভালো একটা সম্পর্ক ছিল৷
--ছোটবেলা থেকেই খেলাপাগল ছিলাম৷ খেলতে যেমন পছন্দ করতাম, খেলা দেখাটাও ছিল দারুণ আনন্দের৷ টিভিতে আব্বু-আম্মু, ছোটবোনকে নিয়ে খেলা দেখা হতো প্রায়৷ সেবার বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়েছিল৷ আমার চাচা মারা গিয়েছিল বিশ্বকাপের ঠিক আগেরদিন৷ সেহেতু কিছু নিয়ম কানুনের কারণে টিভি চালানো নিষেধ ছিল৷
--বন্ধুদের সাথে প্ল্যান করেই রিফাতের বাসায় খেলা দেখা শুরু করলাম৷ কয়েকদিন বেশ আনন্দের সাথেই খেলা দেখা হতো৷ রাত হলেই সবাই একজোড় হয়ে বসে খেলা দেখতাম৷ কয়েকদিন পরই রিফাতের এক খালাতো ভাই আসলো বেড়াতে৷ এক কথা দুই কথাতে ভালো একটা পরিচিতি হয়ে গেল৷ নাম সিফাত৷ আমার সাথেই ভাবটা একটু বেশি ছিল৷ বয়সে আমাদের বড় হলেও বন্ধুসূলভ ছিল৷
-সেদিন আর্জেন্টিনার খেলা ছিল৷ বন্ধু রাফি ছিল ব্রাজিল সমর্থক৷ আর আমি তখন ঘোরতর আর্জেন্টিনা ফ্যান৷ খেলা দেখতে গিয়েই শুরু হল মধুর তর্কাতর্কি৷ মাঝখান থেকে সিফাত ভাই বলে উঠল, এত তর্ক না করে বাজি নিয়ে নিলেইতো পার!
আমরা তখনো বাজি বলতে, পাড়ার মাঠের ফুটবল অথবা ক্রিকেট ম্যাচের সাথেইপরিচিত৷
-প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও, একপর্যায়ে বাজি হয়েই গেল৷ আমি আর্জেন্টিনার পক্ষে টাকা দিলাম৷ রবির পকেট ফাঁকা তখনো৷ রবির পক্ষে সিফাত ভাই টাকা লাগালেন৷ প্রথমদিন লাভটা আমারই হল৷ তারপর আস্তে আস্তে নিয়মিত হতে লাগলাম৷ লাভ হতো, পরেরদিন লস৷ এইভাবেই চলতে লাগল৷ সিফাত ভাইয়ের মোবাইলে "bet365" নামের একটা একাউন্ট ছিল৷ সেটাতেই বাজি মারতাম৷
"
-বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেল৷ ততদিনে আমি পুরোদন্তুর বাজিখোর৷ সিফাত ভাইয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ ছিল৷ আস্তে আস্তে আরো গভীরে যেতে লাগলাম৷ একটা সময়ে লাভের বদলে লসটাই বেশি হয়ে যাচ্ছিল৷ আব্বুর তখন বড় একটা দোকান ছিল৷ একদিন আব্বুকে গিয়ে বললাম, আমি দোকানে বসতে চাই৷ আব্বু সেদিন ভীষণ খুশি হয়েছিলেন৷ ভিতরের কারণটা আব্বু তখনো জানতে পারেনি৷ এবার শুরু হল, আব্বুর ক্যাশ থেকে টাকা মেরে দেয়া৷ আব্বুকে কিছুতেই বুঝতে দিতাম না৷ একটা সময় এসে মনে হল, সিফাত ভাই আমার সাথে বাটপারি শুরু করে দিয়েছে৷ আমর লাভ হলে, আজকে দিবে কালকে দিবে করে আর টাকা দিতেন না৷ আর আমার লস হলেই, ফোনের পর ফোন দিয়ে বিরক্ত করে ফেলতেন৷
-বিরক্তি চরম মাত্রাই পৌঁছে যাওয়ার পরই সিফাত ভাইয়ের টাকাগুলো শোধ করে দিলাম৷ পুরোটাই বাবার ক্যাশ থেকে নেয়া৷ তারপর শুরু হলো বাবার দোকানের আশেপাশে বাজি নেয়া৷ প্রথমে লাভ হলেও শেষে বড়রকমের একটা দেনা হয়ে গেল৷ আমি তখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি৷ খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সবকিছুই শেষ তখন৷ ছোটবোন কিছুটা বুঝতে পেরেছিল৷ একদিন শুয়ে ছিলাম৷ নীতু এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ভাইয়া এসব করিস না৷ ভালো হয়ে যা৷ এগুলো একদিন বিপদ ডেকে আনবে!
কিন্তু আমি কানে তুলিনি৷
"
-আব্বুর ক্যাশ থেকে শুরু করে বাসার গ্যাসের বিল, কারেন্ট বিল সবগুলোর টাকাই আমি শেষ করে দিচ্ছিলাম৷ শেষে একদিন পাওনাধাররা সরাসরি ঘরেই এসে গেলেন৷ এক কান দুই কান করে পাড়ার সবাই জেনে গেল৷ আমাকে অবাক করে দিয়ে বাবা সব ঋণ শোধ করে দিয়েছিলেন৷ একটা কথাও বলেন নি৷ বোনের জন্য জমানো টাকা, বাবার দোকানটা বিক্রি করে দিলেন, আম্মুর গয়না! সবকিছুই বিক্রি করে দিয়েছিলেন৷ ব্যাবসা ছেড়ে চাকরী করা শুরু করলেন৷
-ভালোবাসার মানুষটাকেও ধরে রাখতে পারিনি৷ মিতুর সাথে যখন শেষ দেখা করতে গিয়েছিলাম, সেদিন খুব কেঁদেছিল মেয়েটা৷ আমি কিছু বলতে পারিনি৷ নাহ! মেয়েটার কোনো দোষ নেই৷ যে মেয়ে নিজের সব জমানো টাকাই আমার হাতে তুলে দিয়েছিল কোনো কথা ছাড়াই৷ যে আমাকে সবটুকু দিয়ে বিশ্বাস করেছিল৷ বিনিময়ে আমি কিছুই দিতে পারিনি৷ যাওয়ার আগে শুধু বলেছিল, নিজেকে শুধরাবার চেষ্টা করো৷ একদিন সবকিছু ফিরে পেতেও পারো৷ আমাকে না পেলেও অনেককিছুই পাবে৷
"

সন্ধ্যা নেমেছে অনেকক্ষণ হল৷ সারারাত নদীর ধারে কাটিয়ে দিলেও কেউ ফোন দিবে না জানি৷ কেউ ফোন দিয়ে বলবেনা, বাসায় আয়৷ আমাকে অবাক করে দিয়ে ফোনটা বেজে উঠল৷ ছোটবোন নীতু ফোন দিয়েছে৷ আমার ভিতরটা কেপেঁ উঠল৷ কতদিন পর ফোনটাতে কল আসলো!
ফোনটা রিসিভ করলাম৷
-ভাইয়া বাসায় আয়৷
-আসছি৷
"
ঘরের দরজায় টোকা দিতেই, নীতু দরজা খুলে দিল৷ অন্যদিন হলে কথা শুনাতো৷ আজ কেন জানি চুপ করে আছে৷ আমি মাথা নিচু করে রুমের দিকে পা বাড়ালাম৷ অন্যদিন হলে খাবার টেবিলের দিকেই যেতাম৷ ভাতের সাথে সাথে খোটাও গিলা হতো৷
আধা জগ পানি খেয়ে শুয়ে পড়লাম৷ বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিতেই রুমের বাতিটা জ্বলে উঠল৷ নীতু জ্বালিয়েছে৷ হাতে ভাতের প্লেটটা নিয়ে আমার পাশে বসল৷ মিনিট দু'এক তাকিয়ে থেকে বলল,
-হা কর৷
-তুই খেয়েছিস?
-নাহ৷ তোকে ফেলে খেয়েছি কখনো?
-খাসনি৷ তবে..
-তবে কি?
-এখনতো খাস তাইনা?
-খালি উপরেরটাই দেখিস৷ নে হা কর৷
"
অনেকদিন পর তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছি৷ শেষ কবে এমনভাবে খেয়েছিলাম মনে নেই৷ বালিশে মাথা রেখেছি৷ নীতু মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ অদ্ভূত শান্তি লাগছে আমাকে৷ নীতু আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল,
-ভাইয়া একটা কথা বলব?
-বল?
-আমাদের কলেজের সামনে একটা স্কুল হয়েছে৷ কিন্ডারগার্ডেন, সবগুলো পিচ্চি পিচ্চি৷
-তো?
-শিক্ষক নিচ্ছে৷ তুই করবি চাকরীটা৷ তুইতো পিচ্চি ভালোবাসিস৷
-হ্যা করব৷ তুই বলে দেখ, হয় কিনা৷
-হ্যা হয়ে যাবে৷
"
"

এখন আর একাকীত্ব বোধ করিনা৷ মনটা ভীষণ ভালো থাকে৷ সকাল সকাল স্কুলে এসে যায়৷ পিচ্চিগুলোর সাথে দারুণ সময় কাটে৷ আমি বলতেই পাগল সবগুলো৷ মাঝে মাঝে চকলেটস নিয়ে যায়৷ একটা চকলেট দিলে একটা চুমু দিবে আমার গালে পিচ্চিগুলো৷ হাজার দেড়েক বেতন পাই মাসশেষে৷ চুল আর শ্যাম্পু করার জন্য কারো কাছে টাকা চাইতে হয় না৷ সবচাইতে বড় ব্যাপার মনটা বড্ড ভালো থাকে৷ অতীতটা ভুলতে পেরেছি আমি৷ বেতনের টাকাগুলো নীতুর হাতেই থাকে৷ প্রয়োজন হলে চেয়ে নিই৷ সেদিন সকালে ঘুমোচ্ছিলাম৷ মাথায় কারো হাতের পরশে ঘুম ভাঙল৷ চোখ মেলে দেখি আম্মু হাত বুলাচ্ছে মাথায়৷ আমি মায়ের কোলে মাথা রাখি৷ কপালে চুমু দিয়ে বললেন,
-মাষ্টারি করতে যেতে হবে৷ মাষ্টাররা এত ঘুমোলে হয়? উঠ তারাতারি৷
আমার চোখে জল টলমল করছিল৷ মা আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন৷ আহ! কতদিন পর মা"কে জড়িয়ে ধরেছি৷
আব্বু অবশ্য এখনো গম্ভীরতা বজায় রাখেন৷ কিন্তু আমি জানি এই গম্ভীর চেহারাটার ভিতরেই রয়েছে আমার জন্য এক আকাশ ভালোবাসা৷
"
-মাঝে মাঝে মিতুর কথা মনে পড়ে৷ বড্ড ভালোবাসতো মেয়েটা৷ আমি প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল৷ এতকিছুর পরও আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিল৷ কিন্তু পারেনি৷ এই না পারার জন্য আমিই দায়ী৷ তাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির একটাও রাখতে পারিনি আমি৷ তবে হ্যা! বিদায়বেলায় দেয়া তার উপদেশটা রাখতে পেরেছি৷ হ্যা, আমি অনেককিছুই ফিরে পেয়েছি৷ মায়ের হাসিমাখা ভালোবাসা, বোনের আদরমাখানো খুনসুটি৷ সব পেয়েছি সব৷ শুধু মিতুকে হয়তো আর পাওয়া হবে না কখনোই৷
"
"
পরিশিষ্ট:
আজ জন্মদিন আমার৷ আগে ঘটা করেই হতো৷ গত দুই তিন বছর হয়নি৷ ভেবেছিলাম এবার হয়তো হবে৷ মনটা একটু খারাপ হল৷ স্কুলে গিয়ে পিচ্চিদের সাথে সময় কাটিয়ে আসলাম৷ বাসার সবাই ভাবসাব সুবিধার ঠেকছে না৷ আব্বুর গম্ভীর চেহারাতে রহস্যময় ভাব৷ নীতুকে জিজ্ঞেস করার পরও কিছু বলছেনা৷ উল্টো মজা নেয়া শুরু করেছে৷ মা'কে কিছুই জানেন না৷ উনি জানলে আর কষ্ট করা লাগতোনা৷ এমনেই বলে দিতেন৷
"
রাত্রে খেয়ে শুয়ে পড়লাম৷ পড়ামাত্রই ঘুম৷ রুমের দরজা নাড়ার শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল৷ দরজা খুলেই দেখলাম, পুরো ঘরটাই ঝলমল করছে৷ আব্বু হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন৷ সামনে যেতেই জড়িয়ে ধরে বললেন, শুভ জন্মদিন বাবা! অনেক কষ্ট দিয়েছি তোকে৷ আমি চেয়েছিলাম, জীবনটা সহজ নয়! সেটা তুই বুঝতে শেখ৷ তোর জন্য এখন আমার এতটুকুও লজ্জা লাগেনা৷ আগে পাড়ার মানুষগুলোর কাছে মুখ লুকিয়ে বেড়াতাম৷ জুয়াড়ির বাবা! কথাটা শুনতে হবে বলে৷ কিন্তু এখন আমি রাস্তায় মাথা উঁচু করে হাঁটি কেউ যখন বলে "এইটা শুভ্র স্যারের বাবা! তখন নিজেকে পৃথিবীর সেরা সন্তানের বাবা বলে মনে হয়৷"
-মা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছেন না৷ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে৷
নীতুকে দেখা যাচ্ছে না৷ বাবাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, ছাদে বসে আছে৷
"
ছাদে যেতেই, শুভ জন্মদিন ভাইয়ু বলে জড়িয়ে ধরল৷ আমি গাল টেনে জিজ্ঞেস করলাম,
-গিফ্ট কই? শুকনা জন্মদিন বললেই হবে?
আমার কান ধরে ছাদের কোণটাতে নিয়ে গেল৷ শাড়ি পরিহিতা মেয়েটাকে চিনতে একটুও কষ্ট হল না আমার৷ "মিতু! ৩টা বছর পর মেয়েটাকে দেখছি৷ এখনো আগের মতই আছে৷ গালগুলো আগের চাইতে গুলুগুলু হয়েছে৷ টানতে ভালো লাগবে৷ ধীরপায়ে মিতুর সামনে গিয়ে বললাম,
-গালগুলো টানতে পারি?
-মানা করলেও না টেনে থাকবে তুমি?
-আচ্ছা তুমি বিয়ে করনি কেন?
-তোমার অপেক্ষায় ছিলাম৷ আমি জানতাম তুমি ফিরবে৷
-কেমনে জানলে?
মিতু কিছু বলার আগেই পিছনে বাবার গলা ঝাড়ার শব্দে পিছনে ফিরে তাকালাম৷ বাবা আমার কাধেঁ হাত দিয়ে বললেন,
-এতদিন তোর উপর যে থেরাপিগুলো দেয়া হয়েছে৷ সবই বৌমার প্ল্যান৷ তুমিতো হাদাঁরাম৷
নাহ! আসলেই আমি হাদাঁরাম৷ এই মানুষগুলোর ভালোবাসাগুলো আমি পায়ে ঠেলেছি এতদিন৷ কি বোকা আমি? এই মানুষগুলোর জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে হবে৷ আমাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলোকে ভাঙতে দিব না কখনোই৷ এই মানুষগুলোর হাতে হাত রেখে গড়ে তুলব সুখের স্বর্গ৷
"
"মানুষ মাত্রই ভুল৷ ভুল সবাই করে৷ ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়া উচিত আমাদের৷ খারাপ সময় সবারই আসে৷ কিন্তু চিরদিন থাকে না৷ খারাপটাকে ঘষে মেজে ভালো করার দায়িত্ব আমাদেরইতো"৷

āĻ•োāύ āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āύেāχ:

āĻāĻ•āϟি āĻŽāύ্āϤāĻŦ্āϝ āĻĒোāϏ্āϟ āĻ•āϰুāύ